কাশ্মীরের জিহাদ এবং ভারতের অপ্রতিরোধ্য পরাজয়
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 28, 2021
- Bangla Articles, মুসলিম জাহান
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
দিশেহারা ভারত
সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের শক্তি যখন সমগ্র বিশ্বে শীর্ষে -তখন তারা দুই বার পরাজিত হয়েছিল আফগানিস্তানে। সোভিয়েত রাশিয়ার সামরিক শক্তি যখন তুঙ্গে তখনও তারা পরাজিত হয়েছিল আফগানিস্তানে। শুধু পরাজিত হয়নি, দেশটি ১৫ টুকরোয় বিভক্ত হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাস্ত্রের ভান্ডারে যখন দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ধ্বংসাকারি অস্ত্রশস্ত্র এবং আফগানিস্তানে হাজির হয়েছিল আরো ৪০টি মিত্র রাষ্ট্রের সৈন্য নিয়ে -তারাও বিজয় পায়নি আফগানিস্তানে। জিহাদের শক্তিই ভিন্ন। আফগানিস্তানে যে ব্রিটিশ, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরাজিত হয়েছে ভারত তার চেয়ে শক্তিশালী নয়। কাশ্মীরের জিহাদও দুর্বল নয়। সেটি বুঝা যায় কাশ্মীরে ৬ লাখ ভারতীয় সৈন্যের সমাবেশ নিয়ে।
কাশ্মীর নিয়ে ভারত এখন দারুন দিশেহারা অবস্থায়। তাদের পরাজয় দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হচ্ছে। ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশয়িার যে অবস্থা হয়েছিল – কাশ্মীরে ভারত সেদিকেই এগুচ্ছে। তবে পার্থক্য হলো, মার্কিন ও রুশদের পক্ষে তাদের অধিকৃত দেশে কোমড় বেঁধে লড়বার প্রচুর লোক ছিল। কারণ, আফগানিস্তানে রাশিয়ান কম্যুনিস্টদের পক্ষে লড়বার জন্য হাজার হাজার আফগান কম্যুনিস্ট ছিল। তেমনি ভিয়েতনামে মার্কিনীদের পক্ষে ছিল কম্যুনিজম বিরোধী হাজার ভিয়েতনামী সৈনিক। কিন্তু ভারত কাশ্মীরে কোন রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে হাজির হয়নি, বরং হাজির হয়েছে নিরেট সাম্রাজ্যবাদী সামরিক আগ্রাসন নিয়ে। চাপিয়েছে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের নৃশংসতা। তাছাড়া সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের সাথে রয়েছে কাশ্মীরীদের সাথে ভারতের অতীত প্রতারণার ইতহিাস। আছে আসমুদ্র-হিমাচল জুড়ে হিন্দু সাম্রাজ্য নির্মাণের স্বপ্ন। আছে মুসলিম বিরোধী প্রচন্ড সাম্প্রদায়িকতা। ফলে হিন্দু-সাম্রাজ্য নির্মাণে এ যুদ্ধটি ভারতীয় সৈন্যদের একাই লড়তে হচ্ছে। এবং সৈন্যদের প্রায় সবাই হিন্দু। অপর দিকে কাশ্মীরী মুজাহিদদের সাথে সমগ্র বিশ্বের বিশ্বের মুসলিম বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষদের সহমর্মিতা।
কাশ্মীরীদের স্বাধীনতার লড়াইটি দীর্ঘদিনের। শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে, যখন কাশ্মীরের হিন্দুরাজা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রজাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে ভারতে যোগ দিয়েছিল। কাশ্মীরী মুসলিমদের এ নায্য লড়াইকে ভারতীয় শাসক মহল সন্ত্রাস বললেও কাশ্মীরা তা বলে না। আগে লড়াইটি ছিল কাশ্মীরী জাতীয়তাবাদী লড়াই। কিন্তু এখন সেটি শতভাগ পবিত্র জিহাদ। এখানেই কাশ্মীরীদের লড়াইয়ের শক্তি। ভারতের জন্য