উপেক্ষিত জিহাদ ও পরাজিত মুসলিম
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on September 15, 2021
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ঈমানী বাধ্যবাধকতা
মুসলিম হওয়ার জন্য কারো উপরই কোন বাধ্যবাধকতা নেই। “লা ইকরাহা ফিদ্দীন” কুর’আনের এই বহুল প্রচারিত আয়াতের অর্থ হলো: দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নবীজী (সা:)’র আমলেও আরবের হাজার হাজার মানুষ অমুসলিম থেকেছে। মিশর, লেবানন, ইরাকসহ আরব দেশগুলির লক্ষ লক্ষ মানুষ আজও যে অমুসলিম –তারা তো তাদেরই বংশধর। কোন মুসলিম সেনাবাহিনী কোন কালেই তাদেরকে মুসলিম হতে বাধ্য করেনি। এরই আরেক প্রমাণ, ভারতের ৬ শত বছরের বেশী কাল মুসলিম শাসন। দীর্ঘ কাল মুসলিম শাসনের পরও রাজধানী দিল্লী ও তার আশেপাশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দুই থাকে যায়। তেমনটি ঘটেছে স্পেনে। সেদেশে মুসলিমগণ ৭ শত শাসন করে। কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ খৃষ্টানই থেকে যায়। কিন্তু যারা জেনে বুঝে মুসলিম হয় তাদের মাথার উপর অলংঘনীয় দায়িত্বও এসে যায়। অনেকটা সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার মত। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে কাউকে বাধ্য করা হয় না। কিন্তু যোগ দিলে সেনাবাহিনীর বাইরের লোকদের থেকে তার দায়িত্বটা ভিন্নতর হয়। তখন প্রাণ হাতে রণাঙ্গণে যাওয়াটি তার মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে এসে যায়। যুদ্ধে না গেলে বা নির্দেশ পালনে অবাধ্যতা দেখালে তার কোর্ট মার্শাল হয়। বিচারে কঠোর শাস্তি হয়, এমনকি প্রাণদন্ডও হয়।
প্রশ্ন হলো, মুসলিম হওয়ার পর সে অর্পিত বাধ্যবাধকতাটি কি? সেটি হলো, মহাশক্তিমান আল্লাহতায়ালার সাথে এক অলংঘনীয় চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া। এবং চুক্তিটি হলো, একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে সে মাবুদ বা উপাস্য রূপে মেনে নিবে এবং নিজে তাঁর একান্ত আবেদ বা দাসরূপ প্রতিটি হুকুমকে প্রতিনিয়ত মান্য করে চলবে। সেটি শুধু নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতে নয়, বরং যেখানেই মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম তৎক্ষনাৎ তাঁকে সঁপে দিতে হবে সে হুকুম পালনে। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের দায়িত্ববোধ তাকে সর্বক্ষণ নিবিষ্ট করবে সে হুকুমের অনুসন্ধানে। অনুসন্ধানের সে কাজটি প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ। কারণ, আল্লাহর হুকুমটি যে জানে না, সে ব্যক্তি হুকুমের অনুসরণ করবে কীরূপে? পবিত্র কুর’আনের মধ্যেই রয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দশাবলী। পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানার্জন এ জন্যই ফরজ। অজ্ঞতা একারণেই সবচেয়ে ভয়ানক কবীরা গুনাহ। অজ্ঞতা নিয়ে তাই মুসলিম হওয়া যায় না, মুসলিম থাকাও যায় না। পথের অজ্ঞতা নিয়ে সঠিক রাস্তায় পথচলা অসম্ভব। অজ্ঞতায় যা অনিবার্য হয় সেটি পথভ্রষ্টতা। কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা নিয়ে তাই অসম্ভব হলো আল্লাহর প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকিমে চলা।
তাছাড়া মুসলিমের দায়িত্ব শুধু এ নয়, সে শুধু নিজে বা নিজের পরিবারকে নিয়ে সিরাতুল মোস্তাকিমে চলবে। সেটি নবীজী (সা:)’র সূন্নত নয়, সাহাবায়ে কেরামেরও রীতি নয়। তাঁকে পালন করতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার দায়ভার। সে কাজে তাকে পথ দেখাতে হয় অন্যদেরও। পথ দেখা ও দেখানো, জাগা ও জাগানোই তাঁর জীবনের মিশন। সে সাথে সরাতে হয় রাষ্ট্রের বুক থেকে সত্যের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি বাধা এবং শয়তানী শক্তির প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। নির্মূল করতে হয় দুর্বৃত্ত শক্তির প্রতিটি ষড়যন্ত্র। নবীজী (সা:) তাই শুধু ক্বাবার মধ্য থেকে মূর্তি সরাননি, সরিয়েছেন কাবার বাইরে থেকেও। মদ্যপান, সূদ-ঘুষ, বেশ্যাবৃত্তিসহ পাপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নির্মূল করেছেন। রোগজীবাণু যেমন দেহের পতন ঘটায়, দুর্বৃ্ত্তগণ তেমনি পচন আনে সমাজ ও রাষ্ট্রে। মুসলিম জীবনের মূল মিশন তাই শুধু দুর্বৃত্ত-নির্মূল নয়, বরং নির্মূণ করতে হয় দুর্বৃত্ত উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে। কারণ দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত ভূমিতে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় অসম্ভব। সে বিজয় আনতে হয় পাপ ও পাপের প্রতিষ্ঠানগুলির বিলুপ্তি ঘটিয়ে। নির্মূলের এ কাজে নামলে মু’মিনের জীবনে জিহাদ তাই অনিবার্য হয়ে পড়ে। তাছাড়া একার পক্ষে জিহাদ গড়ে তোলা অসম্ভব। তখন তাঁকে দল গড়তে হয় এবং একাত্ম হতে হয় অন্য ঈমানদারদের সাথে। একতা গড়া এজন্যই নামায-রোযার ন্যায় ফরজ। জিহাদর শুরুর আগে নবীজী (সা:)কে একাজ মক্কায় ১৩টি বছর অবিরাম করতে হয়েছে। আজও এটিই দ্বীন প্রতিষ্ঠার অনুকরণীয় মডেল।
