অধিকৃত বাংলাদেশ এবং শত্রুশক্তির এজেন্ডাপূরণের রাজনীতি
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on October 31, 2020
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
অধিকৃতিটি শত্রুপক্ষের
বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা হলো, দেশটি এখন আর মুসলিমদের হাতে নেই্। ইসলাম ও মুসলিম –এ দুটি শব্দ পরিত্যক্ত হয়েছে দেশের মূল পরিচিতি থেকে। বাংলাদেশের উপর বর্তমান অধিকৃতিটি ইসলামের শত্রুপক্ষের। নিজের মুসলিম পরিচয়টি অবৈধ শাসকচক্রের কাছে কোন গুরুত্বই বহন করে না। গুরুত্ব পায় তার ভাষা, ভূগোল, বর্ণ ও দল ভিত্তিক পরিচয়টি। তারা গর্বিত সেক্যুলার বাঙালী রূপে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে যত উচ্চবাচ্যই হোক না কেন, দেশ শাসনে তারা স্বাধীন নয়। বরং অধিকৃতিটা এখানে ভারতের ন্যায় শত্রুদেশের। তাজউদ্দীনের প্রবাসী সরকারের ন্যায় বর্তমান শাসকচক্রটি দিবারাত্র খাটছে ভারতের এজেন্ডা পালনে। তবে পার্থক্যটি হলো, তাজউদ্দীনের বসবাস ছিল কলকাতায়, আর হাসিনার বাস ঢাকায়। পাকিস্তান আমলে যারা ছিল ভারতের ট্রোজান হর্স তথা গুপ্ত সৈনিক, একাত্তরের পর তারা অবতীর্ণ হয়েছে প্রকাশ্যে ময়দানে। তাদের কারণে ভারতের দখলদারিটি স্রেফ বাংলাদেশের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক অঙ্গণে নয়; সেটি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ধর্মীয় আক্বীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও। ক্ষমতাসীন জোটটি যে ভারতপন্থি সেটি তারা গোপনও করে না। বরং ভারতের প্রতি অবনত থাকা এবং ভারতীয় স্বার্থের পাহারা দেয়াটি নিজেদের দায়বদ্ধতা মনে করে। ভারতের প্রতি তেমন একটি দায়বদ্ধতার কারণে ভারতীয় অধিকৃতির বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করলে তাকে এরা লাশে পরিণতে করে। বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে তো এমন চেতনাধারীদের হাতেই নিহত হতে হলো। ফলে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পরিচিতি এখন ভারতীয় বলয়ভূক্ত একটি আশ্রীত দেশরূপে। ফলে বাংলাদেশে বুকে ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন বা শাপলা চত্ত্বরের ন্যায় গুরুতর গণহত্যা ঘটলেও বিদেশীরা তা নিয়ে কিছু বলে না। ভাবে, এটি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা ভাবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতেরও কিছু করার অধিকার আছে।
ভারতের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের উপর ভারতেসবীদের অধিকৃতি প্রথমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বরে। সেটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধজয়ের ফলে। পরবর্তীতে তা বার বার নতুন জীবন পেয়েছে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে। এ অধিকৃতির সাথে শুধু যে বাঙালী জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসী ক্যাডারগণ জড়িত –তা নয়। বরং জড়িত দেশের প্রশাসন,পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থা,নির্বাচনি কমিশন এবং মিডিয়া। কারণ, ভারতীয় পঞ্চম বাহিনী বা ট্রোজান হর্সদের অবস্থান শুধু দেশের রাজনীতির অঙ্গণে নয়, বরং সর্বস্তরে ও সর্বপ্রতিষ্ঠানে। ভারত-বিরোধী নেতাকর্মীগণ তাই লাশ হয় শুধু লগি-বৈঠা ও পিস্তলধারী রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে নয়, আদালতের বিচারকদের হাতেও। আত্মবিক্রীত বিচারকদের হাতে ভোট ডাকাতির নির্বাচনও সুষ্ঠ নির্বাচন রূপে বৈধতা পায়। শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যায় তাই রাজনৈতিক গুণ্ডাদের পাশে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায়। তাদের সাথে জড়িত রয়েছে বাংলাদেশের ভিতরে ও বাইরে কর্মরত ভারতীয় গুপ্তচরেরা। এরা কখনোই চায় না, বাংলাদেশের বুকে জনগণের মৌলিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাক। সেটি চাইলে ভারত সরকার কখনোই শেখ মুজিবের বাকশালী স্বৈরাচারকে সমর্থন দিত না। সমর্থন দিত না ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হাসিনা সরকারকে। ভারত চায় এক পরাধীন বাংলাদেশ। এবং কখনোই চায় না, দেশটির জনগণ নিজ নিজ ধর্মকর্ম ও আক্বীদা-বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠুক। তবে ইসলামের শত্রুপক্ষের এরূপ ষড়যন্ত্র নতুন নয়। এর শুরু ১৯৭১ থেকেও নয়। বরং সেটি ১৯৪৭ সাল থেকেই। তবে হাসিনার সুবিধাটি হলো, মুজিবের ন্যায় তাকে চোরা পথে আগরতলায় গিয়ে ভারতীয় গুপ্তচরদের সাথে গোপন বৈঠক করতে হয় না। সে বৈঠকগুলি বসে বঙ্গভবনে বা গণভবনে।
