অধঃপতিত উম্মাহ: উত্থানের কাজটি শুরু করতে হবে কোত্থেকে?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 27, 2020
- Bangla Articles, মুসলিম জাহান
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
উত্থানে যে সূন্নত মহান আল্লাহতায়ালার
মুসলিম উম্মাহর পতনযাত্রা বহু শত বছর পূর্বে শুরু হলেও এখনও তা থামেনি। বরং দিন দিন আরো তীব্রতর হচ্ছে। বাড়ছে বিভ্ক্তি ও ইসলাম থেকে দূরে সরা। আজ যে ইসলাম নিয়ে মুসলিমদের বসবাস -তা নবীজী (সা:)’র ইসলাম নয়। এটি তাদের নিজেদের মনগড়া। নবীজী (সা)’র ইসলামে ইসলামী রাষ্ট্র ছিল, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ছিল, খেলাফা ছিল, ভাষা-বর্ণের উর্দ্ধে উঠে একতা ছিল এবং প্রতিটি মুসলিমে জীবনে ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদ ছিল। কিন্তু আজ তার কোনটাই নাই। ইসলাম ছাড়াই তারা মুসলিম! নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম খোদ মুসলিম দেশেই বিদেশী গণ্য হয়। যারা পতনমুখী এ জাতির উত্থান নিয়ে চিন্তিত, তাদের কাছে প্রশ্ন হলো উত্থানের কাজ শুরু করতে হবে কোত্থেকে? সেটি কি বাড়ী-ঘর, কৃষি, শিল্প ও রাস্তাঘাটে বিপ্লব এনে? এ বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নতই হলো শ্রেষ্ঠ নির্দেশনা। তিনি যেখান থেকে শুরু করেছিলেন মুসলিমদেরও আজ সেখান থেকেই শুরু করতে হবে। হযরত আদম (আ:)কে সৃষ্টির পর সর্বপ্রথম তিনি তাঁকে যা দিয়েছিলেন -তা হলো শিক্ষা। সে শিক্ষার গুণেই তিনি ফেরেশতাদের সেজদা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন। পবিত্র কোর’আন পাকে মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহতায়ালার যেটি প্রথম নির্দেশ, সেটিও নামায-রোজা-হজ্ব-যাকাত বা জিহাদের নয়। সেটি “ইকরা” তথা “পড়” অর্থাৎ জ্ঞানবান হওয়ার।
অন্ধকার রাতের পৃথিবীকে যেমন আচ্ছন্ন করে, অজ্ঞতা তেমনি আচ্ছন্ন করে মনের ভুবনকে। জ্ঞান দেয় মনের আলো। আর অজ্ঞতা হলো মনের অন্ধকার। সে বিশুদ্ধ জ্ঞানটি হলো পবিত্র কোর’আনের জ্ঞান। ন্যায়-অন্যায়, সত্য-অসত্য, শ্লিল-অশ্লিল ও পাপপংকিলতা চিনতে দিনের আলো কাজ দেয় না। এ জন্য চাই মনের আলো তথা কোর’আনী জ্ঞান। সে জ্ঞানের অজ্ঞতা তাই মানব জীবনে সবচেয়ে বড় পঙ্গুত্ব দেয়। সে পঙ্গু মানুষটি তখন সহজ শিকারে পরিণত হয় শয়তানের হাতেও। দেহের পঙ্গুত্ব জাহান্নামে নেয় না, কিন্তু মনের পঙ্গুত্ব নেয়। তাই মানব কল্যাণে সবচেয়ে বড় নেক কর্মটি মনের সে পঙ্গুত্ব তথা অজ্ঞতা দূর করা। যারা সে অজ্ঞতা হটায় তাদেরকে নবীজী (সা:) শ্রেষ্ঠ মানব বলেছেন।