জিহাদ যে ইসলামে কতটা অনিবার্য সেটির প্রকাশ ঘটেছে কুর’আনের অসংখ্য আয়াতে এবং কুর’আন নাযিলের মূল উদ্দেশ্যটির মধ্যে। আল্লাহতায়ালা সত্য দ্বীনসহ রাসূল পাঠানোর মূল লক্ষ্যটি কখনই অস্পষ্ট রাখেননি। আজকের বহু আলেম সেটি বুঝতে না পারলেও নবীজী (সা:)’র যুগের নিরক্ষর বেদুঈনরাও সেটি বুঝতেন। তারা লাগাতর জিহাদ লড়েছেন এবং জান-মালের বিপুল কুরবানীও পেশ করেছেন। পবিত্র কুর’আনে ঘোষণা: “তিনিই (সেই মহান আল্লাহ যিনি) তাঁর রসুলকে পথনির্দেশ ও সত্যধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন যাতে তা সকল ধর্মের উপর বিজয়ী হয়। যদিও কাফেরগণ তা অপছন্দ করে।” – (সূরা সাফ, আয়াত ৬)। অবিকল একই রূপ ঘোষনা এসেছে সুরা তাওবা’র ৩৩ নম্বর আয়াত ও সুরা ফাতহার ২৮ নম্বর আয়াতে। অন্যান্য ধর্ম থেকে ইসলামের এখানেই ভিন্নতা। হুকুম এখানে অন্যান্য ধর্ম, আচার ও মতাদর্শের উপর ইসলামকে বিজয়ী করা। হযরত মূসা (আ:) ও হযরত ঈসা (আ:)’র উপর এমন নির্দেশ একবারও নাযিল হয়নি। অথচ হযরত মহম্মদ (সা:)’র উপর সে নির্দেশ এসেছে তিনবার। নবীজী (সা:)’র পূর্বে যে সব নবী-রাসূল এসেছিলেন তারা ছিলেন নিজ-নিজ গোত্রের জন্য। যেমন হযরত মূসা (আ:) ও তাঁর ভাই হযরত হারুন (আ:) তাদের নবুয়তি জীবনের সবটুকু সামর্থ্য ব্যয় করেছেন বনী ইসরাইলের মানুষদের ফিরাউনের জুলুম থেকে মূক্তি দিতে ও তাদেরকে সত্য দ্বীনের পথে আনতে। হযরত ঈসা (আ:) এসেছিলেন মূলত বনি ইসরাইলীদের মাঝে তাওরাতের বাণীকে পুনর্জাগরিত করতে। অপর দিকে নবীজী (সা:) এসেছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। যেমন বলা হয়েছে, “ওয়া আরসালনাকা লিন্নাসি রাসূলা।” অর্থ: “এবং আপনাকে রাসূল রূপে প্রেরণ করেছিল সমগ্র মানব জাতির জন্য।”
পবিত্র কুর’আনে নবীজী (সা:)কে বলা হয়েছে “রাহমাতুল্লিল আলামীন” তথা সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত। অন্য কোন নবীকে সে বিশেষ উপাধিতে ভূষিত করা হয়নি। অপর দিকে নবীজী (সা:)’র উম্মতকে খাড়া করা হয়েছে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। নবীজী (সা:)’র উম্মত রূপে মুসলিমদের কর্মের ক্ষেত্রটিও বিশাল। তাদের মিশন বিশ্ববাসীকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়া ও জান্নাতে নেয়া। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাই সুরা আল-ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “কুনতুম খায়রা উম্মাতিন উখরিজাত লিন্নাসি তা’মুরুনা বিল মা’রুফি ওয়া তান হাওনা আনিল মুনকারি ওয়া তু’মিনুনা বিল্লাহি।” অর্থ: “তোমরা হচ্ছো সর্বশ্রষ্ঠ জাতি, তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য। তোমরা ন্যায়ের হুকুম দাও এবং নির্মূল করো দুর্বৃত্তিকে এবং তোমরা বিশ্বাস করো আল্লাহকে।” এ বিশাল দায়ভার কোন একক ব্যক্তি, সমাজ বা গোত্র করতে পারে না। সমাজ বিপ্লবের সে বিশাল কাজে জরুরী হলো সহযোগী রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক জনশক্তির পূর্ণ সহযোগিতা। নইলে কোন বিপ্লবই সফল হয়। নবীজী (সা:)কেও তাই নিজ হাতে রাষ্ট্র গড়তে হয়েছে এবং তিনি নিজে সে রাষ্ট্রের প্রধান রূপে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাহাবাগণ নবীজী (সা:)’র সূন্নত অনুসরণ করেছেন। ইসলামের দ্রুত প্রসার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা রূপে মুসলিম শক্তির উত্থানের মূল কারণ তো সেই ইসলামী রাষ্ট্র। আজকের মুসলিমদের পরাজয়ের মূল কারণ তারা নবীজী (সা:)’র সে সূন্নতের উপর নাই। তারা গড়েছে নিজেদের পথ। তাদের লক্ষ্য, স্রেফ নিজেদের এজেন্ডাকে বিজয়ী করা; মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সেখানে কোন স্থান নাই।
