আবারো ডাকাতি হয়ে যাবে জনগণের ভোট
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 26, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, আর্ন্তজাতিক, বাংলাদেশ
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
কেন হবে পুণরায় ভোটডাকাতি?
ডাকাতদের কাজ ডাকাতি নিয়ে বাঁচা। ডাকাতির মধ্যেই তারা বিজয়, গর্ব, শক্তি ও অহংকার দেখে। ডাকাতি নিয়েই তাদের আনন্দ-উৎসব। সেরূপ উৎসব দেখা গেছে ২০১৮ সালে দেশব্যাপী সফল ভোটডাকাতির পর। সেদিন উৎসব দেখা গেছে রাজারবাগ পুলিশ সদর দফতরেও। ভোটডাকাতদের মুখে সেদিন ছিল মহা তৃপ্তির হাঁসি। আজও হাসিনার ন্যায় বাংলাদেশের ডাকাতগণ ভোটডাকাতির সে নেশা নিয়েই প্রতিক্ষণ বাঁচে। তাদের মধ্যে এমন কোন নৈতিক বিপ্লব আসেনি যে ডাকাতির সে নেশা তারা ছেড়ে দিবে। তাছাড়া যে দেশে ডাকাতি করলে শাস্তি হয় না, বরং ডাকাত সর্দার বা সর্দারনীকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সন্মানিত করা হয় সে দেশে বারবার ডাকাতি হবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশ এজন্যই তো একটি ডাকাত-কবলিত দেশ।
চোর-ডাকাতেরা ৪টি কারণে ডাকাতি ছেড়ে দেয়। এক). আল্লাহর ভয় তথা জাহান্নামের আগুনে জ্বলার ভয়। দুই). দেশের আদালতে কঠোর শাস্তির ভয়। তিন).ডাকাতি করার মত সামর্থ্য না থাকা। এটি সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশের ডাকাতদের মনে আল্লাহর ভয় নাই। সে ভয় থাকলে তো তারা কখনোই ডাকাতিতে নামতো না। তারা হলো ইসলাম থেকে দূরে সরা লোক।তাদের প্রতি মুহুর্তের লড়াই তো ইসলামের উত্থান প্রতিরোধে। দ্বিতীয়তঃ, ডাকাতদের মনে আদালতের শাস্তির ভয় না থাকা। তারা জানে, আদালতে যারা বিচারকের আসনে বসে আছে তারা তাদেরই নিয়োগপ্রাপ্ত লোক। ডাকাতি শাস্তি দেয়ার মত মেরুদন্ড যেমন তাদের নাই, তেমনি নাই নৈতিক বলও। তৃতীয়তঃ, বাংলাদেশে যারা চোরডাকাত ও ভোটডাকাত তাদের রয়েছে ডাকাতির জন্য প্রয়োজননীয় অবকাঠামো। সে যেমন দলীয়, তেমনি দলের বাইরে। ডাকাতির জন্য যেমন রয়েছে লক্ষ লক্ষ দলীয় নেতাকর্মী, তেমনি রয়েছে ডাকাতিতে সহায়তা দেয়ার জন্য দুই পায়ে খাড়া দেশের বিশাল পুলিশ বাহিনী, প্রশাসনিক বাহিনী, সেনাবাহিনী ও আদালতের বিচারক বাহিনী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সরকারী কর্মচারিদের দেখা গেছে রাতের আঁধারে ব্যালট চুরি করে শেখ হাসিনার দলের প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরে বাক্স ভরতে।
বাংলাদেশে ভোটডাকাতি এক বার নয়, বার বার হয়েছে। কিন্তু দেশের পুলিশগণ একজন ডাকাতকে ধরেনি এবং আদালতের বিচারকগণ একজন ডাকাতকেও শাস্তি দেয়নি। এক দিনের জন্যও কোন ডাকাতকে জেলবন্দী করেনি। ডাকাতদের ভোটডাকাতিকেও তারা সুষ্ঠ নির্বাচন বলে রায় দিয়েছে। এখন আর এটি কোন গোপন বিষয় নয় যে, পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আদালতে যারা কর্মরত তারা নানারূপ সরকারি সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে ডাকাতির বিশাল ভাগ পায়। ফলে ভোটডাকাতি হলেই তাদের লাভ। চতুর্থ যে কারণে ডাকাতেরা বার বার ডাকাতি করে তা হলো, দেশের জনগণের যদি ডাকাত নির্মূলের সামর্থ্য না থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণ বার