অপরাধীদের দখলে বাংলাদেশ ও সন্ত্রাসের নৃশংস তান্ডব
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 1, 2020
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
যে মহাবিপদ ইতিহাস জ্ঞানের অজ্ঞতায়
বিষকে বিষরূপে জানাটি জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরী। নইলে বিষ পানে প্রাণনাশ ঘটে। দেশকে বাঁচাতে হলেও তেমনি দেশের শত্রুদের চিনতে হয়। এক্ষেত্রে অজ্ঞতা হলে দেশের জন্য মহাবিপদ ঘটে। আর সে অজ্ঞতা দূর করতে হলে অপরিহার্য হলো রাজনীতিতে যাদের বিচরণ তাদের ইতিহাস জানা। কারণ তারাই ঘুরে ফিরে দেশের ড্রাইভেট সিটে বসে। এমন কি ক্ষমতার বাইরে থেকেও এরূপ অপরাধীরা ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে। চারিত্রিক গুণাগুণ, পেশাগত যোগ্যতা ও শারীরিক সুস্থ্যতা না জেনে কাউকে এমনকি বাসের বা ট্রেনের চালক করাতেও মহা বিপদ। নেশাখোর মদ্যপ, দায়িত্বজ্ঞানহীন দুর্বৃত্ত বা অন্ধ মানুষও তখন চালকের সিটে বসার সুযোগ পায়। এতে দুর্ঘটনায় প্রাণনাশ ঘটে যাত্রিদের। তাই অন্যান্য দলের সাথে আওয়ামী লীগের ইতিহাসকেও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার কাজটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। ক্ষমতায় গিয়েই শুধু নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির সামর্থ্য রাখে। তাই দেশের কল্যাণে অতি অপরিহার্য হল দলটির প্রকৃত পরিচয় জানা। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ক্ষতিটি বিশাল। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটিই যথার্থ ভাবে হয়নি। বরং যা হয়েছে তা হলো, সুকৌশলে দলটির মূল চরিত্রটিকে গোপন করার। সে কাজটি করেছে দেশের ভারতসেবী বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তরা।
শেখ মুজিবের ১৯৭০-য়ের নির্বাচনী বিজয় এবং ৭ই মার্চের জ্বালাময়ী ভাষনের বাইরেও দলটির বিশাল ইতিহাস আছে। বাংলাদেশী ছাত্রদের কাছে সে ইতিহাসটি জানা ইতিহাস-ভূগোল, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে জ্ঞানলাভের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, স্রেফ ইতিহাস-ভূগোল, পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা বা কারিগরি জ্ঞান বাড়িয়ে দেশকে বাঁচানো যায় না। এমন কি রাস্তাঘাট, কলকারখানা, কৃষি উৎপাদন বা বিদেশে লোক রপ্তানি বাড়িয়েও নয়। দেশ বাঁচাতে হলে দেশের শত্রুদের চেনার বিকল্প নাই। তাছাড়া কারা দেশের শত্রু বা মীরজাফর -সে সত্যটি গোপন করা মহাপাপ। ইসলামে এটি কবিরা গুনাহ। কারণ তাদের না চেনার বিপদটি তো ভয়াবহ। এরূপ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে কাযা নাই, কাফ্ফরাও নাই। বরং এ ক্ষেত্রে গাফলতি হলে জাতির জীবনে গোলামী নেমে আসে। এবং সেটি শত শত বছরের জন্য। এমন মহাপাপের কারণই ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়েছিল। সেদিন আগ্রাসী ইংরেজদের হাতে যে পরাজয়টি ঘটেছিল সেটি অর্থনিতক দৈনতার কারণে নয়। সৈন্য সংখ্যার কমতির কারণেও নয়। এমন কি শিল্পে অনগ্রসরতার কারণেও নয়। বরং সে সময় মসলিনের ন্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর বস্ত্রশিল্প ছিল বাংলায়, যা রপ্তানী হত সমগ্র বিশ্বজুড়ে। তখন বিশ্ব-অর্থনীতির প্রায় ২৭ ভাগ জিডিপির জোগান দিত ভারতীয় উপমহাদেশ। এবং তার সিংহ ভাগ হতো বাংলায়। তখন সিরাজুদ্দৌলার সৈন্যসংখ্যা ছিল ইংরেজ সৈন্যের চেয়ে প্রায় দশগুণ। তাদের হাতে বড় বড় কামানও ছিল। কিন্তু সে বিশাল বাহিনী পরাজয় ঠেকাতে পারিনি। ১৭৫৭ সালে সে শোচনীয় পরাজয়টি ঘটেছিল দেশের মীরজাফরদের না চেনার কারণে। তাতে ফল দাঁড়িয়েছিল, মীর জাফরের ন্যায় চরিত্রহীন বিশ্বাসঘাতককে শাস্তি না দিয়ে দেশের সেনাপতি বানানো হয়েছিল।
নবাব সিরাজুদ্দৌলার ন্যায় শাসকদের অজ্ঞতায় মীর জাফরেরা যেমন সেনাপতি হয়, জনগণের অজ্ঞতায় তেমনি মুজিবের ন্যায় শত্রুশক্তির এজেন্টও নেতা হওয়ার সুযোগ পায়। শেখ মুজিব যে ষাটের দশক থেকেই ভারতীয় গোয়েন্দা চক্র RAW’এর সাথে মিলে কাজ শুরু করে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র করে -সেটি তো এখন আওয়ামী লীগ নেতাগণও গর্বভরে বলে। অথচ তা নিয়ে বাংলাদেশের অজ্ঞতার গভীরতাটি বিশাল। জনগণকে এরূপ অজ্ঞ রাখাটিই শত্রু শক্তির এজেন্ডা। অজ্ঞতার বড় বিপদটি হল, তখন একই গর্তে জনগণের পা বার বার পড়ে। তাই ইচ্ছা করেই বাংলাদেশীদের ইতিহাস জ্ঞান বাড়ানো হয়নি। সেটি যেমন সাম্রাজ্যবাদী শাসনের ব্রিটিশ আমলে, তেমনি আজও। এ কারণেই বাংলাদেশীদের বিপদ ১৭৫৭ সালে পলাশীতে শেষ হয়নি। ১৯৭১’য়েও শেষ হয়নি। শেষ হয়নি ২০২০ সালে এসেও। বরং দিন দিন সেটি আরো তীব্রতর হচ্ছে। দুর্বৃত্তি ছেয়ে গেছে মিডিয়া ও বুদ্ধিবৃত্তির জগতে।
