ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ রোধে শত্রুশক্তির কোয়ালিশন এবং ব্যর্থ মুসলিম
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on May 10, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ভারত: দক্ষিণ এশিয়ার ইসরাইল
যে ভূমিতে বাঘ-ভালুক-সিংহের ন্যায় হিংস্র পশুদের বসবাস, সেখানে বাঁচতে হলে সে পশুগুলিকে অবশ্যই চিনতে হয় এবং সেগুলির প্রতিরোধের পুরা প্রস্তুতিও থাকতে হয়। জীবন বাঁচানোর জনই অপরিহার্য life skill। জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে এটি ফরজ বিষয়। এ বিষয়ে অজ্ঞতা নিয়ে শুধু ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞান ও সাহিত্য পড়লে জীবন বাঁচে না। বিষয়টি অবিকল সত্য শত্রু পরিবেষ্টিত ভূমিতে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে বাঁচার ক্ষেত্রেও। জান-মালের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে কারা সেগুলির শত্রু – অবশ্যই সেটি জানতে হয়। গৌরব-যুগের মুসলিমগণ শুধু কুর’আন-হাদীস শেখার মধ্যে নিজেদের সকল সামর্থ্য ও সাধনাকে সীমিত রাখেননি। তারা যেমন শত্রুদের চেনার কাজটি সঠিক ভাবে করেছেন, তেমনি তাদের নির্মূলের কাজটিও করেছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতাটি বিশাল। তাদের দ্বারা শত্রুর চেনার কাজটি যেমন যথার্থ ভাবে হয়নি, তেমনি হয়নি তাদের নির্মূলের কাজও। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সীমান্তের এপারে এবং ওপারে ইসলাম, মুসলিম ও গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু কারা? প্রতিটি বাঙালি মুসলিমের জন্য সেটি জানা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ হলো সে শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ । সে শত্রু দেশটি যে ভারত -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে। এ বিষয়ে ইতিহাসের রায় অতি সুস্পষ্ট। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ভূমিকা নিয়ে হাজির হয়েছে সেটি আদৌ বন্ধুত্বের নয়, বরং পরম শত্রুর। এবং এবিষয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রমাণ।
১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা স্বাধীনতা পায় পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ জনসংখ্যা অধ্যুষিত প্রদেশ রূপে। তখন পূর্ব বাংলায় কোন বন্দর ছিল না। পাকিস্তান সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দরের সুবিধা চেয়েছিল, কিন্তু ভারত সে সুবিধা ৬ ঘন্টার জন্য দিতেও রাজী হয়নি। অথচ কলকাতা বন্দর নির্মিত হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে; সে বন্দর নির্মাণের কাজে ব্যয় হয়েছিল পূর্ব বাংলার জনগণের দেয়া রাজস্বের অর্থ। অথচ সে ভারতই বাংলাদেশের পেট চিরে তার পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলিতে যাওয়ার জন্য করিডোর নিয়েছে। এরূপ একটি করিডোর অতি জরুরি ছিল পাকিস্তানের জন্য। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মাঝে দূরত্ব ছিল ১২ শত মাইলের। ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশের দুই প্রান্তের মাঝে সংযোগ গড়তে নির্মিত হয়েছিল পূর্ববঙ্গ থেকে পেশোয়ার অবধি রেলপথ। সে রেল-সড়ক নির্মাণে ভারতীয় মুসলিমদের দেয়া রাজস্বের অর্থও ব্যয় হয়েছিল। ইউরোপ,আফ্রিকা ও আমেরিকা মহাদেশেও আন্তরাষ্ট্রীয় পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে রেলপথ। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পণ্য পরিবহনে রেলপথ ব্যবহারের সে সুযোগ ভারত পাকিস্তানকে দেয়নি। সেরূপ করিডোর দেয়াকে ভারত নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি রূপে দেখেছে। প্রশ্ন হলো, ভারতকে করিডোর দিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা কি হুমকির মুখে পড়ে না? ভারত বাংলাদেশী পণ্যবাহী ট্রাককে করিডোর দেয় না জন্য নেপাল ও ভূটানে যাওয়ার জন্য। শুধু কি তাই? স্রোতের টানে ভারতের পাহাড় থেকে পাথর যাতে বাংলাদেশে না আসে -সেটি নিশ্চিত করতে ভারত সরকার নদীর মুখে তারের জাল বসিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতীয়দের মনে শরিষার দানা পরিমাণ দরদ থাকলে কখনোই এরূপ আাচরণ করতো না। ভারত তুলে নিত না পদ্মা ও তিস্তাসহ বহু যৌথ-নদীর পানি।
ভারত একাত্তরের যুদ্ধের সহায়তা দেয়ার দোহাই দেয়। অথচ এ যুদ্ধটি ছিল ভারতের নিজস্ব যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ছিল শতকরা শত ভাগ ভারতীয় স্বার্থ হাছিলের যুদ্ধ। এমন একটি যুদ্ধজয়ের জন্য ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই সুযোগ খুঁজছিল। এ যুদ্ধটি আদৌ বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা দেয়ার যুদ্ধ ছিল না; বরং ছিল পাকিস্তানকে খণ্ডিত করা এবং বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে আনার যুদ্ধ। যুদ্ধজয়ের ফলে ভারত লুটপাটের অবাধ সুযোগ পেয়েছে। পেয়েছে ১৮ কোটি মানুষের বিশাল বাজার, পেয়েছে করিডোর এবং পেয়েছে পদ্মা-তিস্তাসহ বহু নদীর পানি। সুবিধা পাচ্ছে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর ব্যবহারের। সে সাথে সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পছন্দের লোকদের ক্ষমতায় বসানোর। বাংলাদেশে পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছে একমাত্র তারাই যারা ভারত সরকারের একান্ত চাকর-বাকর বা প্রক্সি । অপরদিকে জনগণ হারিয়েছে কথা বলা, লেখালেখি, মিটিং-মিছিল ও ভোটদানের স্বাধীনতা -যা তারা পাকিস্তান আমলে ভোগ করতো। এদেশে জনগণের ভোট (বালট পেপার) নির্বাচনের আগের রাতেই ডাকাতি হয়ে যায়। এবং স্বাধীন ভাবে কথা বললে গুম, খুন বা কারাবন্দী হতে হয়।
যে জঙ্গলে বাঘ, ভালুক, সিংহের ন্যায় হিংস্র পশুদের বাস -সে জঙ্গলের পাশে বসবাসের বিপদটি ভয়ানক। তেমনি যে দেশে আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদীদের বসবাস -সে দেশের পাশে বসবাসের বিপদও ভয়াবহ। তখন বাঁচতে হয় যুদ্ধ ও অধিকৃত হওয়ার বিপদ নিয়ে। সে বিপদের মুখে পড়ে ভারতের পেটে হজম হয়ে গেছে কাশ্মীর, হায়দারাবাদ, গোয়া, মানভাদড়। নেকড়ের সামনে নিরস্ত্র মানুষের প্রাণ বাঁচে না, তেমনি শক্তিধর রাষ্ট্রের সামনে দুর্বল দেশের স্বাধীনতা বাঁচে না। মিনতি ও পদসেবা এখানে কাজ দেয় না। তেমন এক বিপদ থেকে বাঁচার জন্যই পাকিস্তান পারমানবিক বোমা, দূরপাল্লার মিজাইল এবং বিশাল সেনাবাহিনী গড়েছে। সে বিপদটি শেরে বাংলা ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দীন, মাওলানা আকরাম খাঁ, মৌলভী তমিজুদ্দীন খান, নুরুল আমীন, ফজলুল কাদের চৌধুরীর ন্যায় নেতাগণ সুস্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন বলেই তারা বিচ্ছিন্ন পূর্ব বাংলাকে ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তান-ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু সে হুশ একাত্তরের কাপালিক নেতাদের ছিল না। দূরদৃষ্টি না থাকাতে তারা বরং ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কোলে গিয়ে বসেছেন এবং তাদেরকে বিজয়ী করছেন। যে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীগণ মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুদের রক্ত নিয়ে প্রায়ই হোলি খেলে -তারা কি কখনো মুসলিমদের হাতে স্বাধীনতা তুলে দেয়? সেটি চাইলে ভারত কেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে স্বাধীনতা দেয়না? কাশ্মীর কেন আজ উম্মুক্ত জেলখানা?
