জিহাদের আযান এবং নির্লিপ্ত মুসলিম
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on June 5, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
জিহাদের আযান যখন প্রতিক্ষণ
মুসলিম বিশ্বের কোণে কোণে আজ জিহাদের আযান। তবে সে আযান শুনতে সুস্থ কান নয়, ঈমান লাগে। মুসলিমদের সমস্যা এখানেই। তাই সুস্থ কান থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ মুসলিম সে আযান শুনতে পায় না। ফলে সে আযানে সাড়াও দেয়না। সেটি বুঝা যায় তাদের নির্লিপ্ততা দেখে। যে দেশে দখলদারী ইসলামের শত্রুপক্ষের, বিলুপ্ত যে দেশে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও শরিয়তী আইন, প্লাবন যেদেশে জুলুম ও দুর্বৃত্তির, সেদেশে প্রতিক্ষণ উচ্চারিত হয় জিহাদের আযান। ফিলিস্তিনে চলছে ইসরাইলী গণহত্যা, গণহত্যা চলছে কাশ্মীর ও আরাকানে। এবং অধিকাংশ মুসলিম দেশই আজ অধিকৃত নৃশংস রাজা-বাদশাহ ও স্বৈরাচারী বেঈমান শক্তির হাতে। সেসব অধিকৃত দেশে চলছে গুম, খুন, নির্যাতন, বিচার বহির্ভুত হত্যা এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। বস্তুত কোন মুসলিম ভূমি জালেম শক্তির হাতে অধিকৃত হওয়া মাত্রই শুরু হয় বিরামহীন জিহাদের আযান। সে জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সামর্থ্য যদি অধিকৃত দেশের মজলুম মুসলিমদের না থাকে তবে প্রতিবেশী মুসলিমদের উপরও জিহাদ ফরজ হয়ে যায়। ইসরাইলী আগ্রাসন প্রতিরোধ করার সামর্থ্য ফিলিস্তিনবাসীর নাই; জিহাদ তাই ফরজ হয়ে যায় প্রতিবেশী আরবদের উপর। সে জিহাদে শামিল হওয়ার নির্দেশ এসেছে সুরা হয়েছে সুরা নিসা’র ৭৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ ٱلرِّجَالِ وَٱلنِّسَآءِ وَٱلْوِلْدَٰنِ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَخْرِجْنَا مِنْ هَـٰذِهِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلظَّالِمِ أَهْلُهَا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّۭا وَٱجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
অর্থ: “এবং তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে নামছো না? অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী এবং শিশুরা আওয়াজ তুলেছে, “হে আমাদের রব, আমাদের বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা জালিম; এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে নিযুক্ত করুন একজন অভিভাবককে এবং আপনার পক্ষ থেকে প্রেরণ করুন একজন সাহায্যকারীকে।”
তাই নামাজের আযানে সাড়া দেয়াটাই আসল ঈমানদারী নয় -সে সামর্থ্য বহু ঘুষখোর, সূদখোর, মিথ্যাবাদী ও দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারীরও থাকে; বরং প্রকৃত ঈমানদারী তো জিহাদের আযানে সাড়া দেয়া। যার মধ্যে জিহাদ আছে, একমাত্র তারই রয়েছে প্রকৃত ঈমান। সে কথাটি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আরাকানের গণহত্যা ভন্ড মুসলিমদের বেঈমানী ও মুনাফিকি উলঙ্গ করে প্রকাশ করে দিয়েছে। তারা নামাযের আযানে হাজির হলেও ব্যর্থ হচ্ছে জিহাদের আযানে হাজির হতে। তাই ফিলিস্তিনের জিহাদ থেকে জাতীয়তাবাদী, স্বৈরাচারী, রাজতন্ত্রী ও সেক্যুলার আরবদের অবস্থান এতো দূরে। তারা পরিণত হয়েছে নিছক নীরব দর্শকে। অথচ নীরব দর্শক হওয়ার মাঝে কোন ঈমানদারী নাই, তাতে থাকে চরম বেঈমানী। বাঙালি মুসলিমগণ তেমনি দূরত্ব বজায় রেখেছে আরাকানের জিহাদ থেকে। এবং পাকিস্তানী ও আফগান মুসলিমগণ দূরত্ব রাখছে কাশ্মীরের জিহাদ থেকে। ওহুদ ও তাবুক যুদ্ধের সময় মুনাফিকগণ যেরূপ বাহানা খাড়া করেছিল, আজকের মুসলিমদের সামনেও সেরূপ বাহানা অনেক।
পবিত্র জিহাদ বনাম অসভ্য যুদ্ধ
মহল্লায় হিংস্র পশ ঢুকলে সভ্য মানুষ মাত্রই সেটিকে মারতে তাড়া করে; কেউ সে পশুর সাথে মিতালি গড়ে না। সেটিই হলো সভ্য মানুষের রুচি ও আচরণ। তেমনি মহল্লায় চোর-ডাকাত এবং দেশের শাসনক্ষমতায় স্বৈরাচারী শাসক ঢুকলে সভ্য মানুষ মাত্রই তাদের নির্মূলে নামে। স্বৈরশাসকের ডাকাতি সমগ্র দেশবাসীর উপর। হিংস্র পশুর ন্যায় স্বৈরশাসকেরও থাকে হিংস্রতা, নৃশংসতা, বর্বরতা ও চরম অসভ্যতা। তাই স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিটি সক্ষম মানুষের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে যায়। জিহাদের মধ্যেই মু’মিনের ঈমানদারী। এবং বেঈমানদের চরম বেঈমানী ও অসভ্যতা হলো স্বৈরশাসককে মেনে নেয়া। এমন বেঈমানের জীবনে যেমন হিজরত থাকে না, তেমনি জিহাদও থাকে না। বরং থাকে অসভ্য শাসকের সামনে আত্মসমর্পণ। বাংলাদেশে এরাই গণতন্ত্রের খুনি, ফ্যাসিবাদের জনক, হিন্দুত্ববাদী ভারতের সেবককে নেতা, পিতা ও বন্ধু বলে।
জিহাদ হলো ঈমানের পরীক্ষা নেয়ার এক অনিবার্য ক্ষেত্র। যারা জান্নাতে যেতে চায়, এ পরীক্ষায় অবশ্যই তাদের পাশ করতে হয়। দুর্বৃত্ত শাসকের বিরুদ্ধে জনগণের স্তরে সেরূপ একটি জিহাদ শুরু না হলে বুঝতে হবে সভ্য মানুষ ও সত্যিকার মু’মিন রূপে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে জনগণের দারুন ব্যর্থতা রয়ে গেছে। সে ব্যর্থতা নিয়ে কি জান্নাতে পৌঁছা যায়? এমন ব্যর্থ জনগণের দেশে দীর্ঘায়ু পায় স্বৈরশাসকগণ। তাই একটি দেশের স্বৈরশাসকের তাণ্ডব এবং জনগণের নীরব আত্মসমর্পণ দেখে একথা নিশ্চিত বলা যায়, সে দেশের জনগণও যেমন সভ্য নয়, তেমনি ঈমানদারও নয়। কারণ জনগণ সভ্য ও ঈমানদার হলে তো সেখানে ত্বরিৎ জিহাদ শুরু হয়ে যেত এবং স্বৈরশাসককে তখন আস্তাকুঁড়ে যেতে হতো।
মহান আল্লাহতায়ালা শুধু ভূমিকম্প, সুনামী, ঘুর্ণিঝড় ও মহামারী দিয়ে ঈমানের পরীক্ষা নেন না। পরীক্ষা নেন চোখের সামনে ভোটচোর, ভোটডাকাত, খুনি, স্বৈরাচারী, হিন্দুত্ববাদী সরকারের দালাল ও দুর্বৃত্ত চরিত্রের শাসককে খাড়া করেও। যারা সে স্বৈরশাসককে ভোট দেয়, তাকে মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় বলে সম্মান দেখায় এবং তার বর্বর শাসনকে নীরবে মেনে নেয় – এমন ব্যক্তিগণ ঈমানের পরীক্ষায় শূণ্য নম্বর পেয়ে ফেল করে। এমন বেঈমানদের জিহাদের ময়দানে নিয়ে ঈমানের পরীক্ষা নেয়া লাগে না।
প্রতিটি মানুষকে মহান আল্লহতায়ালা পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। প্রাণ বাঁচানোর অধিকারের ন্যায় প্রতিটি ব্যক্তির জন্মগত অধিকার হলো স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশের অধিকার ও নেক আমল করার অধিকার। কারো প্রাণ কেড়ে নেয়া যেমন অপরাধ, তেমনি গুরুতর অপরাধ হলো কারো স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া। অপরাধ হলো ধর্মপালনের অধিকার কেড়ে নেয়া। অথচ স্বৈরাচারী শাসকগণ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই কেড়ে নেয় না, কেড়ে নেয় ধর্মপালনের স্বাধীনতাও। ধর্মপালনের স্বাধীনতার অর্থ শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও কুর’আন পাঠের স্বাধীনতা নয়, বরং সেটি হলো ইসলামের পূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা। ইসলামের সে এজেন্ডা হলো, মহান আল্লাহতায়ালার একক সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা। আরো এজেন্ডা হলো, মিথ্যা ও দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। এগুলি পূর্ণ ভাবে পালিত না হলে পূর্ণ ইসলাম পালনের কাজটি আদৌ হয়না। তাই কোথাও পূর্ণ ইসলামের পালনের চেষ্টা শুরু হলে অবশ্যই সেখানে জিহাদ শুরু হয়। কারণ, স্বৈরশাসকগণ কখনোই ইসলামের পূর্ণ পালন হতে দিতে রাজী নয়। কারণ, ইসলামের পূর্ণ পালন হলে স্বৈরশাসকের শাসন বাঁচে না। অথচ ঈমানদারকে অবশ্যই বাঁচতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা নিয়ে, এখানে আপোষ চলে না। ফলে ঈমানদারকে বাঁচতে হয় জিহাদ নিয়ে। নইলে সে মুনাফিক গণ্য হয়। এবং মুনাফিকের জন্য বেদনাদায়ক আযাব যেমন এ দুনিয়ায়, তেমনি জাহান্নামেও। পবিত্র কুর’আনে জিহাদের সে হুকুমটি বার বার এসেছে। তাই মু’মিনদের জীবনে সেরূপ জিহাদ না থাকাটাই বিস্ময়ের বিষয়। সে বিস্ময় নিয়েই মহান আল্লাহতায়ালা প্রশ্ন রেখেছেন:
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ ٱنفِرُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ٱثَّاقَلْتُمْ إِلَى ٱلْأَرْضِ ۚ أَرَضِيتُم بِٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا مِنَ ٱلْـَٔاخِرَةِ ۚ فَمَا مَتَـٰعُ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا فِى ٱلْـَٔاخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ
অর্থ: “হে মু’মিনগণ, তোমাদের কী হলো, তোমাদের যখন বলা হলো আল্লাহর পথে তথা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লড়াইয়ে বেরিয়ে পড়, তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে আঁকড়ে ধরলে জমিনকে? তোমরা কি আখেরাতের বদলে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ অতি সামান্যই।” –(সুরা তাওবাহ, আয়াত ৩৮)।
উপরিউক্ত আয়াতটি থেকে বুঝা যায়, পৃথিবী পৃষ্ঠে বসবাসকারী মানবদের নিয়ে মহান রাব্বুল আ’লামীনের কি এজেন্ডা। তাঁর এজেন্ডা হলো, তিনি তাঁর কুর’আনী প্রেসক্রিপশনের পূর্ণ প্রয়োগ চান -যেমন ভাবে প্রয়োগ করেছিলন নবীজী (সা:)। তিনি তাঁর সৃষ্ট এ পৃথিবীকে দুর্বৃত্তমুক্ত রাখত চান। তিনি প্রতিষ্ঠা চান সত্য ও সুবিচারের। এ নিয়ে কোন আপোষের অবকাশ নাই। তবে তিনি চান, সে কাজটি সম্পাদিত হবে একমাত্র তাঁর মু’মিন বান্দাদের দিয়ে, ফিরেশতাদের নিয়ে নয়। কারণ মু’মিনগণ হলো একাজে তাঁর একমাত্র খলিফা তথা নির্বাহী অফিসার -ফিরেশতাগণ নন। মু’মিনগণ জান্নাতের যোগ্য বিবেচিত হয় এ কাজে আত্মনিয়োগের মধ্য দিয়ে। এটি তাদের জন্য অবশ্য পালনীয় হোম ওয়ার্ক। ফলে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার প্রতিষ্ঠা নিয়ে বাঁচা মু’মিনের জীবনের মূল এজেন্ডা হয়ে দাঁড়ায়। সে কাজে জিহাদ হলো মূল হাতিয়ার। পবিত্র কুর’আনে জিহাদের প্রতি এজন্যই এতো তাগিদ। সুরা তাওবার ৪১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
