অধ্যায় চৌত্রিশ: ব্যর্থতা সত্য আবিস্কারে
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 29, 2018
- ই-বুকস
- No Comments.
সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় বিপদটি বৈজ্ঞানিক আবিস্কারে ব্যর্থতার কারণে ঘটে না। সেটি অনিবার্য হয়ে উঠে সত্য আবিস্কারের ব্যর্থতার কারণে। ব্যক্তির জ্ঞান, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা ও নিয়তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাটি হয় এক্ষেত্রে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে শ্রেষ্ঠ মানুষ তো তারাই -যারা সত্য আবিস্কারে সফল। সে সফলতা থেকেই মানব জীবনে নেক আমলের জোয়ার শুরু হয় -যা পরকালে জান্নাতের পুরস্কার আনে। সত্য আবিস্কারে ব্যর্থতা থেকেই পাপাচারের শুরু, তখন শুরু হয় জাহান্নামের পথে যাত্রা। শুধু ধর্মের ক্ষেত্রে নয়, সত্য আবিস্কারের মিশন নিয়ে বাঁচতে হয় ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি ও বিচার-আচারের ন্যায় জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে। মিথ্যাচারীতা নিয়ে বাঁচায় মর্যাদা নাই; কল্যাণও নাই। মানবজীবনে এটিই সবচেয়ে ঘৃণ্য, ব্যর্থ ও কলংকিত দিক। একাত্তরকে ঘিরে বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের ব্যর্থতা অনেক। তবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি ঘটেছে বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে সত্য ঘটনার সন্ধান লাভে। একাত্তরের ইতিহাস বস্তুত সে ব্যর্থতারই দলিল। বিষয়টিকে তাই শুধু সত্য আবিস্কারে ব্যর্থতা বললে যথার্থ বলা হয় না। শুধু এটুকু বললে এ ব্যর্থতার সাথে যে অপরাধী মানসটি জড়িত -সেটিও প্রকাশ পায় না। সে অপরাধটি মিথ্যা রটনার।অপরাধটি তাই গুরুতর।
একাত্তরে মানব-হত্যার পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে সত্য-হত্যা হয়েছে। সত্য-হত্যার বিপদটি তো ভয়ানক। মানুষ তখন দলে দলে মিথ্যার উপাসক, প্রচারক ও সৈনিকে পরিণত হয়। তখন সত্যের পক্ষে সৈনিক জুটে না। ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে বাঁচাটি তখন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। তাছাড়া মিথ্যা আবিস্কারে মানব মনের উর্বরতাটি বিশাল। সে উর্বরতার কারণে আধুনিক যুগেও কোটি কোটি মানুষ গরু-বাছুর, শাপ-শকুন, দেবদেবী, চন্দ্র-সূর্য্য, পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদীর ন্যায় বহু কিছুর উপাসক হয়। অনেকে নাস্তিকও হয়। সত্য আবিস্কারের ব্যর্থতা বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিয়ে দূর করা যায় না। এমন মানুষেরা ব্যর্থ হয় মহান আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান আনায়। ভারতের ন্যায় দেশে তাই যতই বাড়ছে বৈজ্ঞানিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ততই বাড়ছে পৌত্তলিকতা, গরুভক্তি এবং মুসলিম নিধনে উম্মাদনা। সত্যের আবিস্কারে ব্যর্থতার কারণেই নিহত তিরিশ লাখের উদ্ভট মিথ্যার ন্যায় অসংখ্য মিথ্যা বাংলাদেশের ইতিহাসেও প্রবল ভাবে বেঁচে আছে। বরং মিথ্যাকে বাঁচিয়ে রাখতে নিত্য নতুন আইন তৈরী করা হচ্ছে;এবং পরিবর্তন আনা হচ্ছে সংবিধানে।সত্য কথা বলাকে ফৌজদারী অপরাধ রূপে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরূপ বিশাল বিশাল মিথ্যাগুলো বহুলক্ষ প্রচারকও পেয়েছে। এমনকি যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারি তাদের মাঝেও। বাংলাদেশীদের ব্যর্থতা অনেক। তবে মিথ্যার প্লাবনে গলা ডুবিয়ে ভাসাটিই বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
একাত্তরের রাজনীতির খেলাটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানীদের হাতে ছিল না, বরং যুদ্ধসহ রাজনীতির সমূদয় খেলাটিই ভারত খেলেছে তার নিজস্ব খেলোয়াড় দিয়ে। ফলে একাত্তরের ৯ মাসে কতজন নিহত হলো -সে গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি ইচ্ছাকৃত ভাবেই অনাবিস্কৃত রাখা হয়েছে। অথচ প্রতিটি গ্রাম,ইউনিয়ন,থানা ও জেলায় কোন পক্ষে কতজন মারা গেল তার তালিকা নিজ নিজ এলাকায় সংরক্ষিত থাকা উচিত ছিল ১৯৭১ থেকেই। ইউরোপের দেশগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধ কালে কোন গ্রামে বা কোন শহরে কতজন মারা গিয়েছিল সে তথ্যটি স্থানীয় ভিত্তিতে প্রস্তর ফলকে লিপিবদ্ধ রাখা হয়েছে। নিহতদের নাম প্রস্তর ফলকে লিপিবদ্ধ রাখা হয়েছে এমন কি বসনিয়ায় মৃতদেরও। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি করা হয়নি বিশেষ একটি রাজনৈতিক এজেন্ডার কারণে। সেটি ৩০ লাখের মিথ্যাকে প্রবল ভাবে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে। তাছাড়া একাত্তরের মূল খেলোয়াড় ভারতও সেটি চায়নি। কারণ, বাংলাদেশের উপর ভারতের নিজের অধিকৃতিকে জায়েজ করতে ও পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ভাবে নিন্দিত করার লক্ষ্যে ৩০ লাখের বিশাল মিথ্যাটি জরুরী ছিল। তাই বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখার আগেই লন্ডনের মাটিতে মুজিবকে দিয়ে ভারত সে মিথ্যাকে বাজারে ছাড়ে। মিথ্যার ব্যাপক প্রচারে ভারতকে বিস্তর সহায়তা দেয় পাকিস্তান-বিরোধী পাশ্চাত্যের ইহুদী মিডিয়া; এবং সে সাথে সোভিয়েত মিডিয়া। পাকিস্তান থেকে ফেরার পথে লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাগণই ছিল শেখ মুজিবের মূল অভিভাবক। তখনও সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে মুজিবের কানে ভারত যা ঢেলে দেয় সেটিই রবোটের মত তিনি আওড়াতে থাকেন। রবোট চিন্তাভাবনা বা জরিপ করে কথা বলে না;মুজিবও বলেননি। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এমপিগণ ছিল দর্শকের গ্যালারিতে। একাত্তরের যুদ্ধসহ কোনটিই তাদের নিজেদের খেলতে হয়নি। খোদ শেখ মুজিবকেও ময়দানে থাকতে হয়নি। তাদের সে দর্শকের ভূমিকাটি যেমন ১৬ই ডিসেম্বরের সহরাওয়ার্দী ময়দানে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ কালে দেখা যায়, তেমনি দেখা গেছে একাত্তরের বহু পূর্বেও। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে ভারতের আগরতলায় যাননি। দলের অনুমতি নিয়ে তিনি কখনো ভারতীয় গুপ্তচরদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হননি। পরামর্শ করার প্রয়োজন বোধ করেননি এমনি ৬ দফা প্রণোয়ন, ২৫ সালা দাসচুক্তি স্বাক্ষর, ভারতকে পদ্মার পানি ও বেরুবাড়ি প্রদান ও একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা নিয়েও। এমন কি একাত্তরে নিহত তিরিশ লাখের তথ্যটি নিজ দলের নেতাকর্মীর সাথে পরামর্শ করে বলেননি। বহুপূর্ব থেকেই শেখ মুজিব ছিলেন ভারতের নিজস্ব খেলোয়াড়। সেটি ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই। তাই তার রাজনৈতিক খেলায় বিশ্বস্ত সঙ্গি ছিল ভারতীয় গুপ্তচরগণ; আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ নয়। বাংলাদেশের জনগণ তো নয়ই। কথা হলো, আওয়ামী বাকশালীদের রাজনীতির উচ্চ পর্যায়ে আজও কি ভারতের নিজস্ব খেলোয়াড় কম? ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজও কি তাই ভিন্নতর কিছু ঘটছে?
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় নেক আমলটি হলো সত্যকে চেনা এবং সত্যের পক্ষ নেয়ার সামর্থ্য। সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে যাত্রার শুরু বস্তুত এখান থেকেই।মু’মিনের জীবনে এ সত্য-উপলব্ধিই হলো ঈমান। সে ঈমানটুকু না থাকলে অন্যসব ইবাদত ও নেক কর্ম ব্যর্থ হতে বাধ্য। নামায-রোযা বা হজ-যাকাত তো কোটি কোটি মিথ্যাবাদি এবং মিথ্যার প্রচারকও পালন করে। বাংলাদেশে যারা নিহত তিরিশ লাখের মিথ্যাটি প্রচার করে তাদের ক’জন গরুপূজারি বা মুর্তিপূজারি? তাদের অধিকাংশ তো তারাই যারা নিজেদেরকে মুসলিম রূপে দাবি করে এবং তাদের অনেকে নামায-রোযা ও হজ-যাকাতও আদায় করে। সত্য আবিস্কারে প্রবল আগ্রহ, সামর্থ্য, প্রচেষ্টা ও খালেছ নিয়তের কারণেই হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মহান আল্লাহতায়ালার প্রিয় রাসূল ও বন্ধুতে (খলিলুল্লাহ) পরিণত হয়েছিলেন। সত্য খুঁজে পাওয়ার তীব্র সাধনায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সুদূর হিরার গুহায় তপস্যায় রাতের পর রাত কাটাতেন। সেখানেই পেয়েছেন সত্যের সন্ধান। পেয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হওয়ার মর্যাদা। অথচ সত্য আবিস্কারে বাংলাদেশীদের অনাগ্রহ ও ব্যর্থতাটি বিশাল। সে অনাগ্রহের কারণে একাত্তরে কতজন নিহত বা আহত হলো -সে সত্যটি যেমন অজানা রয়ে গেছে, তেমনি অজানা রয়ে গেছে একাত্তরের অসংখ্য সত্য ঘটনা এবং শত্রুর গভীর ষড়যন্ত্রের কথা। একাত্তরের আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভারতের যে বিশাল বিনিয়োগ ও লাগাতর ষড়যন্ত্র ছিল এবং সে ষড়যন্ত্রগুলো বাস্তবায়নে অসংখ্য চর ছিল -আজও তা জানা হয়নি। মুজিবের নেতৃত্বে আগরতলা ষড়যন্ত্রটি ছিল সমূদ্রে ভাসা বিশাল বরফ খণ্ডের উপরে দৃশ্যমান ক্ষুদ্র অংশ মাত্র, ষড়যন্ত্রটির মূল এজেন্ডাটি তখন অজানা থেকে যায়। ফলে অজানা থেকে যায় ভারতীয় ষড়যন্ত্রের একাত্তর ও একাত্তর-পরবর্তী এজেন্ডা। একাত্তরের ন্যায় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতেও ভারত তার নিজস্ব যুদ্ধটি অন্যদের দিয়ে লড়ছে না। রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, মিডিয়া, বিচার, প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ বাংলাদেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনে রয়েছে ভারতের নিজস্ব যোদ্ধা। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কারা সে গুপ্তযোদ্ধা তথা ট্রোজান হর্স -সে তালিকা এখনো আবিস্কৃত হয়নি। অথচ তাদের না চিনলে বাংলাদেশীগণ তাদের নিজেদের দেশ বাঁচানোর যুদ্ধটি লড়বে কি করে? শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ীই বা আসবে কি করে?