পবিত্র কোর’আন পাকে বর্ণীত হয়েছে, আল্লাহপাক ঈমানদারদের বন্ধু। পরম বন্ধু রূপে ঈমানদারদের প্রতি মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ দানটি পানাহার, সন্তান ও সম্পদ নয়। সেগুলি তিনি কাফেরদেরও দেন। সর্বশ্রেষ্ঠ সে দানটি হলো, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যান। অর্থাৎ জান্নাতের পথ তথা সিরাতুল মুস্তাকীম দেখান। আর যারা বেঈমান -তাদের বন্ধু হলো শয়তান। শয়তানের কাজ তো ক্ষতিসাধন। এবং শয়তানের পক্ষ থেকে সবচেয়ে নাশকতামুলক কর্মটি হলো, সে আলো থেকে অন্ধকারে নেয়। এ ভাবেই মানুষকে জাহান্নামে নেয়। তাই যে ব্যক্তি মহান আল্লাহতায়ালা থেকে জ্ঞান-সমৃদ্ধ আলোকীত মন পেল -সেই এ জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কারটি পেল। একমাত্র এ পুরস্কারই জান্নাতের পুরস্কার আনে। আলোকীত মনের কারণেই অন্যায়, অসত্য ও অসুন্দর থেকে ন্যায়, সত্য ও সুন্দরকে যে ভাবে মরুর নিরক্ষর মুসলিমগণ আজ থেকে ১৪ শত বছর পূর্বে সনাক্ত করতে পেরেছিলেন। অথচ আজ সেটি পারছে না পাশ্চাত্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগনও। সেটিই পাশ্চাত্য সভ্যতার সবচেয়ে বড় পঙ্গুত্ব; বিস্ময়কর যান্ত্রিক উন্নয়নেও মনের এ পঙ্গুত্ব ঘুঁচছে না। এ নৈতিক পঙ্গুত্বের কারণেই পাশ্চাত্য দেশে ব্যাভিচার, ফ্রি-সেক্স, হোমোসেক্সুয়ালিটি, মদপানের ন্যায় আদিম পাপাচারও আজ পাপাচার রূপে গণ্য হচ্ছে না। বরং সে পাপ গণ্য হচ্ছে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সভ্য আচার রূপে। ১৪ শত বছর পূর্বে ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা যেখানে ভৃত্যকে উঠের পিঠে চড়িয়ে উঠের রশি নিজে টেনেছেন, প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন মানব মাঝে সমতা। তথচ পাশ্চাত্যে মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কিছু দিন আগেও তারা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের গলায় রশি বেধে গবাদী পশুর ন্যায় হাটে তুলেছে। বর্ণগত প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা দিতে এথনিক ক্লিনজিংয়ে নেমেছে রেড-ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে।
প্রথম ফরজ বিধানটি জ্ঞানার্জন
জ্ঞানার্জন প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরজ। মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সা:)’র উপর বিশ্বাস স্থাপনের পর এটিই হলো ইসলামের প্রথম ফরজ। অন্যান্য ফরজ বিধানগুলো এসেছে তার পর। তাছাড়া জ্ঞানার্জনের ফরজ পালন ছাড়া অন্য ফরজগুলি পালন কি সম্ভব? ইসলাম খৃষ্টান ধর্ম, হিন্দু ধর্ম বা অন্য কোন ধর্মের ন্যায় নয় যে গীর্জার যাযক বা মন্দিরের ঠাকুরকে দিয়ে উপাসনা করিয়ে নেয়া যায়। ইসলামে ইবাদতের দায়িত্ব প্রতিটি ব্যক্তির, কাউকে দিয়ে এ দায়িত্ব পালিত হওয়ার নয়। তাই ইসলামের খলিফাকেও প্রজার ন্যায় একই ভাবে নামাজ-রোযা, হজ্ব ও অন্যান্য ইবাদত করতে হয়েছে। তেমনি জিহাদের ময়দানে শুধু সৈনিকদেরই নয়, খলিফাকেও হাজির হতে হয়েছে। আর ইবাদতে তো চাই জ্ঞান-সমৃদ্ধ মনের সংযোগ; ইবাদতের সামর্থ্য অর্জনে জ্ঞানার্জন তাই জরূরী।
জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্য শুধু পড়া, লেখা বা হিসাব নিকাশের সামর্থ্য বৃদ্ধি নয়, বরং মনের অন্ধকার দূর করা। ব্যক্তির দেখবার ও ভাববার সামর্থ্যে বিপ্লব আনা। মনের অন্ধকার নিয়ে মহান আল্লাহর কুদরতকে দেখা যায় না, দেখা যায় না তাঁর মহান সৃষ্টিরহস্যও। জাহেল ব্যক্তি এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালার অসীম সৃষ্টি জগতের মাঝে বসেও তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। জ্ঞানার্জন ইসলামে নিজেই কোন লক্ষ্য নয়, বরং লক্ষ্যে পৌঁছবার মাধ্যম মাত্র। লক্ষ্যটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন। এবং এটিই মুমিন ব্যক্তির জীবন-লক্ষ্য। গাড়ীর চালক যেমন যাত্রা শুরুর আগে রোগম্যাপটি জেনে নেয়, মহান আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্যে পৌঁছবার জন্য মুসলিমকেও তেমনি সঠিক রোড-ম্যাপটি জেনে নিতে চায়। আর সে রোড-ম্যাপের সঠিক জ্ঞানলাভই হলো মুসলিম জীবনে জ্ঞানার্জনের মূল লক্ষ্য। রোড-ম্যাপের এ প্রাথমিক জ্ঞানলাভটুকু সঠিক না হলে জীবনে বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি অনিবার্য হয়ে উঠে। বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে বিপুল বিপ্লব এসেছে; কিন্তু এরপরও অসংখ্য মানব যে আজ সীমাহীন বিভ্রান্তির শিকার -তার কারণ তো রোড ম্যাপ নিয়ে অজ্ঞতা।
ইসলামে জ্ঞানের অর্থ এ নয়, তাতে উপার্জনের সামর্থ বাড়বে বা কলাকৌশলে দক্ষতা বাড়বে। জ্ঞানের মোদ্দা কথা, তাতে সৃষ্টি হতে হবে মহান আল্লাহতায়ালার ভয়। যে জ্ঞান মহান আল্লাহতায়ালাকে চিনতে সাহার্য্য করলো না এবং মনে আল্লাহতায়ালার ভয়ও সৃষ্টি করলো না -সে জ্ঞান ঈমানদারের কাঙ্খিত সে জ্ঞান নয়। এটি কারিগরী দক্ষতা, ট্রেড স্কিল বা তথ্য ও তত্ত্বজ্ঞান হতে পারে; বাঁচার আয়োজনে সে জ্ঞান সমৃদ্ধিও আনে। তবে এ জ্ঞান ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায় না; জান্নাতেও নেয় না। ফলে সেটি যথার্থ জ্ঞান বা ইলম নয়। প্রকৃত কল্যাণকর জ্ঞান তো তাই -যা দুনিয়াতে যেমন কল্যাণ দেয়, তেমনি কল্যাণ দেয় অনন্ত-অসীম পরকালেও। অনেক পশুপাখিরও বিস্ময়কর দক্ষতা থাকে যা মানুষেরও নেই। কুকুর যেভাবে লুকানো মাদক দ্রব্য বা অপরাধীকে সনাক্ত করে -তা মানুষ বা মানুষের তৈরী আধুনিক যন্ত্রের নাই। কিন্তু এর জন্য পশুপাখিকে জ্ঞানী বলা হয় না।
মহান আল্লাহতায়ালা কোর’আন মজিদে বলেছেন, “ইন্নামা ইয়াখশাল্লাহা মিন ইবাদিহিল উলামা।” অর্থ: “একমাত্র জ্ঞানীরাই আমাকে ভয় করে।” এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, জ্ঞান বলতে মহাজ্ঞানী রাব্বুল আলামীন কি বুঝাতে চান। জ্ঞানের মাপকাঠি তিনি বেঁধে দিয়েছেন। যার মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালার ভয় নেই তার মধ্যে ইলমও নেই। পবিত্র কোরআন মজীদের অন্যত্র তিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্ঠি ও রাত-দিনের ঘুর্ণায়নের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।” অর্থাৎ মহান আল্লাহতায়ালা সৃষ্ট বিশাল গ্রন্থ হলো বিশ্ব-চরাচর, এ গ্রন্থের প্রতিটি ছত্রে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আয়াত তথা নিদর্শন। জ্ঞানী তো তারাই যারা স্রষ্টার সে