বার প্রমাণ করেছে, ডাকাত তাড়ানোর সামর্থ্য তাদের নাই। সে কাজে তেমন আগ্রহও নাই। মুজিব, এরশাদ ও হাসিনার আমলে জনগণের ভোট বার বার ডাকাতি হয়ে গেলেও ডাকাত ধরতে জনগণ রাস্তায় নামেনি। ভোটডাকাতির পর প্রতিবাদে এক লাখ লোক রাজধানীর রাস্তায় নেমেছে সে প্রমাণ নাই। অথচ যে কোন উন্নত দেশে এমন ভোটডাকাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত। ডাকাত না তাড়িয়ে তারা কখনোই ক্ষান্ত দিত না। কিন্তু বাংলাদেশে সেরূপ সভ্য কাজটি কখনোই হয়নি।
ডাকাতমুক্ত সভ্য ও নিরাপদ জীবন উপভোগের একটি মূল্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশীরা সে মূল্য দিতে রাজী নয়। তারা বরং ডাকাতদের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচতে চায়। জনগণের স্বাধীনতার উপর প্রথম ডাকাতি করেছিল শেখ মুজিব। সেটি একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা দিয়ে। কিন্তু সে ডাকাতবান্ধব স্বৈরাচারি মুজিবকে বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর খেতাব দিয়ে সম্মনিত করেছে। জাতির জনকের আসনেও বসিয়েছে। কোন সভ্য দেশে কি কখনো এরূপ হয়? যে দেশে ডাকাতগণ এভাবে সম্মানিত হয় সেদেশ চোর-ডাকাতদের অভয় অরণ্যে পরিণত হবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
তাছাড়া ডাকাতি এখানে শুধু জনগণের অর্থ-সম্পদের উপর ডাকাতি নয়, বরং ভোটডাকাতির মাধ্যমে সেটি সমগ্র রাষ্ট্রের উপর ডাকাতি। তখন ডাকাতেরা সমগ্র দেশের মালিক-মোখতার হয়ে যায়। তখন ব্যাংক-ডাকাতি, শেয়ার মার্কেট ডাকাতি, রিজার্ভ ডাকাতি, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থডাকাতির কাজ অতি সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশে বহু লক্ষ কোটি টাকা তো এভাবেই ডাকাতি হয়ে গেছে। এবং সে অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আগে সমগ্র দেশের উপর এরূপ ডাকাতি করতে বিদেশী ডাকাত শত্রুরা রণাঙ্গণে যুদ্ধ করতে হতো। এখন সে ডাকাতি করছে দেশী ডাকাতেরা। এবং সেটি তারা করছে ভোটডাকাতির মাধ্যমে।
কীরূপে সম্ভব ডাকাত নির্মূল?
ডাকাত নির্মূলের জন্য সবচেয়ে জরুরী হলো ডাকাতদের কঠোর শাস্তির বিধান। চাই আইনের শাসন। চোরডাকাতগণ মানবতার পরম শত্রু। তাদের সাথে কোনরূপ আপোষ চলে না। দুর্বৃত্তদের মেনে নেয়া ও তাদের সাথে আপোষ করাই আরেক দুর্বৃত্তি। ইসলামে সেটি হারাম। ইসলামের বিধান হলো, চোরের হাত কেটে দেয়া। এবং ডাকাতের শাস্তিটি আরো কঠিন। মহান আল্লাহতায়ালার আইনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আইন আর কি হতে পারে? কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের বিদ্রোহ সে শরিয়তী আইনের বিরুদ্ধেও। ভাবটা এমন, মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালার চেয়েও তারা যেন অধিক জ্ঞানী! অথচ মহান আল্লাহতায়ালার আইনের বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহ ও অবজ্ঞা মানুষকে নিরেট কাফির, জালেম ও ফাসেকে পরিণত করে। সে ঘোষণাটি এসেছে সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে।
প্রতিটি সভ্য দেশেই ডাকাতদের কঠোর শাস্তি দেয়া হয়। তাদেরকে দীর্ঘকালের জন্য জেলে পাঠানো হয়। একবার ডাকাতিতে ধরা পড়লে আজীবনের জন্য সরকারি চাকরি তার জন্য হারাম হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ভিন্ন। বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা অকেজো। বিচারকগণ যেহেতু নিয়োগ পায় ভোটডাকাতদের দ্বারা, ডাকাতদের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এজন্যই ভোটডাকাতদের কোন রূপ শাস্তি হয়না। শাস্তি না দিয়ে ডাকাতদের বরং ক্ষমতার শীর্ষে বসানো হয়। ডাকাতদের সংসদ-সদস্য ও মন্ত্রী বানানো হয়। ডাকাতিতে যে পুলিশ তার সামর্থ্য দেখায় তাকে দ্রুত প্রমোশন দেয়া হয়। ডাকাত জেনারেলকে সেনাপতি বানিয়ে পুরস্কৃত করা হয় -যেমনটি জেনারেল আজিজের ক্ষেত্রে হয়েছে। এবং ডাকাত দলের সর্দার বা সর্দারনীকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে তাকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় বলে স্যালুট জানানো হয় -যেমনটি আজ হাসিনার ক্ষেত্র হয়েছে।
রোগজীবাণু যেমন রোগ ছড়ায়, চোর-ডাকাতেরা তেমনি দেশ জুড়ে দুর্বৃত্তি ছড়ায়। এবং চোর-ডাকাতেরা যখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নয়, তখন দুর্বৃত্তায়নের কাজটি রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত হয়। তখন দেশে দুর্বৃত্তির জোয়ার আসে। তখন ডাকাত দমনের জন্য নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান বলে কিছু থাকে না। এজন্যই তো বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে পাঁচবার প্রথম হয়েছে। এবং এখনো দেশ জুড়ে চলছে গুম, খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, অপহরণ, চুরিডাকাতি ও ভোটডাকাতির প্লাবন।
স্বৈরাচারী শাসক মাত্রই ফ্যাসিবাদী। এবং ফ্যাসিবাদী শাসক মাত্রই ডাকাত। তারা কখনোই জনগণ রায়ের ইজ্জত দেয় না। ডাকাত যেমন অর্থ ছিনিয়ে নেয়, ফ্যাসিবাদীরা তেমনি জনগণের রায় ও গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনিয়ে নেয়। যে কোন সভ্য দেশের আইনে ডাকাতি যেমন শাস্তিযোগ্য অপরাধ কর্ম, তেমনি অপরাধ কর্ম হলো ফ্যাসিবাদ। এজন্যই ইউরোপের দেশগুলিতে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো ফ্যাসিবাদ। অথচ বাংলাদেশে ভোটডাকাতি যেমন বেঁচে আছে তেমনি প্রবল ভাবে বেঁচে আছে মুজিবের ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিস্ট মুজিব জনগণের রায়দানের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল বাকশাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। জনগণের ভোট না নিয়েই সে নিজেকে প্রেসিডেন্টের আসনে বসিয়েছিল। এরশাদ বন্দুকের জোরে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উপর ডাকাতি করেছিল। হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ডাকাতি করে নিয়েছে ব্যালট ডাকাতির মাধ্যমে। রাষ্ট্র ও জনগণের উপর ডাকাতির অপরাধে মুজিব ও এরশাদের যেমন শাস্তি হয়নি, তেমনি শাস্তি হয়নি হাসিনারও। যেসব দেশে ভোটডাকাত এবং গণতন্ত্রের শত্রুদের শাস্তি না দিয়ে সম্মানিত করা হয় সেদেশে কি গণতন্ত্র বাঁচে? গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে গণতন্ত্রের শত্রুদের শাস্তি দেয়ার সামর্থ্য থাকতে হয়। নইলে ফ্যাসিবাদের আযাব নিয়ে বাঁচতে হয়। বাংলাদেশীরা তো সে আযাব নিয়েই বাঁচছে।
হাসিনা কেন ক্ষমতা ছাড়বে না?