মুসলিমদের কীভাবে দাবিয়ে রাখা যায় -সে বিষয়ে ভারতীয় কুটিল শাসকগণ সিদ্ধহস্ত। সে কাজে তারা হাত পাকিয়েছে ভারত ও কাশ্মীরের মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানারূপ নির্যাতনে নেমে। ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি -যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার চেয়ে অধীক। অথচ একমাত্র ঢাকা শহরে যতজন মুসলিম ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, আইনবিদ, কৃষিবিদ, হিসাবরক্ষক, শিল্পপতি, প্রফেসর এবং সামরিক ও বেসামরিক অফিসার বসবাস করে এবং তাদের হাতে যত গাড়ী ও দালানকোঠা আছে তা সমগ্র ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের নাই। বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের কথা তো বাদই রইলো। এ প্রসঙ্গে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের স্থাপিত সাচার কমিশনের রিপোর্টটি বড়ই মর্মান্তিক। সে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতীয় মুসলিমদের অবস্থা দেশের অচ্ছুৎ নমশুদ্রদের চেয়েও খারাপ।
অসম্ভব করা হয়েছে ধর্মপালন
পরিপূর্ণ ধর্মপালন অসম্ভব করতে চালু করা হয়েছে নিয়ন্ত্রণের ভারতীয় মডেল। শুধু অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, ভারতীয় মুসলিমদের জন্য অসম্ভব করা হয়েছে ইসলামি শিক্ষালাভ, শরিয়ত পালন এবং পরিপূর্ণ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা। প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধান পালন ছাড়া কি পরিপূর্ণ ইসলাম পালন সম্ভব? শরিয়ত পালনের সে ব্যর্থতা নিয়ে কি মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে মুসলিম রূপে পরিচয় দেয়া যাবে? সেটি যে অসম্ভব, সেটি সুস্পষ্ট করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে, “যারা (কোরআনে) নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের। –তারা জালেম। –তারা ফাসেক।”-(সুরা মায়েদা আয়াত ৪৪,৪৫,৪৭)। তাই নামায-রোযা পালনে কোন ঈমানদার যেমন আপোষ করতে পারে না, তেমনি আপোষ করতে পারে না শরিয়ত প্রতিষ্ঠায়।
ইখতিয়ার মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাতে যখন বঙ্গ বিজিত হয় তখন বাংলার মুসলিম জনসংখ্যা শতকরা ১০ ভাগও ছিল না। অথচ তখনও তিনি শরিয়ত ভিন্ন অন্য কোন আইনকে আদালতে স্থান দেননি। কারণ মুসলিমের কাছে শরিয়তী আইন ভিন্ন সব আইনই কুফরী আইন। ফলে মুসলিম ভূমিতে সেগুলি আবর্জনার ন্যায় অবৈধ ও পরিতাজ্য। মুসলিম যেমন নিজ ঘরে মুর্তি রাখতে পারে না, তেমনি নিজ রাষ্ট্রে কুফরি আইনও রাখতে পারেনা। তাই কোন দেশে শাসনক্ষমতা হাতে পেলে মুসলিম শাসকগণ প্রথম দিন থেকেই নামায-রোযা, হজ-যাকাতের সাথে শরিয়তী আইনেরও প্রতিষ্ঠা শুরু করে। মুসলিম হওয়ার এটি এক অনিবার্য দায়বদ্ধতা। সেটি না করলে ঈমান থাকে না। আর ঈমান ভেঙ্গে গেলে কি ইবাদত কবুল হয়? কবুল হয় কি দোয়া-দরুদ? ওজু ভেঙ্গে গেলে যেমন নামায হয় না, তেমনি ঈমান ভেঙ্গে গেলে কোন ইবাদত ও দোয়াদরুদও কবুল হয় না। এমন কি হজ্বের দিনে দোয়া কবুলের স্থান আরাফতের ময়দানে গিয়ে দোয়া করলেও এমন কাফেরের দোয়া কবুল হয় না। ঈমানহীন,আমলহীন ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারহীন ব্যক্তিগণ যদি মুসলিম হওয়ার দাবী করে তবে তারা গণ্য হয় মুনাফিক রূপে। এমন ব্যক্তির নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, দোয়াদরুদ তাকে মুনাফিফ হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে না। ওহুদের যুদ্ধের সময় এমন মুনাফিকদের সংখ্যা ছিল শতকরা ৩০ ভাগ। মসজিদের জায়নামাজে তাদের চেনা যায়নি। তাদের মুনাফিকি ধরা পড়ে ওহুদ যুদ্ধের সময়। নবীজী (সাঃ) সে যুদ্ধে মদিনা থেকে এক হাজার সঙ্গি নিয়ে রওনা দেন, কিন্তু সে বাহিনী থেকে ৩০০ জন ছিটকে পড়ে। তখন ধরা পড়ে তাদের মুনাফেকি। নবীজী (সাঃ)র পিছনে নামায পড়ে এবং রোযা রেখেও মুনাফিক হওয়া থেকে তারা বাঁচেনি। এরূপ মুনাফিকদের সংখ্যা আজ যে বহুগুণ -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে?
এতো অপপ্রচার কেন জিহাদের বিরুদ্ধে?