বিষধর গোখরা শাপ বিছানায় নিয়ে ঘুমালে প্রাণ বাঁচে না। সে বিপদ থেকে বাঁচতে হলে চোখ খোলা রাখতে হয়। একই কারণে দেশ বিপদে পড়ে যদি চিহ্নিত সন্ত্রাসী, স্বৈরাচারি, বিদেশী চর এবং ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসানো হয়। এরা হলো প্রাণনাশী সামাজিক জীবাণু। তাই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান স্রেফ বিষাক্ত মশামাছি, সাপ-বিচ্ছু, রোগজীবানূর জ্ঞান নয়; অতি গুরুত্বপূর্ণ হল মানবরূপী সমাজের বিষধর সাপদের সঠিক পরিচয়। মশামাছি, সাপ-বিচ্ছু ও রোগজীবানূর আক্রমনে বহু হাজার লোক মারা গেলেও তাতে জাতি পরাজিত বা অধিকৃত হয় না। তলাহীন ভিক্ষার ঝুলিও হয় না। বিশ্বের বহুদেশে এমন মহামারি বহুবার এসেছে। কিন্তু ছদ্দবেশী শত্রুকে নেতা বানালে দেশ অধিকৃত হয়। মুজিব আমলে বাংলাদেশ ২৫ সালা দাসচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল এবং ভিক্ষার ঝুলি রূপে পরিচিতি পেয়েছিল তো এমন ব্যর্থতার কারণেই। মুজিব মারা গেছে কিন্তু তার আদর্শ বেঁচে আছে। বরং তা বেঁচে আছে তার কণ্যাসহ অন্যান্য অনুসারিদের মাঝে। ফলে মুজিবের বাকশালী রাজনীতিতে নতুন করে যোগ হয়েছে গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, ফাঁসি ও গণহত্যা। ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন সামরিক অফিসার হত্যা, শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যা, বিরোধী দলীয় নেতাদের ফাঁসী, দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতির অঙ্গণে ভারতের অধিকৃতি, ছিনতাই হলো যেভাবে তালপট্টি দ্বীপ, লুণ্ঠিত হচ্ছে যেভাবে পদ্মা ও তিস্তার পানি এবং সীমান্তে তারকাঁটায় ঝুলে লাশ হচ্ছে যেভাবে বাংলাদেশী –এগুলি তো মুজিব আমলেরই ধারাবাহিকতা।
শত্রুর অধিকৃতি থেকে বাঁচার জন্য উন্নত স্বাধীন দেশগুলো শুধু কলকারখানা, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, গবেষণাগার ও রাস্তাঘাট গড়ে না, বরং শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে ইতিহাস চর্চা ও নেতাদের আচরনবিধি জানার জন্য বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে। বিভিন্ন দল ও দলীয় নেতাদের পলিসির উপর গবেষণাও করে। এবং সে গবেষণার ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করে। মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নেতাদের সঠিক চরিত্রকে জনগণের সামনে তূলে ধরা। এরূপ কড়া নজরদারীর কারণে ব্রিটেন মিথ্যা কথা বলা বা কোন কোম্পানীর খরচে হোটেলে থাকার অপরাধে মন্ত্রীদের পদ হারাতে হয়। হার্ভার্ড, কেম্ব্রিজ বা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিখ্যাত শুধু তাদের বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণার জন্য নয়, বরং ইতিহাস-বিষয়ক গবেষণা এবং তা নিয়ে গড়ে উঠা বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠানের কারণে। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি হয়নি। ফলে মশামাছি, সাপ-বিচ্ছু, রোগজীবানূর আক্রমণে মানুষ মরা কমলেও দুর্বৃত্ত নেতাদের সন্ত্রাসে মানুষ মরা কমেনি। দেশ দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধেয়ে চলেছে এরূপ ভয়ানক অপরাধীদের কারণে।
অস্তিত্বে ফ্যাসিবাদ ও ভারতপ্রেম
কয়লা থেকে তার কালো রং’কে কখনোই পৃথক করা যায় না। আওয়ামী লীগ থেকেও তেমনি আলাদা করা যায় না তার ফ্যাসিবাদী চরিত্র, ভারত-প্রেম এবং গণতন্ত্রবিরোধী সন্ত্রাসকে। এগুলি দলটির জন্ম থেকেই। প্রতিদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই আদর্শ থাকে। মানুষ সে আদর্শ বাস্তবায়নে দলবদ্ধ হয়। সে লক্ষে শ্রম, মেধা ও অর্থ দেয়। এবং প্রয়োজনে প্রাণও দেয়। সে লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রিদের রয়েছে যেমন সমাজতান্ত্রিক দল, তেমনি ইসলামপন্থিদের রয়েছে ইসলামি দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের আদর্শ কোনটি? দলের আদর্শ ধরা পড়ে দলের নীতি, কর্ম ও আচরণে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বহুকাল আগে, দলটি কয়েকবার ক্ষমতায়ও গেছে। ফলে গোপন থাকেনি তার নীতি, কর্ম ও আচরণ। আর তাতে প্রকাশ পেয়েছে দলটির আদর্শ। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আওয়ামী লীগের ইতিহাস হলো বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কবরে পাঠানোর। ক্ষমতায় বসেই শেখ মুজিব দেশবাসীর জন্য আইনসিদ্ধ কয়েকটি মতবাদের তালিকা বেঁধে দিয়েছিলেন, সেটি হলো বাঙালী জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষবাদ। এর বাইরে কোন আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করা বা ভিন্ন দল গড়াকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ রূপে ঘোষিত করেছিলেন। এমনকি মহান আল্লাহতায়ালার একমাত্র দ্বীন ইসলামকে নিয়েও নয়। ফলে মুজিবের আমলে বাংলাদেশে কোন ইসলামী দল ছিল না। অথচ সে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল নাস্তিক কম্যুনিস্টদের।
