বিবিধ ভাবনা ৫৭
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on June 13, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. গণতন্ত্র কেন ব্যর্থ হয়?
দেশ শাসনের পদ্ধতি দুই প্রকার: গণতান্ত্রিক এবং স্বৈরতান্ত্রিক। গণতন্ত্রে শাসনটি জনগণের। জনগণ দেশ শাসন করে নিজেদের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বা মন্ত্রীদের মাধ্যমে। এরা জনগণের এজেন্ট বা প্রতিনিধি। সরকারের উপর জনগণ নিয়ন্ত্রণ রাখে মিটিং-মিছিল ও পত্র-পত্রিকায় নিজেদের মতামত সরকারকে জানিয়ে দিয়ে। সরকার সে মতামত না মানলে ভোটে তাদের সরিয়ে নতুনদের আনে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে সে অধিকার জনগণ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। তখন শাসন করে সামরিক বাহিনী, বেসামরিক ফ্যাসিবাদী শক্তি বা রাজ পরিবার। দেশ শাসনের সবচেয়ে উত্তম ও জনকল্যাণ- নব সভ্যতার অতি সভ্যতর আবিস্কার।
একটি দেশের জনগণ কতটা উন্নতমূলক পদ্ধতি হলো গণতান্ত্রিক শাসন। স্বৈর শাসনের নৃশংসতা থেকে মুক্তি দিতে এটিই হলো মা সেটি সে দেশের বিশাল বিশাল অট্টালিকা, প্রশস্ত রাস্তাঘাট, শিল্প-উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখে বুঝা যায় না। বুঝা যায় সে দেশে জনগণ কতটা অধিকার, মর্যাদা বা গুরুত্ব পেল তা থেকে। গণতান্ত্রিক সরকারের শ্রেষ্ঠত্ব হলো সেখানে গুরুত্ব পায় জনগণের মতামত এবং মর্যাদা পায় প্রতিটি নাগরিক। গণতান্ত্রিক শাসনে কে প্রেসিডেন্ট হবে বা কে প্রধানমন্ত্রী হবে সেটি নির্ধারণ করে জনগণ। রাজতন্ত্রে গুরুত্ব পায় রাজা ও তার পরিবার। সামরিক বাহিনীর শাসনে অস্ত্র কথা বলে, জনগণ নয়। এ স্বৈর শাসনে রাজনীতি নির্ধারণ করে বন্দুকের নল। তখন জনগণের দায়িত্ব হয় শুধু রাজস্ব দিয়ে সেনাবাহিনীকে প্রতিপালন। এবং জনগণের আরো দায়িত্ব হয় সামরিক শাসকদের হুকুম প্রতিপালন করা। তবে বাংলাদেশে যে স্বৈর শাসন চেপে বসেছে সেটি হলো হাসিনীর ন্যায় একজন ফ্যাসিবাদীর। সে তার শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে দেশবাসীর ভোটের উপর ডাকাতি করে। এবং তার সে ডাকাতিতে সহায়তা দিয়েছে চাকরসুলভ দেশের সেনাবাহিনী. পুলিশ ও নির্বাচনি কমিশন। তার স্বৈর শাসনে অধিকারহীন হয়েছে জনগণ। এখানে হুকুম চলে শুধু হাসিনার একার। যেহেতু সে জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি, জনগণের প্রতি তার কোন দায়বদ্ধতাও নাই। এব আগে তার পিতা শেখ মুজিব একই রূপ একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার চাপিয়ে দিয়েছিল। গণতন্ত্রের মই বেয়ে ক্ষমতায় উঠেই মুজিব সে মইটিকেই ধ্বংস করে –যাতে অন্যরা সেটি ব্যবহার না করতে পারে। বস্তুত একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন ছাড়া সব প্রকারের শাসনই হলো গণবিরোধী অসভ্য ও নৃশংস শাসন। কোন সভ্য মানুষই এ শাসনই মেনে নিতে পারে না।