বাংলাদেশের ন্যায় দেশগুলিতে সেক্যুলারিস্টগণ জিহাদের বিরুদ্ধে বড্ডো সোচ্চার। হেতু কি? কারণ, প্রতিটি দেশে জিহাদই দেয় মুসলিমদের জানমাল, ঈমান-আক্বিদা ও রাষ্ট্রের মুল প্রতিরক্ষা। সেটি ভাষা, ভূমি, আলোবাতাস বা জলবায়ু থেকে আনে না। তাই যেখানে জিহাদ নাই, সেখানে স্বাধীনতাও নাই। নাই পূর্ণ দ্বীন পালনের সুযোগ। তাছাড়া এ জিহাদই মুসলিম নামধারি ইসলামের শত্রুদের মুনাফিকি প্রকাশ করে দেয়। প্রকাশ করে দেয়, তাদের শত্রুশক্তির সাথে সম্মিলিত ষড়যন্ত্রগুলিও। তাই যে সমাজে জিহাদ নেই, সে সমাজে কে সাচ্চা ঈমানদার, আর কে মুনাফিক -সেটি চেনার অন্য উপায় নেই। তখন দুর্বৃত্ত ভণ্ডদের জন্য সহজ হয়ে যায় মুসলিম সেজে ইসলাম ও মুসলিমের ক্ষতি করাটি। তখন টুপিদাড়ি ও মাথায় কালো পট্টি বেঁধে মুসলিমদের ধোকা দেয়। জিহাদ যেহেতু তাদের আসল চেহারা ফাঁস করে দেয় এবং বানচাল করে দেয় তাদের এজেন্ডা, এ দুর্বৃত্তগণ ইসলামের এ সর্বোচ্চ ইবাদতকে তাই বন্ধ করতে চায়। এমন কি এ ইবাদতকে সন্ত্রাস বলেও প্রচার করে।
বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলীতে ইসলামের বড় বড় ক্ষতিগুলো কাফেরদের দ্বারা হয়নি; হয়েছে এসব মুনাফিকদের হাতে। ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিকতার নামে মুসলিম বিশ্ব যেরূপ ৫৭টি দেশে বিভক্ত -সেটি কি নবীজী (সাঃ)র সূন্নত? এটি তো ইসলামের শত্রু মুনাফিকদের কাজ। এমন বিভক্তিতে কি মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হন? নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে এসব মুনাফিকরা ছিল পরাজিত, কিন্তু এখন তারা বিজয়ী। ফলে বিপদ বেড়েছে ইসলাম ও মুসলিমের। ভাষা, বর্ণ ও ভূগোলের নামে মুসলিমদের বিভক্ত রাখা এবং শরিয়তী বিধানকে পরাজিত রাখাই তাদের রাজনীতি। নিজেদের বিজয়কে ধরে রাখার জন্য বিশ্বের তাবৎ কাফের শক্তির সাথে এরা মৈত্রী গড়ে। বাংলাদেশের মাটিতে সে অপরাধমূলক রাজনীতিটি হয়েছে দেশটির সেক্যুলারিস্টদের হাতে। এবং তাতে বিপুল ভাবে লাভবান হচ্ছে ভারত।
ব্যক্তির সাচ্চা ঈমানদারি ধরা পড়ে ইসলামের বিজয়ে তার আপোষহীন অঙ্গীকারে। মুনাফিকদের জীবনে সে অঙ্গীকার থাকে না। এ কারণেই তারা দূরে থাকে জিহাদের ময়দান থেকে। কারণ জিহাদ জান ও মালের কোরবানী চায়, স্রেফ মুখের কথা এখানে কাজ দেয় না। ফলে জান ও মাল বাঁচানো যাদের মূল লক্ষ্য, তারা নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচিত দিলেও পরিণত হয় জিহাদের শত্রুতে। এবং বিরোধীতা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সে লক্ষ্যে তারা জোট বাঁধে ইসলামের শত্রুপক্ষের সাথে। এ পথেই তারা নিজেদের স্বার্থ দেখে। এভাবে তারা নিজেদের পরিণত করে স্বার্থপর এক নিকৃষ্ট জীবে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মানব জাতির বিভাজনটি তিন শ্রেণীতে। এক). ঈমানদার, দুই). কাফের, তিন). মুনাফিক। ইসলামী রাষ্ট্র এবং সে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদে অংশ না নেয়ায় তারা ঈমানদার নয়। যেহেতু তারা নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করে সেহেতু তারা কাফেরও নয়। তারা গণ্য হয় মুনাফিক রূপে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মুনাফিকগণ গণ্য হয় কাফেরদের চেয়েও অধীকতর নিকৃষ্ট জীব রূপে। মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালার ক্রোধ যে কঠোর -সেটি বুঝা যায় পবিত্র কোরআনের এ আয়াতেঃ “নিশ্চয়ই মুনাফিকদের অবস্থান হবে জাহান্নামের আগুনের সর্বনিম্ন স্তরে, তাদের জন্য জুটবে না কোন সাহায্যকারী।” –(সুরা নিসা,আয়াত ১৪৫)। প্রশ্ন হলো,পরকালে যাদের জন্য বরাদ্দ জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্থান, দুনিয়াতেও কি তারা কোন সম্মানজনক স্থান পায়? বিশ্বমাঝে এরাই কাফেরদের থেকেও অধীক অপমানিত ও অসম্মানিত হয় এবং দুর্বৃত্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে।
যে কুফলটি শত্রুশক্তির অধীনতায়
শরিয়তের প্রতিষ্ঠা এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে এছাড়া সুস্থ্য সমাজ বা রাষ্ট গড়ে উঠতে পারে না। এজন্য নবীজী (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পর নিজের ঘর না গড়ে প্রথমে ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছেন। অথচ অধিকৃত বাংলাদেশে সেটি অসম্ভব। শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি চিত্রিত হচ্ছে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস রূপে। অথচ নামায-রোযার ন্যায় ইসলামের এটি অতি মৌলিক বিষয়। শরিয়ত পালিত না হলে ইসলাম পালন হয় না -সেটিই হলো ইসলামের বুনিয়াদী আক্বিদা। এমন একটি বিশ্বাসের কারণেই সিরাজদ্দৌলার আমলেও বাংলার প্রতিটি আদালতে শরিয়তী আইন ছিল। শরিয়তী আইন ছিল মোঘল শাসিত ভারতে। কিন্তু ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কাফেরদের দখলদারী প্রতিষ্ঠার পর নির্মূল করা হয় শরিয়ত আইন। এভাবে অসম্ভব করা হয় পরিপূর্ণ দ্বীনপালন। ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ার এটিই হলো সবচেয়ে বড় বিপদ। ব্রিটিশগণ ভারতের জনসংখ্যার শতকরা একভাগও ছিল না, কিন্তু ভারত জুড়ে কুফরি ব্রিটিশ আইন প্রয়োগ করতে তারা কোনরূপ বিলম্ব করেনি। অথচ তাদের অনুসারি বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের দাবী,শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা শতভাগ মুসলিম হতে হবে। নইলে অমুসলিমদের কি হবে? অথচ নবীজী বা খলিফায়ে রাশেদার আমলে মুসলিম ভূমিতে কি শতকরা ৮০ ভাগ মুসলিম ছিল? মিশরে আজও শতকরা ১৫ ভাগ অমুসলিম। অথচ বাংলাদেশে মুসলিমগণ জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ।
ইসলামের শত্রু শক্তির হাতে অধীনতার কুফলটি গভীর। এতে অসম্ভব হয় মহান আল্লাহতায়ালার পূর্ণ ইবাদত। এতে অসম্ভব হয় পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠা। তাই এটি হারাম। কাফের শক্তির অধিকৃতি থেকে বাঁচাটি তাই সর্বোচ্চ ইবাদত। সে হারাম থেকে বাঁচতে তাই জিহাদ লড়তে হয়। অথবা অধিকৃত সে দেশ থেকে হিজরত করতে হয়। বনের সিংহকে ২০ বছর খাঁচায় বন্দী রাখার পর দরজা খুলে দিলে সে খাঁচার বাইরে যায় না। স্বাধীন ভাবে বাঁচা ও শিকার ধরায় তার রুচী থাকে না। গোলামী জীবন এভাবে শুধু বন্দী বাঘ বা সিংহের অভ্যাসেই পরিবর্তন আনে না, পরিবর্তন আনে মানব সন্তানের বিশ্বাস, অভ্যাস ও সংস্কৃতিতেও। এরই উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। কাফেরদের গোলামীর খাঁচায় বাঙালী মুসলিমদের জীবন কেটেছে ১৯০ বছর। বিশ্বর খুব কম মুসলিম জনগোষ্ঠির জীবনেই এত দীর্ঘকালীন কাফের শক্তির গোলামী এসেছে। দিল্লির মুসলিমগণ গোলাম হয়েছে বাঙলীদের ১০০ বছর পর ১৮৫৭ সালে।
কাফেরদের জিন্দানে দীর্ঘ গোলামীর ফলে বাঙালী মুসলিমের জীবনে বিলুপ্ত হয়েছে পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচার রুচি এবং অভ্যাস। বিলুপ্ত হয়েছে ইসলামের সনাতন বিশ্বাস ও সংস্কৃতি। বরং চেতনার গভীরে ঢুকেছে কুফরির শিকড়। ফলে বাঙালী মুসলিগণ রুচি হারিয়েছে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও শরিয়ত পালনে। ফলে বিশ্বের কোনে কোনে আজ যেরূপ চলছে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে অদম্য জিহাদ, বাংলাদেশে মাদ্রাসার হুজুর বা মসজিদের ইমামগণ শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কথা মুখে আনতে রাজী নয়। তারা ভাবেন নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, দোয়া-দরুদ ও তাসবিহ পাঠ এবং বড় জোর তাবলীগ জামায়াতের ইজতেমায় অংশ নেয়াই হলো ইসলাম। তারা ভাবেন, পরকালে তাতেই মুক্তি মিলবে। কথা হলো, শরিয়তকে দূরে সরিয়ে কি পালিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার পূর্ণ গোলামী। নবীজী ও তার সাহাবাদের জীবনে একটি দিনও কি শরিয়তী আইনের বাইরে কেটেছে? শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা বাড়াতে বার বার তাদেরকে জিহাদের ময়দানে নামতে হয়েছে; পেশ করতে হয়েছে অর্থ ও রক্তের কোরবানী। বাংলাদেশের জন্য বিপদ হলো, বাংলাদেশ থেকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ বিদায় নিলেও বিদায় নেয়নি তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় গড়ে উঠা মানসিক গোলামগণ।
স্রেফ নামাজ-রোযা বা হজ্ব-যাকাতে কাফেরদের জিন্দানে গোলাম হওয়ার নাশকতা থেকে নাজাত মেলে না। সে সামর্থ্য নামাজ-রোযা, হজ-যাকাত ও দোয়াদরুদের থাকে না বলেই সে নাশকতা থেকে বাঁচাতে ইসলামের প্রেসক্রিপশন হলো জিহাদ। সে জিহাদে জানমালের কোরবানীর চেয়ে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে উত্তম কোন নেককর্ম নেই। তাই পবিত্র কোরআনের ঘোষিত হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালবাসেন যারা আল্লাহর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় সারি বেঁধে যুদ্ধ করে।” –(সুরা সাফ. আয়াত ৪)। ফলে যারা মহান আল্লাহতায়ালার ভালবাসা চায় তাদের সামনে জিহাদ ভিন্ন অন্য রাস্তা নাই। জিহাদ পালনে যারা অনীহা দেখায় মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে ঈমানের দাবীতে সাচ্চা বলতেও নারাজ। পবিত্র কোরআনে সে ঘোষনাটি এসেছে এভাবে, “একমাত্র তারাই মু’মিন যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান আনে, অতঃপর আর কোনরূপ দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে না এবং নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। (ঈমানের দাবীতে) তারাই সাচ্চা।”–(সুরা হুজরাত, আয়াত ১৫)। জিহাদ যে প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ এবং জিহাদ থেকে দূরে থাকা যে মুনাফেকীর লক্ষণ –অধিকাংশ মোফাচ্ছিরদের মতে এ আয়াতটি হলো তার সুস্পষ্ট দলিল। কথা হলো, একটি কাফের দেশের হামলা প্রতিরোধে যে যুদ্ধ তার চেয়ে পবিত্র জিহাদ আর কি হতে পারে?