ডাকাতদের অপরাধ, অন্যের সম্পদ লুণ্ঠনে তারা সন্ত্রাস করে। আর ফ্যাসিবাদীদের ডাকাতি সমগ্র দেশবাসীর বিরুদ্ধে। তারা সন্ত্রাসে নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে। ডাকাতের সন্ত্রাসে রাজনীতি নাই, ভণ্ডামীও নাই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাদখলের সন্ত্রাসে রাজনীতি ব্যবহৃত হয় হাতিয়ার রূপে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসে যেমন রাজনীতি আছে, তেমনি প্রতারণাও আছে। জনগণের বিরুদ্ধে দলটির নাশকতার তালিকাটি বিশাল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিব আট আনা সের চাউল খাওয়ানার ওয়াদা করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। এসবই বলা হয়েছিল নিছক প্রতরণার স্বার্থে। আট আনা সের চাউল খাওয়ানা দূরে থাক, ক্ষমতায় গিয়ে ১৯৭৪’য়ে ডেকে আনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। নবাব শায়েস্তা খানের আমলের “ধনে-ধানে পুষ্পেভরা” বাংলা তখন বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত পায় তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ি রূপে। ক্ষুধার্ত মানুষ তখন উচ্ছিষ্টের খোঁজে কুকুরের সাথে আস্তাকুঁড়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। লজ্জা নিবারণে মহিলারা বাধ্য হয়েছিল মাছধরা জাল পড়তে। উন্নয়নের ওয়াদা দিয়ে ধ্বংস করেছিল দেশীয় শিল্প। বিরোধী দলীয় রাজনীতি, নির্বাচন এবং মিটিং-মিছিল পরিনত হয় সন্তাসের শিকার। গণতন্ত্রের ওয়াদা দিয়ে প্রতিষ্ঠা দেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা বলে স্বাক্ষর করেছিলেন ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি। ভারতীয় পণ্যের জোয়ার আনতে বিলুপ্ত করেন সীমান্ত বানিজ্যের নামে দেশের সীমান্ত। ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয় পাকিস্তান আর্মির অব্যবহৃত হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই হলো মুজিবামল। দেশটির হাজার বছরের ইতিহাসে আর কোন আমলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এতো অপমান জুটেনি।
সন্ত্রাসের রাজনীতি ও রাস্তায় লগি-বৈঠা
শেখ মুজিব তাঁর শাসনামলে সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একমাত্র দল বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (সংক্ষেপে বাকশাল) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী দলীয় পত্র-পত্রিকা। এমন একদলীয় শাসন, এমন সর্বনাশা দুর্ভিক্ষ এবং মতামত প্রকাশের উপর এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে নাই। নেপাল এবং শ্রীলংকাতেও নাই। অথচ সে স্বৈরাচারি মুজিবই হলো আওয়ামী লীগের শ্রেষ্ঠ নেতা ও শ্রেষ্ঠ আদর্শ। যারা ইসলামের প্রতিষ্ঠা চায়, অনিবার্য কারণেই তারা কোরআন-হাদীসের চর্চা বাড়ায়। কারণ একমাত্র কোরআন-হাদীসের জ্ঞানেই মানুষ অধিক একনিষ্ঠ ও আত্মত্যাগী হয়। তেমনি ডাকাত সর্দারের দীর্ঘ বক্তৃতা বার বার শুনে শিষ্যরাও বড় ডাকাত হয়। শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ হাজারো বার শুনিয়েও তাই দেশে রাজনৈতিক সহনশীলতা বাড়েনি। গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা পায়নি। অন্যদের মাঝে দূরে থাক, খোদ আওয়ামী লীগ কর্মীদের জীবনেও তাতে নৈতিক বিপ্লব আসেনি। বরং বেড়েছে নৃশংস ফ্যাসিবাদী। বরং কর্মীরা উৎসাহ পেয়েছে লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় নিরীহ মানুষ হত্যায়। উৎসব বেড়েছে অন্য দলের মিছিল-মিটিং পণ্ড করায় বা যাত্রীভর্তি বাসে আগুন ধরিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যায়। অসংখ্য আবরার ফাহাদ তো লাশ হয়েছে তো এদের হাতেই। এমন এক অপরাধের রাজনীতি তীব্রতর করতেই দলীয় কর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনার নসিহত ছিল এক লাশের বদলে দশ লাশ ফেলার। অথচ এরূপ নৃশংস সহিংসতাও মুজিবভক্তদের কাছে গণতান্ত্রিক রাজনীতি মনে হয়।
আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে যা ঐতিহাসিক সত্য তা হলো, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই একমাত্র দল যা গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রকেই দাফন করে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল একদলীয় বাকশালী শাসন। স্বাধীন মতপ্রকাশকে তারা দণ্ডনীয় অপরাধে পরিনত করেছিল। বিরোধীদের দমনের কাজে হাতিয়ারে পরিনত করেছিল দেশের আদালত, বিচারক, পুলিশ ও প্রশাসনকে। সেটি যে শুধু মুজিবামলে তা নয়, যখনই দলটি ক্ষমতায় গেছে তখনই সেটি করেছে। এমনকি অন্যদের উপর সন্ত্রাসে অতি নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে ক্ষমতার বাইরে থাকা কালেও। আওয়ামী লীগ তার সন্ত্রাসের রাজনীতি হঠাৎ শুরু করেনি। দশ-বিশ বছর আগেও নয়। বরং সে সন্ত্রাসের শুরু দলটির জন্ম থেকেই। এবং সন্ত্রাসের সে রাজনীতি শুধু মাঠকর্মী বা ক্যাডারদের হাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার হোতা ছিল মূল নেতারাই। তাছাড়া অন্যদলের জনসভা ও মিছিল পণ্ড করার মধ্যেও সে সন্ত্রাস সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সন্ত্রাস হয়েছে খোদ সংসদ ভবনে। সে সন্ত্রাস যে শুধু হাতাহাতি বা মারপিঠেও সীমাবদ্ধ ছিল, তা নয়। গড়িয়েছে মানুষ খুনে। লগি-বৈঠা নিয়ে কর্মীদের হাতে মানুষ খুনের আগেই নৃশংস নিষ্ঠুরতায় সেদিন পারঙ্গমতা দেখিয়েছিল দলটির সংসদীয় সদস্যরা। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের শরীক দল রূপে আওয়ামী লীগ সেদিন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে অনেক গুলি আসন পায়, কিন্তু তাদের আসন লাভে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিজয়ী হয়নি, সংসদের গৌরবও তাতে বাড়েনি। বরং দলটির দলীয় সাংসদদের মারের আঘাতে প্রাণ হারান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডিপুটি স্পীকার জনাব শাহেদ আলী। সে খবর সেদিন বিশ্ববাসী জেনেছিল। আওয়ামী লীগের নেতাগণ এভাবে সেদিন চুনকালি লেপন করেছিল পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শক্তির মুখে এবং পথ করে দিয়েছিল সামরিক শাসনের।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী। কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠিত দলে তিনি বেশী দিন থাকতে পারেননি। দ্বন্দ শুরু হয় দলের আরেক নেতা জনাব সোহরাওয়ার্দীর সাথে। ভাষানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে নতুন দল গড়েন। ন্যাপ তখন আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতিপক্ষ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে আওয়ামী সন্ত্রাসের খড়গ পরে এ দলটির উপর। ১৯৫৭ সালের ২৫শে জুলাই মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমমনা বেশ কিছু নেতা ও কর্মী এক রাজনৈতিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন ঢাকার রুপমহল সিনেমা হলে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সে সভায় যোগ দেন খান আব্দুল ওয়ালী খান, মিয়া ইফতারখান উদ্দীনসহ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তখন আওয়মী লীগ নেতা সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, আর পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি তখন শেখ মুজিব। সে সাথে তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। জনসভা পণ্ড করার মূল দায়িত্ব ছিল মুজিবের উপর। তখন বাসভর্তি গুণ্ডা এনে ন্যাপের সভা পণ্ড করা হয়। সে দিনটিতে পুলিশ বাহিনীর কার্যকলাপ ছিল আরো ন্যাক্কারজনক। হামলাকারি গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তারাও বরং গুণ্ডাদের সাথে হামলায় যোগ দেয়। পাকিস্তানে ইতিহাসে সেটিই ছিল সরকারি দলের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক সন্ত্রাস। বিরোধীদের পিটাতে সেদিন রক্ষিবাহিনীর প্রয়োজন পড়েনি, পুলিশকেই তারা সে কাজে ব্যবহার করেছিলেন। রুপমহল সিনেমা হলে হামলা সত্ত্বেও সে সভায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)’য়ের জন্ম হয়। পরের দিন ২৬ শে জুলাই ছিল পল্টনে ন্যাপের জনসভা। মাওলানা ভাষানীসহ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত নেতাদের সে জনসভায় ভাষন দেবার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে জনসভা হতে দেয়নি। আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনীর ঝটিকা বেগে সে জনসভার উপর হামলা করে। দক্ষিণে নবাবপুর রেলক্রসিং, উত্তরে পুরনো পল্টন, পশ্চিমে কার্জন হল এবং পশ্চিমে মতিঝিল এ বিস্তীর্ণ এলাকা এক কুরুক্ষেত্র পরিণত হয়। ভন্ডুল হয়ে যায় ভাষানীর জনসভা। সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে এভাবেই গণতন্ত্র চর্চাকে সেদিন অসম্ভব করা হয়েছিল।
১৯৭০’য়ের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান স্ট্রাটেজী হয়, নির্বাচনের আগেই রাজপথে দলীয় দখলদারি প্রতিষ্ঠা করা। কৌশল হয়, অন্য কাউকে নির্বাচনী প্রচার চালাতে না দেয়া। তাদের এ লক্ষ্য পূরণে জামায়াতে ইসলামীকে তারা প্রধান শত্রু মনে করে। ফলে এ দলটির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ছিল আরো হিংসাত্মক ও গুরুতর। ১৯৭০ সালের ১৮ই জানুয়ারি পল্টন ময়দানে ছিল জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী জনসভা। সে জনসভায় দলের আমীর মাওলানা মওদূদীর বক্তৃতা দেয়ার কথা। কিন্তু সে জনসভা আওয়ামী লীগের বিশাল গুণ্ডাবাহিনী হতে দেয়নি। হামলা চালিয়ে দুইজনকে শহিদ করে, আহত করে কয়েক হাজার। দলীয় অফিসে বসে শেখ মুজিব নিজে বলেছিলেন, মাওলানা মওদূদী কিভাবে পল্টনে মিটিং করে সেটি দেখে নিব। মুজিবের মুখ থেকে উচ্চারিত সে কথা নিজ কানে শোনেন এ নিবন্ধের লেখক। পরের রবিবার অর্থাৎ ২৫শে জানুয়ারি ছিল মুসলিম লীগের জনসভা। মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরীর বক্তৃতা দেয়ার কথা। আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা সে জনসভাও হতে দেয়নি। সেদিনও পল্টন ময়দানে উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে ইটপাথর মারার দৃশ্যটি স্বচোখে দেখেন এ নিবন্ধের লেখক। এর পরের রবিবার ছিল পহেলা ফেব্রেয়ারি। সেদিন পল্টন ময়দানে ছিল জনাব নূরূল আমীনের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানে ডিমোক্রাটিক পার্টির জনসভা। সেদিন পল্টন ময়দানের সে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মৌলভি ফরিদ আহম্মদ, জনাব মাহমুদ আলী, আজিজুল হক নান্নাহ মিয়া, ইউসুফ আলী চৌধুরি মোহন মিয়া, এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম খানসহ বহু নেতৃবৃন্দ। দলের নেতা জনাব নূরুল আমীন তখনও মঞ্চে আসেননি। আওয়ামী লীগ নেতারা সে জনসভাও হতে দেয়নি, শুরুতেই হামলা শুরু হয়। কোন কোন নেতার মাথার উপরও পাথর পড়ে, এমনকি জনসভা পণ্ড করার পর ফেরতগামী নেতাদের উপরও তারা হামলা হয়। এভাবেই নির্বাচনের আগে মাঠ দখলে নেয় আওয়ামী লীগ।
জিহাদ বনাম রাজনীতি
দেশ-সেবা, সমাজ-সেবা, জনসেবা তথা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের কল্যানে কিছু করার মাধ্যম হল রাজনীতি। আত্মত্যাগী মানুষ এখানে মেধা দেয়, শ্রম দেয়, অর্থ দেয়, এমনকি প্রাণও দেয়। রাজনীতিকে আরবীতে বলা হয় ‘সিয়াসা’। কোরআন ও হাদীসে ‘সিয়াসা’র কোন উল্লেখ নাই। তবে যা আছে তা হলো, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে সর্বাত্মক আত্মনিয়োগের প্রেরণা। আছে ইক্বামতে দ্বীন তথা দ্বীনের প্রতিষ্ঠার কথা। আছে মহান আল্লাহতায়ালার কোর’আনী বিধানের বিজয়ে অর্থদান, শ্রমদান এমনকি প্রাণদানের তাগিদ। ইসলামে এটি পবিত্র ইবাদত। এটিই হলো পবিত্র জিহাদ। এটিই হলো ঈমানদারদের রাজনীতি। রাষ্ট্রে ও সমাজে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফতের দায়িত্ব পালন নিছক নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত পালনে হয় না। এ জন্য অপরিহার্য হল জিহাদে তথা আল্লাহর শরিয়তি বিধান প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত পালনে ব্যক্তির জীবনে আধ্যাত্মিকতা আসে। আসে তাকওয়া। আর সে তাকওয়াটি হলো, আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বাঁচার সার্বক্ষণিক চেতনা। এটি হলো তাঁর হুকুম পালনে লাগাতর অঙ্গিকার। এমন তাকওয়া থেকেই মু’মিন পায় আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণ অনুসরণের প্রেরণা।
ঈমানদারের কাজ হলো, তাকওয়া-নির্ভর নিজের সে আধ্যাত্মিক পরিবর্তনকে স্রেফ মসজিদ বা নিজ-গৃহে সীমাবদ্ধ না রেখে সমাজ ও রাষ্ট্রের অঙ্গণে নিয়ে যাওয়া। এটি ইবাদত। ঈমানদারের রাজনীতি হলো মূলত সে ইবাদতেরই বাহন। পবিত্র কোরআনে ঈমানদারের মূল মিশন রূপে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা হলো, “আমারু বিল মারুফ”, “নেহী আনিল মুনকার” এবং “লিইউযহিরাহু আলাদ্দীনি কুল্লিহী”। এর অর্থ “ন্যায়ের আদেশ”, “অন্যায়ের নির্মূল” এবং “সকল মতবাদ,আদর্শ ও ধর্মের উপর ইসলামের বিজয়”। নবীজী(সাঃ)র যুগে আজকের ন্যায় রাজনৈতিক দল ছিল না, রাজনীতিও ছিল না। ছিল জিহাদ। সে জিহাদে অর্ধেকের বেশী সাহাবী শহীদ হয়ে গেছেন। তবে সেক্যুলারিষ্টদের কাছে জিহাদ নাই, শাহাদতও নাই। যা আছে তা হল ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দল গড়া, দলাদলি করা, মিথ্যা ওয়াদা দিয়ে দলভারি করা এবং গদীর স্বার্থে সকল উপায়ে জনগণকে প্রতারণা করা। এটিই হল, মেকিয়াবেলীর “পলিটিক্স” তথা সেক্যুলার রাজনীতি। এমন রাজনীতিই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতি।
সবচেয়ে বড় ডাকাতি
মেহনত, ত্যাগস্বীকার বা লড়াই শুধু ঈমানদারগণই করে না। ডাকাতরাও করে। তারাও রাত জাগে, মেহনত করে, লড়াই করে, এমনকি প্রাণও দেয়। ডাকাতরা হানা দেয় ব্যক্তির ঘরে বা দোকানে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ডাকাতি হয় বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে রাজনীতির ময়দানে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে এখানে ময়দানে নামে দেশের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতরা। তাদের লক্ষ্য, সমগ্র রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠিত করা। নৃশংসতায় এরা হিংস্র পশুকেও হার মানায়। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রক্তপাত ঘটেছে তো এসব বড় বড় রাজনৈতিক ডাকাতদের কারণে। বাংলাদেশেও সবচেয়ে বেশী রক্তপাত ঘটিয়েছে তারা। সেটি যেমন একাত্তরে, তেমনি আজও। নিজেদের গদি-দখলের সে প্রজেক্টকে তারা বলে জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনীতি। অথচ বাস্তবে সেটি হলো জনগণকে অধিকারহীন করার ষড়যন্ত্র।
শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার আমলে ডাকাতি হয়েছে জনগণের ভোটের উপর। এমনকি ইয়াহিয়া বা আইয়ুবের আমলেও এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। বস্তুতঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের ডাকাতিগুলিই হলো সবচেয়ে বড় ডাকাতি। এরূপ ডাকাতিতে একচ্ছত্র দখলদারি গেছে আওয়ামী লীগের হতে। নিজেদের সে একচেটিয়া দখলদারি প্রতিষ্ঠা দিতে প্রয়োজনে তারা বিদেশী ডাকাতদেরও ডেকে এনেছে। একাত্তরে ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে ডেকে আনার প্রেক্ষাপট নির্মিত হয়েছিল তো এভাবেই। ফলে সেদিন বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকার মালামাল এবং যুদ্ধাস্ত্র ভারতে ডাকাতি হয়ে যায়। ধ্বসিয়ে দেয় সীমান্ত তথা অর্থনীতির তলা। বিনিময়ে উপহার দেয় এক তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ি নামক বাংলাদেশ। ডেকে আনে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ, যাতে মৃত্যু ঘটে বহুলক্ষ বাংলাদেশীর। বিগত বহুশত বছরে বাংলাদেশের সকল ডাকাত এবং সকল হিংস্র পশু মিলেও এতো মৃত্যু, এতো দুঃখ ও এতো অপমান উপহার দেয়নি যা ভারতীয় ডাকাত ও তার বাংলাদেশী বাকশালী সহযোগীরা একাত্তর থেকে পঁচাত্তর -এ চার বছরে দিয়েছে। হাসিনা সে বাকশালী ঐতিহ্যকে প্রবলতর করেছে চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম, খুন, ফাঁসি, নির্যাতন ও ধর্ষণের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা দিয়ে।
ডাকাতির চেয়েও নৃশংস
ডাকাতদের তবুও কিছু বিধিমালা থাকে। তারা দিবালোকে ডাকাতি করে না। যাত্রীভর্তি বাসেও আগুন দেয় না। বিত্তহীন গরীব মানুষকেও লুণ্ঠনের লক্ষ্য বানায় না। কিন্তু ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক ডাকাতগণ নৃশংসতা ঘটায় দীবালোকে। তাদের নৃশংসতায় সবচেয়ে বেশী মারা পড়ে নিঃস্ব গরীবেরা। এবং ধনি হয় সবচেয়ে ধনিরা। তাছাড়া লোভটা যেখানে বিশাল, নৃশংসতাও সেখানে বিকট রূপ নেয়। বাংলাদেশের আওয়ামী রাজনীতিতে সে নৃশংসতা যে কতটা প্রকট তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। হরতাল বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। বহুদল বহুবছর ধরেই হরতাল করে আসছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানে আমলেও হরতাল হয়েছে। কিন্তু বাসে আগুন দিয়ে যাত্রীদের হত্যা করা বা গায়ে পেট্রোল ঢেলে কাউকে পুড়িয়ে মারা এক ভয়াবহ নতুন নৃশংসতা। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেটি আমদানী করেছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীগণ তাদের নিজেদের ডাকা হরতালগুলোতে। আর তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মনে কোন অনুশোচনা নাই, আফসোসও নাই। ১৯৯৩ সালে যাত্রাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের দিনে-দুপুরে বাসে আগুন লাগিয়ে ১৮ জন যাত্রীকে পুড়িয়ে মারা হয়। ২০০৪ সালের ৪ই জুলাই ছিল আরেকটি হরতালের দিন। সেদিন শেরাটন হোটেলের সামনে একটি দোতালা বাসে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয় ১০ জন নিরীহ বাসযাত্রীকে। ২০০৫ সালের ২১মে হরতালের দিনে আমির হোসেন নামক এক সি.এন.জি চালককের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। ২৫শে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা যায়। ২০০৫ সালে জানুয়ারি মাসে মিরপুর এক নম্বর সেকশনে হরতালের আগের রাতে হরতালের সমর্থণে একটি বাসকে লক্ষ করে বোমা ছুঁড়া হয়। কিন্তু বোমাটি পড়ে মফিজ নামক একজন রিকশাচালকের উপর। গার্মেন্ট শ্রমিক মফিজ ৮ সন্তানের সংসার চালাতে সে দিনে ফ্যাক্টরীতে কাজের পাশাপাশি রাতে রিকশা চালাতো। ঐ সময় সে বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনতে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী তাঁকে আর দুধ কিনে তার ক্ষুধার্ত সন্তানদের কাছে ফিরতে দেয়নি। সে ফিরেছিলই ঠিকই, তবে লাশ হয়ে। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর একটি মিছিলের উপর আওয়ামী লীগের কর্মীগণ গলি-বৈঠা নিয়ে হামলা করে। সে হামলায় নিহত হয় ৫ জন জামাতকর্মী, আহত হয় বহু শত। ২০০৫ সালের ৬ই ফেব্রেয়ারির হরতালে আশরাফ সিদ্দিকী নামক একজন পুলিশকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা পিটিযে হত্যা করেছিল। ২০০৬ সালের ১৩ই নভেম্বর দৈনিক “প্রথম আলো” খবর ছাপে, “১৪ দলের অবরোধের প্রথম দিনে ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়। সাভারে ৮টি গাড়ি ভাঙচুর হয়।” ২০০৪ সালের ৮ই জুন দৈনিক ইত্তেফাক রিপোর্ট ছাপে, “চার দলীয় সরকারের প্রথম তিন বছরে হরতালে ২৫টি বিআরটির বাস পোড়ানো হয়।” ২০০৬ সালের ৭ই ডিসেম্বর দৈনিক যায়যায় দিন প্রতিবেদন ছাপে, ১৩ দিনের অবরোধ ও সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীতে ৭৭ জন মারা যায়, ২৮০০ আহত হয় এবং ১৮০০ পঙ্গু হয়। দেশের ক্ষতি হয় ৬ হাজার কোটি টাকা। কীরূপ নৃশংস খুনিদের যে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে নামিয়েছে এ হলো তারই নমুনা।
খুনিদের বাঁচাতে শেখ হাসিনা
স্বৈরাচারি দুর্বৃত্ত এরশাদ তখন ক্ষমতায়। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তখন বেগবান হওয়ার পথে। শেখ হাসিনাকে সে আন্দোলন থেকে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র আটে এরশাদ। লক্ষ্য, নিজের স্বৈরাচারকে শক্তিশালী ও দীর্ঘায়ীত করা। সে পরিকল্পনায় ধরা দেয় শেখ হাসিনা। বিনিময়ে এরশাদের কাছ থেকে আদায় করে নেয় বহু সুযোগ-সুবিধাও। দলীয় খুনিদের বাঁচাতে শেখ হাসিনা যে সুবিধাগুলো আদায় করেছিলেন তার একটি উদাহরণ দেয়া যাক। সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিবির কর্মীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রলীগের কর্মীরা। ইটের উপর তাদের মাথা রেখে ইটদিয়ে মগজ থেথলে দেয়া হয়েছিল। দিনদুপুরে সংঘটিত সে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে আদালত কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে শাস্তি দেয়। এমন দুর্বৃত্ত খুনিদের পক্ষ কি কোন সভ্য মানুষ নেয়। খুনিদের ঘৃণা করা তো মানুষের অতি মৌলিক মানবিক গুণ। কিন্তু সে সন্ত্রাসী খুনিদের পক্ষ নেয় শেখ হাসিনা। জনাব আতাউর রহমান খান তার স্মৃতিচারণ বইতে লিখেছেন, এরশাদের সাথে আলাপ করতে এসে শেখ হাসীনা দাবী তুললেন তিনি কোন আলাপই করবেন না যদি শাস্তিপ্রাপ্ত উক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের মূক্তি দেয়া না হয়। নিজদলীয় সন্ত্রাসী খুনিদের নিয়ন্ত্রনে রাখার সামর্থ্য শেখ হাসিনার ছিল না। সামর্থ্য ছিল না তাদের কৃত খুনের ন্যায় জঘন্য অপরাধকে ঘৃণা করার। তেমনি এরশাদের ছিল না শেখ হাসিনার দাবীর কাছে নত না করার মত নৈতিক মেরুদণ্ড। হাসিনার দাবীর মুখে স্বৈরাচারি এরশাদ সে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের মুক্তি দিয়েছিল। এরশাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিজ গদীর নিরাপত্তা, কে কোথায় খুন হল সেটির বিচারে তার কোন আগ্রহ ছিল না। আদালতের রায় এভাবেই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হলো। দেশের আইনকানূনের প্রতি এই হলো হাসিনার আচরণ। আদালতের ন্যায় বিচার নিয়ে তার কোন আগ্রহ নাই, আগ্রহ স্রেফ রাজনৈতিক বিরোধীদের ফাঁসিতে ঝুলানোর কাজে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করায়। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সন্ত্রাস যে কতটা প্রবল, শেখ হাসিনার কাছে নিজ দলের খুনিদেরকে খুনের শাস্তি থেকে বাঁচানোটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ -এ হলো তার প্রমাণ। নিজের পিতা ও পরিবারে অন্যদের খুনের বিচার নিয়ে তিনি আদালত বসিয়েছেন। কিন্তু বহু হাজার মানুষ যে প্রতি মাসে খুন হচ্ছে তাদের বিচার কই? তাঁর দৃষ্টিতে কি অন্যদের জীবনের কোন মূল্য নেই। প্রধানমন্ত্রী রূপে তার দায়বদ্ধতা কি শুধু নিজ দল ও পরিবারেরর প্রতি? স্বজনহারা দুঃখী পরিবারের কি ন্যায় বিচার চাওয়ার কোন অধিকারই নাই? ফ্যাসিবাদী রাজনীতিতে অন্যদের বিচার চাওয়া দূরে থাকে বাঁচার অধিকারই দেয়া হয়না। হিটলারের ফ্যাসিবাদী শাসনে তাই গ্যাস চেম্বারে বহু লক্ষ ইহুদীকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছিল। মুজিবের আমলেও হত্যা করা হয়েছিল ৩০ হাজার বিরোধী দলীয় কর্মীকে। তাদের পরিবারগুলি হারিয়েছিল ন্যায়-বিচার চাওয়ার অধিকার। শেখ হাসিনা আজ অনুসরণ করে চলেছেন তাঁর পিতার সে ফ্যাসিবাদী আদর্শকেই।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রধানতম নীতি হয়ে দাঁড়ায় দলীয় দুর্বত্তদের বাঁচানো। সে লক্ষ্য পুরনে শেখ মুজিবের প্রয়োজন পড়েছিল বিশাল রক্ষিবাহিনী গড়ে তোলার। আর আজ সে অভিন্ন কাজটিই করছে পুলিশ, র্যাব, প্রশাসন, আদালত এবং আদালতের সরকারি উকিলগণ। তাদের কাজ হয়েছে জনগণের হাত থেকে সন্ত্রাসীদের প্রটেশকন দেয়া। আওয়ামী লীগ কর্মীগণ রাস্তায় মিছিল নিয়ে নামলে আগে পিছে পুলিশ বাহিনী তাদেরকে পাহারা দেয়। জনমানবহীন গভীর জঙ্গলে মানুষ খুন বা ব্যাভিচার হলে শাস্তি হয় না। কারণ সেখানে পুলিশ নাই, আইন আদলত না। জঙ্গল তো পশুদের জন্য, লোকালয় ছেড়ে জঙ্গলে বসবাস করার বিপদ তাই ভয়ানক। কিন্তু জঙ্গলের আইনহীনতা নেমে এসেছে বাংলাদেশের জনপদে। ফলে খুন এবং ধর্ষণেও শাস্তি হয় না। খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসে বনের পশুর ন্যায় দুর্বৃত্তদের এত নির্ভীক হওয়ার হেতু তো সেটাই। শেখ হাসিনা নব্বইয়ের দশকে প্রথমবার যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তথন জাহাঙ্গির বিশ্ববিদ্যালয়ের মানিক নামে এক ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণে সেঞ্চুরির উৎসব করেছিল। সে খবর পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। যে কোন সভ্য দেশেই ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ সে নরপশুকে শেখ হাসিনার সরকার আদালতে তুলেনি, ফলে একদিনের জন্যও এ ঘৃণ্য অপরাধীর কোন শাস্তি হয়নি। শেখ হাসিনার নীতি-নৈতিকতা ও বিচারের মানদণ্ড যে কতটা নীচু -এ হলো তারই নমুনা। সমাজের চোর-ডাকাত, ধর্ষক, খুনী তথা নৃশংস অপরাধীগণ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোতে যোগ দেয় তো এরূপ প্রটেকশান পাওয়ার জন্যই।