তবে গণতন্ত্রের ব্যর্থতার জন্য জনগণ নিজেও কম দায়ী নয়। সেটি শত্রু-মিত্র চিনতে ভূল করায়। সে ভূলের কারণে ফ্যাসিবাদী হিটলার, খুনি নরেন্দ্র মোদী, এবং বাকশালী মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের শত্রুগণও ক্ষমতায় গেছে জনগণের ভোটে। জনগণ তখন নিজেদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারাই অধিকারহীন হয়েছে। গণতন্ত্রের গাড়ি তখন খাদে পড়েছে এবং গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হয়? কেনই বা বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে বার বার গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়? এরও সুস্পষ্ট কারণ আছে। গণতন্ত্র জনগণকে বিচারকের আসনে বসায়। জনগণের দায়িত্বটি এখানের দেশের সুপ্রিটম কোর্টের বিচারপতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের রায়ে ভূল হলে একজন বা কয়েকজন নিরাপরাধ ব্যক্তির ফাঁসি হয়। কিন্তু তাতে সমগ্র জাতি বিপদে পড়ে না। কিন্তু জনগণের রায়ে ভূল হলে সমগ্র দেশ অতি ভয়ংকর দুর্বৃত্তের হাতে জিম্মি হয়। দেশে তখন ক্ষমতালোভীদের হাতে ভয়ানক সংঘাত বা যুদ্ধ নেমে আসে। জার্মানীতে সেটি যেমন হিটলারের হাতে হয়েছিল। বাংলাদেশে সে বিপদ এসেছিল ভারতসেবী বাকশালী মুজিবের হাতে।
আদালত থেকে সুবিচার পেতে হলে বিচারকের আসনে অতি সুযোগ্য ঈমানদার ব্যক্তিকে বসাতে হয়। বেঈমান দুর্বৃত্তদের বিচারকের আসনে বসালে সুবিচার আশা করাটি নিতান্তই বেওকুফি। তেমন বেওকুফি হলো জনগণকে অশিক্ষিত ও কুশিক্ষিত রেখে গণতনন্ত্রের সুফল আশা করা। গোড়ার আগে গাড়ী জোড়া যায় না। তেমনি জনগণে সুশিক্ষিত ও ঈমানদার করে গড়ে না তুলে গণতন্ত্রের ন্যায় সভ্য শাসন পদ্ধিতির সুফলও আশা করা যায়। তখন গণতন্ত্র অকার্যকর হতে বাধ্য। তারই নজির বাংলাদেশ। প্লেন চালাতে হলে যোগ্য পাইলট লাগে, গরুর গাড়ীর গাড়োয়ান দিয়ে সে কাজ চলে না। তেমনি গণতান্ত্রিক শাসন চালাতে হলে সুশিক্ষিত জনগণ চাই। যে জনগণ গণহত্যাকারী, বাকশালী, ভারতসেবী, খুনি ও দুর্বৃত্তপালনকারী মুজিবকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলে -সে জনগণ কখনোই গণতান্ত্রিক শাসন চালানোর মত প্রতিনিধি নির্বাচন পারেনা। জীবন বাঁচাতে বাঘ-ভালুক চেনার সামর্থ্য থাকতে হয়, তেমনি নিজেদের অধিকার বাঁচাতে গণতন্ত্রের শত্রুদের চিনতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশীদের মাঝে সে কাজটি হয়নি। এবং সেটি না হওয়ার কারণ অশিক্ষা ও কুশিক্ষা। শুধু পশু রূপে বাঁচার জন্য পানাহারই যথেষ্ট, শিক্ষা লাগে না। কিন্তু সুশিক্ষা ছাড়া মুসলিম হওয়া দূরে থাক, সুনাগরিকও হওয়াও অসম্ভব হয়। অশিক্ষায় ও কুশিক্ষায় সাপ-শকুন, গরুছাগল এবং মাটির মুর্তিও ভগবান মনে হয়। এবং মুজিবের ন্যায় দুর্বৃত্তও জাতির পিতা ও বন্ধু গণ্য হয়। ইসলামে তাই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদত হলো জ্ঞানার্জন -যা নামায-রোযার আগে ফরজ করা হয়েছিল। এবং সে জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস হলো পবিত্র কুর’আন।