তাই ঈমানের দাবীতে কে কতটা সাচ্চা -সেটি যাচাইয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত মাপকাঠিটি নামায-রোযা বা হজ-যাকাত নয়। বেশী বেশী দোয়াদরুদ পাঠও নয়। সেটি হলো জিহাদে জান ও মালের বিনিয়োগ। নামায-রোযা পালনে ও তাসবিহ পাঠে নবীজী (সাঃ)র সাহাবীদের জীবনে কোন রূপ কমতি ছিল না। কিন্তু এরপরও তারা শুধু নামাযী,রোযাদার বা হাজীই ছিলেন না, তাদের প্রত্যেকে সশস্ত্র যোদ্ধাও ছিলেন। সকল সঙ্গিদের রণাঙ্গনে হাজির করার ক্ষেত্রে সমগ্র মানব ইতিহাসে মহান নবীজী (সাঃ)র এটি এক অনন্য সাফল্য। বিশ্বের আর কোন নেতা কি তার অনুসারিদের সিকি ভাগকেও সশস্ত্র যোদ্ধা রূপে রণাঙ্গণে প্রাণদানে হাজির করতে পেরেছে? অথচ মহান নবীজী (সাঃ)র সাফল্য এক্ষেত্রে শতভাগ। জিহাদে ঈমানদারদের এরূপ আত্মদান ও অর্থদানের কারণেই মুসলিম ভূমি শত শত বছর যাবত বেঁচেছে কাফিরদের হাতে অধিকৃত হওয়া থেকে। মুসলিম ভূমিতো তখনই শত্রুর হাতে অধিকৃত হতে শুরু করেছে যখন ধর্মপালন স্রেফ নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠে সীমিত হয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামের শত্রুশক্তির বিজয়ের কারণ, জিহাদী চেতনা বিলুপ্ত হয়েছে অধিকাংশ মুসলিমের মগজ থেকে। ফলে মুক্তি মিলছে না শত্রুদের অধিকৃতি থেকে।
পুরনো পরাধীনতা নতুন নামে
স্বাধীনতার নামে অধিকাংশ মুসলিম দেশে আজও যা চলছে সেটি মূলতঃ ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে পুরানো পরাধীনতারই ধারাবাহিকতা। তবে সেটি নতুন নাম, নতুন মানচিত্র ও নতুন পতাকা নিয়ে। নাম, মানচিত্র ও পতাকা পাল্টে গেলেও পরাধীনতা যে শেষ হয়নি -সেটি বুঝা যায় মুসলিম দেশের আদালতগুলোর দিকে তাকালে। সেখানে পূর্ণ অধিকৃতি কুফুরী আইনের। দেখা যায়, সংবিধানে দিকে নজর দিলে। সেখানেও নাই মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব। প্রশ্ন হলো, দেশের উপর ইসলামের বিজয় ও মুসলিমদের দখলদারির প্রমাণ কি মসজিদ-মাদ্রাসা ও নামাযীর সংখ্যা? ভারতের ন্যায় কাফের শাসিত দেশে মসজিদের কি সংখ্যা কম? নামাযীর সংখ্যাও কি নগন্য? সেটি তো বুঝা যায় দেশে সার্বভৌমত্ব কোন আইনের –তা থেকে। একজন কাফের থেকে ঈমানদার ব্যক্তির ভিন্নতর পরিচয় তো মহান আল্লাহতায়ালা উপর তাঁর ঈমান ও আমলের কারণে। তেমনি মুসলমি দেশ কাফের দেশ থেকে ভিন্নতর পরিচয় পায় সে দেশে শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা থেকে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে মুসলিমের পরিচয়টি তাঁর পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত খলিফা রূপে। খলিফার সে দায়ভারটি শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও তাসবিহ পাঠে আদায় হয় না। সে লক্ষ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো কোরআনে বর্নিত শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। বস্তুতঃ সে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে প্রকাশে ঘটে সাচ্চা ঈমানের। সে ঈমানের বলেই এমন ব্যক্তি হাজির হয় জিহাদের ময়দানে। যার মধ্যে ঈমানের সে গভীরতা নাই -সে ব্যক্তি সারা জীবন নামায-রোযায় কাটালেই তাকে জিহাদে দেখা যায়না।
কী কারণে সর্বশ্রষ্ঠ জাতির মর্যাদা মুসলিমের?
অন্য কোন ইবাদতে প্রাণ গেলে সরাসরি জান্নাত জুটে না। কিন্তু জুটে জিহাদে প্রাণ গেলে। শহীদকে মৃত বলা হারাম। মহান আল্লাহতায়ালার পথে নিহত হওয়ায় সে পায় নতুন জীবন। এবং সেটি জান্নাতে। কিন্তু কেন এ মহান মর্যাদা জিহাদে প্রাণ দানে? কারণ, শহীদের প্রাণ দানে জাতি পায় শয়তানের গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচার অধিকার। নইলে শয়তানী শক্তির গোলামী অনিবার্য হয়। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ভাবে বসবাসের গুরুত্ব যে কত অধীক – শহীদদের বিশাল মর্যাদা থেকে সে প্রমাণই মেলে। ইসলামের বিজয় নিয়ে বাঁচার সে বিধানটি হলো জিহাদ। নবীজী (সাঃ)র সাহাবাগণ ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। সেটি নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলের কারণে নয়। বরং এ কারণে যে, তাদের আমলেই ইসলাম একটি বিজয়ী বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভুত হয়েছে। সে আমলে প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা পেয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র। পূর্ণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শরিয়ত। এবং তাদের আমলে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় ঝান্ডা উড়াতে যত জিহাদ সংগঠিত হয়েছে তা আর কোন কালেই হয়নি। সে সব জিহাদে তাদের জান ও মালের বিনিয়োগটি ছিল অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অধীক। শতকরা সত্তর ভাগের বেশী সাহাবা শহীদ হয়েছেন। সে বিশাল বিনিয়োগের ফলেই পেয়েছে বিশ্বশক্তির মর্যাদা। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে সবচেয়ে গর্বের জায়গাটি এজন্যই তাদের। পবিত্র কোরআনে তাদের কর্মের উপর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা।
কিন্তু বাংলাদেশীদের মাঝে কোথায় সে সাচ্চা ঈমানদারী? কোথায় সে আগ্রহ শ্রেষ্ঠ ইবাদতে? শত্রুপক্ষের অধিকৃতি থেকে মুক্তির লড়াইয়ে এবং ইসলামের বিজয়ে কোথায় সে জানমালের বিনিয়োগ? তারা তো অর্থ ও ভোট দেয়, এমন কি প্রাণ দেয় ইসলামের শত্রুপক্ষকে বিজয়ী করতে। ১৯৭১’য়ে বহু হাজার বাঙালী মুসলিম যুদ্ধ করেছে এবং প্রাণ দিয়েছে ভারতের ন্যায় একটি কাফের দেশকে বিজয়ী করতে। শত্রুর পক্ষে সে বিশাল বিনিয়োগটি তাদের নিজ জীবনে ভয়াবহ আযাব ডেকে এনেছে। মুজিব ও হাসিনার শাসন তো সে আযাবেরই অংশ। একাত্তরে ভারত বিজয়ী হওয়াতে অসম্ভব হয়েছে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। এবং সরকারি উদ্যোগে জিহাদের ন্যায় শ্রেষ্ঠ ইবাদতটি চিত্রিত হচ্ছে শাস্তিযোগ্য জঙ্গিকর্ম রূপে। এভাবে অসম্ভব করা হয়েছে পূর্ণ মুসলিম বাঁচা। এবং আইনসিদ্ধ ও প্রশংসনীয় কর্ম রূপে গণ্য হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ইসলামের শত্রুশক্তির বিজয়ে ভোট, শ্রম, অর্থ ও মেধার বিনিয়োগ।
শত্রুর স্বপ্ন পূরণের রাজনীতি
ইসলামের শত্রুপক্ষের দখলে গেলে যে বিপদগুলি অনিবার্য হয় -বাংলাদেশে তার সবগুলিই এসেছে। এবং এসেছে অতি বর্বর ভাবেই। আরো বহুবিধ বিপদ আসার অপেক্ষায় পাইপ লাইনে। বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতা অনেক। তবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি হলো, তারা ব্যর্থ হয়েছে বাংলার মুসলিম ভূমিতে ইসলামের শত্রুপক্ষের অধিকৃতি রূখতে। সেটি যেমন ১৭৫৭ সালে, তেমনি ১৯৭১। বরং ১৯৭১’য়ে কাফের শক্তির বিজয় বাড়াতে বহু লক্ষ বাঙালী গায়ে-গতরে খেটেছে শত্রুর চাকর-বাকরের ন্যায়। অনেকে প্রাণও দিয়েছে। অথচ মুসলিম ভূমিতে ভারতের ন্যায় কোন কাফের দেশের হামলা হলে জিহাদ আর ফরজে কেফায়া থাকে, সেটি নামায-রোযার ন্যায় ফরজে আইনে পরিণত হয়। নামাযে কাজা চলে, কিন্তু এ ফরজ পালনে কাজা চলে না।, নামাজ তখন মসজিদে নয়, জিহাদের ময়দানে গিয়ে পড়তে হয়। এ জিহাদে অংশ নিতে যাদের জীবেন ব্যর্থতা, তাদের জীবনে আযাবের কোন সীমা-সরহাদ থাকে না।
তবে বাঙালীর জীবনে এখন শুধু ব্যর্থতা নয়, শুরু হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পর্ব। বিদ্রোহ এখন এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দূরে থাক, যেখানেই ইসলাম ও মুসলিম –এ শব্দ দুটি আছে, সেখানেই কাঁচি চালানো হচ্ছে। শুরু হয়েছে ভারতের ন্যায় কাফের রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের রাজনীতি। ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতে যা কিছু ঘটেছে বা এখনো ঘটছে -সেগুলিই এখন ঘটছে বাংলাদেশে। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু নামটি এখনো বহাল তবিয়তে আছে; কিন্তু আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি কেটে ফেলা হয়েছে। যারাই ইসলামের শত্রুপক্ষের তাদের চরিত্রটি সব দেশেই একই রূপ হয়। তাদের মাঝে থাকে নানা ভাষা, নানা বর্ণ বা ভূগোলের নামে বিভক্তির দেয়াল। তাই দেয়াল নাই বাংলাদেশ ও ভারতে বসবাসকারি ইসলামের শত্রুদের মাঝেও। বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে আজকের যে ভূ-রাজনৈতিক দেয়াল -সেটির জন্ম একাত্তরে নয়। সেটি সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদীদেরও গড়া নয়। এটি নিরেট পাকিস্তানের লিগ্যাসী। এবং যা কিছু পাকিস্তানী সেগুলি বর্জন করাই সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের রাজনীতি। ফলে তাদের এ দখলদারি দীর্ঘায়ীত হলে সেদিন বেশী দূরে নয় যখন পাকিস্তানের গড়া সে দেয়ালকেও পাকিস্তানী বলে বিদায় দিবে। বাংলাদেশ তখন বিলুপ্ত হবে ভারতের পেটে।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রদেশ রূপে পূর্ব পাকিস্তানের যে মানচিত্রটি গড়ে উঠছিল তার পিছনে ছিল ভারতীয় হিন্দুদের থেকে ভিন্নতর একটি প্রবল চেতনা –সেটি পুষ্টি পেয়েছিল প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব থেকে। মুজিব ও হাসিনার চেতনায় ইসলাম না থাকায় ১৯৪৭’য়ের সে মুসলিম চরিত্রটিও তাদের রাজনীতিতে স্থান পায়নি। বরং আছে ভারতীয় হিন্দুদের চেতনার সাথে অভিন্নতা। অভিন্ন চেতনার কারণেই পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের শিরকপূর্ণ গানকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত বানিয়েছে। সে অভিন্ন চেতনায় ভারতীয় কায়দায় জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকেও মুসলিম শব্দটি কেটে দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল হয়ে গেছে সলিমুল্লাহ হল। এমন কি কাজী নজরুল ইসলামের নামের সাথে ইসলাম শব্দটিও তাদের সহ্য হয়নি। ফলে ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ হয়ে গেছে নজরুল কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রামে কোরআনের আয়াত ছিল, সেটিও মুজিবামলে বিলুপ্ত করা হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে একই রূপ বৈরীতা নিয়ে শেখ হাসিনা সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করেছেন মহান আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার ঘোষণাটি। মুজিবের ন্যায় হাসিনার রাজনীতিতে্ও ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে শত্রুতা যে কতটা তীব্র -এরপরও কি বুঝতে বাঁকি থাকে? হৃদয়ে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকলে কোন মুসলিম কি এমন মুসলিম বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতি করে?
হাসিনার উপর অর্পিত দায়ভার
ভারতীয় শাসকচক্রের এজেন্ডা পূরণ যেমন মুজিবের লক্ষ্য ছিল, সে লক্ষ্যটি হাসিনারও। জনগণের উপর আস্থা যেমন মুজিবের ছিল না, তেমনি নাই হাসিনারও। জনগণের উপর আস্থা বিলুপ্ত হলে স্বৈরাচারি শাসকগণ জনগণের ভোটের অধিকারটি কেড়ে নেয়। কেড়ে নেয় মিটিল-মিছিল ও মত প্রকাশের অধিকারও। মুজিব তাই একদলীয় বাকশালী শাসন চালু করেছিল। ভোটচুরি তখন কৌশল হয়ে দাঁড়ায়। অপর দিকে হাসিনা বেছে নিয়েছে দেশ জুড়ে ভোট ডাকাতির পথ। জনগণের উপর আস্থা বিলুপ্ত হলে বাড়ে বিদেশী শক্তির উপর নির্ভরতা। মুজিব ও হাসিনার কাছে সে বিদেশী শক্তি হলো ভারত। মুজিবের ন্যায় হাসিনাও জানে, ভারত খুশী হলেই তার গদি বাঁচবে। কথা হলো, ভারতের ন্যায় আগ্রাসী কুটিল রাষ্ট্রকে খুশি করা কি এতটাই সহজ? সিকিমের নেতা লেন্দুপ দর্জিকে সেটি করতে গিয়ে ভারতের পেটে সিকিমকে বিলীন করতে হয়েছে। মুজিব ও হাসিনার কাছেও তাই অনিবার্য হয়ে পড়ে ভারতীয় এজেন্ডাকে নিজেদের এজেন্ডা রূপে গ্রহণ করাটি। তাই ভারতীয় এজেন্ডার অন্তর্ভুক্তি দেখা যায় ভারতের সাথে মুজিবের স্বাক্ষরিত ২৫ সালা দাসচুক্তিতে। দেখা যায়, ভারতকে ফারাক্কায় পদ্মার পানি তুলে নেয়ার অধিকার দেয়াতে। এবং দেখা যায়, সীমান্ত বাণিজ্যের নামে ভারতীয় পণ্যের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ায়। এমন কি সেটি দেখা যায়, বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক অফিসগুলোতে গোয়েন্দাগিরির জন্য ভারতের গুপ্তাচর সংস্থা র’য়ের জন্য স্থান করে দেয়ায়।