বিপদ হলো, জিহাদ কোথাও একবার শুরু হলে তা আর থামে না। দিন দিন তা বরং শক্তিশালী হয়্। ভারতের কাশ্মীরে সেটিই হচ্ছে। সে জিহাদের মোকাবেলায় কাশ্মীরে ভারত ৬ লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে। শ্রীনগরসহ শহরগুলোর প্রতিটি শহরের প্রতিটি মহল্লায় এবং প্রতি রাস্তায় সারিবদ্ধ ভাবে ২৪ ঘন্টার জন্য অবস্থান নিয়েছে ভারতীয় সৈন্যরা। ভারত এরূপ বিশাল সংখ্যক সৈন্য ১৯৬৫ সালে ও ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও নিয়োজিত করেনি। অথচ এ বিশাল সৈন্য নিয়োগের পরও বিজয় মিলছে না। কতকাল এ যুদ্ধ চলবে সেটিও কেউ বলতে পারছে না। তাছাড়া যুদ্ধের মেয়াদ যতই বাড়ে, তাতে বাড়ে বিজয়ের বদলে পরাজয়ের সম্ভাবনা।
তাছাড়া প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো কাশ্মীরের পরিস্থিতইতে আরো জটিল করেছে। ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ছিল, মোদি সরকার সেটিকে রহিত করেছে। ভারতের অন্য রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের জন্য কাশ্মীরে ভূমি ক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। মোদি সরকার সেটিও তুলে দিয়েছে। এ ছাড়া হিন্দু অধ্যুষিত জম্মু, মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীর এবং বৌদ্ধ অধ্যুষিত লাদাখ – এ তিন অঞ্চলে কাশ্মীরকে বিভক্ত করেছে্। এছাড়া নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে গভর্নর শাসন জারি করেছে। তবে এতে লাভবান হয়েছে স্বাধীনতাকামীগণ।
কাশ্মীরে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ। অর্থাৎ ঢাকা শহরের জনসংখ্যার অর্ধেকের কিছু বেশী। অথচ তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারত সরকার ৬ লাখের বেশী সৈন্য মোতায়েন করেছে। ১৯৭১’য়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনা বাহিনী যে সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করেছিল -এ সৈন্যসংখ্যা তার চেয়ে ১৩ গুণের অধিক। জেনারেল নেয়াজীর মতে ১৯৭১’য়ে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানী সৈন্যদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫ হাজার। (সূত্র: The Betrayal of East Pakistan; General A.K. Niazi)। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ১৯৭১’য়ে ছিল সাড়ে সাত কোটি – কাশ্মীরের আজকের মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ১০ গুণ। ভারতীয় সেনাবাহিনী এ অবধি এক লাখেরও বেশী মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের হাতে বহু হাজার নারী ধর্ষিতাও হয়েছে। বহু হাজার মানুষকে তারা কারারুদ্ধ বা পঙ্গু করছে। কিন্তু তারপরও কাশ্মীরীদের স্বাধীনতার লড়াই থামা দূরে থাক -তা বরং দিন দিন প্রচন্ডতর হচ্ছে। জ্বলন্ত আগুণে লাগাতর পেট্রোল ঢাললে যা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী পেট্রেোল ঢালার সে কাজটি করছে লাগাতর হত্যা, ধর্ষণ, জেল-জুলুম ও গৃহে অগ্নসংযোগের মাধ্যমে।
আগুণে লাগাতর পেট্রোল ঢালার কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। কিছু কাল আগে ভারতীয় সেনাবাহিনী ৯ বছরের এক বালক এবং ১৫ জন তরুণকে অতি নৃশংস ভাবে হত্যা করে। এতে সমগ্র কাশ্মীর জুড়ে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের আগুণ। শ্রীনগর, বারামুল্লাহ, শোপর ও অন্যান্য নগরে হাজার হাজার তরুন ফিলিস্তিনী ইন্তেফাদার অনুকরণে ঢিল-পাথর নিয়ে ভারতীয় সৈন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাশ্মীরীদের এরূপ ইন্তেফাদা তথা গণজাগরণ ঠেকাতে ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরের প্রতিটি শহর ও গ্রামকে রণাঙ্গণে পরিণত করেছে। দেশ রণাঙ্গণ পরিণিত হলে নিজ বাহিনীর সৈনিক ছাড়া সবাইকে শত্রু মনে হয়। ভারতীয় বাহিনীর কাছে তাই হত্যাযোগ্য শত্রু মনে হচ্ছে রাজপথের নিরস্ত্র কাশ্মীরী যুবকেরা। ফলে কাশ্মীরে নিরপরাধ মানব হত্যা অতি মামূলী ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউকে হত্যা করার জন্য সন্ত্রাসী রূপে অভিযোগ আনাটাই যেন যথেষ্ট। কোনরূপ তদন্ত ভারতীয় সৈন্যদের কাছে অনর্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জিহাদই একমাত্র পথ
কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথটি ভারত নিজেই বন্ধ করে দিয়েছে। কাশ্মীরীদের সামনে এখন যে পথটি খোলা রয়েছে সেটি হলো জিহাদের। শান্তিপুর্ণ সমাধান তো তখনই সম্ভব হয় যখন সামরিক আগ্রাসনের বদলে জনগণের মতামত গুরত্ব পায়। ভারতের কাছে কাশ্মীরী জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব নাই। তাদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে একমাত্র অখন্ড ভারত নির্মাণের প্রকল্প। হিন্দুত্ববাদী বিজিপী ক্ষমতায় আসাতে সে অভিলাষ আরো তীব্রতর হয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছিল জাতিসংঘ; এবং সেটি ১৯৪৮ সালে। সে সময়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে কাশ্মীরে গণভোটের পক্ষে প্রস্তাব গৃহিত হয়েছিল। তাতে জনগণের অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছিল। তারা পাকিস্তানে যোগ দিবে, না ভারতে থাকবে, না স্বাধীন থাকবে –সে সিদ্ধান্ত তারা নিজে নিবে। পাকিস্তান এবং ভারত –উভয়ই সে প্রস্তাব মেনে নেয়। জাতিসংঘের ইতিহাসে এই প্রথমবার সর্বসম্মতিতে গৃহিত জাতিসংয়ের একটি প্রস্তাবকে বিবাদমান দুই পক্ষই মেনে নেয়। মার্কিন এ্যাডমিরাল নিমিটজের উপর দায়িত্ব দেয়া হয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
কিন্তু ভারত সরকার সে গণভোটে পরাজয়ের গন্ধ পেয়ে তা মেনে নিতে অস্বীকার করে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহারলাল নেহেরু ভেবেছিলেন তাঁর কাশ্মীরী বন্ধু শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটে ভারতকে বিজয়ী করতে সহায়তা দিবেন। কিন্তু ইতিমধ্যেই ভারতীয়দের আসল মতলব নিয়ে কাশ্মীরী নেতা শেখ আব্দুল্লাহর মোহভঙ্গ হয়। ভারত সরকারও তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারিনি। গণভোটে পরাজয় নিশ্চিত জেনে জাতিসংঘ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে ভারত সরকার লাগাতর বলা শুরু করে, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য্ অঙ্গ। এবং বলতে শুরু করে কাশ্মীর নিয়ে আর কোন আলোচনার প্রশ্ন উঠে না। বরং উস্কানীমূলক ভাবে একথাও বলে, আলোচনায় যদি বসতেই হয় তবে সেটি হবে কাশ্মীরের পাকিস্তানভূক্ত অংশকে কীভাবে ভারতের সাথে যুক্ত করা যায় তা নিয়ে। এ হলো কাশ্মীর সমস্যার সমাধান নিয়ে জাতিসংঘ প্রস্তাবনার সাথে ভারতের বিশ্বাসঘাতকতা।
প্রশ্ন হলো, ভারতীয়দের কাছে শান্তিপুর্ণ সমাধানের অর্থ যদি কাশ্মীরের ভারতভুক্তি হয় -তবে শত বছর আলোচনা চালিয়েও কোন লাভ হবে কী? ভারত সরকারের কথা, “আলোচনা চাই তবে কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ -তা নিয়ে আলোচনার কোন সুযোগ নাই।” ভারতে এরূপ মনভাবের কারণে শুধু পাকিস্তান সরকারই নয়, কাশ্মীরীরাও ভারতের সাথে আলোচনায় আগ্রহ হারিয়েছে। আগ্রহ হারিয়েছে মধ্যস্থতাকারি প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘও। এমনই এক পক্ষাপটে জনগণ বুঝতে পেরেছে জিহাদ ছাড়া স্বাধীনতার রাস্তা নাই।
অবনতি ভারত-পাকিস্তান সর্ম্পকে
ইতিমধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সর্ম্পকেও মারাত্মক অবনতি ঘটছে। পাকিস্তানের বালাকটে বিমান হামলা করে ভারত অবস্থাকে আরো উত্তপ্ত করেছে। পঞ্চাশের দশকে ভারত পানিচুক্তি করেছিল পাকিস্তানের সাথে। সে চুক্তিতে বিপুল ভাবে লাভবান হয়েছিল ভারত। সে সময় পাকিস্তানের সামরিক ও অর্থনৈতিক সংকট ছিল প্রকট। পাকিস্তানকে চলতে হতো বিশ্বব্যাংকের কৃপার উপর। বিশ্বব্যাংকের চাপেই পাকিস্তান সে সময় অসম পানচুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু এরপরও ভারত সে চুক্তি মানছে না। চুক্তি ভঙ্গ করে পানি তুলে নিচ্ছে সেসব নদী থেকে যে নদীগুলোর পানি পাকিস্তানের পাওনা। পাকিস্তানের সবগুলো নদী এসেছে কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে। ভারত শুরু করেছে সে গুলোর উপর বাঁধ-নির্মাণ। ফলে রাজনৈতিক বিবাদ এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিপদ এখন তুঙ্গে। পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে ৭০ বছর অপেক্ষা করেছে। কিন্তু এখন যদি পানি বিবাদে ৫ বছরও অপক্ষো করে তবে পাকিস্তানের বিরাট অংশ মরুভূমতি পরিণত হবে। তাই কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ না হলেও পানি নিয়েও যুদ্ধ অনিবার্য হতে চলেছে।
অপর দিকে কাশ্মীরের লড়াই এখন আর কোন সেক্যুলার যুদ্ধ নয়। রূপ নিয়েছে শতভাগ বিশুদ্ধ জিহাদে। রাজনীতি বহুলাংশই হাতছাড়া হয়ে গেছে কাশ্মীরের ও পাকিস্তানের সেক্যুলার নেতাদের হাত থেকে। হাতছাড়া হয়ে গেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত থেকেও। অতীতে তিনটি যুদ্ধ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা অর্জন করেছিল, মোজাহিদগণ চলমান জিহাদে তার চেয়ে বেশী অর্জন করেছে। ফলে বিপদ বেড়েছে ভারতের। আলাপ-আলোচনায় বসতে চাইলেও তারা পার্টনার পাচ্ছে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, আলাপ-আলোচনা লাগাতর চললওে তাতে কাজের কাজ কিছুই হবে না। শত চুক্তি হলেও তাতে জিহাদ যে থামবে -সে সম্ভবনাও কম।
ভারতের অপ্রতিরোধ্য পরাজয়
ভারতের বিপদ দিন দিন বাড়ছে। ভারতের জন্য আসন্ন বিপদের কারণ, আফগানিস্তানে মার্কিনীদের পরাজিত দশা। আফগানিস্তানের যুদ্ধটিই হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন যুদ্ধ। তবে ২০ বছর যাবত চলা এ যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন সফলতা পায়নি। মার্কিনী বাহিনী এখন পলায়নের রাস্তা খুঁজছে। পলায়নের পর্বটি নিরাপদ করতে দারুণ ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের উপর। নইলে সৈন্য ও রশদ-সামগ্রী নিরাপদে ফেরত নেওয়াই কঠিন হবে। কারণ, ঘরে ফেরার পথে লোটাকম্বল সাথে নিয়ে য্দ্ধু লড়া যায় না। তাই এ মুর্হুতে পাকিস্তানের উপর বেশী চাপ প্রয়োগের সুযোগ মার্কিনীদের হাতে নাই। তাই এতো দিন কাশ্মীরে পাকিস্তানীদের পরিচালিত জিহাদ থামাও বল মার্কিনীদের উপর ভারত সরকার যেরূপ চাপ দিত -সে সুযোগ এখন নাই। তাছাড়া আফগানিস্তান যখন সোভিয়েত রাশিয়ার দখলে ছিল তখন আনন্দে ভারত ডুগডুগি বাজিয়েছিল। সে খবর মার্কিনীরাও যেমন জানে, তেমনি তালবানগণও জানে। তালেবানগণ তাই প্রচন্ড ভারত বরিোধী। এবং অচিরেই আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় তারাই আসছে। এখানেই ভারতের জন্য বিপদ। ভারত থেকে তারা প্রতিশোধ নিবে -সেটাইি স্বাভাবিক। অপর দিকে কাশ্মীরের মুজাহিদগণ পাবে তাদের ঘনিষ্ট মিত্র। তাছাড়া জিহাদ কখনোই কোন ভৌগলিক সীমান্তে সীমিত থাকে না। ফলে আফগানিস্তানের জিহাদ যে নিজ ভূমিতে সীমিত না থেকে যে কাশ্মীরেও প্রবেশ করবে -সেটিই স্বাভাবিক। ভারতের হৃৎপিন্ডে এজন্য কম্পন শুরু হয়েছে।
অপরদিকে সোভিয়েত দখলদারীর সময় ভারতীয় চরগণ আফগানিস্তানে রুশদের ছত্রছায়ায় বসে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উস্কানী দিয়েছিল। কারণ, ভারতের পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রকল্প ১৯৭১’য়ে শেষ হয়নি। ভারত চায়, অবিশিষ্ট পাকিস্তানও খন্ডিত হোক। কিন্তু তালেবানদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ায় তল্পিতল্পা সমেত ভারতীয় চরগণ কাবুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। তালেবানদের পরাজয় এবং মার্কিনীদের দখলদারীর প্রতিষ্ঠার পর ভারত সরকার আবার সেই একই ষড়যন্ত্র শুরু করে। বেলুচিস্তানের বিচ্ছন্নবাদীরা আবার পেতে শুরু করে ভারত থেকে প্রচুর অর্থ ও অস্ত্র। ফলে পাকিস্তাানের নানা শহরে শুরু হয় বোমা বি্স্ফোরণ।
তাই ভারতের সাথে পাকিস্তানের বিরোধ শুধু কাশ্মীর নিয়ে নয়। আরো বহু বিষয় নিয়ে। তবে রাজনীতির হাওয়া এখন ভারতের বিরুদ্ধে। ভারত এখন প্রবলতর এক জিহাদের মুখোমুখী। বিগত ২০ বছরেও যে জিহাদকে ভারতীয় সেনা বাহিনী পরাজিত করতে পারিনি, আগামী ২০ বছরে যে পারবে -সে সম্ভবনা ক্ষীণ। ভারতের জন্য মাওবাদী নকশালদের পরাজিত করা সহজ। কিন্তু অসম্ভব হলো জিহাদকে পরাজিত করা। কারণ, জিহাদে পক্ষ শুধু দুটি নয়, বরং এখানে থাকে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ। ফলে জিহাদের ময়দানে হাজির হন তাঁর ফেরেশতাগণ। তাই জিহাদ শতভাগ বিশুদ্ধ হলে তার পরাজয় নাই। সেক্যুলার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ থেকে জিহাদের এখানেই মূল পার্থক্য। অতীতে সোভিয়েত রাশিয়া তাই আফগানিস্তানে জিততে পারিনি। পারছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার মিত্রগণ। ফ্রান্স জিততে পারিনি আলজিরিয়াতে। ভারতের রাজনীতিকগণ সেটি টের না পেলেও দেশটির সেনাবাহিনী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
বিরামহীন রক্তক্ষরণের মুখে ভারত
তাছাড়া প্রতিটি যুদ্ধের খরচই অতি বিশাল। যুদ্ধে শুধু সৈনিকদেরই রক্তক্ষরণ ঘটায় না, গভীর রক্তক্ষরণ ঘটায় অর্থনীতিতে। তাই যারা উন্নয়ন চায় তারা যুদ্ধকে পরিহার করে। তাছাড়া ভারতের অর্থনীতিতে এখন দারুন মন্দা। অর্থনৈতিক উৎপাদন এখন শূণ্যের কোঠায়। এরপর কোভিড ১৯’য়ের কারণে দারুন মহামারি লেগেছে অর্থনীতিতে। তাছাড়া ভারত হচ্ছে social exclusion’য়ের দেশ। যে দেশ উন্নতি চায় সে দেশটি চায়, দেশের প্রতিটি মানুষ উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় শামিল হোক। তারা নেয় social inclusion’য়ের পলিসি। বাগানের সবগুলো গাছ ফল দিলে্ই তো উৎপাদন বাড়ে। কিন্তু উগ্র মুসলিমবিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষের কারণে ভারতে সেরূপ জনকল্যাণমূলক মহৎ নীতির কোন স্থান নাই। ফলে ২০ কোটি মুসলিম এবং ২০ কোটি দলিত –এ ৪০ কোটি মানুষকে উন্নয়নের প্রক্রিয়ার ধারে কাছে আসতে না দেয়াই ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের নীতি। বিজেপির ক্ষমতায় আসাতে সে নীতি আরো তীব্রতর হয়েছে্। একারণেই ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের অর্থনীতি ১৩ কোটি মানুষের জাপানের চেয়েও ক্ষুদ্রতর।
একজন সৈনিককে রণাঙ্গণে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বছর খরচ হয় এ মিলিয়ন তথা ১০ লাখ ডলার। এটা ঠিক, একজন ভারতীয় সৈন্যকে রণাঙ্গণে রাখতে ১০ লাখ ডলার খরচ হয় না। কারণ, মার্কিন সৈনিক জীবনযাত্রার যে মান, সে মান ভারতীয় সৈনিকদের নাই। কিন্তু সে খরচ কি গড়ে মার্কিনীদের চেয়ে ২০ গুণ কম অর্থাৎ আধা লাখ ডলারও হবে না? এবং বছরে মাথা পিছু খরচ আধা লাখ ডলার হলে তাতে ৬ লাখ সৈন্যকে শুধু রণাঙ্গণে রাখতেই খরচ হবে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া আছে অস্ত্রের খরচ। ফলে ২০ বছরে খরচ হবে ৬০০ বিলিয়ন ডলার। ফলে পাকিস্তানের জন্য এটি এক মহা সুযোগ। তাদের চিরশত্রু এখন ফাঁদে পড়েছে। ফলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুদ্ধ শুরু করার কোন প্রয়োজনই নাই। ভারতীয় সেনা বাহিনী রণাঙ্গণে এরূপ বিশ বা তিরিশ বছর ফেঁসে থাকলেই তো তাদের লাভ।
দেহ যত বিশালই হোক, লাগাতর রক্তক্ষরণ হলে হাতিও নির্জিব হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। ভারত কোন অর্থনৈতিক হাতি নয়, বরং দুনিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠির বসবাস হলো ভারতে। তাছাড়া দেশটিতে চলছে গভীর অর্থনৈতিক রক্তক্ষরণ। কাশ্মীবের যুদ্ধ সে রক্তক্ষরণ তারা তীব্রতর করছে্। অনুরূপ রক্তক্ষরণের কারণেই সোভিয়েত রাশিয়ার ভেঙ্গে ১৫টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। ভারত কি সেদিকেই এগোচ্ছে না? ফলে কাশ্মীরী জনগণ নয়, বরং শিখ, মেজো, নাগা, মনিপুরীসহ আরো বহু মজলুম জনগণই যে ভারতের জিন্দান ভেঙ্গে স্বাধীন হবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? ২৫/০১/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
EXCELLENT ARTICLE. I LIKE IT.