পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথ, ঈমানবিনাশী জাতীয় সঙ্গিত ও বাঙালী মুসলিমের আত্মসমর্পণ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on February 27, 2019
- Bangla Articles, শিক্ষা ও সংস্কৃতি
- No Comments.
যে মহাপাপ কথা ও গানে
সমাজে বড় বড় অপরাধগুলি শুধু খুন,ব্যভিচার বা চুরিডাকাতি নয়।গুরুতর অপরাধ ঘটে মুখের কথায় ও গানে। যে ব্যক্তি মুখে মহান আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকার করে বা তাঁর কোন হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেয় -তাকে কি জাহান্নামে প্রবেশের জন্য খুন,বলাৎকার বা চুরি-ডাকাতিতে নামার প্রয়োজন পড়ে? বিদ্রোহের ঘোষণাটি মুখে মাত্র একবার দেয়াই সে জন্য যথেষ্ঠ। অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হতে ইবাদতে মশগুল ইবলিসকে তাই হত্যা বা ব্যভিচারে নামতে হয়নি। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া একটি মাত্র হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই তাকে লানতপ্রাপ্ত করেছে।সে হুকুমটি ছিল হযরত আদম (আঃ)কে সেজদার।তাই বক্তৃতায় কি বলা হয়, সঙ্গিতে কি গাওয়া হয় বা সাহিত্যের নামে কি লেখা হয় -সেটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। তা রেকর্ড হয় এবং তা নিয়ে বিচার বসবে রোজ হাশরের বিচার দিনে। মু’মিন ব্যক্তিকে তাই শুধু উপার্জন বা খাদ্য-পানীয়’র ক্ষেত্রে হারাম-হালাম দেখলে চলে না। কথাবার্তা বা লেখালেখির ক্ষেত্রেও অতি সতর্ক হতে হয়।নবীজী(সাঃ)র হাদীসঃ অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে জিহ্বা ও যৌনাঙ্গের দ্বারা কৃত অপরাধের কারণে। তেমনি বহু মানুষ জান্নাতেও যাবে সত্য দ্বীনের পক্ষে সাক্ষি দেয়ার কারণে। ফিরাউনের দরবারে যে কয়েকজন যাদুকর হযরত মূসা (আঃ)র সাথে প্রতিযোগিতায় এসে হেরে গিয়ে মুসলমান হয়েছিলেন তারা জীবনে এক ওয়াক্ত নামায বা রোযা পালনের সুযোগ পাননি। “মুসা (আঃ)র রবের উপর ঈমান আনলাম” –তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত এই একটি মাত্র বাক্যই তাদেরকে সরাসরি জান্নাতবাসী করেছে। ঈমানের প্রবল প্রকাশ ঘটেছিল তাদের সে উচ্চারণে। ঈমানের সে প্রকাশ ফিরাউনের কাছে সহ্য হয়নি, তাই তাদের হাত-পা কেটে নির্মম হত্যার হুকুম দেয়। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষে সাক্ষদানে তারা এতই অটল ছিলেন যে,সে নির্মম হত্যাকান্ডও তাদের একবিন্দু বিচলিত করতে পারেনি। তাদের এ সাহসী উচ্চারনে মহান আল্লাহতায়ালা এতোটাই খুশি হয়েছিলেন যে পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে নিজ কালামের পাশে তাদের সে ঘোষণাকেও লিপিবদ্ধ করেছেন, এবং ক্বিয়ামত অবধি মানব জাতির জন্য শিক্ষ্যণীয় করেছেন।
ঈমান বন্দুকের গুলি বা মিজাইলে মারা পড়ে না। ঈমানের মৃত্যু তখন ঘনিয়ে আসে যখন গান,সঙ্গিত বা সাহিত্যের নামে চেতনার ভূবনে লাগাতর বিষ ঢালা হয়। শয়তান বিষ পান করানোর সে কাজটাই মহা ধুমধামে করে নানারূপ গীত, গান,স্লোক ও মিথ্যা ধর্মগ্রন্থ পাঠ করানোর মধ্য দিয়ে। সে লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে শয়তানের লক্ষ লক্ষ পুরোহিত, মন্দির ও পূজামন্ডপ এবং হাজারো গান। বাংলার বুকে ইসলামের যখন প্রচন্ড জোয়ার,সে জোয়ার ঠেকাতে শয়তান যে অস্ত্রটি বেছে নিয়েছিল সেটিও কোন আধুনিক মারণাস্ত্র ছিল না। সেটি ছিল ভাববাদী গান।ইসলামের প্রসার রুখতে ভাববাদী গান ও হাতে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তখন মাঠে নেমেছিল চৈতন্য দেব। তার গানের আবেগ এতোটাই প্রবল ছিল যে, বাংলার বুকে হিন্দুদের মুসলমান হওয়ার জোয়ার দ্রুত থেমে যায়। ফলে কোটি কোটি ইসলামের আলোয় আলোকিত হতে ব্যর্থ হয়,থেকে যায় সনাতন জাহিলিয়াতের অন্ধকারে। বাংলাদেশের বুকে শয়তানের স্ট্রাটেজী আজও অভিন্ন। তবে শয়তানের উদ্দেশ্য, হিন্দুদের মুসলমান হওয়া রুখা নয়।বরং সেটি মুসলমানদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরানো তথা ডি-ইসলামাইজেশন। সে কাজে শয়তান সৈনিক হিসাবে পেয়েছে আধুনিক মুর্তিপুজারি রবীন্দ্রনাথকে।
একাত্তরের আত্মসমর্পণ
বাঙালী মুসলমানদের চেতনায় ঈমানবিনাশী বিষ ঢালার কাজ যে পূর্বে হয়নি -তা নয়। সে কাজের শুরু প্রবল হয়েছিল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের আমলে। সেটি উগ্র পৌত্তলিক সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের “বন্দেমাতরম’ গান গাওয়ার মাধ্যমে। বাঙালী হিন্দুগন সে গানকে অবিভক্ত বাংলার সকল স্কুলে জাতীয় সঙ্গিতের মর্যাদা দেয়। কিন্তু বাঙালী মুসলিমগণ শত্রুদের সে ঈমানবিনাশী ষড়য্ন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফলে সে প্রকল্প সেদিন ব্যর্থ হয়। বাঙালী মুসলিমদের সেদিনের সাফল্যের কারণ, মুসলিম রাজনীতির নেতৃত্ব মুজিবের ন্যায় ভারতীয় স্বার্থের সেবাদাসদের হাতে বন্দী ছিল না। বাঙালী মুসলিমগণ হিন্দু আধিপত্যের কাছে সেদিন আত্মসমর্পিতও ছিল। বরং তাদের চেতনার ভূমিতে সেদিন ছিল ইসলামের প্রতি গভীর অঙ্গিকার। সেদিন তারা বন্ধুহীনও ছিল না। তাদের পাশে ছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ভাষাভাষি বহু কোটি মুসলমান। কিন্তু ১৯৭১য়ে বাংলার রাজনীতির চিত্রই পাল্টে যায়। দেশ অধিকৃত হয় লক্ষাধিক ভারতীয় সৈন্যদের হাতে। এবং বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গণ তখন অধিকৃত হয় ইসলামি চেতনাশূণ্য ও ইসলামচ্যুত সেক্যুলারিস্টদের হাতে। ভারতের প্রতি তখন বাড়ে সীমাহীন আত্মসমর্পণ। ভারতের অর্থে ও স্বার্থে প্রতিপালিত এ সেবাদাসদের অঙ্গিকারটি ভারতের প্রতি এতোই গভীর যে,একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বহু হাজার কোটি টাকার যুদ্ধাস্ত্র ভারতের হাতে ডাকাতি হওয়াতেও তাদের মনে সামান্যতম দুঃখবোদ জাগেনি। সে ডাকাতি রোধে তারা কোন চেষ্টাও করেনি।অথচ সে অস্ত্র কেনায় বাংলাদেশের জনগণের অর্থ ছিল। তারা রুখেনি দেশের কলকারাখানার যন্ত্রপাতি লুন্ঠনও। বরং লুন্ঠনকে বাধাবিপত্তিহীন করতে সীমান্ত বাণিজ্যের নামে তারা বিলুপ্ত করে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সীমান্তও। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশ দ্রুত পরিণত হয় তলাহীন ভিক্ষার পাত্রে। ১৯৭৪ য়ে নেমে আসে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। আত্মসমর্পণের পর কি আর নিজের ইচ্ছা চলে? তখন তো প্রভুর ইচ্ছাই মেনে নিতে হয়। একাত্তরে ভারতের যুদ্ধজয়ের পর তেমনি একটি পরাজিত অবস্থা নেমে আসে বাংলার মুসলিম জীবনে।