জীবন বাঁচাতে হিংস্র জন্তু-জানোয়ার,বিষাক্ত শাপ, রোগজীবাণুগুলোকেও জানতে হয়। নিরাপদ রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্য তেমনি শত্রুর স্ট্রাটেজী ও এজেন্টদেরও জানতে হয়। নইলে স্বাধীনতাও বাঁচে না। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল দেশটির রাজনীতিতে ভারতীয় ট্রোজান হর্স তথা লুকানো সেপাইদের আবিস্কারে। আগরতলা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তখন মামলা উঠেছিল ঢাকার আদালতে। উক্ত মামলাটির কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবে সমাপ্ত হলে বহু ভারতীয় খেলোয়াড়ের প্রকৃত চেহারা জানা যেত। তখন জনগণের সামনে আসতো ভারতীয়দের গভীর ষড়যন্ত্রটি। জানা যেত, বাংলার এ ভূখণ্ডে ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদার কারা? তাতে একাত্তরের রক্তাত্ব যুদ্ধের পথটিই সেদিনই রুদ্ধ করা যেত। শুধু যুদ্ধ নয়, জনগণ বাঁচতো বাকশালী স্বৈরাচারের বর্বরতা থেকেও। দেশ বাঁচতো ভারতীয় সেনা বাহিনীর অধিকৃতি ও সীমাহীন লুণ্ঠন থেকে। এবং দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাঁচতো দুর্ভিক্ষ জনিত মৃত্যু থেকে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটি তুলে নেয়ায় যে পক্ষটি লাভবান হয়েছে তা হলো ভারত এবং ভারতীয় গুপ্তচরদের সঙ্গি শেখ মুজিব ও তার সাথীরা। এরাই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটিকে তার স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্ত হতে দেয়নি। এটি ছিল বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারত ও তার সহযোগিদের বিশাল বিজয়। এতে ক্ষতিটি শুধু পাকিস্তানের হয়নি, বরং মূল ক্ষতিটি হয়েছে বাঙালী মুসলিমের। সেদিন বিচারটি সুষ্ঠ ভাবে সমাপ্ত হলে বাংলাদেশ সৃষ্টির ৪৪ বছর পর দেশবাসীকে নিষ্ঠুর স্বৈরশাসনের বর্বরতায় ভুগতে হতো না।
এজেন্ডা সত্য নির্মূলের
সত্য আবিস্কারে আওয়ামী বাকশালীদের অনাগ্রহের মূল কারণটি সত্য ভীতি। সত্যের সামর্থ্য বিশাল। সত্য শুধু মিথ্যাকেই নির্মূল করেনা, পরাজিত করে মিথ্যার পুজারীদেরও। আওয়ামী বাকশালীণ তাই জানে, সত্য প্রকাশ পেলে তাদের রাজনৈতিক মৃত্যুই শুধু ঘটবে না, বাঙালী মুসলিমের ইতিহাসে অতি ঘৃণ্য শত্রু রূপে তারা চিরকাল চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তাদের পক্ষ থেকে তাই সর্বাত্মক চেষ্ঠা, একাত্তরের সত্য আবিস্কারের সকল পথকে সর্বভাবে বন্ধ করা। শুধু তিরিশ লাখ নিহতের মিথ্যাকে নয়, বহু মিথ্যাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মাঠ পর্যায়ে কোন জরিপ কাজ হতে দিতে তারা রাজি নয়। মুজিব ও তার অনুসারিগণ তাই কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে মৃতদের গণনায় মাঠে নামতে দেয়নি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালী গবেষক শর্মিলা বোস নিজ উদ্যোগে গবেষণা নামেন। তাঁর লেখা “ডেড রেকনিং” বইটি ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীদের প্রচারিত কিচ্ছাকাহিনীকে মিথ্যা প্রমানিত করে। ফলে সে বইকে তারা বাংলাদেশের বাজারে উঠতে দিতে রাজী নয়। স্বৈরাচারীদের হাতে দেশ অধিকৃত হওয়ার এটিই মূল বিপদ। সত্যের আবিস্কার ও সত্যের প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতি যুগে এরাই হলো চরমতম শত্রু। একই রূপ শত্রুতা ছিল মহান নবীজীর প্রচারিত সত্যের বিরুদ্ধে মক্কার কাফেরদের। পবিত্র কোরআনের বানি প্রচার কালে নবীজীর গায়ে তারা পাথর মারতো। মিথ্যার উপাসকগণও তাই বাংলাদেশে পবিত্র কোরআনের তাফসির হতে দিতে রাজী নয়। হাতে ক্ষমতা পাওয়ার সাথে সাথে শেখ মুজিবও তাই রেডিও-টিভি থেকে কোরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দেন। মিথ্যার নির্মূল এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে নবীজীর আমলের ন্যায় জিহাদ শুরু হোক –সেটিতেও তাদের প্রচণ্ড বিরোধীতা।
ভারতসেবী বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের এজেন্ডাটি শুরু থেকেই সুস্পষ্ট। সত্য আবিস্কারের বদলে তাদের লক্ষ্য সত্যের নির্মূল। আফ্রিকার জঙ্গলে প্রতিবছর শিকারীদের হাতে কতগুলি বাঘ-ভালুক, হাতি-গণ্ডার ও অন্যান্য হিংস্র পশু মারা যায় সেটিরও হিসাব হয়।এখানে গরজটি নির্মূল হওয়া থেকে বন্য পশুদের বাঁচানো। অথচ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে বা শহরে একাত্তরে কতজন মানব সন্তান মারা গেল সেটি জানা যাবে না -সেটি কি বিশ্বাস করা যায়? সরকারের কি আর্থিক সামর্থ্য বা জনবল নেই তেমন একটি জরিপ চালানোর? ভারতসেবী বাঙালী জাতীয়তাবাদীগণ তো মৃতদের সংখ্যা নিয়ে রাজনীতি করতে চায়। তারা চায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যাযোগ্য দানব রূপে চিত্রিত করতে। সে জন্য চায় নিহত, আহত ও ধর্ষিতাদের বিশাল সংখ্যা। লক্ষ্য শুধু নিহতদের বিশাল সংখ্যাই নয়, বরং একাত্তরের নানা বিষয়ে ভিত্তিহীন কিসসা কাহিনীর জঞ্জাল সৃষ্টি। তাদের হাতে যে হাজার হাজার বিহারী নিহত হলো, অবাঙালী মহিলা ধর্ষিতা হলো এবং তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যাবসা-বাণিজ্য বেদখল হলো -সে সত্যটিও প্রকাশ হতে দিত রাজী নয়। বরং মিথ্যার উৎপাদন ও প্রচারে গড়ে তুলা হয়েছে বিশাল প্রকাশনা ও মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রী। লক্ষ্য শুধু বিরোধীদের চরিত্রহনন নয়, বরং রটনাকৃত মিথ্যাকে দলিল রূপে খাড়া করে বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নির্মূলের ব্যবস্থা করা।