দ্বীন নাযিলের অর্থ এ নয় যে, সেটি কুর’আনের পাতায়, মসজিদের জায়নামাযে বা মাদ্রাসার শ্রেনীকক্ষে সীমাবদ্ধ থাকবে। বরং সেটি প্রতিষ্ঠা ঘটাতে হবে দেশের রাজনীতি, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধ-বিগ্রহসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গনে। দ্বীন তো পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠার জন্য, নিছক পাঠের জন্য নয়। নিছক ব্যক্তিজীবনে পালনের জন্যও নয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: “তিনি তোমাদের জন্য দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশে দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মুসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। -(সুরা আশ-শুরা, আয়াত ১৩)। কুর’আনে যেমন নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের আহকাম রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রপরিচালনা ও জিহাদের আহকামও। রয়েছে ফৌজদারি আইন, রয়েছে সম্পদের বন্টন নিয়ে আইন। রয়েছে পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য-পানীয় নিয়ে হারাম-হালালের বিধান। প্রতিবেশীর সাথে আচরণ কীরূপ হবে, কীরূপ আচরণ হবে শিশুদের সাথে, কীরূপ ব্যবহার করতে হবে পিতা-মাতা ও মুরব্বীদের সাথে –আল্লাহতায়ালার নির্দেশ এসেছে এসব বিষয়েও। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ বিধান। এটি আল্লাহর দেওয়া এক পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে এটি পথ দেখায়। মুসলিমের কাজ হলো সেটির পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ। কুর’আনে একথাও বলা হয়েছে, “ইন্নাদ্দীনা ইন্দাল্লাহিল ইসলাম”। অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র স্বীকৃত দ্বীন বা ধর্ম হলো ইসলাম। এর অর্থ দাঁড়ায়, ইসলামের বাইরে ধর্মের নামে যত ধর্ম বা মতবাদই থাক না কেন -সেগুলি মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সেগুলি অবশ্যই পরিতাজ্য। মানব জাতির বিপর্যয়ের বড় কারণ, বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণনাশ ও সম্পদের সবচেয়ে বেশী ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে বহু পরিতাজ্য ধর্ম ও আদর্শকে বিজয়ী করতে। বহু কোটি মানুষের প্রাণনাশ হয়েছে শুধু কম্যুনিজমের ন্যায় একটি ভ্রান্ত মতবাদকে প্রতিষ্ঠা দিতে। অথচ ইসলাম জানমালের অতি কম খরচেই মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছে।
রাষ্ট্রবিপ্লব ও জিহাদের অনিবার্যতা
রাষ্ট্র কোন শূণ্য স্থান নয়। বিশেষ একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সেখানে পূর্ব থেকেই প্রতিষ্ঠিত থাকে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে সে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কর্ণধারেরা। সেটি যেমন হযরত ইব্রাহীম (আ:) ও হযরত মূসা (আ:)’র সময় ছিল, তেমনি ছিল হযরত মুহম্মদ (সা:)’র সময়ও। নমরুদ, ফিরাউন, আবু জেহল ও আবু লাহাবগণ ছিল আল্লাহ-বিরোধী পক্ষের সমকালীন কর্ণধার। ধর্মের নামে তাদের নিজেদের বিশ্বাস ও প্রথা ছিল। সেগুলির বাইরে অন্য বিশ্বাসকে –তা যত সত্যই হোক না তারা তা মানতে রাজী ছিল না। মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিরুদ্ধে তারাই ছিল প্রবল প্রতিপক্ষ। ফলে মুসলিমদের নির্মূলে সংঘাতকে তারা অনিবার্য করে তুলেছিল। অথচ বিশ্বটি মহান আল্লাহতায়ালার। তাঁর নিজের গড়া এ বিশ্বে সে দখল জমানোর অধিকার তাদের ছিল না। ঈমানদারের দায়িত্ব হলো, এ অধিকৃত ভূমিকে শয়তানী শক্তির দখলদারী থেকে মূক্ত করা। এবং সে সাথে আত্মনিয়োগ করা আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে। এ দায়িত্ব মহান আল্লাহতায়ালার খলিফাদের। একাজের জন্যই মুসলিম উম্মাহকে বলা হয় হিযবুল্লাহ বা আল্লাহর দল। তাই খলিফা, উম্মাহ ও হিযবুল্লাহ –এ বিশেষ শব্দগুলি কোন রাজনীতিকের বা সমাজ বিজ্ঞানীর আবিস্কৃত শব্দমালা নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালার কুর’আনী পরিভাষা।
খলিফা, উম্মাহ, হিযবুল্লাহ, জিহাদ, শরিয়ত –এরূপ প্রতিটি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে ইসলামের কুর’আনী দর্শন এবং সে সাথে প্রতিটি ঈমানদারের উপর অর্পিত এক বিশাল দায়ভার। এ দায়িত্ব পালনের মধ্যেই পরিচয় মেলে একজন মুসলিমের প্রকৃত ঈমানদারী। সে দায়িত্বপালনের তাগিদেই প্রতিটি মুসলিম পরিণত হয় মহান আল্লাহর সার্বক্ষণিক সৈনিকে। দায়িত্ব পালনের সে মিশনে মহান আল্লাহর সাথে ঈমানদারের চুক্তিটি ঘোষিত হযেছে এভাবে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল, এই মূল্যে যে তাদের জন্য নির্ধারিত থাকবে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাস্তায়, অতঃপর (আল্লাহর শত্রুদেরকে) হত্যা করে ও নিজেরাও নিহত হয়। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুর’আনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ মহান সাফল্য।” –(সুরা তাওবাহ, আয়াত ১১১)।