দাসদের জীবনে কোনকালেই স্বাধীনতা আসে না।তারা তো বাঁচে আমৃত্যু পরাধীনতা নিয়ে। সে পরাধীনতাটি বরং গভীরতর হয় চেতনার ভূবনে। একাত্তর-পরবর্তী ভারতীয় দখলদারি ও তাদের ডাকাতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস ভারতীয় আশ্রয়ে প্রতিপালীত এহেন বাংলাদেশী দাসদের ছিল না। ফলে ভারত যা চেয়েছে সেটিই তারা অনায়াসে করতে পেরেছে। স্কুলে কি গাইতে হবে, কি পড়তে হবে সেটিও নির্ধারিত করে দেয় ভারত। শাসতন্ত্রের মূলনীতিগুলিও তারা নির্ধারণ করে দেয়। নিষিদ্ধ করে দেয় ইসলামপন্থিদের রাজনীতি। অথচ ১৯৭০য়ের নির্বাচনি মেনিফেস্টোতে মুজিব একটি বারের জন্যও এমন কথা উল্লেখ করেনি। এবং ইসলামপন্থি দলগুলো নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জনগণের রায়ও নেয়নি। পরাধীন ব্রিটিশ আমলে ইসলামের শত্রুগণ “বন্দেমাতরম” গানটি গিলাতে না পারলেও একাত্তরের পর তারা “আমরা সোনার বাংলা”কে গিলাতে পেরেছে। রবীন্দ্রনাথ নিজেও তার জীবদ্দশাতে নিজের কোন গান বাঙালী মুসলমানদের এভাবে গিলাতে পারেনি যা পেরেছে একাত্তরের পর। ইসলামের শত্রুদের এটিই হলো একাত্তরের বড় অর্জন। প্রশ্ন হলো,ভাব ও ভাবনায় রবীন্দ্রনাথের “আামার সোনার বাংলা” আর বঙ্কিমচন্দ্রের “বন্দেমাতরম” গানের মাঝে পার্থক্য কতটুকু? উভয় গানেই দেশ মাতৃতূল্য, সে সাথে পূজনীয়। ফলে উভয় গানের মূলেই রয়েছে অভিন্ন পৌত্তলিকতা। এমন গান কি কোন মুসলমান গাইতে পারে? বাংলাদেশের মুসলমানদের যারা ঈমানশূন্য ও ইসলামশূন্য দেখতে চায়,এ গান নিয়ে তাদের আগ্রহটি তাই গভীর। এরা দেখতে চায় পৌত্তলিকতার জয়জয়াকর। ফলে যাদের কাছে চৈতন্য দেব পূজনীয়, তাদের কাছে পূজনীয় রবীন্দ্রনাথও। মুসলমানের ঈমান ধ্বংসে যাদের আগ্রহটি প্রবল, একমাত্র তারাই এমন গানকে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিবে।এ গানটি জাতীয় সঙ্গিত রূপে নির্বাচনে বিবেচনায় আনা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার ভারতীয় মিত্রদের সেক্যুলার ও হিন্দুয়ানী মানদন্ড। তাদের সে মানদন্ডে রবীন্দ্রনাথ দেবতুল্য গণ্য হয়েছেন। ফলে তার গানকে তারা তীব্র ভক্তিভরে জাতীয় সঙ্গিতের মর্যাদা দিয়েছেন। ইসলাম কি বলে -সেটি আদৌ সেদিন বিবেচনায় আনা হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেক্যুলার মানদন্ডে যা কিছু হালাল,সেগুলি কি ইসলামি মানদন্ডেও জায়েজ? জ্বিনা সেক্যুলার মানদন্ডে কোন অপরাধই নয় -যদি সে ব্যাভিচারে সংশ্লিষ্ট নারী ও পুরুষের সম্মতি থাকে। অথচ ইসলামে রয়েছে বিবাহিত ব্যাভিচারীদের প্রস্তরাঘাতে প্রাণনাশের বিধান। আর অবিবাহিতের জন্য রয়েছে প্রকাশ্য লোকসম্মুখে ৮০টি বেত্রাঘাতের শাস্তি। ঈমানদার হওয়ার দায়বদ্ধতা শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত পালন নয়,মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তি বিধানের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ।সেক্যুলারিস্টদের জীবনে সে আত্মসমর্পণ নাই,বরং প্রতিপদে প্রকাশ পায় বিদ্রোহ। এবং সে বিদ্রোহটি মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তি হুকুমের বিরুদ্ধে। তাদের সে অবাধ্য চেতনাটিই ধরা পড়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে।
একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবেশ বাঙালী মুসলমানদের স্বাধীনতা বা ঈমান বাড়ানোর স্বার্থে ঘটেনি। সেটি হয়েছে ভারতীয় আধিপত্য বাড়াতে। সে আধিপত্যটি শুধু রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গণে নয়,সংস্কৃতি,ধর্ম ও আদর্শের ক্ষেত্রেও। মহান আল্লাহতায়ালা তো চান প্রতিটি মুসলমান বেড়ে উঠুক তাঁর প্রতি অটুট ঈমান নিয়ে। ঈমানে বৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়োজনেই মহান আল্লাহ-রাব্বুল আলামীনের রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। সেটি পবিত্র কোরআনের জ্ঞান বাড়িয়ে। মু’মিনদের উপর অর্থ বুঝে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতকে তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন।সেটি ফরজটি যেমন প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাযের প্রতি রাকাতে কোরআন পাঠে,তেমনি নামাযের বাইরেও। ঈমানের বৃদ্ধিতে কোরআন পাঠের গুরুত্ব যে কত অধীক -সেটি বর্ণীত হয়েছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে “মুসলমান তো একমাত্র তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহর নাম স্মরণ হওয়া মাত্রই ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যখন তাদের কাছে কোরআনের আয়াত পড়ে শোনানো হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল।” -(সুরা আনফাল আয়াত ২)। মহান আল্লাহতায়ালার এ প্রকল্পকে বানচাল করতে শয়তানেরও রয়েছে নিজস্ব স্ট্রাটেজী। রয়েছে নিজস্ব সিলেবাস। শয়তান চায়,ঈমানের বিনাশ। চায়, মানব মন থেকে আল্লাহর স্মরণকে ভূলিয়ে দিতে। এ জন্য চায়, মানুষকে কোরআন থেকে দূরে টানতে। কোরআনের পাঠ নিষিদ্ধ করে বা সংকুচিত করে শয়তান তার নিজস্ব পাঠ্যসূচী গড়ে তোলে নাচ-গান ও খেলাধুলা দিয়ে। কোরপাঠের বদলে তখন গুরুত্ব পায় চৈতন্যদেব, বঙ্কীমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ন্যায় পৌত্তলিকদের রচিত কবিতা, গান ও সাহিত্য। এভাবে শয়তান বাড়ায় মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে লাগাতর অবাধ্যতা। তাই ইসলামের শত্রুগণ কোরআন পাঠের বদলে তারা রবীন্দ্র-সঙ্গিত পাঠকে বাধ্যতামূলক করেছে। সেটি শুধু দেশের স্কুলগুলিতেই নয়,এমনকি ধর্মীয় মাদ্রাসাগুলোতেও। এমন কি জাতীয় সংসদের অধিবেশনসহ সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও।
রবীন্দ্রচেতনার নাশকতা
মানুষ শুধু তার দেহ নিয়ে বাঁচে না। বাঁচে তার চেতনা নিয়েও। সে সুস্থ্য চেতনাটির কারণেই মানব শিশু তার মানবিক পরিচয়টি পায়। সে চেতনাটি সাথে নিয়েই সর্বত্র তার বিচরণ। সেটি যেমন ধর্ম-কর্ম,রাজনীতি,সংস্কৃতি ও পোষাক-পরিচ্ছদে,তেমনি তার গদ্য,পদ্য,কথা ও গানে। মানুষ বেড়ে উঠে এবং তার মূল্যায়ন হয় সে চেতনাটির গুণে। ইসলামের পরিভাষায় সেটিই হলো তার ঈমান ও আক্বীদা। নামায-রোযা ও হজ-যাকাতের আগে মৃত্যর পর প্রথমে হিসাব হবে ঈমান ও আক্বীদার। সেটি কবরে যাওয়ার পরপরই। এখানে অকৃতকার্য হলে রোযহাশরের বিচারেও কি পাশের সম্ভবনা থাকে? শত বছরের ইবাদত দিয়েও সেটি কি পূরণ হওয়ার? মানুষের ধর্ম,কর্ম,সংস্কৃতি ও আচরনে বিপ্লব আসে ঈমান ও আক্বীদের গুণে। চেতনায় রোগ থাকলে কি ব্যক্তির ইবাদতে বা চরিত্রে পরিশুদ্ধি আসে? শিরক তো সে মহাবিপদটাই ঘটায়। শিরক হলো মহান আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার সাথে কাউকে শরীক করা। ইসলামের মহা সত্যটি হলো, মহান আল্লাহতায়ালার নিজ রাজ্যে কেউ তাঁর অংশীদার নয়। অথচ শিরক হলো তাঁর একচ্ছত্র রাজত্বে অংশীদারিত্ব আরোপ। মুশরিকগণ তো সেটিই করে। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে অন্যসব পাপ মাফ হতে পারে,কিন্তু মাফ হয়না শিরকের পাপ।অথচ রবীন্দ্রনাথ তার সাহিত্যে সে শিরকের বীজই ছড়িয়েছেন। শিরকের সে চেতনাটি প্রবল ভাবে ছড়িয়ে আছে তার রচিত কবিতা,নাটক,ছোটগল্প ও গানে। রবীন্দ্রনাথ তাই গুরুতর অপরাধী। তার সে অপরাধটি মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। লক্ষণীয় হলো, যখন থেকে বাংলাদেশের বুকে রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রসার বেড়েছে তখন থেকেই প্রচন্ড অবাধ্যতা শুরু হয়েছে বাংলার মুসলমানদের মাঝে। এবং তখন থেকে শুরু হয়েছে বাঙালী মুসলমানদের ইসলাম থেকে দূরে সরা। ইসলাম থেকে দূরে সরার কাজটি যে কতটা গভীর ভাবে হয়েছে সে প্রমাণ কি আজ কম? সেটির প্রবল প্রকাশ পেয়েছে ২০১৩ ৫ই মে তারিখে ঢাকার শাপলা চত্বরে। মুসলিম সমাজে অতি সন্মানিত ব্যক্তি হলেন আলেম, হাফেজ ও মসজিদের ইমামগণ। কারণে প্রতি সমাজে তারাই নবীজী (সাঃ) প্রতিনিধি। তাদের হত্যা করা, হত্যাকরে লাশ ড্রেনে ফেলা বা ময়লার গাড়িতে ফেলার কাজ কি কোন মুসলমানের হতে পারে? একাজ তো নিরেট শয়তানদের। কারণ নবীজী (সাঃ) প্রতিনিধিদের সাথে শয়তানের যুদ্ধটি শুধু আদিকালেরই নয়, অনাগত কালেরও। ইসলামের শত্রুরূপে গণ্য হবে ও গণরোষে পড়বে -সে ভয়ে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ আমলে বিদেশী কাফেরগণও তাই আলেম-উলামা ও হাফেজে কোরআনদের গায়ে এরূপ নৃশংস ভাবে হাত দেয়নি। এমনকি ফিরাউনও হযরত মূসা (আঃ) ও তার অনুসারি ইহুদীদের সাথে এমন নিষ্ঠুরতা দেখায়নি। হযরত মূসা (আঃ) যখন ফিরাউনের সাথে বিতর্ক করেছেন তখন ফিরাউন দেশের বড় বড় যাদুকর ডেকে তার সাথে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। কিন্তু মুসা (আঃ)কে হত্যা করে তার লাশ ময়লার গাড়িতে তূলেনি। কিন্তু বাংলাদেশে হাসিনার ন্যায় রবীন্দ্রচেতনার ধারকেরা ইতিহাসের সে বর্বরতম কাণ্ডটি ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে করেছে দেশের শত শত আলেম, হাফেজ ও মসজিদের ইমামদের সাথে। শুধু ইসলাম থেকে দূরে সরানোর ক্ষেত্রেই নয়, ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু রূপে গড়ে তুলতে পৌত্তলিক রবীন্দ্রচেতনা যে বাংলার বুকে কতটা সফল হয়েছে এ হলো তার নমুনা। বাংলার মুসলিম পরিবারে কোনকালেই এরূপ বিপুল সংখ্যায় এমন নৃশংস দুর্বৃত্তদের উৎপাদন ঘটেনি। শয়তান এরূপ বাকশালী দুর্বুত্তদের বাম্পার উৎপাদন নিয়ে বিশ্বের কোনে কোনে গিয়ে নিঃসন্দেহে গর্ব করতে পারে। এমন দেশ বিশ্বের দরবারে বার বার দুর্বৃত্তিতে প্রথম হবে তা নিয়েও কি সন্দেহ থাকে? অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নাশকতার পাশাপাশি এ হলো রবীন্দ্রভক্ত ভারতসেবী বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক নাশকতা।
মানব জীবনে ভয়ানক বিপদের কারণ হলো পথভ্রষ্টতা। মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত পথ থেকে পথভ্রষ্টতাই পরকালে জাহান্নামের আগুণপ্রাপ্তিকে অনিবার্য করে। একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার রহমতই এ বিপদ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে। সে রহমত লাভের দোয়াই মানব জীবনের সবচেয়ে বড় দোয়া। প্রতি নামাজের প্রতি রাকাতে মহান আল্লাহতায়ালা তাই বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন সে বিশেষ দোয়া পাঠের বিধান। সে দোয়াটি যেমন ভ্রষ্টতা থেকে বাঁচার, তেমনি সিরাতুল মোস্তাকীম প্রাপ্তির। সে অতি গুরুত্বপূর্ণ দোয়াটি শেখানো হয়েছে সুরা ফাতেহা’তে। এ দোয়াটি শুধু নামাযে নয়, বরং ঈমানদারকে প্রতিদিন ও প্রতিক্ষণ বাঁচতে হয়ে এ দোয়ার আকুতি নিয়ে। অথচ সে দোয়ার দর্শনটি গুরুত্ব পায়নি বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে। বরং ছাত্র-শিক্ষক, নারী-পুরুষদেরকে পথ ভ্রষ্ট করার কাজটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় খরচে। আর ছাত্রদের পথভ্রষ্ট করার সে প্রকল্পে তাই গুরুত্ব পেয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গিত। সে প্রকল্পকে প্রবলতর করার লক্ষ্যে প্রয়োজন পড়েছে একটি বিশাল রবীন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের –হাসিনা যার ভিত্তি প্রস্তর রাখলেন সিরাজগঞ্জে। পৌত্তলিক চেতনায় বিশ্বের কোথাও উন্নত চরিত্র গড়ে উঠেছে বা উচ্চতর সভ্যতা নির্মিত হয় তার প্রমাণ নাই। সেটি তো আদিম জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার পথ। এমন অজ্ঞতায় মানুষ নিষ্ঠুর হয়, অসভ্য হয় ও অশালীন হয়। এমন জাহিলিয়াতের কারণে ভারতে হিন্দুগণ মৃত স্বামীর চিতায় তার স্ত্রীকেও পুড়িয়ে মেরেছে। সে জাহিলিয়াতের কারণেই জাহেল রবীন্দ্রনাথ সে সতিদাহের প্রশংসায় কবিতা লেখেছেন। একই রূপ অজ্ঞতা ও অসভ্যতার কারণে ঢাকার বুকে রবীন্দ্রভক্তরা প্রকাশ্য রাজপথে নারীর শ্লীলতাহানিতে নামে। ১৪০০ শত বছর আগেই নবীজী ও তার সাহাবাগণ আরবের বুকে এমন একটি জাহেলিয়াতের কবর রচনা করেছিলেন। অথচ তেমন একটি পৌত্তলিক চেতনাকে বাংলাদেশের বাঙালীগণ জাতীয় সঙ্গিত রূপে মাথায় তুলেছে। রবীন্দ্রনাথের সংক্রামক পৌত্তলিক চেতনাটি ছড়ানো হচ্ছে যেমন তাঁর গানকে জাতীয় সঙ্গিত করে,তেমনি তাঁর রচিত গান,নাটক ও সাহিত্যকে জনগণের রাজস্বের অর্থে বিপুল ভাবে প্রচার করে। কোটি কোটি কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গিত গেয়ে এবং স্কুল-কলেজে তাঁর সাহিত্য পড়িয়ে যে চারিত্রিক বা নৈতিক বিপ্লব আসে না এবং বাংলাদেশে যে বিগত ৪০ বছরেও আসেনি সেটি কি এখনও প্রমাণিত হয়নি?
মুসলমান হওয়ার প্রকৃত অর্থটি হলো প্রবল এক ঈমানী দায়বদ্ধতা নিয়ে বাঁচা। সে দায়বদ্ধতাটি প্রতি মুহুর্তের। বেঈমান থেকে ঈমানদারের মূল পার্থক্যটি এখানেই। বেঈমান ব্যক্তি মনের খুশিতে যা ইচ্ছা যেমন খেতে বা পান করতে পারে,তেমনি গাইতে, বলতে বা লিখতেও পারে। তার জীবনে কোন নিয়ন্ত্রন নাই।মহান আল্লাহর কাছে তার কোন দায়বদ্ধতার চেতনাও নাই। অথচ মু’মিনের জীবনে নিয়ন্ত্রন সর্বক্ষেত্রে। ঈমানদারকে প্রতিপদে অনুসরণ করতে হয় সিরাতুল মুস্তাকীমকে। ঈমানের প্রথম আলামতটি শুরু হয় জিহ্ববার উপর নিয়ন্ত্রন থেকে। সে নিয়ন্ত্রনটি শুধু কালেমায়ে শাহাদত পাঠে সীমিত নয়। বরং সেটি তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি কথার উপর। তাই জাহান্নামের বাসিন্দা হওয়ার জন্য মন্দিরে গিয়ে মুর্তিপূজার প্রয়োজন পড়ে না। জ্বিনা,উলঙ্গতা,মদ্যপান বা সূদ-ঘুষে লিপ্ত হওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না।বরং জিহ্ববা দিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কিছু বলা বা পৌত্তলিক চেতনাপূর্ণ কিছু উচ্চারণ করাই সে জন্য যথেষ্ট। তাই মু’মিন ব্যক্তিকে শুধু পানাহার,পোষাকপরিচ্ছদে বা ইবাদতে সতর্ক হলে চলে না, বরং প্রতিটি কথা, প্রতিটি গান, প্রতিটি কবিতা ও প্রতিটি লেখনিতেও সদা সতর্ক থাকতে হয়। কাফের ব্যক্তি নোবেল প্রাইজ পেলেও তার জীবনে সে ঈমানী নিয়ন্ত্রন থাকে না। কারণ বড় কবি হওয়া বা নোবেল প্রাইজ পাওয়ার জন্য সেটি কোন শর্ত নয়। ইমরুল কায়েসে মত জাহেলিয়াত যুগের একজন কাফেরও আরবের অতি বিখ্যাত কবি ছিল। কিন্তু সে ইমরুল কায়েস মুসলমানদের কাছে গুরু রূপে স্বীকৃতি পায়নি। তাই কাফের বক্তি যত প্রতিভাবানই হোক তাঁর গানকে মুসলিম দেশের জাতীয় সঙ্গিত বানানো যায় না। কারণ তাতে সংক্রামিত হয় তার কুফরি চেতনা। অথচ বাংলাদেশে তো সে বিপদটি প্রকট ভাবে ঘটেছে।
জাতীয় সঙ্গিতের অর্থ শুধু ভাব,ভাষা,ছন্দ এবং আবেগের প্রকাশ নয়। বরং এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় সংখ্যাগরিষ্ট দেশবাসীর ঈমান-আক্বিদা,আশা-আকাঙ্খা,দর্শন,ভিশন ও মিশন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন “আমার সোনার বাংলা” গানটি লিখেছিলেন তখন বাংলাদেশ বলে কোন স্বাধীন দেশ ছিল না,বরং বাংলা ছিল ভারতের একটি প্রদেশ। সে প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান হলেও তাদের সংখ্যা আজকের ন্যায় শতকরা ৯২ ভাগ ছিল না।তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ নিজেও সে গানটিতে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগ,দর্শন,চেতনা বা স্বপ্নের প্রকাশ ঘটাতে লেখেনি। সেটি যেমন তার লক্ষ্য ছিল না, ফলে সে লক্ষ্যে তাঁর প্রস্তুতিও ছিল না। পৌত্তলিকগণ সব সময়ই নতুন উপাস্য চায়। যাদের কাছে গরুবাছুড়, শাপশকুনও উপাস্য, তাদের কাছে নবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ তো বিশাল। তাই রবীন্দ্রপূজারি পৌত্তলিকগণ রবীন্দ্রনাথকে পূজনীয় করেছে নিজেদের সে পৌত্তলিক চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে। মনের সে পৌত্তলিক ক্ষুধা নিবারণেই “আমার সোনার বাংলা” গানকে বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গিতের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ভারতে সে মর্যাদাটি পেয়েছে বঙ্কিমচন্দ্রের “বন্দেমাতরম” গানটি। সে গান গাইতে ভারতের মুসলমানদের বাধ্য করা হলেও এরূপ পৌত্তলিক গান কেন বাংলাদেশের মুসলমানগণ গাইবে?
পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথ ও তার “সোনার বাংলা”
পারিবারিক সূত্রে রবীন্দ্রনাথ ব্রাহ্ম হলেও কার্যতঃ ছিলেন পৌত্তলিক মুশরিক। এ জগতটাকে একজন মুসলমান যেভাবে দেখে, কোন পৌত্তলিকই সেভাবে দেখে না। উভয়ের ধর্মীয় বিশ্বাস যেমন ভিন্ন, তেমনি চেতনার জগতটাও ভিন্ন। আর কবিতা ও গানে তো সে বিশ্বাসেরই প্রকাশ ঘটে।একজন মুসলমানের কাছে এ পৃথিবীর ভূমি,আলোবাতাস,মাঠঘাট,গাছপালা,ফুল-ফল,নদী-সমুদ্র এবং সেগুলির অপরূপ রূপ –সবকিছুই মহান আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন। এসব নিদর্শন দেখে সে মহান আল্লাহর কুদরত যে কত বিশাল সে ছবকটি পায়। ফলে স্রষ্টার এ অপরূপ সৃষ্টিকূল দেখে মু’মিন ব্যক্তি সেগুলিকে ভগবান বা মা বলে বন্দনা করে না,বরং হামদ ও নাত গায় সেগুলির সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার।অথচ রবীন্দ্রনাথের চোখে বাংলার অপরূপ রূপ ধরা পড়লেও মহান আল্লাহতায়ালার সর্বময় অস্তিত্ব ধরা পড়েনি। এখানেই রবীন্দ্রনাথের অজ্ঞতা ও দৃষ্টির সীমাবদ্ধতা।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর “আমার সোনার বাংলা” গানটিতে লিখেছেন:
আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ,
তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে
ঘ্রানে পাগল করে–
মরি হায়, হায় রে
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,
আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।।
কি শোভা কি ছায়া গো,
কি স্নেহ কি মায়া গো–
কি আঁচল বিছায়েছ
বটের মূলে,
নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী
আমার কানে লাগে
সুধার মতো–
মরি হায়, হায় রে
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে
আমি নয়ন জলে ভাসি।।
রবীন্দ্রনাথের এ গানে প্রচুর ভাব আছে, ভাষা আছে, ছন্দও আছে। কিন্তু এর বাইরেও এমন কিছু আছে যা একজন মুসলমানের ঈমানের সাথে প্রচন্ড সাংঘর্ষিক। এ গানে তিনি বন্দনা গেয়েছেন বাংলার ভূমির,এবং সে ভূমির আলো-বাতাস,নদীর কূল,ধানের ক্ষেত,আমবাগান ও বটমূলের। দেশকে তিনি মা বলেছেন; বিস্তৃত মাঠঘাট,নদীর পাড় ও বটমূলকে সে মা দেবীর আঁচল রূপে দেখেছেন।গানটিতে ধ্বনিত হয়েছে সে মা দেবীর প্রতি নয়ন ভাসানো বন্দনা। কিন্তু যে মহান আল্লাহতায়ালা সেগুলির স্রষ্টা,সমগ্র গানে একটি বারের জন্যও তাঁর বন্দনা দূরে থাক তাঁর নামের উল্লেখ পর্যন্ত নাই।একজন পৌত্তলিকের জন্য এটিই স্বভাবজাত। পৌত্তলিকের এখানেই মূল সমস্যা। এখানে পৌত্তলিকের ভয়ানক অপরাধটি হলো নানা দেবদেবী ও নানা সৃষ্টির নানা রূপ বন্দনার মাঝে মহান আল্লাহতায়ালাকে ভূলে থাকার। মানব জীবনের এটিই সবচেয়ে ঘৃণ্য কর্ম। মহাসত্যময় মহান আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকারের এটিই সবচেয়ে জঘণ্যতম শয়তানি কৌশল। এটিই শিরক। এবং এজন্যই সে মুশরিক। মহান আল্লাহর বান্দার বহু বড় বড় গোনাহ মাফ করে দিবেন কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনোই মাফ করবেন না। নবীজী (সাঃ) সে হুশিয়ারিটি বহুবার শুনিয়েছেন।
পৌত্তলিক ব্যক্তিটি তার মনে গহীন অন্ধকারের কারণে এ পৃথিবীপৃষ্ঠে অসংখ্য সৃষ্টি দেখতে পেলেও সে সৃষ্টিকূলের মহান স্রষ্টাকে খুঁজে পায় না। রবীন্দ্রনাথও সে সীমাবদ্ধতার উর্দ্ধে উঠতে পারেননি। তাছাড়া গদ্য,পদ্য কবিতা ও গানের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির মুখ বা জিহবা কথা বলে না,কথা বলে তার চেতনা বা বিশ্বাস। ফলে সে কবিতা ও গানে ব্যক্তির আক্বিদা বা ধর্মীয় বিশ্বাস ধরা পড়ে। তাই “আমার সোনার বাংলা” গানে যে চেতনাটির প্রকাশ ঘটেছে সেটি পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের। কোন মুসলমানের নয়। গানে ইসলামী চেতনার প্রকাশের সামর্থ থাকলে তো রবীন্দ্রনাথ মুসলমান হয়ে যেতেন। পৌত্তলিক চেতনা নিয়েই একজন পৌত্তলিক কবি কবিতা ও গান লিখবেন বা সাহিত্যচর্চা করবেন সেটিই তো স্বাভাবিক। এমন একটি চেতনার কারণেই পৌত্তলিক ব্যক্তি শাপ-শকুন,গরু, বানর-হনুমান,নদ-নদী,বৃক্ষ,পাহাড়-পর্বতকে উপাস্য রূপে মেনে নেয় এবং তার বন্দনাও গায়। “আমার সোনার বাংলা” গানের ছত্রে ছত্রে তেমন একটি পৌত্তলিক চেতনারই প্রবল প্রকাশ ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানে তাঁর নিজ চেতনার সাথে আদৌ গাদ্দারি করেননি। কিন্তু ইসলামি চেতনার সাথে এবং সে সাথে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে একজন মুসলমানের গাদ্দারি তথা বিশ্বাসঘাতকতা তখনই শুরু হয় যখন পৌত্তলিক চেতনার এ গানকে মনের মাধুরি মিশিয়ে গাওয়া শুরু করে। বাংলাদেশে রবীন্দ্রভক্তদের মূল প্রকল্প হলো বিপুল সংখ্যায় এরূপ গাদ্দার উৎপাদন।এবং সে লক্ষ্য সাধনে তারা যে বিপুল সফলতা পেয়েছে তা নিয়েও কি সন্দেহ আছে? মুসলিম নামধারি এরূপ গাদ্দারদের কারণে আল্লাহর শরিয়তি বিধান আজও পরাজিত। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে এটি কি কম অপমানের?
“সোনার বাংলা”র প্রেক্ষাপট
“আমার সোনার বাংলা” গানটি রচনার একটি ঐতিহাসিক পেক্ষাপট আছে। গানটি রচিত হয়েছিল ১৯০৫ সালের পর। বাংলা দ্বিখণ্ডিত হয় ১৯০৫ সালে। পশ্চিম বঙ্গের তুলনায় অর্থনীতি ও শিক্ষাদীক্ষায় অতি পশ্চাদপদ ছিল পূর্ব বঙ্গ। পূর্ববঙ্গের সম্পদে দ্রুত শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল কলকাতার। সে শহরের শতকরা ৮০ ভাগ বাসিন্দাই ছিল হিন্দু। শুধু প্রশাসনই নয়,বাংলার শিক্ষা ও শিল্প গড়ে উঠছিল স্রেফ কলকাতাকে কেন্দ্র করে। মুসলমানদের দাবী ছিল বাংলাকে বিভক্ত করা হোক এবং পূর্ববঙ্গের রাজধানি করা হোক ঢাকাকে। সে দাবীর ভিত্তিতে ভারতের তৎকালীন ভাইস রয় লর্ড কার্জন পূর্ব বঙ্গ ও আসামকে নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ গঠন করেন। এ নতুন প্রদেশের রাজধানী রূপে গৃহীত হয় ঢাকা নগরী। শহরটি রাতারাতি জেলা শহর থেকে রাজধানী শহরে পরিণত হয়। তখন ঢাকায় কার্জন হলসহ বেশ কিছু নতুন প্রশাসনিক ইমারত এবং হাই কোর্ট ভবন নির্মিত হয়। নির্মিত হয় কিছু প্রশস্ত রাজপথ। নতুন এ প্রদেশটি ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলার এবং সে সাথে আসামের মুসলমানদের মাঝে সৃষ্টি হয় তখন নতুন রাজনৈতিক প্রত্যয়। সে প্রত্যয় নিয়ে ১৯০৬ সালে ঢাকার বুকে গঠিত হয় মুসলিম লীগ যা শুধু বাংলার মুসলমানদের জন্যই নয়, সমগ্র ভারতীয় মুসলমানদের মাঝে সৃষ্টি করে নতুন আত্মবিশ্বাস ও রাজনৈতিক চেতনা। মুসলমানদের এ রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং কলকাতা ছেড়ে ঢাকার এ মর্যাদা-বৃদ্ধি কলকাতার বাঙালী বাবুদের ভাল লাগেনি। কবি রবীন্দ্রনাথেরও ভাল লাগেনি। অথচ বাঙালী মুসলমানগণ সে বিভক্তিকে নিজেদের জন্য কল্যাণকর মনে করে। তারা এটিকে কলকাতাকেন্দ্রীক হিন্দু আধিপত্য থেকে মুক্তি রূপে দেখে। বাংলা বিভক্তির বিরুদ্ধে বর্ণ হিন্দুদের পক্ষ থেকে শুরু হয় সন্ত্রাসী আন্দোলন। সে সন্ত্রাস ছিল উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিপুষ্ট। সন্ত্রাসীরা মন্দিরে গিয়ে শপথ নিত। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সে সন্ত্রাসী আন্দোলনের ঘোরতর সমর্থক। সে সন্ত্রাসের পক্ষে প্রয়োজন ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্রের। সে অস্ত্র জোগাতেই রবীন্দ্রনাথ যুদ্ধে নামেন তার কবিতা, গান ও উপন্যাস নিয়ে। এ প্রেক্ষাপটেই রচিত হয় “আমার সোনার বাংলা” গান।
“আমার সোনার বাংলা” গানে যা প্রকাশ পেয়েছে সেটি রবীন্দ্রনাথের একান্তই সাম্প্রদায়িক হিন্দু চেতনার,বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় চেতনা সে গানে স্থান পায়নি। রবীন্দ্রনাথ মুসলমান ছিলেন না। ফলে বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের বিশ্বাস,দর্শন,স্বপ্ন,ভিশন ও মিশনের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা যেমন ছিল না, তেমনি সেগুলির প্রকাশ ঘটানোর সামর্থও তার ছিল না। পূর্ব বাংলা পশ্চাদপদ মুসলমানদের প্রতি অগ্রসর বাঙালী হিন্দুদের কোন দরদ না থাকলেও বাংলার প্রতি তখন তাদের দরদ উপচিয়ে পড়ে। বাংলার মাঠঘাট,আলোবাতাস,জলবায়ু,বৃক্ষরাজী ও ফলমূলের প্রতি আবেগ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লেখেন এ গান। এ গানের একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল। সেটি স্বাধীনতা ছিল না, বরং ছিল বাংলার বিভক্তির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতার বদলে বাঙালী হিন্দুদের রাজনীতির মূল বিষয়টি হয়ে দাঁড়ায় বঙ্গভঙ্গ রদের দাবী।ব্রিটিশ শাসকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন রবীন্দ্রনাথ।াভ ১৯১১ সালে ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জ ভারত ভ্রমনে আসেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ভারত উপলক্ষে “জনগণ মনোঅধিনায়ক ভারত ভাগ্যবিধাতা” নামে কবিতা লেখেন। সেটিই আজ ভারতের জাতীয় সঙ্গিত। রবীন্দ্রনাথ ও বাঙালী হিন্দুদের সে দাবী রাজা পঞ্চম জর্জ মেনে নেন এবং আবার বাংলা একীভূত হয়। প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশা নেমে আসে পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মাঝে। বিক্ষুদ্ধ এ মুসলমানদের শান্ত করতে ভারতের ব্রিটিশ সরকার তখন ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়।কিন্তু সেটিও কলকাতার বাঙালী বাবুদের ভাল লাগেনি। তার মধ্যেও তারা কলকাতার শ্রীহানীর কারণ খুঁজে পায়। ফলে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধেও বাঙালী বাবুগণ তখন বিক্ষোভে রাজপথে নামেন। মিছিলে নেমেছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথও।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা রোধে কলকাতার গড়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় জনসভা। সে জনসভাতেও সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ। এই হলো রবীন্দ্র মানস। সে সাথে বাঙালী হিন্দুর মানস। মুসলিম বিদ্বেষ নিয়ে রচিত রবীন্দ্রনাথের সে গানটিই এখন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত।
আজকের শতকরা ৯১ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথের আমলের অবিভক্ত বাংলা যেমন নয়,তেমনি দেশটি ভারতভূক্তও নয়। রবীন্দ্রনাথের অবিভক্ত বাংলায় মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ৫৫ ভাগের বেশী ছিল না। সে আমলের বাংলা ঢাকাকেন্দ্রীকও ছিল না। এখন এটি এক ভিন্ন চরিত্রের বাংলাদেশ -যে দেশে রবীন্দ্রনাথ একদিনের জন্যও বাস করেননি। কোনদিনও তিনি এদেশের নাগরিক ছিলেন না। এদেশের স্বাধীনতার কথা তিনি যেমন শোনেননি,তেমনি এ দেশের শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানদের নিয়ে তিনি কোন স্বপ্নও দেখেননি। ফলে বাংলাদেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়া,স্বাধীনতা বা স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করা কি তাঁর পক্ষে সম্ভব? সবচেয়ে বড় কথা,এ সঙ্গিতটি সে উদ্দেশ্যে লেখাও হয়নি। জাতীয় সঙ্গিত নির্বাচনের বিষয়টি দোকান থেকে ‘রেডিমেড’ সার্ট কেনার ন্যায় নয়। এটিকে বরং বিশেষ রুচী,বিশেষ আকাঙ্খা,বিশেষ প্রয়োজন মেটাতে অতি বিশেষ গুণের ‘tailor made’ হতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি। বরং এখানে গুরুত্ব পেয়েছে রবীন্দ্রভক্তি ও রবীন্দ্রপূজার মানসিকতা।
বাঙালী মুসলিমের আত্মসমর্পণ
আত্মসমর্পণের পর আর এ অধিকার থাকে না,কি খাবে বা কি পান করবে সে সিন্ধান্ত নেয়ার। প্রভু যা খাওয়ায় বা পান করায় সেটিই মেনে নিতে হয়। এমন কি বিষ পান করানো হলেও সেটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস থাকে না। তখন অধিকার থাকে না জাতীয় সঙ্গিত রূপে কি গাওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার। শেখ মুজিব ও তার অনুসারিদের মূল কাজটি হয় সে আত্মসমর্পণে নেতৃত্ব দেয়া। তাদের কারণেই বাঙালী মুসলিম জীবনে নিদারুন আত্মসমর্পণ নেমে আসে ১৯৭১ য়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে অধিকৃত হওয়ার পর। আত্মসমর্পিত ব্যক্তি শুধু স্বাধীনতাই হারায় না, নিজ সম্পদের উপর দখলদারিও হারায়। নিজের কষ্টার্জিত সম্পদও তখন প্রভুর সম্পদে পরিণত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার অস্ত্রও তাই ভারতীয় সম্পদে পরিণত হয়। ভারতের সম্পদের পরিণত হয় বাংলাদেশী কলকারখানার কলকবজাও। ভারতীয় সম্পদে পরিণত হয় বাংলাদেশের নদীর পানি, রাস্তাঘাট ও নদ-নদী।তাই ভারতের আগ্রাসী হাত পড়েছে পদ্ম-তিস্তা-সুরমা-কুশিয়ারের পানির উপর। বাংলাদেশের বুক চিরে এপার-ওপার যাওয়ার করিডোরও ছিনিয়ে এনেছে। পাকিস্তান আমলের ২৩ বছরে ভারত কি সেরূপ অধিকার একদিনের জন্যও পেয়েছে? ১৯৭২য়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে ভারত তার সেনাবাহিনীকে তুলে নিলেও হাজার হাজার সশস্ত্র চরও রাজনৈতিক এজেন্টদের তুলে নেয়নি। বরং দেশ এখন সে এজেন্টদেরই জবরদখলে। গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে কবরে পাঠানো হয়েছে মূলত ভারতীয় এজেন্টদের এ জবরদখলকে স্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য। ইংরেজগণ তাদের ১৯০ বছরের শাসনের গণদাবীর পরওয়া করেনি। তারা শাসন করেছে খলিফাদের মাধ্যমে;এবং সেটি হাজার হাজার মাইল দূর থেকে। ভারতীয়রাও দিল্লি বসে সেটিই চায়। সে জন্য তারাও আত্মসমর্পিত খলিফা। সে খলিফা প্রতিপালনে চায়,পৌত্তলিক চেতনার চাষাবাদ। সেটি বাড়াতেই প্রয়োজন পড়েছে রবীন্দ্র সঙ্গিত ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাছাড়া শত্রু শক্তির কাছে আত্মসমর্পণে কি স্বাধীনতা মেলে? তাই স্বাধীনতা যেমন মুজিব আমলে মেলেনি, হাসিনা আমলেও নয়। একাত্তরের মূল অর্জনটি তো এই আত্মসমর্পণ। ভারতসেবী বাকশালীদের কাজ হয়েছে সে আত্মসমর্পণকে দীর্ঘায়ু দেয়া। কিন্তু সমস্যা হলো, রবীন্দ্রসঙ্গিতের বিষ পানে যাদের মগজ নেশাগ্রস্ত, তারা সে সত্যটি বোঝে?
ইসলামের শত্রুদের কাছে বাঙালী মুসলমানের আত্মসমর্পণের বড় প্রমাণ শুধু এ নয়, ইসলাম বিরোধী শাসনতন্ত্র, সূদী ব্যাংক,পতিতাপল্লি, জুয়া, মদের দোকান,অশ্লিল ছায়াছবি এবং আদালতে কুফরি আইনকে তারা বিনাযুদ্ধে মেনে নিয়েছে। আরো জোরালো প্রমাণ হলো, জাতীয় সঙ্গিত রূপে গেয়ে চলেছে পৌত্তলিক চেতনাপুষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গিতকে। এরূপ আত্মসমর্পণে যা বাড়ে তা হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও বেঈমানি।সে বিদ্রোহ ও বেঈমানি তখন ছড়িয়ে পড়ে জীবনের প্রতিক্ষেত্রে।ইসলামের সাথে গাদ্দারিটা তখন শুধু রাজনীতিতে সীমিত থাকে না। সেটি জাহির হয় যেমন আইন-আদালতে কুফরি আইন অনুসরণে, তেমনি পতিতাপল্লি ও সূদী ব্যংক বহাল রাখার মধ্যে।সে বিদ্রোহেরই প্রবল প্রকাশ ঘটে মনের মাধুারি মিশিয়ে পৌত্তলিকতা সমৃদ্ধ গান গাওয়াতে। মুসলিম সংহতির বুকে কুড়াল মারা এবং মুসলিম রাষ্ট্র বিনাশের ন্যায় হারাম কাজটিও তখন উৎসবযোগ্য গণ্য হয়।শেখ মুজিব ও তাঁর অনুসারিদের জীবনে মূল মিশনটি মূলত ভারতের পক্ষে সে যুদ্ধটি লাগাতর চালিয়ে যাওয়া।সেটি স্রেফ ১৯৭১ থেকে নয়, ১৯৪৭ সাল থেকেই্। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায় আত্মসমর্পিতদের গাদ্দারি কি কম? ইসলামের নামে দলবদ্ধ হওয়া এবং ইসলামের শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠার রাজনীতিকে মুজিব সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ করেন। বেছে বেছে বিলুপ্ত করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম ও নাম থেকে কোরআনের আয়াত এবং ইসলাম ও মুসলিম শব্দগুলি।ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে বিলুপ্ত হয় পবিত্র কোরআনের আয়াত। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল হয়ে যায় সলিমুল্লাহ হল। জাহিঙ্গরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যায় জাহ্ঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং নজরুল ইসলাম কলেজ হয় নজরুল কলেজ।
সাইনবোর্ড পৌত্তলিকতার
নবীজীর আমলেও আরব দেশে বিস্তৃত ভূমি,চন্দ্র-সূর্য্য ও আকাশ-বাতাস ছিল। সে ভূমিতেও মাঠ-ঘাট,ফুল-ফল ও বৃক্ষরাজি ছিল। কিন্তু মহান নবীজী (সাঃ) কি সেগুলিকে কখনো মা বলে সম্বোধন করেছেন? বরং আজীবন হামদ-নাত ও প্রশংসা গীত গেয়েছেন সে সৃষ্টিকূলের মহান স্রষ্টার। আল্লাহর অনুগত বান্দাহ রূপে মুসলমানের বড় দায়িত্ব হলো আল্লাহর নামকে সর্বত্র প্রবল ভাবে প্রকাশ করা বা বড় করা। কোন দেশ, ভূমি, ভাষা বা বর্ণকে যেমন নয়,তেমনি কোন ব্যক্তি বা জীবজন্তুকেও নয়। পৌত্তলিকদের থেকে ঈমানদারের এখানেই বড় পার্থক্য। এ জীবনে হেদায়াতপ্রাপ্তির চেয়ে মহান আল্লাহর বড় নেয়ামত নেই। তেমনি পথভ্রষ্ট হওয়ার চেয়ে বড় ব্যর্থতাও নেই। হেদায়াত প্রাপ্তির শুকরিয়া জানাতে ঈমানদার ব্যক্তি তাই আমৃত্যু আল্লাহর মহিমা প্রকাশ করে। এ জন্য সর্বত্র আল্লাহু আকবর বলে। এবং সেটির নির্দেশ রয়েছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে,“তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন তোমরা আল্লাহর নামে তাকবির বল (অর্থাৎ আল্লাহ যে মহিমাময় সর্বশ্রেষ্ঠ সেটি মুখ দিয়ে প্রকাশ কর), যাতে তোমরা এভাবে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।” –(সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)। তাই “আল্লাহু আকবর” বলে মুসলমান শুধু জায়নামাজে তাকবির দেয় না, রাজপথের মিছিলে বা জনসভাতেও দেয়। রাজনীতি,অর্থনীতি সংস্কৃতি,শিক্ষাদীক্ষা,কবিতা ও গানেও সে “আল্লাহু আকবর” বলে। এটি শুধু তাঁর রাজনৈতিক শ্লোগান নয়, বরং ইবাদত। মুসলমান তাই কোথাও সমবেত হলে “জয় বাংলা” বা “জয় হিন্দ” বলে না বরং সর্বশক্তিতে গগন কাঁপিয়ে “নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার” বলে। একজন মুসলমান তো এভাবেই একজন কাফের বা মুনাফিক থেকে ভিন্ন পরিচয় নিয়ে ধর্মকর্ম, রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চা করে। পৌত্তলিকগণ সেটি পারে না। বাংলাদেশের সেক্যুলার পক্ষের বড় সাফল্য হলো ইসলামের সে বিশুদ্ধ চেতনাকে বহুলাংশে তারা বিলুপ্ত করতে সমর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত যে জয়ধ্বণিটি ঘোষিত হয় সেটি মহান আল্লাহর নয়,বরং শয়তানি বিধানের।
ভগবান দাস আর আব্দুল্লাহ –এ দুটি শুধু ভিন্ন নাম নয়, বরং দুটি ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতীক। ব্যক্তির নাম থেকে এভাবেই তার ধর্ম, চেতনা ও বিশ্বাসের পরিচয় জানা যায়। সে পরিচয়টুকু জানার জন্য তাই কোন বাড়তি প্রশ্নের প্রয়োজন পড়ে না। ব্যক্তির নাম তাই আজীবন তার নিজ ধর্ম বা বিশ্বাসের পক্ষে সাইনবোর্ড রূপে কাজ করে। তেমনি জাতির জীবনে সাইন বোর্ড হলো জাতীয় সঙ্গিত। জাতীয় সঙ্গিত থেকেই পরিচয় মেলে জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও চেতনার। তাই নাস্তিকের ও আস্তিকের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন যেমন এক হয় না, তেমনি এক হয় না জাতীয় সঙ্গিতও। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত থেকে দেশবাসীর যে পরিচয়টি মেলে সেটি কি কোন তৌহিদী মুসলিমের? সে পরিচয়টি রবীন্দ্রনাথের ন্যায় নিষ্ঠাবান পৌত্তলিকের।তাছাড়া এ গানটি জাতীয় সঙ্গিত রূপে নির্বাচনের একটি ইতিহাস আছে। সেটি গৃহীত হয়েছিল পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর। যারা এ সঙ্গিতটিকে গ্রহণ করেছিল তারা ছিল বাঙালী জাতিয়তাবাদী সেক্যুলার। তাদের চেতনায় ও রাজনীতিতে ইসলামের কোন প্রভাব ছিল না। বরং তারা ইতিহাসে পরিচিতি পেয়েছে ভারতপ্রীতি, রবীন্দ্রপ্রীতি,এবং ইসলামি চেতনা নির্মূলে আপোষহীনতার কারণে। লগি বৈঠা দিয়ে ইসলামপন্থিদের হত্যা,তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এনে ফাঁসিতে ঝুলানো এবং হত্যার পর তাদের লাশ ময়লার গাড়িতে তুলে গায়েব করাই তাদের রাজনীতি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিও শ্রদ্ধা দেখানো তাদের রীতি নয়। সেরূপ শ্রদ্ধাবোধ ছিল না মুজিবেরও। মুজিব যে শুধু রাজনীতিতে স্বৈরাচারি ছিলেন তা নয়,প্রচণ্ড স্বৈরাচারি ছিলেন বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতির অঙ্গণেও। দেশের উপর তিনি শুধু একদলীয় বাকশালই চাপিয়ে দেননি, চাপিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাসকে উপেক্ষা করে পৌত্তলিক সংস্কৃতির আগ্রাসন। জাতীয় সঙ্গিত রূপে রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” গানটিকে চাপানো হয়েছে তেমন এক স্বৈরাচারি মানসিকতা থেকে। এক্ষেত্রে ভারতীয় বর্ণ হিন্দুদের থেকে তার চেতনাটি আদৌ ভিন্নতর ছিল না।
আকুতি নিষ্ঠবান পৌত্তলিকের
প্রতিটি দেশের শুধু রাজনৈতিক,ভৌগলিক ও ভাষাগত পরিচয়ই থাকে না, থাকে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ও। জনগণের চেতনায় যেমন সুনির্দ্দিষ্ট দর্শন থাকে, তেমনি সে দর্শনের আলোকে রাজনৈতিক স্বপ্নও থাকে। সে স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠায় জনগণের কাঁধে গুরুতর দায়বদ্ধতাও থাকে। সে বিচারে প্রতিটি দেশই অনন্য। সে অনন্য বৈশিষ্ঠের কারণেই আজকের বাংলাদেশ পশ্চিম বাংলা থেকে ভিন্ন। সে ভিন্নতার কারণেই পশ্চিম বাংলার ন্যায় বাংলাদেশ ভারতের অংশ নয়। পশ্চিম বাংলার সাথে বাংলাদেশের পার্থক্যটি ভূমি,জলবায়ু বা আলোবাতাসের নয়,সেটি দর্শন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভিশন ও মিশনের। পার্থক্যটি ভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার। সে ভিন্ন স্বপ্নের কারণেই ১৯৪৭য়ে পশ্চিম বাংলার হিন্দুগণ যখন ভারতে যোগ দেয় তখন পূর্ব বাংলার মুসলমানগণ অতি সচেতন ভাবেই বাঙালী হিন্দুদের সাথে প্রতিবেশী ভারতে যায়নি। গিয়েছে পাকিস্তানে। সাতচল্লিশের সে ভাবনার সাথে পূর্ব বাংলার ৯৬% ভাগ মুসলমানের সমর্থণ ছিল। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক শেখ মুজিবও সেদিন সে ভাবনার সাথে একাত্ম হয়েছিলেন। প্রতিবেশী বাঙালী হিন্দুদের সাথে না গিয়ে তারা তখন ১২০০ মাইল দূরের অবাঙালী পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে গেছে। আজও সেটি ঐতিহাসিক সত্য।
প্রতিবেশী হিন্দুদের থেকে বাঙালী মুসলমানদের যে ভিন্নতর পরিচয় ও স্বপ্ন ছিল সেটি ইতিহাসের কোন গোপন বিষয় নয়। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গিত রচিত হতে হবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সে বিশিষ্ঠ পরিচয় ও স্বপ্নগুলো তুলে ধরতে এবং প্রবলতর করতে। এমন সঙ্গিতের প্রতিটি শব্দ ও প্রতিটি উচ্চারণ থেকে প্রতিটি নাগরিক তখন পাবে নতুন প্রত্যয় ও নতুন প্রেরণা। পাবে স্বপ্নের সে পথটিতে অবিরাম টিকে থাকার মানসিক বল। কিন্তু জাতীয় সঙ্গিতের নির্বাচনে বাংলাদেশের মুসলমানদের সে ভিন্নতর পরিচয়কে মেনে নেয়া হয়নি। এ সঙ্গিতে যে সুর, যে দর্শন,যে বর্ণনা এবং যে আকুতি ধ্বণিত হয়েছে সেটি কোন মুসলমানের নয়, সেটি নিতান্তই একজন নিষ্ঠবান পৌত্তলিকের। এমন সঙ্গিত থেকে কোন মুসলিমই অনুপ্রেরণা পেতে পারে না, বরং পায় পথভ্রষ্টতা। পায় শিরকের ছবক। পায় জাহান্নামের পথ। যে ভ্রষ্টতার কারণে পৌত্তলিক মানুষটি বিষধর সাপকেও দেবতা রূপে গ্রহণ করার অনুপ্রেরণা পায়, এ সঙ্গিত পাঠকারি বাংলাদেশীও তেমনি উৎসাহ পায় ভারতের ন্যায় একটি শত্রুদেশকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করার।হিন্দুস্থান চায়,বাংলাদেশের ১৯৪৭য়ের পরিচয়টি বিলুপ্ত হোক। চায় নির্মিত হোক ইসলামচ্যুত এক নতুন প্রজন্ম নিয়ে এক নতুন বাংলাদেশ। সে নতুন বাংলাদেশের ভারতভূক্তিটা হলো তাদের আসল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের রাজনীতি বুঝতে হলে ভারতের এ অভিপ্রায়কে অবশ্যই বুঝতে হবে। ইসলামি চেতনা প্রবলতর হয় এমন কোন গানকে ভারত ও তার চাকর-বাকরেরা এজন্যই জাতীয় সঙ্গিত করতে দেয়নি।
অধিকৃতি ভারতের
ভারতের আগ্রাসী নীতিটি শুধু অধিকৃত কাশ্মির, হায়দারাবাদ,গোয়া,মানভাদড় বা সিকিমের ক্ষেত্রে নয়,বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। কাশ্মিরে ভারত যে ৬ লাখ সৈন্যের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেছে সেটি সেখানে গণতন্ত্র বা অর্থনীতি বাড়াতে নয়। বরং ভারতের অধিকৃতি নিশ্চিত করতে। ভারত একাত্তরে বাংলাদেশে যে বিশাল সামরিক বাহিনী নিয়োজিত করেছিল এবং আজ ও যেরূপ লক্ষ লক্ষ এজেন্ট মোতায়েন করে রেখেছে সেটিও কি বাংলাদেশের রাজনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ময়দানে বাংলাদেশে স্বাধীনতা বা গণতন্ত্র বাড়াতে? কাশ্মিরে ভারতের বিপদটি হলো,কাশ্মিরীদের মধ্য থেকে এতটা সেবাদাস এজেন্ট পায়নি যতটা পেয়েছে বাংলাদেশে। ফলে এক কোটি মানুষের কাশ্মির দখলে রাখতে হাজার হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে পাঞ্জাব,রাজস্থান,বিহার,গুজরাত,মহারাষ্ট্র,উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের অন্যান্য প্রদেশ থেকে ৬ লাখ সৈন্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। সে ৬ লাখ সৈন্যের পানাহার, চলাচল ও লজিস্টিকের পিছনে প্রতি বছর বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে বহু হাজার কোটি রুপি। অথচ সাড়ে সাত কোটি মানুষের পূর্ব পাকিস্তানে এমনকি একাত্তরের যুদ্ধকালেও ৬০ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য ছিল না। কাশ্মিরে এক লাখ ভারতীয় সৈন্য পালতে যত অর্থ ব্যয় হয় তা দিয়ে বাংলাদেশে অন্ততঃ দশ লাখ দালাল পালা সম্ভব। এজন্যই বাংলাদেশের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি,মিডিয়া,প্রশাসন,সেনাবাহিনী,পুলিশ বাহিনী,শিক্ষাঙ্গণ,সংস্কৃতি ও আদালত প্রাঙ্গণে ভারতীয় দাসদের এত ছড়াছড়ি। বাংলাদেশের মাটি এক্ষেত্রে অতি উর্বর। সে উর্বরতা বাড়িয়েছে বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেকুলারিস্টগণ। ভারতের দাস হওয়াতেই তাদের গর্ব। বাংলাদেশে বাকশালী দাসদের কারণে ভারত অতি অল্প খরচে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশকে দখলে রাখতে পেরেছে। ফলে বাংলাদেশের বুক চিরে করিডোর নিতে বা দেশের সমূদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের উপর দখল নিতে ভারতকে একটি তীরও ছুড়তে হয়নি।
রবীন্দ্রসঙ্গিতের রাজনৈতিক এজেন্ডা
জাতীয় সঙ্গীত কোন সাধারণ গান নয়।এর একটি সাংস্কৃতিক,রাজনৈতিক ও দর্শনগত এজেন্ডা থাকে। তাতে দেশবাসীর মিশন ও ভিশনের ঘোষণাও থাকে। তেমন একটি এজেন্ডা নিয়েই কবি রবীন্দ্রনাথ এ গানটি রচনা করেছিলেন। সেটি অখন্ড বাংলার উপর হিন্দু দর্শন, হিন্দু সংস্কৃতি ও হিন্দু রাজনীতির দখলদারি। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে তাদের সে দখলদারি বেড়েছিলও প্রচুর। কিন্তু সে দখলদারি নির্মূলের সম্ভাবনা বাড়ে ১৯৪৭ সালে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা পাকিস্তানে যোগ দিবে –সে সম্ভাবনা তখন বৃদ্ধি পায়। সমগ্র অখন্ড বাংলা পাকিস্তানে যোগ দিবে -সেটি তাদের কাছে ছিল অসহনীয়। ফলে হিন্দুদের রাজনৈতিক এজেন্ডাই তখন পাল্টে যায়। অখন্ড বাংলার বদলে তখন শুরু হয় বঙ্গভঙ্গের দাবী। ফলে বাঙালী হিন্দুগণ ১৯৪৭ সালে রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভাল বাসি” গানটি আর গায়নি। কিন্তু ১৯৭১য়ের পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাদের এজেন্ডা আবার পাল্টে যায়। ভারতীয় হিন্দুদের রাজনীতিতে আবার ফিরে এসেছে “অখন্ড বাংলা”র গড়ার প্রকল্প। কারণ অখন্ড বাংলা গড়লে সে বাংলার পক্ষে এখন আর পাকিস্তানে যোগ দেয়ার সুযোগ নাই। বরং সম্ভাবনা বেড়েছে পশ্চিম বাংলার সাথে যুক্ত হয়ে ভারত ভুক্ত হওয়ার। তাতে ভারত পাবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের উপর সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ। তাতে বাড়বে ভারতের সামরিক ও সামরিক শক্তি। এ সুযোগটি পেতে অতীতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ পৃথিবীর অন্যপ্রান্ত থেকে বাংলার বুকে এসে যুদ্ধ করেছে। তাই এতো কাছে থেকে ভারত সে সুযোগ ছাড়ে কেমনে? তবে সে জন্য শর্ত হলো,বাংলাদেশীদের চেতনার মানচিত্রে পরিবর্তন। চেতনাগত পবিবর্তনের লক্ষ্যেই পুণরায় প্রয়োজন পড়েছে অবিভক্ত বাংলার পক্ষে আবেগ সৃষ্টির। ফলে কদর বেড়েছে রবীন্দ্রনাথের “সোনার বাংলা” গানের। চেতনার সে উপযোগী ক্ষেত্র নির্মাণের লক্ষ্যেই ১৯৭১য়ের পর থেকে আবার শুরু হয়েছে বাংলাদেশের স্কুল-কলেজসহ সকল প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ায় “আমার সোনার বাংলা গান” গাওয়া। সে সাথে জোরে শোরে শুরু হয়েছে বাঙালী মুসলমানদের ইসলাম থেকে দূরে সরানোর নানা রূপ প্রকল্প।
কোন যুদ্ধই স্রেফ সামরিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকে না। প্রকান্ড যুদ্ধ চলে বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানেও। ১৯৭১য়ের সামরিক যুদ্ধটি শেষ হয়েছে, কিন্তু তীব্র ভাবে এখনো চলছে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ। ভারতীয় হামলার লক্ষ্য শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গা ছিল না। তারা তো চায় অখন্ড ভারত নির্মাণ। পাকিস্তান ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে ভারত এক ধাপ এগিয়েছে,কিন্তু মূল লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। ভারতের বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের লক্ষ্য,বাঙালী মুসলিমের আদর্শিক ভূবনে পরিবর্তন আনা।কারণ,পূর্ব বাংলার মুসলমানগণ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ভূক্ত হয় পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে ভাষা, বর্ণ বা আঞ্চলিক বন্ধনের কারণে নয়।সেটি সম্ভব হয়েছিল প্যান-ইসলামি মুসলিম ভাতৃত্বের কারণে। ইসলাম এজন্যই ভারতীয় আদর্শিক যুদ্ধের মূল টার্গেট।১৯৭১য়ে সামরিক বিজয়ের পর ইসলামি চেতনা বিনাশের ভারতীয় প্রজেক্ট বহুদূর এগিয়ে গেছে। ১৯৪৭য়ে শতকরা ৯৬ ভাগ বাঙালী মুসলিম পাকিস্তানে যোগ দেয়ার পক্ষে ছিল। অথচ চিত্রটি এখন ভিন্ন। মনের মাধুরি মিশিয়ে যারা রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” গায় তাদের অনেকেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টিকে অনাসৃষ্টি মনে করে। তাদের সামনে ১৯৪৭ এলে তারা পাকিস্তানে যোগ দেয়ার পক্ষে ভোট দিত না। ভারত তাই বিজয়ী হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধেও। নতুন প্রজন্ম ভূলে গেছে ১৯৪৭-পূর্ব বাঙালী মুসলমানদের দুরাবস্থার কথা। তখন বাংলার শহরে ও গ্রামে শতকরা ৯৫ ভাগ দালানকোঠা ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিল হিন্দুরা। শহর এলাকার শতকরা ৮৫ ভাগের বেশী জমিজমার মালিক ছিল তারা। সরকারি চাকুরীতে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগও ছিল না। ভারতের মুসলমানগণ এখনো সে একই অবস্থায় রয়ে গেছে। অথচ পাকিস্তান সৃষ্টির পর তাদের ভাগ্যই পাল্টে যায়। ১৯৪৭য়ের পর একমাত্র ঢাকা শহরে যত মুসলিম ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, শিক্ষক, উকিল, বিজ্ঞানী ও শিল্পপতি গড়ে উঠেছে তা ভারতের প্রায় ২০ কোটি মুসলমানের মাঝেও সৃষ্টি হয়নি। করাচী, লাহোর, ইসলামাবাদ, পেশাওয়ার, কোয়েটার ন্যায় শহরগুলোতে মুসলমানদের হাতে যে পরিমাণ সম্পদ জমা হয়েছে এবং যতজন মুসলিম ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, শিক্ষক, উকিল, বিজ্ঞানী ও শিল্পপতি গড়ে উঠেছে সেটি কি ভারতীয় মুসলমানগণ কি কল্পনা করতে পারে? পাকিস্তান আজ ভারতের সমকক্ষ আনবিক শক্তিধারি একটি দেশ। অথচ ভারতীয় মুসলমানদের সংখ্যা পাকিস্তানের জনসংখ্যার চেয়ে অধীক। তবে মগজ ধোলাইয়ের পর বিস্ময়কর মোজেজাও আর কাজ দেয় না। ফিরাউনের প্রজাগণ তাই মূসা (আঃ) এর মোজেজা দেখেও ফিরাউনের দাসত্ব ছেড়ে ইসলাম কবুল করেনি। একই রূপ অবস্থা বাংলাদেশে মুজিব অনুসারিদের। তারা ইতিহাসের সত্য বিষয়গুলোও মানতে রাজী নয়। এরূপ বিবেকশূণ্য সেবাদাসদের আবাদ বাড়াতে ভারত বাংলাদেশে যে উর্বরতা পেয়েছে সেটি তারা অধিকৃত কাশ্মিরে কোন কালেই পায়নি। কারণ, বাংলার তুলনায় কাশ্মিরে রয়েছে প্রবল ইসলামী চেতনা। সে চেতনার কারণে সেখানে গড়ে উঠেছে ভারত বিরোধী বিদ্রোহ। ফলে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারত যত সহজে যোগাযোগের নিরাপদ করিডোর পায়,কাশ্মিরে ৬ লাখ সৈন্য মোতায়েন করেও সে সুযোগ পায়নি। নিরাপত্তা পাচ্ছে না কাশ্মিরের কোন শহরে বা গ্রামে। অথচ ভারতীয় সীমান্তরক্ষির হাতে বাংলাদেশীরা অহরহ লাশ হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয়দের সে বিপদ নাই। বিপুল সংখ্যক সেক্যুলারিস্টদের চেতনা-রাজ্য ইতিমধ্যেই অখন্ড ভারতের চেতনা দ্বারা অধিকৃত। এরূপ অবস্থা আরো কিছুকাল চলতে থাকলে বাংলাদেশের ভারতভূক্তির জন্য ভারতকে একটি গুলিও ছুড়তে হবে না। ভারত তো সেটিই চায়।
আত্মসমর্পণে কি আখেরাত বাঁচবে?
