ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের প্রতিরোধে শত্রুশক্তির যুদ্ধ এবং মুসলিমদের ব্যর্থতা
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on December 6, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ভারত এখন ইসরাইল
বাঘ-ভালুকের ন্যায় হিংস্র পশুদের মাঝে বাঁচতে হলে সে হিংস্র পশুগুলিকে অবশ্যই চিনতে হয় এবং সেগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে হয়। জ্ঞানার্জনের এগুলি ফরজ বিষয়। সেটি না জেনে শুধু ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, সাহিত্য পড়লে জীবন বাঁচে না। বিষয়টি অবিকল একই রূপ সত্য স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে বাঁচার ক্ষেত্রেও। জান-মালের নিরাপত্তা এবং ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে কারা সেগুলির শত্রু -সেটি অবশ্যই জানতে হয়। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে ইসলাম, মুসলিম ও গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু কারা? প্রতিটি বাঙালি মুসলিমের জন্য সেটি জানা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে উত্তরটি সহজ। সে শত্রু দেশটি হলো ভারত। কারণ, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে ভূমিকা নিয়ে হাজির হয়েছে সেটি আদৌ বন্ধুত্বের নয়, বরং পরম শত্রুর।
১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা স্বাধীনতা পায় পাকিস্তানের বৃহত্তর প্রদেশ রূপে। তখন পূর্ব বাংলায় কোন বন্দর ছিল না। পাকিস্তান সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দরের সুবিধা চেয়েছিল, কিন্তু ভারত ৬ ঘন্টার জন্য দিতেও রাজী হয়। অথচ কলকাতা বন্দর নির্মিত হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে; সে নির্মাণ কাজে ব্যয় হয়েছিল পূর্ব বাংলার জনগণের দেয়া রাজস্বের অর্থ। ভারত বাংলাদেশের পেট চিরে তার পূর্বাঞ্চলে যাওয়ার জন্য করিডোর নিয়েছে, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানীদের করিডোর দেয়নি পশ্চিম পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য। সেরূপ করিডোর দেয়াকে ভারত নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি রূপে দেখেছে। প্রশ্ন হলো, ভারতকে করিডোর দিলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা কি হুমকির মুখে পড়ে না? বাংলাদেশী পণ্যবাহী ট্রাকের জন্য করিডোর দেয় না নেপাল ও ভূটানে যাওয়ার জন্য। স্রোতের টানে ভারতের পাহাড় থেকে পাথর যাতে বাংলাদেশে না আসে -সেটি নিশ্চিত করতে ভারত সরকার নদীর মুখে তারের জাল বসিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতীয়দের মনে শরিষার দানা পরিমাণ দরদ থাকলে কখনোই এরূপ আাচরণ করতো না। ভারত তুলে নিত না পদ্মা ও তিস্তাসহ বহু যৌথ-নদীর পানি।
ভারত একাত্তরের যুদ্ধের দোহাই দেয়। অথচ এ যুদ্ধটি ছিল শতকরা শত ভাগ ভারতীয় স্বার্থ হাছিলের যুদ্ধ। এমন একটি যুদ্ধজয়ের জন্য ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই সুযোগ খুঁজছিল। সে যুদ্ধটি বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা দেয়ার যুদ্ধ ছিল না; সেটি ছিল পাকিস্তানকে খণ্ডিত করা এবং বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে আনার যুদ্ধ। যুদ্ধজয়ের ফলে ভারত ১৮ কোটি মানুষের বাজার পেয়েছেহ, করিডোর পেয়েছে, পদ্মা-তিস্তার পানি পেয়েছে, চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরের সুবিধা পাচ্ছে এবং সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পছন্দের লোকদের ক্ষমতায় বসানোর। বাংলাদেশে স্বাধীনতা পেয়েছে তো একমাত্র তারাই যারা ভারত সরকারের সেবাদাস তথা প্রক্সি । অপরদিকে জনগণ কথা বলা, লেখালেখি, মিটিং-মিছিল ও ভোটদানের সে স্বাধীনতা পাকিস্তান আমলে ভোগ করতো -সেগুলিও তারা হারিয়েছে। এখন ভোটডাকাতি হয়ে যায়, স্বাধীন ভাবে কথা বললে গুম ও খুন হতে হয়। যে জঙ্গলে বাঘ, ভালুক, সিংহের ন্যায় হিংস্র পশুদের বসবাস -সে জঙ্গলের পাশে বসবাসের বিপদটি ভয়ানক। ঠক তেমনি যে প্রতিবেশী দেশে আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদীদের বসবাস -সে দেশটির পাশে বসবাসের বিপদও ভয়াবহ। সে বিপদটি শেরে বাংলা ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী, নাজিমুদ্দীন, আকরাম খাঁ, মৌলভী তমিজুদ্দীন খান, নুরুল আমীন, ফজলুল কাদের চৌধুরীর ন্যায় নেতাগণ সুস্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন বলেই তারা ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তানে যোগ দিয়েছিলেন। একাত্তরের কাপালিক নেতাদের কি সে হুশ ছিল? তারা তো ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কোলে গিয়ে বসেছেন এবং তাদেরকে বিজয়ী করছেন। ভারতের হিন্দুত্ববাদীগণ মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে। তারা কি কখনো মুসলিমদের হাতে স্বাধীনতা তুলে দেয়? সেটি চাইলে কেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে তারা স্বাধীনতা দেয়না? কেন কাশ্মীরকে তারা উম্মুক্ত জেলখানা বানিয়েছে? এখন বাংলাদেশীদের সামনে উপায় নাই; একাকীই মোকাবেলা করতে হবে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনকে।
কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করা হারাম -যেমন হারাম হলো জ্বিনা, মদ্যপান ও সূদ খাওয়া। সে হুকুম পবিত্র কুর’আনে এসেছে। যেমন সুরা আল ইমরানের নম্বর ২৮ আয়াতে বলা হয়েছে:
لَّا يَتَّخِذِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْكَـٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ ٱللَّهِ فِى شَىْءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُوا۟ مِنْهُمْ تُقَىٰةًۭ ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥ ۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلْمَصِيرُ
অর্থ: “মু’মিনগণ যেন মু’মিনদের ব্যতীত কাফিরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ না করে। এবং যে ব্যক্তি এরূপ করবে (অর্থাৎ কাফিরদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করবে) তার সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম, তোমরা যদি তাদের কাছ থেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করো। আল্লাহ তার নিজের সম্বন্ধে তোমাদের সাবধান করছেন; এবং আল্লাহর দিকেই তোমদের প্রত্যাবর্তন।”
সুরা মমতাহেনার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে:
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ عَدُوِّى وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَآءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِم بِٱلْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا۟ بِمَا جَآءَكُم مِّنَ ٱلْحَقِّ يُخْرِجُونَ ٱلرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ ۙ أَن تُؤْمِنُوا۟ بِٱللَّهِ رَبِّكُمْ
অর্থ: “হে মু’মিনগণ, তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা তো তাদের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা প্রেরণ করছো, অথচ তারা তো প্রত্যাখান করেছে সেসব সত্য বার্তা -যা তোমাদের কাছ এসেছে। তারা বহিস্কার করছে রাসূলকে এবং তোমাদেরকে। এবং সেটি এ কারণে যে তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহতে বিশ্বাস করো।”
মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে শুধু পানাহারের হালাল-হারাম নির্ধারণ করে দেননি, সুস্পষ্ট বিধান দিয়েছেন বন্ধুরূপে কাকে গ্রহণ করা হারাম এবং কাকে বন্ধু বানানো হালাল। কোন মু’মিন ব্যক্তি কি সে বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে? বিদ্রোহ করলে সে মুসলিম থাকে না, কাফিরে পরিণত হয়। মুসলিমের রাজনীতি ও সমাজনীতির ক্ষেত্র এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ইসলাম থেকে দূরে সরা সেক্যুলারিস্টদের কাছে মহান আল্লাহতায়ালার সে বিধান গুরুত্ব পায়নি। সেটি দেখা একাত্তরের শেখ মুজিব ও তার সাথীদের রাজনীতির দিকে নজর দিলে। তারা ভারতকে বন্ধু রূপে নয় প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে। নবীজী (সা:)’র আমলে আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩০০ সহচরকে মুনাফিক বলা হয়েছে। ইসলামের মুনাফিকদের অবস্থান ও অপরাধ কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। পবিত্র কুর’আন ও হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী জাহান্নামে মুনাফিকদের অবস্থান হবে কাফিরদের চেয়েও অধীক আযাবপূর্ণ স্থানে। আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার ৩০০ সহচরের অপরাধ হলো তারা ওহুদের জিহাদে যোগ দেয়নি। কিন্তু তারা মক্কার দলে গিয়ে তাদের অস্ত্র নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেনি। কিন্তু একাত্তরে মুসলিম নামধারী সেক্যুলারিস্টদের অপরাধটি মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সাথীদের চেয়ে বহুগুণ গুরুতর ও জঘন্যতর। তারা শুধু জিহাদ থেকেই দূরে থাকেনি, তারা বরং কাফিরদের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে একটি মুসলিম দেশকে ভাঙ্গতে এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ কাফির দেশকে বিজয়ী করতে। কাফিরদের দলে শামিল না হয়েও যদি আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সাথীগণ স্রেফ জিহাদ থেকে দূরে থাকার কারণে মুনাফিক রূপে চিহ্নত হয়, তবে যারা ভারতের পক্ষে যোগ দিল, ভারতের অস্ত্র নিয়ে তাদের কাঁধের সাথ কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করলো -তাদেরকে কি বলা যাবে?
