কীরূপে সফল হবে চলমান এ আন্দোলন?

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অতি বিস্ময়কর এ আন্দোলন

সাবাশ! সাবাশ বাংলাদেশের সাহসী ছাত্র সমাজ! আন্দোলনের ক্ষেত্রে তারা নতুন ইতিহাস গড়েছে। ১৯৬৯’য়ের স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় আমি নিজে ঢাকার রাজপথে ছিলাম। স্বচোখে দেখিছি সে আন্দোলন। ঢাকার রাজপথে থেকে দেখেছি ১৯৯০’য়ের স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধ গণআন্দোলন। কিন্তু বাংলাদেশে আজকের ছাত্রসমাজ সরকার বিরোধী আন্দোলনকে যে উচ্চতায়, যে তীব্রতায় এবং যে বিস্তারে নিয়ে গেছে তেমনটি এর পূর্বের কোন আন্দোলনেই ঘটেনি। পূর্বে কখনোই এতো বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে রাজপথে দেখা যায়নি। এবার রাজপথে নেমেছে এমন কি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও। রাজনৈতিক সচেতনতার এক নতুন মাত্রা। এটি এক বিস্ময়কর বিষয়। এটি ইতিহাস হয়ে থাকবে এবং ভবিষ্যতে অনুপ্রেরণার উৎস হবে।

আন্দোলনের এ বিস্ময়কর মাত্রার কারণ কি শুধু চাকুরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়? না, শুধু কোটা নয়। বরং সেটি হলো হাসিনার ন্যায় মানবতাশূণ্য, বিবেকশূণ্য এক ভয়ানক অপরাধীর শাসন। তার অপরাধ যেমন বিচারবহির্ভুত হত্যা, শাপলা চত্বরের গণহত্যা,  চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতির, তেমনি অপরাধ হলো, ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং ভারতের প্রতি নতজানু নীতি ও দেশ বিক্রয়ের। দুর্নীতিকে সে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে তার পিয়নও ৪০০ কোটি টাকার মালিক। সে হেলিকপ্টারে চলাফেরা করে। এসব নিয়ে বহুদিন ধরেই জনগণের মনে ঘৃণার লাভা জমছিল, শুধু বিস্ফোরণের অপেক্ষায় ছিল। সে বিস্ফোরণটি ঘটিয়ে দিল ঢাকার হাইকোর্টের সংরক্ষিত কোটা বহালের রায়। জালেমেরা এভাবেই নিজেদের গর্ত নিজেরা খোদাই করে।   

  

বিরোধী দলগুলির যা করণীয়

প্রশ্ন হলো, ছাত্রগণ যে অভূতপুর্ব আন্দোলন গড়ে তুললো -তা থেকে কি বিরোধী দল এবং দেশের জনগণ ফসল তুলতে পারবে? পাকা ফসল দীর্ঘকাল ক্ষেতে থাকেনা, তেমনি আন্দোলনও দীর্ঘকাল মাঠে থাকে না। তাই ক্ষেতের ফসলের ন্যায় আন্দোলনের ফসলও তাই দ্রুত ঘরে তুলতে হয়, নইলে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্র বিএনপি, জামায়াত, হিফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য বিরোধী দলের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মত। আওয়ামী লীগ এ মুহুর্তে বিরোধী দলে থাকলে দেখিয়ে দিত রাজনীতির ফসল কিভাবে ঘরে তুলতে হয়। আন্দোলনকে এতো উচ্চ মাত্রায় উঠতে হতো না, ইতিমধ্যেই সরকারে পতন ঘটতো।  ১৯৯০’য়ের এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ বিরোধী শিবিরে ছিল বলেই আন্দোলন এতোটা তীব্র হওয়ার আগেই এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল।

ছাত্ররা বিপুল সংখ্যায় রাস্তায় নামলেও মনে হচ্ছে বিরোধী দলগুলো রাস্তায় নামার সাহস পাচ্ছে না। তাদের মধ্যে সম্ভবতঃ এখনো রয়ে গেছে প্রচণ্ড হাসিনাভীতি। রয়েছে হাসিনা টিকে গেলে জেলে যাওয়ার ভয়। ফলে মনে হচ্ছে এখনো তারা ঘরে বসে আঙ্গুল চুষছে এবং হিসাব কষছে, আন্দোলন কোন দিকে যায় -তা নিয়ে। বিএনপি ভাবছে সেপাহী-জনতা যেভাবে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, তারা তারেক জিয়াকেও সেভাবে ক্ষমতা বসাবে। ভাবছে তারেক ছাড়া জনগণের সামনে বিকল্প নাই। হয়তো সে ধারণা নিয়েই তারা নিজেরা ময়দানে তেমন নাই। অথচ বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হিফাজতে ইসলাম একত্রে ময়দানে নামলে বাংলাদেশের প্রতিটি থানা ও প্রতিটি জেলা ইতিমধ্যেই হাসিনামুক্ত হয়ে যেত। কিন্তু আজও তা হয়নি। জনগণ তাদের সে ব্যর্থতা দেখছে। বিরোধী দলগুলির বড় ব্যর্থতা হলো, বিগত ২০ বছরেও তারা কোন সফল আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। তারা শুধু নীরবে মার খেয়েছে। হাসিনাভীতি ও ভারতভীতি তাদের মাঝে এতোটাই প্রকট যে, ছাত্ররা তাদের সামনে এক তীব্র আন্দোলন উপহার দিলেও তারা ময়দানে নামতে ভয় পাচ্ছে। বাঘকে দীর্ঘকাল খাঁচায় রাখেলে সে যেমন বাইরে বেরুতে চায়না, সেরূপ অবস্থা বিরোধী দলগুলির। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের কুফল। বিরোধী দলের নেতারা ভাবছেন, আন্দোলন ব্যর্থ হলে তারা বিপদে পড়বে। এরূপ ভীতুদের দিয়ে কি কোন দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সুরক্ষা হয়? তারা হয়তো ভাবছেন, ছাত্ররাই তাদের হাতে বিজয় তুলে দিবে। আন্দোলনের ফসল তো এভাবে কখনো ঘরে উঠেনা।

বিএনপি’র মূল সমস্যাটি হলো তারা কোনদিনই আন্দোলনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যায়নি। এমন কি জিয়াউর রহমানও নন। জিয়াউর রহমানকে যারা ক্ষমতায় এনেছিল তাদের কেউই বিএনপি’র ছিল না। কারণ বিএনপি’র জন্মই তখন হয়নি। তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল রাজপথের সিপাহী-জনতা। অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীর এবং হিফাজতে ইসলামেরও সেরূপ কোন সফল আন্দোলনের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তারা পারে শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কিছু দলীয় মিছিল ও মিটিং করতে। এর বেশী কিছু তারা অতীতে করে দেখায়নি। কারণ, দলীয় কর্মী ছাড়া দেশের সাধারণ জনগণকে বিপুল সংখ্যায় আন্দোলনে টানার সামর্থ্য তাদের নাই। এখানেই রয়েছে চলমান এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। হাসিনা চেষ্টা করবে সে দিনেরই অপেক্ষা যে করেই হোক আরো কিছুকাল ক্ষমতায় থাকতে। তাই এ আন্দোলনকে বিজয়ী করতে হলে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হিফাজতে ইসলামী’র উচিত চলমান আন্দোলনে সর্বসামর্থ্য সত্বর যোগ দেয়া। এবং সে সাথে দলীয় স্বার্থে এ আন্দোলনকে হাইজ্যাক করার অপকৌশল পরিহার করা।   

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ আন্দোলন আর কতদিন বেঁচে থাকবে? ছাত্ররা আর কত দিন এ আন্দোলনকে ময়দানে টিকিয়ে রাখবে? কারণ তাদের বিরুদ্ধে নেমেছে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী। সে সাথে ময়দানে হাজির হয়েছে হাজার ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার এজেন্ট। ছাত্রদের একার পক্ষে কি এতো বড় সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে টিকে থাকা সম্ভব? সামনে পথ একটাই। সেটি হলো, বিরোধীদলগুলির উচিত দ্রুত একত্রে ময়দানে নামা ও দেশকে হাসিনামুক্ত করা। সময় দ্রুত হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এ আন্দোলন ব্যর্থ হলে সকল দায় গিয়ে পড়বে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হিফাজতে ইসলামসহ সকল বিরোধী দলের উপর। তাদের এ ব্যর্থতাকে দেশবাসী কখনো ক্ষমা করবে না। ভবিষ্যতে কখনো আন্দোলনে ডাকলে ছাত্ররাও সাড়া দিবে না। তাছাড়া এ যাত্রায় খুনি হাসিনা বেঁচে গেলে সে হাজির হবে নতুন কৌশল, নতুন অস্ত্র ও নতুন বিদেশী পার্টনার নিয়ে। হয়তো ভারতীয় সৈন্যের জন্য বাংলাদেশে ঘাটি নির্মাণেরও অনুমতি দিবে। অতএব এ আন্দোলনে হেরে গেলে ক্ষতিটি হবে অভাবনীয় ও ভয়ংকর।

                                                 

নিয়েত করুন জিহাদের

ঈমানদারের প্রতিটি আমলকে ইবাদতে পরিণত করতে হয়। তেমনি রাজনীতিকেও। সেটি খালেছ নিয়েতে মাধ্যমে। নিয়েতে থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ও এজেন্ডার সাথে একাত্মতা এবং তাকে খুশি করার তাড়না। রাজনীতির ইবাদত হলো জিহাদ। জিহাদের মাধ্যমেই মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ও এজেন্ডা বিজয়ী হয়। প্রতিষ্ঠা পায়  তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইন। এবং নির্মূল হয় দুর্বৃত্তির এবং প্রতিষ্ঠ পায় সুবিচার ও সুনীতি।  

বুঝতে হবে, আজকের  ছাত্র আন্দোলন নিছক কোন আন্দোলন নয়, এটি এক শতভাগ বিশুদ্ধ জিহাদ। এখন শুধু চাই এ লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারীদের জিহাদের নিয়েত। যখন এরূপ জিহাদ শুরু হয় তখন নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকা মুনাফেকি। আর মুনাফিকগণ তো কাফেরদের চেয়েও নিকৃষ্ট। তখন নামাজ-রোজা এবং হজ্জ-যাকাত পালন করেও সে মুনাফিকগণ প্রতিশ্রুত আযাব থেকে মুক্তি পায়না। বুঝতে হবে, মহান আল্লাহতায়ালা শুধু মানুষের নামাজ-রোজার হিসাবই নেন না, দেখেন তার রাজনৈতিক ভাবনা, কর্ম ও দায়িত্বপালনও।

চলমান লড়াইটি বিশুদ্ধ জিহাদ হওয়ার কারণ, এ লড়াই শেখ হাসিনার ন্যায় নৃশংস জালেম, শাপলা চত্বরের গণহত্যার খুনি, ইসলামের শত্রু, নিষ্ঠুর দুর্বৃত্ত, ভারতের সেবাদাস ও নির্লজ্জ ভোটডাকাতের বিরুদ্ধে। এতো বড় অপরাধী জেনারেল আইয়ুব খান ও জেনারেল এরশাদ ছিল না।  বরং বলা যায়, বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে এতোবড় অপরাধী কোন কালেই শাসন ক্ষমতায় বসেনি। বাংলাদেশের মুসলিমদের সবচেয়ে কদর্য ব্যর্থতা হলো, তারা ১৫ বছর যাবত এ অপরাধীর শাসন মেনে নিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে এখন সুযোগ এসেছে সে ব্যর্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার। কোন বিবেকবান মানুষ কি তাই নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে?

মুসলিম জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো তার নিয়েত। প্রতিটি আমলের প্রতিদান বা সওয়াব নির্ভর করে তার নিয়েতের উপর। নিয়েত সহিহ না হলো শত কোটি টাকার দান এবং নিজের জীবন দান করেও কোন সওয়াব জুটে না। তাই মুসলিমকে যেমন নামাজ-রোযায় নিয়েত বাঁধতে হয়, তেমনি নিয়েত বাঁধতে হয় তার রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতেও। এটি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশে বর্তমান যে লড়াই চলছে তাতে শত শত মানুষ নিহত হবে। কিন্তু সে প্রাণদান করেও অনেকে জাহান্নামে যাবে শুধু নিয়েত সঠিক না হওয়ার কারণে। অথচ নিয়েতটি যদি মহানআল্লাহতায়ালার পথে জিহাদ হয় তবে সে নিহত হলে সাথে সাথে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাঁর জীবনে তখন আর কোন কবরের আযাব আসবে না। তাঁর কোন রোজহাশরও হবে না; কোন পুল সিরাতও আসবে না। তাঁর গুনাহগুলিকে করুণাময় মহান আল্লাহতায়ালা নেকীতে পরিণত করে দিবেন। সে প্রতিশ্রুতি পবিত্র  কুর’আনে বার বার শোনানা হয়েছে।  তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদের নিয়েত নিয়ে এ লড়াইয়ে নামা। তাছাড়া আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদ শুরু হলে সে জিহাদের মালিকানাটি চলে যায় সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার হাতে। তখন তাঁর পক্ষ থেকে সাহায্যও আসে। তখন প্রতিশ্রুত বিজয়ও আসে।

 

বাঁচুন সেক্যুলার আন্দোলনের ফেতনা থেকে

মুসলিমের জন্য ফরজ শুধু সূদ, ঘুষ, মদ, ব্যাভিচার থেকে বাঁচা নয়। বরং তাকে বাঁচতে হয় সেক্যুলারিজম ও সেক্যুলার আন্দোলন থেকে। ঈমানদারের প্রতিটি আন্দোলন বা লড়াইকে নিরেট জিহাদ হতে হয়। সেকুলারিজমের অর্থ ইহজাগতিক কল্যানের ভাবনা নিয়ে বাঁচা, কর্ম ও রাজনীতি করা এবং বুদ্ধিবৃত্তিতে লিপ্ত হওয়া। সেখানে পরকালে জবাবদেহীতার ভয় এবং জান্নাতের ভাবনা নিয়ে কাজ করা, রাজনীতি করা ও লড়াই করা সেকেলে ও মৌলবাদ গণ্য হয়। সেক্যুলারিজম তাই ইসলামী চেতনার প্রতিপক্ষ। প্রতিটি সেক্যুলার যুদ্ধই যেমন যুদ্ধাপরাধ, তেমনি প্রতিটি সেক্যুলার আন্দোলন হলো ফিতনা।

ঈমানদারকে তাই বাঁচতে হয় সেক্যুলার আন্দোলন বা সেক্যুলার রাজনৈতিক লড়াই থেকে। কারণ তাতে সওয়াবের বদলে কবিরা গুনাহ হয়। সে লড়াইয়ে প্রাণ গেলে জাহান্নামে যেতে হয়। অতএব যারা আন্দোলনে আছেন, তাদের জন্য হুশিয়ারী হলো: বাঁচুন সেক্যুলার রাজনৈতিক লড়াই থেকে এবং নিয়েত করুন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের। কারণ, সকল প্রকার সেক্যুলার আন্দোলনই ফিতনা। প্রশ্ন হলো, ফিতনা কি? ফিতনা হলো এমন সবকিছুই -যা অসম্ভব করে পূর্ণ ইসলাম পালন, সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ এবং সে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। ফিতনা অসম্ভব করে ঈমানের পরীক্ষায় পাশ করা। বাংলাদেশের বুকে ফিতনার হাতিয়ার হলো, সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা, সেক্যুলার রাজনীতি, সেক্যুলার বুদ্ধিবৃত্তি ও সেক্যুলার সংস্কৃতি। ফিতনা হলো সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, বর্ণবাদ, ফেরকাবাদ, ফ্যাসিবাদ, ও কম্যুনিজমের ন্যায় এমন সব মতবাদ যা সিরাতাল মুস্তাকীমকে আড়াল করে রাখে। এগুলির প্রবল জোয়ারের কারণেই  অসম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটিতে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। অসম্ভব করে রেখেছে দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। ফিতনা তাই মানব হত্যার চেয়েও অধিক গুরুতর অপরাধ -মহান আল্লাহতায়ালার সে বয়ান এসেছে সুরা বাকারার ১৭ নম্বর আয়াতে। কারণ, খুনিরা নিজ স্বার্থে খুন করে বটে, কিন্তু তারা মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে না। তারা মানুষকে জাহান্নামের দিকেও ডাকে না। কিন্তু সেটি করে ফিতনাসৃষ্টিকারীরা ।

 মনে রাখতে হবে, ইসলামের শত্রু, হিন্দুত্ববাদী ভারতের দাসী, দুর্বৃত্ত ভোটাকাত এবং নৃশংস জালেমের বিরুদ্ধে লড়াই কখনোই কোন মামূলী লড়াই হয়না, সেটি হয় বিশুদ্ধ জিহাদ। তাই যাদের নিয়েতটি  জিহাদের, তাদের হারাবার কিছু নেই। বরং তাদের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে নিয়ামত ভরা জান্নাত। আর সে সাথে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের বুকে এক সভ্য রাষ্ট্র, সংস্কৃতি ও সভ্যতা নির্মাণের। প্রয়োজন শুধু খালেছ জিহাদের নিয়েত। 

 

জিততেই হবে এ লড়াইয়ে

যে লড়াই শুরু হয়েছে, সে লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে। হেরে গেলে হাসিনার ন্যায় নৃশংস জালেম ফ্যাসিস্টের শাসন দীর্ঘায়ু পাবে। তখন বিজয় পাবে শয়তান ও তার অনুসারীরা। তখন অসম্ভব হবে এ বঙ্গীয় ভূমিতে শান্তিতে ও সভ্য ভাবে বসবাস করা। তখন শুধু গণতন্ত্রই কবরবাসী হবে না, কবরবাসী হবে সকল ভদ্রতা, মানবতা ও সভ্য জীবন যাপনের সকল আয়োজন। তখন শাপলা চত্বরের গণহত্যা শুরু হবে সমগ্র দেশজুড়ে। সে গণহত্যায় যোগ দিবে ভারত।

মনে রাখতে হবে সভ্য, ভদ্র ও স্বাধীন ভাবে বাঁচার বিশাল খরচ আছে। স্বাধীনভাবে বাঁচার সে মূ্ল্য দিতে গিয়ে ফিলিস্তিনের প্রায় ৪০ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু বিগত ৮ মাসে প্রাণ দিয়েছে। শেখ হাসিনাও বাংলাদেশকে আরেকটি গাজায় পরিণত করেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী খুনি নেতিয়ানহু এবং ভারতে প্রধানমন্ত্রী খুনি নরেন্দ্র মোদীর ন্যায় খুনি হাসিনাও ইসলাম ও মুসলিম উম্মার পরম শত্রু। নেতিয়ানহু ও মোদীর ন্যায় হাসিনার যুদ্ধও ইসলামের বিরুদ্ধে। সেজন্যই তো সে আলেমদের জেল দিয়ে ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আনন্দ পায়। সে আনন্দ পেতেই সে শাপলা চত্বরে গণহত্যায় নেমেছিল। নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় হাসিনাও বাংলাদেশের কোনে কোনে মূর্তি বসায়। ইসলামের এ মুর্তপ্রেমী খুনিকে অবশ্যই আমাদের চিনতে হবে এবং ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। প্রতিটি মুসলিম বাংলাদেশীর এ হলো ঈমানী দায়বদ্ধতা।

মনে রাখতে হবে, এ লড়াই শুধু খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে নয় বরং তার প্রভু ভারতের বিরুদ্ধেও। ভারতের বহু হাজার গোয়েন্দা ইতিমধ্যেই হাসিনার শাসন বাঁচাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যস্ত। ভারত একাত্তরের যে বিজয় পেয়েছিল সে বিজয়কে অবশ্যই ধরে রাখতে চাইবে। ভারত কখনোই ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাজার, করিডোর, রেলসড়ক যোগাযোগ হারাতে চাইবে না।  প্রচুর সম্ভাবনা আছে, বাংলাদেশের ভিতরে ভারত নামাতে পারে তার সেনাবাহিনীকে -যেমন নামিয়েছিল একাত্তরে। তখন আমাদের স্বাধীনতা বাঁচানোর লড়াই দীর্ঘতর হবে। সে জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার লড়াই তো লড়াই নিয়ে বাঁচার। সে লড়াই থেকে দূরে হটলে স্বাধীনতার স্বপ্নও ছাড়তে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা যখন স্বাধীন ভাবে বাঁচার সামর্থ্য দিয়েছেন, তখন ১৭ কোটি জনগণ কেন গোলামী নিয়ে বাঁচবে?

বুঝতে হবে, এ লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়া ছাড়া বাঙালি মুসলিমদের সামনে বিকল্প পথ নাই। অপর পথটি হলো পরাধীনতা ও গোলামীর। এবং সেটি ভারতের ন্যায় হিন্দুত্ববাদী শক্তির ও তার দাসদের অধীনে। তাই স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে জিহাদ এবং সে জিহাদে কুরবানী পেশের বিকল্প নাই। সেটিই হলো স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচ। এ মুহুর্তের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো, যারা ময়দানের লড়াইয়ে আছেন তাদের মধ্যে ইস্পাতসম একতা। বিভক্ত হলে বিজয় জুটবে না। তখন বিজয়ী হবে শত্রুপক্ষ। মহান আল্লাহ তা’আলা তাই বিভক্তিকে হারাম করেছেন এবং একতাকে ফরজ করেছেন। মনে রাখতে হবে আমাদের স্বাধীনতা বাঁচলেই আমাদের রাজনীতি ও ইজ্জত বাঁচবে। তখন বাঁচবে পূর্ণ ইসলামের পালনে স্বাধীনতা। তখন কুর’আনের তাফসির দেয়া, ঘরে জিহাদ বিষয়ক বই রাখা বা ইসলামী সংগঠনের সদস্য হওয়ার কারণে কাউকে জেলে যেতে হবে না। সে বিজয়ের দিনটি পেতে হলে ভারতের দাস খুনি হাসিনাকে হটিয়ে নিজ দেশের উপর নিজেদের দখলদারী অবশ্যই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  ২০/০৭/২০২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *