কেন এত ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে?

খেলা কি হাসিনার হাতে?

বাংলাদেশের রাজনীতির খেলা এখন আর শেখ হাসিনার হাতে নেই। রাজনীতির ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনকালেই চাকর-বাকরের হাতে থাকে না। এমনকি একাত্তরেও আওয়ামী রাজনীতি শেখ মুজিব বা দলের হাতে ছিল না। সেটিই সব সময়ই ছিল তার মনিব দিল্লির শাসকচক্রের হাতে। মুজিব রাজনীতির খেলা খেলেছে স্রেফ ভারতের শাসকচক্রের অনুগত সেবাদাস রূপে। সে কাজটি মুজিব বাংলাদেশ সৃষ্টির বহু পূর্ব থেকেই করে আসছিল এবং সেটি চালিয়ে গেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টে মৃত্যু অবধি। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যে শতভাগ সত্য ছিল সেটি আওয়ামী লীগ নেতা ও সে মামলার অপর আসামী লে.কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শওকত আলী এবং অন্যন্যরাও স্বীকার করেছেন।ফলে ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলনের চাপে পাকিস্তান সরকার মুজিবের বিরুদ্ধে আানা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হলেও মনিবের পক্ষ থেকে অর্পিত মিশন থেকে মুজিব এক ইঞ্চিও সরেনি। তাই আওয়ামী রাজনীতির ড্রাইভিং সিটে সবসময়ই ছিল দিল্লির শাসকচক্র। তাই মুজিব ১৯৭১য়ের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানের জেলে গেলেও আওয়ামী লীগের ভারতসেবী রাজনীতির গাড়ি এক দিনের জন্যও থেমে থাকেনি। মুজিবের মুখ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ারও প্রয়োজন পড়েনি। সে গাড়ি ভারতের কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে চলাটি অব্যাহত রেখেছে। পাকিস্তান সরকার অনেক দেরীতে হলেও সেটি বুঝেছিল। তাই ১৯৭১ য়ের সেপ্টম্বরের দিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে রেফারেন্ডামের প্রস্তাব দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনটি লড়েছে প্রাদেশিক সায়ত্বশাসনের প্রতিশ্রুতিতে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র তৈরীর দাবী নিয়ে। তাই সে নির্বাচনের আওযামী লীগের বিজয়টি স্বাধীনতার পক্ষের দলীল হতে পারে না। তাই একটি রিফারেন্ডামের প্রস্তাব দিয়ে ইয়াহিয়া খান দূত পাঠায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির কাছে। কিন্তু ইন্দিরা সে প্রস্তাব অস্বীকার করে। কারণ, সোভিয়েত রাশির সাহা্য্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ভারতের লক্ষ্য শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গা ছিল না। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভাঙ্গাও। তেমন একটি ধ্বংসাত্মক অভিসন্ধির কারণে যুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তীকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সৈন্যদের প্রবেশ ও লুটতরাজ অপরিহার্য ছিল। এমন একটি লক্ষ্য নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধের প্রস্তুতি সেপ্টম্বরের মধ্যেই বহুদূর এগিয়ে নিয়েছিল। ফলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রস্তাব মেনে নিলে সেটি সম্ভব হতো না। ভারত বুঝেছিল, উপমহাদেশের মুসলিম শক্তি গুড়িয়ে দেয়ার এবং সে সাথে তাদের বেইজ্জতি করার এটিই মোক্ষম সময়। মুসলিম শক্তির এক ডানা ছিল যেমন পাকিস্তান, অপর ডানাটি ছিল বাংলাদেশ। ইন্দিরার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশকে একটি তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানানো। দেশকে একটি দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়া। সীমান্ত-বাণিজ্যের নামে দেশের সীমান্ত বিলুপ্ত করা।

 