জনগণ যখন সত্যিকার ঈমানদার ছিল তখন হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত উসমান ও হযরত আলীর ন্যায় সুযোগ্য ব্যক্তিগণ শাসক রূপে নির্বাচিত হয়েছে। জনগণ যখন সে যোগ্যতা হারিয়েছে তখনই এজিদ, মুজিব ও হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তগত শাসকের আসনে বসেছে। তখন বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের সমর্থনও করেছে। তাই গণতন্ত্রের সুফল পেতে হলে জনগণকে শিক্ষিত করতে হয়। রাস্তাঘাট ও কলকারখানা গড়ার চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষ গড়ার কাজ। দালান-কোটা, রাস্তাব্রিজ দুর্বৃত্তরাও গড়েত পারে। কিন্তু তারা মানুষ গড়তে পারে না। বরং দুর্বৃত্ত গড়ে।
এটি শতভাগ সত্য যে, জনগণকে সুশিক্ষিত ও বিবেবান বিচারক রূপে গড়ে তোলার কাজটি অতি দুরুহ। তবে দুরুহ হলেও অসাধ্য নয়। বিশ্বের বহু দেশের জনগণ সে মৌলিক সামর্থ্যটি অর্জন করেছে। ফলে মুজিব বা হাসিনার স্বৈরাচারী, মিথ্যাচারী ও ভোটডাকাতেরা সেসব দেশের শাসন ক্ষমতার ধারে কাছেও আসতে পারেনা। জনগণকে শিক্ষিত করার গুরু দায়িত্বটি যেমন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার, তেমনি উলামা, মসজিদের ইমাম, বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্যিক, মিডিয়াকর্মীসহ সকল জ্ঞানবান মানুষেরও। দেশের সুশিক্ষিত সকল নাগরিককেই এখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হয়। প্রতি পদে শিখবো এবং শেখাবো -এটিকে প্রতিটি নাগরিকের মিশনে পরিণত করতে হয়। পরিণত করতে হয় প্রতিদিনের বাঁচার সংস্কৃতিতে। সমগ্র দেশ তখন পাঠশালায় পরিণত হয়। একমাত্র তখনই গণতান্ত্রিক শাসনের সুফল লাভ ঘটে। এবং তখন দেশজুড়ে সভ্য সমাজও নির্মিত হয়। এছাড়া সভ্য মানুষ ও সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণে কোন সহজ পথ নাই।
২. যোদ্ধা হতে হয় প্রতিটি ঈমানদারকেই
যুদ্ধ দুই রকমের। একটি অস্ত্রের। অপরটি কলমের তথা বুদ্ধিবৃত্তির। অস্ত্রের যুদ্ধটি হয় দেশের সীমান্তের রণাঙ্গনে। বুদ্ধিবৃত্তির যুদ্ধটি কোটি কোটি মানুষের চেতনার ভূমিতে। অস্ত্রের যুদ্ধ মাঝে মাঝে হয়। বাংলাদেশে সে অস্ত্রের যুদ্ধটি বিগত ৫০ বছরে একবারও হয়নি। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধটি হয় প্রতিদিন ও প্রতি মুহুর্তে। মুসলিম জীবনে যুদ্ধ ফরজ। তাই ঈমানদার রূপে বাঁচতে হলে যুদ্ধ নিয়ে বাঁচতে হয়। সেটি যেমন প্রয়োজনে অস্ত্রের যুদ্ধ, তেমনি প্রর বুদ্ধিবৃত্তিকতি মুহুর্তে যুদ্ধ। ইসলামে এ যুদ্ধকে বলা হয় জিহাদ। ইসলামে এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ ইবাদতে ব্যয় হয় ব্যক্তির মেধা, শ্রম, অর্থ ও রক্তের। এ জিহাদ যেমন মিথ্যা, অন্যায় ও দুর্বৃত্তির নির্মূলের, তেমনি সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার।
দেশের ভাগ্য কখনোই মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে নির্ধারিত হয় না, সেটি হয় জিহাদের ময়দান থেকে। এবং সেটি বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের অঙ্গণ থেকে। কারণ বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদই শত্রুর পরাজয় আনে দেশবাসীর চেতনার ভূমিতে। জনগণের চেতনায় শয়তান তখন নিজের স্থান হারায়। মানুষের কর্ম, চরিত্র ও যুদ্ধ নিয়ন্ত্রিত হয় চেতনা থেকে। তাই চেতনার সে জায়গাতে বিজয় আনতে হলে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ অপরিহার্য। সে জিহাদে বিজয়ী হলে জনগণ তখন ইসলামের সৈনিক রূপে গড়ে উঠে। তখন তাদের মধ্যে অস্ত্রের যুদ্ধে যোগদানের জন্য জোয়ার সৃষ্টি হয়। আফগানিস্তানের জিহাদে যোগ দিতে বহু দেশ থেকে বহু হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে যারা ছুটে এসেছিল তারা সেই বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের ফসল। কোন দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ বিজয়ী হলে সে দেশের সেনাবাহিনী তখন জনগণের সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধ তখন জনগণের যুদ্ধে পরিণত হয়। তখন প্রতিটি জনপদ তখন ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়। এ পথেই মুসলিমগণ তাদের গৌরব যুগে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তি রূপে গড়ে উঠেছে। তখন দেশের পর দেশে বিজয় আনতে বেতনভোগী সৈনিক পালতে হয়নি। জনগণ তখন নিজের উঠ, নিজের ঘোড়া, নিজের অস্ত্র, নিজের বর্ম, নিজের অর্থ ও নিজের ঘরে তৈরী খাবার নিয়ে রণাঙ্গণে হাজির হয়েছে। কারণ জিহাদ হলো ইবাদত; এবং ইবাদতে থাকতে হয় নিজের বিনিয়োগ। আখেরাতে পুরস্কার জুটে তো বিনিয়োগের ভিত্তিতে। আফগানিস্তানের তালেবান ও গাজার হামাস শত্রুদের মনে যে আতংক সৃষ্টি করেছে তার কারণ তো এই, তারা ইসলামের গৌরব যুগের যুদ্ধরীতিকে ফিরিয়ে এনেছে। যুদ্ধকে বেতনভোগী সৈনিকদের চাকুরীর বদলে শ্রেষ্ঠ ইবাদতে পরিণত করেছে।
মুসলিমের পতনের শুরু তখন থেকেই যখন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইটি জিহাদের বদলে সেক্যুলারিস্টদের ধর্মশূণ্য যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। এবং সৈনিকগণ মুজাহিদ হওয়ার বদলে বেতনভোগ চাকর-বাকরে পরিণত হয়েছে। তখন জনগণের অর্থে প্রতিপালিত চাকর-বাকরগণ দেশের প্রতিরক্ষার বদলে নিজেরাই দেশ দখলে মনযোগী হয়েছে। এমনকি আব্বাসী খেলাফতও এদের হাতে অধিকৃত হয়েছে। মুসলিম ইতিহাসে তাদের শাসনকে বলা হয় মামলুক শাসন তথা দাসশাসন। এটি ছিল মূলত সৈনিক শাসন। কারণ, সৈনিকগণ তখন রাজার দাস রূপে গণ্য হত। একই অবস্থা আজকের মুসলিম দেশগুলিতে। প্রতিটি দেশে সেনাবাহিনী প্রতিপালিত হয় বিপুল অর্থ ব্যয়ে। গাড়ি-বাড়ি, চাকর-বাকর সহ তাদের বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা। নামে মাত্র মূলে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় তাদেরকে জমি দেয়া হয়, সে জমিতে বাড়ী বানানোর জন্য সহজ শর্তে লোনও দেয়া হয়। কিন্তু তাদের কাজটি কি? কখনো বা তারা বন্দুকের নল উঁচিয়ে দেশের উপর নিজেদের দখলদারী প্রতিষ্ঠা করে অথবা স্বৈরাচারী শাসকের পক্ষে ভোটডাকাতি করে এবং জনগণের প্রতিবাদের মুখে তাদের প্রতিরক্ষা দেয়।