ভারত তার এজেন্ডার ক্ষেত্রে আপোষহীন। সে এজেন্ডাতে স্বাধীন বাংলাদেশের কোন স্থান নাই। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় আসবে -ভারত সেটি ভাবতেও পারেনা। তাদের কাছে ইসলামপন্থীদের এরূপ বিজয় অগ্রহণযোগ্য নয়। সে লক্ষ্যে ভারত একাত্তরে যুদ্ধ করেনি। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে সংসদীয় নির্বাচন হয়েছিল। সে নির্বাচনে হামাস বিজয়ী হয়। উক্ত নির্বাচনে তদারকীর দায়িত্বে ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রসিডেন্ট জিমি কার্টার। তাঁর মতে নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছিল। কিন্তু সে নির্বাচনের রায় ইসরাইল মেনে নেয়নি। মেনে নেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। ফলে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েও দেশ শাসনের সুযোগ পায়নি হামাস। একই ভাবে বাংলাদেশের কোন নির্বাচনে কোন ইসলামপন্থী দলের বিজয় ভারত মেনে নিবে না। ভারত চায় এক শৃঙ্খলিত বাংলাদেশ। বিজয় চায় ভারতের প্রতি অনুগত নেতা ও দলের। চায়, বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় থাকবে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় ভারতের প্রতি আত্মসমর্পিত এবং পরীক্ষিত চাকর-বাকরেরা। বাংলাদেশীদের সামনে বিকল্প পথ নাই; সাথে পাকিস্তানও নাই। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হলে একাকীই মোকাবেলা করতে হবে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের।
কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করা হারাম -যেমন হারাম হলো জ্বিনা, মদ্যপান ও সূদ খাওয়া। সে হুকুম পবিত্র কুর’আনে এসেছে। যেমন সুরা আল ইমরানের নম্বর ২৮ আয়াতে বলা হয়েছে:
لَّا يَتَّخِذِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْكَـٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ ٱللَّهِ فِى شَىْءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُوا۟ مِنْهُمْ تُقَىٰةًۭ ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥ ۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلْمَصِيرُ
অর্থ: “মু’মিনগণ যেন মু’মিনদের ব্যতীত কাফিরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ না করে। এবং যে ব্যক্তি এরূপ করবে (অর্থাৎ কাফিরদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে) তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম হলো, তোমরা যদি তাদের কাছ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করো। আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদের সাবধান করছেন; এবং আল্লাহর দিকেই তোমদের প্রত্যাবর্তন।”
সুরা মুমতাহেনার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে:
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ عَدُوِّى وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَآءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِٱلْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا۟ بِمَا جَآءَكُم مِّنَ ٱلْحَقِّ يُخْرِجُونَ ٱلرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا۟ بِٱللَّهِ رَبِّكُمْ
অর্থ: “হে মু’মিনগণ, তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা প্রেরণ করছো; অথচ তারা তো প্রত্যাখান করেছে সেসব সত্য বার্তা -যা তোমাদের কাছ এসেছে। তারা বহিস্কার করছে রাসূলকে এবং তোমাদেরকে। এবং সেটি এ কারণে যে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহতে বিশ্বাস করো।”
মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে শুধু পানাহারের হালাল-হারামগুলি নির্ধারণ করে দেননি। কাকে বন্ধুরূপে কাকে গ্রহণ করা হারাম এবং কাকে বন্ধু বানানো হালাল – সুস্পষ্ট বিধান দিয়েছেন সে বিষয়েও। এরূপ বিধান দেয়া হয়েছে সেগুলি মেনে চলার জন্য। কোন মু’মিন ব্যক্তি কি সে বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে পারে? বিদ্রোহ করলে সে আর মুসলিম থাকে না, কাফিরে পরিণত হয়। মুসলিমের রাজনীতি ও সমাজনীতির ক্ষেত্র এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ইসলাম থেকে দূরে সরা সেক্যুলারিস্টদের কাছে মহান আল্লাহতায়ালার সে বিধান গুরুত্ব পায়নি। সেটি দেখা যায় শেখ মুজিব ও তার সাথীদের রাজনীতির দিকে নজর দিলে। তারা ভারতকে বন্ধু রূপে নয়, প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে। সে বিধানগুলির সাথে গাদ্দারীর কারণে নবীজী (সা:)’র আমলে আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩০০ সহচরকে মুনাফিক বলা হয়েছে।
ইসলামে মুনাফিকদের অবস্থান ও অপরাধ কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্টতর বলা হয়েছে। পবিত্র কুর’আন ও হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী জাহান্নামে মুনাফিকদের অবস্থান হবে কাফিরদের চেয়েও অধীক নিকৃষ্ট ও আযাবপূর্ণ স্থানে। আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩০০ সহচরের অপরাধ হলো তারা ওহুদের জিহাদে যোগ দেয়নি। এটিই ছিল তাদের মূল অপরাধ। কিন্তু তারা কখনোই মক্কার কাফিরদের দলে গিয়ে তাদের অস্ত্র নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেনি। অথচ সে কাজটি একাত্তরে মুসলিম নামধারী বাঙালি মুসলিমদের দ্বারা হয়েছে। মুনাফিক সরদার আ ব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সাথীদের অপরাধের চেয়ে অধিক গুরুতর ও জঘন্যতর অপরাধের কান্ড ঘটেছে তাদের দ্বারা। তাদের অপরাধ, তারা শুধু জিহাদ থেকেই দূরে থাকেনি, বরং কাফিরদের থেকে অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে একটি মুসলিম দেশকে ভাঙ্গতে এবং বিজয়ী করেছে ভারতের ন্যায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি কাফির দেশকে। কাফিরদের সেনা দলে শামিল না হয়েও যদি আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সাথীগণ স্রেফ জিহাদ থেকে দূরে থাকার কারণে মুনাফিক রূপে চিহ্নত হয়, তবে যারা ভারতের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিল, ভারত থেকে অস্ত্র নিল এবং তাদের কাঁধে অস্ত্র রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করলো -তাদেরকে কি বলা যাবে?
