ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ এবং মালা ও মালাউন চক্রের ষড়যন্ত্র ( ২য় পর্ব)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

শত্রুশক্তির বিজয়

যেদেশ জনগণ থাকে, সেদেশে জনগণের শত্রুও থাকে। যেমন দেহ থাকলে রোগও থাকে। বাংলাদেশে শত্রুশক্তির বিজয়টি বিশাল। এ শত্রুগণ বাঙালি মুসলিমদের হিন্দু বা খৃষ্টান বানাতে সক্ষম না হলেও লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের ইসলাম থেকে দূরে সরাতে পেরেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি স্বৈরাচারী সরকারই এই মালা ও মালাউনদের সহযোগীতা পেয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে কট্টোর ইসলামবিরোধী হলো বামপন্থীগণ। দেশের সরকারি ও বেসরকারি মিডিয়া তাদেরই দখলে। তারা বার বার যেমন মনিব পাল্টিয়েছে, তেমনি বার বার উপসনার ধরণও পাল্টিয়েছে। পাকিস্তান আমলে তারা সমাজতন্ত্র বা কম্যুনিজমের কথা বলতো। তখন তাদের প্রতিপালনকারি মনিব রাষ্ট্র ছিল সোভিয়েত রাশিয়া এবং চীন। এখন তারা চীন বা রাশিয়ার নাম মুখে আনে না। তাদের ধর্মগ্রন্থ এখন আর কার্ল মার্কসের প্রণীত “দাস ক্যাপিটাল” নয়। বরং হাজার হাজার এন.জি.ও. গড়ে এসব বামপন্থীগণ এখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় হিন্দুত্ববাদের উপাসনায় ব্যস্ত। এরা যেমন সরকারের অভ্যন্তরে ন, তেমনি বাইরেও খেলছে। এরা যেমন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে আছে, তেমনি বিএনপিতেও আজে। আছে জাতীয় পার্টিতেও।

 মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সহযোগী ইউরোপীয়দের বর্তমান যুদ্ধটি ইসলামের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে সেনাপতি তারাই; তবে বামপন্থীদের ব্যবহার করছে ফুট সোলজার রূপে। পশ্চিমা দাতাসংস্থাগুলি এসব বামপন্থীদের যে বিপুল অর্থ দেয় –ঘটনা শুধু তাই নয়। বহুদেশে এসব বামপন্থীদের তারা বিপুল অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণও দেয়। সিরিয়ার মার্কসবাদী-লেলিনবাদী কুর্দিগণ তো মার্কিনী অস্ত্র নিয়ে সেখানে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ছে। বাংলাদেশেখ হাসিনাকে ঘিরেও ইসলামের এ চিহ্নিত শত্রুদের ষড়যন্ত্রটি বিশাল। বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের নির্মূলের কাজের শুরু একাত্তর থেকে। একাত্তরের যুদ্ধ শেষ হলেও ইসলামীপন্থীদের নির্মূলের রাজনীতি এখনো শেষ হয়নি। শেষ হয়নি সে নির্মূলের কাজে সরকারের সাথে বামপন্থীদের সহযোগীতাও। শাহবাগ আন্দোলনের এরাই ছিল মূল সংগঠক। তাদের দাবী ছিল “বিচার নয়, ফাঁসি চাই”। কতবড় ফ্যাসিবাদী স্লোগান! লক্ষ্য, বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলের কাজে কসাই রূপে ব্যবহার করা। সে লক্ষ্য অর্জনে তারা সফলও হয়েছে। ফলে জেলে শাস্তি থেকে আব্দুল কাদের মোল্লাকে তারা ফাঁসিতে ঝুলাতে সক্ষম হয়েছে। বামপন্থীদের অবস্থান যে দলেই থাকুক, ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিষ্ঠারোধ ও ইসলামপন্থীদের নির্মূলের এজেন্ডা থেকে তারা এক বিন্দুও সরেনি। এজন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইসলামবিরোধী আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনে তাদের রয়েছে প্রচুর কদর। বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলোতে এরাই হলো সাম্রাজ্যবাদী কোয়ালিশনের ডি-ইসলামাইজেশন প্রজেক্টের পদসৈনিক।  এদের কারণেই বাংলাদেশে রাজনীতিতে চলছে প্রতিপক্ষ নির্মূলের যুদ্ধ। রাজপথ ভরে উঠেছে পুলিশ, RAB, বিজিবি ও দলীয় ক্যাডার বাহিনীর অস্ত্রধারীদের ভিড়। কখনো কখনো নামানো হয় সেনাবাহিনীকেও। ত্রুসফায়ার ও সন্ত্রাসী গ্রেফতারের নামে সরকারি বাহিনী ইচ্ছামত লাশ ফেলছে।