বিশাল গ্রন্থটি পাঠের সামর্থ্য রাখে। নানা ভাষার গ্রন্থ্য পাঠের যাদের সামর্থ্য রয়েছে অথচ স্রষ্টার এ গ্রন্থ্য পাঠে যোগত্য নেই -তাদেরকে আর যাই হোক জ্ঞানী বলা যায় না। জ্ঞানী তো তিনিই যার পুস্তক পাঠের সামর্থ্য না থাকলেও সামর্থ্য আছে বিশ্বচরাচরে ছড়ানো ছিটানো আল্লাহতায়ালার নিদর্শনগুলো পাঠের। সে সামর্থ্যটি হলো কোর’আনের ভাষায় “বাছিরা” তথা অন্তরের দৃষ্টি। শিক্ষকের কাজ ছাত্রের অন্তরের সে দৃষ্টিকে শানিত করা। নবীজী (সা:) তাঁর সাহাবাদের অংক বা বিজ্ঞান শেখানি, বরং গভীর সমৃদ্ধি এনেছেন তাদের অন্তরের দৃষ্টিতে। অন্তরের দৃষ্টি না থাকলে সিরাতুল মুস্তাকীমে চলাকালে মহান আল্লাহতায়ালার আয়াতগুলো বিশ্বচরাচরের নানা প্রান্ত থেকে যে জ্ঞান দান করে -তা থেকে শিক্ষা নিতে সে ব্যর্থ হয়। মুসলিমগণ ইসলামের প্রাথমিক যুগে অবিস্মরণীয় জ্ঞানী হয়েছিলেন তো সে সামর্থ্য থাকার কারণেই।
পতন যে কারণে অনিবার্য
পবিত্র কোর’আন পাকে বলা হয়েছে, জ্ঞানী আর অজ্ঞ ব্যক্তি কখনই এক নয়। -(সুরা যুমার, আয়াত ৯)। অন্যত্র বলা হয়েছে, “আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যান চান, তাঁর জ্ঞান বৃদ্ধি করে দেন। -(সুরা মুযাদিলা, আয়াত ১১)। অর্থাৎ মানুষের জন্য জ্ঞানের চেয়ে কল্যানকর কিছু নাই। তাই নিছক সম্পদের অন্বেষণে জীবনের সামর্থ্য বিনিয়োগে প্রকৃত কল্যাণ নাই, সম্পদের লোভ পশুর চেয়েও নীচুতে পৌঁছে দেয়। পশুর বাঁচাবার মূল প্রেরণাটি আহার সংগ্রহ হলেও -তার একটা সীমা থাকে। পেট পূর্ণ হলে সে আর তালাশ করে না। কিন্তু মানুষ সম্পদের পাহাড়ে বসেও আরো চায়। সে বিরামহীন চেষ্টা চলে কবরে যাওয়ার পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত। কোর’আনের জ্ঞান এক্ষেত্রে ব্যক্তির জীবনে ব্রেকের কাজ করে। মহান আল্লাহতায়ালা চান, ব্যক্তির জীবনে সে জ্ঞানে লাগাতর বৃদ্ধি ঘটুক। সে জ্ঞান যেহেতু তাঁর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত, অনুগত বান্দাদের শিখিয়েছেন কি ভাবে সে জ্ঞানের বৃদ্ধিতে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে হয়। সে দোয়াটি হলো: “হে রব! আমার জ্ঞানে বৃদ্ধি করে দাও।” (সুরা ত্বা হা, আয়াত ১১৪)। জ্ঞান থাকাটাই বড় কথা নয়, বরং সে জ্ঞানে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি হওয়া চাই। তাই উত্তরোত্তর জ্ঞান বৃদ্ধিকে এ দোয়ায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
জাতিকে বিজয়ী জাতি হিসাবে টিকে থাকার জন্য অবিরাম শিক্ষা শুধু জরুরি নয়, অপরিহার্যও। জ্ঞানের বৃদ্ধি যে দিন থেমে যায়, সেদিন থেকে পচন শুরু হয় ব্যক্তির মন ও মননে। যেমন খাদ্য গ্রহণ বন্ধ হলে ব্যক্তির জীবনে অনিবার্য হয় মৃত্যু। নবীপাক (সাঃ) এই জন্যই বলেছেন, “ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যার জীবনে একটি দিন অতিবাহিত হলো অথচ তার ইলমে বৃদ্ধিই ঘটলো না।” নবীজী (সাঃ) আরো বলেছেন, কবর থেকে দোলনা পর্যন্ত জ্ঞান লাভ করো। অর্থাৎ দেহে যতদিন প্রাণ আছে, ততদিনই জ্ঞান-অর্জন লাগাতর লেগে থাকতে হবে। ইসলাম তার প্রারম্ভ থেকেই নিরবিছিন্ন জ্ঞানলাভে যে কতটা গুরুত্ব দিয়েছে এ হলো তারই প্রমাণ। ইসলামে বিদ্যার্জন শুধু পরীক্ষায় পাশ বা সার্টিফিকেট লাভের জন্য নয়, বরং আল্লাহতায়ালাকে খুশী করা বা তাঁর দরবারে নিজের মর্যাদাকে বাড়ানোর একটি মোক্ষম হাতিয়ার। তাই মুসলিমের জন্য শিক্ষালাভ এ জন্যই স্বল্পকালীন বিষয় নয়, এটি এক আমৃত্যু প্রচেষ্টা।
যা করলে মহান আল্লাহতায়ালা খুশী হন, ইসলামে সেটিই ইবাদত। তাছাড়া জ্ঞানদান মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব শ্রেষ্ঠ সূন্নত। সে সূন্নতের ধারাকে তিনি সমুন্নত রেখেছেন পবিত্র কোর’আন নাযিল করে। তাই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে যারা প্রিয় হতে চায় তাদেরকে জ্ঞানবান হয়। তিনি চান মানব তাঁর অস্তিত্ব ও সর্বময় কুদরতের পক্ষে বিশ্ববাসীর সামনে সাক্ষ্য দিক। সে সাক্ষ্য মুর্খের বদলে কোন জ্ঞানবান ব্যক্তির পক্ষ থেকে পেশ করা হলে তার মূল্য অধিক হয়। এতে জনগণের মাঝে তাঁর দ্বীনের বিজয় বাড়ে। জ্ঞানীর কলমের কালীকে শহীদের রক্তের চেয়েও অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে তো এ কারণেই। শহীদ রক্ত দেয় রণাঙ্গণে, তাতে জিহাদে মুসলিম বাহিনীর বিজয় আসে। আর জ্ঞানীর কলম জিহাদ করে মানুষের চেতনায় ভূমিতে। তখন ইসলাম বিজয়ী হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন ও মনন জুড়ে।
ইসলামের বিপ্লব মূলত জ্ঞান ও আমলের বিপ্লব
ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা বিদ্যাশিক্ষাকে প্রতিটি নর-নারীর বাধ্যতামূলক করেছিল। ইসলামের বিপ্লব মূলত জ্ঞানের বিপ্লব তথা হৃদয়লোকের বিপ্লব। সে সাথে আমলের বিপ্লবও। ঈমানদার তাঁর সকল মহৎ কাজে উৎসাহ পায় ধর্মীয় বিধান থেকে, প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণও তেমনি প্রবল উৎসাহ পেয়েছিল ইসলামের জ্ঞানার্জনের ফরজ বিধান থেকে। ফলে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মাত্র কয়েক দশকে জ্ঞানবিজ্ঞানে অভূতপূর্ব বিপ্লব এসেছিল। যে আরবী ভাষায় কোরআনের পূর্বে কোন গ্রন্থ ছিল না, সে আরবী ভাষায় জ্ঞানের এক এক বিশাল ভান্ডার গড়ে উঠে। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, একমাত্র দুই ব্যক্তিকে নিয়ে হিংসা করা যায়। প্রথমতঃ সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহপাক প্রচুর সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা থেকে প্রচুর দান খয়রাত করে। দ্বিতীয়তঃ সে ব্যক্তি যাকে আল্লাহপাক জ্ঞান দান করেছেন এবং তিনি জ্ঞানের আলোকে জীবন পরিচালনা করেন এবং তা অন্যদের শেখান। -(সহিহ বুখারী ও মুসলীম)।
হাদীস পাাকে আরো এসেছে, “যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে পথে বের হন, আল্লাহতায়ালা তাঁর জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” -(সহীহ মুসলিম)। তিরমিযী শরিফের হাদীসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে ঘর থেকে বের হয়, সে ব্যক্তি ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অবস্থান করে। আরো বলা হয়েছে, জ্ঞানীর ঘুম একজন অজ্ঞ ইবাদতকারীর ইবাদতের চেয়েও উত্তম। যিনি ইলম শিক্ষা দেন তাঁর জন্য মহান আল্লাহতায়ালা রহমত নাযিল করেন। ফেরেশতাকুল, জমিন ও আসমানের বাসিন্দা, এমনকি পিপিলিকা এবং মাছও তাদের জন্য দোয়া করতে থাকে। -(তিরমিযী শরিফ)। প্রশ্ন হলো, আর কোন ধর্মে কি বিদ্যাশিক্ষাকে এতো অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে? অথচ পরিতাপের বিষয়, আজকের মুসলিমগণ ইতিহাস গড়েছে আজ্ঞ থাকায়।
জ্ঞানার্জনকে শুধু নবীজী (সাঃ) নন, সাহাবায়ে কেরামও অতিশয় গুরুত্ব দিয়ে নসিহত করে গেছেন। সে নসিহতগুলো যে কতটা বলিষ্ঠ ও হৃদয়স্পর্শী ছিল –তার উদাহরণ দেয়া যাক। হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, সম্পদ মানুষকে পাহারাদার বানায়, আর জ্ঞান মানুষকে পাহারা দেয়। তিনি আরো বলেছেন, সম্পদ চুরী হয়, কিন্তু জ্ঞান চুরী হয় না। একমাত্র জ্ঞানই হলো এমন সম্পদ যা দিলে কমে না, বরং বৃদ্ধি পায়। তিনি আরো বলেছেন, জ্ঞানবান মানুষ বিনয়ী হয়। হযরত আলী (রাঃ)’র মতে সন্তানদের জন্য রেখে যাওয়া শ্রেষ্ঠ সম্পদটি অর্থ নয়, বরং সেটি জ্ঞান। পিতা-মাতার মৃত্যুতে বা তাদের অনুপস্থিতে একমাত্র জ্ঞানই সন্তানদেরকে বিপথে হারিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। অথচ রেখে যাওয়া সম্পদ পাপের পথে ব্যয় হতে পারে এবং তা সন্তানকে জাহান্নামেও নিতে পারে।
কুশিক্ষার নাশকতা
কুশিক্ষার নাশকতা বিষপানের চেয়েও ভয়ানক। বিষপানে দেহের মৃত্যু ঘটে। আর কুশিক্ষায় মৃত্যু ঘটে বিবেকের। বাংলাদেশে শিক্ষার নামে কুশিক্ষার আয়োজনই অধিক। দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বাড়লেও আলোকিত মনের মানুষ বাড়ছে না। বরং গ্রামের সুবোধ বালক এসব শিক্ষাঙ্গণে এসে নৃশংস দুর্বৃত্তে পরিণত হচ্ছে। চুরিডাকাতি ও নানারূপ দুর্বৃত্তিতে তথাকথিক শিক্ষিতরা নিরক্ষরদেরও হারিয়ে দিচ্ছে। দেশকে যারা বিশ্বে প্রথম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে তারা নিরক্ষর কৃষক বা শ্রমিক নয়, তারা হলো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটধারীগণ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হচ্ছে আদিম অসভ্যতার চর্চা। সেখানে ধর্ষণে সেঞ্চুরী হয় এবং সে সাথে ধর্ষণ নিয়ে উৎসবও হয় –যেমনটি জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে। ছাত্ররা পাচ্ছে খুনের প্রশিক্ষণ। তাদের হাতে নির্যাতিত হয় -এমন কি লাশ হয় নিরীহ ছাত্রগণ। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এর চেয়ে বড় কলংক আর কি হতে পারে? আর কুশিক্ষার প্রভাব রাজনৈতিক অঙ্গণে কি কম? নির্বাচনের নামে জনগণের ভোট ডাকাতি হয়, আবার ডাকাতি শেষে সে ডাকাতি নিয়ে উৎসবও হয়। এসবই তাদের দ্বারা হয় যারা নিজেদের শিক্ষিত রূপে দাবী করে। এমন কুশিক্ষা দেশের পতনযাত্রাকে তীব্রতর করবে সেটিই স্বাভাবিক নয়?