সন্ত্রাস দমনের নামে কোন কোন দেশে চলছে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্মূলের অভিযান? এমন একটি দেশ হলো ভারত। যে দেশটি বাংলাদেশে একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ, ভোটডাকাতি ও জনগণের মৌলীক মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়াকে সমর্থন দেয় -সেদেশ কখনো গণতন্ত্রের বন্ধু হতে পারে? সেদেশ শুধু গণতন্ত্রের শত্রু নয়, বরং আপামর জনগণের শত্রু। যে দেশটি বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ এবং শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায় না -সেটিও তো ভারত। ২০১৪ সালের নির্বচনে জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদকে শরীক হতে চাপ দেয়ার জন্য ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসেছিল। তার পক্ষ থেকে এরশাদকে বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগকে হটালে জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। জামায়াতকে প্রতিরোধ করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। পরে সে কথা এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন। শেখ হাসিনা জামায়াত নেতাদের অন্যায় ভাবে ফাঁসি দিয়েছে এবং হিফাজতে ইসলামের কর্মীদের উপর শাপলা চত্বরে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার সে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কোন নিন্দা জানায়নি। বরং বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলি সে নির্মম হত্যাকান্ডকে গণহত্যা না বলে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ রূপে প্রচার করেছে।
ভারত প্রমাণ করেছে, দেশটি হলো দক্ষিণ এশিয়ার বুকে আরেক আগ্রাসী ইসরাইল। এবং বাংলাদেশ ও কাশ্মীর হলো অধিকৃত ফিলিস্তিন। ইহুদীরা চায় বৃহৎ ইসরাইল। এবং ভারত চায় অখণ্ড ভারত। কাশ্মীর শাসিত হচ্ছে সরাসরি ভারতের দ্বারা, এবং বাংলাদেশ শাসিত হচ্ছে শেখ হাসিনার ন্যায় ভারতের অনুগত গোলামদের দ্বারা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেনের মতে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কটি স্বামী-স্ত্রীর মত। উভয়ের অবস্থান যেন একই পরিবারে। আব্দুল মোমেনের কথার মধ্যে করুণ বাস্তবতা আছে। ইসরাইলের সামনে মূল বাধাটি হলো হামাসের ন্যায় ইসলামপন্থী ফিলিস্তিনীগণ। অপর দিকে আগ্রাসী ভারতের সামনে মূল বাধা হলো বাংলাদেশের ইসলামপন্থীগণ। তাই ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী মাত্রই হামাস। সে কথাটি ভারতের মিডিয়ায় আজকাল স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ফলে ভারত চায়, ইসলামপন্থী দলগুলির ত্বরিৎ নির্মূল। জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, হিফাজতের বিরুদ্ধে শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং শত শত আলেমদের গ্রেফতার -এসবই হলো সে নির্মূল প্রক্রিয়ার অংশ। এ কাজে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সেক্যুলারিস্টগণ হলো একাত্তরের ন্যায় ভারতের অভিন্ন রণাঙ্গণের সহযোদ্ধা। ভারতের ভয়, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের বিজয় এলে তাতে ভারতের ২২ কোটি মুসলিম জেগে উঠবে। তাতে সংকটে পড়বে ভারতের নিরাপত্তা। স্বাধীনতার দাবী উঠবে উত্তর-পূর্বের ৭টি অহিন্দু রাজ্যে। তাই ভারত চায়, যে কোন মূল্যে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের দমন। ফলে ভারতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভারতের নীতিতে কোন পরিবর্তন আসে না। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস দল। কংগ্রেস সেদিন আজকের বিজিপি সরকারের ন্যায় শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নৃশংসতাকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে। এবং হাসিনার একদলীয় নির্বাচনের ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছে। আরো স্মরণীয় হলো, কংগ্রেস সরকারের হাতেই হায়দারাবাদ, কাশ্মীর, গোয়া, মানভাদর অধিকৃত হয়েছে। এবং মুসলিম নির্মূলে সংঘটিত করা হয়েছে বহু হাজার দাঙ্গা।
ইসরাইলীদের আদর্শিক আত্মীয়