বাঙালী মুসলিমের চেতনা রাজ্যে ভারতীয় দখলাদারিকে স্থায়ী রূপ দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে সেক্যুলার বাঙালী বুদ্ধিজীবীগণ।এরা হচ্ছে ভারতের পক্ষে খাঁচার ঘুঘু।এদের কাজ,অন্যদেরও খাঁচায় বন্দী হতে আহবান করা। এরূপ ভারতসেবী সাংস্কৃতিক সৈন্য গড়ে তোলার কাজে ভারতের বিনিয়োগটি ১৯৪৭ সাল থেকেই। ১৯৭১য়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ভারতের সে খরচটি বিপুল ভাবে কমেছে। ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে এখন ব্যয় হচ্ছে বাংলাদেশী মুসলিমের নিজস্ব রাজস্বের পুঁজি। ভারতের বর্তমান স্ট্রাটেজী হলো,একাত্তরে অর্জিত অধিকৃতিকে যে কোন ভাবেই হোক লাগাতর ধরে রাখা। বাংলাদেশের উপর ভারতের দখলদারিটি শুধু সামরিক, রাজনৈতিক বা অর্থনতিক নয়,বরং সাংস্কৃতিক। সে সাংস্কৃতিক অধিকৃতিরই প্রতীক হলো জাতীয় সঙ্গিত রূপে চাপিয়ে দেয়া পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের গান। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অখণ্ড হিন্দু ভারতের ধ্বজাধারি। সে অখণ্ড হিন্দু ভারতের চেতনা থেকেই ভারত থেকে মুসলিম নির্মূলের প্রবক্তা মারাঠী শিবাজীকে তিনি জাতীয় বীরের মর্যাদা দিয়েছেন। শিবাজীকে বন্দনা করে তিনি কবিতাও লিখেছেন। এখন সে রবীন্দ্রনাথকে ভারত ব্যবহার করছে বাংলাদেশের উপর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপনের যোগসূত্র রূপে। এজন্যই বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা ও রবীন্দ্রঅর্চনা বাড়াতে ভারত সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকারের এত বিনিয়োগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের রাজস্বের অর্থে বাংলা এ্যাকাডেমীর কাজ হয়েছে প্রতিবছর পৌত্তলিক রবীন্দ্রনাথের উপর শত শত বই প্রকাশ করা। অথচ ইসলামের মহান নবীজী(সাঃ)এবং মানব-ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষটির উপর কি এর দশ ভাগের এক ভাগ বই ছাপানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?
জনগণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় অপরাধটি রাজনৈতিক,প্রশাসনিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয়। সেটি ঘটভে চেতনা বা বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে।অপরাধটি এখানে জনগণকে জাহান্নামের আগুণে পৌছানোর। অথচ সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি রাস্তাঘাট,ব্রিজ,কলকারখানা বা হাসপাতাল গড়া নয়,বরং জাহান্নামের আগুণ থেকে নাগরিকদের বাঁচানো। এবং সেটি সম্ভব জান্নাতের পথ তথা সিরাতুল মুস্তাকীমটি চিনতে এবং সে পথে পথচলায় লাগাতর সহয়তা দেয়ার মধ্য দিয়ে।ইসলামে এটি এক বিশাল ইবাদত এবং প্রতিটি শাসকের উপর এটি এক বিশাল দায়ভার।এ দায়িত্ব পালনের কাজটি সঠিক হলে মহান আল্লাহর দরবারে সে শাসক মহামর্যাদায় ভূষিত হন। এবং কিভাবে পালন করতে হয় খোদ নবীজী (সাঃ) দেশ শাসনের সে গুরু দায়ভার নিজ কাঁধে নিয়ে শিখিয়ে গেছেন।শাসকদের জন্য আজও মহান নবীজী (সাঃ)র মহান সূন্নত।দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন খোলাফায়ে রাশেদার ন্যায় মহান সাহাবায়ে কেরামগণ। কিন্তু বাংলাদেশে সে দায়ভার পালিত। কারণ, শাসকের সে পবিত্র পদটি অধিকৃত হয়েছে ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। এরা আবির্ভুত হয়েছে স্বার্থশিকারি চোর-ডাকাত রূপে। ক্ষমতালোভী এ সেক্যুলারিস্টদের মূল মিশনটি হলো,কোরআনে প্রদর্শিত সিরাতুল মুস্তাকীমকেই জনগণের দৃশ্যপট থেকে বিলুপ্ত করা এবং জাহান্নামে পৌঁছাটি সহজতর করা।সে লক্ষেই তাদের সেক্যুলার রাজনীতি ও শিক্ষানীতি। সে লক্ষ্যেই নৃত্য-গীত, মদ-জুয়া ও পতিতাপল্লির সংস্কৃতি। সে লক্ষ্যেই দেশ জুড়ে গড়া হচ্ছে শত শত নাট্যশালা ও সিনেমা হল।সে অভিন্ন লক্ষ্যেই এক পৌত্তলিকের রচিত সঙ্গিতকে জাতীয় সঙ্গিত রূপে গাইতে বা শুনতে জনগণকে বাধ্য করা হচ্ছে।এভাবে অধিকৃত হয়ে আছে জনগণের মনের ভূবন। জনগণের অধিকৃত সে মন বাধ্য হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে দূরে থাকতে।
অথচ মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে দূরে থাকার বিপদটি তো ভয়াবহ। তখন সে ব্যক্তির উপর তার নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তার সঙ্গিরূপে তখন নিয়োগ দেয়া হয় অভিশপ্ত শয়তানের। সে ঘোষণাটি এসেছে পবিত্র কোরআনে। বলা হয়েছে, “যে কেউ রহমানের স্মরণ থেকে দূরে সরবে তার উপর নিয়োগ দেয়া হবে শয়তানের, সে তার সঙ্গি হবে।” –(সুরা জুখরুফ আয়াত ৩৬)।ফলে রবীন্দ্র সঙ্গিত গাওয়ার অর্থ শুধু গান গাওয়া নয়।এর অর্থ,দেশবন্দনার মাঝে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ থেকে ভূলে থাকা। ফলে তার পরিণতিটি ভয়াবহ। এখানে মহাবিপদটি সঙ্গি রূপে শয়তানকে নিজ ঘাড়ে বসিয়ে নেয়ার। জনগণের কাঁধে শয়তান বসিয়ে দেয়ার সে ভয়ানক পাপের কাজটিই করছে বাংলাদেশের সরকার। সরকারের নীতির কারণেই দিন দিন শয়তানের অধিকৃতি বাড়ছে দেশবাসীর মনের ভূবনে। আর তাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গণই শুধু নয়, জনগণের চেতনার মানচিত্রও অধিকৃত হয়ে যাচ্ছে পৌত্তলিক হিন্দুদের হাতে।এভাবে জাতীয় সঙ্গিত পরিনত হয়েছে জনগণের ঈমান ধ্বংস ও জাহান্নামে পৌছানোর নীরব হাতিয়ারে। প্রশ্ন হলো,এ অব্স্থায় কি আত্মসমর্পণ চলে? তাতে কি পরকাল বাঁচে? ১০/০৫/২০১৫
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের নাশকতার রাজনীতি এবং নতুন বিপদ পরাধীনতার
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018