সন্ত্রাস দমনের নামে কোন দেশে চলছে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্মূলের অভিযান? সে দেশটি তো ভারত। যে দেশটি একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ, ভোটডাকাতি ও জনগণের মৌলীক মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়াকে সমর্থন দেয় -সেদেশ কি কখনো গণতন্ত্রের বন্ধু হতে পারে? সেদেশ তো শুধু গণতন্ত্রের শত্রু নয়, বরং আপামর জনগণের শত্রু। কোন দেশটি বাংলাদেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও ইসলামী দলের বিজয় চায় না? সেটিও তো ভারত। ২০১৪ সালের নির্বচনে জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদকে শরীক হতে চাপ দেয়ার জন্য ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসেছিল। তার পক্ষ থেকে এরশাদকে বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগকে হটালে জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। জামায়াতকে প্রতিরোধ করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। পরে সে কথা এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন। হাসিনা জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিয়েছে এবং হিফাজতে ইসলামের কর্মীদের উপর শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার সে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কোন নিন্দা জানায়নি। বরং বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলি সে হত্যাকান্ডকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ রূপে প্রচার করেছে।
ভারত প্রমাণ করেছে, দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার বুকে আরেক আগ্রাসী ইসরাইল। এবং বাংলাদেশ ও কাশ্মীর হলো অধিকৃত ফিলিস্তিন। ইহুদীরা চায় বৃহৎ ইসরাইল। ভারত চায় অখণ্ড বৃহৎ ভারত। কাশ্মীর শাসিত হচ্ছে সরাসরি ভারতের দ্বারা, বাংলাদেশ শাসিত হচ্ছে ভারতের অনুগত গোলাম আওয়ামী লীগের দ্বারা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেনের মতে সম্পর্কটি স্বামী-স্ত্রীর মত -যেন উভয়ই একই পরিবারের। আব্দুল মোমেনের কথার মধ্যে নিরেট বাস্তবতা আছে। ইসরাইলের সামনে মূল বাধাটি হামাসের ন্যায় ইসলামপন্থী ফিলিস্তিনীগণ। আগ্রাসী ভারতের সামনে মূল বাধা বাংলাদেশের ইসলামপন্থীগণ। ভারতের দৃষ্টিতে তাই বাংলাদেশের ইসলামপন্থী দল মাত্রই হামাস। সে কথাটি ভারতের মিডিয়ায় আজকাল স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ফলে ভারত ইসলামপন্থী দলগুলির নির্মূল চায়। জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, হিফাজতের বিরুদ্ধে শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং শত শত আলেমদের বন্দীকরণ -এসবই হলো সে নির্মূল ও দমন প্রক্রিয়ার অংশ। এ কাজে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সেক্যুলারিস্টগণ হলো একাত্তরের ন্যায় ভারতের অভিন্ন রণাঙ্গণের সহযোদ্ধা। ভারতের ভয়, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের বিজয় এলে তাতে ভারতের ২২ কোটি মুসলিম জেগে উঠবে। তাতে সংকটে পড়বে ভারতের নিরাপত্তা। তাই ভারত চায়, যে কোন মূল্যে বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের দমন। তাই ভারতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভারতের নীতিতে কোন পরিবর্তন আসে না। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস দল। কিন্তু সে কংগ্রেসও বিজিপি সরকারের ন্যায় আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী নৃশংসতাকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে। এবং হাসিনার একদলীয় নির্বাচনের ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে সহযোগিতা করেছে। কংগ্রেস সরকারের হাতে হায়দারাবাদ, কাশ্মীর, গোয়া, মানভাদর অধিকৃত হয়েছে। মুসলিম নির্মূলে হাজার হাজার দাঙ্গা হয়েছে।
ইসরাইলীদের আদর্শিক কাজিন
গাজাতে চলছে ইসরাইল পরিচালিত নির্মম গণহত্যা। চলছে বিরামহীন বোমা বর্ষণ। ইসরাইল এ যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করছে। নিহতদের মধ্যে ৬ হাজারের বেশী শিশু। ৪০ হাজারেরর বেশী বিল্ডিং ধ্বংস করা হয়েছে। ৭ হাজারের বেশী মানুষ আজও নিখোঁজ; মনে করা হচ্ছে তারা চাপা পড়েছে ধ্বংসস্তুপের নীচে। বোমা ফেলছে অনেকগুলি হাসপাতালের উপর। হাসপাতালগুলি পরিণত হয়েছে কবরস্থানে। ১৮/১১/২০২৩ তারিখে বোমা বর্ষণ করেছে জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবিরের আল ফাখুরা স্কুলের উপর এবং হত্যা করেছে প্রায় ১০০ জনকে -যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। গণহত্যায় যাদের নিজেদের আগ্রহটি প্রবল এবং সে নৃশংস বর্বর কর্মে যাদের নিজেদের ইতিহাসও আছে -একমাত্র তারাই অন্যদের গণহত্যায় সমর্থন করে। মিলটি এখানে আদর্শের। ইসরাইলীগণ গণহত্যার যে আদর্শে বিশ্বাসী সে অভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীরা। গাজাতে যত মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশী হত্যা করা হয়েছে কাশ্মীরের জম্মু, হায়দারাবাদ, গুজরাত এবং আসামের নেলীতে। ইসরাইলীদের অতি ঘনিষ্ট আদর্শিক কাজিন তাই হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার সাথীরা। ভারত সরকার তাই শুরু থেকেই ইসরাইলী বর্বরতাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ভারতে ইসরাইলের পক্ষে মিছিলও হয়েছে। সে মিছিলগুলি করেছে নরেন্দ্র মোদীর দল হিন্দুত্ববাদী বিজিপি ও রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ (RSS)’য়ের নেতা-কর্মীরা। অপর দিকে মোম্বাই শহর ও কর্নাটাকা প্রদেশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে মিছিল করতে দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসরাইলের বন্ধু