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজাতে শুরু হয়েছে ইসরাইল পরিচালিত নির্মম গণহত্যা ও অবকাঠামো ধ্বংসের প্রক্রিয়া। চলছে বিরামহীন বোমা ও মিজাইল বর্ষণ। ইসরাইল ২০২৪’য়ের এপ্রিল অবধি ৩৪ হাজারের বেশী নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে -যার মধ্যে অর্ধেকের বেশী নারী ও শিশু। গাজার শতকরা ৮০ ভাগের বেশী আবাসিক ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। বহু হাজারের মানুষ আজও নিখোঁজ; মনে করা হচ্ছে তারা চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তুপের নিচে। বোমা ফেলেছে অধিকাংশ হাসপাতালের উপর। হাসপাতালগুলিতে পাওয়া গেছে গণকবর। ১৮/১১/২০২৩ তারিখে বোমা বর্ষণ করেছে জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবিরের আল ফাখুরা স্কুলের উপর এবং হত্যা করেছে প্রায় ১০০ জনকে -যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। কোন সভ্য ও বিবেকমান মানুষ গণহত্যায় সমর্থন দেয় না। এমন কাজ একমাত্র তাদের, যাদের রয়েছে এমন নৃশংস গণহত্যার নিজস্ব ইতিহাস। আত্মীয়তাটি এখানে আদর্শের। ইসরাইলীগণ গণহত্যার যে আদর্শে বিশ্বাসী সে অভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা। গাজাতে যত মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী হত্যা করা হয়েছে কাশ্মীরের জম্মু, হায়দারাবাদ, গুজরাত এবং আসামের নেলীতে। ইসরাইলীদের অতি ঘনিষ্ট আদর্শিক আত্মীয় তাই হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার সাথীরা। ভারত সরকার তাই শুরু থেকেই ইসরাইলী বর্বরতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ভারতে ইসরাইলের পক্ষে মিছিলও হয়েছে। সে মিছিলগুলি করেছে নরেন্দ্র মোদীর দল হিন্দুত্ববাদী বিজিপি ও রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (RSS)’য়ের নেতা-কর্মীরা। অপর দিকে মোম্বাই শহর ও কর্নাটাকা প্রদেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিছিল করতে দেয়া হয়নি।
ইসরাইলের বন্ধু ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রবল নিয়ন্ত্রন রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও। বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদীর আদর্শিক আত্মীয় হলো দেশের ভোটডাকাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের মাটিতে সবচেয়ে বড় বড় অপরাধগুলি চোর-ডাকাত, খুনি ও সন্ত্রাসীদের ন্যায় সামাজিক দুর্বৃত্তদের হাতে হয়না, সেগুলি হয় রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তদের হাতে। অনৈসলামিক রাষ্ট্রের অর্থ এমন দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত রাষ্ট্র। এমন রাষ্ট্রই আযাবের হাতিয়ারে পরিনত হয়। নিছক মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে এমন নৃশংস আযাব থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়া যায়না। মুক্তি দেয়ার সে কাজটি সম্ভব হয় একমাত্র ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে মধ্য দিয়েই। যেখানেই সে কাজে ব্যর্থতা, সেখানেই বিজয়টি শয়তানী শক্তির। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজে আরব মুসলিমগণ ব্যর্থ হয়েছে বলেই আজ সেখানে চলছে ইসরাইলীদের নৃশংস বর্বরতা। একাজে বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তদের নৃশংসতা। বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তদের কাজ হয়েছে সে নৃশংসতাকে সমর্থন করা।
ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতিয়ানহু, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের ভোটডাকাত শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্তদের ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন হলেও তাদের আদর্শিক পরিচয়টি এক এবং অভিন্ন। এরা সবাই নিজ নিজ ভূমিতে শয়তানের বিশ্বস্ত সৈনিক। এদের বিজয়ে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা স্রেফ কিতাবে থেকে যায়; এবং প্লাবন আসে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী নৃশংসতায়। নরেন্দ্র মোদীর পরিচয় গুজরাতের