ঈমানদারের দায়ভার
স্বৈরাচারী জালেম শাসকগণ দেশের রাজনীতি ও শাসনক্ষমতায় অন্য কারো স্থান দেয় না। অন্যদের স্থান দিতে রাজী নয় ইতিহাসের পাতায়ও। ইতিহাসে একক ভাবে তারা অমর হতে যায়। স্বৈরাচারী ফিরাউনগণ বিশাল বিশাল পিরামিড ও তাদের যুদ্ধ-বিগ্রহের খতিয়ান নিয়ে মিশরীয় ইতিহাসের সবটুকুই জায়গাই দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের পক্ষে যুদ্ধে ও পিরামিডগুলি নির্মাণে যে লক্ষ লক্ষ দাসযোদ্ধা ও শ্রমিক প্রাণ দিয়েছিল -তাদের জন্য মিশরের ইতিহাসে সামান্যতম স্থানও খালি রাখা হয়নি। নিজেদের প্রাসাদ ও কবরগুলিকে হাজার হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখার বিশাল আয়োজন থাকলেও দেশের সাধারণ জনগণ কোথায় বাস করতো বা কোথায় তাদের কবর -তার চিহ্ন মাত্র নেই। গাছের ঝরে পড়া পাতার ন্যায় ইতিহাস থেকে তাদেরকে পুরাপুরি হারিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। ইতিহাসের অর্থ তাই স্বৈরাচারীদের ইতিহাস। প্রতি দেশে স্বৈরাচারীদের এটাই রীতি। তেমনি একাত্তরের ইতিহাসেও আওয়ামী বাকশালীগণও অন্যদের জন্য কোন স্থান রাখেনি; পুরা দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে শেখ মুজিব ও তার নিজ দলের। বাংলাদেশের ইতিহাসের অর্থ তাই শেখ মুজিব, তার পরিবার ও তার দলের ইতিহাস। এমনকি ১৯৪৭ সালে যারা দেশটিকে অখণ্ড ভারতে লীন হওয়া থেকে বাঁচালো তাদের জন্যও এ ইতিহাসে কোন স্থান রাখা হয়নি। শেখ মুজিব, তার দল ও দলীয় নেতাকর্মীদের ইমেজ বিশাল করতে নিজেদের রচিত মিথ্যা কাহিনীকে একাত্তরের ইতিহাস বলে চালিয়ে দিয়েছে এবং কবরস্থ করেছে ইতিহাসের প্রকৃত ঘটনাগুলিকে। জনগণকে সুযোগ দেয়নি তাদের নিজস্ব চেতনা, স্বপ্ন ও দুঃখের আত্মকাহিনীগুলি তুলে ধরার। একাত্তরের ইতিহাসের সমগ্র অঙ্গণ তাই অধিকৃত। পরিকল্পিত ভাবেই ইসলাম এবং ইসলামপ্রেমী নেতাকর্মী ও জনগণের জন্য এ ইতিহাসে কোন স্থান রাখা হয়নি। জনগণের রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি ও জীবনযাপনে ইসলামের যে প্রভাব -একাত্তরের ইতিহাসে সে বর্ণনাও নাই। বরং ভাবটা এমন, আওয়ামী বাকশালীদের রাজনীতি, মুজিবের ধ্যান-ধারণা, ধর্মবিবর্জিত সংস্কৃতি ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধজয় হলো বাংলার ইতিহাসের একমাত্র উপকরণ।
ঘটে যাওয়া ঘটনা বা যুদ্ধের ইতিহাস একবার লেখা হলেই ইতিহাস লেখার দায়ভার শেষ হয় না। ইতিহাসের নানা প্রসঙ্গে নানারূপ প্রশ্ন বার বার দেখা দেয়। এরূপ বহু প্রশ্ন শত শত বছর পরও দেখা দিবে। উত্তর খুঁজতে সে সব ঘটনা নিয়ে বার বার গবেষণা হবে এবং বহু সত্য বিষয়ও তখন আবিস্কৃত হবে। আবিস্কৃত সে সব সত্যগুলিকেও ইতিহাসের পাতায় বার বার যোগ করতে হয়। সে সাথে প্রতিযুগে ইতিহাসের নতুন ব্যাখ্যারও প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় মানব-ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ইতিহাস লেখার কাজ তাই এখনো শেষ হয়নি। একই কারণে আজও লেখা হয় শত শত বছর আগে ঘটে যাওয়া রোমান বা পারসিক সাম্রাজ্যর বিলুপ্তির ইতিহাস। একই দায়ভার বাংলাদেশের ইতিহাসে একাত্তরকে নিয়েও। বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে দিন দিন জাগছে নানা প্রশ্ন। কিন্তু এ অবধি বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের লেখায় একাত্তরের ইতিহাসের বইগুলোতে সে নতুন প্রশ্নগুলোর উত্তর নাই। বরং দিন দিন বাড়ছে জঞ্জালের স্তুপ; সেটি সত্যকে আড়াল করার প্রয়োজনে।এ নিয়ে ঈমানদারদের দায়ভারটি বিশাল। তাকে প্রতি মুহুর্তে বাঁচতে হয় সত্য আবিস্কার ও সত্যের প্রতিষ্ঠার লাগাতর ব্রত নিয়ে। মিথ্যার স্রোতে ভাসা বা মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ তো ঈমানদারী নয়।তাতে ঈমান বাঁচে না। এমন বিবেকহীন আত্মসমর্পণে মিথ্যুকদের কাছে কদর বা গ্রহণযোগ্যতা বাড়লেও -মহা আযাবটি আসে পরকালে। ঈমানদারের স্বভাবজাত ধর্ম তাই মিথ্যার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মিথ্যার নির্মূলে জান ও মালের বিনিয়োগ। মু’মিন ব্যক্তি জান্নাত পায় তো সে বিনিয়োগের পুরস্কার রূপে। ঈমানদারদের দেশে তাই মিথ্যা বাঁচে না। বস্তুতঃ রাজনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে মিথ্যাচারীদের বিশাল বিজয়ই প্রকাশ করে,দেশে ঈমানদারদের সংখ্যা কতটা নগন্য এবং সত্য কতটা পরাজিত।
চেতনার অধিকৃত অঙ্গণ
