কুর’আন বুঝায় বাঙালী মুসলিমের অবহেলা ও অর্জিত মহাবিপদ
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 14, 2021
- বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
কেন অপরিহার্য কুর’আন বুঝা
মুসলিম জীবনের মূল দায়বদ্ধতাটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের প্রতি পূর্ণ গোলামী নিয়ে বাঁচা। এছাড়া আর কোন কারণে মানবকে সৃষ্টিই করা হয়নি। পবিত্র কুর’আনে মহান স্রষ্টার ঘোষণা: “ওয়া মা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসানা ইল্লা লি’ইয়াবুদু।” অর্থ: “এবং এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে জিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করিনি যে তারা ইবাদত করবে।” সফল তো তারাই হয় যারা পরম করুণাম স্রষ্টার এই এজেন্ডার সাথে একাত্ম হয়ে জীবন যাপন করে। শয়তানের মূল এজেন্ডা হলো স্রষ্টার বিরুদ্ধে মানুষকে বিদ্রোহী করা তথা ইবাদত থেকে হটানো। পরকালে কে জান্নাতে যাবে এবং জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচবে –তা পুরাপুরি নির্ভর করে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমের প্রতি পূর্ণ গোলামী নিয়ে বাঁচায় সফলতার উপর। গোলামীর আরবী পরিভাষা হলো ইবাদত। এবং গোলামকে আরবীতে বলা হয় আবেদ। ইবাদতের বিপরীত হলো বিদ্রোহ। মহান আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীকে আলো-বাতাস, নানারূপ পানাহার, ফলমূল ও প্রাকৃতিক নিয়ামতে পরিপূর্ণ করেছেন। সেগুলি ভোগের পূর্ণ আজাদীও দিয়েছেন, কিন্তু বিদ্রোহের অনুমতি দেননি। গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলো বিদ্রোহ। গোলামীর বদলে যারা বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচে তাদেরকে বলা হয় কাফের, ফাসেক ও জালেম। বিদ্রোহের শাস্তি হলো জাহান্নামের আগুন। সে বিদ্রোহটি যে শুধু যে মুর্তিপূজা, গরুপূজা, গৌতম বুদ্ধের পূজা, যীশুর পূজা বা নাস্তিকতার মধ্যে প্রকাশ পায় তা নয়, ধরা পড়ে রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদ, দেশ শাসনে স্বৈরাচার, আদালতে শরিয়তের বিলুপ্তি, অর্থনীতি সূদ, পোষাকে বেপর্দাগী এবং চেতনায় সেক্যুলারিজম, সোসালিজম ও ক্যাপিটালিজমের বিজয় নিয়ে বাঁচাতে।
প্রভুর পূর্ণ অনুগত তথা সফল গোলাম হতে হলে অতি জরুরি হলো তাঁর নির্দেশগুলো সঠিক ভাবে সরাসরি প্রভু থেকেই জেনে নেয়া। সে হুকুম গুলো জানাতেই নাযিল হয়েছে পবিত্র কুর’আন। মানব জাতির কল্যাণে এটিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান। এটিই হলো জান্নাতের পথে চলার একমাত্র রোডম্যাপ। এ পথটি জানতে হলে পবিত্র কুর’আন বুঝতেই হবে না। এ পৃথিবী পৃষ্টে সবাই পরকালের যাত্রী। ফলে সবার প্রয়োজন হলো এই রোড ম্যাপের। এ কুর’আন তাই শুধু মুফতি, ফকিহ ও আলেমদের জন্য নাযিল হয়নি, নাযিল হয়েছে প্রতিটি মানুষের জন্য। তাই ঈমানদারের দায়িত্ব হলো এ কুর’আনকে জীবনের প্রতিমুহুর্তের পথপ্রদর্শক কম্পাসে পরিণত করা। প্রশ্ন হলো, পবিত্র কুর’আন থেকে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমগুলো না জানলে গোলাম হওয়া সম্ভব কী রূপে? সে পথের খোঁজ পীর, দরবেশ, হুজুর বা অন্যদের থেকে জানতে গেলে কুর’আনী ইসলামের বদলে ফিরকাবাজী, দলবাজী ও নানারূপ বেদয়াতী শুরু হয়।
আজ মুসলিম বিশ্ব থেকে নবীজী’র ইসলাম -যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তী বিচার, শুরা ভিত্তিক শাসন, মুসলিম ঐক্য ও দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে লাগাতর জিহাদ তা বিলুপ্ত হওয়ার মূল কারণ, মুসলিমগণ সরাসরি কুর’আন থেকে ইসলাম না শিখে ফিরকাবাজ ও ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। ফলে অজানা রয়ে গেছে মহান আল্লাহতায়ালার অগণিত বয়ান তথা ঘোষণা। বহু হুকুম লুকানো হয়েছে স্বৈরাচারি শাসকদের এজেন্ডা পূরণে। এজন্যই সবার উপর ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ, আইনবিদ, হিসাববিদ ইত্যাদি পেশাদার হওয়া ফরজ নয় –এগুলো ফরজে কেফায়া; কিন্তু ফরজে আয়ীন হলো আলেম হওয়া। এজন্যই নামায-রোযা ন্যায় প্রত্যেকের উপর ফরজ হলো কুর’আন শিক্ষা। এছাড়া গুরুত্পূর্ণ কাজ মানবজীবনে দ্বিতীয়টি নাই। মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, “ইন্নামা ইয়াখশাল্লাহা মিন ইবাদিহিল উলামা।” অর্থ: একমাত্র জ্ঞানীগণই আল্লাহকে ভয় করে। এখানে জ্ঞানী বলতে কম্পিউটার বিজ্ঞানী, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, পরমানু বিজ্ঞানী বা কোন প্রফেসরকে বুঝানো হয়নি, বরং মহান আল্লাহতায়ালার জ্ঞানের যে বিশাল ভান্ডার তথা কুর’আন নাযিল করেছেন সে কুর’আনী জ্ঞানের জ্ঞানীকে বুঝানো হয়েছে। পবিত্র কুর’আনের উপরুক্ত আয়াতের অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাটি হলো, তাকওয়ার মূল উপাদান হলো পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান। তাই যার মধ্যে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান নাই সে মুসলিম হওয়ার যতই দাবী করুক না কেন, তার মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালার ভয় তথা তাকওয়া নাই। অথচ তাকওয়া হলো জান্নাতের চাবি। তাই মুসলিম হতে হলে জ্ঞানবান হতেই হবে। এছাড়া বিকল্প নাই। মুসলিম জীবনে ইলম ও ঈমান একত্রে চলে। দেহ বাঁচাতে যেমন পানাহার খুঁজতে হয়, তেমন ঈমান ও তাকওয়া বাঁচাতে অবশ্যই কুর’আনী জ্ঞানের খোঁজ করতে হয়। এখানে ফাঁকিবাজীর সুযোগ নাই। এক্ষেত্রে অবহেলা হলে মুসলিম হওয়াই অসম্ভব হয়। তাই জ্ঞানার্জন কোন নফল, ওয়াজেব বা ফরজে কেফায়া পর্যায়ের ইবাদত নয়, এটি হলো ফরজে আয়ীন। অর্থাৎ নামায-রোযার ন্যায় সকল নারী-পুরুষের উপর কুর’আনের জ্ঞানার্জন বাধ্যতামূলক। নামায-রোযার ক্বাজা আছে, কিন্তু জ্ঞানার্জনে ব্যর্থ হলে তার ক্বাজা নাই।
সেকালের ইলমচর্চা এবং একালের ধর্মব্যবসা
মুসলিমগণ যখন সবাই আলেম হয়েছে তখন ধর্মের নামে ব্যবসা হয়নি। জ্ঞানদান (তা’লীম)ও জ্ঞানলাভ (তায়াল্লুম) –উভয়ই তখন পবিত্র ইবাদত রূপে গণ্য হয়েছে। ফলে মুসলিমদের মাঝে কোন ব্রাহ্মণ শ্রেণী তকন গড়ে উঠেনি। অথচ মুসলিম সমাজে ধর্মব্যবাসায়ী ব্রাহ্মণগণই হলো জনগণের মাঝে কুর’আনের জ্ঞান বিস্তারের বড় বাধা। তারা চায় এ জ্ঞানের ক্ষেত্রটি একমাত্র তাদের দখলে থাকুক এবং জনগণ পরিণত হোক তাদের অনুগ্রহপ্রার্থীতে। ফলে না বুঝে কুর’আন পাঠ শেখানোর বেশী তার শেখাতে রাজী নয়। বাংলাদেশে ধর্মের নামে গড়ে উঠেছে এক লাভজনক ব্যবসা। পীরমুরিদীতে যেমন বিপুল অর্থলাভ ঘটে, তেমনিও অর্থলাভ ঘটে ওয়াজেও। কোটি কোটি টাকা আয় হয় কোন পীরের নামে মাজার গড়লে। অথচ নবী-রাসূলদের নামেও কোন মাজার গড়া হয়নি।
নবীজী (সা:) দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে গালী খেয়েছেন, পাথর খেয়েছেন, আহত হয়েছেন। দ্বীনের দাওয়াত দিতে হযরত ইব্রাহীম (আ:) বহু হাজার মাইল হেঁটেছেন। ইরাক থেকে ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিত থেকে মিশর এবং মিশর থেকে মক্কায় গেছেন। জিহাদে যেমন নিজ খরচে যোগ দিতে হয়, তেমনি নবী-রাসূলদের সূন্নত হলো নিজ খরচে দ্বীনের দাওয়াত পেশে কাজ করা। এ কাজে তারা কারো থেকে কোন মজুরি নেননি। ঈমানদারগণ এরূপ কাজ করেন আখেরাতে পুরস্কার লাভের আশায়। দ্বীনের কাজে শ্রম ব্যয় ও অর্থব্যয়কে মহান আল্লাহতায়ালার পথে পবিত্র বিনিয়োগ মনে করতেন। ফলে নিজের ও পরিবারের পানাহার জোগারে তারা ভিখারীতে পরিণত হননি। সে খরচ জোগারে তারা নানারূপ পেশা বেছে নিয়েছেন, এবং বিনা মুজুরিতে মানুষে কাছে দ্বীনের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু সেরূপ বিনিয়োগ বাংলাদেশের আলেম, পীর-দরবেশদের জীবনে কই? অর্থ নিয়ে দ্বীন প্রচারের কাজ করলে সেটি আর ইবাদত থাকে না, নবীজীর সূন্নতও থাকে না। পরিণত হয় ব্যবসায়। এরূপ ধর্মব্যবসা করতো ইহুদী আলেমগণ; পবিত্র কুর’আনে এ জন্য তারা তিরস্কৃত হয়েছে। নবী-রাসূলদের নিঃস্বার্থ খেদমতের কথা মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে বার বার উল্লেখ করেছেন। কিন্তু নবী-রাসূলদের সে মহান সূন্নত বাংলাদেশের আলেমদের মধ্যে বেঁচে নাই্। ফলে বেঁচে নাই নবীজী (সা:)’র ইসলামও। ফলে বেঁচে নাই ইসলামী রাষ্ট্র, কুর’আনী জ্ঞানের ব্যপ্তি, শরিয়তী আইনের বিচার, মুসলিম ঐক্য ও জিহাদ।
মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমগুলো না বুঝলে ও না জানলে -একজন মুসলিম সেগুলো পালন করবে কীরূপে? রোড ম্যাপ বুঝার সামর্থ্য না থাকরে সে ব্যক্তি সঠিক রোড অনুসরণ করে গাড়ী চালাবে কীরূপে? এমন অজ্ঞতার কারণে সে তো ভ্রান্ত পথ যাবেই। কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা তখন মুসলিম জীবনের মূল এজেন্ডাই পুরাপুরি ব্যর্থ করে দেয়। তখন অসম্ভব হয় মুসলিম হওয়া। একজন মুসলিম ব্যক্তি শারীরিক ভাবে পঙ্গু হতে পারে, কিন্তু সে অজ্ঞ বা জাহেল হবে -সেটি কি কখনো ভাবা যায়? অজ্ঞতার ফলে মানব মনের অজান্তে জন্ম দেয় কুর’আনী হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। বিদ্রোহ থেকে জন্ম নেয় নানাবিধ পাপকর্ম। একজন বিদ্রোহী এভাবেই নিজেকে জাহান্নামের যোগ্য রূপে গড়ে তোলে। এজন্যই জাহিলিয়াত বা অজ্ঞতাকে সকল পাপের মা বলা হয়। তাই সবচেয়ে বড় নেক কর্ম কাউকে কোটি কোটি টাকা দান করা নয়, বরং মানুষকে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান দান। অর্থসম্পদ কাউকে জান্নাতের পথ দেখায় না, পথ দেখানোর সে কাজটি করে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান।
ইসলামে ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজ করা হয়েছিল মিরাজ থেকে নবীজী (সা:)’র ফেরত আসার পর -যা ঘটেছিল নবুয়ত প্রাপ্তির ১১ বছর পর। এবং রোযা ও হজ্জ ফরজ করা হয়েছিল মদিনায় হিজরতের পর। হিজরতের ঘটনা ঘটেছিল নবুয়ত প্রাপ্তির ১৩ বছর পর। কিন্তু জ্ঞানার্জন ফরজ করা হয়েছে নবুয়ত প্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই। ইকরা তথা পড়ো অর্থাৎ জ্ঞানের তালাশ করো -তাই পবিত্র কুর’আনের প্রথম শব্দ। গভীর মনযোগ দিয়ে কুর’আন তেলাওয়াত করা হলো অতি শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তবে সেটি না বুঝে তেলাওয়াত নয়, সে তেলাওয়াতের মধ্যে থাকতে হবে বুঝার সামর্থ্য। পবিত্র কুর’আনকে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের রশি (হাবলিল্লাহ) রূপে আখ্যায়ীত করেছেন। যে ব্যক্তি সে রশিকে আঁকড়ে ধরে, সেই বস্তুত মহান আল্লাহতায়ালাকে আঁকড়ে ধরে। নামায ফরজ হওয়ার আগে নবীজী (সা:) এবং তাঁর সাহাবাগণ রাতের অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ ভাগ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুর’আন থেকে পাঠ করিয়ে কাটিয়ে দিতেন। তেমনটি করার নির্দেশ এসেছে সুরা মুজাম্মিলে। এ সুরাটি হলো প্রথম দিকে নাযিলকৃত কয়েকটি সুরার একটি। ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়া যায় না। তেমনি জাহিলিয়াত দূর না করে কাউকে প্রকৃত নামাযী, রোযাদার, হাজী ও মুজাহিদ বানানো যায় না। সেটি বস্তুত জমিতে চাষ না করে ফসল বুনার মত। নামায ফরজ হওয়ার পূর্বে ১১ বছরের বেশী কাল ধরে তাই মুসলিমদের চেতনার ভূমিতে কুর’আনী জ্ঞানের লাগাতর চাষাবাদ হয়েছে। পরবর্তীতে সে সাহাবাগণই পরিণত হয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবে। তাদের জীবনে যে অভূতপূর্ব চারিত্রকি, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিপ্লব এসেছিল -তার মূলে ছিল এই কুর’আনী জ্ঞান। ছিল পবিত্রতম ও গভীরতম আত্ম-উপলব্ধি। ইসলামে এরূপ আত্ম-উপলব্ধিকে বলা হয় প্রকৃত মারেফত।
কুর’আন বুঝা ফরজ
পবিত্র কুর’আনে ঈমানদারদের প্রতি মহান আল্লাহতায়ালার কঠোর নির্দেশ: “ইয়া আইয়োহাল্লাযীনা আমানু, লা তাকরাবুছ ছালাতা ওয়া আনতুম সুকারা হাত্তা লা তা’লামু মা তাক্বুলুন: অর্থ: “হে ঈমানদারগণ তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাক তখন নামাযের নিকটবর্তী হয়ো না এবং ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না তোমরা (নামাযে যা) যা বল তা বুঝতে না পার..।” –(সুরা নিসা, আয়াত ৪৩)। এ পবিত্র আয়াতটিতে রয়েছে প্রতিটি ঈমানদারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা। মানুষ সাধারণতঃ দুই অবস্থায় মুখে এমন কিছু বির বির করে বলে যা সে নিজে বুঝে না। সেটি হয় যদি সে মস্তিস্কবিকৃত পাগল হয়, অথবা যদি সে মাদকাসক্ত পূর্ণ মাতাল হয়। পাগলের উপর নামায ফরজ নয়। ফলে সেটি এ আয়াতের উপজীব্য বিষয় নয়। মদ্যপায়ী না হলে কোন সুস্থ্য ব্যক্তিই মুখে কখনোই এমন কিছু বলে না -যা সে বুঝতে পারে না। এ আয়াতটি যখন নাযিল হয়েছিল তখন মদপান হারাম ঘোষিত হয়নি। তাই নামাযকে যথার্থ করার প্রয়োজনে মদ্যপ অবস্থায় নামায আদায় করতে নিষেধ করা হয়েছে। নির্দেশের ভাষাটি এতোই কঠোর যে, বলা হয়েছে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের ধারেকাছে না যেতে। উপরুক্ত আয়াতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয়টি হলো, নামাযে দাঁড়িয়ে কুর’আনের যে আয়াতগুলো পড়া হবে সেগুলি পুরাপুরি বুঝতে হবে। মাতাল অবস্থায় সেটি সম্ভব নয় বলেই সে অবস্থায় নামাযের ধারে কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কুর’আনে বুঝা যে ফরজ –সেটির গুরুত্ব এভাবেই বয়ান করা হয়েছে। অতি পরিতাপের বিষয় হলো, এতবড় গুরুতর বিষয়টি বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায়নি। গুরুত্ব পায়নি এমন আলেমদের কাছেও। ধর্মপালনে বাঙালী মুসলিমদের এখানেই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। পাগল বা মাদকাসক্ত না হয়েও কোটি কোটি মানুষ পাগল বা মাতালের ন্যায় নামাযে দাঁড়িয়ে বির বির করে এমন কিছু আয়াত উচ্চারণ করে যা সে নিজে বুঝে না। অথচ নামাযীর এমন আচরণ মহান আল্লাহতায়ালার কাছে অতি অপছন্দের। যাদের মনে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি সামান্য ভয় আছে তারা কি এমন অপছন্দনীয় কাজ কখনো করতে পারে? অথচ বাঙালী মুসলিমদের এ কুর’আনী ঘোষণা নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপই নাই। আলেমগণও এ আয়াত নিয়ে খোতবা বা ওয়াজ দেন না। যেন তারা পবিত্র কুর’আনের এ আয়াত কোনদিন পড়েনি বা শোনেনি।
প্রশ্ন হলো, নামাযের মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালার অতি অপছন্দনীয় কাজটি করে কি কখনো তাঁর রহমত মেলে? বরং এরূপ অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় তাঁর ক্রোধ। এবং পরকালে জুটবে জাহান্নামের আযাব। এ বিষয়ে সামান্য হুশই বা কই? কাঁড়ি কাঁড়ি নোট জমা করাটাই কি বড় কথা? সেগুলো যে নিরেট জাল নোট হতে পারে -সে ভাবনা কি আছে? এমনটি তো নামাযের ক্ষেত্রেও হতে পারে। রোজ হাশরের বিচার দিনে হিসাব দেয়ার আগে নিজের হিসাব নিজে নেয়ার মাঝেই কি কল্যাণ নয়? মহান আল্লাহতায়ালা ইবাদতের সংখ্যা দেখেন না, দেখেন ওজন। আর নামাযের ওজন বাড়াতে হলে যা তেলাওয়াত করা হয় তার বুঝা জরুরি।এবং একমাত্র বুঝায় মনযোগী হলেই মনযোগ বাড়ে নামাযে। নামাযের লক্ষ শুধু সুন্দর জামাকাপড় পড়ে রুকু-সিজদা দেয়া নয়, বরং সমগ্র নামায জুড়ে গভীর ধ্যানমগ্নতা। সে জন্য জরুরি কুর’আনের আয়াতগুলি বুঝার সামর্থ্য। নামাজে দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত কালীন সময়টিই হলো নামাযের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তখন পবিত্র কুর’আন তেলাওয়াতে মাধ্যমে সংলাপ হয় মহান আল্লাহতায়ালার সাথে। নামাযকে এজন্যই ঈমানদারের মিরাজ বলা হয়েছে। মিরাজের লক্ষ্য তো মহান রবের উদ্দেশ্যে আধ্যাত্মীক উর্দ্ধগমন। এভাবেই তো মু’মিনের সংযোগ ঘটে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে।
নামায অপূর্ণ হয় এবং তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় কুর;আনী জ্ঞানের অজ্ঞতার কারণে। অজ্ঞতা মাদকাসক্তির চেয়েও ক্ষতিকর। মাদকাসক্তি কয়েক ঘন্টা পর ঠিক হয়ে যায়। তাছাড় মদ্যপ ব্যক্তি একদিন মদ্যপান ছেড়ে ভাল ঈমাদার হতে পারে –যেমনটি বহু সাহাবায়ে কেরামের ক্ষেত্রে হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞতার ক্ষতিকারকতা মৃত্যু-অবধি। তাই ভাল নামাযী হতে হলে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানে জ্ঞানী হওয়াটি জরুরি। নামাযে যে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা হয় সেগুলি বুঝার সামর্থ্য সে কাজে অপরিহার্য। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের আলেমগণ নামাজের মাঝে মহান আল্লাহতায়ালার অতি কাঙ্খিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বাংলাদেশীদের সামনে তুলে ধরেননি। বরং তারা প্রচার করেন, না বুঝে স্রেফ তেলাওয়াতে ছওয়াব আছে। অথচ কুর’আন না বুঝায় যে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় -সে হুশ ক তাদের অআছে? এটিই হলো বাংলাদেশের আলেমদের অপরাধ। নিজেদের অজ্ঞতায় সংক্রামিত করছে অন্যদের। অথচ পবিত্র কুর’আন বুঝার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে বহুবার। মানুষ কেন পবিত্র কুর’আন বুঝে না – মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে অভিযোগও বার বার তোলা হয়েছে। একমাত্র সুরা ক্বামারে একই ভাষায় সে অভিযোগ চার বার তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আমি কুর’আনকে (মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পথনির্দেশনা ও তাঁর প্রতি মানবের দায়বদ্ধতাকে) স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য সহজ করে নাযিল করেছি। আছে কি (কুর’আনের বিষয়গুলোকে) নিজ মনে স্থান দেয়া তথা স্মরণ করার কেউ?” –(সুরা ক্বামার, আয়াত ১৭, ২২, ৩২, ৪০)। এ আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ও নিশ্চয়তাটি হলো, পবিত্র কুর’আন বুঝার কাজটি কঠিন নয়, এটি সহজ। অথচ আলেমদের পক্ষ থেকে কুর’আন বুঝার কাজকে কঠিন বলে পেশ করা হয় এবং কুর’আন শিক্ষাকে স্রেফ তেলাওয়াতের মাঝে সীমিত রাখা হয়।
ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভাষাবিপ্লব ও বাঙালী মুসলিমের ব্যর্থতা
কুর’আন বুঝার গুরুত্বটি বুঝেছিলেন প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ। ইরাক, সিরিয়া, মিশর, সূদান, লিবিয়া, আলজিরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও মৌরতানিয়ার ন্যায় বহু দেশের মানুষের মাতৃভাষা আরবী ছিল না। মহান আল্লাহতায়ালা যেহেতু কুর’আন বুঝা ফরজ করেছেন সে ফরজ পালন করতে গিয়ে তারা মাতৃভাষা কবরে পাঠিয়ে আরবী ভাষা গ্রহন করেছে। সেটিই হলো মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে কল্যাণকর ভাষা বিপ্লব। যার ফলে বহু কোটি মানুষ মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সরাসরি সংযোগ করতে সমর্থ হয় এবং সফল হয় পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হওয়ার। পরিচয় পায় মহান রবের কাঙ্খিত পূর্ণাঙ্গ ইসলামের। ইসলাম যে সে আমলে সবচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তি ও ইসলামী সভ্যতার জন্ম দেয়ে তার পিছনে এ ভাষা বিপ্লবের ভূমিকা কম নয়। নানা ভাষার বিভেদের দেয়ালগুলো ভাঙ্গার ফলে মুসলিমগণ সহজেই বিশ্বের বিশাল এক ভূ-ভাগ জুড়ে এক অবিভক্ত উম্মতে পরিণত হয়। তাই সবচেয়ে সে সময়ের সবচেয়ে কল্যাণকর বিশাল বিপ্লবটি শুধু ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিপ্লব ছিল না, সেটি ছিল ভাষা বিপ্লবও।
বাংলার বুকে মুসলিম বিজয়ের ফলে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিপ্লব এলেও ভাষা বিপ্লব আসেনি। আজ থেকে ৭০ বছর আগেও তাই বাংলা ভাষায় পবিত্র কুর’আনের কোন অনুবাদ বা তাফসির প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশিত হয়নি নবী চরিত ও হাদীসের গ্রন্থ। তখন ইসলামী সাহিত্য বলতে বুঝাতো মোকছুদুল মু’মিনুন, নেয়ামল কুর’আন, বেহেশতে জিওর, বিষাদ সিন্ধু, আনোয়ারা উপন্যাস, মধ্যযুগীয় কবিতা ও পুঁথি সাহিত্য। ১০০ বছর আগে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত শতকরা ৯৯ ভাগ বইয়ের লেখক ছিল হিন্দু। ফলে বাংলার মুসলিমদের বেড়ে উঠতে হয়েছে ইসলামী জ্ঞানের দারুন অপুষ্টি নিয়ে। চেতনায় অপুষ্টি নিয়ে কি কখনো উন্নত চরিত্র গড়ে উঠে? বাংলাদেশীদের আজকের ব্যর্থতার মূল কারণ তো চেতনায় ইসলামী জ্ঞানের অপুষ্টি। ফলে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হওয়া, দেশজুড়ে ভোটডাকাতি এবং চুরিডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের যে সুনামী তার মূল কারণ তো চেতনায় অপুষ্টি ও অসুস্থ্যতা। আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে মহান নবীজী (সা:) কুর’আনী জ্ঞানের বিপ্লব এনে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লব এনেছিলেন। তারই ভিত্তিতে মুসলিমদের হাতে নির্মিত হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। অথচ আজ ১৬ কোটি বাঙালী মুসলিম ইতিহাস গড়েছে চারিত্রিক কদর্যতায়। এবং সেটি পবিত্র কুর’আন থেকে দূরে সরার কারণে।
মধ্যপ্রাচ্যে যখন আরবি ভাষা ও ইসলামী জ্ঞানের বিপ্লব আসে তখন সে বিশাল ভূ-খন্ডটি ভাষা ও সংস্কৃতির দিক শূণ্য ছিলনা। সেখানে সুপ্রতিষ্ঠিত ভাষা ছিল, ইরাক ও মিশরে মানব ইতিহাসের সুপরিচিত সভ্যতাও নির্মিত হয়েছিল। মানব ইতিহাসে যারা নিজ ভাষার হরফ তথা বর্ণমালা আবিস্কার করে এবং রীতিমত জ্ঞানচর্চা শুরু করে তাদের মধ্যে মিশরীয় এবং ইরাকীগণ ছিল প্রথম সারিতে। সেটি নবীজী (সার)’র আগমনের বহু হাজার বছর আগে থেকেই। লন্ডনের মিউজিয়ামে মিশরের ফিরাউনের আমলের মমিগুলোর গায়ে আদি মিশরীয় ভাষার চমৎকার ক্যালিগ্রাফিতে দেখে সেটি সহজেই অনুমান করা যায় যে, ভাষার ক্ষেত্রে মিশরীয়গণ অন্যদের থেকে কতটা অগ্রসর ছিল। অগ্রসর ছিল ইরাকও। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার সাথে সাথে তারা শুধু নিজেদের ধর্মই পাল্টায়নি, পাল্টিয়েছে নিজেদের জীবন-লক্ষ্য, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। তারা নিজেদের মাতৃভাষাকে দাফন করে গ্রহণ করেছে কুর’আনের ভাষাকে। একটি জনগোষ্ঠির জন্য এর চেয়ে অধিক প্রজ্ঞার কাজ আর কি হতে পারে? ভাষার দায়িত্বটি বিশাল। ভাষাকে শুধু মনের কথা ও ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যম হলে চলে না, সেটিকে চেতনায় পুষ্টি জোগানোর মাধ্যমও হতে হয়। ভাষা এভাবেই জনগণের ঈমানে সমৃদ্ধি আনে এবং জান্নাতের যোগ্য রূপে গড়ে তোলে। এদিক দিয়ে আরবী ভাষা পৃথিবী পৃষ্ঠে সর্বশ্রেষ্ঠ। কারণ এ ভাষায় রয়েছে মানব চেতনার পুষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ ভান্ডার। এবং সেটি কুর’আনের। ফলে সে কুর’আনের ভাষার সাথে সংযোগ বাড়ানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর কি হতে পারে?
গাদ্দারী ও অর্জিত মহাবিপদ
ঈমানদারের কাছে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কাজটি শুধু পানাহারে বাঁচা নয়, বরং সুস্থ্য ও সমৃদ্ধ ঈমান ও আমল নিয়ে বাঁচা। একমাত্র সে ভাবে বাঁচাতেই অনন্ত কালের জন্য জান্নাত মেলে। এরূপ বাঁচার জন্য জরুরি হলো, মহান মহাজ্ঞানী মহাপ্রভু মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দার উদ্দেশ্যে কি বলতে চান সে বিষয়টি সঠিক ভাবে ও পূর্ণ ভাবে তাঁর নিজের বয়ানে জানা ও বুঝা। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে মুসলিম হওয়াই অসম্ভব হয়। সেটি পথ না জেনে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসার ন্যায়। প্রশ্ন হলো, পবিত্র কুর’আনে লিপিবদ্ধ মহান আল্লাহতায়ালা নিজের ওয়াজ চোখের সামনে দেখেও যে ব্যক্তি তা জানতে ও বুঝতে আগ্রহী নয় -তাকে কি আদৌও ঈমানদার বলা যায়? শরিষার দানার পরিমাণ ঈমান আছে এমন ব্যক্তি কি তাই কুর’আন বুঝায় অমনযোগী হতে পারে? বস্তুত মুসলিম হওয়ার কাজটি শুরু হয় তো মহান আল্লাহতায়ালার সে ওয়াজ বুঝার মধ্য দিয়ে। মহান আল্লাহতায়ালার বাণী জানতে ও বুঝতে আগ্রহ না দেখানোটি শুধু বেয়াদবীই নয়, তাঁর হুকুমের সাথে চরম গাদ্দারীও। অথচ সে বেয়াদবী ও গাদ্দারী নিয়ে বাঁচছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসলিম। পরিতাপের বিষয় হলো, সে বেয়াদবী ও গাদ্দারী নিয় তাদের মাঝে কোন ক্ষোভ বা অনুশোচনাও নাই।
বাঙালী মুসলিম জীবনের ব্যর্থতার খতিয়ানটি বিশাল। ইলামের পরাজয়, শরিয়তের বিলুপ্তি এবং ইসলামের বিপক্ষ শক্তির বিজয় মেনে নিয়ে বাঁচাই পরিণত হয়েছে বাঙালী মুসলিমের ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনীতি। বিলুপ্ত হয়েছে ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদ। এরপরও তাদের অহংকার, তারা নাকি ধর্মভীরু মুসলিম। তাদের গর্ব ঢাকা শহরের বিপুল সংখ্যক মসজিদ নিয়ে। বাঙালীর অহংকার বেড়েছে বাংলা ভাষা নিয়ে। তাদের গর্ব ২১ শে ফেব্রেয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছে। অথচ ২১ শে ফেব্রেয়ারী হলো ভাষা আন্দোলনের নামে বাঙালী মুসলিম জীবনের বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও সেক্যুলারিজমকে বিজয়ী করার আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্যান-ইসলামিক চেতনার যে বিজয় এসেছিল ভাষা আন্দোলন সে চেতনার বিলুপ্তি ঘটায়। বন্ধন গড়ে ভারতীয় হিন্দুদের সাথে। এবং ১৯৭১য়ে বিজয় তুলে দেয় ভারতের হাতে। ভারতীয় হিন্দুগণ এমন বিজয় বিগত হাজার বছরেও পায়নি। বাংলা ভাষার নামে জোয়ার আনে হিন্দু সাহিত্য ও সংস্কৃতির।
অথচ মুসলিম রূপে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল, বাংলা ভাষাকে কুর’আন ও ইসলাম বুঝার ক্ষেত্রে তারা কতটা সহায়ক রূপে গড়ে তুলতে পেরেছে –সে বিষয়টি। তাতে নিজেদের এবং সে সাথ আগামী প্রজন্মের পক্ষে সহজ হতো পবিত্র কুর’আন বুঝা। সমৃদ্ধ ভাষা তো একমাত্র তখনই সে ভাষার জনগণকে জান্নাতের যোগ্য রূপে বেড়ে উঠতে সহায়তা দেয়। অথচ মুর্তিপ্রেম যেমন বাঙালী হিন্দুদের মুসলিম হওয়া থেকে দূরে রেখেছে, তেমনি বাংলা ভাষা প্রেমের উগ্রতা দূরে রেখেছে পবিত্র কুরআনের ভাষা বুঝা থেকে। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ইংরেজী ভাষা শেখানো গুরুত্ব পেলেও গুরুত্ব পায়নি আখেরাত বাঁচানো। আর আখেরাত বাঁচানো গুরুত্ব পেলে গুরুত্ব পেত পবিত্র কুর’আন বুঝার ফরজ ইবাদতটি। কুর’আন শিক্ষায় এরূপ অবহেলার কারণে মহামারি বাড়ছে ঈমানের অঙ্গণে। এভাবে বাঙালী মুসলিমের ভয়ানক বিপদ বাড়ছে পরকালের নাজাত নিয়ে। এ ভয়াবহ বিপদ নিতান্তই বাঙালী মুসলিমের নিজ হাতে কামাই। ১৪/১১/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018