যে দেশে ইসলামের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ নাই সে দেশে বিপুল সংখ্যক সৈনিক পায় শয়তানের সেনাদল। বিপদের আরো কারণ হলো, মুসলিমদের মাঝে অস্ত্রের জিহাদের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদও বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগে থেকেই। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা জ্ঞানার্জনকে বাধ্যতামূলক তথা ফরজ ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। অথচ বিশ্বে সবচেয়ে অশিক্ষিত হলো মুসলিমগণ। অথচ জ্ঞানার্জনকে বাধ্যতামূলক তথা ফরজ ইবাদতের মর্যাদা দেয়ার অর্থ, বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদকে সবার উপর বাধ্যতামূলক করা। সে জিহাদ বিলুপ্ত হওয়ায় ফায়দা লুটেছে শত্রুপক্ষ। ফলে মুসলিম ভূমিতে তাদের সেনাদলে সৈনিকের রিক্রুটমেন্ট বিপুল ভাবে বেড়েছে। তারই প্রমাণ হলো, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কালে ভারতে এবং আরব দেশগুলিতে ১০ লাখেরও বেশী সৈনিক পেয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যাদীগণ। ব্রিটিশের পক্ষে ইরাক, ফিলিস্তিন, সিরিয়া দখল করে দিয়েছে তারাই। একই কারণে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বিপুল সংখ্যক সৈনিক পেয়েছে ভারত। ভারতের আগ্রাসী বাহিনীর সাথে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে। ভারত আজও তাদের সেবাদাস চরিত্র নিয়ে প্রচণ্ড গর্বিত। এবং এখনও বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতসেবীদের সংখ্যা কি কম? তারা যেমন লড়ছে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে, তেমনি অস্ত্রের যুদ্ধে। বুয়েটের আবরার ফাহদকে শহীদ হতে হলো তো এ ভারতসেবী সৈনিকদের হাতেই। কারণ, পাকিস্তানী আমল থেকেই বঙ্গীয় ভূমিতে ভারতের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক সৈনিকদের সংখ্যাটি বিশাল। এবং বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গনে বিজয়টি আজও তাদেরই। বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে মূল অস্ত্র হলো সাহিত্য। এ যুদ্ধে ভারতের পক্ষে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্র রূপে কাজ করেছে রবীন্দ্রনাথসহ বাঙালী হিন্দুদের রচিত বিশাল সাহিত্য ভান্ডার।
তাই এ বিষয়ে প্রমাণের অভাব নাই, যে দেশে নামায-রোযা পালনের লোক কোটি কোটি, অথচ বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে ইসলামের পক্ষে সৈনিক নাই, সে দেশ অধিকৃত হয় শত্রুদের হাতে। তখন লাখ লাখ মসজিদ ও হাজার হাজার মাদ্রাসা থাকা সত্ত্বেও পরাজিত হয় ইসলাম। বাংলাদেশে সেটিই ঘটেছে। দেশটি আজ শত্রুশক্তির অধিকৃত ভূমি। মুসলিম জীবনে জিহাদ এজন্যই অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। জিহাদ না থাকলে মুসলিমদের স্বাধীনতা বাঁচে না। জানমাল এবং ইজ্জতও বাঁচে না। যাদের জীবনে নামায-রোযা আছে অথচ জিহাদ নাই নবীজী (সা:) তাদেরকে মুনাফিক বলেছেন। নবীজী (সা:)’র এ হাদীসের মোদ্দা কথাটি হলো ঈমান নিয়ে বাঁচতে হলে জিহাদ থাকতেই হবে। জিহাদ না থাকলে বুঝতে ঈমানের দাবীতে সে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী। এবং মহান আল্লাহতায়ালাও একই বয়ান দিয়েছেন সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। এজন্য নবীজী (সা:) এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যার জীবনে জিহাদ ছিল না। এবং মুনাফিক তো সেই যে কাফেরদের থেকেও নিকৃষ্ট ও মুসলিম উম্মাহর জন্য অধিক ক্ষতিকর।
৩. বাঙালীর একাত্তরের অর্জন
বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় যদি ভারতের চেয়ে ১০ গুণ অধিকও হয় তবুও বাংলাদেশীদের ভারতের প্রতি আজ্ঞাবহ হয়েই চলতে হবে। এটাই একাত্তরের অর্জন। ১৯৪৭’য়ের অর্জন থেকে একাত্তরের অর্জনের এখানেই মূল পার্থক্য। বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার জন্য ভারত যুদ্ধ করে দিয়েছে –এটি হলো ইতিহাসের সবচেয়ে হাস্যকর মিথ্যা কথা। অন্য কারো স্বাধীনতা নিয়ে ভারত কোন কালেই মাথা ঘামায়নি, একটি অর্থও বিনিয়োগ করেনি। ভারত বিনিয়োগ করে ও যুদ্ধ করে অন্য দেশে নিজের দখল জমাতে। ভারত ১৯৭১ সালে সেটিই করেছে বাংলাদেশের মাটিতে। আগামী বহুশত বছর এ দাসত্বই ভুগতে হবে বাঙালী মুসলিমদের। অথচ এ দাসত্ব পারমানবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানীদের নাই। বাংলাদেশের সমস্যাটি অর্থনৈতিক নয়, বরং সেটি ক্ষুদ্র ভূগোলের। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি রাশিয়ার চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু ক্ষুদ্র ভূগোলের কারণে রাশিয়ার ন্যায় বিশ্বশক্তি হতে পারিনি। ছোট দেশ হয়ে ভারতের ন্যায় আগ্রাসী ও মুসলিমবিদ্বেষী একটি বৃহৎ দেশের পাশে বসবাসের এটিই হলো সবচেয়ে ভয়াবহ বিপদ। তখন বাঁচতে হয় আশ্রিত দেশের মর্যাদা নিয়ে। বিশ্বের অন্যান্যরাও এরচেয়ে বেশী মর্যাদা দিতে রাজী হয়না। তাই আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তি রূপে ভারত পেয়েছে বাংলাদেশের উপর দাদাগিরির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলাদেশের জন্য এটিই বাস্তবতা। প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ বাংলাদেশীগণ যেমন আজ পাচ্ছে না, আগামীতেও পাবে না। জমিদারীর পাশের বাড়ীর কৃষককে যেমন সকাল-বিকাল জমিদারকে কুর্ণিশ করে চলতে হয়, বাংলাদেশেরও সেই একই অবস্থা।