তবে হাসিনার কাছে ভারতের দাবীর তালিকাটি আরো বিশাল। ভারত শুধু বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে করিডোর নিয়ে খুশী নয়। বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের রয়েছে কিছু গুরুতর ভীতি। দেশটির প্রচণ্ড ভয়, বাংলাদেশে ইসলামের আসন্ন উত্থান নিয়ে। এ ভয় ভারতীয় শাসক মহলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। মধ্যপাচ্যে ইসলামপন্থিদের উত্থান ঠ্যাকাতে সমগ্র পাশ্চাত্য শক্তি একজোট হয়েও হিমশীম খাচ্ছে। তারা পুরাপুরি ব্যর্থ হয়েছে আফগানিস্তানে। বাংলাদেশ ৪ কোটি মানুষের আফগানিস্তান বা ইরাক নয়। ভারতের ভয়, বাংলাদেশে ১৭ কোটি মুসলিমের জীবনে ইসলামের জোয়ার উঠলে সে জোয়ার ঠ্যাকানো ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। সে জোয়ার আঘাত হানবে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে –বিশেষ করে পশ্চিম বাংলা ও আসামে। তখন অসম্ভব হবে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে তার নিজের ভাড়াটিয়া সৈনিকদের বাঁচানো। ইসলামের সে জোয়ার ঠ্যাকাতে ভারত বাংলাদেশের সরকারকেও ব্যবহার করতে চায়।
ভারত জানে, বাঙালী মুসলিম জীবনে পাকিস্তানের পক্ষে জোয়ার উঠাতেই ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি এড়ানো সম্ভব হয়নি। পাকিস্তানের জনক মূলতঃ বাঙালী মুসলিমেরাই। তাদের ভয়, বাঙালী মুসলিম আবার ইসলামের পতাকা নিয়ে জেগে উঠলে ভারতের মানচিত্রে আবারো হাত পড়বে। ফলে হাসিনার উপর চাপানো দায়ভারও বেড়েছে। তাই ভারতের এজেন্ডা পূরণের স্বার্থে ইসলাম ও মুসলিমের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া ছাড়া শেখ হাসিনার সামনে ভিন্ন পথ নাই। ইসলামপন্থিদের দমনে ভারত সরকার বাংলাদেশের প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবীকে ঠ্যাঙ্গারে হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের শত শত নেতাকর্মীদের হত্যা ও হত্যার পর তাদের লাশগুলো মিউনিসিপালিটির ময়লা সরানোর গাড়িতে তুলে গায়েব করা এবং বিচারের নামে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের ফাঁসি দেয়ায় হাসিনা এজন্যই এতটা নির্মম। আর এতে প্রচুর শাবাস মিলছে ভারতের শাসক মহল থেকে।
আরেক কাশ্মির এখন বাংলাদেশ
ভারতীয় বাহিনী কাশ্মিরে যে কাজটি করছে, দিল্লির শাসকচক্র চায় হাসিনা সরকারও বাংলাদেশে সে অভিন্ন স্ট্রাটেজী নিয়ে অগ্রসর হোক। সমগ্র কাশ্মির এখন জেলখানা। ভারতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশকেও পরিণত করা হচ্ছে আরেক কাশ্মিরে। ইসলাম, ইসলামপন্থি ও ভারত-বিরোধীদের নির্মূলে হাসিনা এজন্যই এতোটা বেপরোয়া। আবরার ফাহাদদের মত দেশপ্রেমিকদের তাই অতি নির্মম ভাবে লাশ হতে হচ্ছে। তাছাড়া একাজে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় পঞ্চম বাহিনীর লোক কি কম? তারা শুধু রাজনীতির ময়দানে নয়, তারা দলে ভারী দেশের মিডিয়া, পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী এমন কি বিচার ব্যবস্থাতেও।
হাসিনা সরকারের এজেন্ডা এখন আর কোন গোপন বিষয় নয়। দেশের স্বার্থের চেয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের গদিরক্ষা এবং গদি রক্ষার স্বার্থ ভারতীয় এজেন্ডা পূরণ। দেশবাসীর স্বার্থ গুরুত্ব পেলে বহু খুন, বহু ধর্ষণ ও বহু হাজার কোটি টাকার ডাকাতির সাথে জড়িতদের অবশ্যই আদালতে তোলা হতো। এবং তাদের বিচার হতো। কিন্তু তা না করে হাসিনা ব্যস্তু ইসলাম ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলে। তার সরকারের নৃশংস নিষ্ঠুরতা বেড়েছে জনগণের মৌলিক অধীকার কেড়ে নেয়ায়। এবং নির্লজ্জতার সাথে নেমেছে ভোট ডাকাতিতে। একাজ তো দেশ ও জনগণের শত্রুদের। দেশের চিহ্নিত বিদেশী শত্রুদের সাথে হাসিনা সরকারের এজন্যই এতটা গভীর মিত্রতা।
যে অপরাধ জনগণের
ইতিহাসের আরেক সত্য হলো, ভয়ানক অপরাধগুলি শুধু অপরাধী শাসকচক্রের কারণে ঘটে না, সেগুলি বরং তীব্রতর হয় জনগণের পক্ষ থেকে সে অপরাধ সয়ে যাওয়ার কারণেও। এজন্যই বাংলাদেশীদের জন্য ভয়ানক বিপদের কারণটি স্রেফ দেশটির দুর্বৃত্ত শাসকচক্র নয়, বরং সে আম জনগণও যারা দুর্বৃত্ত শাসকচক্রের সীমাহীন অপরাধগুলিকে নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে। সভ্য জনপদে হিংস্র বাঘ ঢুকলে জনগণ হাতের কাছে যা পায় তা নিয়ে রাস্তায় নামে এবং বাঘকে বধ করে। তেমনি ঘটে যদি সভ্য জনগণের ঘাড়ে দুর্বৃত্ত ভোট চোরদের শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি ঘটেনি। ফলে সভ্য শাসনের বদলে নির্মিত হচ্ছে অসভ্য শাসনের ইতিহাস। আজ না হলেও শত বছর পর এ বঙ্গীয় ভূ-পৃষ্ঠের নতুন প্রজন্ম জেনে বিস্মিত হবে যে, তাদের পূর্বপুরুষগণ মুজিব-হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তদের শাসনকেও মেনে নিয়েছিল। ব্যর্থ হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে সফল গণবিল্পব ঘটাতে। শুধু তাই নয়, তারা তাদের ন্যায় দুর্বৃত্তদেরকে মাননীয় বলতো। এবং ভারতের ন্যায় শত্রুদেশের এজেন্ট এবং গণহত্যাকারি ফ্যাসিস্ট মুজিবকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা বলতো। ১ম সংস্করণ ২৮/০৩/২০১৬; ২য় সংস্করণ ৩১/১০/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018