নরেন্দ্র মোদী সমর্থন করে তার আদর্শিক কাজিন শেখ হাসিনাকে। হাসিনাকে সমর্থন করার অর্থ তার ভোটডাকাতি ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকেও সমর্থন করা। মুসলিম বিরোধী সে নৃশংসতায় ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নেতিয়ানহু, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ভোটডাকাত হাসিনার মধ্য মিলটি গভীর। নরেন্দ্র মোদী পরিচিতি পেয়েছে গুজরাতের গণহত্যাকারী রূপে। মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, তখন সে প্রদেশে ২০০২ সালের দাঙ্গায় প্রায় ৫ হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়। শত শত মুসলিম গৃহে আগুন দেয়া হয়; অনেক শিশুকে আগুনে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়। গণধর্ষণের শিকার হয় শত শত মহিলা। এ নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল মোদীর নিজ দলের নেতাকর্মীগণ। সে মুসলিম নিধন থামাতে মোদী কোন পুলিশ পাঠায়নি। অথচ যে কোন সভ্য রাষ্ট্রে দাঙ্গা শুরু হলে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ পৌঁছে যায়। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিকল্পিত ভাবে সে পুলিশকে দাঙ্গা থেকে দূরে রেখেছে এবং মুসলিম নির্মূলে গণহত্যাকে নৃশংসতর ও ব্যাপকতর হতে দিয়েছে। সুযোগ পেয়ে নরেন্দ্র মোদীর দলীয় ক্যাডারগণ অবাধে ও উৎসবভরে মুসলিম মহল্লাগুলিতে গণহত্যা চালিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী তার অফিসে বসে উৎসবভরে সে নৃশংসতা দেখেছে। উৎসবের সে পর্বকে দীর্ঘায়ীত করার প্রয়োজনেই দাঙ্গা থামাতে পুলিশ পাঠায়নি।
ইসরাইলের প্রতি শেখ হাসিনার প্রেম লক্ষ্য করার মত। অতীতে বাংলাদেশের পাসপোর্টে উল্লেখ থাকতো, ইসরাইলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু হাসিনা সে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। এখন বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ইসরাইলেও যাওয়া যায়। ইসরাইলের সাথে হাসিনা বানিজ্য সম্পর্কও গড়েছে। বড় অংকের বিদেশী মুদ্রা দিয়ে সে ইসরাইল থেকে স্পাই সফট ওয়ার কিনেছে। লক্ষ্য, সেগুলি দিয়ে সেনাবাহিনীর অফিসার ও বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ফোনালাপ মনিটরিং করা।
ভারত জানে, গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচন মানেই ভারতবিরোধী ইসলামপন্থীদের বিজয়। এজন্যই ভারতের যুদ্ধ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। সে যুদ্ধে ভারতের পক্ষে ময়দানে লড়ছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্রকে তারা বহু আগেই কবরে পাঠিয়েছে। গণতন্ত্রের কবরের উপর চলছে ভোটডাকাতি, পুলিশী নির্যাতন, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা এবং হাজার হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার। যে কোন গণতান্ত্রিক দেশে সরকার ও রাষ্ট্র দু্ইটি ভিন্ন সত্ত্বা। সরকার কখনোই রাষ্ট্রের মালিক নয়। সরকার অস্থায়ী, কিন্তু রাষ্ট্র স্থায়ী। কোন দেশের সরকারই ত্রুটিমুক্ত নয়, ফলে সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। তাই সরকারের বিরোধীতার অর্থ রাষ্ট্রের বিরোধীতা নয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্টগণ রাষ্ট্রকে নিজেদের মালিকাধীন সম্পদ মনে করে। ফলে সরকার প্রধানের অপশাসন ও দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে কিছু বললেই সেটি চিত্রিত হয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ রূপে। সেটিকে জামিনের অযোগ্য অপরাধ দেখিয়ে জেলবন্দী করা হয়। ডিজিটাল আইনের নামে আইন তৈরী করার লক্ষ্য, সরকার-বিরোধী যে কোন সমালোচনাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত করা। সভ্য রাজনীতির নিজস্ব কিছু ভদ্র রীতি–নীতি ও সভ্য সংস্কৃতি থাকে। কিন্তু অসভ্য ভোটডাকাতদের কাছে সেসব সভ্য রীতি-নীতির কোন মূল্য নাই। সেগুলিকে তারা কবরে পাঠায়। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তাই বিলুপ্ত করা হয়েছে সভ্য ও ভদ্র রাজনীতির সংস্কৃতি। এটিই হলো সেক্যুলার রাজনীতির বিপদ। এ রাজনীতি শুধু ইসলামী মূল্যবোধশূণ্যই নয়, বরং সভ্য রীতি-নীতি ও মানবতাশূণ্যও। তাই এ রাজনীতিতে অসম্ভব হয় সভ্য ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রের নির্মাণ। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে পথে এরূপ রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি এক বিশাল বাধা।
ইহুদীত্বের সাথে হিন্দুত্বের কোয়ালিশন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্মূলমুখী অসভ্য ও নৃশংস ধারাটি হঠাৎ সৃষ্টি হয়নি; সেটি পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এবং সেটি বাংলাদেশের জন্মের প্রথম দিন থেকেই। এ রাজনীতির মূল লক্ষ্য, প্রায় ১৭ কোটি বাঙালি মুসলিমদের শৃঙ্খলিত করা এবং তাদের ভারতবিরোধী ক্ষোভকে দমিয়ে রাখা। এ ক্ষেত্রে স্ট্রাটেজী হলো, বাংলাদেশকে একটি উম্মুক্ত জেলখানায় পরিণত করা। এজন্য যারাই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হয় তাদেরকে ভারত স্বাধীন শাসক রূপে দেখতে রাজী নয়; বরং ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ নামক জেলাখানার ভারত-অনুগত জেল-প্রশাসক রূপে। এ জেলখানায় যারাই ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়, তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য রয়েছে ভারতের নিজস্ব ঘাতকবাহিনী -সেটি যেমন প্রশাসন, পুলিশ, RAB ও আদালতে, তেমনি রয়েছে রাজপথ ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গণে। সে ঘাতক দল যেমন বিচারের নামে ফাঁসিতে চড়ায়, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরার ফাহাদের ন্যায় দেশপ্রেমিক ছাত্রদের পিটিয়ে হত্যা করে। গণহত্যা ঘটায় শাপলা চত্বরের ন্যায় রাজপথে।