         

নিষ্ক্রিয় উলামা ও দায়িত্বহীন জনগণ

পরিতাপের বিষয় হল, বাংলাদেশ যখন গভীর সংকটে, অধিকাংশ জনগণ পরিণত হয়েছে নীরব দর্শকে। পাশে কাউকে জবাই হতে দেখেও গরু-ছাগল ঘাস খাওয়ায় বিরতি দেয় না, তেমনি অবস্থা অধিকাংশ বাংলাদেশীদের। দেশের এ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে যেন কারোই কিছু করণীয় নেই। শাসকের আসন থেকে দুর্বৃত্ত ভোট ডাকাতকে সরানোর দায়িত্ব যেন শুধু বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের। যারা কিছু ধর্মকর্ম করে তাদের কাছে নামাজ-রোজা পালন ও মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণকে শ্রেষ্ঠ ধর্মকর্ম মনে করে।  এর বাইর ধর্ম-পালন নিয়ে তারা ভাবেনা।  ইসলাম বিরোধী শক্তির হাতে রাষ্ট্র যেভাবে অধিকৃত হলো -তা নিয়ে তাদের যেন কিছুই করার বা ভাববার নাই। কোন ক্ষোভও নাই। স্কুলের পাঠ্য বই থেকে নবীজী (সা:) জীবনী বাদ দিয়ে অশোক,রবীন্দ্রনাথ জীবনী পড়তে বাধ্য করা হয় -তখনও আলেমগণও নীরব থাকে। অথচ সে ঈমানবিনাশী কাজটি হচ্ছে মুসলিমদের রাজস্বের অর্থে।

প্রশ্ন হলো, ইসলামের প্রতিষ্ঠা রুখতে প্রচেষ্টা হলে নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকা কি জায়েজ? ইসলামকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার পবিত্র জিহাদটি কি হাজার হাজার মাদ্রাসা গড়ে ও নিয়মিত নামাজ-রোজা পালন করে হয়? এজন্যই নবীজী (সা:) ও তার সাহাবাদের বহুবার জিহাদে নামতে হয়েছে।  নবীজী (সা:)কে তাঁর জীবনের শেষ ১০টি বছর শাসকের আসনে বসতে হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার রাজনীতিতে তাঁকে দিবারাত্র নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। সাহাবাদের জীবনে সবচেয়ে বেশী শক্তিক্ষয়, অর্থক্ষয় ও রক্তক্ষয় হয়েছে ইসলামের শত্রুদের নির্মূলে। ইসলামে এটিকে সর্বোচ্চ ইবাদত তথা জিহাদ বলা হয়েছে। সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের এটিই তো একমাত্র পথ। অথচ বাংলাদেশে সে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতটিই সবচেয়ে বেশী উপেক্ষিত। এবং সেটি মোল্লা-মৌলভী ও মাওলানাদের দ্বারাও। বিস্ময়ের বিষয় হলো, নবীজী (সা:)’র রাজনীতির পবিত্র সূন্নত থেকে দূরে থাকাকে তারা পরহেজগারী ভাবেন! এভাবে তারা ইসলামের শত্রুদের ক্ষমতায় থাকাকে সহজতর করছে এবং বিজয় বাড়াচ্ছে শয়তানের।

