দুর্বৃত্ত হওয়া কীরূপে সহজ হয় এবং কীরূপে অসম্ভব হয় সৎ হওয়া?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on April 15, 2023
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সেক্যুলারিজমের নাশকতা
কে দুর্বৃত্ত হবে এবং কে সৎ হবে -সেটি পানাহার, ধন-সম্পদ, ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ুর উপর নির্ভর করে না। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা দেশের মোটা-তাজা সম্পদশালী ব্যক্তিও অতি স্বার্থপর ও ডাকাত হতে পারে। আবার মরুভূমির শীর্ণকায় দরিদ্র মানুষও অতিশয় সৎ ও পরোপকারী হতে পারে। মানুষের চরিত্র নির্ভর করে তার চিন্তার মডেলের উপর। এই জন্যই সুরা বনি ইসরাইলের ৮৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালার বয়ান, “বলুন (হে নবী), প্রতিটি মানুষ কাজ করে তাঁর (বিশ্বাস, চেতনা বা দর্শনের) মডেল অনুযায়ী।” ব্যক্তির কর্ম, চরিত্র, আচরণ, বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি হলো তাঁর বিশ্বাস, চেতনা বা দর্শনের মডেলের প্রতিচ্ছবি। সে মডেল পাল্টে গেলে মানুষের চরিত্রও পাল্টে যায়।
উপরে বর্ণিত আয়াতটির মাধ্যমে নবীজী (সা:)কে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দিলেন, কারো চরিত্র ও কর্মকে বদলাতে হলে তার দর্শনের মডেলটি বদলাতে হবে। বিপ্লব আনতে হবে চেতনার সে ভূমিতে। মুসলিম ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলি শুধু ভূগোলের দখলদারি নিয়ে হয়নি, হয়েছে চেতনা রাজ্যের দখলদারি নিয়ে। মহান নবীজী (সা:) ও খোলাফায়ে রাশেদার হাতে যত যুদ্ধ হয়েছে সেগুলির লক্ষ্য তো সেটিই ছিল। চেতনার মডেল পাল্টাতে না পারলে শুধু ভৌগলিক মানচিত্রের উপর দখল নিয়ে লাভ কি? তখন ভৌগলিক মানচিত্রের উপর দখলদারি বার বার পরিবর্তিত হলেও সে ভূগোলের উপর গুণগত দিক দিয়ে ভিন্নতর ও উন্নতর সভ্যতা গড়ে উঠে না। এরই উদাহরণ হলো ভারত। হাজার বছর ধরে ভারতের ভৌগলিক মানচিত্রে বহুশত বার পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তাতে চিন্তার মডেলে পরিবর্তন না আসায় ভারতের বুকে ভিন্ন ও উন্নত চরিত্রের কোন সভ্যতা গড়ে উঠেনি। ভারতীয়গণ একই রূপ সনাতন বিশ্বাস নিয়ে হাজার হাজার বছর যাবত একই রূপ গরুপূজারী, মূর্তিপুজারী ও লিঙ্গপূজারী রয়ে গেছে। তাদের পোষাক পরিচ্ছদ ও খাদ্যে যে পরিবর্তন এসেছে সেটিও মুসলিমদের প্রভাবে। নইলে ভারতীয়গণ সেলাই করে পোষাক তৈরীর শিল্পও জানতো না। নারীদের জন্য শাড়ী এবং পুরুষের জন্য ধুতি –এই ছিল ভারতীয়দের পোষাক।
তাই লক্ষ্যটি কাউকে জান্নাতে নেয়া হলে বিপ্লব আনতে হয় তার দর্শনের মডেলে। মহান নবীজী (সা:) সেটিই করেছিলন। তিনি আরবের বুকে কোন শিল্প বা কৃষি বিপ্লব আনেননি। তিনি এনেছিলেন আরবদের চিন্তা রাজ্যে বিপ্লব। এবং সেটিই ছিল সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ বিপ্লব। পৌত্তলিক আরবগণ আখেরাতে বিশ্বাস করতো না। ফলে তাদের ছিল না জাহান্নামের ভয়। তাদেরকে নবীজী (সা:) পরকালে জবাবদেহীতা এবং জাহান্নাম ও জান্নাতের উপর বিশ্বাসী করেন। পবিত্র কুর’আনের অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো এটি। এতেই তাদের চরিত্র ও কর্ম পাল্টে যায়। ফলে সে আরব ভূমিতে জন্ম নেয় ভিন্ন চরিত্রের মানব ও ভিন্ন চরিত্রের সভ্যতা। এরই ফলে সেখানে গড়ে উঠে মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। কাফিরদের কাফির হওয়া এবং ইসলাম থেকে দূরে থাকার মূল কারণটি যে আখেরাতের ভয় না থাকা -সেটিই বলা হয়েছে সুরা মুদাচ্ছিরের ৫৩ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “না, তাদের ইচ্ছা কখনোই পূরণ হবার নয়, (কাফিরদের মূল রোগটি) হলো, তারা আখেরাতকে বিশ্বাস করে না।”
শয়তান ও তার অনুসারীদের কাজের শুরুও মানুষের চেতনার মডেলে পরিবর্তন আনা নিয়ে। শয়তানী শক্তিবর্গও তাই শুধু ভৌগলিক মানচিত্র দখলে নেয় না, দখল জমায় মনের মানচিত্রের উপরও। বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের ন্যায় ব্রিটিশের গোলামগণ যেভাবে ইসলাম থেকে দূরে সরেছে এবং নিজেরা ইসলামের শত্রুতে পরিণত হয়েছে -সেটি তো তাদের চেতনার ভূগোল কাফির ব্রিটিশদের হাতে দীর্ঘকাল অধিকৃত হওয়ার কারণে। তারা খৃষ্টান হয়নি বটে, কিন্তু অনেক পথ দূরে সরেছে ইসলাম থেকে। তারা বিচ্যুৎ হয়েছে সিরাতাল মুস্তাকিম থেকে। ব্যর্থ হয়েছে পূর্ণ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠতে। এজন্যই তারা ঘোরতর বিরোধী হলো ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ এবং প্যান-ইসলামী চেতনার ঝান্ডা নিয়ে বেড়ে উঠার। এ জন্যই সহজে তারা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের রাজনৈতিক পার্টনারে পরিণত হতে পারে। সেটিই দেখা গেছে ১৯৭১ সালে।
শয়তানের কাজ, আখেরাতের ভাবনা থেকে সরিয়ে মনযোগ ইহলৌকিক কল্যাণের তালাশে নিবিষ্ট করা। অর্থাৎ সেক্যুলারিস্ট বানানো। পরকালের ভাবনাশূণ্যতাই সেক্যুলারিস্টদের ট্রেডমার্ক। অথচ যারা আখেরাতের ভাবনা নিয়ে বাঁচে, নিঃস্বার্থটি হওয়াটি তাঁদের কাছে ইবাদত। কারণ, তাদের গোলপোষ্ট হলো জান্নাত। ফলে স্বার্থপর হওয়াটাই তাদের কাছে পাপের পথ। কারণ, পাপের পথে চললে অসম্ভব হয় জান্নাতে পৌঁছা। অথচ সেক্যুলারিস্টদের কাছে জীবনের পদে পদে স্বার্থশিকারই মূল এজেন্ডা। কারণ তাদের গোলপোষ্ট হলো এ পার্থিব জীবনকে আনন্দময় করা। এজন্যই তারা জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী, দলবাদী, ফ্যাসিবাদী ও উপনিবেশবাদী হয়। এমনকি ঔপনিবেশিক শক্তির কলাবোরেটরও হয়। এজন্যই তাদের পক্ষে অসম্ভব হয় নিঃস্বার্থ হওয়া। বরং সহজ হয় দুর্বৃত্ত হওয়া।
মানব জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী চালিকাশক্তি হলো তার স্বার্থচেতনা। সে পথে স্বার্থ নাই, সে পথে কেউ যায় না। একমাত্র পাগল ও মৃতরাই স্বার্থহীন। মানুষ নানা রূপ কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যাশিক্ষা, চাকুরি-বাকুরি, যুদ্ধ-বিগ্রহে নিজ সামর্থ্যের বিনিয়োগ করে মূলত স্বার্থ হাছিলের তাড়নাতে। স্বার্থ শিকারের তীব্র তাড়নায় এমন কি সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে অন্য মহাদেশে পৌঁছে। সেক্যুলারিস্টদের জীবনে স্বার্থসিদ্ধির সে তীব্রতা আরো বেশি। ক্ষুধার্ত গরু যেখানেই ঘাস দেখে সেদিকে দৌড়ায়। চিৎকার দিয়ে সে গরুকে রুখা যায় না। রুখতে হয় গরুর গলার রশিকে খুটির সাথে শক্ত ভাবে বেঁধে রেখে। স্বার্থ হাছিলের তাড়নাতেই মানুষ চুরি করে, ডাকাতি করে, পতিতাবৃত্তি করে, ঘুষ খায়, সূদ খায়, ব্যাভিচারি করে। রাজনীতির ময়দানে এমন স্বার্থশিকারীগণই ভোটডাকাত, সন্ত্রাসী, স্বৈরচারি ও ফ্যাসিস্ট হয়। সেক্যুলারিস্টদের মনে আল্লাহর ভয় কাজ করে না। স্বার্থশিকারের অপরাধ থেকে একমাত্র তখনই বিরত হয় যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়া ও জেল-জরিমানার নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখে।
অপর দিকে ঈমানদার ব্যক্তি সকল প্রকার দুর্নীতি থেকে দূরে থাকে জাহান্নামের ভয়ে। মানুষ কীরূপে জাহান্নামে পৌঁছে এবং সেখানে পৌঁছার ভয়াবহতাই বা কী –তা নিয়ে যার সঠিক জ্ঞান আছে সে কখনোই পাপ বা দুর্বৃত্তির পথে পা রাখে না। যেমন জেনে বুঝে কেউই আগুনে হাত দেয় না। জাহান্নামের উপর বিশ্বাস এবং জাহান্নামের আগুনে দগ্ধিভূত হওয়ার ভয়ই ইসলামের গৌরব যুগে মুসলিমদের চরিত্রে বিপ্লব এনেছিল। তাদের মধ্যে তাড়াহুড়া শুরু হয়েছিল জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচায় এবং সে সাথে জান্নাতের জন্য নিজেকে যোগ্যতর করায়। অথচ ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবের জাহেলগণ আল্লাহতায়ালার উপর বিশ্বাস করতো। সন্তানদের নাম আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান রাখতো। কিন্তু তারা আখেরাতে বিশ্বাস করতো না। তাদের চরিত্রে তখনই বিপ্লব আসে যখন পবিত্র কুর’আন তাদের বিশ্বাসের মডেলে ইনকিলাব আনে। তখন শুরু হয় জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা এবং জান্নাতে পৌঁছার সার্বক্ষণিক তাড়না। এই তাড়নাই তাদেরকে ফেরশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর করে। ইসলামের গৌরব যুগে তো সেটিই দেখা গেছে।
কিন্তু সেক্যুলারিস্টদের মূল রোগটি হলো, আখেরাতের ভয়শূণ্যতা। ইসলাম থেকে দূরে সরাই তাদের নীতি। এজন্যই সেক্যুলারিস্টদের পক্ষে দুর্বৃত্ত হওয়া অতি সহজ হয়ে যায়। এবং অসম্ভব হয় সৎ ও নিঃস্বার্থ হওয়া। তাই একটি দেশে সেক্যুলারিজমের প্লাবন আসার সাথে সাথে সে দেশে প্লাবন আসে দুর্বৃত্তি ও নানারূপ পাপাচারের। বাংলাদেশ হলো তারই উদাহরণ। ইউরোপে সেক্যুলারিজমের প্লাবন আসাতে ইউরোপবাসী বর্ণবাদ, বর্ণবাদী নির্মূল, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, কম্যুনিজম,উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিক যুদ্ধ ও বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় মানুষ ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ও বর্বর কর্মে ইতিহাস গড়ে।
পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেয়া যায়, কিন্তু সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিকে ফাঁকি দেয়া যায় না। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটে মহান আল্লাহতায়ালার রাডারের নিচে। পুলিশের ভয়ের চেয়ে এ ভয় বহুগুণ বেশি শক্তিশালী। সে ভয় সর্ব মুহুর্তে কাজ করে ঈমানদারের মনে এবং তাঁর চেতনা ও চরিত্র বিশাল বিপ্লব আনে। এজন্যই নবীজী (সা:) ও খোলাফায়ে রাশেদার আমলে জনগণকে চুরি-ডাকাতি, রাহাজানী, ধর্ষণ থেকে দূরে রাখতে হাজার হাজার পুলিশ পালতে হয়নি। তখন মানুষের বিবেক পরিণত হয়েছিল সার্বক্ষণিক পুলিশে। বিবকের অঙ্গণে জাহান্নামের ভয়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে লাখ লাখ পুলিশ প্রতিপালন করে লাভ হয়না। বরং পুলিশেরা নিজেরাও দুর্নীতিপরায়ন হয় এবং দুর্বৃত্তদের সেবাদাসে পরিণত হয়। এ জন্যই বাংলাদেশে ভোটচুরি ও ভোটডাকাতি করতে ডাকাত পাড়া থেকে ডাকাত আমদানী করতে হয়না। সে কাজটি দেশের পুলিশ বাহিনী, সেনা বাহিনী ও প্রশাসনিক বাহিনীই নিজ হাতে সুচারু ভাবে সম্পন্ন করে দেয়। বাংলাদেশে সেরূপ ডাকাতি দেশজুড়ে দেখা গেছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে। সেক্যুলাজিম সৎ হওয়া কীরূপে অসম্ভব করে এবং দুর্বৃত্তিতে কীরূপে প্লাবন আনে -বাংলাদেশ হলো তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। বিশ্বের যারাই সেক্যুলারিজমের নাশকতা সম্বন্ধে জানতে চায়, তাদের জন্য বাংলাদেশ শিক্ষণীয় হতে পারে।
মানুষের মধ্য জাহান্নামের ভয় বাঁচিয়ে রাখার মাঝেই মানুষের মহা কল্যান –সেটি যেমন দুনিয়ার জীবনে, তেমনি আখেরাতে। দুর্নীতিমুক্ত সভ্য সমাজের নির্মাণে এছাড়া ভিন্ন পথ নাই। ইতিহাসের এটি প্রমাণিত সত্য বিষয়। দুর্নীতি পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখায় জাহান্নামের ভয়ের যে নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা -তা শত শত পুলিশের চেয়েও শক্তিশালী। পুলিশ কারো উপর সারাক্ষণ নজরদারী করতে পারে না। কিন্তু জাহান্নামের ভয় কাজ করে প্রতিক্ষণ এবং আমৃত্যু। তাই মানব সভ্যতার ভয়ানক ক্ষতি হয় চেতনা থেকে জাহান্নামের ভয় বিলুপ্ত হলে। রাষ্ট্র তখন দূর্নীতিতে ভরে উঠে। যেমনটি ঘটে সবুজ ধানের ক্ষেতে গরুর গলার রশি খুলে দিলে। অথচ সেক্যুলারিস্টগণ দুর্বৃত্তায়নের সে কাজটিই করে। এবং সেটি মানুষের চেতনা থেকে আখেরাতের ভয় বিলুপ্ত করে।
শয়তানের মূল এজেন্ডা হলো মানুষকে জাহান্নামে নেয়া। শয়তান সে ঘোষিত এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে হযরত আদম (আ:)’য়ের আমল থেকেই। তবে শয়তান শুধু মূর্তিপূজা, গরুপূজা, যীশুপূজা, বৌদ্ধপূজা বা নাস্তিকতার মধ্য দিয়ে জাহান্নামে নেয় না। জাহান্নামে নেয় দুর্নীতির পথে টেনে। কারণ, দুর্নীতির পথে চলার অর্থই হলো জাহান্নামের পথে চলা। একজন মুসলিমকে মূর্তিপূজারী বা গরুপূজারী বানানো কঠিন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ বানানো সহজ। এমনকি নামাজী ও রোজাদারকে সহজে ঘুষখোর, সূদখোর, মিথ্যাবাদী বানানো যায়। সে পথে নেয়ার লক্ষ্যে শয়তান মানুষকে সেক্যুলারিজমে দীক্ষা দেয়। বাংলাদেশে শয়তানের সে কৌশল বিপুল ভাবে সফল হয়েছে। সেটি বুঝা যায়, দুর্নীতিতে দেশ যখন বিশ্বে ৫ বার প্রথম হয়। বুঝা যায়, দেশে যখন গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, অর্থপাচারের প্লাবন আসে। সেটি আরো বুঝা যায়, হিন্দুত্ববাদী ভারতের সেবাদাসদের হাতে বাংলাদেশের অধিকৃতি দেখে।
ব্যক্তির গায়ের রঙের চেয়েও অধিক দৃশ্যময় হলো তার চরিত্র, চেতনা ও আচরণ। এগুলি সরবে কথা বলে। গায়ের কুৎসিত কালিমা কসমেটিক লাগিয়ে লুকানো যায়, কিন্তু চরিত্র লুকানো যায় না। সেটি ব্যক্তির কথা–বার্তা, আচার–আচরণ, পোষাক–পরিচ্ছদ, কর্ম ও লেখনীর মাধ্যমে অতি প্রকট ভাবে প্রকাশ পায়। যে ব্যক্তি সূদী ব্যাংকে চাকুরি করে, যে নারী বেপর্দা ভাবে চলাফেরা করে, যার লেখনীতে শয়তান কথা বলে, যে লোক সেক্যুলার রাজনৈতিক দলের ক্যাডার এবং যে ভোট দেয় ইসলাম বিরোধী ও ইসলামে অঙ্গিকারশূন্য নেতাকে –এমন ব্যক্তির ঈমানের পরিচয় জানার জন্য কি কোন গবেষণার প্রয়োজন পড়ে? নিজের বেঈমানী সে নিজেই তার কর্ম, চরিত্র ও রাজনীতির মাধ্যমে প্রচার করে দেয়।
নামাজ–রোজা-হজ্জ পালন ততটা কঠিন নয়, যতটা কঠিন হলো পার্থিব স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে সত্য ও সুবিচারের পক্ষে কাজ করা। পার্থিব স্বার্থ-চেতনা তথা সেকুলার চেতনা শুধু নিজের আর্থিক স্বার্থ, নিজের মান–সম্মান বা পদবী লাভের বিষয় নয়, সেটির প্রবল প্রকাশ ঘটে নিজের গোত্র, পরিবার, দল, ভাষা, ভূগোল বা জাতীয় স্বার্থ হাছিলের তাড়নাতেও। এগুলিও পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। এজন্যই সেক্যুলাররিজম থেকে জন্ম নিয়েছে গোত্রবাদ, জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ, ফ্যাসিবাদ, পুঁজিবাদ, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও কম্যুনিজমের ন্যায় ভয়ংকর মানবতাধ্বংসী মতবাদ। এসব মতবাদের ব্যানারে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়েছে এবং বার বার রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ লড়েছে। এরূপ শত শত যুদ্ধ এবং দু’টি ভয়ানক বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে মূলত সেক্যুলার স্বার্থ হাছিলের তাড়নাতেই। দুটি বিশ্বযুদ্ধে তারা সাড়ে সাত কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে। এসবই হলো সেক্যুলারিজমের নৃশংসতম নাশকতা। যুগে যুগে হালাকু, চেঙ্গিস, হিটলার, জোসেফ স্টালিন, জর্জ বুশ, টনি ব্লেয়ারের ন্যায় গণহত্যার অসংংখ্য নায়ক হলো সেক্যুলারিজমের ফসল। সে ফসল বাংলাদেশেও ফলেছে। সে অভিন্ন ক্ষেতেরই ফসল হলো গণতন্ত্র হত্যাকারি বাকশালী মুজিব ও তার ফ্যাসিবাদী কন্যা হাসিনা। আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয় থাকলে মানুষ কি কখনো এতোটা নৃশংস ও বর্বর হতে পারে?
ধর্মীয় অঙ্গণে সেক্যুলারিজম
পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির কাজে ধর্মের অপব্যবহারও কি কম? বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে অতি প্রকট ভাবে। ধর্মের ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব দলের নেতারা জনসম্মুখে তসবিহ হাতে নেয়। দলবল নিয়ে দরগায় হাজিরা দেয়। তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব–ইজতেমাতেও যোগ দেয়। এমন কি রাজপথে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। এই হলো রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার। তারা ইসলামকে বিজয়ী করতে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে রাজী নয়। কিন্তু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ লাভের লক্ষ্যে ধার্মিক হওয়ার অভিনয় করে। নিয়মিত নামাজ পড়লেও তারা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে। এবং রোজাদারদের খাওয়ায়। এরাই রাজনীতির অঙ্গণে ইসলামের প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে। এবং মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ নেয়াকে সাম্প্রদায়িকতা বলে।
জনগণের ধর্মীয় চেতনা থেকে ফায়দা তুলতে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ময়দানে নেমেছে। সেটি শুধু রাজনীতিতেই নয়, অর্থনীতিসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও। লক্ষ্য, নির্বাচনে ভোটলাভ, নিজেদের সামাজিক প্রতিষ্ঠা ও প্রতিপত্তা বাড়ানো। এসবই হলো ধর্মের নামে সেক্যুলারিজম। কি হবে মুসলিম জীবনের মিশন -সেটি বেঁধে দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত সে মিশনটি হলো: “কল্যানের দিকে মানুষকে ডাকা, ন্যায়ের নির্দেশ দেয়া, অন্যায়ের নির্মূল এবং আল্লাহর উপর ঈমান।” এ মিশন নিয়ে বাঁচার কারণে মুসলিমগণ পায় সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা –যা বলা হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে।
কিন্তু অধিকাংশ মুসলিমের জীবনে কুর’আনে ঘোষিত সে মিশন গুরুত্বই পায়নি। মুসলিমগণ মগ্ন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের মিশন নিয়ে। ফলে মসজিদ, মাদ্রাসা ও মাদ্রাসার ছাত্রদের সংখ্যায় বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম হলে কি হবে, ন্যায়–নীতি প্রতিষ্ঠায় দেশটি সবার নিচে। ন্যায়–নীতি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। সেকুলার চেতনা ঢুকেছে দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা দেয়ার ব্যাপারে। অনেকে মাদ্রাসা গড়ে শুধু এই নিয়েতে যে সেখানে তাঁর বা তাঁর কোন আপনজনের চাকুরির ব্যবস্থা হবে। অথবা এলাকায় জনপ্রিয়তা বাড়বে। এমন ভাবনা তো দুনিয়াবী ভাবনা। একেই বলে সেক্যুলারিজম। বহুক্ষেত্রে এরূপ প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে পরিবারতন্ত্র। দেখে যায়, কোন মাদ্রাসার পরিচালক (মু’তামিদ) মারা গেলে তাঁর পুত্র সে মাদ্রাসার পরিচালক হয়। এরূপ পরিবারতন্ত্র বিশেষ ভাবে দেখা যায় দেওবন্দীদের মাদ্রাসগুলিতে। রাজতন্ত্রের ন্যায় পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে দেওবন্দী ফেরকার আদিস্থান ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসাতে। সেখানে এক সময় মাওলানা হুসাইন আহমেদ মাদানী দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রধান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁরই পুত্র মাওলানা আসাদ মাদানী সেস্থান দখলে নেয়। মাওলানা আসাদ মাদানীর মৃত্যুর পর সেস্থানে দখলে নিয়েছেন তার পুত্র মাওলানা মাহমুদ মাদানী।
লক্ষণীয় হলো দেওবন্দী মাদ্রাসার যিনি প্রধান হন তিনি আবার দেওবন্দী আলেমদের রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ের হিন্দের সভাপতি হন। সে দেওবন্দী নীতির অনুকরণ হচ্ছে বাংলাদেশেও। এভাবেই এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে কেন্দ্র করে অনেকের পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির ব্যবস্থা হলেও ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও বিজয় বাড়ছে না। কারণ, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা দিতে গেলে অনিবার্য হয় সমাজের দুর্বৃত্তদের সাথে সংঘর্ষ। তাতে রয়েছে পার্থিব স্বার্থহানী ও প্রাণহানীর সম্ভাবনা। রয়েছে জেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ যেরূপ জালেম শক্তির নির্মূলে জিহাদ করলেন, সে জিহাদে এসব সেক্যুলার তথা পার্থিব স্বার্থশিকারি আলেমগণ নাই। নবীজী (সা:)’র বহু সূন্নতের কথা তাঁরা বল্লেও তিনি যে জিহাদ করলেন -সে অতি গুরুত্বপূর্ণ সূন্নতের কথাটি তাঁরা মুখে না। সমাজ দূর্নীতিতে ভেসে গেলেও তা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। দেশে বহু লক্ষ আলেম। দেশের আদালতে শরিয়তী আইন বিলুপ্ত। কিন্তু তা নিয়ে এসব আলেমদের মাঝে কোন মাতম নেই। বরং সরকারি সার্টিফিকেট পাওয়াতে শেখ হাসিনার ন্যায় অতিশয় জালেম ও খুনি ফ্যাসিস্টকেও আলেম নামধারী অনেক ব্যক্তি তাকে “কওমী জননী” বলেছে। অথচ এ খুনি হাসিনার হাতে বহু শত মুসল্লি শাপলা চত্বরে হতাহত হয়েছে। স্বার্থের লোভ মানুষকে যে কতটা ধর্মহীন, নীতিহীন ও বিবেকহীন বানাতে পারে -এ হলো তার নজির। নবীজী (সা:)’র ইসলামে দাড়ি, টুপি ও পাগড়ি আছে, কিন্তু এসব স্বার্থশিকারি আলেমদের দাড়ি, টুপি ও পাগড়ির মধ্যে যে নবীজী (সা:)’র ইসলাম নাই তার প্রমাণ তো তারা নিজেরাই।
সেক্যুলার চেতনার প্রভাবে ব্যক্তির চরিত্রে যা ঘটে তা হলো, যে কর্মে বা নীতিতে পার্থিব লোকসানের সম্ভাবনা, সেটি তাদের কাছে পরিত্যাজ্য। আর্থিক লাভ, নামধাম বা খ্যাতির নিশ্চিয়তা পেলে এসব সেক্যুলারিস্ট নামাজী-রোজাদারগণ অতিশয় অন্যায় বা গর্হিত কাজও হালাল করে নেয়। এজন্যই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে সূদ–ভিত্তিক ব্যাংকের সংখ্যা কাফের দেশ থেকে কম নয়। বহু নামাজী ও বহু রোজাদার এসব সূদী ব্যাংক থেকে লোন নেয়, সেখানে অর্থ গচ্ছিত রাখে এবং সেখানে চাকরিও করে। মসজিদ-মাদ্রাসার এ দেশটিতে কম নয় এমনকি ব্যভিচারী পুরুষ ও পতিতা নারীদের সংখ্যাও।
ইসলামপন্থীদের মাঝে যারা নির্বাচন নিযে ব্যস্ত তাদের মাঝেও সেক্যুলারিজমের প্রভাবটি প্রকট। বার বার নির্বাচন করলে কি হবে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কথা মুখে আনতে তারা রাজী নয়। রাজী নয় সূদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনায়। বার বার সংসদে বসলে কি হবে, অতীতে শরিয়তের পক্ষে কোন বিলও তারা উত্থাপণ করেনি। তাদের ভয়, না জানি নিজেদের প্রতিষ্ঠিত পার্থিব স্বার্থে আঘাত না আসে। তাদের ভয়, সেক্যুলার মিত্ররা যেন মনক্ষুণ্ণ না হয়। মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী আইনের পক্ষ নিলে বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছে মৌলবাদী রূপে চিত্রিত হতে হবে -সে ভয়েই তারা অস্থির। কোন কথা বা কোন কাজে আল্লাহ খুশি হবেন -তারা সেটি দেখে না। বরং দেখে, কোন কথায় সেক্যুলার ভোটারগণ, সেক্যুলার রাজনৈতিক মিত্রগণ এবং বিদেশী শক্তিবর্গ খুশি হবে -সেটি। এটাই হলো নিরেট সেক্যুলারিজম তথা পার্থিব স্বার্থচেতনার বিষয়। সে চেতনায় এসব ইসলামপন্থীরা নগ্ন পায়ে জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভেও গিয়ে উঠে। নির্বাচনী বিজয়কে নিশ্চিত করতে তারা তখন জোট বাঁধে চিহ্নিত সেক্যুলারিস্ট জাতীয়তাবাদীদের সাথে। তারা ১৯৭১’য়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের বিজয় ও তাদের লুটপাটের রাস্তা খুলে দেয়। পার্থিব লাভ–লোকসানের কথা মাথায় রেখে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যত কূকর্মই করুক না কেন -তার বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি নয়। সৌদি–আরবের মত দেশগুলো যত কুকর্মই করুক না কেন -তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাজি নয়। ১৯৮৬ সালে সৌদি পুলিশ চার শতের বেশি ইরানী হাজীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। কিন্তু সে সৌদি নৃশংসতাকে নিন্দা করে বহু ইসলামপন্থী নেতা-কর্মী একটি বাক্যও উচ্চারণ করেনি। এসবই হলো বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের সেক্যুলারিজম। যে ঈমান নিরপরাধ মানব হত্যার অপরাধকে ঘৃণা করার সামর্থ্য দেয় না -সেটি কেমন ঈমান?
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা ১৭৫৭ সালে বাংলা দখল করেছিল কোন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে নয়। বরং লক্ষ্য ছিল, বাংলার সম্পদের উপর ডাকাতি। লক্ষ্য ছিল, সে ডাকাতির মাধ্যমে নিজেদের ভোগের আয়োজনে বিপুল সমৃদ্ধি আনা। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের এটি ছিল নিরেট সেক্যুলাররিজম। পার্থিব স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে তারা যেমন সূদ জায়েজ করেছিল, তেমনি জায়েজ করেছিল মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তিকে। ইংরেজগণ চলে গেছে, কিন্তু রয়ে গেছে তাদের মানসিক গোলামেরা। ইংরেজদদের ন্যায় তারাও প্রকট সেক্যুলারিস্ট। এবং তারা জোয়ার এনেছে সেক্যুলাররিজমের। কোন দেশে সেক্যুলাররিজমের জোয়ার প্রবলতর হলে সে ভূখন্ডে আল্লাহতায়ালার গোলামী করার কাজটি যথার্থ ভাবে হয় না। সেটি ইংরেজগণ যেমন করতে দেয়নি, তেমনি করতে দিচ্ছে না তাদের মানসিক দাস বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণও। বাংলাদেশের আজকের সকল বিপর্যের কারণ তো এই বিষাক্ত মতবাদ যা ঈমানদার হওয়া দূরে থাক, সভ্য মানুষ হওয়াই অসম্ভব করেছে।
মানুষ ভাল কাজে প্রেরণা পায় মহান আল্লাহতায়ালার ভয় ও পরকালে জান্নাত পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা থেকে। আর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাল কাজ তো দুর্বৃত্ত নির্মূলের জিহাদ। এবং জিহাদই হলো সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের একমাত্র হাতিয়ার। যে সমাজে জিহাদ নাই -সে সমাজে কখনো সভ্য রাষ্ট্র গড়ে উঠে না। ঈমানদার তো তেমন একটি আকাঙ্খা ও সর্বশ্রেষ্ঠ ভাল কাজ তথা জিহাদ নিয়ে বাঁচে। তাই যে দেশে এমন ঈমানদার মানুষের বসবাস -সে দেশে অনিবার্য কারণেই সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদ শুরু হয়ে যায়।
একটি দেশের জনগণের মাঝে ইসলামী চেতনা কতটা গভীর -সেটির মাপকাঠি হলো এই জিহাদ এবং সে জিহাদে প্রাণদানকারি শহিদের সংখ্যা। মসজিদ বা মাদ্রাসার সংখ্যা দেখে কখনোই একটি দেশের জনগণের ঈমানের সঠিক পরিচয় মেলে না। নামাজী, রোজাদার ও হাজীদের সংখ্যাও থেকেও নয়। জিহাদে একমাত্র তারাই যোগ দেয় যারা মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রিয় হওয়ার তীব্র বাসনায় প্রতি মুহূর্ত বিভোর। তারা দুনিয়ায় সফল হওয়ার বদলে আখেরাতে সফল হওয়াকে অধিক গুরুত্ব দেয়। কিন্তু সেক্যুলারিস্ট আলেম, ইমাম ও মুসল্লীদের পক্ষে জিহাদে যোগ দেয়া অসম্ভব। তাদের হাতে লক্ষ লক্ষ মসজিদ মাদ্রাসা নির্মিত হলেও সেখান থেকে জিহাদী ঈমানদার সৃষ্টি হয়না। বরং এমন দেশে সেক্যুলারিজমের প্লাবন আসে এবং দূর্নীতিতে কাফেরদের চেয়েও বেশি এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ তো তেমনি একটি দেশ।
বাংলাদেশের আইন–আদালত, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা–সংস্কৃতির ময়দানে ইসলাম পরাজিত। দেশটিতে সেক্যুলাররিজম বিজয়ী হয়েছে কোনরূপ লড়াই ছাড়াই। সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে ইসলামী মহল থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ দূরে থাক, কোন প্রতিবাদও নেই। অথচ দেশটির ১৬ কোটি মানুষ নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দেয়। ইসলামী চেতনার এ এক বিপন্নদশা। বিপন্নতার মুখে এখানে বাঙালি মুসলিমের মুসলিমত্ব। এ মুসলিম ভূমিতে সাহস বেড়েছে সেকুলারিস্টদের। তারা এখন ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নির্মূলের হুমকী দেয়। হিন্দুত্ববাদের এই নওকরেরা তাদেরকে স্বাধীনতার শত্রু বলে। নিজেদের সেক্যুলারিজম বাঁচাতে এরা কুর’আনের মৌলিক শিক্ষা ও ইসলামের প্রতিষ্ঠাকে রুখতে চায়। এরা ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের চেয়েও অধিক হিন্দুত্ববাদী। ঢাকার রাস্তায় যেরূপ আলপনা আঁকা হয় এবং যেরূপ মিছিল হয় নানারূপ জীব-জন্তুর মূর্তি ও মঙ্গল প্রদীপ নিয়ে -সেগুলি কলকাতার হিন্দুরাও করে না। কিছু কালে আগে বাঙালি মুসলিমের হিন্দুত্ব দেখে বিস্মিত হয়ে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় কলাম লিখেছে জনৈক হিন্দু কলামিস্ট।
বিস্ময়ের বিষয় হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট বাংলাদেশে প্রচণ্ড অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ হচ্ছে আল্লাহতায়ালা ও তাঁর প্রেরীত বিধানের বিরুদ্ধে। দেশটির সংবিধান, আইন-আদালত, জাতীয় সঙ্গীত, শিক্ষা-ব্যবস্থা –এসবের সবকিছুই সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দলিল। আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে এরূপ প্রকাশ্য বিদ্রোহ ও অবমাননার পরও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমগণ নিরব দর্শক। এরূপ নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তাকে কি ঈমানদারী বলা যায়? মুসলিম হওয়ার জন্য কি শুধু কালেমায়ে শাহাদত পাঠের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলে পাকের পক্ষে সাক্ষ্য দিলে চলে? অথচ সে সাক্ষ্যদান থেকেই ঈমানদারের জীবনে যুদ্ধ শুরু হয়। যখনই তাঁর সার্বভৌমত্ব ও আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়, সে বিদ্রোহ দমনে প্রতিটি ঈমানদারকে সর্বশক্তি দিয়ে খাড়া হতে হয়। সে কাজের জন্যই প্রতিটি ঈমানদার মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক। এবং এমন সৈনিকদের নিয়েই মহান আল্লাহতায়ালার দল “হিযবুল্লাহ” – যার বর্ণনা এসেছে পবিত্র কুর’আনে।
আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের বিরুদ্ধে শয়তানের দলের যুদ্ধ চলবে ও তারা বিজয়ী হবে এবং হিযবুল্লাহর সৈনিকগণ শয়তানের সে বিজয় নীরবে দেখবে –সেটিই কি কোন মুসলিমের ঈমানদারী? নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ কি কখনো শত্রুর হামলার মুখে এরূপ নিরব ও নিষ্ক্রিয় থেকেছেন। নিরবতায় ও নিষ্ক্রিয়তায় বাঁচে কি মুসলিমের মুসলিমত্ব। এই মুসলিমত্ব বিলুপ্তির লক্ষ্যেই তো শয়তানের শক্তির তাবত যুদ্ধ ও বিনিয়োগ। অথচ মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো এই মুসলিমত্ব নিয়ে বাঁচা। ঈমানদার মুসলিমের এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ। কারণ, এই মুসলিমত্ব না বাঁচলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেমন বাঁচবে না, তেমনি পৌঁছা যাবে না জান্নাতে। কিন্তু সে হুশ ক’জনের? সে হুশ বেঁচে থাকলে তো মুসলিমদের মাঝে রীতিমত ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদ শুরু হতো। বাঙালি মুসলিম জীবনে সেক্যুলারিজমের জোয়ারটি বহুদিনের। বাঙালি মুসলিমের চেতনায় দিন দিন এর বিষাক্ত প্রতিক্রিয়াই শুধু বেড়েছে। এরই ফল হলো, বিপুল সংখ্যক বাঙালি মুসলিমের জীবন থেকে ঈমানী দায় নিয়ে বাঁচার সে হুশ ও তাড়না বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই। ফলে বাঙালি মুসলিমগণ বাঁচছে ইসলাম ছাড়াই। সেক্যুলারিজমের মূল নাশকতাটি তো এখানেই।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018