গণহত্যাকারী রূপে। মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, সে প্রদেশে ২০০২ সালের দাঙ্গায় প্রায় ৫ হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়। শত শত মুসলিম গৃহে আগুন দেয়া হয়; বহু শিশুকে জীবন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। গণধর্ষণের শিকার হয় শত শত মুসলিম মহিলা। এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল মোদীর নিজ দলের নেতাকর্মীগণ। যখন কোথাও গণহত্যা শুরু হয়, তখন নিরপেক্ষ ও নিষ্ক্রিয় থাকাটাই গুরুতর অপরাধ। তখন মজলুমের পক্ষ নেয়াটিই হলো শ্রেষ্ঠ ধার্মিকতা, নৈতিকতা ও মানবতা। এবং পরম অধর্ম ও দুর্বৃত্তি হলো সেরূপ দাঙ্গাকারীদের সমর্থন করা। যে কোন সভ্য রাষ্ট্রে দাঙ্গা শুরু হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে সে দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকায় পুলিশ পৌঁছে যায়। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী সেটি হতে দেয়নি। পুলিশকে পরিকল্পিত ভাবে সে দাঙ্গা থামানোর কাজ থেকে দূরে রেখেছে এবং মুসলিম নির্মূলের কাজকে নৃশংসতর ও ব্যাপকতর হতে দিয়েছে। এতে নরেন্দ্র মোদীর দলীয় ক্যাডারগণ সুযোগ পেয়েছে অবাধে ও উৎসবভরে মুসলিম মহল্লাগুলিতে গণহত্যা চালানোর। নরেন্দ্র মোদী নিজ অফিসে বসে সে নৃশংসতা উপভোগ করেছে এবং কোন উদ্যোগ নেয়নি। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ ব্যর্থ হলে এবং দুর্বৃত্ত শক্তির হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে সে রাষ্ট্রের সামরিক ও বেসামরিক শক্তি সমূহ কিরূপ বীভৎস নৃশংসতা ঘটাতে পারে -এ হলো তারই নজির। এ থেকে বুঝা যায়, শান্তি, স্বাধীনতা এবং জান-মালের নিরাপত্তা নিয়ে বসবাসের জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আরো বুঝা যায়, ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের সে জিহাদ থেকে দূরে থাকাটি কত বড় গুরুতর অপরাধ। এমন অপরাধ হাজারো অপরাধের রাস্তা খুলে দেয়। তখন দেশ দুর্বৃত্তদের দখলে চলে যায়। দুর্বৃত্তদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তুলে দেয়ার কাজটি তাই কোন ঈমানদারের নয়; এমন কাজ কাফির, মুনাফিক ও ফাসিকদের।
গণতন্ত্র কেন অগ্রহনযোগ্য?
ভারতের শাসকচক্র ভাল ভাবেই জানে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচন মানেই ভারতবিরোধী ইসলামপন্থীদের বিজয়। এতে সম্ভাবনা বাড়ে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের। এবং বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাঝে ভারত নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। এজন্যই ভারতের যুদ্ধ ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধেও। সে যুদ্ধে ভারতের পক্ষে ময়দানে লড়ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ডাকাত শ্রেণী। তবে এদের শুধু ফ্যাসিবাদী বললে ভূল বলা হয়। ইতালীর মুসোলীনী ও জার্মানীর হিটলার ফ্যাসিবাদী বলা হয়। ফ্যাসিবাদীরা দলীয় স্বৈরাচারের প্রতিষ্ঠা দেয়, কিন্তু তারা চোর-ডাকাত দুর্বৃত্ত হয়না, ফলে তাদের হাতে দেশের ব্যাংক, ট্রেজারী, সরকারি প্রকল্পের অর্থ ডাকাতি হয়ে যায়না। তাদের মধ্যে থাকে প্রকট দেশপ্রেম, থাকে দেশকে দ্রুত বিজয়ী করা স্বপ্ন। তাই জার্মানীতে সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়ন এসেছে হিটলারের আমলে।
বাংলাদেশে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা এবং তাদের দল আওয়ামী লীগের হাতে যা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে -সেটি নিরেট ডাকাততন্ত্র। ডাকাততন্ত্রে গণতন্ত্র যেমন বাঁচে না, তেমনি বাঁচে না দেশপ্রেম । ডাকা/তদল শুধু গণতন্ত্রকেই কবরে পাঠায় না, কবরে পাঠায় আইনের শাসন ও সুনীতিকে। তারা দেশের পুলিশ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও আদালতকে চুরি-ডাকাতীসহ সকল দুর্বৃত্তির হাতিয়ারে পরিণত করে। ফলে সমগ্র দেশজুড়ে এক রাতে জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করাও ক্ষমতাসীন ডাকাত দলের পক্ষে অতি মামুলী ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সে ডাকাতিতে যারা বাধা দেয় তাদেরকে কারাবন্দী করে, হত্যা করে বা নির্যাতন করে। বাংলাদেশে তাই গণতন্ত্রের কবরের উপর চলছে ভোটডাকাতি, পুলিশী নির্যাতন, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা এবং হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার।
যে কোন সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে সরকার ও রাষ্ট্র দু্ইটি ভিন্ন সত্ত্বা। সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে মাত্র, তবে রাষ্ট্রের মালিক নয়। সরকার অস্থায়ী, কিন্তু রাষ্ট্র স্থায়ী। কোন দেশের সরকারই কখনোই ত্রুটিমুক্ত নয়, ফলে ক্ষমতাসীনগণ সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। ফলে সরকারের বিরোধীতার অর্থ রাষ্ট্রের বিরোধীতা নয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্টগণ রাষ্ট্রকে নিজেদের মালিকাধীন গচ্ছিত সম্পদ মনে করে। ফলে সরকার প্রধানের অপশাসন ও দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে কিছু বললেই সেটি চিত্রিত হয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ রূপে। সেটিকে জামিনের অযোগ্য অপরাধ দেখিয়ে জেলবন্দী করা হয়। ডিজিটাল আইনের নামে আইন তৈরী করার লক্ষ্য, সরকার-বিরোধী যে কোন সমালোচনাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত করা। সভ্য রাজনীতির নিজস্ব কিছু ভদ্র নীতি ও সভ্য সংস্কৃতি থাকে। সে ভদ্র নীতি ও সভ্য সংস্কৃতির মূল কথা, আইনের শাসন এবং রাষ্ট্রীয় নীতির সমালোচনার অধিকার। সেটি নাগরিকের মৌলিক নাগরিক অধিকার। কিন্তু ভোটডাকাতদের কাছে সে সব সভ্য রীতি-নীতির কোন মূল্য থাকে না। সেগুলিকে তারা কবরে পাঠায়। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তাই বিলুপ্ত করা হয়েছে সভ্য ও ভদ্র রাজনীতির সংস্কৃতি। এটিই হলো ডাকাতদের হাতে দেশ অধিকৃত হওয়ার বিপদ। ডাকাতন্ত্রের এ রাজনীতি শুধু ইসলামী মূল্যবোধশূণ্যই নয়, বরং সভ্য রীতি-নীতি ও মানবতাশূণ্যও। তাই এ রাজনীতিতে অসম্ভব হয় সভ্য ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রের নির্মাণ। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে পথে এরূপ রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি এক বিশাল বাধা।
ইহুদীত্বের সাথে হিন্দুত্বের কোয়ালিশন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্মূলমুখী অসভ্য ও নৃশংস বর্বর ধারাটি হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি; সেটি পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এবং সেটি বাংলাদেশের জন্মের প্রথম দিন থেকেই। এ রাজনীতির মূল লক্ষ্য, প্রায় ১৭ কোটি বাঙালি মুসলিমদের শৃঙ্খলিত করা এবং তাদের ভারতবিরোধী ক্ষোভকে দমিয়ে রাখা। সে সাথে পৃথিবীর মুসলিম জনসংখ্যা সমৃদ্ধ এ প্রান্তে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করা। এ ক্ষেত্রে ইসলামের শত্রু শক্তির সম্মিলিত স্ট্রাটেজী হলো, বাংলাদেশকে একটি উম্মুক্ত জেলখানায় পরিণত করা। এজন্য বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতাসীন হয় তাদেরকে ভারত স্বাধীন শাসক রূপে দেখতে রাজী নয়; বরং ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ নামক জেলাখানার ভারত-অনুগত জেল-প্রশাসক রূপে। সে কাজে অতীতে ভারত শেখ মুজিব ও জেনারেল এরশাদকে ব্যবহার করেছে। এখন ব্যবহার করছে শেখ হাসিনাকে। বাংলাদেশ নামক এ জেলখানায় যারাই ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়, তাদেরকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য ভারতের রয়েছে নিজস্ব ঘাতকবাহিনী। সেরূপ ঘাতক বাহিনী রয়েছে যেমন দেশের প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, RAB ও আদালতের অভ্যন্তরে, তেমনি রয়েছে রাজনৈতিক দল, রাজপথ ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গণে। এরা ভারতবিরোধীদের গৃহ থেকে তুলে নিয়ে গুম করে, পিটিয়ে হত্যা করে এবং বিচারের নামে ফাঁসিতে চড়ায়। তাই তাদের হাতে আবরার ফাহাদের ন্যায় দেশপ্রেমিক বুয়েট ছাত্রকে নির্মম ভাবে নিহত হতে হয়েছে, গুম হতে হয়েছে বি.এন.পি’র ভারত বিরোধী নেতা ইলিয়াস আলী। এবং শাপলা চত্বরে গণহত্যার শিকার হতে হয়েছে বহুশত নিরস্ত্র মুসল্লীকে। এসবই করা হয় বাংলাদেশের বুকে ভারতীয় এজেন্ডাকে বাস্তবায়ীত করতে। ভারতসেবী বাংলাদেশীগণ সেটি করে দিল্লির শাসকচক্রকে খুশি করতে।
মুসলিম বিরোধী এরূপ নৃশংসতার মূল কারণ, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রচণ্ড ইসলাম-ভীতি ও মুসলিম-ভীতি -বিশেষ করে বাঙালি-মুসলিম -ভীতি। সে ভীতি নিয়েই একাত্তরে তারা পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। কারণ, বাঙালি মুসলিমগণই হলো সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠি। ১৭ কোটি বাঙালি মুসলিমের স্বাধীন পরিচিতি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে অনুপ্রেরণা জুগায় ভারতের ২২ কোটি বন্দী মুসলিমকে। ১৯০৬’য়ে ঢাকায় মুসলিমের লীগের জন্ম এবং ১৯৪৭’য়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে বাঙালি মুসলিমগণ। কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান”’য়ের রক্তাক্ত লড়াইটিও লড়েছিল এই বাঙালি মুসলিমগণ। সে চুড়ান্ত লড়াইয়ে আর কোন প্রদেশের মুসলিমগণ এতো রক্ত দেয়নি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সে লড়াইয়ে ১৯৪৬’য়ের ১৬ আগস্ট কলকাতার রাজপথে ৫ থেকে ৭ হাজার মুসলিম সেদিন হিন্দুত্ববাদী গুন্ডাদের হাতে প্রাণ দিয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল নোয়াখালী, খুলনা ও বরিশালের। ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে যেমন উগ্র ইহুদীত্ববাদীগণ (Zionists), বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে তেমনি হলো উগ্র হিন্দুত্ববাদীগণ। ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি সাধনে এই দুটি উগ্র মুসলিম বিরোধী পক্ষের মধ্যে বহুকাল ধরেই রয়েছে গভীর যোগসূত্র। ভারতের শাসনক্ষমতা হিন্দুত্ববাদীদের কবজায় যাওয়ায় উগ্রবাদী এ দুই পক্ষের মাঝে সহযোগিতা তীব্রতর হয়েছে।
ইহুদীরা নিজেদেরকে আহলে কিতাব ও একেশ্বরবাদী বলে দাবী করে। কিন্তু একেশ্বরবাদী মুসলিমদের নির্মূলে তারা জোট বেঁধেছে পৌত্তলিক মুশরিকদের সাথে। একেশ্বরবাদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের সেরূপ দুশমনি দেখা গেছে নবীজী (সা:)’র যুগেও। মদিনার ইহুদীগণ সেদিন মুসলিমদের নির্মূলে মক্কার পৌত্তলিক মুশরিকদের সাথে জোট বেঁধেছিল। এটিই ইহুদীদের লিগ্যাসি। এটি কম্যুনিস্টদের বিপ্লবে পূজিবাদীদের সমর্থন দেয়ার মত একটি বিস্ময়কর বিষয়। তাই ইসরাইলী বর্বরতা ও গণহত্যাকে সমর্থন দিতে ভারত সরকারের পাশাপাশী ভারতীয় জনতা পার্টি (বি.জি.পি.) এবং রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (আর.এস. এস.)’য়ের হিন্দুত্ববাদী মাঠকর্মীরাও রাস্তায় মিছিলে নেমেছে। হিন্দুত্ব ও ইহুদীত্বের মাঝে সেরূপ একটি জোট দেখা গেছে ১৯৭১’য়ে। সেটি পাকিস্তানের বিনাশে। পাকিস্তানের অপরাধ, দেশটি সব সময়ই দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়াতে শুধু পৌত্তলিক ভারতই খুশী হয়নি, খুশি হয়েছিল ইসরাইলও। একাত্তরের যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় সেনা বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিল জেনারেল জ্যাকব নামক এক ইহুদী। জেনারেল জ্যাকব যে পোষাক পরিধান করে ১৯৭১’য়ে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্দানে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল -তার সে পোষাক রক্ষিত রাখা হয়েছে ইসরাইলের যাদুঘরে। তাই বাংলাদেশে যারা ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায় -তাদের এগুতে হবে এ বাস্তবতা মোকাবেলা করেই। ইসলাম তথা মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদে নামলে ভারতও যে প্রতিরোধে ময়দান নামবে -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ করা চলে। তবে আশার কথা হলো, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভারত শক্তিশালী নয়। এখন বাংলাদেশের ১৭ কোটি বাঙালি মুসলিম প্রমাণ করতে হবে, তারাও সাড়ে তিন কোটি আফগান মুসলিমের চেয়ে শক্তিতে কম নয়।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018