প্রতিটি ঈমানদারকে শুধু নামাজ-রোজা শিখলে চলে না, বরং থাকতে হয় কুর’আন-হাদীসের আলোকে ইসলামের সক্রিয় শত্রুদের সনাক্ত করার সামর্থ্য। নইলে অসম্ভব হয় শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে শরীক হওয়া। সে সামর্থ্যটি না থাকার কারণেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও জেনারেল ওসমানীর ন্যায় হাজার হাজার মুসলিম যোগ দিয়েছে ব্রিটিশ কাফেরদের ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনীর সৈনিক রূপে। অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো, এদের এক জন হলেন বাংলাদেশীদের জাতীয় কবি, অপরজন হলেন জাতীয় বীর। তাদেরই ঈমানের সামর্থ্যই যখন এরূপ, সাধারণ বাঙালি মুসলিমদের সামর্থ্য যে কিরূপ -তা বুঝতে কি কিছু বাঁকি থাকে? অথচ মুসলিমকে তো ইসলামের পক্ষে ও কাফির শক্তির বিরুদ্ধে আমৃত্যু জিহাদ নিয়ে বাঁচতে হয়। এজন্যই তাকে শুধু বাঘ-ভালুককে চিনলে চলে না, তাকে যুদ্ধাংদেহী শত্রুদেরও চিনতে হয়। নইলে তারা ইসলামকে বিজয়ী করার যুদ্ধ করবে কাদের বিরুদ্ধে? তবে মুসলিমদের অক্ষমতা ও দুর্বলতা কি শুধু শত্রুদের চেনায়? ভারতের হিন্দুগণ তাদের সনাতন মিথ্যা ও গো-দেবতাদেরকে বাঁচাতে যতটা কট্টর ও আপোষহীন -মুসলিমগণ কি আল্লাহর দ্বীন বাঁচাতে এবং তার শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠায় এতটা আপোষহীন? এরূপ দুর্বল কান্ডজ্ঞান ও ইসলামের পক্ষে বিলুপ্ত অঙ্গীকার নিয়ে কি জান্নাত আশা করা যায়?

 

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সাফল্যটি রাষ্ট্র নির্মাণে

গৌরবযুগের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় সাফল্যটি কৃষি, শিল্প, স্থাপত্য ও অর্থনীতিতে নয়, বরং সেটি হলো রাষ্ট্র নির্মাণে। সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মিত হয়েছিল তাদের হাতেই। সে সাফল্যের মূল কারণ, রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে তারা অনুসরণ করেছিলেন মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া রোডম্যাপ। তাছাড়া মহান আল্লাহতায়ালা ইসলামের শত্রু ও মিত্রদের যে পরিচিতিটি পবিত্র কুর’আনে পেশ করেছেন -সেটি বুঝতে তারা আদৌ ভূল করেননি। ফলে তারা মালা ও মালাউন শ্রেণীর ন্যায় দুষ্ট শক্তির নির্মূলে সফল হয়েছিলেন। আজকের মুসলিমগণ যেরূপ ইংরেজ, ফরাসী ও মার্কিনীদের ন্যায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং তাদের এজেন্ডা পূরণে তাদের সাথে মিলে যুদ্ধ করেছে -সেরূপ পাপকর্ম তারা কখনোই করেননি। অথচ ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের সাথে এ কালের মুসলিমদের গাদ্দারীর নমুনা হলো, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১০ লাখের বেশী আরব মুসলিম এবং আড়াই লাখের বেশী ভারতীয় মুসলিম ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে উসমানিয়া খলিফার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন, ইরাক, পারস্য উপসাগরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ লড়েছে। ১৯৭১’য়ে লক্ষাধিক বাঙালি মুসলিমকে দেখা গেছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সহযোদ্ধা রূপে যুদ্ধ করতে এবং ভারতের ঘরে বিজয় তুলে দিতে। মহান আল্লাহতায়ালার ভয়, পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান ও মুসলিম উম্মাহর নিরাপত্তার প্রতি সামান্য অঙ্গীকার থাকলে তারা কি কখনো এমন হারাম কাজে অংশ নিত?  

নবীজী (সা:) মাত্র ৬৩ বছরে বেঁচেছিলেন। তার নবুয়তের বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। এই ২৩ বছরের মধ্যেই তিনি বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছেন। মুসলিমদের তিনি একটি বিশ্বশক্তির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা দেন। তাঁর সে অভূতপূর্ব  সাফল্যের মূলে ছিল কুর’আনী রোডম্যাপ তথা সিরাতাল মুস্তাকীমের অনুসরণ এবং মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য। মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য তো তারাই পায় -যারা অনুসরণ করে কুর’আনী রোডম্যাপ। যারা অনুসরণ করে নবীজী (সা:)’র সূন্নত। তা থেকে যারা পথভ্রষ্ট -তারা বিজয় পায় না; বরং পায় আযাব। তাছাড়া ভূল পথে হাজার বছর দৌড়ালেও কি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছা যায়? মুসলিমদের আজকের ব্যর্থতার মূল কারণ, তারা নবীজী (সা:)’র ইসলাম নিয়ে বাঁচে না। তারা অনুসরণ করে না সিরাতাল মুস্তাকীম। এবং তাদের মাঝে বেঁচে নাই ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে নবীজী (সা:)‌’র সূন্নত -যা ছিল তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত। ভ্রষ্ট ইসলাম ও ভ্রান্ত পথ নিয়ে কি কখনো রহমত মিলে? জুটে কি বিজয়?