মুসলিম তাই মহান আল্লাহতায়ালার ক্রয়কৃত সৈনিক বা দাস। তাঁর জান-মালের উপর নিজের কোন মালিকানা নাই, সেটি মহান আল্লাহতায়ালার। মহান আল্লাহতায়ালা জান্নাতের দরে তাদের জানমালকে ক্রয় করে সেটিকে বান্দার কাছেই জিম্মা রেখেছেন। ঈমানদারের দায়িত্ব হলো, মহান আল্লাহর ক্রয়কৃত এ আমানতকে খেয়ানত থেকে বাঁচানো। এ আমানত ব্যয় করতে হবে একমাত্র তাঁরই নির্দেশিত পথে। এখানেই তার জীবনের মূল পরীক্ষা। নামায-রোযার কাজ হলো সে পরীক্ষায় পাশের সামর্থ্য সৃষ্টি করা। পাঁচবার মসজিদে ডেকে নামায মূলত সে চুক্তির কথাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। সে চুক্তির কথা সর্বক্ষণ চেতনায় নিয়ে বাঁচাই হলো প্রকৃত যিকর। সে চুক্তিটি নামাযের প্রতি রাকাতে ধ্বনিত হয় “ইয়্যাকা’নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা’নাস্তায়ীন”য়ের মধ্য দিয়ে। এর অর্থ: আপনাকেই আমরা ইবাদত করি এবং আপনার কাছেই আমরা সাহায্য চাই। ইবাদতের অর্থ তো মহান আল্লাহতায়ালা প্রতিটি হুকুমের গোলামী। মুসলিমকে প্রতিটি মুহুর্ত বাঁচতে হয় সে গোলামী নিয়ে। তাই মুসলিম জীবনে অন্য কোন ধর্ম, মতবাদ বা ব্যক্তির গোলামীর কোন স্থান নাই। নামায তো সেই গোলামী নিয়ে বাঁচার যিকর। পবিত্র কুর’আনেও নামাযকে যিকর বলা হয়েছে। যিকর এখানে স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালার নাম ও তাঁর মহিমার যিকর নয়, বরং ঈমানদার রূপে দায়িত্ব নিয়ে বাঁচার যিকর। এ যিকরই নামাযীকে মুজাহিদ পরিণত করে। কথা হলো, আল্লাহতায়ালার সাথে কেনাবেচার এ দলিলটি শোনার পর কোন মুসলিম কি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ থেকে দূরে থাকতে পারে? দূরে থাকলে কি সে আর মুসলিম থাকে? মুসলিম হওয়ার অর্থই তো আল্লাহর সাথে সম্পাদিত এ পবিত্র চুক্তিকে মেনে চলা। যারা সে চুক্তি গলা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিল, কেবল তারাই এ চুক্তি অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে পারে। এমন অবাধ্যদের পক্ষ থেকে নিজেদেরকে মুসলিম রূপে দাবী করা নিছক ধোকাবাজী। তবে আল্লাহপাক এমন ধোকাবাজী গোপন রাখার কোন পথ খোলা রাখেননি। তিনি তাদের মুখোশ উম্মোচন করেন তাদের জীবদ্দশাতেই। দাড়ি, টুপি, পোষাক ও মুসলিম নাম দিয়ে অন্যকে ধোকা দেয়া যায়, কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালাকে নয়। মহান আল্লাহতায়ালা সেটি প্রকাশ করার ব্যবস্থা করেন জিহাদে ডাক দিয়ে। যারা সে জিহাদ থেকে দূরে থাকলো নবীজী (সা:) তাদেরকে মুনাফিক বলেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত হাদীসটি গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসটি হলো: আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ আল্লাহর রাস্তায় কোন যুদ্ধই লড়লো না, এবং এটিও ভাবলো না যে যুদ্ধ লড়াটি তার দায়িত্ব ছিল, এমন ব্যক্তির মৃত্যু হয় মুনাফেকীর মধ্যে।” – আল মুসলিম।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে জিহাদকে বলেছেন এমন এক ব্যবসা যা ব্যক্তিকে মুক্তি দেয় জাহান্নামের আগুন থেকে। একাজ তাজমহল নির্মাণের কাজ নয়। নিছক ক্ষেতখামার, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও কলকারখানা নির্মাণের কাজও নয়। বরং দুনিয়ার বুকে জান্নাত নামিয়ে আনার কাজে। এটি কোটি কোটি মানব সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর কাজ। এ কাজের ফলেই মর্তের বুক থেকে সিরাতুল মুস্তাকীম গড়ে উঠে জান্নাতে পৌঁছার। ইসলামে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল কর্মের মাঝে এটিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ মানব-কল্যাণ মূলক কর্ম। নিছক নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিল ব্যক্তিকে বীনা হিসাবে জান্নাতে নেয় না। নিহত হওয়ার পর রেযেকও দেয় না। বিচার দিনে শাফায়াতের অধিকারও দেয় না। কিন্তু জিহাদ দেয়। কারণ একমাত্র জিহাদই মহান আল্লাহতায়ালার ধরিত্রিকে শয়তানী শক্তির দখলমূক্ত করে এবং প্রতিষ্ঠা করে তাঁর সার্বভৌমত্ব। এর ফলেই শয়তানী শক্তির অধিকার মূক্ত হয় তাঁর ভূমি। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এ কাজ কত প্রিয় এবং এ কাজের পুরস্কার কত বিশাল -সে ঘোষণাটি বার বার এসেছে পবিত্র কুর’আনে। আখেরাতে মুক্তি ও পুরস্কারের সে সুখবরটি আল্লাহতায়ালা বাতলিয়েছেন এভাবে: “হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব যা তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? আর তা হলো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম -যদি তোমরা বুঝো। -(সুরা সাফ, আয়াত ১০-১১)।
বাঁচা কি স্রেফ বাঁচার জন্য?
মু’মিনের বাঁচাটি কখনোই স্রেফ বাঁচার জন্য হয় না। বাঁচার মধ্যেও পবিত্র লক্ষ্য ও এজেন্ডা থাকে। বাঁচার লক্ষ্য ও জীবনের মূল কাজ নিছক রুটি-রুজির তালাশ নয়। সম্পদের আহরণও নয়। সেটি মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা এবং বিনিময়ে জান্নাত লাভ। সে লক্ষ্যটি কি কখনো অবাধ্যতায় অর্জিত হয়? সে জন্য তাকে প্রতিটি কুর’আনী হুকুমের আনুগত্যে নামতে হয়। মু’মিনের জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ তখন অনিবার্য হয়ে উঠে। এটিই মু’মিনের জীবনে মূল লড়াই। এবং এরূপ লড়াই হলো জিহাদ। এমন জিহাদই নিশ্চিত করে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মাগফিরাত লাভ ও সীমাহীন পুরস্কার লাভ। সে প্রতিশ্রুতি এসেছে এভাবে: “তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন এবং এমন জান্নাতে দাখিল করবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বসবাসের জন্য জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটিই মহাসাফল্য।” -(সুরা সাফ, আয়াত ১২)।
মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এটিও অজানা নয়, তাঁর মু’মিন বান্দা শুধু ওপারের জান্নাতই চায় না, এপারের বিজয়ও চায়। আল্লাহতায়ালা তাঁর ঈমানদার বান্দাদের সে সুসংবাদও দিয়েছেন। সেটি এসেছে সুরা সাফার পরবর্তী আয়াতে। বলা হয়েছে, “এবং আরও একটি অনুগ্রহ যা তোমরা পছন্দ কর, (এবং সেটি হলো) আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়। (হে রাসূল!) মুমিনদেরকে এর সুসংবাদ দান করুন। -(সুরা সাফ, আয়াত ১৩)। আরো লক্ষণীয় হলো, মহান আল্লাহতায়ালা যে শুধু জিহাদের পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন -তা নয়। বরং নির্দেশ দিয়েছেন সে জিহাদে অবশ্যই শামিল হওয়ার। সে নির্দেশটি হলো: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও। যেমন ঈসা ইবনে মরিয়ম তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেন, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারি হবে? শিষ্যবর্গ বলেছিল, আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। অতঃপর বনী ইসরাইলীদের একদল বিশ্বাস স্থাপন করলো এবং একদল কাফের হয়ে গেল। যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, আমি তাদেরকে শত্রুর মোকাবেলায় সাহায্য করলাম, ফলে তার বিজয়ী হলো। -(সুরা সাফ, আয়াত ১৪)।
আল্লাহতায়ালার এর নির্দেশের পর জিহাদের গুরুত্ব এবং সে জিহাদে অংশগ্রহণের অপরিহার্যতা নিয়ে কি আর কোন অস্পষ্টতা থাকে? এখানে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট তা হলো, মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত আদায় নয়, বরং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাওয়া। ফলে কোন ব্যক্তি শুধু আযানের ডাকে মসজিদে ছুটলেই তাকে পূর্ণ ঈমানদার বলা যায় না, তাকে বিপক্ষ শক্তির সাথে লড়াইয়েও নামতে হয়। লড়াইয়ের মাধ্যমেই তাকে অংশ নিতে হয় ইসলামের প্রতিষ্ঠায়। আল্লাহর সাহায্যকারি রূপে তার আসল রূপটি প্রকাশ পায় তো এমন লড়াইয়ের মাধ্যমেই। নামায, রোযা, ও হজ্জ-পালন ও ইসলামী জ্ঞানার্জনের মূল লক্ষ্য তো ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর সাহায্যকারি রূপে গড়ে উঠার প্রয়োজনীয় সামর্থ্য সৃষ্টি করা। কিন্তু মোমেনের জীবনে যদি সে সামর্থ্যই গড়ে না উঠে তবে সেগুলি কি আদৌ ইবাদত? নিছক নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের মধ্যে প্রকৃত ঈমানদার নিজের ধর্ম-কর্ম সমাপ্ত করে না, বরং আরো বহুদূর সামনে এগিয়ে যায়। আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের লক্ষ্যে যেখানে যা কিছু অপরিহার্য সেটিই সে করে। এ লক্ষ্যে দ্বীনের প্রচারে যেমন আত্মনিয়োগ করে এবং পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর অতিক্রম করে নানা দেশে যায়, তেমনি মানুষকে সুসংগঠিত করে এবং প্রশিক্ষণ দেয়। সে যেমন রাজনীতিতে অংশ নেয়, তেমনি বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ময়দানেও অবিরাম লড়াই করে। এরূপ আমৃত্যু জিহাদে থাকাটিই তো ঈমানদারী। এবং তা থেকে দূরে থাকাটিই হলো বেঈমানী ও মুনাফিকি।
যে নিয়েত বাঁচা ও মৃত্যুতে
ঈমানদারের নিয়েতটি শুধু নামায-রোযা-হ্জ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতের ক্ষেত্রগুলোতেই থাকলে চলে না, নিয়েত থাকতে হয় বাঁচা এবং মরার ন্যায় মৌলিক ইস্যুতেও। সে নিয়েতই ব্যক্তিকে পথ দেখায়, কী ভাবে বাঁচতে হবে এবং কোথায় প্রাণের কুর’বানী পেশ করতে হবে -সেটি। মহান আল্লাহতায়ালা সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও শিখিয়েছেন পবিত্র কুর’আনে। বলা হয়েছে, “বল (হে মুহম্মদ), নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার বেঁচে থাকা ও মৃত্যু একমাত্র রাব্বুল আলামিনের জন্য।” উপরুক্ত আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারের জান, মাল ও সামর্থ্যের বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেটি হলো, তাঁকে বাঁচতে হয়, একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য পূরণে।