চাই ইনসানে কামেল
অপূর্ণাঙ্গ মানব দিয়ে সভ্য সমাজ নির্মাণ সম্ভব নয়। সে জন্য জরুরি হলো মানব সন্তানকে ইনসালে কামেল তথা পূর্ণাঙ্গ মানব রূপে গড়ে তোলা। ইসলাম জ্ঞানার্জনকে সভ্য ও পুর্ণ মানব গড়ার হাতিয়ার বানাতে চায়। এরূপ সম্পূর্ণ মানুষকেই ইসলামী পরিভাষায় “ইনসানে কামেল” বলা হয়। ইনসানে কামেল অর্থ খানকার দরবেশ বা কোন পীর সাহেব নন। পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থায় একজন বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের কোন একটি শাখায় বহু কিছু জানলেও তার গভীর অজ্ঞতা ধর্মকে নিয়ে। ধর্ম বিষয়ে তার অজ্ঞতা হাজার বছর বা দুই হাজার বছর পূর্বের আদিম মানুষের চেয়ে কম নয়। এজন্যই ভারতের একজন সেরা বিজ্ঞানী সাপ, গাভী বা মাটির পুতুলকে ভগবান ভেবে পূজা দেয়। তেমনি পাশ্চাত্য দেশের নোবেল বিজয়ী একজন বিজ্ঞানী যীশুকে মহান আল্লাহতায়ালার পুত্র ভাবতে পারে। অপরদিকে বাংলাদেশে মাদ্রাসার একজন ছাত্র বেড়ে উঠে বিজ্ঞানের অনেক মৌল বিষয়ের উপর গভীর অজ্ঞতা নিয়ে। জ্ঞানার্জনের এ ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি মানুষকে অতিশয় অপূর্ণাঙ্গ করে গড়ে তুলছে। কিন্তু ইসলাম মানুষকে চায় পূর্ণাঙ্গ বা কামেল করতে। আজকের আলেমদের ন্যায় নবীজীর যুগের মুসলিমগণ অপুর্ণাঙ্গ বা নাকেছ ছিলেন না। তারা যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম ছিলেন, তেমনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা, গভর্নর, জেনারেল এবং রাজনীতিবিদ। তারা যেমন মসজিদেও নামাজে আওয়াল ওয়াক্তে হাজির হতেন তেমনি যুদ্ধের ময়দানেও ফ্রন্ট লাইনে থাকতেন। “ইনসানে কামেল” তথা পূর্ণ মানবের নজির তো তাঁরাই। অথচ আজকের আলেমদের ক’জন তাদের ৪০, ৫০, ৬০ বা ৭০ বছরের জীবনে একটি বারের জন্যও শত্রুর সামনে দাঁড়িয়েছেন? এর কারণ, অপূর্ণাঙ্গ শিক্ষা।
ইলমের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গতা বিধানে নবীজী (সাঃ) কোরআন-হাদিসের বাইরেও জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করেছেন। জ্ঞানার্জনে প্রয়োজনে চীন দেশে যাও – সেটি সম্ভবতঃ এজন্যই। এমনকি নবীজী (সাঃ) নিজেও শিখেছেন অন্যদের থেকে। যেমন খন্দকের যুদ্ধে পরীখার কৌশল শিখেছিলেন তাঁর ইরানী সাহাবা সালমান ফারসী থেকে। মুসলিম বিজ্ঞানীরা সেকালে গ্রীক ভাষা শিখেলিলেন। এরিস্টোটল, প্লেটো সহ বহু গ্রীক বিজ্ঞানী ও দার্শনিকের গ্রন্থকে তাঁরা অনুবাদ করেছিলেন। অনেকে ভারতের ভাষা শিখে হিন্দু বিজ্ঞানীদের বহু বইপুস্তক তরজমা করেছিলেন। সেটি ছিল মুসলিমদের গৌরব কাল। অথচ আজ তেমনটি হচ্ছে না। কারণ, যে জ্ঞান জাতিকে সামনে টেনে নেয় সেটির চর্চাই লোপ পেয়েছে।
জ্ঞানার্জনের একটি মাত্র মাধ্যম হলো পড়ে শিখা। তবে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যমটি হলো ছাত্রদের ভাবতে বা চিন্তাতে অভ্যস্থ্য করা। চিন্তার সামর্থ্য ব্যক্তির ভিতরে জেনারেটরের কাজ করে। এটি চালু হলে ব্যক্তির অভ্যন্তরে তখন সৃষ্টি হয় জ্ঞান লাভে দুর্দমনীয় ক্ষুধা। সে ক্ষুধা দমনে তখন সে পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র কোন কিছু অতিক্রমেই আর পিছপা হয় না। যে পাঠ্য পুস্তক বা শিক্ষকের যে বক্তৃতা ছাত্রকে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে না তা কি আদৌ জ্ঞানার্জনে সহায়ক? এতে সার্টিফিকেট লাভ সহজতর হলেও তাতে জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ে না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজই হলো ছাত্রের মনে জ্ঞানের প্রতি নেশা ধরিয়ে দেওয়া যা তাকে আজীবন জ্ঞানপিপাসু করবে। কিন্তু মুসলিম দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা পারিনি। ফলে বাড়েনি জ্ঞানের প্রতি সত্যিকার আগ্রহ। এমন জ্ঞান বিমুখীতাই একটি জাতির পতন ডেকে আনার জন্য কি যথেষ্ট নয়?
উড়বার প্রয়োজনে পাখীর দুটো ডানাই যেমন সবল ও সুস্থ থাকা উচিত, তেমনি সুস্থ সভ্যতার নির্মানে অপরিহার্য প্রয়োজন হলো ইসলাম ও বিজ্ঞান – এ দুটো শাখাতেই ভারসাম্যম মূলক অগ্রগতি। কিন্তু সেটি হয়নি। পাশ্চাত্য সমাজ আজ ধর্মবিবর্জিত যে শিক্ষার কারণে বিপর্যয়ের মুখে, আমরা সজ্ঞানে ও স্বেচ্ছায় সেদিকেই ধাবিত হচ্ছি। ধ্বংসমুখী এ জাতির উত্থানে আমাদের সামনে একটিই পথ। সেটি হলো, আমাদের ফিরে যেতে হবে মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত প্রেসক্রিপশনে। ইকরা বা জ্ঞানার্জনের মধ্য দিয়ে যেভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল আজও সেভাবেই শুরু করতে হবে। তবে সবচেয়ে আশার বাণী হলো, ইসলামের এ পথটি পরীক্ষিত পথ -যাতে ব্যর্থতার নজির নেই। বিশ্বের অন্য সব জাতি থেকে অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে মুসলিমদের যেমন মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, তেমনি গৌরবও রয়েছে। মানব ইতিহাসের শুরু থেকে এ অবধি অন্যরা লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তক্ষয়ে ব্যর্থতারই ইতিহাস গড়লেও মুসলিমদেরই রয়েছে নির্ভেজাল সফলতার গৌরবোজ্বল ইতিহাস। বস্তুতঃ মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার নির্মান হয়েছিল এ পথেই। অথচ মুসলিমগণ সে পথ থেকেই দিন দিন দূরে সরছে। ফলে গতি বাড়ছে তাদের পতনযাত্রায়। উত্থানের সে সফল পথটি তাদের কাছে উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। ২৭/১২/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018