রাজ্য-জয় তো হালাকু-চেঙ্গিজের ন্যায় বহু নৃশংস দুর্বৃত্তই করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ ও সোভিয়েত রাশিয়ার ন্যায় অনেক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিও বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু তারা কি কোন মানবিক সভ্যতা গড়তে পেরেছে? পারিনি। ঔপনিবেশিক অধিকৃতি, সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠন, গণহত্যা, গণনির্মূল ও পারমানবিক বোমা বর্ষণ কি আদৌ কোন সভ্য কর্ম? এরূপ নৃশংস অসভ্য কর্ম যাদের সংস্কৃতি, তাদের হাতে কি কখনো সভ্যতা নির্মিত হয়? সভ্যতার অর্থ বিপুল সংখ্যায় প্রাসাদ, অস্ত্র, যন্ত্র, রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ নয়। বরং সেটি হলো উন্নত চরিত্রের মানুষ গড়া, সভ্যতর আইন রচনা, সবার জন্য নিরাপত্তা ও সুবিচার এবং সর্বপ্রকার জুলুম থেকে মজলুমদের মুক্তি। এগুলিই হলো মানবতা ও সভ্যতার প্রকৃত পরিমাপক। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব গড়তে চাই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানের টেক্সটবুক। সেরূপ টেক্সটবুক রয়েছে তো একমাত্র মুসলিমদের হাতে। সেটি হলো পবিত্র কুর’আন। সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য চাই সর্বশ্রেষ্ঠ আইন। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া শরিয়তী আইনের চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ আইনই বা আর কি হতে পারে? অনুসরণের জন্য চাই মানব চরিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ মডেল। সে মডেল আর কেউ নন, তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহম্মদ (সা:)। ফলে সাফল্য ও বিজয়ের জন্য যা কিছু চাই, মুসলিমদের কাছে রয়েছে তার সবকিছুই।  যারা বাঁচে সে কুর’আনী টেক্সটবুক, শরিয়তী আইন এবং নবী-জীবনের অনুসরণ নিয়ে -প্রতিশ্রুত বিজয় তো একমাত্র তাদেরই। গৌরব যুগের মুসলিমগণ সেটি প্রমাণ করে গেছেন। অথচ আজকের মুসলিমগণ বাঁচছে সেগুলির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে। ফলে তারা শুধু পরাজয় ও বিপর্যয়ই বাড়িয়ে চলেছে ।  

 

বেঁচে আছে ফিরাউন-নমরুদ ও সহযোগী মালাগণ

 ইতিহাসের বই’য়ে অতীত যুগের নমরুদ-ফিরাউন ও তাদের সহযোগীদের ঘৃন্য চরিত্র নিয়ে কোন বর্ণনা নাই। কারণ, ইতিহাস লেখার কাজের শুরু তখনো হয়নি। তবে সে কারণে এসব নৃশংস দুর্বৃত্তদের চরিত্র ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়নি। বরং সেটিকে ক্বিয়ামত অবধি তুলে ধরার দায়্ত্বি নিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। কারণ, মানবের কল্যাণে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাঘ-ভালুকের ন্যায় হিংস্র পশু চরিত্রগুলি ভূলে যাওয়া যায় না, তেমনি ভূলে থাকা যায় না জালেম শাসক ও তাদের সহযোগীদের চরিত্র। তাই মহান আল্লাহতায়ালা তাদের কদর্য চরিত্রকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁর পবিত্র গ্রন্থ আল-কুর’আনে। তাই কুর’আনের জ্ঞানে যারা জ্ঞানী, তারা প্রতি যুগের নমরুদ-ফিরাউন ও তাদের সহযোগী মালাদের চিনতে ভূল করেনা। এসব নমরুদ ও ফিরাউনগণ কালের আবর্তে প্রতিযুগেই ফিরে আসে। সেটির প্রমাণ আধুনিক বাংলাদেশ।

 বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধু যে ফিরাউন আছে -তা নয়; বরং তাদের সহযোগী বিপুল সংখ্যক মালা ও মালাউনও আছে। এসব মালা ও মালাউনগণ যেমন স্বৈরাচারী মুজিবের দরবারে ছিল, তেমনি হাসিনার দরবারেও আছে। তেমনি স্বৈরাচারী এরশাদের দরবারেও ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতি, মিডিয়া, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দান এদের হাতে অধিকৃত। এসব সহযোগীদের মাঝে যত জন রামপন্থী, তার চেয়ে বহুগুণ বেশী হলো বামপন্থী। এরা নাস্তিক, এরা স্বার্থশিকারী, অর্থপূজারী এবং চাটুকার। বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন বেশে হলেও তাদের চরিত্রের অভিন্ন রূপটি হলো ইসলাম-বিরোধীতা। বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামের বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং ইসলামপন্থীদের যত রক্ত ঝরেছে -সে সবের অধিকাংশের মূলে স্বার্থশিকারী এই মালা ও মালাউনগণ। এদের মনের সংযোগ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সাথে। এই বাঙালি সহযোগীগণ পাকিস্তানের সৃষ্টিকে ১৯৪৭ সাল থেকেই মেনে নিতে পারিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ রূপে প্রতিষ্ঠা পাক –সেটিও তারা চায় না।

বাঙালি মুসলিমগণ নবীজী (সা:)’র আমলের ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠুক –রামপন্থীদের ন্যায় বামপন্থীগণও সেটি চায় না। বামপন্থীগণ একই রূপ কৌশল ছিল পাকিস্তান আমলেও। কম্যুনিজমের নামে দল গড়ে মুসলিম দেশে ক্ষমতায় যাওয়া দূরে থাক, অস্তিত্ব বাঁচানোই কঠিন। তাই তারা স্থান নেয় ভাষানীর ন্যায় নেতাদের আশ্রয়ে। বামপন্থীদের সে ধারা আজও  অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের আজকের সংকটের মূলে রয়েছে পাকিস্তান আমলে রোপন করা সে বামপন্থী রাজনীতির বীজ। আওয়ামী লীগ আজ তাদের হাতেই অধিকৃত। পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই তারা বেশী তৎপর হয় বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে। পাকিস্তান আমল তারা পরিকল্পিত ভাবে দখল করে নেয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াকে। মুসলিম লীগের প্রতিষ্টিত দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান (পরবর্তীতে দৈনিক বাংলা),সাপ্তাহিক বিচিত্রার ন্যায় পত্র-পত্রিকার পৃষ্ঠাগুলো তাদের দখলে চলে যায়। তারা প্রবেশ করে রেডিও-টিভিতেও। ষাটের দশকে আইয়ুব সরকারের বামপন্থী আমলাদের সহায়তায় তারা দখলে নেয় দেশের রেলস্টেশনের বুকস্টলগুলোকে। বুকস্টলগুলোকে ব্যবহার করে চীন ও রাশিয়া থেকে প্রকাশিত বামপন্থী সাহিত্য বিতরণের কাজে। সে ঘাতক মার্কসীয় জীবাণুর কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের চেতনা রাজ্যে শুরু হয় প্রচন্ড মহামারি -যা ধ্বসিয়ে দেয় প্যান-ইসলামী চেতনার ন্যায় পাকিস্তানের মূল ফাউন্ডেশনকে। ষাটের দশকে শুরু হয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীন ও রাশিয়ার দ্বন্দ। সে দ্বন্দে বিভক্ত হয়ে যায় বাংলাদেশের বাম রাজনীতিও। ফলে তারা আর একক শক্তি রূপে বেড়ে উঠতে পারিনি। তবে জীবাণুর ন্যায় তারা লাগাতর বেড়েছে অন্যান্য দলগুলির দেহে।

 

 গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের নাশকতা                    

 গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় বামপন্থীদের কোন কালেই কোন আগ্রহ ছিল না। না পাকিস্তান আমলে, না বাংলাদেশ আমলে। পাকিস্তান আমলে বামপন্থীদের বেশীর ভাগ আশ্রয় নেয় মাওলানা আব্দুল হামীদ খান ভাষানীর প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ও পরবর্তীতে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)য়ে। মাওলানা ভাষানীর পীরমুরিদী থাকলেও ইসলামের প্রতি সামান্যতম অঙ্গীকার ছিল না। মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর   শরিয়তী বিধানের প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে একটি বারও তিনি রাজপথে নামেননি। রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে একটি বাক্যও তিনি উচ্চারণ করেননি। বরং আন্দোলন করেছেন সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায়; এবং সেটি নাস্তিক কম্যুনিষ্টদের সাথে নিয়ে। ভাষানীর আগ্রহ ছিল না গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা নিয়েও। পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বড় সুযোগ আসে ১৯৬৪ সালে। তখন আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সকল বিরোধীদলের সম্মিলিত প্রার্থী ছিলেন কায়েদে আযম মহম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ। তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু মাওলানা ভাষানী ও তার বামপন্থী সঙ্গিগণ ফাতেমা জিন্নাহর বিজয়ের চেয়ে স্বৈরাচারী আইয়ুবের বিজয়কেই বেশী গুরুত্ব দেয়।  

 আইয়ুব খানকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে মাওলানা ভাষানীর কৌশলটি কিরূপ ছিল -সেটির বর্ণনাটি এসেছে লন্ডনস্থ পাকিস্তানী বংশোদ্ভুত বামপন্থী সাবেক ছাত্রনেতা ও বুদ্ধিজীবী জনাব তারেক আলীর রচিত “Can Pakistan Survive?” বইতে। ১৯৬৩ সালে মাওলানা ভাষানী চীন সফরে যান। তার সাক্ষাৎ হয় চেয়্যারমান মাও সে তুংয়ের সাথে। চেয়্যারমান মাও মাওলানা ভাষানীকে কি বলেছেন সেটি জানার জন্যই তারেক আলী লন্ডন থেকে ঢাকায় ছুটে যান। তারেক আলীর সাথে সাক্ষাতকারে মাওলানা ভাষানী বলেন,“চেয়্যারমান মাও বলেছেন, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে সমস্যায় আছি। আমরা চাই না যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবকে অস্থিতিশীল করা হোক।” চেয়ারম্যান মাও সে তুং’য়ের নসিহতে মাওলানা ভাষানীর রাজনীতিই পাল্টে যায়। গণতন্ত্রের স্বার্থের চেয়ে চীনের জাতীয় স্বার্থই ভাষানীর কাছে বেশী গুরুত্ব পায়। তাই তিনি ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে কোন নির্বাচনী প্রচার চালাননি।

 পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সর্বশেষ সুযোগ আসে ১৯৬৯ সালে। আইয়ুব খান তখন রাজনীতি থেকে অবসর নিতে রাজি। রাজি হয়েছিলেন পার্লামেন্টারী প্রথার গণতন্ত্র দিতেও। সে বিষয়টি নিয়ে একটি সমাঝোতায় পৌঁছতেই আইয়ুব খান সর্বদলীয় গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু সে বৈঠক বানচাল করতেই গোলটেবিলে না গিয়ে বামপন্থীদের নিয়ে মাওলানা ভাষানী জ্বালাও পোড়াও’য়ের আন্দোলন শুরু করেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তাঁকে সঙ্গ দেয় জুলফিকার আলী ভূট্টো। অপরদিকে মুজিবের ছিল ৬ দফার দাবী। আইয়ুব খানের তখন বিদায়ের পালা। ফলে ৬ দফা পেশের স্থান গোলটেবিল ছিল না, সেটি ছিল নির্বাচনী ইশতেহারের বিষয়। উভয়ের ষড়যন্ত্রের ফলে ব্যর্থ হয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং চেপে বসে রাজনৈতিক কান্ডজ্ঞানশূণ্য মাতাল ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন। অথচ আইয়ুবের পর বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা পেলে একাত্তরের শাসনতান্ত্রিক সংকট পরিহার করা যেত। তখন পুনরুজ্জীবীত করা যেত বেআইনী ভাবে বিলুপ্তিকৃত ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র। এবং পরিহার করা যেত একটি রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধকে। যুদ্ধ মানেই তো নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু এবং বিশাল ক্ষয়ক্ষতি। সবচেয়ে বড় কথা, একাত্তরের যুদ্ধ থেকে বাঁচলে বাঙালি মুসলিমগণ বাঁচতো বাংলাদেশের রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদী ভারতের বর্তমান অধিকৃতি থেকে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। দলটি তখন শ্লোগান তোলে “ভোটের আগে ভাত চাই”। কিন্তু ভোটদানের মুহুর্তে কে ভাত দেবে -সেটি ভাষানী বিবেচনায় আনেননি। ভাষানীর পক্ষ থেকে নির্বাচন বর্জনের ফলে ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে বিশাল বিজয়টি পায় শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন ভারতসেবী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ। মুজিবের সে বিজয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতি আর বাঙালী মুসলিমদের হাতে থাকেনি। রাজনৈতিক অঙ্গণের উপর পুরো দখলদারী ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে যায়। আজও চলছে তাদের দখলদারী। এই হলো ভাষানীর রাজনীতির নাশকতা।