প্রশ্ন হলো, অপরাধীদের কৃত অপরাধের বিরুদ্ধে ঘৃনা না থাকলে কি তাকে শাস্তির দেয়ার আগ্রহ জন্মে? ডাকাত দলের সরদারের সেটি থাকে না। বরং ডাকাতদের মধ্যে কে কতটা নৃশংস ভাবে ডাকাতি করলো সেটিই বরং ডাকাত সর্দারের কাছে বেশী গুরুত্ব পায়। শেখ হাসিনার কাছে দলের সন্ত্রাসীদের কদর তো এজন্যই প্রবল। ফলে পুলিশের শক্তি নাই তাদেরকে আদালতে তোলার। একই অবস্থা ছিল শেখ মুজিবের। তাই মুজিবের আমলে কোটি কোটি টাকার রিলিফের কম্বল ও অন্যান্য মালামাল চুরি হয়েছে, কালোবাজারীদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ভারতে পাচার হয়েছে, ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে বহু ছাত্র খুন হয়েছে। কিন্তু সেসব অপরাধে কাউকে কি একদিনের জন্যও শাস্তি হয়েছে? বরং গাজী গোলাম মোস্তাফাদের মত হাজার হাজার দুর্বৃত্ত ছিল মুজিবের নিত্য সহচর। তাদের কাউকে কি তিনি দল থেকে এক দিনের জন্যও বহিস্কার করেছেন? তাদের নিয়ে বরং দলীয় দফতর, দলীয় সভা, মন্ত্রীসভা ও প্রশাসন রমরমা করেছেন। তবে হাসিনার আমলে ছাত্র লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীগণ অপরাধ কর্মে একা নয়। তাদের সাথে সে কাজে নেমেছে পুলিশ ও র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়নের বেতনভূক সেপাইরা। পূর্বে অন্যদের মিছিল-মিটিং পণ্ড করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেরা ময়দানে নামতো, এখন তাদের সাথে নামছে সরকারি প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাব। রাজপথে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের তারা যথেচ্ছাচারে লাঠিপেটা করছে। সংসদের এমপি এবং বিরোধী দলীয় চিপহুইপকে গায়ের কাপড় খুলে পিটিয়েছে পুলিশ। এমনকি বুকের উপর পা তুলে পিষ্ঠ করেছে পুলিশ। দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় সে ছবি ছাপাও হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের তান্ডব
সরকারি আদেশে জামায়াত নেতাদের পায়ে দণ্ডবেড়ি পড়ানো হয়েছে। এরূপ দণ্ডবেড়ি সাধারণত খুনি বা ডাকাতদের পড়ানো হয়। অথচ এ নেতারা কাউকে খুন করেছেন বা কোথাও ডাকাতি করেছেন সে প্রমান নেই। এমনটি করা হয়েছে স্রেফ জনগণের চোখে তাদেরকে হেয় করা বা দৈহিক ও মানসিক ভাবে তাদেরকে নির্যাতিত করার লক্ষ্যে। একই উদ্দেশ্যে বিএনপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও হিযবুত তাহরিরের কর্মীদেরও নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়েছে রাজপথে। বিরোধীদের কষ্ট দেয়ার মধ্যেই হাসিনা ও তার সরকারের আনন্দ। এটি নিছক নৈতিক রোগ নয়, ভয়ানক মানসিক রোগও। চিকিৎসাস্ত্রের ভাষায় এটি স্যাডিইজম। এমন মানসিক রোগে অন্যকে কষ্ট দেয়া বা অপমান করার মধ্যেই আনন্দ। হাসিনার মাঝে এরোগের প্রকোপ অতি প্রকট। বিরোধীদের ঘর থেকে বের করে রাস্তায় টানার মধ্যে তার আনন্দ। সে আনন্দটি পাওয়ার লক্ষ্যেই শত শত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের পর জেল খানায় জঘন্য অপরাধীদের সাথে রাখা হয়। এবং পুলিশের হাতে সপ্তাহর পর সপ্তাহ রিমাণ্ডে দেয়া হয়। সে আনন্দটি পাওয়ার লক্ষ্যেই ধর্ষণে সেঞ্চুরির পর ছাত্রলীগের স্যাডিস্ট কর্মীরা উৎসব করে। শুধু গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীর দণ্ডবেড়ি নয়, এমনকি ধর্ষিতা নারীর সীমাহীন যাতনাও তাদের যে কতটা পুলক দেয় -এ হলো তার নজির। এমন এক নিষ্ঠুর আনন্দবোধ নিয়েই শেখ মুজিব সিরাজ সিকদার হত্যার পর দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে তৃপ্তিভরে বলেছিলেন,“কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” বাংলাদেশের বিপদ, দেশ আজ এরূপ ভয়ানক অপরাধীদের হাতে অধিকৃত। শুধু পদ্মা, মেঘনা বা তিস্তার পানি নয়, সমগ্র দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়াতেই তাদের আনন্দ। সন্ত্রাস এখন আর স্রেফ দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীদের মনোপলি নয়, এটি এখন সরকারি প্রশাসনের হাতিয়ার। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এ এক ভয়ংকর রূপ। শাসন ক্ষমতায় এর আগে আইয়ুব খান এসেছেন, ইয়াহিয়া খানও এসেছেন। মুজিবসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতারা আগরতলা ষড়যন্ত্রের ন্যায় বহু গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে কি একদিনের জন্যও রিমাণ্ডে নিয়ে শারীরীক ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে? কাউকে কি পায়ে দণ্ডবেড়ি পড়ানো হয়েছে? শেখ মুজিব তো জেলে প্রথম শ্রেনী পেয়েছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও একাত্তরে দেশোদ্রহী মামলার আসামী হওয়া সত্ত্বেও তার পায়ে দণ্ডবেড়ি পড়ানো দূরে থাক, পুলিশ কি একটি আঁচড়ও দিয়েছিল? অথচ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মুখাকৃতিকে হিংস্র পশুবৎ করে সে ছবি দেশময় প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু যে অপরাধ শেখ হাসিনা করছে তাঁকে আজ কি বলা যাবে? সরকারি ভাবে এতো খুন, এতো সন্ত্রাস ও এতো দানবীয় নির্যাতনের পর শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে মাননীয় বললে ইয়াহিয়া বা আইয়ুব খানকে কি বলা যাবে? ১ম সংস্করণ ০৩/১০/১১; ২য় সংস্করণ ০১/১২/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018