ٱنفِرُوا۟ خِفَافًۭا وَثِقَالًۭا وَجَـٰهِدُوا۟ بِأَمْوَٰلِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ: “বেরিয়ে পড় -প্রস্তুতি হালকা হোক অথবা ভারী হোক; এবং তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের জীবন দিয়ে জিহাদ করো আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তাঁর আইন ও তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্যে)। এটিই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে।” এর অর্থ দাঁড়ায়, মহান আল্লাহতায়ালার প্রত্যাশা হলো প্রতিটি মু’মিন বাঁচবে সে জিহাদ নিয়ে। কিন্তু সে জিহাদ না থাকাটাই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে গাদ্দারী। সে গাদ্দারী আনে বেদনাদায়ক শাস্তি -যেমন এ দুনিয়ার জীবনে, তেমনি আখেরাতে।
একটি গাছকে স্বস্থানে রেখে সেখানে আরেকটি গাছ লাগানো যায় না। তাই সে গাছটিকে শিকড়শুদ্ধ উপড়িয়ে ফেলতে হয়। তেমনি কোথাও ইসলামের প্রতিষ্ঠা দিতে হলে সেখান থেকে কাফির শক্তিকে তার শিকড়শুদ্ধ নির্মূল করতে হয়। সেটিই মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা। তাই তিনি চান, ইসলামের শত্রুদের শিকড় কাটতে। এবং সেটি তাঁর মু’মিন বান্দাদের দিয়ে। সে ঘোষনা এসেছে সুরা আনফালের ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
وَيُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُحِقَّ ٱلْحَقَّ بِكَلِمَـٰتِهِۦ وَيَقْطَعَ دَابِرَ ٱلْكَـٰفِرِينَ ٧
لِيُحِقَّ ٱلْحَقَّ وَيُبْطِلَ ٱلْبَـٰطِلَ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُجْرِمُونَ ٨
অর্থ: “এবং আল্লাহ চান, সত্যকে তার বাণী দিয়ে প্রতিষ্ঠা দিতে এবং নির্মূল করতে চান কাফিরদের। সেটি এ জন্য যে, তিনি প্রতিপন্ন করবেন সত্যকে সত্য রূপে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা রূপে।”
বেঈমানের যুদ্ধ ও ঈমানদারের জিহাদ
স্বৈরশাসন কোন সভ্য ও ভদ্র ও সুস্থ শাসনব্যবস্থা নয়; এটি এক অসভ্য, অভদ্র ও নৃশংস শাসনব্যবস্থা। নিজেদের দখলদারী বাঁচাতে স্বৈরশাসকদের যুদ্ধটি বিরামহীন। তাদের যুদ্ধ যেমন জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবতা ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, তেমনি ইসলামের বিরুদ্ধেও। তাদের এজেন্ডা জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকারশূণ্য, মানবতাশূণ্য ও ধর্মশূণ্য করার । প্রতিটি স্বৈরশাসকই অনুসরণ করে নমরুদ, ফিরাউন ও এজিদের ন্যায় দুর্বৃত্ত শাসকদের। রাষ্ট্রের ন্যায় পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানটি স্বৈরশাসকদের দখলে গেলে সেটিকে তারা শুধু জুলুম, নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতী, ভোটডাকাতী ও নানা রূপ দুর্বৃত্তির হাতিয়ারে পরিণত করে না, বরং সমগ্র রাষ্ট্রকে পরিণত করে জাহান্নামের বাহনে। এরূপ করাটিই শয়তানের মূল প্রজেক্ট। শয়তানের সে প্রজেক্টকে সফল করে স্বৈরশাসকগণ। এক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য, জনগণকে জান্নাতে নেয়ার লক্ষ্যে মহান আল্লাহতায়ালার যে প্রজেক্ট -সেটিকে ব্যর্থ করে দেয়া। প্রতি যুগে এদের দেখা গেছে নবী-রাসূলের বিরুদ্ধে প্রবল বাধা রূপে খাড়া হতে। তারা তাদের হত্যার চেষ্টা করেছে। শয়তানের অভিন্ন মিশন নিয়ে তারা যেমন হযরত ইব্রাহিম (আ:), হযরত মূসা (আ:) ও হযরত ঈসা (আ:)’য়ের আমলে হাজির হয়েছে, তেমনি দেখা গেছে নবীজী (সা:)’য়ের আমলে। সে অভিন্ন এজেন্ডা ও অভিন্ন নৃশংসতা নিয়ে অধিকাংশ মুসলিম দেশে আজও তারা বেঁচে আছে। বাংলাদেশ, মিশর ও সিরিয়াসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশে তাদের বিরামহীন যুদ্ধটি সেসব ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে -যারা ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ চায়। তারা তাদেরকে কারাবন্দী করে, নির্যাতন করে এবং ফাঁসিতে চড়ায়।
স্বৈরশাসকদের সবচেয়ে বড় হামলাটি হয় দেশবাসীর ঈমান ও চেতনার ভূমিতে। কারণ তারা জানে, যাদের ঈমান ও সুস্থ্য বিবেক আছে -তারা কখনোই তাদের দুর্বৃত্তি ও দুঃশাসনের সমর্থক হয়না। বরং বিরোধীতা করে। ফলে স্বৈরশাসকগণ তাদেরকে চিরশত্রু মনে করে। তারা চায়, প্রতিটি মানুষ বাঁচুক তাদের আজ্ঞাবহ দাস রূপে। এজন্যই প্রতিবাদ জানালে গুম, খুন ও অপহরণের শিকার হতে হয়। নমরুদ ও ফিরাউন কথা বলার সুযোগ নবীদেরও দেয়নি। একই নীতি শেখ হাসিনারও। সত্য কথা বলা এবং জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলাও বাংলাদেশে তাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই এদের নির্মূল ছাড়া কি সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ অসম্ভব? এজন্যই সবচেয়ে বড় নেক কর্ম হলো স্বৈরশাসনের নির্মূল। একটি দেশে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা কতটা বিজয়ী হবে এবং সভ্য রাষ্ট্র কতটা নির্মিত হবে -সেটি নির্ভর করে এই জিহাদের উপর। তাই কে কতটা ঈমানাদার সেটিও প্রকাশ পায় সে জিহাদে অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে।
নিয়েত যখন জিহাদ থেকে দূরে থাকা
নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করেও বহু মানুষ কেন জিহাদের ন্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত থেকে দূরে থাকে -সেটি এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ প্রশ্নের জবাব মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে অতি স্পষ্ট ভাবে দিয়েছেন। অভাব এখানে তাদের নিয়েতের। নিয়েত এখানে জিহাদ থেকে দূরে থাকার। হিদায়েত প্রাপ্তি কোন মামূলী বিষয় নয়, বরং হিদায়েত পাওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এজন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো “ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম”। অর্থ: হে আল্লাহ, হিদায়েত দিন সিরাতাল মুস্তাকীমের পথে। নামাজী মাত্রই সে দোয়াটি প্রতি নামাজের প্রতি রাকাতে পাঠ করে। যে ব্যক্তি হিদায়েত পায়, সে ব্যক্তি পায় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ দান।
হিদায়েত পাওয়ার পর মহান আল্লাহতায়ালার আরেক শ্রেষ্ঠ দান হলো জিহাদের ন্যায় সর্বোচ্চ ইবাদতে যোগ দেয়ার সৌভাগ্য ও সামর্থ্য। যারা সে রহমত পায় তারাই পায় সরাসরি জান্নাতে পৌঁছার সুযোগ। তখন তাদের আর রোজ হাশরের বিচার দিনের অপেক্ষা করতে হয় না। জিহাদের ন্যায় সর্বোচ্চ ইবাদতের এই হলো সর্বোচ্চ পুরস্কার। কিন্তু সে বিশাল দান পাওযার জন্য মু’মিনের নিজস্ব নিয়েত ও প্রস্তুতি থাকতে হয়। সেটি যেমন সমৃদ্ধ ঈমানের, তেমনি জিহাদের। জিহাদে অংশ নেয়ার অর্থই হলো জান্নাতের পথে যাত্রা শুরু। কিন্তু এক্ষেত্রে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষিত নীতি, জান্নাতের এ যাত্রাপথ থেকে ভন্ড মুসলিমদের দূরে রাখা। কারণ, জান্নাতের এ পবিত্র কাফেলায় মুনাফিকদের স্থান নাই। নামাজ-রোজা ও হ্জ্জ-যাকাত পালন করেও যারা মিথ্যা বলে, ঘুষ খায়, সূদ খায়, স্বৈরাচারী হয়, জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী ও সেক্যুলার রাজনীতি করে -তাদেরকে কি তিনি এ জান্নাতের যাত্রা পথে ঢুকার সুযোগ দেন? তাদের জন্য জিহাদের ন্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত ও সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কারের পথটি বন্ধ রাখাই মহান আল্লাহতায়ালার নীতি।
জিহাদের মুজাহিদদের রিক্রটমেন্ট করেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। কারণ, জিহাদের মালিকানা (ownership) একমাত্র তাঁর। এজন্যই জিহাদকে বলা হয় আল্লাহর পথে জিহাদ। তাই সে জিহাদের জন্য সৈনিক রিক্রুট করার দায়িত্বও তিনি নিজ হাতে নেন। তাই এ পবিত্র জিহাদে অংশ নেয়ার সুযোগ একমাত্র তারাই পায় -যারা খাঁটি ঈমানদার এবং যাদের থাকে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার প্রবল তাড়না। এবং সে সাথে তাড়না থাকে প্রস্তুতিরও। মহান আল্লাহতায়ালা যেমন তাদের ঈমানকে দেখেন, তেমনি দেখেন সে প্রস্তুতি। যাদের ঈমান ও প্রস্তুতি দেখে তিনি খুশি হন, তাদের জন্য তিনি জিহাদের রাস্তা খুলে দেন। সেরূপ ঈমান ও জিহাদের সেরূপ প্রস্তুতি না থাকায় ওহুদের যুদ্ধ থেকে বাদ পড়েছে মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাই এবং তার তিন শত সহচর। নবীজী (সা:)’র পিছনে নামাজ পড়েও তারা জিহাদের মুজাহিদ হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়নি। তেমনি অনেক নামাজ-রোজা পালনকারী বাদ পড়েছে তাবুক যুদ্ধের সময়। তাবুক যুদ্ধের সে প্রেক্ষাটকে সামনে রেখে নাযিল করা হয়েছে সুরা তাওবার ৪৬ ও ৪৭ নম্বর আয়াত। এটি আয়াত দুটি অতি শিক্ষণীয়। কারণ, এ আয়াত দুটিতে মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর পথে জিহাদে মুজাহিদ রিক্রটমেন্টের নীতিমালা। বলা হয়েছে:
۞ وَلَوْ أَرَادُوا۟ ٱلْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا۟ لَهُۥ عُدَّةًۭ وَلَـٰكِن كَرِهَ ٱللَّهُ ٱنۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ ٱقْعُدُوا۟ مَعَ ٱلْقَـٰعِدِينَ ٤٦
لَوْ خَرَجُوا۟ فِيكُم مَّا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًۭا وَلَأَوْضَعُوا۟ خِلَـٰلَكُمْ يَبْغُونَكُمُ ٱلْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّـٰعُونَ لَهُمْ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلظَّـٰلِمِينَ ٤٧
অর্থ: “আর যদি তারা জিহাদে বের হওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে তারা তার জন্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো; কিন্তু আল্লাহ তাদের জিহাদে বের হওয়াকে অপছন্দ করলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে পিছে হটিয়ে দিলেন, আর তাদেরকে বলা হলো, “তোমরা বসে থাকো বসে থাকা লোকদের সাথে। যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো, তবে তারা তোমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি বৃদ্ধি করতো এবং ফিতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে তোমাদের মাঝে ছুটাছুটি করতো। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাদের কথার অধিক শ্রবণকারী। আর আল্লাহ জালিমদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত। ”
তাবুক যুদ্ধের সময় কিছু মুসলিম নানা অজুহাত দেখিয়ে নিজেদেরকে জিহাদ থেকে দূরে রেখেছিল। জিহাদের জন্য তাদের যেমন ঈমানী প্রস্তুতি ছিল না, তেমনি ছিল না জিহাদের প্রস্তুতি। অথচ মুসলিমদের শুধু নামাজের প্রস্তুতি থাকলে চলে না, থাকতে হয় জিহাদের প্রস্তুতি। কারণ নিজেকে জিহাদের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাটি প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরজ -যার নির্দেশ এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
অর্থ: এবং তাদের (শত্রুদের) মোকাবেলায় তোমাদের সর্বসামর্থ্য দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করো এবং প্রস্তুত করো তোমাদের অশ্ববাহিনীকে; এবং তা দিয়ে সন্ত্রস্ত করো আল্লাহর শত্রুদের এবং তোমাদের শত্রুদের।”
তাই নবীজী (সা:)’র সাহাবাদের মাঝে এমন একজনও ছিলেন না -যার জীবনে জিহাদের প্রস্তুতি ছিল না। তাদের ঘরে শুধু জায়নামাজই থাকতো না, ঢাল, তলোয়ার, বর্শা, তীর-ধনুকের ন্যায় অস্ত্রও থাকতো। নবীজী (সা:) নিজেও তাঁর গৃহে নানা ধরণের অস্ত্র রাখতেন। কিন্তু আজ সে প্রস্তুতি ক’জনের। এমন কি ঘুষখোর, সূদখোর, মিথ্যাবাদী দুর্বৃত্তদের ঘরেও জায়নামাজ থাকে। কিন্তু তাদের কি জিহাদের নিয়েত ও প্রস্তুতি থাকে?
মহান আল্লাহতায়ালা চাইতেন, যাদের নাই জিহাদের নিয়েত এবং নাই জিহাদের প্রস্তুতি -তারা জিহাদ থেকে দূরে থাকুক। তাদেরকে দূরে রাখার মাঝেই তিনি মুসলিম বাহিনীর কল্যাণ দেখেছিলেন। ভাল আপেল থেকে পচা আপেলগুলিকে পৃথক করার মাঝেই কল্যাণ, নইলে পাশের গুলিকেও পচিয়ে ফেলে। এ প্রসঙ্গে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের ব্যাখ্যাটি তুলে ধরেছেন সুরা তাওবার উপরিউক্ত দুটি আয়াতে। মুসলিম উম্মাহর জীবনে এরূপ অবস্থা শুধু ওহুদ ও তাবুক যুদ্ধ কালে নয়, বার বার সৃষ্টি হবে -সেটি মহান আল্লাহতায়ালা জানতেন। তাই সেরূপ অবস্থায় কি হবে তাঁর নিজের নীতিটি পবিত্র কুর’আনের উপরিউক্ত আয়াতে তুলে ধরেছেন -যাতে মুসলিমগণ ক্বিয়ামত অবধি তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। উপরিউক্ত আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হলো, জিহাদে একমাত্র তারাই সাড়া দেয় যাদের রয়েছে জিহাদের নিয়েত ও প্রস্তুতি। মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে বেছে নেন এবং তাঁদেরকে জান্নাতের যোগ্য করে গড়ে তোলেন। যারা দূরে থাকে, বুঝতে হবে তারা বঞ্চিত হয়েছে মহান আল্লাহতয়ালার রহমত থেকে। এবং মহান আল্লাহতয়ালার বিচারে এরূপ দুর্বল ঈমানের লোকদের জিহাদ থেকে দূরে রাখার মধ্যেই মুসলিমদের কল্যাণ।
ঈমানদারীর পুরস্কার
যারা মহান আল্লাহতয়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদে শহীদ হয় -তাদের হাতে তিনি জান্নাতের টিকেট তুলে দেন। প্রকৃত ঈমানদারকে এভাবেই তিনি পুরস্কৃত করেন। শাহাদতের তথা জান্নাতের টিকিট পাওয়াই হলো এ জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। যারা সেটি পায়, তারা বিনা বিচারে জান্নাতে প্রবেশ করে। মহান আল্লাহতয়ালা শহীদের সে প্রাপ্তিকে “ফাউজুল আজিম” অর্থাৎ বিশাল বিজয় রূপে ভূষিত করেছেন। শহীদকে কবরের আযাব, পুল সিরাত, রোজ হাশর ও আলমে বারযাখের ধাপগুলি পাড়ি দিতে হয়না। একটি জনগোষ্ঠির মানুষকে মহান আল্লাহতয়ালা কতটা ভাল বাসেন -সেটি বুঝা যায় সে জনগোষ্ঠির মাঝে শহীদের তথা জান্নাতের টিকিটধারীদের সংখ্য দেখে। জান্নাতের সে টিকেট তিনি কখনোই ডাকাত পাড়ায়, কাফির পল্লী বা সেক্যুলার রাজনৈতিক শিবিরে বিতরণ করেন না। সেটি পায় একমাত্র মু’মিনদের জামায়াত।
সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ জনগোষ্ঠি হল নবীজী (সা:)’র সাহাবায়ে কেরাম। তাদের অবদান হলো, পৃথিবীর বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে তারা বিজয়ী করেছেন মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে। প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনকে। এবং নির্মাণ করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। মানব ইতিহাসের কোন কালেই সেটি হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালা তাদের সে বিশাল কাজের পুরস্কার দিয়েছেন তাদের মাঝে সবচেয়ে বেশী হারে জান্নাতের টিকিট দিয়ে। আর কোন জাতি বা জনগোষ্ঠিকে তিনি এতো বড় নিয়ামত দেননি। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী শাহাদতের দরজা পেয়েছেন। সাহাবাদের পর সে টিকেট সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় পেয়েছেন আফগান মুজাহিদগণ। তারা সে পুরস্কারটি পেয়েছে ২০ বছরের বেশী কাল ধরে জিহাদের লিপ্ত থাকার কারণে। এখন সে টিকিট বিপুল সংখ্যায় পাচ্ছে গাজার মুসলিমগণ। বাঙালি মুসলিমদের মত যারা মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী না করে প্লাবন এনেছে চুরিডাকাই, ভোটডাকাতি, দুর্বৃত্তি ও নৃশংস সন্ত্রাসের -তাদের মাঝে জান্নাতের টিকিটধারীদের সংখ্য অতি নগন্য। ১৭ কোটি মুসলিমের দেশে শতকরা ১ জন দূরে থাক, ২০ লাখের মাঝে একজন হবে না। বুঝতে হবে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত আদায় করলে, মসজিদ মাদ্রাসা গড়লে এবং ধর্মের নামে ধর্মবব্যবসা করলে জান্নাতের সে টিকেট মেলে না। সে জন্য তো শাহাদতের প্রস্তুতি নিয়ে জিহাদে নামতে হয়।
বিপুল ধনসম্পদ, অনেক সন্তান-সন্ততি এবং বিশাল সাম্রাজ্য মহান রাব্বুল আলামীন এমন কি চোর-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক, জালেম স্বৈরাচারীর ন্যায় ভয়ানক অপরাধীদেরও দেন। কিন্তু তারা কখনোই জান্নাতের টিকেট পায় না। তাদের জন্য বরাদ্দ হলো, অনন্ত কালের জন্য জাহান্নামের টিকেট। জাহান্নামের এ টিকেট তাদের জন্যও যারা যুদ্ধ করে এবং নিহত হয় সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদ, কম্যুনিজম, সেক্যুলারিজম, মিথ্যা ধর্ম এবং দুর্বৃত্ত নেতা ও স্বৈরশাসকদের বিজয়ী করতে। ব্যক্তির জান, মাল, মেধা ও দৈহিক বল -এসব কিছুই মহান আল্লাহতায়ালার গচ্ছিত আমানত। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করা ছাড়া অন্য লক্ষ্যে সে সামর্থ্যগুলির বিনিয়োগ গুরুতর অপরাধ। সেটি গাদ্দারী। তাই যেসব শাসক বা নেতা জনগণকে জাতীয়তাবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ, ফ্যাসিবাদ, সমাজতন্ত্রের ন্যায় অনৈসলামিক এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে যুদ্ধে নেয় -তারা বস্তুত তাদেরকে জাহান্নামে নেয়।
সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলির অপরাধ অনেক। তারা চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি ও ব্যাংক ডাকাতির ন্যায় বহুবিধ অপরাধ করে; দুর্বৃত্তির প্লাবনও আনে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় অপরাধটি অন্যত্র। সেটি হারাম যুদ্ধে টেনে নিয়ে জনগণের হাতে জাহান্নামের টিকিট ধরিয়ে দেয়ার। পাশ্চত্যের সেক্যুলারিস্টগণ দুটি বিশ্ব যুদ্ধ বাধিয়ে বহু লক্ষ সৈনিককে জাহান্নামে নিয়েছে। মানব ইতিহাস এমন শয়তানী প্রকল্পে ভরপুর। বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেরূপ একটি অপরাধ হয়েছে ১৯৭১’য়ে। সেটি বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেক্যুলারিস্টদের হাতে। সাড়ে চৌদ্দশত বছরের মুসলিম ইতিহাসে এমনটি কখনোই ঘটেনি যে পৌত্তলিক কাফির শক্তির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুসলিমগণ যুদ্ধ করেছে। কারণ, কাফিরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করা ইসলামে হারাম। সে ঘোষণা এসেছে সুরা আল-ইমরানের ২৮ নম্বর ও সুরা মুমতাহেনার ১ নম্বর আয়াতে। অতীতে মুসলিমগণ সব সময়ই যুদ্ধ করেছে কাফির শক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু একাত্তরে মুসলিম নামধারী সেক্যুলারিস্ট বাঙালিগণ ভিন্ন ইতিহাস গড়েছে। বন্ধু নয়, হিন্দুত্ববাদী ভারতের অনুগত গোলামে পরিণত হয়েছে। পৌত্তলিকদের অর্থ, অস্ত্র, ও প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং তাদের নিমক খেয়ে একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গার াদ্ধে ভারতীয় কাফিরদের অধীনে তাদের কলাবোরেটরে পরিণত হয়েছে।
বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধে ও রাজনীতিতে ইসলামের প্রতি কোন কালেই কোন অঙ্গীকার ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ইসলামের প্রতি কোন রূপ অঙ্গীকার রাখাকে তারা সাম্প্রদায়িকতা বলে। এসব সেক্যুলার যুদ্ধগুলি এজন্যই কারো জন্য শাহাদতের রাস্তা খুলেনা। পাকিস্তান ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু একাত্তরের চেতনাধারীদের যুদ্ধ শেষ হয়নি। তাদের বর্তমান যুদ্ধটি ইসলামপন্থীদের নির্মূলে এবং ইসলামের উত্থান প্রতিরোধে। সে সাথে তাদের যুদ্ধটি বাংলাদেশের বুক থেকে গণতন্ত্র, সুষ্ঠ নির্বাচন ও মৌলিক মানবাধিকারের নির্মূলে। কারণ তাদের প্রভু ভারত সেটিই চায়। তাই জান্নাত পাওয়ার জন্য শুধু মদ-গাজা, সূদ- জুয়া ও শুকর খাওয়া থেকে বাঁচলে চলেনা, অবশ্যই সেক্যুলারিস্টদের রাজনীতি ও তাদের সৃষ্ট যুদ্ধগুলি থেকেও দূরে থাকতে হয়। কারণ, এ যুদ্ধগুলি হলো মানুষের হাতে জাহান্নামের টিকেট ধরিয়ে দেয়ার যুদ্ধ।
স্বৈরশাসক মাত্রই আল্লাহতায়ালার শত্রু
প্রতিটি স্বৈরাচারী শাসকেরই রয়েছে নিজ নিজ এজেন্ডা। তারা চায়, সে এজেন্ডার পূর্ণ বিজয়। তাদের সে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার কোন স্থান নাই। কারণ, একই ভূমিতে দুটি বিপরীত এজেন্ডার প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তাই স্বৈরাচারী শাসক মাত্রই মহান আল্লাহতায়ালার শত্রু। মহান আল্লাহতায়ালাও তাঁর নিজ এজেন্ডার প্রতিষ্ঠা চান। ঈমানদার মাত্রই সে এজেন্ডাকে বিজয়ী করার সৈনিক। ফলে নিজেদের শাসন বাঁচাতে স্বৈরাচারী শাসকদের সর্বাত্মক যুদ্ধটি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে এবং সে সাথে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে। এজন্যই বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে ভোটডাকাত ফ্যাসিস্ট হাসিনার যুদ্ধটি এতো তীব্র। হাসিনা তাই শাপলা চত্বরে তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। ইসলামপন্থী নেতাদের জেলে নিয়েছে এবং ফাঁসিতে চড়িয়েছে। এবং কুর’আনের তাফসিরের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। বাজেয়াপ্ত করেছে জিহাদ বিষয়ক বই।
প্রশ্ন হলো, যে মুসলিম দেশে বিজয়টি হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাত স্বৈরাচারী শাসকের, বুঝতে কি বাকি থাকে, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে সে দেশের মুসলিম জনগণের গাদ্দারী কত বিশাল? সে গাদ্দারীটাই প্রকট ভাবে হচ্ছে বাংলাদেশের ন্যায় একটি মুসলিম দেশে। লাখ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে এবং ২০ লাখ মানুষের তাবলিগী ইজতেমা করে কি সে গাদ্দারী ঢাকা যায়? হৃদয়ে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকলে তো স্বৈরাচারী শাসন শুরুর সাথে সাথে জিহাদ শুরু হতো। মুসলিমদের আদি পিতা ইব্রাহীম (আ:)’য়ের অধীনের কোন সেনাবাহিনী ছিল না; তাঁর কোন জামায়াত ও বিপুল সংখ্যক অনুসারীও ছিল না। তিনি ছিলেন একা। কিন্তু একাই তিনি নমরুদের ন্যায় স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে খাড়া হয়েছিলেন। তাঁর ছিল মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার অদম্য তাড়না। সে তাড়নার বলেই তিনি নমরুদের বিরুদ্ধে একাকী খাড়া হয়েছিলেন। হযরত মূসা (আ:) খাড়া হয়েছেন ফিরাউনের বিরুদ্ধে। সেরূপ একাকী খাড়া হওয়ার হুকুম এসেছে নবীজী (সা) ও তাঁর উম্মতের উপরও। সে নির্দেশ এসেছে সুরা সাবা’র ৪৬ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
۞ قُلْ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍ ۖ أَن تَقُومُوا۟ لِلَّهِ مَثْنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُوا۟ ۚ مَا بِصَاحِبِكُم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌۭ لَّكُم بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍۢ شَدِيدٍۢ ٤٦
অর্থ: “ বলুন (হে মহম্মদ), তোমাদের প্রতি আমার একটি উপদেশ, খাড়া হয়ে যাও আল্লাহর জন্য (অর্থাৎ আল্লাহর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে) -জোড়বদ্ধ ভাবে অথবা একাকীই। অতঃপর ভেবে দেখ, তোমাদের সাথীর মধ্যে কোন পাগলামী নাই। সে তো আসন্ন আযাব সম্পর্কে তোমাদের একজন সতর্ককারী বৈ কেউ নন।”
হযরত ইব্রাহীম (আ:) প্রাচীন ইরাকের স্বৈরশাসক নমরুদের বিরুদ্ধে একাকী খাড়া হয়েছিলেন। সেটি অনেকের কাছেই পাগলামী মনে হয়। সুরা সাবা’র উপরিউক্ত আয়াতে মহান নবীজী (সা:)কে ওয়াজ করতে বলা হচ্ছে, জোড়া বেঁধে অথবা একাকীই আল্লাহর জন্য খাড়া হওয়ার তাগিদ দিয়ে। অনেকের কাছে সেটিও পাগলামী মনে হতে পারে। হযরত ইমাম হোসেন (রা:) মাত্র ৭২ জন অনুসারী নিয়ে জালেম শাসক ইয়াজিদের বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে খাড়া হয়েছিলেন। সেটিকেও অনেকে পাগলামী বলেন। কিন্তু উপরিউক্ত আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা নিজে সাক্ষী দিচ্ছেন, এরূপ একাকী খাড়া হওয়া কোন পাগলামী নয়; বরং এটিই হলো বিশুদ্ধ ঈমানদারী। প্রকৃত ঈমানদারের তাড়না থাকতে হবে নিজের যা সামর্থ্য আছে তা নিয়েই মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে খাড়া হওয়ার।