বাংলার মুসলিম ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলো একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর। একাত্তরে পরাজয়টি স্রেফ পাকিস্তানের হয়নি। ভারতীয় আধিপত্য প্রবলতর হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে।শোচনীয় ভাবে অধিকৃত হয়েছে বাঙালী মুসলিমের চেতনার ভূমিও। চেতনার সে অধিকৃতিটা এতটাই প্রবল যে তার আছড় পড়েছে এমন কি বহু ইসলামি দলের নেতাকর্মীদের উপরও।এসব তথাকথিত ইসলামি দলের নেতাকর্মীগণ ইসলামি দলগুলির একাত্তরের ভূমিকার জন্য নিজেদের অপরাধী মনে করে। নিজেদের সে অপরাধী চেতনা থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয়ের দিনটিতে নিজেরাও বিজয় মিছল বের করে। তাতে সামরিক বিজয়ের পাশাপাশি নৈতিক বিজয়ের উৎসব বেড়েছে ভারতীয় হিন্দু ও ভারতসেবী বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের। একাত্তরের বিজয়ের পর ভারত আবির্ভুত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তি রূপে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারতকে এ পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেয়ার কাজে শেখ মুজিব ও তার অনুসারিদের অবদানটি বিশাল। নইলে ভারত কখনোই এ পর্যায়ে পৌঁছতে পারতো না। অপর দিকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিও প্রবল ভাবে বেঁচে আছে ভারতের সাহায্য নিয়ে। নইলে মুজিবামলের দুর্নীতি,দুর্ভিক্ষ, বাকশালী স্বৈরাচার ও তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানানোর ভয়ানক নাশকতার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতির বেঁচে থাকার কথা নয়। ভারতীয় অর্থ ও পরিচর্যা দলটিকে আবার নতুন জীবন দান করেছে। ভারতে জন্য সেটি অতি জরুরীও ছিল। প্রমাণিত হলো, ভারতীয় আধিপত্যবাদের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি –রাজনীতির এ দুটি ধারা ভারত বা বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমানা দিয়ে সীমিত নয়। সেটি যেমন একাত্তরে ছিল না, তেমনি আজও নয়। উভয়েই রাজনীতি মূলত একে অপরের পরিপূরক এবং একই ধারায় প্রবাহিত।১৭৫৭ সালে পলাশীর পরাজয়ের পর অমুসলিমদের হাতে বাঙলার মুসলিমদের এ হলো দ্বিতীয় পরাজয় ও অধিকৃতি। মুসলিমের শ্রম, অর্থ ও রক্তের বিনিয়োগে কোন পৌত্তলিক শক্তিকে বিশ্বরাজনীতিতে একাত্তরের ন্যায় আর কোন কালেই প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়নি। পরাজিত ও অধিকৃত হওয়াতে কোন কালেই মুসলিম উম্মাহর গৌরব বাড়েনি। বাড়েনি বাঙালী মুসলিমদেরও।তাছাড়া যে বিজয়ে পৌত্তলিক কাফেরগণ খুশি হয়, সে বিজয়ে কি কোন ঈমানদার খুশি হতে পারে? খুশি হন কি মহান আল্লাহতায়ালা? কাফেরদের থেকে মুসলিমগণ শুধু ঈমান ও ইবাদতেই ভিন্ন নয়, পুরাপুরি ভিন্ন আনন্দ-উৎসবের বিষয় নিয়েও। মুসলিমের বিজয় নিয়ে কোন কাফের শক্তি উৎসব করেছে -সমগ্র মানব ইতিহাসে এমন ঘটনা একটিও নাই। তারা তো উৎসব করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিশাল ক্ষতি ও পরাজয়গুলো নিয়ে। ভারতীয় শিবিরে ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয়োৎসবের বিশাল মাত্রাই বলে দেয়, একাত্তরে ইসলাম ও মুসলিমদের পরাজয় কতটা গভীর ও শোচনীয় ছিল। বস্তুত এটিই হলো একাত্তরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সত্য।
বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের রাজনীতির মূল উপাদানটি হলো একাত্তরের চেতনা। একাত্তরের চেতনা নিয়ে ভারতসেবী পক্ষটি যে কাহিনীটি পেশ করে তাতে যেমন ইসলামের কোন স্থান নেই, তেমনি গুরুত্ব পায়নি বাঙালী মুসলিমের মুসলিম রূপে বাঁচার বিষয়টি।তেমনি সে চেতনায় নাই মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ চিন্তা। বাংলাদেশের রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টিভিতে সে চেতনার প্রবল চাষাবাদে দেশের রাজনৈতিক ভূগোলই শুধু পাল্টে যায়নি, পাল্টে গেছে দেশবাসীর চিন্তা-চেতনা ও দর্শনের ভূগোলও। একাত্তরের আগে বাংলার মুসলিমগণ যেভাবে ভাবতো, সে ভাবে ভাবার সামর্থ্যটুকুও এখন বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে সে চেতনার অধিকৃত ভূমিতে প্রতিবেশী ভারতীয় মুসলিম, কাশ্মীরের মুসলিম ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের কল্যাণ নিয়ে ভাবনার কোন স্থান নেই। ক্ষুদ্র লেবাননের জনসংখ্যা মাত্র ৪৮ লাখ, দেশটি সম্পদশালীও নয়। অথচ সেখানে স্থান পেয়েছে ২০ লাখ সিরিয়ান রিফ্যুউজি। তুরস্কের জনসংখ্যা বাংলাদেশের অর্ধেকেরও কম। কিন্তু সেদেশে আশ্রয় পেয়েছে তিরিশ লাখের বেশী সিরিয়ান। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি, অথচ সেখানে কয়েক হাজার সমূদ্রে ভাসা রোহিঙ্গা মুসলিমও স্থান পায়নি। তাদের নৌকাগুলোকে হাসিনা সরকার বাংলাদেশের তীরে ভিড়তে দেয়া হয়নি। মুজিবামলে ভয়ানক বিপর্যের মুখে পড়ে বিহারী মুসলিমগণ।
বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের চেতনার ভূমি যে কতটা অসুস্থ এবং কতটা মানবতাশূণ্য ও ঈমানশূণ্য -সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাঁকি থাকে? এরূপ বিবেকশূণ্য, মানবতাশূণ্য ও ঈমানশূণ্য ব্যক্তিবর্গ কি নিজ দেশের জনগণের প্রতিও সদয় হতে পারে? তাদের অবস্থান স্রেফ ভারতের আঁচলতলে –বিষয়টি কি শুধু তাই? মুসলিম বিদ্বেষ তাদের চিন্তা-চেতনা, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতেও। আহমেদাবাদ, মুম্বাই, মিরাট, আগ্রা, অযোধ্যা ও অন্যান্য ভারতীয় শহরে মুসলিম গণহত্যায় নেমেছে সেদেশের প্রচণ্ড মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু কাফেরগণ।আর বাংলাদেশে মুসল্লিদের হত্যা করে তাদের লাশ আবর্জনার গাড়িতে তুলে গায়েব করেছে মুসলিম নামধারি বাঙালী জাতীয়তাবাদী ক্যাডারগণ। ২০১৩ সালের ৬ মে’তে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে তো সেটিই ঘটেছিল। আলো জ্বালালে অন্ধকার অবশ্যই দূর হয়, সত্যের আগমনে তেমনি নির্মূল হয় মিথ্যা ও মিথ্যার প্রচারকগণ। ইসলামের আগমনে সমগ্র আরবভূমি ও তার আশেপাশের দেশে তো সেটিই হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি ঘটেনি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটিতে ইসলাম ও ইসলামের পক্ষের শক্তি আজ পরাজিত। বরং প্রবল ভাবে বেঁচে আছে মিথ্যা। শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিমের দেশটিতে মিথ্যার প্রচারকগণ নির্মূল না হয়ে বরং বিজয়ীর বেশে প্রতিষ্ঠিত। বেড়েছে সত্য নির্মূলের বিশাল আয়োজন। মিথ্যার এরূপ প্রবল ভাবে বেঁচে থাকাটি সুস্পষ্ট পয়গাম দেয়। সেটি বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতার।
ষড়যন্ত্র দেশী ও বিদেশী শত্রুর
একাত্তরে ভারতের বিজয় এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ বহু। তবে প্রধান কারণটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামরিক ছিল না। পাকিস্তানের চেয়ে জটিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে বহু দেশে যুগ যুগ বেঁচে আছে। সংকট কি ভারতে কম? ৬ লক্ষ সৈনিক নিয়ে ভারত ২০ বছরের অধিক কাল আটকা পড়ে আছে কাশ্মীরে। সেখানে প্রতিটি সড়ক, প্রতিটি গ্রাম ও প্রতিটি সরকারি অফিস দিবারাত্র পাহারা দিতে হয়। সেখান থেকে তারা বেরুনোর রাস্তা পাচ্ছে না। দুই লক্ষ ভারতীয় সৈন্য যু্দ্ধে লিপ্ত আসাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও মিজোরামে। দেশটির শতিশ গড়, বিহার, মধ্যপ্রদেশ এবং অন্ধপ্রদেশে লাগাতর যুদ্ধ চলছে হাজার হাজার মাওবাদীদের সাথে। ভারতকে প্রতিটি দিন বাঁচতে হচ্ছে এরূপ লাগাতর যুদ্ধ নিয়েই। পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক বৈষম্যও ছিল না। দুই প্রদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক বৈষম্যগুলি বরং জন্মকালে তথা ১৯৪৭ সালে আরো বেশী ছিল। ১৯৭১’য়ে এসে ১৯৪৭’য়ের বৈষম্য বরং অনেক কমে গিয়েছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনসংখ্যার ভিত্তিতে পার্লামেন্টে পূর্ব পাকিস্তানীদের বেশী সিট থাকায় দেশটি শাসন ক্ষমতায় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বেড়েছিল। ফলে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এ রাষ্ট্রটির উপর বাঙালী মুসলিমদের দায়িত্ব পালন ও প্রভাব বিস্তারের বিশাল সুযোগ এসেছিল। সুযোগ এসেছিল শুধু মুসলিম উম্মাহর রাজনীতিতে নয়, বরং বিশ্বরাজনীতিতে ভূমিকা পালনের। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কল্যাণ ছিল সে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে আরো মজবুত করায়। কিন্তু বাঙালী মুসলিমের শত্রুগণ সেটি চায়নি। তারা ধাবিত করেছে একটি প্রকাণ্ড যুদ্ধের দিকে। সমগ্র পাকিস্তানীদের না হোক, অন্ততঃ বিশাল বাঙালী মুসলিম জনগোষ্ঠীকে গোলাম করার মধ্যেই ভারতের ন্যায় শত্রুপক্ষ বিশাল লাভ দেখেছিল। একাত্তরের যুদ্ধ ছিল সে ষড়যন্ত্রের ফসল। শেখ মুজিব ও তার অনুসারিদের সহযোগিতার কারণেই ভারত একাত্তরের যুদ্ধজয়ের ষোল আনা ফসল নিজ ঘরে তুলতে পেরেছে।
পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে মূলত দু’টি কারণে। এক). স্নায়ু যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক শত্রুগণ চায়নি দেশটি বেঁচে থাকুক। সে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট থেকে পুরা ফায়দা নিয়েছে দেশটির আজন্ম শত্রু ভারত। দুই). ইসলামের মৌল শিক্ষা থেকে দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের গভীর বিচ্যুতি। ইসলাম থেকে দূরে সরা এসব ব্যক্তিবর্গ পরিণত হয় শত্রুশক্তির ট্রোজান হর্সে। ১৯৪৭ সালে বাঙালী মুসলিমের চেতনায় ইসলামের যে প্রভাব ছিল সেটি বিলুপ্ত হয় ১৯৭১ সালে। ইসলাম থেকে দূরে সরার কারণেই ভারতীয় পৌত্তলিক কাফেরদেরকে তারা বন্ধু রূপে গ্রহণ করে। মুসলিম ইতিহাসে যখনই এরূপ গর্হিত কর্মটি ঘটেছে, তখনই আযাব এসেছে। ইসলামের অর্থ শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত নয়;স্রেফ মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাও নয়। সেটি যেমন প্যান-ইসলামীক মুসলিম ভাতৃত্ববোধ,তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রজুড়ে ইসলামের প্রতিষ্ঠা। এমন চেতনায় মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করা হারাম। মগজ যখন ইসলামশূণ্য হয় তখন সে মগজ সহজেই অধিকৃত হয় সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, সোসালিজম, কম্যুনিজম, নাস্তিকতাবাদের ন্যায় নানা কুফরি মতবাদে। বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের জীবনে তো সেটিই ঘটেছে। এরূপ অধিকৃতির ফলেই বিলুপ্ত হয়েছে ইসলামের প্রতি অঙ্গীকার। তখন বিলুপ্ত হয়েছে প্যান-ইসলামীক মুসলিম ভাতৃত্ব। এটি ছিল বাঙালী মুসলিমের আদর্শিক বা ধর্মীয় ব্যর্থতা -বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলির নেতাকর্মীদের। ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে নেতাকর্মীদের দূরে সরার কারণে শত্রু রাষ্ট্র ভারতকে মাঝ খানে রেখে একটি মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষে দীর্ঘকাল বেঁচে থাকাই দুঃসাধ্য ছিল। মুসলিমদের মূল বাঁধনটি ঈমানের; ভাষা, বর্ণ, গোত্র বা আঞ্চলিকতার নয়। ঈমানের এ বাঁধনটি মুসলিম উম্মাহর মাঝে সিমেন্টের কাজ করে। পুলিশ,সেনাবাহিনী বা বিমান যোগাযোগ দিয়ে এ বন্ধনটি যেমন গড়া যায় না, তেমনি বাঁচানোও যায় না। এমন একটি ঈমানী বাঁধনের কারণেই উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানিয়া খেলাফতের আমলে রাষ্ট্রের সংহতি রক্ষায় খলিফার সেনাদলকে দেশের ভিতরে যুদ্ধ লড়তে হয়নি। যুদ্ধগুলি হয়েছে সীমান্তের বাইরে কাফের শত্রুদের বিরুদ্ধে। কিন্তু জনগণের জীবনে ইসলামের প্রভাব যখনই কমেছে তখনই কঠিন হয়েছে ইসলামী উম্মাহর সংহতি ধরে রাখা।
বিচ্ছিন্নতা ইসলাম থেকে
ভাষা, বর্ণ, গোত্র বা আঞ্চলিকতার বন্ধন মুসলিমদের মধ্যে শুধু বিচ্ছিন্নতাই বাড়ায় না, বিচ্ছিন্নতা বাড়ায় ইসলামের মূল শিক্ষা থেকেও।এভাবেই বিভক্ত, দুর্বল ও অধিকৃত হয়েছে মুসলিম উম্মাহ। বাঙালী মুসলিমদের মাঝে এ রোগটি ১৯৪৭ সালে ছিল না। কিন্তু সেটিই মহামারি রূপে দেখা দেয় ১৯৭১’য়ে। তাই ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের মুসলিমগণ একটি শক্তিরুপে আত্মপ্রকাশ করলেও বিপরীতটি ঘটেছে ১৯৭১ সালে। দেহ থেকে হৃৎপিণ্ডকে আলাদা করলে দেহ বাঁচে না। আধ্যাত্মিক জীবনের হৃৎপিন্ডটি হলো আল্লাহর উপর ঈমান। ঈমানদারকে তাই প্রতিক্ষণ বাঁচতে হয় মনের গভীরে মহান আল্লাহতায়ালার উপর গভীর বিশ্বাস তথা ঈমানকে ধারণ করে। আর ব্যক্তির মন ঈমানপূর্ণ হলে তার চেতনা,রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যুদ্ধবিগ্রহে ইসলামের প্রভাব পড়তে বাধ্য। মুসলিম রাষ্ট্রের কাজ স্রেফ রাস্তাঘাট গড়া,স্বাস্থ্যসেবা বা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়,বরং জাহান্নামে আগুণ থেকে জনগণকে বাঁচানো। সে জন্য প্রয়োজন, জনগণের মাঝে পবিত্র কোরআনের জ্ঞানকে গভীরতর করা এবং সে জ্ঞানের মাধ্যমে ইসলামের সাথে জনগণের সম্পর্ককে মজবুত করা। ইসলামের সাথে সংযোগটি মজবুত হলে মুসলিমদের মাঝে ঐক্য এবং সে সাথে মুসলিম রাষ্ট্রের সংহতিও মজবুত হয়। আলোকিত জনগণ তখন শত্রু শক্তির হামলা থেকে রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা দেয়।সে কাজটি না হলে জনগণ ব্যর্থ হয় ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষের শক্তি রূপে বেড়ে উঠতে। সে ব্যর্থতাই প্রকট হয়েছে পাকিস্তানে।পাকিস্তানের বিভক্তির মূল কারণটি তাই দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্নতা। ইসলাম থেকে সে বিচ্ছিন্নতার কারণে বাঙালী মুসলিমের অর্থ, শ্রম ও রক্ত ব্যয় হয়েছে নিজ দেশকে খণ্ডিত করার কাজে। তাতে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির উৎসব বাড়বে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
সুস্থ রাজনীতির লক্ষ্যটি সব সময়ই কল্যাণকামী ও সুদূর প্রসারী। সে রাজনীতির লক্ষ্য কোন ব্যক্তি বা দলকে ক্ষমতায় বসানো নয়, বরং লক্ষ্য এখানে শত শত বছরের জন্য কোটি কোটি নাগরিকের জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। উদ্দেশ্য, দেশবাসীকে ঈমানী দায়ভার নিয়ে বেঁচে থাকায় অভ্যস্ত করা। রাজনীতিতে মুসলিমের দূরদৃষ্টির বিষয় তো এটিই। কোন নির্বাচনি বিপর্যয় বা কোন আন্দোলনের ব্যর্থতা -সে দূরদৃষ্টি থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। ব্যক্তি বা দলের চেয়ে দেশের স্বার্থ অনেক বড়। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা। কিন্তু একাত্তরে সেটি ঘটেনি, বরং ঘটেছে বিপরীতটি। আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার বিষয়টি সেদিন গুরুত্ব পায়নি। বাঙালী মুসলিমের কল্যাণের বদলে গুরুত্ব পেয়েছে মুজিবের ন্যায় এক বাকশালী স্বৈরাচারীকে ক্ষমতায় বসানোর বিষয়টি। পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে-বিপক্ষে জনগণকে ভাববার ও তা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। ক্ষমতালোভী মুজিব স্রেফ ক্ষমতার লোভে দেশকে ধাবিত করে যুদ্ধের দিকে। কোন রূপ আলাপ-আলোচনা না করেই ভারতের ন্যায় চিহ্নিত শত্রুকে দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের জন্য দাওয়াত দেয়। এবং প্রশিক্ষণের জন্য দলীয় কর্মীদের তুলে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে। মুজিবের এরূপ হটকারিতার কারণেই প্রতিষ্ঠা পায় সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভারতের অধিকৃতি।
শত্রুর বিজয় নিয়ে উৎসব!