হাসিনা জানে তাকে অবশ্যই ক্ষমতায় থাকতেই হবে। এটি তার বাঁচা-মরার প্রশ্ন। সাপ যেমন বেজিকে দেখে ভয় পায়, হাসিনা তেমনি গণতন্ত্রকে ভয় পায়। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার অর্থই হলো, তার নিজের জন্য এবং তার দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনা। ক্ষমতা ছাড়লে অতীতের সকল দুষ্কর্ম ও ডাকাতির জন্য তার বিচার হবে এবং শাস্তিও তাকে পেতে হবে। সে বিপদ থেকে বাঁচতেই যেভাবেই হোক সে আবার ভোট ডাকাতিতে নামবে। নির্বাচনে তার দলের পরাজয় অনিবার্য। সেটি হাসিনা ও তার দলের নেতাগণ ২০১৪ সালের আগেই টের পেয়েছিল। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথাকে বিলুপ্ত করে এবং ভোট ডাকাতির পথ বেছে নেয়।
বিরোধী দলগুলি নিজদের সরকার চায় না, তারা চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। তাতে কোন গণতন্ত্রকামী সভ্য মানুষের আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু তাতে হাসিনার আপত্তি। কারণ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন মানেই তার অনিবার্য পরাজয়। সেটি মেনে নেয়ার অর্থ বিপদ ডেকে আনা। এজন্যই হাসিনার সামনের একটিই পথ সেটি হলো আবারো ভোটডাকাতি। তাই এখন থেকেই সে প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি পূর্ণ ভোটডাকাতির। এটুকু বুঝার জন্য কি পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে?
দিল্লির শাসক চক্রও চায় আরেকটি ভোটডাকতি
বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে ভারতের সামান্যতম আগ্রহ নাই। তারা বরং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শত্রু। সেজন্যই তারা মুজিবের বাকশালী ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেছে, এবং আজ সমর্থন করেছে হাসিনার ভোটডাকাতিকে। গণতন্ত্র মানেই বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা। সেটি ভারত চায়না। হাসিনা ক্ষমতা থেকে চলে গেলে দিল্লির স্বার্থ বিপদে পড়বে। তখন বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা পাবে। তখন ভারত হারাবে বাংলাদেশের বুক থেকে তার ইচ্ছামত সুবিধাগুলি আদায় করে নেয়ার সুযোগ। ভারতের দুষ্কর্ম গুলিও তখন জনগণের সামনে চলে আসবে। তখন দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ পাবে। তখন বাংলাদেশের মিডিয়া ভারতের কুকর্মগুলি তুলে ধরার সুযোগ পাবে।
তাছাড়া ভারত কখনোই চায়না, বাংলাদেশের মতো ১৭ কোটি মানুষের বাজার হাতছাড়া হয়ে যাক। তাতে বিপদে পড়বে ভারতের দুর্বল অর্থনীতি। বাংলাদেশ থেকে ৩ বিলিয়নের বেশী রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ভারতীয়রা। বাংলাদেশীদের মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা ভারতীয়দের চেয়ে বেশী। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী বিদেশে কাজ করে। তাদের রিমিটান্সের অর্থ ব্যয় হয় ভারতীয় পণ্য ক্রয়ে। ভারতীয় পণ্যের যে বাজার পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার ও উড়িষ্যা জুড়ে, তার চেয়ে বড় বাজার হলো বাংলাদেশে। তাছা্ড়া ভারতের এ বাজার প্রতিদ্বন্দিতাহীন। ভারত জানে, হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই তাদের এ বাজার অক্ষত থাকবে।
শুধু অর্থনীতি নয়, বিপদে পড়বে ভারতের নিরাপত্তাও। ভারত কখনোই চায়না বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরী, শিখ ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ৭টি রাজ্যের জনগণের পাশে খাড়া হোক। ভারত চায়না বাংলাদেশ তার রাডারের নীচ থেকে বের হয়ে যাক এবং স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি গড়ে তুলুক। তাই ক্ষমতায় থাকাটি হাসিনার নিজের জন্য যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে অধিক প্রয়োজনটি ভারতের।হাসিনাকে হারালে ভারত হারাবে তার একজন অনুগত এক সেবাদাসকে। তাই হাসিনার নতুন ভোটডাকাতিতে ভারত যে প্রচণ্ড উৎসাহ দিবে এবং সকল প্রকার সহযোগিতা দিবে -সেটিই স্বাভাবিক। তাই বাংলাদেশীদের স্বাধীনতার যুদ্ধটি শুধু হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, ভারতের বিরুদ্ধেও। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে এ সহজ সত্যকে অবশ্যই বুঝতে হবে।
গণতন্ত্রের ঘরের শত্রু
শেখ হাসিনার ডাকাতবাহিনী শুধু তার দলীয় বাহিনীর মধ্যে সীমিত নয়। হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনে দেশের প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, সেনাবাহিনীতে এবং আদালতের মাঝেও বিপুল সংখ্যক ডাকাত গড়ে তুলেছে। এরা সবাই তার ডাকাতির পার্টনার। এরাও চায়না শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে চলে যাক। তাদের রয়েছে নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বিশাল কায়েমী স্বার্থ। ফলে হাসিনা চলে গেলে তাদেরও বিপদ বাড়বে। তাদেরও তখন বিচারের মুখে পড়তে হবে। তাই হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখা মানে তাদের নিজেদের স্বার্থকে বাঁচিয়ে রাখা। এবং হাসিনার বিপদ মানে তাদের নিজেদেরও বিপদ। এরাই হলো গণতন্ত্রের ঘরের শত্রু। গণতন্ত্রের পথে চলা এরাই অসম্ভব করবে। তাই গণতন্ত্রের যুদ্ধটি শুধু হাসিনাকে পাল্টানোর নয়,সে যুদ্ধটি হতে হবে গণতন্ত্রের এ ঘরের শত্রুদের নির্মূলের লক্ষ্যেও। এ বিষয়টিকেও প্রতিটি দেশপ্রেমিককে বুঝতে হবে।
ইজ্জত, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বাঁচার খরচ ও বাংলাদেশের জনগণ
যে গ্রামবাসীর ডাকাত তাড়ানোর সামর্থ্য নাই সে গ্রামে বার বার ডাকাতি হয়। বাংলাদেশের মানুষের সামর্থ্য ও আগ্রহ নাই ডাকাত তাড়ানোর -সেটি হাসিনা এবং তার ডাকাত সহচরগণ ভালোভাবেই বুঝে ফেলেছে। ডাকাতি করলেও যে প্রতিবাদ হয়না সেটিও বুঝে ফেলেছে। তাই হাসিনা আবারো ডাকাতিতে নামবে সেটি অনিবার্য।
সভ্য, ভদ্র ও ডাকাতমুক্ত রাষ্ট্র গড়ার একটি বিশাল খরচ আছে। সে খরচটা অর্থ, রক্ত, শ্রম ও সময়ের। শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতে সে কাজ হয়না। এ বিশাল খরচ যারা জোগাতে পারে তারাই স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে। এবং তারাই ইজ্জত, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা পায়। ইসলামে এটি পবিত্র জিহাদ। এটিই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। মহান আল্লাহতালা জানেন, এই খরচ জোগাতে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে না। অধিকাংশ মানুষ বাঁচে নিজের স্বার্থ নিয়ে, তারা ডাকাত তাড়াতে অর্থ, রক্ত, শ্রম ও সময়ের বিনিয়োগে ঝুঁকি নেয় না। এজন্যই মহান আল্লাহতায়ালা সবচেয়ে বড় পুরস্কারটি নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাতে রাখেননি, সেটি রেখেছেন দুর্বৃত্তমুক্ত ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদে। কারণ সেরূপ একটি রাষ্ট্র নির্মিত না হলে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা ও শরিয়তী বিধান কেবল কুর’আনেই থেকে যায়। সেটি তাঁর কাছে অগ্রহণযোগ্য। তাই যারা এই জিহাদ জান দেয় তাদেরকে তিনি শহীদ বলেছেন। সুরা মুলকের ২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, এই জীবন ও মৃত্যু তিনি সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা নেয়ার জন্য। যারা সে পরীক্ষায় পাশ করবে তারাই পাবে জান্নাত। যারা জিহাদে শহীদ হয় তাদেরকে তিনি কৃতকার্য হওয়ার সার্টিফিকেট দেন। তাদের জন্য রোজহাশরের বিচার নাই। বিনা হিসেবে তাদেরকে তিনি সরাসরি জান্নাতে স্থান দেন।
অসভ্য ও দুর্বৃত্তদের নির্মূল এবং সভ্য সমাজের নির্মাণের কাজটি শুধু দোয়া-দরুদ, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাতে হয় না। সেজন্য অপরিহার্য হলো জিহাদ। নবীজী (সা:)’র যুগে সে জিহাদ ছিল বলেই মুসলিমগণ স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত পেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সে জিহাদে নেই। এমনকি যারা ইসলামের নামে রাজনীতি করে তারাও ডাকাত তাড়ানো তথা দুর্বৃত্ত নির্মূলের আন্দোলনকে জিহাদে পরিণত করতে অনাগ্রহী। তারা এটা কি স্রেফ রাজনৈতিক আন্দোলনের পর্যায়ে রাখতে চান, জিহাদ রূপে নয়। জিহাদে আল্লাহ সাহায্য আসে, সে সাহায্য আন্দোলনে আসে না। একমাত্র জিহাদে নিহত বলে শহীদ হয়, সেক্যুলার আন্দোলনে মরলে কেউ শহীদ হয় না। এজন্যই মুসলিমের রাজনীতিকে অবশ্যই জিহাদে পরিণত করতে হয়।
কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশে যারা নিজেদের ধর্মপ্রাণ বলে দাবি করে তাদের ধর্ম-কর্ম নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাতের মধ্যেই সীমিত। রাজনীতিকে তারা দুনিয়াদারী বলে। সে যুক্তি দেখিয়ে তারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকে। অথচ প্রতিটি যুদ্ধই হলো রাজনীতির অংশ। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ রোজার মাসে বদরের যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতি হলো রাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন করার লড়াই। দেশের আইন-আদালত কিভাবে চলবে, কি হবে দেশের শিক্ষা নীতি, জনগণকে ঈমানদার রূপে গড়ে তোলার কাজটি কীরূপ হবে, প্রশাসন কতটা জনকল্যাণমুখী হবে, দেশের মানুষ কতটা নিরাপত্তা পাবে -এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নির্ধারিত হয় রাজনীতি থেকেই। দেশ গড়তে হলে তাই রাজনীতিতে নামতেই হবে। স্রেফ বেশী বেশী নামাজ-রোজা ও হজ-যাকাত করে দেশ ঠিক করা যায় না।
কোন বাসের ড্রাইভিং সিটে একজন মাতাল দুর্বৃত্তকে বসিয়ে সে বাসকে সঠিক গন্তব্যে নেয়া যায় না। সকল যাত্রীর দোয়া দরুদে গাড়ি সঠিক পথে চলে না। সে জন্য ভালো ও দক্ষ ড্রাইভারকে ড্রাইভিং সিটে বসাতে হয়। সে বিষয়টি রাষ্ট্র পরিচালনার বেলাতেও। আবু লাহাব ও আবু জেহেলকে ক্ষমতায় বসিয়ে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ হয় না। এইজন্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মহান নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ড্রাইভিং সিটে বসতে হয়েছিল। তার ইন্তেকালের পর রাষ্ট্র প্রধানের সে সিটে বসেছিলেন তার শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ। অথচ বাংলাদেশে বসানো হয়েছে একজন দুর্বৃত্ত ডাকাতকে। বাংলাদেশের মানুষ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত থেকে কতটুকু দূরে সরেছে এ হলো তারই প্রমাণ।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত দূরে সরেছে এমনকি বাংলাদেশের আলেম সম্প্রদায়ও। তারা রাষ্ট্রকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী চালাতে আগ্রহী নন। আগ্রহ থাকলে তো তারা সে কাজে জিহাদে নামতেন। তাদের আগ্রহ স্রেফ মসজিদ মাদ্রাসা পরিচালনা নিয়ে। বরং অতিশয় বিস্ময়ের বিষয় হলো হেফাজতে ইসলামের হুজুরদের অনেকে শেখ হাসিনার কাছে মুচলেকা দিয়েছেন যে তারা রাজনীতিতেই নাই। অথচ রাজনীতি হলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠতম সুন্নত। তিনি দশটি বছর রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।
আমাদের হুজুররা নিজেদেরকে আশেকে রাসুলুল্লাহ বলে দাবী করেন। প্রশ্ন হলো, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাজনীতির সুন্নত যারা পালন করেন না তারা আশেকে রাসূল হন কি করে? তবে জিহাদ শুধু হুজুরদের উপর ফরজ নয়, এটি তো ফরজ প্রতিটি ঈমানদারের উপর। যারা জিহাদ থেকে দূরে থাকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে তাদেরকে মুনাফিক বলা হয়েছিল। আর মুনাফিকদের উপর মহান আল্লাহতায়ালা কঠোর শাস্তি দেন, কোন নিয়ামত দেন না। অনেক সময় সে শাস্তি যেমন ভূমিকম্প, প্লাবন, ঘূর্ণিঝড় ও মহামারী রূপে আসে, আবার কখনো আসে জালেম শাসকের মাধ্যমে। বাংলাদেশের মানুষ কি আজ সে আযাবই ভোগ করছে না? ২৬/০৩/২০২৩।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
This is really interesting, You’re a very skilled blogger. I’ve joined your feed and look forward to seeking more of your magnificent post. Also, I’ve shared your site in my social networks!