কেন এত ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে?
১৯৭১এর যুদ্ধে বড় ক্ষতিটা পাকিস্তানের হয়নি। সেটি হয়েছে বাংলাদেশের। যুদ্ধের কারণে পাকিস্তান তলাহীন ভিক্ষার থলি হয়নি। সে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসেনি। লক্ষ লক্ষ মানুষ পাকিস্তানে না খেয়ে মারা যায়নি। পাকিস্তানের কোন বস্তিতে জালপড়া বাসন্তিও সৃষ্টি হয়নি। অথচ দুর্ভিক্ষ এসেছে এবং জালপড়া বাসন্তি সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। কারণ, বাংলাদেশের মাটিতে ভারত শুধু যুদ্ধ করেনি, ভয়ানক দস্যুবৃত্তিও করেছে। প্রশ্ন হলো, বাঙালী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এত আক্রোশ? ইন্দিরার অজানা ছিল না, ১৯৪৬ ও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের পক্ষে মূল যুদ্ধটি করাচী বা লাহোরে হয়নি। সে যুদ্ধটি লড়া হয় অবিভক্ত বাংলার রাজধানি কলকাতায়। সেটি ১৯৪৬ সালের ২৩ আগষ্ট মুসলিম লীগের ডাইরেক্ট এ্যাকশন দিবসে। কলকাতার গড়ের মাঠের মিছিল থেকে ফেরার পথে বহু হাজার বাঙালী মুসলিম সেদিন হিন্দু গুন্ডাদের হাতে প্রাণ দিয়েছিল। সে রক্তের বন্যায় ভেসে য়ায় কংগ্রেসের অবিভক্ত ভারত সৃষ্টির স্বপ্ন। শতকরা ৯৬% বাঙালী মুসলমান পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়। অথচ পাঞ্জাব, সিন্ধু ও সীমান্ত প্রদেশের মুসলমানগণ পাকিস্তান প্রকল্পের পক্ষে এরূপ সমর্থণ দেয়নি।

বাঙালী মুসলমানদের মেরুদন্ড চূর্ণ করা ও তাদের শাস্তি দেয়ার ভারতীয় অভিপ্রায়টি ছিল অতি চাতুর্যপূণ্য ও প্রতিহিংসাপরায়ণ। সেটি শুধু সীমাহীন লুন্ঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বানানো নয়। স্রেফ একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ উপহার দেয়াও নয়। সেটি শুধু বাংলাদেশের সীমান্ত বিলোপও নয়্। বরং সেটি ছিল, যে ঢাকা শহরে পাকিস্তানের জন্মদাতা মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল সে শহরের বুকে সমগ্র মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকজনক নাটকটি মঞ্চস্থ করা। সেটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের হাজার হাজার সৈন্যের আত্মসমর্পণের নাটকযা লজ্জাজনক ছিল শুধু পাকিস্তানের জন্যই নয় সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ন্যও। ১৯৭১য়ে ১৫ই আগষ্ট তারিখেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের যুদ্ধ প্রস্তুত ছিল। কিন্তু দিল্লির শাসকচক্র চাচ্ছিল পাকিস্তানের পরাজয় ও বেইজ্জতির মহড়াটি বিশাল আকারে হোক। চাচ্ছিল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাঝের সৃষ্ট ঘৃনাটি গভীরতর হোক। তেমন একটি নাটকের টির জন্যই নির্ধারিত হয় ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয় একজন ইহুদীর কাছে। উল্লেখ্য তখন ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ছিলেন মেজর জেনারেল জে এফ আর জেকব। তিনি ছিলেন একজন ইহুদী। ভারতের সে কুৎসিত মানসিকতার বর্ণনা দিয়েছেনে ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার ঢাকার ডেইলি স্টার পত্রিকায় Beyond the Lines শিরোনামায প্রকাশিত তাঁর নিবন্ধে। মিস্টার নায়ার লিখেছেন, একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বরই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে অস্ত্রসমর্পণের জন্য প্রস্তুত থাকার পরও এবং সেভাবে প্রক্রিয়া শুরুর পরও বিষয়টি ঘটে ২৪ ঘণ্টা পরে এবং নজিরবিহীনভাবে খোলা মাঠে। কেন এটা ঘটেছিল? এ সম্পর্কে তখনকার ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জেকব সাংবাদিক মি. কুলদিপ নায়ারকে জানাচ্ছেন, New Delhi wanted to humiliate Islamabad by showing that Muslim country had laid down arms before a Jew.  অর্থঃ নয়া দিল্লি চাচ্ছিল ইসলামাবাদকে অপদস্ত করতে, সেটি এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে যে একটি মুসলিম দেশ একজন ইহুদীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছে। ঢাকা শহরটি অন্য কোন কারণে না হোক, অন্তত একটি কারণে সমগ্র বিশ্বের মুসলিম ইতিহাসে কিয়ামত অবধি বেঁচে থাকবে। সেটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশের সেনাবাহিনীর বেইজ্জতি করার ভূমি রূপে। অথচ সে দেশটির সৃষ্টিতে বাঙালী মুসলমানদের অবদানটাই ছিল সর্বাধিক।