স্বাধীন থাকার জন্য অতি জরুরী হলো প্রতিরক্ষার সামর্থ্য। সে জন্য অপরিহার্য হলো বৃহৎ ভূগোল ও বড় অর্থনীতি। সে ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য বাড়াতেই শেরে বাংলা ফজলুল হক, খাজা নাযিমুদ্দীন, সোহরাওয়ার্দীর ন্যায় বাংলার মুসলিম নেতাগণ স্বেচ্ছায় ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিল। একই কারণে ১৯৭১’য়ে সকল ইসলামী দল ও আলেম পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। অথচ আজ তাদেরকে দেশের স্বাধীনতার শত্রু রূপে গালী দেয়া হয়। এই হলো মুজিবভক্ত বাঙালী কাপালিকদের বিচার। অথচ ১৯৪৭ সালে কেউ জোর করে বা ষড়যন্ত্র করে বাংলাকে পাকিস্তানভুক্ত করেনি। বৃহত্তর সিলেটের জনগণ সেদিন ভোট দিয়ে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানভুক্ত হয়েছিল। ফলে আসামের মুসলিমগণ আজ যেরূপ গণহত্যা ও অপমানের শিকার হচ্ছে -তা থেকে তারা বেঁচেছে। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বিষয়গুলি আজ পড়ানো হয় না।
আরেকটি সত্য অতি পরিকল্পিত ভাবে গোপন করা হয়। সেটি হলো, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আযম মহম্মদ আলীর জিন্নাহর মৃত্যুর পর তাঁর আসনে যিনি বসেছিলেন তিনি কোন পাঞ্জাবী বা পাঠান ছিলেন না, তিনি হলেন ঢাকার খাজা নাযিমুদ্দীন। অথচ আজ পড়ানো হয়, পূর্ব পাকিস্তান ছিল পাকিস্তানের উপনিবেশ। ব্রিটিশের ১৯০ বছরের শাসনামলে কোন বাঙালী কি ভারত দূরে থাক বাংলার গভর্নর হতে পেরেছে? কথা হলো, বিদেশী শক্তির উপনিবেশ হওয়ার অর্থ কি ভারতসেবীগণ বুঝে?
বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের ভয়ানক অপরাধটি হলো, বাংলাদেশকে তিনি শুধু ভারতের অধীনে ২৫ সালা দাসচুক্তিতে আবদ্ধ এক গোলাম রাষ্ট্রে পরিণত করেননি, বরং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালী মুসলিমগণ বিশ্ব-রাজনীতি ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারতো -সে মর্যাদা থেকেও তিনি বঞ্চিত করেছেন। শত শত বছর বাঁচতে হবে সে বঞ্চনা নিয়ে। এটা ছিল বাঙালী মুসলিমের ১৯৪৭’য়ের চেতনার সাথে গাদ্দারী। এবং সেটি করেছেন ১৯৭০’য়ে নির্বাচনে পাকিস্তানের সরকার গঠনের নামে ভোট নিয়ে। কখনোই ভারতের সাথে চুক্তিবদ্ধ গোলাম হওয়ার জন্য তিনি ভোট নেননি। মুজিবের ইচ্ছা ছিল আজীবন ক্ষমতায় থাকা; এটিই ছিল তার জীবনের মূল এজেন্ডা। মুজিবের সে এজেন্ডা পূরণে গণতন্ত্রকে যেমন কবরে যেতে হয়েছে, তেমনি ভারতের গোলাম হতে হয়েছে বাঙালী মুসলিমদের।
৪. কুর’আন বুঝার গুরুত্ব
যে ব্যক্তি প্রভুর হুকুম বুঝার সামর্থ্য রাখেনা -সে কি কখনো তাঁর গোলাম রূপে নিযুক্তি পায়? মুসলিম হওয়ার অর্থ তো মহান আল্লাহতায়ালার আজ্ঞাবহ গোলাম হওয়া। সে জন্য তো জরুরি মহাপ্রভুর নির্দেশগুলি বুঝা। সে নির্দেশগুলি যেহেতু বর্ণীত হয়েছে পবিত্র কুর’আনে, অর্থ বুঝে কুর’আন পাঠ করাটি এজন্যই ফরজ। না বুঝে কুর’আন পাঠে সে সামর্থ্য সৃষ্টি হয় না, ফলে তার পর পক্ষে অসম্ভব হয় সত্যিকার মুসলিম রূপে দায়িত্বপালন। এমন মুসলিমদের কারণেই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের এজেন্ডা বাস্তবায়ীত হচ্ছে না। বরং অধিকৃত হয়ে আছে ইসলামের শত্রু পক্ষের হাতে। ১৩/০৬/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018