এরূপ নৃশংসতার কারণ, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রচণ্ড ইসলাম ও মুসলিম ভীতি -বিশেষ করে বাঙালি-মুসলিম ভীতি। সে ভীতি নিয়েই একাত্তরে তারা পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। কারণ, বাঙালি মুসলিমগণই হলো সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার বুকে সবচেয়ে বড় মুসলিম জনগোষ্ঠি। ১৭ কোটি বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা স্বাধীন ভাবে বাঁচতে অনুপ্রেরণা জুগায় ভারতের ২২ কোটি বন্দী মুসলিমকে। ১৯০৬’য়ে ঢাকায় মুসলিমের লীগের জন্ম এবং ১৯৪৭’য়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে বাঙালি মুসলিমগণ। কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান”’য়ের রক্তাক্ত লড়াইটিও লড়েছিল এই বাঙালি মুসলিমরাই। সে লড়াইয়ে আর কোন প্রদেশের মুসলিমগণ এতো রক্ত দেয়নি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সে লড়াইয়ে ১৯৪৬’য়ের ১৬ আগস্ট কলকাতার রাজপথে ৫ থেকে ৭ হাজার মুসলিম সেদিন হিন্দুত্ববাদী গুন্ডাদের হাতে প্রাণ দিয়েছিল। তাদের অধিকাংশই ছিল নোয়াখালী, খুলনা ও বরিশালের। ফিলিস্তিনীদের জন্য যেমন উগ্র ইহুদীত্ব (Zionism), বাঙালি মুসলিমদের জন্য তেমনি হলো উগ্র হিন্দুত্ব। ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতি সাধনে এই দুটি উগ্র মুসলিম বিরোধী পক্ষের মধ্যে বহুকাল ধরেই রয়েছে গভীর যোগসূত্র।
ইহুদীরা নিজেদের আহলে কিতাব ও একেশ্বরবাদী বলে দাবী করে। কিন্তু একেশ্বরবাদী মুসলিমদের নির্মূলে তারা পক্ষ নেয় পৌত্তলিক মুশরিকদের। নবীজী (সা:)’র যুগে তারা মক্কার পৌত্তলিক মুশরিকদের সাথে জোট বেঁধেছিল। এটিই ইহুদীদের লিগ্যাসি। কম্যুনিস্টদের বিপ্লবে পূজিবাদীদের সমর্থন দেয়ার মত এটি বিস্ময়কর বিষয়। সেরূপ একটি জোট এখন দেখা যাচ্ছে। তাই ইসরাইলী বর্বরতা ও গণহত্যাকে সমর্থন দিতে ভারত সরকারের পাশাপাশী বি.জি.পি. এবং আর.এস. এস.য়ের হিন্দুত্ববাদী মাঠকর্মীরাও রাস্তায় মিছিল করছে। হিন্দুত্ব ও ইহুদীত্বের মাঝে সেরূপ একটি জোট দেখা গেছে ১৯৭১’য়ে। সেটি পাকিস্তানের বিনাশে। পাকিস্তানের অপরাধ, দেশটি সব সময়ই দাঁড়িয়েছে ফিলিস্তিনীদের পক্ষে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে। একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়তে ইসরাইল ভারতকে বিপুল অস্ত্র দিয়েছে। পূর্ব সীমান্তে তথা পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে ভারতীয় সেনা বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছে জেনারেল জ্যাকব নামক এক ইহুদী। জেনারেল জ্যাকব যে পোষাক পড়ে ১৯৭১’য়ে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্দানে পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল -তার সে পোষাক রক্ষিত রাখা হয়েছে ইসরাইলের যাদুঘরে। বাংলাদেশে যারা ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায় -তাদের এগুতে হবে এ বাস্তবতা মোকাবেলা করেই। সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভারত শক্তিশালী নয়। এখন বাংলাদেশের ১৭ কোটি বাঙালি মুসলিম প্রমাণ করতে হবে তারা সাড়ে তিন কোটি আফগান মুসলিমের চেয়ে শক্তিতে কম নয়।
নির্মূলের রাজনীতি এবং চলমান যুদ্ধ
নির্মূলের রাজনীতি কোন দেশেই শান্তি আনে না, বরং যুদ্ধ আনে। এ যুদ্ধটি শুধু সরকারবিরোধীদের বিরুদ্ধ নয়, বরং জনগণের বিরুদ্ধে। কারণ, সরকারবিরোধীগণ তো জনগণেরই অংশ। এবং এ যুদ্ধে প্রচুর ঘি ঢালছে ভারত। কারণ, ভারতের স্বার্থ এ যুদ্ধকে তীব্রতর করার মধ্যে। বাংলাদেশকে দুর্বল করা ও ভারতের পদানত করার হাতিয়ার হলো এই যুদ্ধ। বাংলাদেশের সকল অশান্তি ও নাশকতার মূলে হলো নির্মূলমুখী এই রাজনীতি ও যুদ্ধ। অথচ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এরূপ নির্মূলমুখী যুদ্ধ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর হয়নি। কংগ্রসের ন্যায় যেসব সংগঠন পাকিস্তান সৃষ্টির প্রবল বিরোধীতা করেছিল তারাও সেদিন রাজনীতির অধিকার হারায়নি। ফলে পাকিস্তানের মাটিতে মনরঞ্জন ধর ও ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের ন্যায় বহু কংগ্রেস নেতা স্বাধীন ভাবে রাজনীতি করেছেন। তারা পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্যপদ হারাননি।
অথচ বাংলাদেশ সৃষ্টির পর যুদ্ধ শুরু হয় তাদের বিরুদ্ধে -যারা অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। অথচ তারা কখনোই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন না। তারা বরং অখণ্ড পাকিস্তানে থাকার মাঝে বাঙালি মুসলিমদের অধিক নিরাপত্তা, অধিক স্বাধীনতা ও অধিক কল্যাণ দেখেছিলেন। মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলাকে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার মাঝে কল্যাণ দেখলে মুসলিম লীগের তৎকালীন প্রজ্ঞাবান নেতাগণ ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ বানাতেন। মুসলিম লীগ নেতাগণ তখন মনে করতেন, পাকিস্তানে যোগ না দিলে শিক্ষা, প্রশাসন, অর্থনীতি ও সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল পূর্ব বাংলাকে আরেকটি অধিকৃত কাশ্মীর বা হায়দারাবাদ হতে হতো। হিন্দুত্বের সে গোলামী সহজে শেষ হতো না। অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সকল নেতাদের সাথে শেখ মুজিব নিজেও ১৯৪৬’য়ের পাকিস্তানে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের সাথে একাত্ম হয়েছিলেন এবং নিজে “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” য়ের লড়াইয়ে রাজপথে নেমেছিলেন। প্রশ্ন হলো, যে স্বাধীনতার যে বয়ান ১৯৪৭’য়ে সত্য ছিল, সে বয়ান ১৯৭১’য়ে এসে মিথ্যা হয় কি করে?
শেখ মুজিব ১৯৭১’য়ের ১৬ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তানপন্থী দলগুলিকে স্বাধীনতার শত্রু রূপে আখ্যায়ীত করে নিষিদ্ধ করেন। দলগুলির নেতাদের কারাবন্দী করেন। এ ছিল মুজিবের মিথ্যাচারের অপরাজনীতি। যেমন মিথ্যাচার করেছেন একাত্তরে ৩০ লাখ নিহতের কথা বলে। ১৯৪৭’য়ে রাজনীতির ময়দানে যে বয়ান শোনা যেত ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের মুখে -একাত্তরের পর অবিকল সে বয়ানই ধ্বনিত হতে থাকে শেখ মুজিব ও তার সাথীদের মুখে। মুসলিম লীগের রাজনীতি চিত্রিত হতে থাকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি রূপে। এবং ব্রিটিশের সৃষ্টি ও ব্রিটিশ স্বার্থের ক্রীড়ানক রূপে। এবং কংগ্রেসের রাজনীতিকে বলা হয় প্রগতিশীল রাজনীতি। অথচ এ কথা বলা হয় না, মুসলিম লীগের কারণেই বাঙালি মুসলিমগণ মুক্তি পেয়েছে হিন্দু জমিদারদের শোষণ-নির্যাতন থেকে এবং পেয়েছে জমির উপর মালিকানা। এ কথাও বলে না, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কারণেই একমাত্র ঢাকা শহরে যতজন মুসলিম ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, প্রশাসক, শিল্পমালিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বসবাস করে তা ভারতের ২২ কোটি মুসলিম বিগত ৭৫ বছরেও তৈরী করতে পারিনি। কারণ ভারতীয় মুসলিমদের সে সুযোগ দেয়া হয়নি। পরিকল্পিত ভাবে তাদেরকে শিক্ষা, সরকারি চাকুরি ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এবং যেখানেই তারা কিছু উন্নতি করে সেখানে দাঙ্গা বাধিয়ে তার নির্মূল করা হয়।
ক্ষমতাসীন হয়েই শেখ মুজিবের এজেন্ডা হয়, রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মূল। নিজের জনপ্রিয়তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। আস্থা হারিয়ে ফেলেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপর। ফলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা দেন একজন নৃশংস ফ্যাসিস্ট শাসক রূপে। শুরু করেন গুম ও বিচার বহির্ভুত হত্যা। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি দেশের পুলিশের উপর নির্ভর করতে পারেননি। নিজের অনুসারীদের দিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল রক্ষিবাহিনী। অথচ পাকিস্তানের ২৩ বছরে এরূপ বাড়তি সশস্ত্র বাহিনী গড়ার প্রয়োজন পড়েনি। সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধ শুরু হয় সর্বহারা পার্টির ন্যায় বামপন্থীদের নির্মূলের লক্ষ্যে। যুদ্ধ হয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নির্মূলেও। মুজিব নিজের জন্য গণতান্ত্রিক ভাবে বিদায়ের সব রাস্তাই বন্ধ করেছিলেন। এতে তার নিজের জন্যও ফলটি ভাল হয়নি; তাকে বিদায় নিতে হয়েছে অগণতান্ত্রিক ভাবে। গণতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখলে তাকে এরূপ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো না। তিনি গদি হারাতেন, কিন্তু তাঁকে ও তার পরিবারকে প্রাণ হারাতে হতো না। বিরোধীদের বিনা বিচারে হত্যা ও গণতন্ত্র হত্যার অপরাধের শাস্তি মুজিবকেও ভোগ করতে হয়েছে। শেখ হাসিনাও তার পিতার ন্যায় নিজের জন্য গণতান্ত্রিক ভাবে বিদায়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সেটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথকে বন্ধ করে। হাসিনার কাছে নির্বাচন মানেই ভোটডাকাতি -সেটি সে বার বার প্রমাণ করে ছাড়ছে।
রাজনীতির এজেন্ডা যখন ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং আগ্রাসী ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের ন্যায় বিদেশী শক্তির এজন্ডা-পূরণ, তখন ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের বিরুদ্ধে সারাক্ষণ যুদ্ধ নিয়ে বাঁচতে হয়। নির্বাচনের নামে তখন ভোটডাকাতি করতে হয়। রাজপথে পুলিশ, বি,জি.বি, RAB সেনা বাহিনী ও হেলমেটধারী দলীয় গুন্ডাদের নামাতে হয়। জনগণের বিরুদ্ধে তেমনি এক বিরামহীন যুদ্ধ এবং নির্বাচনের নামে ভোটডাকাতি দেখা গেছে শেখ মুজিবের রাজনীতিতেও। এখন সেরূপ একটি বিরামহীন যুদ্ধ দেখা যায় শেখ হাসিনার রাজনীতিতেও। মুজিব নামিয়েছিলেন রক্ষি বাহিনীকে। হাসিনার নামিয়েছে পুলিশ, RAB এবং ছাত্র লীগের হেলমেট বাহিনীকে। এরূপ একটি অধিকৃত দেশে যারাই স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চায় এবং ভোটের ইজ্জত চায় -তারাই শত্রু গণ্য হয়। তাই হাসিনার কাছে শত্রু হলো বাংলাদেশের আপামর জনগণ। চলমান এ যুদ্ধে নিরস্ত্র জনগণ আজ পরাজিত। এবং বিজয়ী হলো হিন্দুত্ববাদের সাহায্যপুষ্ট আওয়ামী বাকশালী পক্ষ। কোয়ালিশন এখানে সকল জাতের দেশী-বিদেশী ইসলামের শত্রুপক্ষের। যারা ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায় তারা কি কখনো বাঁচে এরূপ শত্রুপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে? বুঝতে হবে, ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হতে পারে একমাত্র শত্রুশক্তির কবরের উপরই।
পরিত্যক্ত হয়েছে ফরজ এবং উৎসব হারাম কর্ম নিয়ে
ইতিহাস পথ দেখায়। অতীতের ভূলগুলি এবং দুর্বলতাগুলি ইতিহাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। তুলে ধরে দেশী ও বিদেশী শত্রুদের ষড়যন্ত্র, স্ট্রাটেজী ও অপরাধের চিত্র। তাই বার বার ইতিহাসের দিক চোখ ফেরাতে হয়। ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে -একই গর্তে বার বার পড়তে হয়। বার বার পরাজয় আসে। তবে একমাত্র সে ইতিহাস পাঠেই ফায়দা হয় যে ইতিহাসের বইয়ে ঘটনার সঠিক বর্ণনা থাকে। ভেজাল ঔষধের ন্যায় ভেজাল ইতিহাসও ক্ষতিকর। মিথ্যা ইতিহাসে ব্যর্থতা লুকানো হয়, জঘন্য অপরাধীদের হিরো বানানো হয় এবং পরম শত্রুকে বন্ধু রূপে চিত্রিত করা হয়। একাত্তরের ইতিহাসের বইয়ে মূলত সে কাজটিই করা হয়েছে। একাত্তরের উপর বই রচনাটি যেন মিথ্যা উৎপাদনের শিল্প। সে মিথ্যাচারের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের এক নৃশংস খুনিকে দেশবাসীর বন্ধু বানানো হয়েছে।
একাত্তরের ইতিহাস থেকে শিক্ষণীয় বিষয় বহু। একাত্তর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কারা বাঙালি মুসলিমের প্রকৃত শত্রু। বলে দেয়, একটি মুসলিম জনগোষ্ঠি কীরূপে এবং কত দ্রুত স্বাধীনতা ও ইজ্জত হারায় এবং শত্রু রাষ্ট্রের গোলামে পরিণত হয়। এ বিবরণও বিষদ ভাবে পেশ করে, কীরূপে একটি মুসলিম জনগোষ্ঠি দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়। তবে ইতিহাসের সে সামর্থ্য কেড়ে নেয়া হয়েছে। কারণ, একাত্তরের ইতিহাসের সবটুকুই লিখেছে শুধু বিজয়ী পক্ষের লোকেরা এবং তাতে ইচ্ছামত মিথ্যাচার হয়েছে তাদের ভূমিকাকে মহামান্বিত করার লক্ষ্যে। মিথ্যার নমুনা হলো ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ নিহতের কথা। ৩০ লাখ নিহত হলে, যুদ্ধকালীন ৯ মাসের প্রতিদিন নিহতের সংখ্যা ১১ হাজার হতে হয়। একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি; ফলে ৩০ লাখ নিহতের সংখ্যা পূরণ হলে প্রতি ২৫ জন একজন নিহত হতে হয়। এটা পাটিগণিতের হিসাব। এ হিসাবই বলে দেয় কতবড় মিথ্যাচার হয়েছে একাত্তর নিয়ে। আরেকটি বড় মাপের মিথ্যা গলা বাড়িয়ে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধারা নাকি দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু তারা বলতে পারে না এমন কোন জেলা, মহকুমা ও থানার নাম যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর রণাঙ্গণে নামার আগে মুক্তি বাহিনী স্বাধীন করেছিল। এরূপ ভুরি ভুরি মিথ্যার কারণে ইতিহাসের বই আবর্জনার ঝুড়িতে পরিণত হয়।
ইতিহাসের বইয়ে গৌরবের কাজ বলা হয়েছে পাকিস্তান ভাঙ্গাকে। অপরাধ বলা হয়েছে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নেয়াকে। অথচ পাকিস্তান কেন সৃষ্টি হলো -সে ইতিহাসে পড়ানো হয়। দেশ ভাঙ্গা ও দেশ গড়ার মাঝে কোনটি শ্রেষ্ঠ কর্ম -সে কথাটি বলা হয়না। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সৃষ্টিই যে বাঙালি মুসলিমের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম ছিল -গোপন করা হয় সে কথাটিকেও। বরং সে অবদানকে সাম্প্রদায়িক বলে বাঙালি মুসলিমের সে সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মকে খাটো করা হয়। প্রতিটি যুদ্ধ নিয়েই সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষেরই নিজস্ব বয়ান থাকে। বয়ান ছিল ইসলামের পক্ষের শক্তিরও। কি ছিল তাদের সে বয়ান -সে কথাটি একাত্তরের ইতিহাসের বইয়ে কোথাও বলা হয়নি। অথচ আদালতের রায়ের ন্যায় ইতিহাসের রায়েও দুই পক্ষের বয়ান থাকতে হয়। নইলে সে রায়টি নিরপেক্ষ থাকে না। ফলে সে রায়ের গ্রহনযোগ্যতাও থাকেনা। তখন সে পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাসের বইকে আবর্জনার স্তুপে যেতে হয়। বাংলাদেশে তাই বিশাল আবর্জনা জমেছে দেশটির ইতিহাস নিয়ে।
ইসলামের যে বয়ানটি নিয়ে আলেমদের মাঝে কোন বিরোধ নাই তা হলো, কোন মুসলিম দেশ সামরিক জান্তা বা দুর্বৃত্ত জালেম শাসক দ্বারা অধিকৃত হলেই সে দেশ ভাঙ্গা জায়েজ হয়ে যায় না। দেশের আয়োতন এক মাইল বাড়াতে প্রচুর রক্তক্ষয় হয়। তাই ফরজ হলো দেশের সে ভূগোলকে খণ্ডিত হওয়া থেকে বাঁচানো। নইলে দেশ ক্ষুদ্রতর হয়। আর দেশ ভেঙ্গে যাওয়া বা ক্ষুদ্রতর হওয়ার অর্থ দেশকে দুর্বল করা। আর কোন মুসলিম দেশকে দুর্বল করা হারাম। ফরজ হলো শক্তিকে ধরে রাখা বা বাড়ানো। এজন্যই মুসলিমদের লড়াইটি হতে হয় জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে নয়। যেমন গৃহে বাঘ ঢুকলে, লড়াইটি বাঘের বিরুদ্ধে হতে হয়। গৃহের বিনাশে নয়। কিন্তু একাত্তরে সে নীতি মানা হয়নি। মুসলিম ভূমি বহুবার জালমদের দ্বারা অধিকৃত হয়েছে -এমন কি উমাইয়া ও আব্বাসীয়া খলিফাদের আমলেও। স্বৈরাচারী জালেম শাসকের হাতে অধিকতৃ হয়েছে খোদ বাংলাদেশও। তবে কি বাংলাদেশও ভাঙ্গতে হবে? জালেম শাসক তাড়ানোর লড়াইটি ইসলামে ফরজ -এটি পবিত্র জিহাদ; কিন্তু দেশভাঙ্গা হারাম। কোন মুসলিম দেশকে ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও ভূমির দোহই দিয়ে ভাঙ্গাও জায়েজ নয়। ইসলামের অতি মৌলিক মোদ্দা কথা হলো এটি। এজন্যই একাত্তরে কোন ইসলামী দল, কোন হাক্কানী আলেম, কোন হাক্কানী ইমাম, কোন পীর পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেনি। পাকিস্তান ভাঙ্গাকে তারা হারাম বলেছেন -একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ের পত্রিকা খুললেই সে প্রমাণ মিলবে। পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে দাঁড়িয়েছে ইসলাম থেকে দূরে সরা আওয়ামী লীগ, মস্কোপন্থী ন্যাপ, ভাষানী ন্যাপ, কম্যুনিস্ট পার্ট ও হিন্দুরা। তারা পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে যুদ্ধে নেমেছে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের প্রতি অঙ্গীকার না থাকাতে। কিন্তু যে ঈমানদার ব্যক্তিটি বাঁচে মুসলিম স্বার্থের প্রতি গভীর অঙ্গীকার নিয়ে -সে কি কখনো মুসলিম দেশ ভাঙ্গার পক্ষ নেয়?
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে ১২ শত মাইলের দূরত্বকে পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষে যুক্তি রূপে খাড়া করা হয়। এরা কি পৃথিবীর মানচিত্র দেখে না? রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট, কানাডা, আর্জেন্টেনিয়া ও ব্রাজিলের মত দেশগুলির এক সীমান্ত থেকে অপর সীমান্তের মাঝে যে দূরত্ব তার চেয়ে কম দূরত্ব ছিল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে। উপরিউক্ত দেশগুলি কত বিচিত্র ভাষা, বর্ণ, ও ধর্মের মানুষদের নিয়েই না গঠিত। অমুসলিমদের জন্য ভৌগলিক সংহতি ও একতা ফরজ নয়; এবং হারাম নয় বিচ্ছন্নতার যুদ্ধ। তারপরও তারা একাতবদ্ধ। ভারত তার উদাহরণ। কত ভাষা, কত বর্ণ ও কত ধর্মের মানুষদের নিয়েই না ভারত। কিন্তু মুসলিমদের উপর তো একতা ফরজ এবং বিচ্ছিন্ন হওয়া হারাম। কিন্তু আফসোস! মুসলিমগণ পরিত্যাগ করেছে ফরজকে এবং বেছে নিয়েছে হারাম পথকে। মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত হলো, তিনি গড়াকে পছন্দ করেন, এবং অপছন্দ করেন ভাঙ্গাকে। অথচ মুসলিমগণ গড়া বাদ দিয়ে ভাঙ্গার পথকে বেছে নিয়েছে। মুসলিম বিশ্ব তাই ৫০’য়ের বেশী টুকরোয় বিভক্ত। একতার পথটি বিজয়ের, বিভক্তির পথটি পরাজয়ের। মুসলিমগণ পরাজয়ের পথটিই বেছে নিয়েছে। এ পথটি মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহেরও -ফলে প্রতিশ্রুত আযাবেরও। ফলে বিশ্বের দরবারে সাড়ে ৬ কোটি ব্রিটিশের যে শক্তি ও সম্মান আছে -তা ১৫০কোটি মুসলিমের নাই।
তাছাড়া বাংলাদেশ নিজেই প্রায় ১৯০ বছর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে শাসিত হয়েছে। সে সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল লন্ডন। এবং লন্ডনের অবস্থান ছিল ঢাকা থেকে আকাশ পথে ৪,৯৭৭ মাইল দূরে। কিন্তু বাংলায় যখন ব্রিটিশ শাসনের শুরু হয় তখন যোগাযোগটি আকাশ পথে হতো না, সেটি হতো জল পথে পালবাহী জাহাজের মাধ্যমে। জাহাজগুলো বহু সাগর এবং দুটি মহাসাগর পাড়ি দিয়ে কলকাতায় আসতো। ঘুরে আসতো হতো আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে। তাতে কি ভারত শাসনে ব্রিটিশদের কোন অসুবিধা হয়েছে? তারা আরো বহু দূরে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে এমন কি দূরত্ব ছিল? মোগল ও ব্রিটিশ আমলে তো এ দূরত্ব নিয়েই একই রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কাছে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে দূরত্বের বিষয়টি অজানা ছিল না। তাদের ভিশন ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের নির্মাণের এবং একটি বিশাল শক্তি রূপে উত্থানের। এমন একটি ভিশন নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তাদেরকে ভৌগলিক দূরত্বের উর্দ্ধে উঠতে হয়। এবং দেশের ভূগোল বাড়াতে হয়। নানা ভাষা ও নানা অঞ্চলের মানুষের সাথে একতা গড়তে হয়। এরূপ ভিশন ও মিশন নিয়ে রাজনীতি করতে হলে ঈমান লাগে, মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে কিছু করার বলিষ্ঠ অঙ্গীকার লাগে। সেরূপ ঈমান ও অঙ্গীকার কি একাত্তরের ইসলামী চেতনাশূণ্য নেতাদের ছিল? আজও যারা একাত্তর নিয়ে পাকিস্তানপন্থীদের গালী-গালাজ করে -তাদের মধ্যে কি সে ঈমান ও সে অঙ্গীকার আছে?