 

যে বেইজ্জতি মুক্তিবাহিনীর

১৯৭১এর ১৬ ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনীর অপমানটিও কি কম ছিল? যুদ্ধ হলো বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনটি মুক্তিবাহিনীর সদস্যগণ নিজেদের নিজস্ব অর্জন মনে করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো,পাকিস্তানের সেনা বাহিনী কি মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে? ভারতের অর্থে ও ভারতের ক্যাম্পে ভারতের ভাত-পানি খেয়ে গড়ে উঠা মুক্তিবাহিনীকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কোন গুরুত্বই দেয়নি। তাদের কাছে তাই আত্মসমর্পণও করেনি। আত্মসমর্পণ করেছে মুক্তিবাহিনীর মনিবের কাছে। বাংলাদেশ থেকে তাদের যুদ্ধবন্দীদের ফিরিয়ে নিতেও পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। সেটিও তারা করেছে দিল্লি সরকারর সাথে। ফলে বাংলাদেশ সরকার যে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগ্টি এনেছিল,সে অভিযুক্তদের কেশাগ্র স্পর্শের সুযোগও পায়নি। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের চোখের সামনে দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী লুটে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পূর্ব পাকিস্তানী হওয়ায় সে অস্ত্র কেনায় অধিকাংশ অর্থ জোগাতে হযেছে বাংলাদেশীদের। অতএব সে অস্ত্র বাংলাদেশে রাখার বৈধ অধিকার ছিল বাংলাদেশর। কিন্তু ভারত সেটি চায়নি। মনিবের সে অস্ত্র লুটের কান্ডটি নীরবে দেখা ছাড়া আওয়ামী বাকশালী পক্ষটি কি কিছু করতে পেরেছিল? তাছাড়া কিছু করার আগ্রহও কি ছিল? ভারতীয় সরকার এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সামান্যতম আলোচনার প্রয়োজনও বোধ করেনি। মনিবরা কি কখনো চাকরবাকরের অনুমতি নেয়? বা তাদের সাথে পরামর্শ করে? দিল্লির শাসকদের মনভাব কি আজও ভিন্নতর? ফলে দিল্লিস্থ মনিবগণ আজও যা চাচ্ছে বাংলাদেশকে তাই দিতে হচ্ছে। সেটি দেশের অভ্যন্তর দিয়ে করিডোর হোক, তিস্তা বা পদ্মার পানি তুলে নেয়া হোক বা টিপাইমুখে বাধ নির্মান হোক।

 