প্রতিটি ব্যক্তির হাতে মহান আল্লাহতায়ালার আমানত রূপে তুলে দিয়েছেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রহস্যকে। এ পৃথিবীর সকল সৃষ্টির মাঝে একমাত্র মানুষের জন্মের শুরুটি পৃথিবীর উর্দ্ধে আসমানে এবং বসবাস ছিল জান্নাতে। সেখান থেকে নামানো হয়েছে এ পৃথিবীর বুকে। অন্য কোন জীবের ক্ষেত্র সেটি ঘটেনি। একারণেই পৃথিবীর সকল সৃষ্টির মাঝে মানব সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রতিটি মানব-দেহে রয়েছে বহু হাজার কোটি জীবকোষ। এর একটিতে যে জটিল কম্পিপিউটর লুকিয়ে আছে সেটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কম্পিউটারেও নেই। জীবকোষের ক্ষুদ্র জিনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে বহু মিলিয়ন ডাটা। বিশ্বের তাবত বিজ্ঞানীদের সামর্থ্য নেই এমন একটি জীব কোষ নির্মাণের। মানব ভাগ্যবান যে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ এ সৃষ্টিকে গচ্ছিত রেখেছেন প্রতিটি ব্যক্তির কাছে। তার উপর অর্পিত দায়িত্ব হলো, আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত বিশাল এ বিস্ময়কর সামর্থ্য ও প্রতিভা নিয়ে একমাত্র মহান আল্লাহর ইবাদত করবে। তাঁর এ শ্রেষ্ঠ সামর্থ্যকে শয়তানের এজেন্ডায় লাগানোর চেয়ে বড় গাদ্দারী বা খেয়ানত আর কি হতে পারে? এবং তার শাস্তিও গুরুতর। এবং সেটি অনন্ত কালের জন্য জাহান্নামের আগুন।
পবিত্র কুর’আনে জীবেন মূল এজেন্ডাটি বেঁধে দেয়া হয়েছে এভাবে, “ওয়া মা খালাকুতুল জিন্না ওয়াল ইনসানা ইল্লা লি ইয়াবুদুন।” অর্থ: আমি মানুষ ও জিনকে এ ভিন্ন আর কোন কারণে সৃষ্টি করেনি যে তারা একমাত্র আমার ইবাদত করবে। কিন্তু সে আমানত যদি নিয়োজিত হয় মূর্তিপূজায় বা ইসলামের বিপক্ষ শক্তির বিজয় বা গৌরব বাড়াতে, তবে তার চেয়ে জঘন্য গাদ্দারী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ আর কি হতে পারে? যে কোন আদালতে হাজার টাকার তছরুফে বা খেয়ানতেও কঠোর শাস্তি হয়। কিন্তু এখানে যে খেয়ানতটি হচ্ছে তা তো বহু লক্ষ বা বহু কোটি টাকার নয়। মানব দেহের একটি ক্ষুদ্র অঙ্গকেও দুনিয়ার তাবত সম্পদ দিয়ে কি কেনা যায়? সমগ্র হিমালয় যদি সোনা হয়ে যায়, তা ব্যয় করে কি একটি হৃৎপিন্ড বা মগজ তৈরী করা যায়? কিন্তু সে আমানত যদি ব্যয় হয় শয়তানী শক্তির গৌরব বাড়াতে, তবে সেটি কি ক্রোধ বাড়াবে না মহান আল্লাহতায়ালার? এটি তো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এমন খেয়ানতের পর সে কি মাফ পেতে পারে মহান আল্লাহর আদালতে? এমন অবাধ্য বান্দা কি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেতে পারে? যার অন্তরে সামান্যতম ঈমান আছে -সে কি কখনো এমন অবাধ্যতায় লিপ্ত হতে পারে? ঈমানদার ব্যক্তি তাই রাজা-বাদশাহ-দল-নেতা-ভাষা-ভূগোল বা জাতীয় স্বার্থের বিজয়ে এ গচ্ছিত আমানতকে ব্যয় করেনা। বরং সেটিকে সে সদাসর্বদা নিয়োজিত রাখে একমাত্র আল্লাহর হুকুমের আনুগত্যে ও ইসলামের বিজয়ে।
দুনিয়াদার বা সেক্যুলার ব্যক্তির কাছে গুরুত্ব পায় চাকুরি-বাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘরবাড়ী ও সন্তান-সন্ততির কল্যাণ, কিন্তু গুরুত্ব পায় না ইসলামের বিজয়। ইসলামের বিজয় তার কাছে চিহ্নিত হয় সাম্প্রদায়িক পশ্চাতপদতা রূপে। পার্থিব কল্যাণের আশায় এমন সেক্যুলারিস্টগণ নিজ গৃহ বা প্রতিষ্ঠানে মৌলভী ডেকে দোওয়ার মজলিস বসায়, পীরের মজলিসেও ধর্ণা দেয়। কিন্তু সে দোওয়ার জলসায় গুরুত্ব পায় না জিহাদের সামর্থ্য অর্জন বা সে পথে শহীদ হওয়ার আকাঙ্খা। অথচ সাহাবায়ে কেরাম শুধু নিজে নয়, অন্যকে দিয়ে দোয়া করাতেন যেন শাহাদত নসীব হয়। কারণ এটিকে তারা গণ্য করতেন জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন রূপে। পবিত্র কোরয়ানে বলা হয়েছে, “তোমরা ততক্ষন কোন কল্যাণই অর্জন করবে না যতক্ষণ না তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কুরবানী না করো।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ৯২ )। আর ব্যক্তির কাছে সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি হলো তার জীবন। লক্ষ লক্ষ মানুষ সে জীবন কুর’বানী করে নিজের দেশ, ভাষা, গোত্র, রাজা, নেতা, দল ও বিভিন্ন মতবাদের নামে। বিগত দুটি বিশ্বযুদ্ধে বহু হাজার মুসলিম জীবন দিয়েছে ব্রিটিশ ও ফরাসী সাম্রাজ্যবাদীদের বিজয়ী করতে। এরূপ প্রাণদান গুরুতর খেয়ানত।