ঈমানের জোয়ার এবং বেঈমানীর জোয়ার
ঈমান শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে প্রকাশ পায়না, প্রকাশ পায় কর্ম, রাজনীতি, যুদ্ধ ও বুদ্ধিবৃত্তিতেও। জনগণের মাঝে ঈমানের জোয়ার এলে জোয়ার আসে নেক আমলে। বিপ্লব আসে ভিশনে ও মিশনে। তখন নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলের মানুষের মাঝে মহব্বত বাড়ে। তাতে বাড়ে একতা। তখন দেশের ভূগোলে বৃদ্ধি ঘটে। মুসলিমগণ প্রতিষ্ঠা পায় বিশাল রাজনৈতিক শক্তি রূপে। ১৯৪৭ তেমন এক বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছিল বাংলার মুসলিমগণ। ফলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল পাকিস্তানের ন্যায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র। অপর দিকে বেঈমানী বাড়লে বাড়ে মনের দূরত্ব। বাড়ে পরস্পরে ঘৃণা। তখন শুরু হয় আরব-অনারব, তুর্কী-কুর্দি এবং বাঙালি-বিহারির মাঝে ভাতৃঘাতী গণহত্যা। শুরু হয় দ্রুত নীচে নামা। মুসলিম দেশের ভূগোল তখন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে। এটিই হলো মুসলিম উম্মাহর শক্তিহানীর প্রক্রিয়া। ১৯৭১’য়ে তেমন এক নীচে নামার প্রক্রিয়ায় শামিল হয় বাঙালি মুসলিমগণ। ফলে পূর্ব পাকিস্তান পরিণত হয় বাংলাদেশ নামে ভারতের রাডারের নীচে অতি দুর্বল এক অধিনত দেশে।
মুসলিম জীবনে ঈমানের প্রবল জোয়ারটি আনে পবিত্র কুর’আন। এ জোয়ার মুসলিমদের একতাবদ্ধ করে ও তাদেকে বিশ্বশক্তিতে পরিণত করে। অপর দিকে বেঈমানীর জোয়ারটি আনে বর্ণবাদ, গোত্রবাদ, জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজমের ন্যায় জাহিলী মতবাদ। এ মতবাদগুলি মুসলিমদের বিভক্ত করে এবং শত্রুশক্তির গোলামে পরিণত করে। বঙালি মুসলিম জীবনে সে জাহিলিয়াতের জোয়ার দেখা গেছে ১৯৭০ ও ১৯৭১’য়ে। তখন জাতীয়তাবাদী বাঙালিগণ যুদ্ধ করেছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের বিজয় বাড়াতে। এখনো সে জোয়ার ও বিজয় নিয়ে গর্ব করা হয়। আরবদের জীবনে সেরূপ জোয়ার দেখা গেছে ১৯১৭ সালে। তখন জাতীয়তাবাদী আরবগণ ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের বিজয়ী করেছে। ১০ লখলের আরব মুসলিম তখন বিসে জোয়ার সে জোয়ারে পাকিস্তান যেমন দ্বিখণ্ডিত হয়েছে, তেমনি আরব ভূমি ২২ টুকরোয় বিভক্ত হয়েছে। সে বিভক্তির দিবসগুলিকে স্বাধীনতা দিবস নাম দিয়ে উৎসব হয়। তাদের চেতনায় যদি রোজ হাশরের বিচার দিবস গুরুত্ব পেত তবে স্বাধীনতা দিবসের এ উৎসব মাতমে পরিণত হতো। এসব জাহিলী মতবাদের নাশকতা থেক্কে বাঁচাতেই ইসলামে এ মতবাদগুলিকে হারাম ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে নবীজী (সা:)’র হাদীস: “যারা কোন গোত্রের নামে যুদ্ধ করে ও নিহত হয় তারা আমার উম্মত নয়।” –(সুনানে আহমেদ)। মুসলিমদের মাঝে নবীজী (সা:)’র এ শিক্ষা যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন আরব, তুর্ক, কুর্দ, ইরানী, হাবসী, আফগানী প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ববোধ নিয়ে একত্র বসবাস করেছে। এবং বিশ্বশক্তির জন্ম দিয়েছে।
ঈমানদার কখনোই বর্ণবাদী, গোত্রবাদী ও জাতীয়তাবাদী হয় না। সেটি একমাত্র ঈমানের মৃত্যুতেই সম্ভব। তাই সেটি দেখা যায় নিরেট বেঈমানদের জীবনে। নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করলেও অন্য ভাষা, অন্য বর্ণ, অন্য গোত্র ও অন্য অঞ্চলের মুসলিমগণ তাদের কাছে শত্রু। সেসব পরিচিতির ভিত্তিতে তারা বিভক্তি গড়ে। আরব জাতীয়তাবাদের জোয়ার থেকে আরবগণ যতদিন মুক্ত ছিল, ততদিন তাদের মাঝে একতা ছিল। ততদিন প্রতিষ্ঠা পায়নি ইসরাইল। মোসল, রামাদী, ফালুজা, আলেপ্পো, রাক্কা, গাজার ন্যায় অসংখ্য শহরগুলি তখন বেঁচেছে ধ্বংস হওয়া থেকে। জাতীয়তাবাদ হলো ইসলামের প্যান-ইসলামিক চেতনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। বিদ্রোহ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের বিরুদ্ধে। মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের মাঝে একতা চান, আর জাতীয়তাবাদীগণ চায় বিভক্তি। এরূপ বিদ্রোহ কখনোই একাকী আসে না, সাথে আনে ভয়ানক আযাবও। সে আযাব আসে নৃশংস যুদ্ধের নাশকতা নিয়ে। শত্রুশক্তি তখন আযাবের হাতিয়ারে পরিণত হয়। আরব ভূমিতে এক সময় আযাবের হাতিয়ারটি ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। এখন সে হাতিয়ারটি হলো ইসলরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বেঈমানীর সে রাজনীতি বাঙালি মুসলিম জীবনে দেখা গেছে ১৯৭৭০-৭১ সালে। তেমনি দেখা যায় বাংলাদেশ সহ সকল মুসলিম দেশে। মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে এই বেঈমানগণই বিজয়ী। ফলে মুসলিম বিশ্ব আজ ভাষার নামে, বর্ণের নামে ও অঞ্চলের নামে ৫০টির বেশী খণ্ডে বিভক্তি। এবং কারণ স্বাধীনতার নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশ গড়ার যে উৎসব -সে উৎসব তো ইসলামের পরাজয় এবং শয়তান ও তার অনুসারীদের বিজয় নিয়ে। কোন ঈমানদার কি এমন উৎসবে শরীক হতে পারে?
