পাকিস্তান কেন ভেঙ্গে গেল?
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on January 29, 2021
- Bangla Articles, ইতিহাস
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সংকট জন্মের পূর্ব থেকেই
পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই অনেকেই দেশটির প্রতিষ্ঠা যেমন চায়নি। তেমনি প্রতিষ্ঠার পর দেশটি বেঁচে থাকুক সেটিও চায়নি। বিরোধী পক্ষটি যে শুধু ভারতী কংগ্রেস ছিল তা নয়, ছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শক্তি এবং হিন্দুমহাসভার ন্যায় সকল সাম্প্রদায়িক হিন্দু সংগঠন। বিরোধীতা করেছে দেওবন্দি ফেরকার আলেমগণও। তাদের প্রবল বিরোধীতা সত্ত্বেও সাতচল্লিশে পাকিস্তুান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু দেশটির অস্তিত্বের বিরুদ্ধে হুমকি সব সময়ই থেকে যায়। শত্রুদের হাতে দেশটির ধ্বংসের মোক্ষম হাতিয়ার রূপে ধরা দেয় দেশটির জটিল শাসনতান্ত্রিক সংকট ও জন্মের পূর্ব থেকে বিরাজমান বৈষম্য। অথচ এ দুটির কোনটিই পাকিস্তান নিজে সৃষ্টি করেনি; পাকিস্তানের দার্শনিক ভিত্তির সাথেও সেটি জড়িত নয়। অথচ তার ক্ষতিকর দায়ভার পাকিস্তানকেই বইতে হয়। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ (বর্তমান নাম: পখতুন খা খায়বার) ও বেলুচিস্তান এ পাঁচটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। পূর্ব বাংলা নিয়ে গঠিত অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান এবং বাঁকি চারটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের আয়তন ছিল ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইল, এবং পশ্চিম পাকিস্তানের আয়তন ৩,০৭, ৩৭৪ বর্গ মাইল। জনসংখ্যায় পূর্ব পাকিস্তানীরা ছিল পাকিস্তানের মোট জসসংখ্যার ৫৬% ভাগ, কিন্তু প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ব্যবসা বাণিজ্যের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তারা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে ছিল অনেক কম।
ব্রিটিশ শাসনামলে ভাষা, ধর্ম বা অঞ্চলভিত্তিক জনসংখ্যার অনুপাদে সরকারি প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে লোক নিয়োগের রীতি ছিল না। ফলে ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনে ও সেনাবাহিনীতে জনসংখ্যার অনুপাতে বাঙালী মুসলিমদের উপস্থিতি ছিল না। ফল দাঁড়িয়েছিল, সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের সময় কোন বাঙালী মুসলিমই সেনাবাহিনীর কোন সিনিয়র অফিসার ছিল না। সে সময় ভারতের সিভিল সার্ভিস (আই..সি.এস) এবং পুলিশ সার্ভিসে সর্বমোট ১০১ জন মুসলিম ছিল। তাদের মধ্যে বাঙালী মুসলিম ছিল মাত্র ১৮ জন। ৩৫ জন ছিল পশ্চিম পাকিস্তান ভূক্ত এলাকার। বাকীরা ৪৮ জন ছিল ভারতের সে সব এলাকা থেকে যা পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত হয়নি। ১৯৪৭ সালে ভারতে বিভাগ কালে ১০১ জন মুসলিম অফিসারের মধ্যে ৯৫ জনই পাকিস্তানের পক্ষে যোগদানের ঘোষণা দেয়,এবং অবাঙালীদের প্রায় সবাই বসবাসের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। -(Session and Rose, 1990)। এর ফলে পাকিস্তানের প্রশাসনে রাতারাতি বাঙালী-অবাঙালীর মাঝে বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি হয়। এবং এ বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার পূর্বে ব্রিটিশ শাসনামলে। তখন ভারতের সিভিল সার্ভিস (আই..সি.এস) এবং পুলিশ সার্ভিসে লোক নিয়োগে ব্রিটিশ সরকার ভাষা,বর্ণ ও আঞ্চলিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি, গুরুত্ব দেয়া হত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রার্থীর ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্যকে। শিক্ষাদীক্ষায় পশ্চাদপদ হ্ওয়ার কারণে ভারতীয় প্রশাসনে শুরু থেকেই জনসংখ্যার অনুপাতে প্রশাসনে বাঙালী মুসলিমদের অনুপাতটি ছিল খুবই কম।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান – এ উভয় প্রদেশ থেকেই বিপুল সংখ্যক অমুসলিম সরকারি কর্মচারি ভারতে চলে যায়। প্রশাসনে দেখা দেয় বিরাট শূণ্যতা। একই সময় শুরু হয় ভারত থেকে মোহাজিরদের জোয়ার। ফলে সে শূণ্যতা পূরণে ভারত থেকে আগত মোহাজিরগণদের দ্রুত নিয়োগ দেয়া শুরু হয়। পাকিস্তানের প্রশাসনে যোগ্যতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগের ব্রিটিশ পদ্ধতিকে অব্যাহত রাখা হয়, ফলে সে সময় ভারত, বার্মা ও এমন কি অন্যদেশের যোগ্যতর মুসলিমগণ পাকিস্তানের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ার সুযোগ পায়। সে সময় যোগ্য লোকের সন্ধানটি এতোই প্রবল ছিল যে জার্মান নওমুসলিম নাগরিক মুহাম্মদ আসাদকে জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি করে নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের যোগ্যতর ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনরূপ অবিচার বা বৈষম্যমূলক আচারন করা না হলেও শুরু থেকেই পাকিস্তানের প্রশাসনে দেখা দেয় বাঙালী-অবাঙালীর মাঝে চোখে পড়ার মত বিরাট বৈষম্য। আর সে বৈষম্যকে পেশ করা হয় বাঙালীর বিরুদ্ধে অবিচার রূপে, এবং সে জন্য দায়ী করা হয় পাকিস্তানের সরকারকে। পরবর্তীতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে এ বৈষম্য ব্যবহৃত হয় দেশবিধ্বংসী হাতিয়ার রূপে। এরূপ বৈষম্য ভারতেও ছিল। পাঞ্জাবী শিখদের সংখ্যা বাঙালী হিন্দুদের চেয়ে বেশী নয়, কিন্তু ভারতের সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনে শিখ ও অন্যান্য অবাঙালীদের অনুপাত বাঙালী হিন্দুদের তুলনায় অনেক বেশী ছিল। এমনকি খোদ পশ্চিম বাংলাতে অধিকাংশ কলকারখানার মালিক অবাঙ্গালীরা। কিন্তু সে বৈষম্যের কারণে বাঙালী হিন্দুদের মাঝে বিচ্ছেদের দাবী উঠেনি। এবং সে বৈষম্য রাজনীতিতে প্রবল বিষয়ও হয়ে উঠেনি। অথচ পাকিস্তানে বাঙালী মুসলিমদের মাঝে অবাঙালী-বাঙালী বৈষম্যকে বিচ্ছিন্নতার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হয়।
বাঙালী মুসলিমদের পশ্চাদপদতা
ব্রিটিশ আমলেও প্রশাসনের ন্যায় বাঙালীদের হাতে কোন শিল্প-কলকারখানাও ছিল না। ছিল না ব্যবসা-বাণিজ্যও। ১৯৪৭ সালের পূর্বে খোদ অবিভক্ত বাংলাতে ব্যাবসা-বাণিজ্য ছিল বাঙালী হিন্দু এবং অবাঙালী মারোয়ারিদের হাতে। তখন ভারতের মুসলিমদের মাঝে ব্যবসা-বাণিজ্যে যারা কিছুটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল তাদের প্রায় সবাই ছিল অবাঙালী। আদমজী, ইস্পাহানী, বাওয়ানী, মেমন ইত্যাদী ব্যবসায়ী পরিবারগুলো ১৯৪৭ সালের পূর্ব থেকেই কলকাতা, মোম্বাই, আহমেদাবাদ, মাদ্রাজের ন্যায় শহরগুলিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই তারা ভারত ত্যাগ করে পাকিস্তানে চলে আসে। তাদের প্রায় সবাই পশ্চিম পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। শুধু পশ্চিম পাকিস্তানে নয়, পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পায়নে ভারত থেকে আগত এ মোহাজির ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অবদান ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে তারা পাওয়ার হাউস রূপে কাজ করে। ভারতের পরাধীন ভূমিতে এতকাল যে প্রতিভা আড়ষ্ঠ ছিল -তা স্বাধীন পাকিস্তানের মূক্ত পরিবেশে অর্থনৈতিক জোয়ার সৃষ্টি করে। শিল্প স্থাপনে পাকিস্তানের যাত্রাটি শুরু হয় বলতে গেলে শূণ্য থেকে। পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায় পশ্চিম পাকিস্তানও ছিল মূলত কৃষিভূমি। কিন্তু দুই প্রদেশেই শিল্পায়ন শুরু হয়। ভারত থেকে আগত মোহাজিরদের প্রায় সবাই পশ্চিম পাকিস্তানে বসত গড়ায় প্রবৃদ্ধির সে হার পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল অধিক। তবে লক্ষণীয় হলো, ষাটের দশকের শেষ দিকে এসে প্রবৃদ্ধির সে হার দুই প্রদেশের মধ্যে সমান পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
তবে অর্থনীতি, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের পাশাপাশি বৈষম্য রাজনীতির ময়দানেও কম ছিল না। অবিভক্ত ভারতের মুসলিম রাজনীতিতেও শেরে বাংলা ফজলুল হক, হাসান শহীদ সহরোওয়ার্দি ও নাজিমুদ্দিনের মত বাঙালী মুসলিম নেতাদের প্রভাব ছিল বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সর্বভারতীয় মুসলিমদের রাজনীতিতে কায়েদে আযম যে ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন কোন বাঙালী মুসলিম নেতা তাঁর ধারে কাছেও ছিলেন না। উপমহাদেশের মুসলিমদের বুদ্ধিবৃত্তিক ভূবনের তাদের অবদান তেমন চোখে পড়ার মত ছিল না। এমন কি খোদ বাংলাতেও তারা ছিল বাঙালী হিন্দুদের সৃষ্ট সাহিত্যের প্রভাব বলয়ে আবদ্ধ। অথচ জনসংখ্যার ৫৬% বাঙ্গালী হওয়ার ফলে পাকিস্তানের শাসনের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় তাদের। কিন্তু প্রকট সমস্যা দেখা দেয়, স্রেফ অধিক জনসংখ্যার হওয়ার দাবীতে বাঙ্গালীর সে মেজরিটি শাসনকে পাকিস্তানের অপর চারটি প্রদেশের অবাঙালী নাগরিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করা নিয়ে। কারণ রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা তো আসে অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, শিক্ষাগত ও সামরিক সামর্থের ভিত্তিকে। বাঙালী মুসলিমদের এর কোনটিই ছিল না।
পুরনো বৈষম্য ও নতুন সংকট
১৯৪৭ সালে বাঙালী মুসলিমদের নিয়ে ভীতি দেখা দিয়েছিল বাঙালী হিন্দুদের মনেও। তখন অবিভক্ত বাংলায় মুসলমান জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫৫% , আর হিন্দুরা ছিল ৪৫%। বাংলার প্রশাসন, শিক্ষা-সাহিত্য, শিল্প-বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্র ছিল হিন্দুদের দখলে। অবিভক্ত বাংলার রাজধানী ছিল কলকাতায়, তখন সে নগরীর শতকরা ৮০ ভাগ জনগণ ছিল হিন্দু। মুসলিমদের প্রাধান্য এমনকি ঢাকাতেও ছিল না। ঢাকার অবস্থান মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব বাংলাতে হলেও সে শহরে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল মুসলিমদের চেয়ে অধিক, মুসলিমদের সংখ্যা ছিল মাত্র শতকরা ৪০%। ঢাকা শহরের দোকানপাঠ ও রিয়েল এস্টেট সম্পদের প্রায় ৮০% ভাগের মালিক ছিল হিন্দুরা। অনুরূপ অবস্থা ছিল সকল জেলা ও মহকুমা শহর গুলোতেও।
অপরদিকে বাঙালী হিন্দুদের রাজনৈতিক প্রভাব শুধু বাংলাতে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাদের প্রভাব বিস্তৃত ছিল সমগ্র ভারতের রাজনীতি জুড়ে। ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের জন্মই হয়েছিল কলকাতায়। শুরুতে দলটির প্রধান প্রধান নেতারা ছিল বাঙালী হিন্দু। সমগ্র ভারতে সর্বপ্রথম রেনেসাঁ তথা জাগরণ এসেছিল বাঙালী হিন্দুদের মাঝে। তাদের মাঝে ছিল সুরেন্দ্রনাথ ব্যাণার্জি, সুভাষ চন্দ্র বোস, শরৎ বোস, চিত্তরঞ্জণ দাশের ন্যায় বড় বড় নেতা। ছিল রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র। তাদের প্রভাব ছিল সমগ্র ভারত জুড়ে। সে তুলনায় মুসলিমগণ ছিল অনেক পিছনে। কিন্তু ১৯৩৭ সাল থেকে প্রদেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার রেওয়াজ শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলার শাসন ক্ষমতার কর্ণধার কোন হিন্দু হতে পারেনি। বাংলা অবিভক্ত থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম শাসন থেকে তাদের নিস্তার নাই -সেটি বুঝতে পেরেই হিন্দু বাঙালীরা ১৯৪৭-য়ে বাংলা বিভাগের দাবী তোলে। অথচ মুসলিম লীগ সে সময় বাংলা বিভাগের বিরোধীতা করেছিল।
ভয় ও অবিশ্বাসের রাজনীতি
পাকিস্তান সৃষ্টির পর একই বাঙালী ভীতি ঢোকে অবাঙালী পাকিস্তানীদের মনে। তবে পার্থক্য হল, বাঙালী হিন্দুরা বাঙালী মুসলিমের মেজরিটি শাসন থেকে বাঁচবার তাগিদে যেভাবে খোদ বাংলাকেই বিভক্ত করে ফেলে অবাঙালী পাকিস্তানীরা সে ভয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গেনি। তারা বরং চেয়েছে বাঙালীর সে সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের উপর শাসনতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার। তাদের ইচ্ছা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন যেন অবিবেচক সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনে পরিনত না হয়। এজন্যই পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণোয়নের কাজটি এক জটিল সমস্যায় রূপ নেয় এবং বিলম্বিতও হয়। ভারতের ন্যায় পাকিস্তানেও শাসনতন্ত্র তৈরীর কাজ যে শুরু যে হয়নি তা নয়, কিন্তু ভারতে সে কাজটি এতটা জটিল ছিল না। পাকিস্তানে সমস্যা ছিল শাসনতন্ত্রে ইসলামের স্থান নির্ধারণ করা নিয়ে। হিন্দুদের মাঝে ধর্মীয় পেনাল কোড নেই। ফলে শাসনতন্ত্রে ধর্মীয় বিধানের কোন স্থানও নেই। তাছাড়া শুরু থেকেই কংগ্রেস সেক্যুলারিজমের পক্ষে জনগণকে দীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু সেক্যুলারিজম ইসলামে হারাম, ইসলামে রয়েছে শরিয়তী বিধান। প্রতিটি মুসলিমের উপর নামায-রোযার ন্যায় সে শরিয়তী বিধান মেনে চলাটিও ফরজ। ফলে ১৪ শত বছর ধরে মুসলিমগণ যেখানেই কোন রাষ্ট্র গড়তে পেরেছে সেখানেই শরিয়তী বিধানও চালু করেছে। সেটি ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে ভারত এবং বাংলাতেও ছিল।
১৯৪৭য়ে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর সে শরিয়তী বিধানের দিকে ফিরে যাওয়াটি মুসলিমদের উপর ফরজ হয়ে দাঁড়ায়। দেশের আলেমগণ এ নিয়ে সোচ্চার হয়। ফলে শাসনতন্ত্রে সেটি নিশ্চিত করাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সে কাজটি এতটা সহজও ছিল। পাকিস্তানের মুসলিমগণ ছিল সূন্নী ও শিয়াতে বিভক্ত। ছিল দেওবন্দী-বেরেলভীর দ্বন্দ। ছিল বিপুল সংখ্যক সেক্যুলারিস্ট ও কম্যুনিষ্ট -যারা রাষ্ট্রে ইসলামি শরিয়তের প্রতিষ্ঠার প্রচণ্ড বিরোধী ছিল। অবশেষে সে সমস্যার দ্রুত সমাধান হয় নবাব লিয়াকত খানের প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে শাসনতন্ত্রের ২২ দফা মূলনীতি পাশের মধ্য দিয়ে। অপর দিকে সংখ্যাগরিষ্ট শাসনের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার একটি সুরাহা করা হয়। বগুড়ার মহম্মদ আলী যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তখন শাসনতন্ত্রে পার্লামেন্টে উচ্চ পরিষদ ও নিম্ন পরিষদ -এ দুই পরিষদে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। নিম্ম পরিষদে জনসংখ্যার অনুপাতে এবং উচ্চ পরিষদে ৫ প্রদেশের সমান আসন রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়। এভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে একটি সমতা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। গণপরিষদে সেটি অধিকাংশ সদস্যের তাতে সমর্থণ ছিল। কিন্তু সেটি গোলাম মুহাম্মদের স্বৈরাচারি পদক্ষেপে বানচাল হয়ে যায়। ফলে শাসনতান্ত্রিক সংকট একটি সমাধানের কাছে পৌছেও সে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
চৌধুরি মোহম্মদ আলীর প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে প্রণীত ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে পার্লামেন্টে দুই অঞ্চলের সমান আসন রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়। আই্য়ুব খানের আমলে রচিত ১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্রেও পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে সমান প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগসহ অনেক পূর্ব পাকিস্তানী দল সমতার সে বিধানটি মেনে নিতে রাজী হয়নি। তবে এক্ষেত্রে স্মরণীয় যে, পাকিস্তানের বর্তমান (২০২১ সালে) জনসংখ্যা ২২ কোটির বেশী, আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। ফলে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংসদের আসন বরাদ্দ হলে কিছুদিনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানীরা তাদের সে সংখ্যাগরিষ্টতা হারাতো। তখন শুরু হতো সংখ্যাগরিষ্ঠ অবাঙালী শাসনের ভয়।
জেনারেল ইয়াহিয়া খানই প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান যিনি এক ব্যক্তি এক ভোটের ভিত্তিতে জনসংখ্যার ভিত্তিতের পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে তথা পার্লামেন্টে প্রদেশের সদস্য নির্ধারণ করেন। কিন্তু ইয়াহিয়া খানের সে সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের রাজনীতিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৯৪৭ সালে বাঙালী মুসলিমের সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনের যে ভয় বাঙালী হিন্দুদের মাঝে প্রকট রূপ ধারণ করেছিল সেটিই দেখা দেয় জুলফিকার আলী ভূট্টোর ন্যায় পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের মনে। বাঙালী হিন্দুদের মত তারা পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের আলাদা হওয়া দাবী না তুললেও তাদের অনেকে গোপনে উৎসাহ জুগিয়েছে বাঙালীদের আলাদা হওয়ায়। অনেকের বিশ্বাস,শেখ মুজিবের হাতে ৬ দফা প্রস্তাবটি তুলে দিয়েছিল এক পশ্চিম পাকিস্তানী আমলা। ১৯৭০ সালের নির্বাচন কালে বাঙালী হিন্দুদের মতই জুলফিকার আলী ভূট্টো ও তার সাথীরা সে “বাঙালী শাসন”এর সে ভয়ই পশ্চিম পাকিস্তানীদের মনে ঢুকাতে সমর্থ হয়। এবং বানচাল করে দেয় ইয়াহিয়া খানের জাতীয় পরিষদের ৩রা মার্চ ঢাকায় বৈঠক অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকে। তিনিই বলেন,“ওধার তোম, ইধার হাম”এর মত অদ্ভুদ স্লোগান।” এবং তিনি জাতীয় পরিষদের পশ্চিম পাকিস্তানী সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যারা ঢাকার বৈঠকে যাবে তাদের পা ভেঙ্গে দেয়া হবে।” তিনি আরো বলেন,“তারা যেন রিটার্ন টিকেট না নিয়ে ঢাকায় যায়।” ১৯৪৭ সাল থেকেই যেসব বাঙালী জাতীয়তাবাদীরা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা মেনে নিতে পারেনি, এবং সবসময়ই সচেষ্ট ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্ন করায় -ভূট্টো তাদের পরিকল্পনার সহায়ক শক্তিতে পরিণত হয়।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্ব ছিল প্রায় ১২০০ মাইল। তবে মনের দূরত্ব ছিল আরো বেশী। উনিশ শ’ সাতচল্লিশে ভারত থেকে পাকিস্তানে আসার পথে বহু লক্ষ মুসলমান নরনারী হিন্দু ও শিখ গুণ্ডাদের হাতে নিহত হয়। ধর্ষিতা হয বেশুমার মুসলিম নারী। ফলে হিন্দু ও শিখদের মুসলিম বিদ্বেষের যে হিংস্র পরিচয়টি তারা ১৯৪৭ সালেই লাভ করে সেটি বাংলার মুসলিমদের জীবনে ঘটেনি। এরই ফল দাঁড়িয়েছিল, ফজলুল হকের মত নেতারা যখন কোলকাতায় গিয়ে “বাংলা অবিভাজ্য” বয়ান দেন এবং ভারতীয় হিন্দু নেতাদের সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান তখন পশ্চিম পাকিস্তানীরা যে তাতে শুধু বিস্মিত হয়েছে তাই নয়, তাঁর রাজনীতির উপরও তাদের অনাস্থা বাড়ে। এরই ফল দাড়ায়, ফজলুল হককে যখন তাঁর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় -তখন সে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানে কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি।
ক্ষমতালিপ্সার রাজনীতি
পাকিস্তানের সৃষ্টির মূলে ছিল প্যান-ইসলামিক চেতনা। সে চেতনাটি যাদের মনে প্রবলতর ছিল একমাত্র তারাই ছিল পাকিস্তানের প্রকৃত কল্যাণকামী। ভূট্টোর মত মদ্যপায়ী সেক্যুলারিষ্টদের কাছে অখণ্ড পাকিস্তান বাঁচিয়ে রাখা গুরুত্ব পাবে -সেটিই বা কি করে আশা করা যায়? ভূট্টো ইসলামী অনুশাসনের বিরুদ্ধে এতটাই বিদ্রোহী ছিলেন যে তিনি সে বিদ্রোহীটি গোপন রাখার প্রয়োজন মনে করতেন না। তিনি মদ পান করতেন, সেটিও তিনি গোপন রাখার প্রয়োজনও মনে করেননি। ১৯৭৭ সালে লাহোরের গোলবাগে এক নির্বাচনী জনসভায় সেটি তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, “আমি মদপান করি,তবে অন্যদের ন্যায় মানুষের রক্ত পান করিনা।” সেদিন নিজের মদ্যপানকে জায়েজ করতে গিয়ে তিনি অন্যদের রক্তপায়ী রূপে অভিহিত করেছিলেন। আমি নিজে সে জনসভায় উপস্থিত ছিলাম, এবং নিজ কানে তার সে বক্তৃতাটি শুনিছিলাম। প্রশ্ন হলো, ইসলামের হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যার মধ্যে এতটা প্রকট তার মধ্যে কি ইসলামি আদর্শভিত্তিক পাকিস্তান বাঁচানোয় অঙ্গিকার থাকতে পারে? বরং অখণ্ড পাকিস্তানের বেঁচে থাকাটি অসম্ভব হতো তার ক্ষমতা লাভে।
১৯৭০’এর নির্বাচনের পর ভুট্টোর কাছে পরিস্কার হয়ে যায়, তার পক্ষে অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব। পাকিস্তানের বেঁচে থাকাটি দেশটির মুসলিম জনগণের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার নিজের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রধানমন্ত্রী হওয়া। ফলে তার রাজনীতিতে শুরু হয় পাকিস্তানের স্বার্থের সাথে তাঁর ব্যক্তি স্বার্থের দ্বন্দ। সে দ্বন্দে তিনি নিজের স্বার্থ পূরণের পথটি তিনি বেছে নেন। এ জন্যই ১৯৭০’এর নির্বাচনে একটি বারের জন্যও তিনি পূর্ব পাকিস্তানে কোন নির্বাচনী জনসভা করেননি, পূর্ব পকিস্তানীদের থেকে কোন রূপ সমর্থণও চাননি। একই অবস্থা ছিল শেখ মুজিবের। মুজিবও সুস্পষ্ট বুঝতে পারে, অখণ্ড পাকিস্তানে তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব। কারণ, সে জন্য তো জরুরি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের দলের উপস্থিতি। তবে মুজিব তা নিয়ে ভাবতো না। তাঁর মনের মানচিত্রে অখণ্ড পাকিস্তানের কোন স্থান ছিল না। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সমর্থন লাভ নিয়ে মুজিব কখনোই আগ্রহী ছিলেন না। তিনি আগ্রহী ছিলেন শুধু পূর্ব বাংলা নিয়ে।
যাদের মধ্যে নামায আদায়ের তাগিদ নেই তাদের আবার মসজিদ নির্মান এবং সে মসজিদের সুরক্ষার ভাবনা কিসের? তাই পাকিস্তানের মূল শত্রু ছিল দেশটির ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য সেক্যুলারিষ্টগণ। তারাই ভারতের ন্যায় অপেক্ষায় থাকা শত্রুদের সুযোগ করে দেয়। উঁই পোকা যেমন খুঁটিকে ভিতর থেকে খেয়ে ফেলে এরাও তেমনি পাকিস্তানকে ভিতর থেকে প্রাণশূণ্য করে ফেলে। পাকিস্তানের এ ঘরের শত্রুরা যেমন দেশের রাজনীতিতে ছিল, তেমনি ছিল সেনাবাহিনী, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে। একাত্তরের বহু আগেই এ সেক্যুলারিষ্টগণ পাকিস্তানকে খণ্ডিত করে ফেলে, এবং বিভক্তির সে চিত্রটিই প্রকাশ পায় ১৯৭০ এর নির্বাচনে। মুজিবের রাজনীতিতে যেমন পশ্চিম পাকিস্তান ছিল না, তেমনি ভুট্টোর রাজনীতিতেও পূর্ব পাকিস্তান ছিল না। ফলে শেখ মুজিব যেমন তার নির্বাচনী লড়াইকে শুধু পূর্ব পাকিস্তানে সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন, তেমনি ভূট্টোও তার লড়াইকে সীমিত রেখেছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে।
খাজা নাজিমুদ্দীন, সহরোওয়ার্দি, বগুড়ার মহম্মদ আলীদের মত নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন তা নয়। বরং পূর্ব পাকিস্তানের কল্যাণ চিন্তার সাথে তাদের মাঝে কাজ করেছিল অখণ্ড পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে রাখা এবং সে দেশটিকে শক্তিশালী করার ভাবনাটিও। ফলে তাদের রাজনীতিতে অন্য প্রদেশের নাগরিকদের সাথে সমঝোতার প্রেরণাও ছিল। ফলে প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের মনে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীর প্রতি আস্থা সৃষ্টিতে সচেষ্ট ছিলেন। আপোষ ফর্মালা উদ্ভাবনেও তাঁরা স্বচেষ্ট ছিলেন। এমন এক চেতনা নিয়েই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভাষানীর দাবীর জবাবে জনাব সহরোওয়ার্দি বলেছিলেন, ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ৯৮% স্বায়ত্বশাসন দিয়ে দেয়া হয়েছে। তাঁরা জনসংখ্যা বিচারে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্টতা যেরূপ জানতেন, তেমনি জানতেন অবাঙালীদের তুলনায় নিজেদের পশ্চাদপদতা নিয়েও।
একটি দেশের রাজনীতিতে শুধু জনসংখ্যায় বাড়াটাই বড় কথা নয়, যোগ্যতা নিয়ে বাড়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। ইহুদীরা মার্কিন ও ব্রিটিশ রাজনীতিতে অতীতে ও এবং আজও যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সেটি সংখ্যাগরিষ্টতার কারণে নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দায়বদ্ধতাও বিশাল। সে দায়বদ্ধতা শুধু নির্বাচনে ভোটদান নয়, বরং দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি, প্রশাসন, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, সাহিত্য, বিজ্ঞান এমনকি খেলাধুলার অগ্রগতিতে সবার চেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে হয়। নইলে শুধু সংখ্যাগরিষ্টতার কারণে কারো মর্যাদা বাড়ে না। রাজনীতিতে গ্রহণ যোগ্যতাও বাড়ে না। ইংল্যান্ডে বাঙালীদের সংখ্যা ইহুদীদের চেয়ে অধিক। কিন্তু তাতে কি ব্রিটিশ রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও শিল্পে কি বাঙালীর প্রতিষ্ঠা বা গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে? অথচ ইহুদীরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য বা মন্ত্রীই হয় না, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবেল বিজয়ী প্রফেসর, নাম করা ডাক্তার, বিখ্যাত প্রকৌশলী, শিল্প মালিক এবং আবিস্কারকও হয়। যে কোন দেশে প্রত্যেক নাগরিককে অন্য নাগরিকের সাথে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা করে সামনে এগুতে হয় -সেটি যেমন শিক্ষা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে, তেমনি প্রশাসনে। এ প্রতিযোগিতায় ভাষা, বর্ণ, আঞ্চলিকতা গুরুত্ব দেয়া শুরু হলে গুরুত্ব হারায় যোগ্যতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ ব্শ্বি-শক্তি, দেশটি সে শক্তি অর্জন করেছে যোগ্যবানদের মূল্য দেয়ার মধ্য দিয়ে। যোগ্যতার বিচারে উত্তির্ণ হলে এমনকি বিদেশীদেরও তারা নিজ দেশে বরণ করে নেয়। অবাঙালীর তুলনায় পাকিস্তানে বাঙালীর পশ্চাপদতা ছিল চোখে পড়ার মত। পাকিস্তানে শিল্পায়ন শুরু হয়েছিল বলতে গেলে শূণ্য থেকে। স্বাধীনতা লাভে প্রথম দিনটিতেই হিন্দুস্থান এক্ষেত্রে বহু পথ এগিয়ে ছিল। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে শিল্পে যে প্রবৃদ্ধি শুরু হয় সেটি অখণ্ড পাকিস্তানী আমলের ২৩ বছরে ভারত কখনই অতিক্রম করতে পারিনি। সেটি এসেছিল ভারত থেকে হিজরতকারী অবাঙালী প্রশাসক, ব্যবসায়ী ও শিল্প-পরিচালকদের কারণে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে তখন প্রশাসকগণ আসতো সে দ্রুত শিল্পোন্নয়নের ছবক নিতে। অথচ সে উন্নয়নে বাঙালীর অবদান ছিল সামান্যই।
পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার মূল কারণটি হলো মুজিব ও ভূট্রোর ক্ষমতালিপ্সার রাজনীতি। দেশ ভেঙ্গে যাক –তা নিয়ে যেমন মুজিবের কোন দুঃখ ছিলনা। ভূট্টোরও ছিল না। উভয়েই হতে চেয়েছে প্রধানমন্ত্রী। অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় মুজিবের কোন আগ্রহ ছিল না। ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারীতে পাকিস্তান থেকে ফিরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দি ময়দানের জনসভায় মুজিব বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াই ১৯৭১ সালে নয়, ১৯৪৭ সাল থেকেই শুরু করেছিলাম।” মুজিবের সে বয়ান সেদিন আমি নিজ কানে শুনেছি। আর ভারত তো ১৯৪৭ সাল থেকেই অপেক্ষায় ছিল এমন একটি মুহুর্তের। ভারতের হামলা প্রতিরোধ করার সামর্থ্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছিল না। ফলে ভারত যা চেয়েছে ১৯৭১’য়ে তাই হয়েছে। তাই পাকিস্তান ভেঙ্গে গেল দেশটির নিজের ব্যর্থতার কারণে নয়, বরং ঘরের শত্রু ও বিদেশী শত্রুদের যৌথ ষড়যন্ত্রে। ২৯/০১/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018