কিন্তু মুসলিমকে জান ও মালের কুরবানী পেশ করতে হয় অন্যায় ও অসত্যের নির্মূলে ও ইসলামকে বিজয়ী করতে। তবে একাজে ঈমানী বল চাই। সে বল আসে কুর’আনের জ্ঞান থেকে। তাই যার মধ্যে সে কুর’আনের চর্চা নেই, তার মধ্যে সে ঈমানী বলও নেই। তাই কোন দেশে কুর’আন-চর্চার কীরূপ বেহাল অবস্থা -সেটি বুঝার জন্য মসজিদ-মাদ্রাসার গণনা করার প্রয়োজন নেই, জিহাদের অনুপস্থিতিই সেটি বলে দেয়। সাহাবায়ে কেরামের আমলে কি এতো মসজিদ-মাদ্রাসা ছিল? কিন্তু সে আমলে কুর’আন-চর্চা যে কতটা গভীর ছিল -সেটি তাদের মাঝে শাহাদতের প্রেরণাই বলে দেয়। শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবা সেদিন শহীদ হয়েছিলেন। ইসলামের বিজয় তো এসেছিল তাদের কুরবানী র বরকতে। তাদের নিজেদের বিপুল বিনিয়োগের ফলেই সেদিন সম্ভব হযেছিল আল্লাহর সাহায্য-লাভ -যার ওয়াদা মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে বার বার দিয়েছেন। প্রকৃত মুসলিমের জীবনে সবচেয়ে বড় ভাবনাটি হলো, কি করে সে সামর্থ্য অর্জন করা যায় সেটি। নবীজী (সা:)’র আমলে সাহাবাগণ তাই বহু মাইল দূর থেকে মরুর কঠোর আবহাওয়া সহ্য করে নবীজী (সা:)’র কাছে কুর’আন শিক্ষার জন্য ছুটে আসতেন। সে প্রবল প্রেরণায় বহু নিরক্ষর সাহাবী সেদিন কুর’আনের হাফিয হয়েছিলেন।
মোমেনের ঈমানদারী ও তার জীবনের মূল সফলতা তো যাচাই হয় সে কুরবানী র মাপকাটিতেই; ‘আমিও মুসলিম’ -এ দাবীর ভিত্তিতে নয়।। নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতসহ সকল ইবাদতের মূল লক্ষ্য তো সে সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা দেওয়া। যে ব্যক্তি সারা জীবন ইবাদত করলো অথচ সে সামর্থ্য অর্জনে ব্যর্থ হলো -তবে সে ইবাদতের সফলতা কোথায়? মুসলিম বিশ্ব কি আজ এমন বিফল ইবাদতকারীদের দিয়েই পূর্ণ হচ্ছে না? ফলে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় না বেড়ে বাড়ছে পরাজয়। অথচ মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন তাঁর ঈমানদার বান্দার জন্য। সে পুরস্কারের মাধ্যমে তিনি তাঁরই সৃষ্ট মাটির মানুষকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। তখন স্বল্প আয়ুর মানুষ লাভ করবে এক আনন্দময় অনন্ত জীবন। ব্যক্তির জীবনে এরচেয়ে বড় প্রমোশন আছে কি? এবং এর বিপরীতে সবচেয়ে বড় পদস্খলন, ডিমোশন ও শাস্তি হলো জাহান্নাম-প্রাপ্তি।
প্রশ্ন হলো, পরীক্ষা ছাড়া কি কোন প্রমোশন হয়? পরীক্ষা আসে তাই ঈমানদারের জীবনেও। বস্তুত দুনিয়ার জীবনটাই হলো সে পরীক্ষাকেন্দ্র। আল্লাহতায়ালা সেটিরই ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে: “তিনি মৃত্যু ও জীবন এজন্য সৃষ্টি করেছেন যে, তিনি পরীক্ষা করবেন তোমাদের মধ্যে কে আমলের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতর।” এ পৃথিবীটা তাই পরীক্ষা কেন্দ্র। এবং এ পার্থিব জীবনের মূল লক্ষ্য হলো, আমলে শ্রেষ্ঠতর হওয়ার পরীক্ষায় সফল হওয়া। এবং সেটি, আল্লাহর রাস্তায় জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি পেশ করার মধ্য দিয়ে। নিরাপদ ঘরে নফল ইবাদত, অবসরে ওয়াজের মহফিলে যোগদান, কিছু কুর’আন তেলাওয়াত, কিছু দানখয়রাত, কিছু ঘরোয়া আলোচনা, আপোষের রাজনীতি – এসবে কি সবচেয়ে প্রিয় বস্তুর কুরবানী হয়? সাহাবাগণ তাদের প্রিয় জান হাতে নিয়ে প্রবল কাফের বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁরা আহত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন বা বেঁচেছেন জিন্দা শহীদ রূপে। মুসলিমের জীবনে তাই দুই অবস্থা। হয় সে আল্লাহ-প্রদত্ত এ জীবনটি কুরবানী করবে মহান আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আনতে। সেরূপ নসীব যদি না হয়, তবে বেঁচে থাকবে আল্লাহর দ্বীনের সাক্ষীদাতা মুজাহিদ রূপে। এ দু’টি অবস্থা ছাড়া মুসলিমের জন্য তৃতীয় অবস্থা নেই। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে যেমন আল্লাহর পক্ষে সাক্ষী দেয়, তেমনি প্রতিক্ষণ সাক্ষী দেয় জীবিত অবস্থাতেও। আর এটিই তো ঈমানদার হওয়ার দায়বদ্ধতা। এমন ব্যক্তি বিছানায় মারা গেলেও তার মর্যাদা শহীদের সমান বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এবং সেটির উল্লেখ এসেছে নিম্মূক্ত হাদীসে। হযরত সাহলো বিন হুনাইফ (রা:)থেকে বর্ণিত: আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শাহাদতের জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিক ভাবে দোওয়া করে আল্লাহ তার মর্যাদাকে বাড়িয়ে শহীদের মর্যাদার সমান করে দেন -এমনকি সে যদি বিছানায়ও মারা যায়।” –(আল মুসলিম))। একই রূপ বর্ণনা এসেছে হযরত আনাস (রা:) থেকে। তিনি বর্ণনা করেছেন: আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আন্তরিক ভাবে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার জন্য প্রার্থনা করে আল্লাহতায়ালা তাঁকে সে মর্যাদা দিবেন -এমনকি সে যদি যুদ্ধক্ষেত্রে মারা না যায় তবুও।” –(মুসলিম শরীফ)। মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো আল্লাহর রাস্তায় জানমালের কুরবানী র সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি এবং সুযোগ এলেই স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে অংশগ্রহণ। নিজেকে মুসলিম রূপে নিজেকে পরিচয় দিল অথচ আগ্রহ নেই আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী তে –সেটি কি ঈমানের পরিচয়? নবীজী (সা:)’র আমলে এমন কোন সাহাবা ছিলেন কি যার মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী পেশের আগ্রহ ছিল না? তারা অর্থ, সময় ও শ্রমদানেই শুধু নয়, দু’পায়ে খাড়া ছিলেন এমনকি প্রাণদানেও। আদর্শ মুসলিম সমাজ তাই জিন্দা শহিদদের সমাজ। এজন্যই প্রকৃত মুসলিম সমাজে অতি দ্রুত উন্নত মানুষ ও সে সাথে উন্নত সভ্যতা নির্মিত হয়। কারণ, শহীদ হওয়ার প্রেরণায় বিলুপ্ত হয় ব্যক্তির দুনিয়াবী লোভ-লালসা। কথা হলো, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদই শুধু নয়, প্রাণটিও আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিতে চায় সে অন্যের সম্পদে কেন হানা দিবে? এমন মানুষ সে সমাজে বৃদ্ধি পায়, সে সমাজকে দূর্নীতিমূক্ত করতে পুলিশের প্রয়োজন হয় না। এখানে প্রতিটি ঈমানদার পরিণত হয় দূর্নীতির বিরুদ্ধে অতন্দ্র প্রহরীতে।
মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের নিয়ত দেখেন। দেখেন আমল। হিসাব হয়, সে তার নিয়তে কতটা সাচ্চা ও সচেষ্ট। বান্দা তো পুরস্কার পায় তার নিয়ত ও নিয়ত অনুযায়ী প্রচেষ্ঠার প্রতিদান স্বরূপ। সফলতার জন্য নয়। কারণ সফলতা তো আল্লাহর দান। এখানে বান্দার করণীয় কিছু নেই, বাহবা পাওয়ারও কিছু নেই। ফলে সে সফলতার প্রতিদান স্বরূপ পাওয়ারও কিছু নেই। তাই প্রকৃত ঈমানদার সফলতা নিয়ে ভাবে না, ভাবে সাচ্চা নিয়েত ও আল্লাহর পথে নিজের বিনিয়োগটি নিয়ে। এখানে ব্যর্থ হলে তার বাঁচাটাই ব্যর্থ। খালিদ বিন ওয়ালিদের ন্যায় বহু সাহাবী মনেপ্রাণে শহীদ হতে চেয়েছেন। খালেদ বিন ওয়ালিদ সেনাপতি রূপে বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকে বলা হয় সাইফুল্লাহ তথা মহান আল্লাহতায়ালার তরবারী। কিন্তু শাহাদত তাঁর নসীবে হয়নি। সে নসীব হযরত আবুবকর (রা:)’র ন্যায় আরো অনেক প্রথম সারীর সাহাবীরও হয়নি। অপরদিকে অনেক সাহাবী তাদের জীবনের প্রথম জিহাদেই শহীদ হয়ে গেছেন। এজন্যই শাহাদতের প্রেরণা নিয়ে যারা আমৃর্ত্যু লড়াই করে তাদের সে নিয়ত ও মেহনতকেও মহান আল্লাহতায়ালা বিফল হতে দেন না। তাদেরও শহীদের সমপরিমাণ মর্যাদা দেন। সেটিরই ঘোষণা এসেছে উপরুক্ত হাদীসে।
কিন্তু আজ বাংলাদেশের মত দেশে যারা নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দিচেছ তাদের ক’জন সাক্ষী দিচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের পক্ষে? ব্যক্তির ঈমানের সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটে কাকে সে ভোট দেয়, কার পক্ষে সে লাঠি ধরে এবং কার বিজয়ে সে ফুর্তি করে –তা দেখে। কারো পক্ষে ভোট দেওয়া বা রাজপথে নামার অর্থ কি এ নয়, যার পক্ষে বা যে বিধান ও মেনিফেস্টোর পক্ষে সে ভোট দেয় -তার বিবেচনায় সে ব্যক্তিটি বা সে বিধানটিই শ্রেষ্ঠ? কোন মুসলিম কি ইসলামে অঙ্গিকারহীন কোন সেক্যুলার দল, নেতা বা প্রার্থীর পক্ষে এমন রায় দিতে পারে? তাতে কি তার ঈমান থাকে? অথচ বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশে বহু নামাযী, বহু রোযাদার ও বহু হজ্জ-পালনকারির দ্বারা সেটিই কি হচ্ছে না? এটি তো ইসলামের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট গাদ্দারী। এবং এমন ভোটদানের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটছে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে।
অধিকাংশ মুসলিম দেশে আজ আল্লাহর বিধান পরাজিত। সেটি কোন কাফের বাহিনীর দখলদারির কারণে নয়। বরং মুসলিম নামধারী সেক্যুলার শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়ায়। এবং সেটি সম্ভব হয়েছে মুসলিম নামধারী জনগণের ভোটে ও রাজস্বদানে। সে সাথে প্রশাসন, অফিস-আদালত, রাজপথসহ রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রতিটি ময়দানে তাদের সক্রিয় সমর্থণদানে। ইসলামের যে শত্রু শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ ছিল –সে শত্রু পক্ষটিই পাচ্ছে তথাকথিত নামাযী-রোযাদারদের বিপুল সমর্থণ। এভাবে ইসলামের শত্রু পক্ষকে বিজয়ী করা কি কম অপরাধ? এক্ষেত্রে একজন মুর্তপূজারী থেকে পার্থক্যটি কোথায়? নিছক তাসবিহ পাঠ ও নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতে কি অপরাধ থেকে মার্জনা মিলবে? এভাবে কি কখনো প্রতিষ্ঠা পাবে মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব? কথা হলো, যারা অর্থ দিয়ে, ভোট দিয়ে এবং বুদ্ধি দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে পরাজিত করে এবং বিজয়ী করে ইসলামের শত্রুপক্ষকে -মহান রাব্বুল আলামীন কি তাদের উপর প্রসন্ন হবেন? স্রেফ নামে মুসলিম হওয়াতে কি তিনি খুশি হবেন? রোজ হাশরের বিচার দিনে মহান আল্লাহতায়ালা কি এরূপ গাদ্দারদের জান্নাত দিয়ে পুরস্কৃত করবেন? লন্ডন, ১৫/০৯/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018