পাকিস্তান ভৌগলিক দূরত্বের কারণে ভেঙ্গে যায়নি, ভেঙ্গে গেছে মনের দূরত্বের কারণে। মনের দূরত্ব বাড়লে সহোদর ভাইগণও পাশাপাশি একই ভিটায় বসবাস করতে পারে না; তখন বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে গিয়ে ঘর বাঁধে। মনের দূরত্বের কারণেই প্রায় ৪০ কোটি আরব এক ভাষা, এক ধর্ম, এক বর্ণ ও এক অখণ্ড ভূগোলে বসবাস করেও অখণ্ড একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিতে পারিনি। তারা বিভক্ত হয়েছে ২২টি রাষ্ট্রে। জনগণের মাঝে মনের দূরত্ব সব সময়ই সৃষ্টি করেছে জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, বর্ণবাদ ও সেক্যুলারিজমের ন্যায় হারাম মতবাদগুলি। মুসলিমগণ তাদের গৌরবযুগে বিভেদ সৃষ্টিকারী এ মতবাদগুলিকে কবর দিতে পেরেছিল বলেই বিশ্বশক্তির জন্ম দিতে পেরেছিল। তখন আরব, ইরানী, তুর্কী, মুর, হাবসী, আফগানী ইত্যাদি নানা ভাষার মুসলিমগণ একত্রে কাজ করেছিল। অথচ আজ মুসলিমগণ ফিরে গেছে ইসলামপূর্ব জাহিলী যুগের হারাম মতবাদগুলিতে। সে যুগে আরবদের কোন রাষ্ট্র ছিল না। তারা বাঁচতো অসংখ্য গোত্রে বিভক্ত কলহপ্রবন এক অসভ্য গোত্রীয় পরিচিতি নিয়ে। সে রক্তাক্ত বিভক্তি ও কলহ-প্রবনতা আরবদের জীবনে আবার ফিরে এসেছে। সেটি প্রকট ভাবে আজ দেখা যাচ্ছে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, সুদান, লিবিয়া, লেবানন, মরক্কোসহ অধিকাংশ আরব দেশে।
১৯৪৭’য়ে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পায় তখন মুসলিম মনে জোয়ারটি ছিল প্যান-ইসলামিক চেতনার। ফলে ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা এবং ভৌগলিক দূরত্ব তাদের মধ্যে বিভক্তি গড়েনি। তখন নানা ভাষী ও নানা প্রদেশের পাকিস্তানীদের মাঝে সিমেন্ট লাগানোর কাজটি করেছে ইসলাম। কিন্তু ১৯৭১’য়ে জোয়ারটি ছিল সেক্যুলারিজম, বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদী ফিতনার। এ জাহিলী মতবাদগুলি পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ইসলাম থেকে দূরে সরায় এবং কেড়ে নিয়ে প্যান-ইসলামীক চেতনার সিমেন্ট। ফলে বৃদ্ধি পায় বাঙালি ও অবাঙালির মাঝে ঘৃণা ও মনের দূরত্ব -যা পরবর্তীতে বিভক্ত করে পাকিস্তানকে। সে মনের দূরত্বকে তীব্রতর করেছে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামরিক বাহিনীর স্বৈরশাসন ও দুর্বৃত্তি। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের এজেন্ডায় দুর্বৃত্তি ও বৈষম্যের নির্মূল গুরুত্ব পায়নি, বরং সেটি ছিল সেগুলিকে বাহানা বানিয়ে পাকিস্তানকে খণ্ডিত করা। পাকিস্তান ভাঙ্গার পর তারা নিজেরাই অধিক স্বৈরাচারী, অধিক জালেম ও অধিক দুর্বৃত্তে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান আমলে গণতন্ত্রের দাবী তুললেও বাংলাদেশ হওয়ার পর তারাই গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দেয় এবং এক দলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা দেয়।
ঈমানদারকে শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ-তেলাওয়াত নিয়ে বাঁচলে চলেনা। তাকে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, স্বাধীনতা ও নিরপত্তা নিয়েও ভাবতে হয়। শুধু ভাবলেই চলে না, সে ভাবনাগুলি নিয়ে জিহাদেও নামতে হয়। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের জীবনে যেমন সে ভাবনা দেখা গেছে, তেমনি জিহাদও দেখা গেছে। কিন্তু আজকের মুসলিমগণ সে ভাবনা নিয়ে বাঁচে না, সে জিহাদ নিয়েও বাঁচে না। চেতনা থেকে সে ভাবনা এবং কর্ম থেকে জিহাদ বিলুপ্ত হলে, সে ব্যক্তি আর মুসলিম থাকে না। খেফাফত ভেঙ্গে মুসলিম ভূমি টুকরো টুকরো হয়ে গেলেও সে ভাবনাশূণ্য ব্যক্তিটির হৃদয়ে কোন মাতম হয়না। বরং বিভক্তি নিয়ে সে উৎসব করে। এবং উৎসব হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়াতেও। এটি ঈমানদারীর লক্ষণ নয়। একটি মুসলিম জনগোষ্ঠি ইসলাম থেকে কতটা দূরে সরেছে -এ হলো তারই দলিল।
মুনাফিকি কি কখনো পুরস্কৃত হয়?
যেদেশে মুসলিমদের বসবাস, সেদেশে শুধু শয়তানের অনুসারীদের জীবনেই যুদ্ধ থাকে না, যুদ্ধ থাকে প্রতিটি মুমিনের জীবনেও। মুমিনের সে অবিরাম যুদ্ধটিই হলো জিহাদ। নামাজ-রোজা ছাড়লে কেউ মুসলিম থাকে না। তেমনি জিহাদ ছাড়লে কেউ মুসলিম থাকে না। তাই নবীজী (সা:)’র পিছনে নামাজ পড়েও মুসলিম হতে পারিনি আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার তিনশত সাথী। প্রশ্ন হলো, দেশ যখন হিন্দুত্ববাদের সেবকদের হাতে অধিকৃত, শরিয়ত যেদেশে বিলুপ্ত এবং যুদ্ধ যেদেশে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে -সেদেশের মুসলিমদের জীবনে জিহাদ থাকবে না সেটি কি ভাবা যায়? কোন ঈমানদার কি নিজ দেশে ইসলামের শত্রুশক্তির শাসন মেনে নেয়? মেনে নেয় কি ইসলামের পরাজয়? কিন্তু বাঙালি মুসলিমের জীবনে কোথায় সে জিহাদ? কোথায় সে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের তাড়না? সেরূপ একটি তাড়না না থাকলে বুঝতে হবে, আগ্রহ নাই মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার। তারা বাঁচছে বিদ্যমান পরাজয় নিয়ে। আর যারা বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের পরাজয় মেনে নিয়ে, তারা কি তাঁর নিকট থেকে কোন প্রতিদান আশা করতে পারে?
জালেম শাসকের বেঈমান সৈনিকদের জীবনেও রক্তাক্ত যুদ্ধ থাকে। সেসব যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ সৈনিক প্রাণ দেয়। ইতিহাস এমন যুদ্ধের বিবরণে পরিপূর্ণ। এভাবে তারা প্রমাণ করে, তাদের জীবনে নিজ বিশ্বাস ও এজেন্ডার সাথে মুনাফিকি নাই। তারা যা বিশ্বাস করে সেটিকে বিজয়ী করতে যুদ্ধ করে এবং সে যুদ্ধে বিপুল সংখ্যায় প্রাণদানও করে। এজন্যই বেঈমানগণ দেশে দেশে বিজয়ী। অথচ প্রতিদান রূপে তারা যা পায় -তা অতি সামান্য। পরকালে তারা যাবে নিশ্চিত জাহান্নামে। কিন্তু যারা অনন্ত-অসীম কালের জন্য জান্নাত পেতে চায় -তাদের জীবনে নিজ বিশ্বাসের সাথে ঈমানদারী কই? ঈমানদারী থাকলে তো আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ এবং সে জিহাদে কুর’বানী দেখা যেত -যেমন দেখা গেছে নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের জীবনে। তবে কি তারা বাঁচছে না মহান আল্লাহতায়ালার সাথে মুনাফিকি নিয়ে? আল্লাহতায়ালা কি কখনো মুনাফিকদের বিজয় দেন? পবিত্র কুর’আনে মুনাফিকদের কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। কাফিরদের চেয়েও অধিকতর কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি তো তাদের জন্য । জাহান্নামে তাদের অবস্থানটি হবে সবচেয়ে ভয়ংকরতম স্থানে। দুনিয়াতেও কি মুনাফিকদের অবস্থান কাফিরদের চেয়ে উত্তম হতে পারে? উত্তম যে নয়, তার প্রমাণ তো তারা নিজেরাই। তারা বাঁচছে গোলামী, অপমান, ধ্বংস ও আযাব নিয়ে। ০৬/১২/২০২৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018