নামায কেন ব্যর্থ কাঙ্খিত লক্ষ্যে?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on September 8, 2021
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মহাবুব কামাল
নামাযের কেন এতো গুরুত্ব?
যে ইবাদতটি বিশ্বের সকল অমুসলিম থেকে মুসলিমকে পৃথক করে -তা হলো নামায। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নামায কাফের ও মুসলিমের মাঝে দেয়াল রূপে কাজ করে। নামায না থাকলে মুসলিম আর অমুসলিমের মাঝে কোন পার্থক্যই থাকে না, উভয়ে একাকার হয়ে যায়। ব্যক্তির ঈমান দেখা যায় না। রোযাও দেখা যায় না –যদি সে নিজে থেকে তা প্রকাশ না করে। তেমনই কে যাকাত দেয়, সেটিও বুঝা যায় না –যদি না সে ব্যক্তি অন্যদের জানিয়ে দেয়। আর হজ্জ তো সবার জন্য ফরজ নয়; ফলে হজ্জ না করাতে কেউ অমুসলিম হয় না। কিন্তু নামায দেখা যায়। কারণ নামাযে যে শুধু দৃশ্যমান ক্বিয়াম, রুকু, সিজদা ও বৈঠক আছে –তা নয়। নামায পড়তে হয় লোকালয়ের মসজিদে হাজির হয়ে এবং অন্যদের সাথে কাতার বেঁধে। ঘরে বা দোকানে নামায পড়লেও তা অন্যদের নজরে পড়ে। তাই কে নামাযী আর কে বেনামাযী -সমাজে সেটি গোপন থা্কে না। অপর দিকে নামাযই ব্যক্তির ঈমানের পরিমাপ দেয়; মুসলিম না অমুসলিম -সেটিও প্রকাশ করে দেয়। প্রতিদিনের প্রশিক্ষণে যদি কোন সৈনিক হাজির না হয় তবে সৈনিকের খাতায় তার নাম থাকে না। কারণ, সৈনিক জীবনে থাকে যুদ্ধের দায়বদ্ধতা। দায়িত্ব পালনের সে সামর্থ্য কখনোই প্রশিক্ষণ ছাড়া সৃষ্টি হয়না। ফলে প্রশিক্ষণে আগ্রহ নাই -এমন ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভর হয় সৈনিক হওয়া। এমন ব্যক্তি বহিস্কৃত হয় সেনা বাহিনী থেকে। তেমনি মসজিদের জামায়াতে যে ব্যক্তি হাজির হয় না -তাকেও কি মুসলিম বলা যায়? মুসলিম মাত্রই তো মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক। তাঁর জীবনে আমৃত্যু যুদ্ধটি হলো অসত্য ও অন্যায়ের নির্মূলে এবং সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায়। সে যুদ্ধেও তো সামর্থ্য ও কুরবানী চাই। প্রশিক্ষণও চাই। চাই তাকওয়ার বল। নামায-রোযা এবং হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ফরজ ইবাদতগুলি তো ঈমানদারের মাঝে তাকওয়া বৃদ্ধি এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ। এরূপ প্রশিক্ষণে মুনাফিকদের অংশগ্রহণ থাকে না। ফলে তারা নিয়মিত হাজির হয়না মসজিদের ৫ ওয়াক্ত নামাযে –বিশেষ করে ফজর ও এশার নামাযে। তাদের দেখা যায়না ইসলামকে বিজয়ী করার জিহাদে। এভাবেই প্রকাশ পায় তাদের মনের মাঝে লুকানো মুনাফিকি।
কোন বেনামাযী যে জান্নাতে যাবে না -তা নিয়ে বিতর্ক নাই। কারণ, জান্নাত তো একমাত্র ঈমানদারদের জন্য। সে পবিত্র স্থানে বেঈমানের কোন স্থান নেই। আর ঈমানদার তো সেই যে নামায পড়ে। আগুন জ্বললে, উত্তাপ দিবেই। তেমনি হৃদয়ে ঈমান প্রবেশ করলে, সে ব্যক্তির জীবনে নামায-রোযা আসবেই। আগুন থেকে যেমন তার উত্তাপকে আলাদা করা যায় না, তেমনি ঈমানদার থেকে পৃথক করা যায় না তাঁর নামাযকে। হাদীসে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথম যে ইবাদতের হিসাব নিবেন সেটি হলো নামায। সুরা মুলকে বলা হয়েছে, জাহান্নামবাসীদের জিজ্ঞাসা করা হবে তোমরা কীরূপে এখানে পৌঁছলে? সর্বপ্রথম যে কারণটিকে তারা উল্লেখ করবে তা হলো, তারা নামায পড়তো না। নামাযের মূল্য বেনামাযীগণ ইহকালে না বুঝলেও বুঝবে জাহান্নামে পৌঁছার পর। জাহান্নামবাসীদের সে বেদনাদায়ক উপলব্ধিকে মহান আল্লাহতায়ালা কুর’আনে উল্লেখ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। সেটি হলো, যাদের জীবনে এখনো মৃত্যু আসেনি তাদেরকে সাবধান করতে। জাহন্নামে পৌঁছার আগে তথা দুনিয়ার বুকে থাকতেই তারা যেন বুঝতে পারে নামাযের গুরুত্ব। নইলে জাহান্নামে পৌঁছে শুধু আফসোসই হবে, করার কিছু থাকবে না। কুর’আন মজীদ মানব জীবনের রোডম্যাপ। এ রোডম্যাপ শুধু জান্নাতের পথই দেখায় না, পথ চলায় ভূল হলে -সে ভূলটিও তুলে ধরে। তাই সামনে অপেক্ষামান জাহান্নামের বিপদের কথাও বলে।
নামায কীরূপে ব্যর্থ হয়?
চিনিকলে আঁখ দিলে তা চিনিতে পরিণত হয়। সেটি না হলে বুঝতে হবে চিনিকলে যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে? নামাযের মধ্যেও তেমনি একটি প্রক্রিয়া কাজ করে -যা পরিশুদ্ধি আনে ব্যক্তির চিন্তা, চেতনা ও চরিত্র। সেরূপ পরিশুদ্ধি না এলে বুঝতে হবে নামাযে বড় রকমের ত্রুটি আছে। এবং ত্রুটি কোথায়, সেটি বুঝতে হলে নামাযকে মিলিয়ে দেখতে হয় নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবীদের নামাযের সাথে। কারণ, তাঁরাই হলেন নামাযসহ সকল ইবাদত-বন্দেগীর অনুকরণীয় মডেল। নামাযের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ শুধু ক্বিয়াম, রুকু, সিজদা বা বৈঠক নয়। স্রেফ সুরা পাঠ, তাশাহুদ পাঠ, দরুদ ও তাসবিহ পাঠও নয়। বরং সেটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার সাথে নামাযীর মনের সংযোগ। এবং সে সংযোগটি ঘটে তাঁর রহমত, কুদরত, ফজিলত ও আয়াত সমূহের স্মরণের মধ্য দিয়ে। সুরা বাকারা’য় বলা হয়েছে, “ফাযকুরুনি আযকুরুকুম” অর্থ: “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো।” এটি বান্দার প্রতি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ঘোষিত পবিত্র ওয়াদা। আর ওয়াদা পালনে তাঁর চেয়ে আর কে শ্রেষ্ঠতর হতে পারে?
সুরা যুখরুফে বলা হয়েছে, কারো মন থেকে যখন আল্লাহতায়ালার স্মরণ বিলুপ্ত হয় তখন তার উপর শয়তান নিযুক্ত করে দেয়া হয়। এবং সে শয়তান তাকে জাহান্নামে নেয়। সুরা হাশরে বলা হয়েছে যারা মহান আল্লাহতায়ালাকে ভূলে থাকে তাদের অন্তর থেকে ভূলিয়ে দেয়া হয় নিজেদের কল্যাণের বিষয়গুলি। নামাযের মুল কাজ তো ঈমানদারের মনে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণকে কম পক্ষে দিনে ৫ বার জাগ্রত করা। সেটি শুরু হয় নামাযের আযান ও ওযু থেকে। নামাযে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণের মাধ্যমে ঈমানদার নিজেও স্থান করে নেয় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণে। এটিই তো নামাযের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃর্তি। ব্যক্তির চেতনা রাজ্যে নামাযের সে গভীর আধ্যাত্মিক আছড় সেটি শুরু হয় আযান থেকে। আযানের মধ্যে ধ্বনিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে উদাত্ত আহবান -যা হৃদয়বান মানুষের হৃদয়ে টান দেয়। সম্প্রতি একটি জরিপ চালানো হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার নও মুসলিমদের উপর। তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তারা কীরূপে ইসলামে আকৃষ্ট হলো? জরিপে বেড়িয়ে আসে, ইসলামের প্রতি তাঁদের আকৃষ্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণটি হলো আযান। তুরস্ক, মরক্কো, মিশর, তিউনিসিয়ার মত মুসলিম দেশে বেড়াতে গিয়ে তাঁরা জীবনে প্রথম মসজিদ থেকে ভেসে আসা আযান শুনে। সে মধুর আযানই নাকি তাদের হৃদয়ের গভীরে নাড়া দিয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের অধিকাংশই পবিত্র কুর’আন পড়ে মুসলিম হয়। অর্থাৎ যেখানেই মহান আল্লাহতায়ালার নিজের বাণী সেখানেই তার বিশাল মোজেজা।
কিন্তু নামাযীর মন থেকে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ বিলুপ্ত হলে কি সে নামাযের কোন মূল্য থাকে? সেটি তো মনের এক চেতনাহীন বেহাল অবস্থা। সেরূপ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পবিত্র কুর’আনে বলা হয়েছে,“হে ঈমানদারগণ, তোমরা মাদকাসক্ত অবস্থায় নামাযের নিকটবর্তী হয়োনা -যতক্ষণ না তোমরা যা পড় তা বুঝতে না পারো…”। –(সুরা নিসা, আয়াত ৪৩)। উপরুক্ত আয়াতে রয়েছে চিন্তা-ভাবনার এক গুরুতর বিষয়। আয়াতটি যখন নাযিল হয়, মদ তখনও হারাম হয়নি। ফলে নবীজী (সা:)’র কোন কোন সাহাবী মাতাল অবস্থায় মসজিদে হাজির হতেন। মদপানের কুফল হলো, এতে বিলুপ্ত হয় চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতা। তখন নামাযীর মন থেকে বিলুপ্ত হয় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ। এবং বিলুপ্ত হয় মহান মা’বুদের সাথে বান্দার মনের সংযোগ। ফলে নামাযে পবিত্র কুর’আন থেকে যা কিছু তেলাওয়াত হয় -তাতে মনযোগ দেয়া তখন অসম্ভব হয়। তখন অসম্ভব হয় চেতনায় জাগরন বা পরিশুদ্ধি। আর চেতনায় পরিশুদ্ধি না আসলে চরিত্রে পরিশুদ্ধি আসবে কীরূপে? অথচ কুর’আন নিজেই যিকরের কিতাব। সে যিকরের সাথে নিজেকে জড়িত করতে তো যিকির রত মন চাই। সুরা ক্বাফে বলা হয়েছে, “ইন্না ফি যালিকা লা যিকরা লিমান কানা লাহু ক্বালবুন আও আলকাস সাময়া ওয়া হুয়া শাহীদ।” অর্থ: নিশ্চয়ই এ কিতাব (কুর’আন)’র মধ্যে রয়েছে যিকর; (এবং সেটি) তাদের জন্য যাদের রয়েছে ক্বালব এবং যারা কাজে লাগায় শ্রবনশক্তিকে এবং সাক্ষ্য দেয় সত্যের পক্ষে। –(সুরা ক্বাফ, আয়াত ৩৭)। অর্থাৎ কুর’আন থেকে শি্ক্ষা নিতে চাই জাগ্রত ক্বালব, তীক্ষ্ণ শ্রবনশক্তি এবং সত্যকে সত্য রূপে দেখার দৃষ্টিশক্তি। মাদক-সেবন এর সবগুলিই কেড়ে নেয়। ফলে ব্যহত হয় সুস্থ্য বিবেক নিয়ে এবং সজ্ঞান মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা। পবিত্র জায়নামাযে নামাযীর এরূপ মাদকাসক্তি ও মনযোগহীনতা মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহাতায়ালার কাছে ভাল লাগেনি। তাই হুকুম দিয়েছেন মদ-জনিত চেতনাহীনতা নিয়ে নামাযে না দাঁড়াতে। তবে মদ যেরূপ কুর’আনের আয়াত বুঝা ও তা নিয়ে ভাবনার সামর্থ্য কেড়ে নেয়ে, অবিকল সে ক্ষতিকর কাজটিই করে কুর’আন বুঝার অক্ষমতা। বিপদের আরো কারণ, মদের আসক্তি কয়েক ঘন্টায় দূর হয়, কিন্তু মুসলিম মনে সে অক্ষমতার আছড় থাকে আমৃত্যু। তাই মদ পান পরিহার করা যেমন ফরজ, তেমন ফরজ হলো কুর’আনী জ্ঞানের অজ্ঞতা দূর করা। এজন্যই ইসলামের নামায-রোযা ফরজ হওয়ার প্রায় ১১ বছর আগে কুর’আনের জ্ঞানার্জন ফরজ করা হয়েছে। “ইকরা” অর্থাৎ “পড়” হলো পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত প্রথম নির্দেশ। কুর’আনের জ্ঞানে মুর্খ থাকা কি তাই কোন ঈমানদারের সাজে? সাহাবাদের সকল সাফল্যের মূলে ছিল জ্ঞানার্জনের ফরজ পালনে সফলতা। কিন্তু আজকের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এ ফরজ পালনে। এটি যে ফরজ -সে হুশই বা ক’জনের? ক’জন বুঝে পবিত্র কুর’আনের আয়াত? মাদসাক্ত মাতালদের চেয়ে এ ব্যর্থতা কি কম? মুসলিম জীবনে কাঙ্খিত সাফল্য আনতে নামায ব্যর্থ হচ্ছে মূলত কুর’আন বুঝার এ নিদারুন অক্ষমতা থেকেই।
শ্রেষ্ঠ যিকর
মু’মিনের উত্তম যিকর হলো তাঁর নামায। এরূপ পবিত্র যিকির পীরের খানকায়, সুফি হালকায় বা বনে-জঙ্গলে সম্ভব নয়। তাই পবিত্র কুর’আনে সে সব খানকায়, হালকায় ও বনে-জঙ্গলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। বরং নির্দেশ এসেছে নামাযে ছুটে যাওয়ার। সুরা জুম্মায়াতে বলা হয়েছে, “যখন জুম্মার দিনে নামাযের জন্য ডাকা (আযান দেয়া) হয়, তখন তোমরা আল্লাহর যিকিরে ( অর্থাৎ নামাযে) ছুটে যাও।” নামায ঈমানদারকে প্রতিদিন ৫ বার সে যিকরে হাজির করে। ঈমানদার ব্যক্তি এভাবে শুধু নিজেই মহান আল্লাহতায়ালার যিকর করে না, বরং অন্ততঃ দিনে ৫ বার মহা প্রভুর স্মরণে জায়গা করে নেয়। এভাবেই গড়ে উঠে মহান মা’বুদের সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক।
বস্তুত প্রতিটি ইবাদতই হলো মহান আল্লাহতায়ালার যিকর। রোযার যিকর হয় সমগ্র দিন ব্যাপী এবং সেটি সমগ্র রমযানের মাস জুড়ে। হজ্জে সে যিকর চলে হজ্জের ইহরাম বাধাকালীন সময়ে। মহান আল্লাহতায়ালার যিকর তখনও হয় যখন বান্দা যাকাত দেয়। এদিক দিয়ে নামায অনন্য; যিকরের আয়োজন হয় কম পক্ষে দিনে ৫ বার এবং চলে আমৃত্যু। যারা তাহাজ্জুদ ও নফল নামায পড়ে -তাদের জীবনে যিকরের মাত্রা আরো অধিক ও দীর্ঘ। অপর দিকে একমাত্র নামাযেই যিকরের কিতাব তথা পবিত্র কুর’আন থেকে পাঠ করাটি বাধ্যতামূলক; রোযা, হজ্জ বা যাকাতের ন্যায় অন্য কোন ইবাদতে সেটি হয়না।
সর্বকালে ও সর্বজনপদে মানবের মনে যিকর তথা ধ্যানমগ্নতাকে প্রতিষ্ঠা দেয়াই হলো মহান আল্লাহতায়ালার নীতি। কারণ, এ যিকরই দেয় ব্যক্তির মনে জান্নাতের পথে নিবিষ্ট হওয়ার আগ্রহ। মজবুত করে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে আত্মীক বন্ধন। মনের গভীরে সর্বদা জাগ্রত রাখে রোজ হাশরের বিচার দিনে জবাবদেহীতার ভাবনা। বলা হয়েছে নামায হলো মু’মিনের মীরাজ। মীরাজ গড়ে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সরাসরি সংযোগ –যা সাধিত করেছিল নবীজী (সা:)’র জীবনে। মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ ও তাঁর সাথে সংযোগ প্রতিষ্ঠায় প্রতি যুগেই নামায গণ্য হয়েছে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম রূপে। তাই হযরত মূসা (সা:)’র সাথে প্রথম বাক্যালাপেই তাঁকে যে নির্দেশটি দেয়া হয় সেটি হলো নামাযের। হযরত মূসা (সা:)’র সাথে মহান আল্লাহতায়ালার প্রথম বাক্য বিনিময় হয় পবিত্র তুয়া উপত্যাকায়। নিজ পরিবারকে নিয়ে তখন তিনি মিশরে ফিরছিলেন। হযরত মূসা (সা:)কে নির্দেশ দেয়া হয়, “নিশ্চয় আমিই আল্লাহ এবং আমি ছাড়া আর কোন ইলাহা নাই। অতএব আমার ইবাদত করো এবং প্রতিষ্ঠা দাও নামাযকে –যাতে আমার যিকর করতে পার।” –(সুরা ত্বাহা, আয়াত ১৪)।
নামাযে যিকরের মূল ভূমি হলো কুর’আনের আয়াত। পবিত্র কুর’আনের আয়াতগুলির মাধ্যমে নামাযীর মনের গভীরে মহান আল্লাহাতায়ালা তাঁর পবিত্র বাণীগুলি গেঁথে দেন। তখন আলোকিত তাঁর অন্তর। নামাযের মাধ্যমেই ঘটে মু’মিনের চেতনার সাথে মহাপ্রভুর একান্ত সংলাপ। সেটি পবিত্র কুর’আনের সুরা পাঠের মাধ্যমে। তখন ধ্যানমগ্ন হয় নামাযীর মন। কিন্তু ধ্যানের সে সামর্থ্য মাতাল ব্যক্তির অবচেতন মনের থাকে না। সে সামর্থ্যটি শুধু মদই কেড়ে নেয় না, সেটি বিলুপ্ত হয় কুর’আন বুঝায় অক্ষমতার কারণেও। এমন নামাযীগণ ব্যর্থ হয় তাদের নিজ জীবনে কাঙ্খিত চারিত্রিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিপ্লব আনতে।
তাই কত কোটি লোক নামায পড়লো সেটিই বড় কথা নয়। কতজন দুর্বৃত্তকে নামায চরিত্রবান করলো, কতজনকে ফিরালো পাপকর্ম থেকে এবং কতজনকে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার মুজাহিদে পরিণত করলো -সেটিই মূল কথা। এক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলির কোটি কোটি নামাযীর ব্যর্থতাটি বিশাল। ব্যর্থতার দলিল হলো: নামায পড়েও কোটি কোটি মানুষ মিথ্যা বলছে, ঘুষ খাচ্ছে, সূদ খাচ্ছে, দুর্নীতি করছে এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে রাজনীতিও করছে। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশ রেকর্ড গড়ছে দুর্বৃত্তিতে। এক্ষেত্রে ব্যর্থতাটি নামাযের নয়, বরং যারা নামায পড়ে তাদের। নামাযী ব্যর্থ হচ্ছে নামাযে দাঁড়িয়ে ধ্যানমগ্ন হতে। নামাযী ব্যর্থ হচ্ছে নামাযে দাঁড়িয়ে নিজ জীবনের হিসাব নিতে। ব্যর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার সংলাপ ও তাঁর এজেন্ডার সাথে একাত্ম হতে। এ ব্যর্থতার মূল কারণ, নামাযীদের কুর’আন বুঝার অক্ষমতা। এ অক্ষমতা ডেকে আনে মানব জীবনের সবচেয়ে ভয়ানক পরিনতিটি। সেটি জাহান্নামে পৌঁছার।
নামাযীকে নামাযের প্রতি রাকাতে কুর’আনের কিছু অংশ পাঠ করতে হয়। নইলে নামাযই হয় না। নামাযের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো ক্বিয়াম অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন সময়। এ সময়টিতে কুর’আন থেকে কিছু অংশ পাঠ করা হয়। কুর’আন পাঠের সে কাজটি রুকু, সিজদা বা বসাকালীন সময়ে হয় না। তাই যে নামাযে দীর্ঘ সময় ক্বিয়ামে কাটানো হয় -সে নামাযের ওজন অধিক। নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরাম রাতের প্রায় অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে তারতিলের সাথে কুর’আন পাঠে কাটিয়ে দিতেন। নামাযের সাথে কুর’আনের গভীর সম্পর্কের বর্ণনাটি এসেছে সুরা আরাফে। বলা হয়ছে, “এবং যারা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরলো কুর’আনকে এবং প্রতিষ্ঠা দিল নামাযকে, নিশ্চয়ই আমরা (এরূপ) সৎকর্মশীলদের প্রতিদানকে নষ্ট করিনা।”–(আয়াত ১৭০)। একই রূপ বর্ণনা এসেছে সুরা আনকাবুতে। বলা হয়েছে, “(হে মুহম্মদ), তোমার উপর ওহী রূপে যা নাযিল করেছি তা পাঠ করো কিতাব থেকে (অর্থাৎ কুর’আনকে) এবং প্রতিষ্ঠা দাও নামাযকে। নিশ্চয়ই নামায বাঁচায় ফাহেশা (অশ্লিলতা, জ্বিনা, পাপাচার) ও দুর্বৃত্তি থেকে। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহর যিকরই সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম। এবং আল্লাহ জানেন -যা কিছু তোমরা করো। –(সুরা আনকাবুত, আয়াত ৪৫)। উপরুক্ত দুটি আয়াতে পবিত্র কুর’আন এবং নামাযে কুর’আন পাঠের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দিনের অন্য সময়ে কুর’আন পাঠের সুযোগ না মিললেও সেটিকে ৫ বার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নামাযে সুরা তেলাওয়াতের মাধ্যমে। রোগের ভ্যাকসিন নিলে সে রোগ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তখন শরীরে বৃদ্ধি পায় সে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা। কুর’আনের জ্ঞান ব্যক্তির চেতনা রাজ্যে তেমনি এক ভ্যাকসিনের কাজ করে। তখন বাড়ে দুষ্ট মতবাদ, মিথ্যা ও ফাহেশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে যে ব্যক্তি কুর’আন বুঝার সক্ষমতা নিয়ে প্রতিদিনে ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করে সে বাঁচে সকল প্রকার অশ্লিলতা, জ্বিনা, মিথ্যাচার, পাচার ও দুর্বৃত্তি থেকে।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হয়েছে মিরাজের পর অর্থাৎ হিজরাতের মাত্র এক বা দেড় বছর আগে। প্রশ্ন হলো, এর আগে প্রায় ১১ বছর যাবত মক্কায় অবস্থান কালে কি ছিল নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণের ইবাদতের ধরণ? সে সময়ের ইবাদত ছিল পবিত্র কুর’আন পাঠ তথা কুর’আনের জ্ঞানার্জন। জ্ঞানই পরিশুদ্ধি আনে চেতনা ও চরিত্র। গড়ে তাকওয়া। তাই অজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তির চেতনা-চরিত্র কখনোই একই রূপ হয়না। সাহাবায়ে কেরাম যেরূপ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব গড়ে উঠতে পরেছিলেন তার মূলে ছিল পবিত্র কুর’আনের গভীর জ্ঞান। নবুয়ত লাভের পর প্রথম যে কয়েকটি সুরা নাযিল হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো সুরা মুজাম্মিল। এ সুরায় নবীজী (সা:)’র উপর নির্দেশ এসেছে যেন তিনি রাতের অর্ধেক অংশ বা তার চেয়ে কিছু বেশী বা কম অংশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পবিত্র কুর’আন থেকে আস্তে আস্তে তেলাওয়াত করেন। সাহাবাগণও সেটিই করতেন। ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়ার পূর্বে ১১ বছর ধরে সে কাজ অবিরাম ভাবে চলতে থাকে। এভাবেই সাহাবাদের হৃদয়ে গভীর ভাবে স্থান করে নেয় পবিত্র কুর’আনে র জ্ঞান। সে জ্ঞানের উপর নির্মিত হয় তাদের বিস্ময়কর আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কাঠামো। এভাবে তারা বেড়ে উঠেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রূপে।
যে নামায কল্যাণ আনে
নামায মুসলিম জীবনে কল্যাণ দিবে -সেটিই তো কাঙ্খিত। কিন্তু আজকের মুসলিম জীবনে নামাযের সে কল্যাণ কতটুকু? বাস্তবতা হলো, কোটি কোটি মানুষ নামায পড়লেও সবার নামায একই রূপ হয় না। সকল নামাযীর চেতনায় ও চরিত্রে একই রূপ বিপ্লবও আসে না। বরং অনেক নামাযীর জীবনে আসে মারাত্মক স্খলন। নামাযকে সফল করতে হলে যত্নবান হতে হয় নামাযের প্রতিটি ধাপে। প্রতি ওয়াক্ত নামাযের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট সময়; খেয়াল রাখতে হয় ওয়াক্তের দিকে। যেমন বলা হয়েছে, “নামায নির্দিষ্ট সময়ে আদায়ের জন্য মু’মিনদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” –(সুরা নিসা, আয়াত ১০৩)। তবে জরুরি শুধু নির্দিষ্ট সময়ই নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাযের জন্য নির্দিষ্ট স্থান মসজিদে গিয়ে নামায আদায়। এজন্যই জরুরি হলো, নামাযের আযান শুনে মসজিদের দিকে ধাবিত হওয়া। তাই মসজিদে নামায পড়া ও সঠিক ওয়াক্তে নামায পড়ার ক্ষেত্রে যারা গাফেল -তাদের রোগটি ঈমানে।
হাদীসে বলা হয়েছে, “যখন কোন মু’মিন ব্যক্তি নামাযের জন্য মসজিদ অভিমুখে রওয়ানা দেয়, তখন থেকেই সে নামাযের মধ্যে দাখিল হয়ে যায়। প্রতি কদমে বৃদ্ধি করা হয় তাঁর মর্যাদা। মসজিদে গিয়ে নামাযের অপেক্ষায় বসে থেকেও সে নামাযের সওয়াব পায়।” মসজিদে নামায আদায়ের সওয়াব ঘরে নামায আদায়ের চেয়ে ২৭ গুণ অধিক। এমন কি অন্ধ ও পঙ্গুদেরও মসজিদে গিয়ে নামায আদায়ের উৎসাহ দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মকতুম (রা:) ছিলেন অন্ধ। তিনি নবীজী (সা:)কে বল্লেন, “আমি তো চোখে দেখিনা, ফলে মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করা কঠিন। আমি কি অনুমতি পেতে পারি ঘরে নামায পড়ার?” নবীজী (সা:) জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি ঘর থেকে আযান শুনতে পান?” বল্লেন, “হাঁ, আমি আযান শুনতে পাই।” নবীজী (সা:) বল্লেন, “তবে আপনাকে মসজিদে এসেই নামায পড়তে হবে।” –(আবু দাউদ শরীফ)। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণীত হাদীস: নবীজী (সা:) বলেন, “আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহের নির্দেশ দেই্। এরপর আযানের পর কাউকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়ে ঐসব লোকদের বাড়ীতে যাই যারা মসজিদে নামাযে আসেনি এবং তাদের ঘরগুলি জ্বালিয়ে দেই।”–(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)। আবু দাউদ শরীফের হাদীস: “যদি কোন মহল্লায় তিন জন মুসলিমও বাস করে তবে তাদের উচিত জামায়াতবদ্ধ ভাবে নামায আদায় করা।
তাছাড়া মসজিদে নামায আদায়ে মনের যে একাগ্রতা ও ধ্যানমগ্নতা থাকে -তা ঘর, অফিস বা দোকানের নামাযে থাকে না। কারণ, ঘর, অফিস ও দোকানে অন্যদের শোরগোল, কথা-বার্তাসহ দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার মত অনেক কিছুই থাকে। ফলে সেখানে থাকে না যিকিরের পরিবশে। কিন্তু মসজিদ সাঁজানো হয় নামাযের জন্য। তাছাড়া মসজিদে বসে অন্যের নামায দেখে শেখারও অনেক কিছু থাকে। নামাযরত পাশের ব্যক্তির একাগ্রতা, ধ্যানমগ্নতা ও দীর্ঘ রুকু-সেজদা দেখে নিজের মনেও ভাল নামায আদায়ের আকাঙ্খা জাগে। তাছাড়া নেকড়ের পাল যেমন বিশাল মহিষকে একাকী পেলে ঘিরে ধরে, তেমনি ঈমানদারকে একাকী পেলে ঘিরে ধরে শয়তানও। তখন বান্দাহর উপর শয়তানের বিজয় সহজ হয়ে যায়।
মুসলিমের মিশন ও নামায
ইসলাম শুধু ব্যক্তির জীবনে পরিশুদ্ধি চায় না। পরিশুদ্ধি চায় সমাজ ও রাষ্ট্রের চৌহদ্দিতেও। চায়, দুর্বৃত্তির নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্যে চায়, ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। সেরূপ একটি প্রকল্পকে বিজয়ী করতে সকল ঈমানদারদেরকে তাই অভিন্ন ভিশন, মিশন ও একতা নিয়ে বাঁচতে হয়। মুসলিমের মিশন তো তাই যা মহান আল্লাহতায়ালার ভিশন। পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত মহান আল্লাহতায়ালার সে পবিত্র ভিশনটি হলো “লি’ইউযহিরাহু আলাদ্দিনি কুল্লিহি” অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপর তাঁর দ্বীন তথা ইসলামের বিজয়। ঈমানদারের দায়বদ্ধতা হলো সে ভিশন নিয়ে বাঁচা। ফলে মুসলিমের বাঁচার মিশনে লড়াই তখন অনিবার্য হয়ে পড়ে। কারণ, ইসলামের শত্রুপক্ষের দখলে যে ভূমি সেটি তারা বিনা যুদ্ধে ছাড়তে রাজী নয়। ফলে জিহাদ ছাড়া মহান আল্লাহতায়ালার ভিশন নিয়ে সামনে এগুনোর আর কোন রাস্তা থাকে না। যুদ্ধ যেখানে অনিবার্য, সেখানেই অপরিহার্য হলো সৈনিকের রিক্রুটমেন্ট, দুর্গ, সৈন্য ও সৈন্যের প্রশিক্ষণ। মসজিদ হলো সেই কাঙ্খিত দুর্গ, প্রতিটি নামাযী হলো সৈনিক এবং ৫ ওয়াক্ত নামায হলো সেই প্রশিক্ষণ। অস্ত্র চালানোর সামর্থ্যই সৈনিকের মূল গুণ নয়, সেটি হলো ব্যক্তির নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও আত্মদানে তাঁর আগ্রহ। নামায এসব গুলোই করে। ব্যক্তির নামাযই বলে দেয়, সৈনিক রূপে সে কতটা সাচ্চা। যে ব্যক্তি মসজিদের ৫ ওয়াক্ত নামাযে হাজির হতে পারে না, সে কি ইসলামের সৈনিক হতে পারে?
প্রশিক্ষণের অর্থ শুধু সামরিক কলাকৌশল শেখানো নয়, বরং মূল বিষয়টি হলো ইসলামের বিজয়ে জান, মাল, মেধাসহ সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগে নামাযীকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা। যে কোন যুদ্ধের জন্য এ প্রস্তুতিটা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এবং লক্ষ্য, নামাযীদের মাঝে সিসাঢালা দেয়ালসম অটুট ঐক্যের প্রতিষ্ঠা দেয়া। অতীতে মুসলিমগণ যখন একের পর বিজয় এনেছে, তখন মসজিদ ছাড়া তাদের কোন দুর্গ বা ক্যান্টনমেন্ট ছিল না। নামায ছাড়া তেমন নিয়মিত কোন প্রশিক্ষণও ছিল না। মসজিদের জায়নামাযে বসে জিহাদের প্রস্তুতি নেয়া হতো। রাজস্বের সিংহভাগ খরচ করে তখন কোন সেনাবাহিনী পালতে হয়নি। ক্যান্টনমেন্টও গড়তে হয়নি। নামাযীগণ তখন নিজ অর্থ, নিজ খাদ্য, নিজ বাহন ও নিজ অস্ত্র নিয়ে রণাঙ্গণে হাজির হতো। এ ছিল তাদের মানসিক প্রস্তুতির নমুনা। জিহাদকে তারা জান্নাতে প্রবেশের বাহন মনে করতো। মুসলিমদের মাঝে একতা, শৃঙ্খলা, আত্মনিয়োগ ও কুরবানীর সে বিস্ময়কর সামর্থ্য গড়ে উঠেছিল নামাযের জায়নামাযে। আজ মুসলিম দেশগুলিতে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ক্যান্টনমেন্টের সংখ্যা বেড়েছে। সৈন্য সংখ্যা ও তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজনও বেড়েছে। কিন্তু তাতে বিজয় বাড়েনি। বরং বেড়েছে পরাজয়। বেড়েছে সেনাবাহিনীর হাতে দেশের অধিকৃতি ও দেশবাসীর পরাধীনতা। তাদের চেতনায় আত্মত্যাগের সামর্থ্য বাড়েনি। বরং বেড়েছে স্বার্থসিদ্ধির দুর্দম্য নেশা। ফলে বহু মুসলিম দেশে সৈনিকেরা পরিণত হয়েছে দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্ট শাসকচক্রের চাকর-বাকরে। এরই উদাহরণ বাংলাদেশ। নৃশংস ফ্যাসিস্ট শাসকের গদি বাঁচাতে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে ২০১৩ সালে ৫মে তারিখে নিরীহ মুসল্লীদের উপর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে।
অন্য ধর্মের অনুসারিগণ ক্লাবে বা মদ্যশালায় বন্ধুত্ব গড়ে ও জোটবদ্ধ হয়। মুসলিমগণ ভাতৃত্বের বন্ধন গড়ে মসজিদের পবিত্র মেঝেতে। জায়নামাযে ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও এলাকাভিত্তিক কোন বিভক্তি থাকে না। সব নামাযীকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতার বাঁধতে হয়। হাদীসে বলা হয়েছে, কাতারে ফাঁক থাকলে সেখানে শয়তানের অনুপ্রবেশ ঘটে। জামাতবদ্ধ হওয়ার এ রীতি মুসলিমগণ তাদের গৌরব কালে শুধু জায়নামাযে সীমিত রাখেননি, প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গণেও। প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন রণাঙ্গণে। জামাতবদ্ধ নামাযের সেটিই তো গুরুত্পূর্ণ শিক্ষা। মুসলিম মনে এমন একটি প্যান-ইসলামিক চেতনা বলবান হলে মুসলিমদের ভৌগলিক মানচিত্র বিশাল ভাবে বাড়লেও তাতে ভূগোল খন্ডিত হয় না। মুসলিম জীবনে নামায তো এভাবেই সাংস্কৃতিক বিপ্লব এনেছে। সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে একতা ও ভাতৃত্ব নিয়ে বাঁচার।
কিন্তু আজ মুসলিম উম্মাহর মাঝে যে বিভক্তি, তা দেখে নিশ্চিত বলা যায়, নামায থেকে তারা কোন শিক্ষাই গ্রহণ করেনি। একতার চেতনা তারা মসজিদের বাইরে আনতে পারিনি। তাদের নামায ব্যর্থ হয়েছে তাদের মাঝে সীসাঢালা দেয়ালসম একতা গড়তে। ফলে মুসলিম উম্মাহ আজ ৫৭টি রাষ্ট্রে খন্ডিত। অথচ বিভক্তি গড়া যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো উম্মাহর বিভক্ত মানচিত্র নিয়ে বাঁচা। এবং পবিত্র ইবাদত হলো বিভক্তির দেয়াল ভেঙ্গে একতা গড়া –সেটি যেমন রাজনৈতিক অঙ্গণে, তেমনি ভৌগলিক অঙ্গণে। মুসলিম রূপে বাঁচায় শুধু পানাহার হালাল হলে চলে না, হালাল হতে হয় দেশের রাজনীতি ও ভৌগোলিক মানচিত্রও। নইলে বিপর্যয় অনিবার্য। পরিতাপের বিষয় হলো আজকের মুসলিমগণ নিজ দেশে শুধু সূদি ব্যাংক, পতিতাপল্লী, মদের ব্যবসাকেই প্রতিষ্ঠা দেয়নি, প্রতিষ্ঠা দিয়েছে হারাম রাজনীতি ও হারাম মানচিত্রও। হারাম পরিত্যাগের চেতনাই যেন বিলুপ্ত হয়েছে। মুসলিম মানচিত্রের ভিত্তি হতে হবে প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্ব; ভাষা, বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতা ভিত্তিক বিভক্তি নয়। নবীজী (সা:) তাঁর সাহাবাদের যুগে কি ভাষা, অঞ্চল ও গোত্রের নামে এরূপ বিভক্তির দেয়াল গড়ার কথা ভাবা যেত? অথচ তাদের গড়া সে আমলের বিশাল ভূগোল ভেঙ্গে ৫০টির বেশী বাংলাদেশ গড়া যেত। কিন্তু তারা সেরূপ হারাম মানচিত্র নির্মাণের পথে পা বাড়াননি। তারা বেছে নিয়েছেন একতা ও গৌরবের পথ। এবং এ পথই তো হলো, মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার পথ। এটিই তো নামাযের সংস্কৃতি। অপরদিকে বিভক্তি তো শয়তানকে খুশি করার পথ। আজকের মুসলিমগণ মুসলিম বিশ্বের ভৌগলিক আয়োতন এক ইঞ্চিও বাড়ায়নি, বরং বাড়িয়েছে রাষ্ট্রের সংখ্যা। বিভক্তির সে হারাম পথ বেছে নেয়ায় ঘটেছে ভাতৃঘাতী গভীর রক্তপাত এবং নিজ দেশে ডেকে আনা হয়েছে কাফের শত্রুদের। পরিতাপের বিষয় হলো মুসলিমগণ আজ শয়তানকে খুশি করার পথই বেছে নিয়েছে। এজন্যই ১৯৭১য়ে গড়া বাংলাদেশের মানচিত্রে ভারত উৎসব করে। এবং ২২ টুকরায় বিভক্ত আরবের মানচিত্র প্রচণ্ড খুশি হয় ইসরাইলসহ তাবত কাফের শক্তি।
যে নামায আযাব আনে
নামায শুধু ঈমাদারগণই পড়ে না। মুনাফিকগণও পড়ে। মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হন মু’মিনদের নামাযে এবং প্রচণ্ড অখুশি হন মুনাফিকদের নামাযে। এমন নামাযীর উপর মহান আল্লাহতায়ালা তখন অভিসম্পাত দেন।তাই শুধু নামায পড়লেই চলে না, নজর রাখতে হয় নামায যেন মুনাফিকের নামাযে পরিণত না হয়। সওয়াবের বদলে যেন আযাব ডেকে আনে। কি ধরণের নামায মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ধ্বংস ও অভিসম্পাত ডেকে আনে -সে বিষয়টি জানানো হয়েছে সুরা মাউনে। বলা হয়েছে, “ফা ওয়াইলুল্লিল মুছাল্লীন। আল্লাযীনা হুম আন সালাতিহিম সা’হুন। আল্লাযীনা হুম ইউরাউন।” অর্থ: “অতঃপর ধ্বংস ঐসব নামাযীদের জন্য -যারা অমনযোগী বা দেরীতে নামায আদায় করে। তারা নামাযে খাড়া হয় লোক দেখানোর জন্য।”- (সুরা মাউন, আয়াত ৪-৬)।
নামায না পড়লে গর্দান থেকে ইসলামের রশি ছিন্ন হয়ে যায়। নবীজী (সা:)’র জামানায় নামায গণ্য হতো মুসলিমের মূল পরিচিতি রূপে। যারা নামায পড়তো না, তারা গণ্য হতো কাফের রূপে। মুসলিম সমাজে কাফের রূপে পরিচিত হওয়ার বিপদ বুঝে মুনাফিকগণও তখন নামাযকে বেছে নিত ঢাল রূপে। তারা শুধু নামাযই পড়তো না, বরং নবীজী (সা:)’র পিছনে প্রথম কাতারে খাড়া হতো। লোক-দেখানো সে নামাযের মধ্য দিয়ে তারা মুসলিমদের ধোকা দিত। এবং ধোকা দিত মহান আল্লাহতায়ালাকেও। নামায নিয়ে মুনাফিকদের সে ষড়যন্ত্রকে ফাঁস করেছে সুরা নিসা। বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই মুনাফিকগণ আল্লাহকে ধোকা দেয়, আসলে তিনিই (আল্লাহ) তাদেরকে ধোকা দেন। এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায়, দাঁড়ায় আলস্য নিয়ে এবং লোক-দেখানোর উদ্দেশ্য। আল্লাহকে তারা সামান্যই স্মরণ করে।” –(আয়াত ১৪২)।
তাই নামায বা অন্য কোন নেক আমল করলেই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে তা গৃহিত হবে -বিষয়টি তেমন সহজ সরল নয়। নেক আমল কবুলের কিছু শর্ত আছে। সে শর্তের কথা শুনানো হয়েছে সুরা তাওবাতে। বলা হয়েছে, “তাদের দান আল্লাহর কাছে গৃহিত হওয়া থেকে কোন কিছুই বাধা দেয় না -একমাত্র এছাড়া যে, তারা অস্বীকার করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে, নামাযে দাঁড়ায় আলস্য নিয়ে এবং দান করে অনিচ্ছা নিয়ে।” –(আয়াত ৫৪)। ইবাদত রূপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে নামাযীকে তাই জায়নামাযে দাঁড়াতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি গভীর আত্মনিবেদন ও আত্মসমর্পণ নিয়ে। পবিত্র কুর’আনে সে ঘোষণাটি এসেছে এভাবে, “নিশ্চয়ই কামিয়াবী মু’মিনদের জন্য। যারা নামাযে আত্মনিবেদিত।”–(সুরা মু’মিনুন, আয়াত ১-২)। এবং সে আত্মনিবেদন ও আত্মসমর্পণ শুধু নামাযে সীমিত রাখলে চলে না, প্রতিষ্ঠা দিতে হয় নামাযের বাইরেও। সে আত্মসমর্পণের প্রকাশ ঘটাতে হয় রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, আইন-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সর্বত্র। নইলে গাদ্দারী হয়। নামাযের সাথে সে নগ্ন গাদ্দারীটি ধরা পড়ে যখন রাজনীতিতে সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ ও স্বৈরাচার, অর্থনীতিতে সূদ, সংস্কৃতিতে অশ্লিলতা, সরকারি অফিসে ঘুষ এবং আদালতে শরিয়তী আইনের বদলে কুফরি আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়া হয়।
নামায দেয় দোয়ার পরিবেশ
মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া সর্বাবস্থায় করা যায়। চলতে ফিরতে, কর্মস্থলে, এমন কি বিছানায় শুয়েও তাঁর কাছে আরজী পেশ করা যায়। মু’মিনের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার দরবার সব সময়ই খোলা। তবে দোয়ার শ্রেষ্ঠতম সময় যেমন নামায, তেমনি নামায শেষে জায়নামায। মহান আল্লাহতায়ালার সংযোগ গড়তে পীর বা দরবেশের মধ্যস্থতা লাগে না। তিনি সংযোগে সরাসরি লাইন বান্দার হাতে তুলে দিয়েছেন। মহান দয়াময়ের নাম ধরে ডাক দিলেই তিনি তাঁর স্মরণের জায়গাতে মু’মিনের জন্য সাথে সাথে স্থান করে দেয়। এবং সেটিই হলো পবিত্র কুর’আনে বর্ণিত মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতিশ্রুতি। নাময তো দোয়া পেশের তেমন একটি পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহতায়ালা চান, নামাযের মাধ্যমে তাঁর ঈমানদার বান্দাহ তাঁর দরবারে আবেদনটি পেশ করুক। এটিই হলো বান্দার জন্য নামাযের সবচেয়ে বড় অবদান। নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ছবর ও নামাযের সাহায্যে সাহায্য চাও। নিশ্চ্য়ই আল্লাহ ধৈয্যশীলদের সাথে।” –(সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)। মহান আল্লাহতায়ালা থেকে মাগফিরাত লাভের এটিই হলো তাঁর নিজের দেখানো পথ। তাই দয়াময় রাব্বুল আ’লামীনের দরবারে দোয়া পেশের জন্য যেমন ছবর চাই, তেমনি চাই নামায। নামায ছেড়ে যারা পীরের মাজারে বা সুফি হালকায় দোয়া কবুলের জন্য ধর্না দেয়, তাদের জন্য এ আয়াতে রয়েছে চরম হুশিয়ারি।
দোয়ার গুরুত্ব কি, দোয়া কি ভাবে করতে হয় এবং কোন দোয়াটি শ্রেষ্ঠ সেটিও শিখিয়েছেন মহান আল্লাহতায়ালা। সে শিক্ষাটি দেয়া হয়েছে সুরা ফাতেহা’তে -যা পাঠ করতে হয় নামাযের প্রতি রাকাতে। এ সুরা পাঠ না করলে নামাযই হয় না। তাই জরুরি শুধু সুরা ফাতেহা পাঠ নয়, বরং এ সুরার প্রতিটি বাক্যের অর্থ হৃদয়ে গভীর ভাবে ধারণ করা। সুরা ফাতেহা’র মূল বিষয় তিনটি। প্রথমে বর্ণিত হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার মর্যাদা। বলা হয়েছে,“আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন”। অর্থ: সকল প্রশংসা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার। তিনিই “রাহমানির রাহীম”, তিনিই “মালিকি ইওয়ামিদ্দিন।” অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা হলেন সবচেয়ে দয়াময় এবং দয়া করাই তার নীতি। এবং তিনিই রোজ হাশরের দিনের সর্বসময় কর্তা। দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এ সুরায় বর্ণিত হয়েছে তা হলো মুসলিম জীবনের মিশন। সে মিশনটি হলো: “ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা না’স্তায়ীন।” অর্থাৎ আমরা ইবাদত করি একমাত্র মহান আল্লাহর এবং একমাত্র আল্লাহ থেকেই আমরা সাহায্য ভিক্ষা করি।
সুরা ফাতেহার তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো দোয়া। এবং সে দোয়াটি হলো “ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকীম”। অর্থ: “(হে মহান আল্লাহ), আমাকে সিরাতুল মুস্তাকীম তথা জান্নাতের পথটি দেখান।” এটিই হলো মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়াটি সম্পদ ও সন্তান চাওয়া নয়, সেটি এই সিরাতুল মুস্তাকীম। যে ব্যক্তি সিরাতুল মুস্তাকীম পেল, সেই তো জান্নাত পেল। এর চেয়ে বড় পাওয়া মানব জীবনে আর কি হতে পারে? ধনসম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও সুঠাম স্বাস্থ্য তো কাফেরও পায়। কিন্তু তা কি জান্নাতে নেয়? যে ব্যক্তি ব্যর্থ হলো সিরাতুল মুস্তাকীম পেতে, সে পৌঁছে জাহান্নামে। এর চেয়ে বড় ক্ষতিই বা কি হতে পারে? মহান আল্লাহতায়ালা অশেষ রহমত হলো, মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া-পাওয়ার বিষয় কি এবং কি ভাবেই বা সেটি রাব্বুল আলামীনের কাছে চাইতে হয় -সেটি তিনি সুরা ফাতেহাতে শিখিয়ে দিয়েছেন। নামায এভাবে জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি থেকে যেমন বাঁচতে শেখায়, তেমনি দেখায় সবচেয়ে বড় কল্যাণের পথ। নামায এভাবেই কাজ করে জান্নাতে চাবি রূপে। লন্ডন, ১০/১২/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018