ইসলাম থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিপদটি সব সময়ই ভয়াবহ।তাতে বিলুপ্ত হয় ইসলাম ও মুসলিম কল্যাণের প্রতি অঙ্গীকার। মুসলিম ভূমি তখন অধিকৃত বা খণ্ডিত হলেও ইসলামচ্যুৎ ব্যক্তিদের মনে সামান্যতম দুঃখ জাগে না। বিবেকে সামান্যতম ক্রন্দনও উঠেনা। বরং কাফেরদের বিজয় বাড়াতে তারা নিজ শ্রম, নিজ মেধা ও নিজ প্রাণের বিনিয়োগ করে। ইসলামের প্রতি এমন অঙ্গীকারহীনতায় কি মুসলিম দেশের সংহতি বাঁচে? শত্রুশক্তির হামলার মুখে অঙ্গীকারহীন মুসলিম তখন নিরব দর্শকে পরিণত হয়। কাফের শক্তির বিজয়ও তখন নিজেদের বিজয় মনে হয়। অনেকে বরং শত্রুশক্তির অস্ত্র কাঁধে নিয়ে মুসলিম হত্যায় নামে। মুসলিম ইতিহাসে সেটি বার বার দেখা গেছে। এরাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে উসমানিয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ইরাক ও ফিলিস্তিনের উপর ব্রিটিশদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামচ্যুৎ এমন ব্যক্তিগণই ১৭৫৭ সালে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা বিলিয়ে দিতে ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ডেকে আনে। অমুসলিমদের সাথে সহযোগীতা এভাবেই বার বার বিপন্ন করেছে মুসলিম ভূমির স্বাধীনতা। মুসলিমগণ তখন ব্যর্থ হয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।বাঙালী মুসলিমগণ ভেবেছিল দেশ রক্ষার দায়িত্বটি স্রেফ নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও তাঁর সেনাবাহিনীর; জনগণের কাজ স্রেফ নিজ নিজ চাষাবাদ, পশুপালন ও পানাহার নিয়ে বাঁচা। এমন চেতনায় লাভবান হয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীগণ; এবং তাতে জনশূণ্য হয়েছিল জিহাদের ময়দান। অথচ মুসলিম ভূমিতে কাফের সেনাবাহিনীর হামলা রুখাটি নির্ভেজাল জিহাদ। এবং জিহাদের সে দায়ভারটি প্রতিটি নাগরিকের।
দার্শনিক কবি ইকবাল বলেছিলেন, “দ্বীন আগার জুদা হোতা হ্যায় সিয়াসতছে র্যাহ যাতা হ্যায় চেঙ্গিজী।” অনুবাদঃ “ধর্ম যদি পৃথক হয় রাজনীতি থেকে, তবে থেকে যায় শুধু চেঙ্গিজের বর্বরতা।” সেটির প্রমাণ, মুজিবের ধর্মবিবর্জিত রাজনীতি। তার রাজনীতিতে ধর্ম যেমন বাঁচেনি, তেমনি মানবতাও বাঁচেনি। বরং তীব্রতর হয়েছে বর্বরতা। সে বর্বরতায় কবরস্থ হয়েছে গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবিক অধিকার। সে বর্বরতা বাড়াতে বরং বিশাল রক্ষিবাহিনী গড়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বাকশালী স্বৈরাচার। এরূপ বর্বরতার মাঝে কি ইসলাম বাঁচে? বাঁচে কি ইসলামী মূল্যবোধ? বাঁচে কি মুসলিম রাষ্ট্র এবং তার সমাজ, সভ্যতা ও সংহতি? দেশ কি তখন বিজয়ের গৌরব পায়? বরং পরাজয়, গ্লানি ও জিল্লতিই নিয়তি হয়। তাই একাত্তরে শুধু পাকিস্তানের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়নি, বিপন্ন হয়েছে ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ। আঁস্তাকুড়ে গিয়ে পড়েছে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের প্রয়াস। ধুলিসাৎ হয়ে যায় উপমহাদেশের মুসলমানদের ১৯৪৭ সালের স্বপ্ন। ইসলামের শত্রুপক্ষ তো ইসলাম ও মুসলিম শক্তির বিনাশে এমন বাকশালীদেরকে পার্টনার রূপে পেতে চায়। এ কারণেই ইসলামের শত্রুপক্ষের কাছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা এতো প্রিয়। এজন্যই দিল্লি, ওয়াশিংটন, লন্ডন বা মস্কোর শাসক মহলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তাদের লবিং করতে হয় না। নিজ থেকেই তারা বরং তাদেরকে নিঃশর্ত সমর্থণ দেয়। সেটি যেমন একাত্তরে দিয়েছিল, এখনো দেয়। ইসলামের শত্রুগণ তাদের শত্রুদের চিনতে ভূল করে না;এবং ভূল করে না নিজেদের মিত্রদের চিনতেও। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ তাই ইসলামের শত্রুদের নজর কেড়েছে। তাদের কাছে বর্বর স্বৈরতন্ত্র কোন সমস্যা নয়, বরং মুসলিম ভূমিতে ইসলামী শক্তির নির্মূলে এরূপ নিষ্ঠুর শক্তিই তাদের পরম কাম্য। মুসলিম বিশ্বজুড়ে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা ও পরিচর্যা পেয়েছে তো তেমন একটি গরজেই। মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়ার ন্যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে স্বৈরাচারী শাসকদের হটানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সেটিও তারা সফল ভাবে থামিয়ে দিয়েছে। একই রূপ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামের শত্রুপক্ষ বাংলাদেশেও মুজিবামলের সে স্বৈরাচারকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। সত্য আবিস্কারে ব্যর্থতা এভাবেই জনগণের উপর মিথ্যা ও মিথ্যার অনুসারিদের বার বার বিজয় দান করে।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018