বস্তুত মুসলিম হওয়ার শর্তই হলো, তাকে আদি পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ:)’র সূন্নত নিয়ে বাঁচতে হয়। কিন্তু মুসলিমগণ আজ সেভাবে বাঁচে না। বরং তারা বাঁচে স্বৈরশাসকের সামনে নতজানু হয় এবং নীরবে বিজয় তুলে দেয়। এরূপ নিষ্ক্রিয়তা ও জিহাদশূণ্যতা থেকে বুঝা যায় মুসলিম নামধারী এ জনগণ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে গাদ্দারী নিয়ে বাঁচতে চায়। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা কি ঘোষণা দিলেন -সেটির পরওয়া তারা করে না। তারা বরং বাঁচতে চায় স্বৈরাচারী শাসকের প্রতি আত্মসমর্পণ এবং সহযোগিতা নিয়ে। বাঙালি মুসলিমগণ তাই কাফির ব্রিটিশদের শাসন মেনে নিয়েছে ১৯০ বছরের জন্য। এখন তারা আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচে ভোটডাকাত হাসিনার সামনে। তবে সেটি যে অতি বেদনায়নক শাস্তির পথ -সে ঘোষণা এসেছে সুরা তাওবা’র ৩৯ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
إِلَّا تَنفِرُوا۟ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًۭا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْـًۭٔا ۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌ
অর্থ: “যদি তোমরা যুদ্ধে বের না হও, তবে তোমাদের বেদনাদায়ক শাস্তি দিবেন এবং অন্য জাতিকে তোমাদের স্থানে বসিয়ে দিবেন; এবং তোমরা তাঁকে কোন ক্ষতিও করতে পারবে না। এবং সকল কিছুর উপর তিনি শক্তিশালী।”
উপরিউক্ত আয়াতে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যাদের জীবনে আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ নাই -তাদের জন্য অনিবার্য হলো বেদনাদায়ক শাস্তি। বুঝতে হবে, মহান আল্লাহতায়ালা কোন ঘোষণাই কিতাবে বন্দী থাকার জন্য আসে না; তিনি যা ঘোষণা দেন -সেগুলি তিনি কার্যে পরিণত করেন। তাই কেউ জিহাদ থেকে দূরে থাকলো অথচ তার উপর আযাব আসলো না -সেটি কি ভাবা যায়? সে বেদনাদায়ক শাস্তির রয়েছে নানা রূপ। সেটি যেমন ভূমিকম্প, সুনামী, ঘুর্ণিঝড় ও মহামারি রূপে আসে, তেমনি আসে দেশী-বিদেশী শত্রুর হাতে পরাজয়, নৃশংস অধিকৃতি ও গোলামী রূপে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকেও তাই রহমত বলা যায়না।
মুসলিমগণ জিহাদ পরিত্যাগ করেছে বহুশত বছর আগেই। তখন থেকে শুরু হয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তির পর্ব। মুসলিম ভূমি একের পর এক অধিকৃত হয়েছে কাফির শক্তির হাতে। বাগদাদ, দামেস্ক, জেরুজালেম, নিশাপুর, সমরখন্দ, বোখারার ন্যায় শহরের রাস্তাগুলি রক্তাক্ত হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে। ধর্ষিতা হয়েছে নারীরা। বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত জনপদ। বাংলার বুকেও ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসনের আযাব এসেছে অতি ভয়াবহ ভাবে। সে ইংরেজ লুণ্ঠন ১৭৬৯-৭০ সালে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ দিয়েছে -যাতে বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা গেছে অনাহারে। তাঁতীদের আঙ্গুল কেটে মসলিন শিল্পের ন্যায় প্রসিদ্ধকে শিল্পকে ধ্বংস করা হয়েছে। অথচ মুসলিম জীবনে যখন জিহাদ ছিল, এরূপ আযাব কখনোই তাদের স্পর্শ করেনি। তখন বরং দেশে দেশে তারা বিজয়ী হয়েছে এবং সে সাথে সম্মানিতও হয়েছে।
১৯৪৭’য়ে বাংলার উপর বিদেশী শত্রুদের শাসন শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন চলছে দেশী শত্রুদের নৃশংস শাসন। শয়তানী শক্তির বিজয়ের কারণে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ ভূমিতে প্রতিষ্ঠা পায়নি ইসলামী রাষ্ট্র। ফলে প্রতিষ্ঠা পায়নি মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন। ইসলামী রাষ্ট্র, মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন না থাকাটি প্রমাণ করে, জনগণ জিহাদ নিয়ে বাঁচে না। এবং তারা বাঁচে না ইসলামের পূর্ণ পালন নিয়ে। আর ইসলাম-পালন এবং জিহাদ না থাকার অর্থ, মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে গাদ্দারী নিয়ে বাঁচা। এবং সে গাদ্দারীর কারণেই মুসলিম ভূমিতে বিশাল বিজয়টি শয়তানের অনুসারীদের। বাঙালি মুসলিমগণ সে বিজয়টি তুলে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদের দোসরদের ঘরে। এবং এভাবে শয়তান ও তার অনুসারীদের ঘরে যারা বিজয় তুলে দেয়, তারা কি কখনো প্রতিশ্রুত আযাব থেকে দূরে থাকতে পারে?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018