ভারতের মুসলিম ভীতি

পাকিস্তান ভাঙ্গা ও দেশটির মেরুদন্ড দুর্বল করার পর ভারতের লক্ষ্য এবার বাংলাদেশের মেরুদন্ড ধ্বংসিয়ে দেয়া। তাদের বিশ্বাস,বাংলাদেশ স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পেলে দেশটি বহু ভাষা, বহু বর্ণ ও বহু গোত্রে বিভক্ত পাকি্স্তানের চেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র রূপে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবে। তাছাড়া বাংলাদেশ,পশ্চিম বাংলা, আসাম ও রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠির বসবাস এ অঞ্চলে। তাদের মাঝে রয়েছে ভাষাগত,বর্ণগত সংহতি। নেই শিয়াসূন্নীর বিভেদ। অতীতে বিশ্বশক্তি রূপে মুসলমানদের যে উত্থান সেটি সুজলা-সুফলা বিশাল কোন সমৃদ্ধ ভূমি থেকে হয়নি। হয়েছিল জনবিরল নিঃস্ব মরুর বুক থেকে। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ কম কিসে? জনবহুল মুসলিম দেশ হওয়াটাই শত্রুর নজরে পড়ার জন্য যথেষ্ঠ ছিল। তাছাড়া আজ ১৬ কোটি মুসলমানের যে বাংলাদেশ সেটি ইখতিয়ার বিন বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বে ১৭ জন মুসলিম মোজাহিদের বিজয়ের দান। এখন ভারতের সীমান্তে দন্ডায়মান ১৭ জন তুর্কি মুসলমান নয়,বরং ১৬ কোটি মুসলমান। বহুকোটি মুসলমানের বাস ভারতের অভ্যন্তরেও। ভারতীয়দের মনে তাই প্রচন্ড মুসলিম ভীতি। এমন মুসলিম ভীতির কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের আচরন তাই বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার আশা নাই। ব্রিটিশদের হাতে দেশটি অধিকৃত হওয়ার ফলে ব্রিটিশের প্রশ্রয়ে সে সম্পর্ক পরিণত হয় চাকর ও মনিবের সম্পর্কে। চাকর-বাকরকে বেঁচে থাকার অধিকার দেয়া হলেও তাদেরকে কি স্বাধীন ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগও দেয়া হয়? সুযোগ দেয়া যায় কি শিক্ষাদীক্ষার?

ব্রিটিশের প্রতিপালনে বাঙালী হিন্দুর জীবনে রেনেসাঁ এসেছে। কিন্তু বাঙালী হিন্দুর সে রেনেসাঁ মুসলমানের জীবনে প্রচন্ড দুঃখ ও নাশকতা বাড়িয়েছে। তখন বাঙালী মুসলমানের কাঁধে চেপেছে দুটি জোয়াল। একটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শত্রুদের। অপরটি হিন্দু জমিদার ও মহাজনদের। বাঙালী মুসলমানের বেড়ে উঠার সে সুযোগ কেড়ে নিতেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলছে লাগাতর ষড়যন্ত্র। সেটি ১৯৪৭ সালের পূর্ব থেকেই। ১৯০৫ সালে বাংলার হিন্দুগণ আন্দোলন করেছে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে। কারণ তাতে তারা বাংলার মুসলমানদের কল্যাণ দেখেছিল। এমন কি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধেও তারা কলকাতায় বড় বড় মিছিল হয়েছে।সে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মানব ইতিহাসের আর কোথায়ও কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে? কিন্তু সেটি হয়েছে কলকাতার রাস্তায়। এমন একটি কদর্য আন্দোলনের জন্য বিবেকের পচনটা যে কত গভীর হওয়া দরকার -সেটি বুঝে উঠা কি এতই কঠিন? এমন গভীর ঘৃনা ও বিদ্বেষের কারণেই বাঙালী মুসলমানদের সংখ্যানুপাতে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের যে ন্যায্য দাবিটি দেশবন্ধ চিত্তরঞ্জন দাশ মেনে নিয়েছিলেন সেটিও কলকাতার হিন্দু বাবুগণ মেনে নেয়নি। এমন এক বৈরী মানসিকতা আজও  বেঁচে আছে ভারতের আগ্রাসী হিন্দুদের মনে। ফলে তা অসম্ভব করেছে বাংলাদেশের সাথে ভারতের প্রতিবেশীসুলভ সুসম্পর্ক গড়ে উঠাকে। কোন ভদ্রলোক কি প্রতিবেশীর ঘরের পাশ দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দেয়? এটি তো প্রতিবেশীকে চোর-ডাকাত ভাবার লক্ষণ। কোন ভদ্র প্রতিবেশী দেশ কি লাশ ঝুলিয়ে রাখে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ায়? কেড়ে নেয় কি নদীর পানি? নদীমুখে দেয় কি বাঁধ। ভারতীয়দের মনের কুৎসিত চিত্রটি কি এরপরও গোপন থাকে? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজ যা কিছু ঘটছে সেটি তো পুরনো ষড়যন্ত্রেরই ধারাবাহিকতা। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী ইসলামের জোয়ার দেখে ইসলামের শত্রুপক্ষ তো আরো আতংকিত। বাংলাদেশে ইসলাম জোয়ার রুখা তাই ভারতীয়দের কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়েও গুরুত্বপুর্ণ। তাই বাংলাদেশের নির্বাচনে পুঁজি বিনিয়োগ ও নির্বাচনের ফলাফলটি পক্ষে আনা ভারতীয়দের কাছে আনবিক বোমা বা দূরপল্লার মিজহাইল বানানোর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে ভারতীয়গণ বিশ্বস্থ মিত্র রূপে বেছে নিয়েছে আওয়ামী বাকশালীদের।একাত্তরে যাদেরকে সাথে নিয়ে ভারত পাকিস্তান ভেঙ্গেছিল,তাদেরকে সাথে নিয়েই আজ তারা বাংলাদেশের মেরুদন্ড ধ্বংসে নেমেছে। লক্ষ্য এখানে ইসলাম নির্মূলও। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আজে কবরে শায়ীত এবং ভোট-ডাকাতেরা ক্ষমতাসীন তা তো ভারতীয় ষড়যন্ত্রের ফলে। চাকর-বাকরেরা কখনোই মনিবের চরিত্র নিয়ে ভাবে না। ব্যাভিচারি দুর্বৃত্ত মনিবও চাকরবাকরদের কাছে প্রনামযোগ্য মহাপ্রভু গণ্য হয়। এমন চাকরবাকরদের কাছে ফিরাউন তো ভগবান রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারতীয়দের আগ্রাসী কদর্য চরিত্রও তাই আওয়ামী বাকশালীদের নজরে পড়ছে  না।তাই কোন ভারতীয় নেতা বা নেত্রী বাংলাদেশে এলে যেন চাকরপাড়ায় মহোৎসব শুরু হয়।

 

লড়াই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে 
বাংলাদেশের মাটিতে আজ যে লড়াই চলছে সেটি নিছক নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণত্ন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই নয়। এটি দেশের স্বাধীনতার বাঁচনোর লড়াই। লড়াই এখানে ইসলাম নিয়ে বেড়ে উঠার। তাই হামলা যে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে হচ্ছে তা নয়। হামলা হচ্ছে ইসলামের নির্মূল কল্পেও। তাই এ যুদ্ধটি স্রেফ শত্রুশক্তির চাকরবাকরদের সাথে নয়। মুল যুদ্ধটি বরং আওয়ামী বাকশালীদের মনিব ভারতের বিরুদ্ধে। ভারতও সেটি বুঝে। তারাও জানে একাত্তরের ন্যায় এবারের যুদ্ধটিও তাদের নিজেদেরই লড়তে হবে। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের বিনিয়োগটিও বিশাল। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা রয়ে এজেন্টগণ এখন আর শুধু রাজধানিতে বসে নাই। তারা প্রতিটি থানা ও প্রতিটি ইউনিয়নে পৌঁছে গেছে। হিন্দুদের বসিয়েছে পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। ভারত এখন তার বাকশলী চাকর-বাকরদের উপর ভরসা করছে না। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়েছে তাদের নিজেদের লোকদের। তাই শুধু রাজপথের মিছিল বা অবরোধে সহজে বিজয় আসবে না। স্বাধীনভাবে বাঁচার যুদ্ধটি আরো রক্তাত্ব হতে বাধ্য। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে হলে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হয়। স্বাধীনতার মূল্য তো এভাবেই দিতে হয়। আর এ যুদ্ধের শুরুটি আজ  থেকে নয়। ১৯৪৭য়ের পূর্ব থেকেই। বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিত্র খুঁজতে হয়। সে সত্যটি ১৯৪৭য়ের পূর্বে শেরে বাংলা ফজলুল হক,খাজা নাযিমউদ্দিন,হোসেন সহরোয়ার্দি, নুরুল আমীন, আকরাম খাঁর মত বাংলার মুসলিম নেতাগণ বুঝেছিলেন। তারা তারা সে যুদ্ধে সহযোদ্ধা পেতে অন্যান্য ভারতীয় মুসলমানদেরকে সাথে মৈত্রী গড়েছিলেন এবং তাদের সাথে নিয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধ লড়েছিলেন। ইসলামে এমন ঐক্য ফরজ। ফলে এটি ছিল সে কালের নেতাদের স্রেফ রাজনৈতিক প্রজ্ঞাই নয়, ঈমানী দায়ভারও। কিন্তু সে প্রজ্ঞা ও ঈমানীদায়ভার কি তাদের থেকে আশা করা যায় যারা শত্রুশক্তির চাকরবাকর হওয়াকেই জীবনের মূল লক্ষ্য বানিয়ে নেয়? কাশ্মিরের শেখ আব্দুল্লাহর মাঝে সে প্রজ্ঞা ও ঈমান ছিল না বলেই কাশ্মির স্থান পেয়েছে ভারতের পেটে। একই কারণে শেখ মুজিব বাংলাদেশকে গোলাম রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই মুজিব স্বাক্ষর করেছিল ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তি।

স্বাধীন ভাবে বাঁচার বর্তমান যুদ্ধটি বাঙালী মুসলিমদের এখন একাকীই লড়তে হবে। এ লড়াই থেকে পিছুহটার সুযোগ নেই। পিছু হটলে কাশ্মির, সিকিম ও হায়দারাবাদের ন্যায় ভারতের পেটে হজম হয়ে যেতে হবে। ভারতের দাসদের শাসন থেকে মুক্তির এ লড়াইটি দীর্ঘ ও রক্তাত্ব হতে বাধ্য। কিছু দিনের হরতাল ও অবরোধে কোন দেশেই স্বাধীনতা আসেনি।বাংলাদেশেও আসবে না। লড়াই কোন দেশবাসীকে দুর্বল করে না। বরং শক্তিশালী করে। জীবতদের চেতনা তো উর্বরতা পায় শহীদের রক্তে। তখন বেড়ে উঠে ঈমান। তাই যে দেশে শহীদের রক্ত নেই সে দেশে মুসলমানদের চেতনা তো মৃত। মুসলমানগণ একমাত্র তখনই বিশ্বশক্তি ছিল যখন তাদের জীবনে লাগাতর জিহাদ ছিল। নবীজী (সাঃ) ৭০ শতাংশ সাহাবী সে জিহাদে শহীদ হয়েছেন। দুর্বলতা ও পরাজয় আসে তো জিহাদ না থাকার কারণে। বাংলাদেশের জনগণকে এ সহজ সত্যটি অবশ্যই বুঝতে হবে।স্বাধীনতার মূল্য বিশাল। ইসলামের আদর্শ নিয়ে বেড়ে উঠার খরচও বিশাল। এ খরচ স্রেফ ভোট দিয়ে নয়,প্রচুর প্রাণের রক্ত দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। কাশ্মিরে এক লাখের বেশী মানুষ প্রাণ দিয়েছে,সিরিয়ায় প্রাণ দিয়েছে প্রায় ২ লাখ মানুষ। কিন্তু এখনও বিজয় জুটিনি। কিন্তু তারা যুদ্ধ ছাড়তে রাজি নয়। তাই আরো রক্ত দিচ্ছে। গাজার মাত্র ১০ লাখ মানুষ যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সর্ববৃহৎ সামরিক শক্তি ইসরাইলের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশ কি গাজার চেয়েও দুর্বল? ভারত কি ইসরাইলের চেয়েও শক্তিশালী?

 

মূল ইস্যু মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারি হওয়া

শত্রুর বিরুদ্ধে চলমান এ যুদ্ধে জিতলে হলে মহাশক্তিশালী মহান আল্লাহতায়ালাকে অবশ্যই পক্ষে আনতে হবে। এছাড়া বিজয়ের কোন পথ নাই। সম্ভাবনাও নাই। আর মহান আল্লাহতায়ালা পক্ষে থাকলে ভারত কেন,কোন বিশ্বশক্তিও কি তখন হারাতে পারে? ১৭ জন মোজাহিদের পক্ষেও তখন অবিভক্ত বাংলার ন্যায় বিশাল দেশজয়ও তখন সহজ হয়ে যায়। যুদ্ধে বিজয় আসে তো একমাত্র মহান আল্লাহ থেকেই। কিন্তু আজকের মুসমানগণ আল্লাহতায়ালাকে পক্ষ আনার বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা জাতের কাফের শক্তিকে পক্ষে আনার ফিকিরে ব্যস্ত। সে চেষ্ঠায় নেমেছে এমন কি অনেক ইসলামি দলও। তারা বিজয় ছিনিয়ে আনতে চায় নিজ নিজ ছল-চাতুরি, প্রচার কৌশল ও বাহুবলে। তাদের আগ্রহ নাই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা বাস্তবায়নে। আগ্রহ নাই আল্লাহতায়ালার দলের সদস্য হওয়ার। ফলে এসব আালেম-উলামা ও ইসলামি দলের নেতা-কর্মীদের মুখে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কথা যেমন নেই, তেমনি নেই খেলাফত ও জিহাদের কথাও। এরা যে শুধু ভারতের ভয়ে ভীতু তা নয়,বরং আধমরা তো তাদের চাকরবাকরদের ভয়েও। বিস্মযের বিষয়,এরা আবার জান্নাত লাভের কামনা রাখে! প্রশ্ন হলো,মহান আল্লাহতায়ালা কি তাঁর পবিত্র জান্নাতে ভীরু ও কাপুরুষদের প্রবেশাধিকার দিবেন?

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, ওয়া মা নাসরু ইল্লা মিন ইনদিল্লাহ,ইন্নাল্লাহা আজিজুন হাকীম। অর্থঃ বিজয় আসে একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে,নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান।– (সুরা আনফাল আয়াত ১০)।অতীতে যত পরাজয় এসেছে তা তো মহান আল্লাহর এজেন্ডার সাথে গাদ্দারির ফলে। মুসলমানগণ ব্যর্থ হয়েছে নির্ভেজাল ইসলামের পক্ষে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি যাতে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য লাভ অনিবার্য হয়ে যায়। মহান আল্লাহতায়ালাকে পক্ষে আনার পথ তো অতি সহজ। সে পথের কথা তো পবিত্র কোরআনে বার বার শোনানো হয়েছে। নির্দেশ দেয়া হয়েছে,হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও। সুরা সাফ আয়াত ১৪)। বলা হয়েছে, তোমরা আমাকে সাহায্য করো, আমিও তোমাদেরকে সাহায্য করবো। সুস্পষ্ট নির্দেশ এসেছে জিহাদের। বলা হয়েছে তোমাদের প্রস্তুতি হালকা হোক অথবা ভারী হোক,বেরিযে পড়ো অভিযানে।এবং জিহাদ করো তোমাদের সম্পদ ও জান দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে। (সুরা তাওবা আয়াত ৪১)।

 

মুসলমানগণ যখন সেক্যুলার রাজনীতির নেতাকর্মী ও সেপাহীতে পরিণত হয় তখন কি তারা মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য আশা করতে পারে? তখন তো আসে গযব। ঈমানদারের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তাই স্রেফ নামাযী বা রোযাদার হওয়া নয়। হজ-ওমরা পালনও নয়। এমন ইবাদত তো লক্ষ লক্ষ মুনাফিকও করে। খোদ নবীজী (সাঃ) আমলে এমন মুনাফিকদের সংখ্যা কি কম ছিল? ওহুদের যুদ্ধের সময় তারা ছিল প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আজ যে তাদের সংখ্যা কত বিপুল তা অনুমান করা কি এতই কঠিন? ঈমানদারের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি হলো একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক সাহায্যকারি হয়ে যাওয়া এবং তাঁর রাস্তায় লাগাতর জিহাদ করা। পরকালে জান্নাত লাভের এটিই তো একমাত্র রাস্তা। কি ভাবে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারি হতে হয় ও তার রাস্তায় জিহাদ করতে হয় সেটি মহান নবীজী (সাঃ) স্বহস্তে দেখিয়ে গেছেন। দেখিয়ে গেছেন নবীজী(সাঃ)র মহান সাহাবাগণও। সে পথটি হলো,রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি অঙ্গণে মহান আল্লাহতায়ালার নিষ্ঠাবান খলিফা রূপে দায়িত্ব পালন করা এবং তাঁর সার্বভৌমত্ব ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় জিহাদরত দলটির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা। মহান আল্লাহতায়ালা তো একমাত্র এমন দলকেই সাহায্য করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  তাঁর ফেরেশতা বাহিনী তাদের সাহায্যে যুদ্ধে যোগ দিতে সদাপ্রস্তুত। এনিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ চলে? ৭/৩/১৫

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *