কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on February 28, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
চাকর-বাকরের দেশ?
স্বাধীনতা ও অর্থোপার্জনের নামে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে সস্তা চাকর-বাকরের দেশে। মহিলাদের একাকী হজে যাওয়ার অনুমতি নাই। ইসলামে এমন কাজ সুস্পষ্ট হারাম। হজে যেতে হলে মহিলাদের জন্য সাথে চাই স্বামী,পিতা,পুত্র,ভাই বা অন্য কোন মোহরাম পুরুষ -যার সাথে বিবাহ হারাম। অথচ বাংলাদেশের সরকার হাজার হাজার মাইল দূরের দেশে চাকরানীর কাজে নারী-রপ্তানি করছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশ,সৌদি আরব সরকার বাংলাদেশ থেকে ঘরের কাজের জন্য বহু হাজার নারী শ্রমিক নিবে। সরকার এতে বাহবা নিচ্ছে নিজেদের পররাষ্ট্র নীতির বিশাল সফলতা রূপে।অথচ এমন কাজ বাংলার মুসলিম ইতিহাসে অতীতে কোন কালেই ঘটেনি। প্রতিটি মুসলিম দেশে এরূপ নারী রপ্তানি প্রতিটি যুগেই হারাম গণ্য হয়েছে। কিন্তু এমন হারাম কাজটি প্রথম শুরু করেন শেখ মুজিব। বহুশত নারীকে মুজিবের শাসনামলে গৃহভৃত্য বা চাকরানীর কাজে ইরানে রপ্তানি করা হয়েছিল। ইসলামের মৌল বিধি-বিধান নিয়ে মুজিব যে কতটা জাহেল তথা অজ্ঞ ছিল –এ হলো তার নজির। এমন জাহেল লোককে কোন ক্ষুদ্র মসজিদেরও কি ইমাম বা নেতা করা যায়? এমন ব্যক্তি কোন মুসলিম দেশের ইমাম বা নেতা হয় কি করে? রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসেছেন খোদ নবীজী (সাঃ)। তাঁর ইন্তেকালের পর সে আসনে বসেছেন খোলাফায়ে রাশেদার ন্যায় শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণ। এটিই তো ইসলামের রীতি। সে আসনে কি তাই ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য জাহেল ব্যক্তিকে বসানো যায়? তাতে কি ইসলাম ও মুসলমানদের কোন কল্যাণ হয়? এমন কাজ হতে দেয়া যে হারাম -সেটি বুঝার জন্য কি পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে? সে জন্য সামান্য ঈমান ও কান্ডজ্ঞানই কি যথেষ্ট নয়? বাংলাদেশের জনগণের মাঝে সে ঈমান ও কান্ডজ্ঞান কই? ঈমানদারের কাজ শুধু হিংস্র জন্তুজানোয়ারদের চেনা নয়,তাকে ইসলামের শত্রুদেরও চিনতে হয়। মুসলিমকে প্রতিমুহুর্ত বাঁচতে হয় সে জ্ঞানটুকু নিয়ে। নইলে মুসলমান ও ইসলামের যে ভয়ানক ক্ষতি হয়।এক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণেই বাংলাদেশ আজ ভয়ানক ক্ষতিরই শিকার।
অন্য দেশে ও অন্যের ঘরে যে চাকরানীর দিবারাত্র বসবাস -সে ঘরে কি উক্ত চাকরানীর ইজ্জত-আবরু, মানসন্মান ও জীবনের নিরাপত্তা থাকে? অথচ বাংলাদেশের সরকারের তা নিয়ে ভাবনা নাই। মুজিবের ন্যায় হাসিনারও ভাবনা মহিলাদের ইজ্জত-আবরু ও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে নয়। হাসিনা চায়,দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি। তাই চিংড়ি মাছ, গার্মেন্টেস ও পাটজাত দ্রব্যের সাথে শুরু হয়েছে নারী রপ্তানিও। লক্ষ্য, বৈদেশিক অর্থে দেশের ধনিদের জীবনে আরো জৌলুস আনা। তাতে ইসলামের শরিয়তি বিধান আবর্জনায় যাক, বিদেশীদের গৃহে নারীর সম্ভ্রম লুন্ঠিত হোক ও নির্যাতিত হোক -তাতে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নাই। সরকারের চাই বেশী বেশী বিদেশী মুদ্রা। অর্থের লোভ মানুষকে এভাবেই জাহান্নামে টানে। বিদেশে নারী রপ্তানিতে পাকিস্তান আজ্ও নামেনি। দরিদ্র আফগানিস্তানও নামেনি। এমনকি ভারতের দরিদ্র মুসলমানগণও এরূপ পাপের পথে রাখেনি। অথচ অর্থলাভের নেশায় বাংলাদেশের সরকার এমন কাজে এতটাই উতাল যে হারাম-হালাল নিয়ে ভাবনার সময় নেই। শরিয়তের বিধান শুনিয়ে কি এমন পাগল পাপীদের ঠেকানা যায়? ঠেকানো গেলে কি বাংলাদেশে শত শত পতিতাপল্লি গড়ে উঠতো?
দেশ দাস-শাসনের কবলে
পতিতারা তাদের ব্যাভিচারের অর্জন থেকে সরকারকে রাজস্ব দেয়। মদ্যপায়ীরা রাজস্ব দেয় তাদের মদের বোতলের উপর। তেমন রাজস্বের লোভে সরকার নিজেও মাতাল। রাজস্ব লাভের প্রতি এমন নেশাগ্রস্ততা ছিল কাফের ব্রিটিশ শাসকদের। তারাই পতিতাবৃত্তি, জুয়া ও মদ্যপানের ন্যায় বহুবিধ পাপাচারকে ভারতের বুকে বাজারজাত করেছিল। সরকারের চোখে এটি লাগাতর এক লাভের খাত, আদৌ লোকসান নাই। সাম্রাজ্যবাদি ব্রিটিশগণ চলে গেছে। কিন্তু রেখে গেছে তাদের আদর্শিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দাসদের। তাদের হাতে এ আদিম পাপাচার বাংলাদেশের মাটিতে শুধু যে ব্যবসারূপে বেঁচে আছে তা নয়, অতিশয় লাভজনক হওয়ার কারণে বিপুল বিস্তারও পেয়েছে। বেশী বেশী রাজস্ব লাভের নেশায় সরকার বরং এরূপ পাপাচারকে দিবারাত্র পাহারা দেয়। দেশে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের মাথাব্যাথা নেই। বরং খোদ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির হাতে মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। অথচ দেশের পতিতাপল্লি, মদের দোকান ও জুয়ার আড্ডাগুলোকে পুলিশ নিয়মিত পাহারা দেয়া হয় -যাতে সে পাপ অবাধ ও নিরাপদ বাজার পায়। সরকারের উচ্চ শিখরে হারাম-হালালের বিধান ও পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সিরাতুল মোস্তাকীম পরিত্যক্ত হলে সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউশন জনগণকে জাহান্নামে টানার কাজে যে কতটা ভয়ানক হাতিয়ারে পরিণত হয় -বাংলাদেশ হলো তারই নজির। বিপদের আরো কারণ, পাপের পথে টানার সে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান বা ইনস্টিটিউশনগুলো কাজ করছে জনগণের রাজস্বের অর্থে। শয়তানী শক্তি এভাবেই প্রতি দেশে কইয়ের তেলে কই ভাজে।
ব্যাভিচার, মদ্যপান, জুয়ার ন্যায় পাপাচারগুলো হলো সেক্যুলারিজমের প্রধানতম প্রতীক। একটি দেশে সেক্যুলারিজম কতটা প্রবল সেটি বুঝা যায় সে দেশে ব্যাভিচার, মদ্যপান, জুয়ার ন্যায় পাপাচারগুলোর বিস্তার দেখে। কারণ, সেক্যুলারিজমের মূল কথাঃ পার্থিব জীবনে পরিতৃপ্তি। পার্থিব সম্ভোগের সে পাপপূর্ণ আয়োজনে পরকালের ভাবনা ও মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে জবাবদেহীতার ধারণা সেকেলে বা ধর্মান্ধতা গন্য হয়। যে সমাজে সেক্যুলারিজম প্রবলতর হয়, সে সমাজে মশামাছির ন্যায় বেড়ে উঠে পাপীরাও। পাপাচারের পূর্ণ আজাদী ছাড়া সেক্যুলারিজম বাঁচে না। তাই ব্যাভিচার, সমকামীতা, নগ্নতার প্রদর্শণ ও মাতলামি সেক্যুলার দেশগুলিতে কোন অপরাধই নয়। বরং সেটিই তাদের সংস্কৃতি। পাপাচারের সে সংস্কৃতি বাঁচাতে বাংলাদেশের সরকার দিবারাত্র পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করেছে। পাপচার বিস্তারের এ প্রজেক্টে জনগণের সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে দেশের শতকরা ৯১ ভাগ মুসলমানকে রাজস্ব জুটাতে বাধ্য করা হচ্ছে। সেক্যুলার রাষ্ট্রে পাপাচারি নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ শুধু নিজেরাই জাহান্নামের পথে চলে না, জনগণকেও সে পথে টানে। কারণ রাষ্ট্র নামক গাড়িটির ড্রাইভিং সিটে তো তারাই। ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ার মূল বিপদ তো এখানেই।ইসলামের এ শত্রুপক্ষের রাষ্ট্র বাঁচানো এজন্যই পবিত্রতম জিহাদ।
জিহাদ কেন অনিবার্য?
সেক্যুলারিজমের বিপরীতে ইসলাম সম্পূর্ণ ভিন্ন দর্শন, ভিন্ন শিক্ষা ও ভিন্ন সংস্কৃতি দেয়। তা থেকে জন্ম নেয় মুসলিম জীবনে ভিন্ন ধরণের রাজনীতি। মু’মিনের জীবনে রাজনীতি তখন পরিণতি হয় আমৃত্যু জিহাদে। নামায-রোযা, হজ-যাকাতই মু’মিনের জীবনে একমাত্র ইবাদত নয়। সে ইবাদতের সাথে যে মিশনটিকে মহান আল্লাহতায়ালা প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ করেছেন সেটি হলো “আ’মিরু বিল মারুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার” অর্থঃ “ন্যায়ের নির্দেশ ও অন্যায়ের নির্মূল”। পাপাচারের নির্মূলের এ কাজটি স্রেফ ওয়াজ-নসিহতে হয় না। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যে দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র বিদ্রোহ, তারা ওয়াজ নসিহতে পাপাচার ছাড়েনা। পাপীরা বরং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যারা তাদের পাপাচারে বাধা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে সেক্যুলারদের রাজনীতিতে এজন্যই ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে নির্মূলের সুর। সে নির্মূল-প্রকল্প থেকে বাঁচতে ও রাষ্ট্র থেকে পাপ নির্মূলের মিশনে মু’মিনের জীবনে তখন অনিবার্য কারণেই জিহাদ এসে যায়। বস্তুত জিহাদই হলো মহান আল্লাহতায়ালার শত্রুদের নির্মূলে তাঁর নিজের নির্দেশিত মূল প্রকল্প। তাই যে ভূমিতে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশমান্যাকারি ঈমানদার থাকবে সে ভূমিতে জিহাদী প্রকল্পও থাকবে। ফলে সে জিহাদ যেমন মহান নবীজী (সাঃ)র জীবনে এসেছিল, তেমনি সাহাবায়ে কেরামের জীবনেও এসেছিল। দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে বিরামহীন জিহাদের কারণেই মুসলিম সমাজে ব্যভিচার, সমকামীতা, নগ্নতা ও মাতলামির ন্যায় পাপচার বাঁচে না। সেগুলি নবীজী (সাঃ)র যেমন আমলে বাঁচেনি, তেমনি সাহাবায়ে কেরামের আমলেও বাঁচেনি। কিন্তু আজ সেরূপ পাপাচার যে শুধু বেঁচে আছে তাই নয়, দিন দিন তা বলবানও হচ্ছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে আগে মঙ্গলপ্রদীপ, থার্টিফাস্ট নাইট, হোলী উৎসব, ভ্যালেন্টাইন দিবস, একুশের মিছিল, বর্ষবরণের রীতি ছিল না। এগুলো হলো মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ ও সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে জনগণকে দূরে রাখার শয়তানি প্রকল্প। দেশে জিহাদ না থাকলে শয়তানের প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান যে বিপুল ভাবে বাড়ে বাংলাদেশ হলো তারই দৃষ্টান্ত।
ঈমানদারির দায়ভার শুধু মহান আল্লাহতায়ালার অনুসরণ নয়, বরং নবীজী (সাঃ)র অনুসরণও। পবিত্র কোরআনে “আতীয়ুল্লাহ” (আল্লাহর অনুসরণ)এর সাথে “আতীয়ুররাসূল” (রাসূলের অনুসরণ)এর নির্দেশটি পবিত্র কোরআনে বার বার এসেছে। তবে রাসূলে পাকের অনুসরণের অর্থ এ নয় যে, নবীজী (সাঃ) যেভাবে নামায-রোযা, হজ-যাকাত পালন করতেন সে ভাবে শুধু সেগুলিই পালন করবে। বরং এটিও ফরজ যে, নবীজী (সাঃ) যেরূপ রাষ্ট্র, সমাজ, আইন-কানূন, সংস্কৃতি ও সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন সে মডেল অনুযায়ী আজও রাষ্ট্র, সমাজ, আইন-কানূন, সংস্কৃতি ও সভ্যতাও গড়ে তুলবে। একাজে ব্যর্থ হলে কি মুসলমানের ঈমানদারি বেঁচে থাকে? অথচ আজকের মুসলমানদের ব্যর্থতা এক্ষেত্রে বিশাল। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, আইন-আদালত ও সভ্যতা গড়ার ক্ষেত্রে আজকের মুসলমানগণ নবীজী (সাঃ)র অনুসৃত নীতি থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না। তারা অনুসরণ করছে পাশ্চাত্য দেশের পাপাচারপূর্ণ সেক্যুলার সমাজকে। ফলে তাদের রাষ্ট্র, সমাজ, আইন-কানূন, সংস্কৃতি ও সভ্যতায় ঈমানদারি ধরা পড়ে না। বরং যা ধরা পড়ে তা হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। আজকের মুসলমানদের এটিই মূল রোগ।
মূল রোগঃ পথভ্রষ্টতা
বাংলাদেশের মুসলমানদের মূল ব্যাধিটি কৃষি, শিল্প, পশু-পালন বা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নয়। বরং সেটি সিরাতুল মোস্তাকীম থেকে ছিটকে পড়ার। অথচ পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচা ও প্রতি মুহুর্তে সিরাতুল মোস্তাকীমে টিকে থেকে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা মানব জীবনে দ্বিতীয়টি নেই। জীবনের সে মূল এজেন্ডায় মু’মিনকে প্রতি মুহুর্তে মনযোগী রাখতেই নামাযের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা পাঠকে মহান আল্লাহতায়ালা বাধ্যতামূলক করেছেন। প্রশ্ন হলো, সুরা ফাতেহার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি কি? এটি একটি দোয়া। মানুষের জীবনে মূল এজেন্ডাটি ধরা পড়ে এ দোয়ায়। এজেন্ডা যদি হয় চাকুরি-বাকুরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যতে সফল হওয়া বা সন্তানলাভ, তবে দোয়াতে সেটি ধরা করে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রতিনিয়ত সে সফলাতর জন্য দোয়া করে। তবে মানুষ জীবনে সবচেয়ে বড় ভূলটি হয় জীবনের সে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাটি বেছে নিতে। ব্যক্তিকে সে সঠিক এজেন্ডা শেখাতেই নাযিল হয়েছে সুরা ফাতেহা। মহান আল্লাহতায়ালা সেটি শিখিয়েছেন একটি দোয়ার মাধ্যমে। এ দোয়াতে রয়েছে সিরাতুল মোস্তাকম তথা জান্নাতে পৌছার সরল রাস্তা পাওয়ার আকুল আকুতি। সে সাথে রয়েছে যারা গযবপ্রাপ্ত ও যারা পথভ্রষ্ট তাদের অনুসৃত পথ থেকে বাঁচার গভীর আর্জি। মু’মিনকে প্রতি মুহুর্তে সে আকুতি ও সে আর্জি নিয়ে বাঁচতে হয়। প্রতি মুহুর্তের বাঁচার মধ্যে সে আকুতি ও সে আর্জিকে বদ্ধমূল করতেই ৫ ওয়াক্ত নামাযের প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহা পাঠকে তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন। অথচ প্রতি রাকাতে সে পবিত্র দোয়াটি পাঠ করলেও বাংলাদেশের মুসলমানগণ আগ্রহ হারিয়েছে সিরাতুল মোস্তাকীমে পথ চলায়। আগ্রহ হারিয়েছে অভিশপ্ত কাফেরদের অনুসৃত গযবের পথ থেকে দূরে থাকার ক্ষেত্রেও। সেটির প্রমাণ মেলে তাদের রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতি থেকে। সিরাতুল মোস্তাকীমে চলায় সামান্যতম আগ্রহ থাকলে তারা কি বিদেশে নারী রপ্তানির কথা ভাবতো? আইন-আদালত থেকে কি বিলুপ্ত হতো শরিয়তি বিধান? বাংলাদেশ কি বার বার চিত্রিত হতো বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশরূপে? পথচলাটি সিরাতুল মুস্তাকীমে হলে মুসলমানের জীবনে নামায-রোযা, হজ-যাকাতই শুধু আসতো না, সে সাথে আসতো জিহাদ, শরিয়ত, খেলাফত ও একতা। তখন আগ্রহ বাড়তো পতিতাবৃত্তি, মদ-জুয়া, সূদ-ঘুষের শয়তানি পথ থেকে দূরে থাকার আগ্রহ। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যে নবী-প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকীমে নাই সেটি বুঝার জন্য কি বড় মাপের আলেম হওয়ার প্রয়োজন পড়ে? অথচ এ গুরুতর বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের আলেমদের মাঝে মাথাব্যাথা নেই। তারা ব্যস্ত নিজ পরিবারের রটিরুজি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। অথচ সাহাবায়ে কেরামের সামনে শরিয়তের বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহ হলে তৎক্ষাৎ জিহাদ শুরু হয়ে যেত। শুধু সাধারণ জনগণ নয়, আলেমগণও যে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত মিশন থেকে যে কতদূরে ছিটকে পড়েছে সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাঁকি থাকে?
হারাম-হালালের বিধানকে মুজিব যেমন পাত্তা দেয়নি,পাত্তা দিচ্ছে না হাসিনাও। স্বৈরাচারিদের কাছে শুধু জনগণের ভোটের অধিকার ও মৌলিক মানবাধিকারই কবরে যায় না। কবরে পাঠানো হয় খোদ মহান আল্লাহতায়ালার বিধানকেও। শরিয়তি বিধানের সাথে তখন মাটিচাপা পড়ে গরীব নাগরিকগণও। অতীত কালে মিশরে স্বৈরাচারি ফিরাউনদের কবরের উপর পিরামিড বানাতে গিয়ে হাজার হাজার দাস শ্রমিককে পাথরচাপা পড়ে প্রাণ দিতে হয়েছে। এ যুগেও কি সেটি কম হচ্ছে? এমন ফিরাউনের সংখ্যা কি বাংলাদেশে কম? এসব আধুনিক ফিরাউনদের হাতে রাজ্য না থাকলেও আছে মানুষ দাস বানানোর নিষ্ঠুর হাতিয়ার। তাদের জন্যও চাই প্রাসাদ নির্মাণের লক্ষ্যে বিশাল অংকের অর্থ। আর সেটির জন্য চাই সস্তায় বস্ত্র রপ্তানি করে বিপুল অংকের বিদেশী মূল্য। সে লক্ষ্য পূরণে শত শত নারীকে গার্মেন্টস ফাক্টরিতে আগুণে পুড়ে লাশ হতে হচ্ছে। রানা প্লাজার ন্যায় ধ্বসেপড়া বিল্ডিংয়ের তলায় বহু নারিকে জীবন্ত দাফনও হতে হচ্ছে। ফিরাউনদের কাছে গরীবদের ইজ্জতের বিষয়টি কোন কালেই গুরুত্ব পায়নি। গুরুত্ব পায়নি তাদের প্রাণে বাঁচার বিষয়টিও। তারা তো চায়, তাদের জৌলুস বাড়াতে এসব চাকর-বাকরেরা আগুণে পুড়বে, মাটি চাপা পড়বে, ইজ্জত-সম্ভ্রম বিলাবে ও বস্তিতে বস্তিতে কোনরূপে অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকবে।
ধ্বংসের গর্তে দেশ
যে শ্রমিকের কর্মস্থল চামড়ার কারখানায়, কাঁচা চামড়ার তীব্র গন্ধও সে টের পায় না। অথচ সে গন্ধ অন্যরা বহু দূর থেকে টের পায়। তেমনি অবস্থা বাংলাদেশের জনগণের। দেশ যে ডুবছে -সেটি তারা বুঝতেই পারছে না। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “দ্য নিউয়র্ক টাইমস” পত্রিকাটি সম্পাদকীয় লিখেছে “বাংলাদেশে অন দ্য ব্রিংক” অর্থাৎ বাংলাদেশ ধ্বংসের কেনারায়। শুধু “দ্য নিউয়র্ক টাইমস” নয়, নানা দেশের সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও সেটি টের পাচ্ছে। আগুনের জ্বলন্ত শিখা দেখার পরও সেখানে যে আগুন জ্বলছে সেটি বুঝতে কি পন্ডিত হওয়া লাগে? চোখ-কান থাকলেই সেটি বুঝা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের যে চোখকানা আছে -সেটি কি বিশ্বাস করা যায়? অথচ আসল সত্যটি হলো্, “দ্য নিউয়র্ক টাইমস” পত্রিকার সম্পাদকীয়তে যা লেখা হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়ানক। দেশটি আজ শুধু ধ্বংসের কেনারায় নয়, ঢুকে পড়েছে ধ্বংসের গভীর গর্তে। সে সত্যটি বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকেরই বুঝার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কর্ণধার কর্তাব্যক্তিগণ সেটি টের পাচ্ছে না। তারা বলছে দেশ ঠিকমতই চলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের এফ.বি.সি.সি.আই এর সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিনের উক্তি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তার কথা, গত ৪৪ দিনের হরতাল ও অবরোধে এক লাখ কোটি টাকার বেশী ক্ষতি হয়েছে।
দেশ যে অবরোধের শিকার, বহু মানুষ যে প্রতিদিন লাশ হচ্ছে এবং দেশে যে গুরুতর যুদ্ধাবস্থা সেটি দেশের স্বৈরাচারি সরকার মানতে রাজী নয়। অন্ধ চালকের ন্যায় তারা বরং দ্রুত ধেয়ে চলেছে ধ্বংসের দিকে। পবিত্র কোরআনে মহাজ্ঞানী আল্লাহতায়ালা এমন লোকদেরই অন্ধ ও বধির বলেছেন। আবু জেহল ও আবু লাহাবদের মত লোকদের চোখ ও কান কি ছিল না? তারা বরং নিজেদের বুদ্ধিমান ও চৌকশ মনে করতো। তারপরও মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাদেরকে অন্ধ ও বধির বলে অভিহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য শাস্তিটি হলো, তারা আচরন করবে অন্ধ ও বধিরের ন্যায়। গাড়ীর ড্রাইভিং সিটে বন্ধ ও বধিরদের বসানোর বিপদ ভয়াবহ। তেমনি দেশবাসীর জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হলো, দেশের ড্রাইভিং সিটে ইসলামের শত্রুদের বসানো। সেটি হলে দেশের জন্য শুধু আযাবই ধেয়ে আসে। আর বাংলাদেশে সেটিই হয়েছে। কারণ, আল্লাহর দ্বীনের শত্রুদের সাহায্য করা বা তাদের দৃষ্টিদান ও বিবেকদান মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত নয়। বাংলাদেশের আওয়ামী বাকশালীদের অপরাধ অনেক। তাদের অযোগ্যতাও বহুবিধ। কিন্তু পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ে যে অজ্ঞতা -সেটিই এ সরকারের সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা। এমন অযোগ্যতা নিয়েই হাসিনার পিতা শেখ মুজিব একাত্তরে বাংলাদেশীদের জন্য একটি ভয়ানক যুদ্ধ উপহার দিয়েছিল।এবং ডেকে এনেছিল দুর্ভিক্ষ ও তলাহীন ভিক্ষার পরিচয়।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018