 মাওলানা ভাষানীর রাজনৈতিক ছাতাটি দুর্বল হলে কম্যুনিস্টগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং নানা নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কম্যুনিস্ট পার্টি গড়ে তোলে। তবে ভাষানীর সহচরদের অধিকাংশই যোগ দেয় বিএনপি’তে ও পরবর্তীতে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। বিএনপিতে আশ্রয় নেয়া বামপন্থী মালাউনগণ বিএনপি’র সমন্বয়ের রাজনীতিকে ব্যর্থ করে দেয়। জেনারেল জিয়ার আমলে বহু মুসলিম লীগ নেতা  বিএনপি’তে যোগ দেন। বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান বিশ্বাস (সাবেক প্রেসিডেন্ট) ও শাহ আজিজুর রহমান (সাবেক প্রধানমন্ত্রী)’য়ের মত অনেকেই ১৯৭১’য়ে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন। জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার পর বিএনপি’ত আশ্রয় নেয়া বামপন্থীগণ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে এবং জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলকে ত্বরান্বিত করে। তারা যুদ্ধ শুরু করে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধেও। অথচ ১৯৯১’য়ের নির্বাচনের পর জামায়াতের ১৯ জন এমপি বিনাশর্তে খালেদা জিয়াকে সমর্থন দেন। জামায়াতের সমর্থন ছাড়া খালেদা জিয়া’র পক্ষে সেদিন প্রধানমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব ছিল। কিন্তু বিএনপি জামায়াতের সে সহযোগীতার প্রতিদান দিয়েছিল জমায়াত নেতা জনাব গোলাম আযমকে কারাবন্দী করে।

বিএনপি’র ক্ষমতাচ্যুতি এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারতসেবী ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থানের মূলে তো বিএনপি’তে আশ্রয় নেয়া এই বামপন্থী মালাউনগণ। বামপন্থীদের মধ্যে যারা ছিল মস্কোপন্থী তারা জমা হয় শেখ মুজিবের দলে। একাত্তরে মুজিব ছিল মূলত এসব বামপন্থীদের হাতে জিম্মি। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য তাজুদ্দীন ও অন্যান্যদের প্রভাবে শেখ মুজিব দেশের কল-কারখানাগুলিকে জাতীয়করণ করেন। নামে জাতীয়করণ হলেও সেটি ছিল মূলত আওয়ামীকরণ। পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত সে কারখানাগুলি পরিচালনার দায়িত্বে বসানো হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। ভূয়া শ্রমিক রূপে নিয়োগ দেয়া হয় হাজার দলীয় ক্যাডারদের। এভাবে সুযোগ করে দেয়া হয় ইচ্ছামত লুণ্ঠনের। সে লুণ্ঠনের ফলে দ্রুত ধ্বংস নেমে আসে অর্থনীতিতে। সে ষড়যন্ত্রের ফলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী জুট মিলসহ বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে পাকিস্তান আমলের বিশাল লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি পরিণত হয় লোকশানী প্রতিষ্ঠানে। ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয় পাটজাত দ্রব্যের আন্তর্জাতিক বাজার। অথচ একাত্তরের আগে সে স্থানে ছিল পাকিস্তান। শেখ মুজিবের ইসলাম ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মূল নেতা ও সৈনিক ছিল মূলত এই বামপন্থীগণ। তাই শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হয়নি। মুজিবের ঘাড়ে ভর করে এই বামপন্থীগণই স্বাধীন বাংলাদেশের ঝান্ডা উড়ায় এবং পরবর্তীতে এরা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)’য়ের জন্ম দেয়। এবং বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা কল্পে গণবাহিনী গড়ে তোলে। তাদের হাতে শুরু হয় সন্ত্রাসের রক্তাক্ত রাজনীতি।

তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সন্ত্রাসের জন্মদাতা শুধু শেখ মুজিব নন, বরং নানা ব্রান্ডের এই বামপন্থীরাও। এসব বামপন্থীদের কেউ বা সন্ত্রাস চালিয়েছে কম্যুনিস্ট পার্টির নামে, কেউ বা সর্বহারা পার্টি ও কেউ বা জাসদের নামে। রাজনীতির অঙ্গণে তাদের হাতে যে রক্তক্ষরণের শুরু, সেটি আর শেষ হচ্ছে না। বরং দিন দিন তা আরো তীব্রতর হচ্ছে। তবে বিপদের আরো কারণ, সন্ত্রাসের রাজনীতি এখন আর রাজনৈতিক দলগুলির হাতে নাই। সেটি চলে গেছে বাংলাদেশের পুলিশ, RAB, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি হলো এই সরকারী সশস্ত্র বাহিনীগুলি। তাদের সে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে গণতন্ত্র আজে কবরে শায়ীত এবং গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ভারতবিরোধী ইসলামপন্থীগণ। এবং ডাকাতি হয়ে গেছে ভোটসহ জনগণের সকল মৌলিক নাগরিক অধিকার। মেরুদন্ডহীন হয়েছে দেশের বিচারগণ। এবং বিলুপ্ত হয়েছে আইনের শাসন। এতে সংকটে পড়েছে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। কারণ হিংস্র পশু অধিকৃত জঙ্গলে যেমন ঘর গড়া যায়না, তেমনি দুর্বৃত্ত অধিকৃত ভূমিতে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায়না। অথচ ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণই হলো নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে এ ব্যর্থতার কারণেই ভয়ানক ব্যর্থতা বাড়ছে বাঙালি মুসলিমের। সেটি যেমন এ পার্থিব জীবনে, তেমনি আখেরাতের জীবনে। বাঙালি মুসলিমের সে ব্যর্থতা বাড়াতেই বিপুল বিনিয়োগ হিন্দুত্ববাদী ভারতের। ভারতের মুল স্ট্রাটেজী তো এটাই।

 

 বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এখন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়

 একাত্তরে ভারত এ জন্য যুদ্ধ করেনি যে, দেশটির পূর্ব সীমান্তে প্রতিষ্ঠা পাবে শক্তিশালী একটি ইসলামী রাষ্ট্র -যা পাল্টে দিবে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াবে ২২ কোটি ভারতীয় মুসলিমদের। এবং স্বাধীনতায় আগ্রহ বাড়াবে ভারতের উত্তর-পূর্বের ৭টি অহিন্দু রাজ্যে। বরং ভারতের এজেন্ডা ছিল, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল-ভিত্তিক পরিচয়ের উর্দ্ধে উঠে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের যে প্যান-ইসলামিক ধারা শুরু হয়েছিল -তা থেকে বাঙালি মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করা। এবং সে সাথে বাংলাদেশকে ভারতে অধীনত একটি গোলাম রাষ্ট্রে পরিণত করা। এটি নিশ্চিত যে, পাকিস্তান একাত্তরে ভেঙ্গে না গেল পরিণত হতো ৪০ কোটি মানুষের পারমানবিক শক্তিধারী বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র। ভারতের কাছে এমন একটি শক্তিশালী ইসলামী পাকিস্তান ছিল অসহ্য। অসহ্য ছিল ইসলামের ঘরের শত্রুদের কাছেও।

গোলামের ঘরের বিষয়েও মনিব নাক গলায়, তেমনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় ভারত। সেটিকে ভারত তার নিজের অভ্যন্তরীন বিষয় মনে করে। ভারত ভোটডাকাত হাসিনাকে ভোটডাকাতির মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় রাখতে চায়। গণতন্ত্রকে রাখতে চায় কবরে। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করুক -ভারত সেটি চায়না। সেটিকে ভারত শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নয়, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও হস্তক্ষেপ মনে করে। একাত্তরে ইসলামের যে ঘরের শত্রুরা ভারতকে সহয়তা দিয়েছিল, প্রতিদান স্বরূপ ভারত আজ তাদেরকেই ক্ষমতায় রেখেছে। উভয়ের রাজনৈতিক এজেন্ডা যেমন এক, যুদ্ধের এজেন্ডাও তেমনি অভিন্ন। ফলে বাংলাদেশের বুকে ইসলাম, গণতন্ত্র ও জনগণের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আওয়ামী বাকশালীদের যে যুদ্ধ -সেটি তাদের একার যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদেরও। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদটিও তাই এ উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই। ০৯/১২/২০২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *