ফ্যাসিস্টদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কেন অপরিহার্য?

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অপরাধীদের স্বাধীনতা ও পরাধীন জনগণ

কোন সভ্য লোকালয়ে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারদের বসবাসের স্বাধীনতা থাকে না। সে স্বাধীনতা দিলে বিপন্ন হয় জনজীবনের নিরাপত্তা। তাই সভ্যতার প্রকৃত পরিচয় হলো সে পশুদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া। কিন্তু বিপদের কারণ হলো, বাঘ-ভালুকের চেয়েও হিংস্র জন্তুজানোয়ারের বসবাস বাংলাদেশের লোকালয়ে। সেটি মানুষের বেশে। এরূপ হাজার হাজার পশুর বসবাস এমন কি বাংলাদেশের রাজধানীতে। বাংলার মানুষের জানমালের সবচেয়ে বড় ক্ষয়-ক্ষতিটি হয়েছে মানবরূপী এই জানোয়ারদের হাতেই। তাদের সে হিংস্রতার হাতিয়ার হলো রাজনীতি। বাংলাদেশের সে রাজনীতিতে ব্যবহৃত হয় জনগণের অর্থে প্রতিপালিত সরকারি প্রশাসন, পুলিশ, RAB, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।  এদের সবাইকে দেখা গেছে ২০১৩ সালের ৫ মে‌ শাপলা চত্বরে নিরীহ মানুষ হত্যার কাজে। শত শত মুসল্লিদের সেদিন হত্যা ও আহত করা হয়েছে। সে পশুত্ব দেখা গেছে ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতিতে। এবং ২০০৯ সালে দেখা গেছে পিলখানার সামরিক অফিসারদের হত্যায়।

শাপলা চত্বরের নৃশংসতার ছবি পত্রিকা ও ইন্টারনেটে দেখা গেছে। মৃতদের লাশগুলিকে ঢাকা মিউনিসিপালিটির ময়লা টানার ট্রাকে করে গায়েব করা হয়েছে। জঙ্গলে পশুদের হাতে কেউ খুন হলে বিচার হয় না। তেমনি এতো বড় হত্যাকান্ডের পরও বাংলাদেশে কোন বিচার হয়নি। ফলে কারো কোন শাস্তিও হয়নি। পবিত্র কুর’আনে কিছু মানুষকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। পবিত্র কুর’আনের সে বানী বাংলাদেশীরা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। গভীর বন-জঙ্গলে হিংস্র পশুর যে নৃশংতা ঘটায়, মানবরূপী এসব পশুরা তার চেয়েও অধিক নৃশংসতা ঘটায় জন-অধ্যুষিত নগর-বন্দরে। বাংলাদেশের মাটিতে তো সেটিই বার বার প্রমাণিত হয়েছে। 

বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে বন্য পশুদের হাতে এতো মানুষ নিহত হয়নি, যা  হয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে। একমাত্র মুজিবের আমলেই প্রায় ৩০ হাজার বাঙালি রক্ষিবাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে। ৬ লাখের বেশী বিহারীরা হারিয়েছে তাদের ঘরবাড়ী, ব্যবসা-বানিজ্য ও চাকুরিবাকুরি। হাজার হাজার বিহারী নারীরা ধর্ষিতা হয়েছে। মুজিব মারা গেছে। কিন্তু তার ফ্যাসিবাদী হিংস্রতা আজও অবিকল বেঁচে আছে তার আনুসারিদের মাঝে। ফলে বেঁচে আছে গুম, খুন, ধর্ষণ, অপহরন, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি।  শত শত মানুষ গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে এবং আয়না ঘরে বন্দী হয়ে নির্যাতিত হচ্ছে। এরূপ মানবরূপী পশুদের হাতে জনগণের স্বাধীনতা যেমন বাঁচে না, তেমনি বাঁচে না জনগণের জানমালের নিরাপত্তা। মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়েছিল, এবং নিষিদ্ধ করেছিল অন্যদের রাজনীতি। কেড়ে নিয়েছিল দলগড়ার স্বাধীনতা। আর হাসিনা নিরপেক্ষ নির্বাচনকেই কররে পাঠিয়েছে। জনগণ  এখন আর দেশের স্বাধীন নাগরিক নয়, বরং অধিকারহীন দাস। সকল স্বাধীনতা ভোগ করছে শাসক দলের হিংস্র দানবেরা।

হিংস্র পশু, খুনি, গণতন্ত্রের খুনি ও চোরডাকাতদের স্বাধীনতা দেয়াটি গুরুতর অপরাধ। সমাজে এরূপ অপরাধ হতে থাকলে দেশে অপরাধের প্লাবন আসে। তাতে অসম্ভব হয় সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ। সেটির প্রমাণ হলো বাংলাদেশ। কারণ, দেশটিতে চোরডাকাতগণই স্বাধীন। তাই তারা প্রকাশ্যে ভোটডাকাতি ও ব্যাংক ডাকাতি করতে পারে। এবং সে ডাকাতির অপরাধে তাদের বিচার হয়না। তাই শাপলা চত্বরের গণহত্যার ন্যায় গণহত্যাও তারা মনের আনন্দে করতে পেরেছে। সে গণহত্যার খুনিদের বিচার হয়না। কিন্তু এদেশে বিচারের নামে নিরপরাধদেরও ফাঁসিতে চড়ানো হয়। এদেশ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের জেল থেকে মুক্ত করা হয় আর নিরীহ আলেমদের পায়ে ডান্ডাবেরি পড়ানো হয়। সব কিছুই হয় রাজনৈতিক প্রয়োজনে। এদেশে ফাঁসিতে চড়ানোর জন্য যা প্রয়োজন তা হলো মিথ্যা মামলা প্রণয়ন, মিথ্যা সাক্ষী জোগার এবং গোলম বিচারক। বাংলাদেশে এসব কিছুই অতি সহজে সম্ভব।

একটি দেশে সরকারের মূল দায়িত্ব হলো, বনের হিংস্র পশু ও মানবরূপী পশুদের হাত থেকে জনগণের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দেয়া। সে সাথে দেশের জনগণেরও কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে। সেটি হলো অসভ্য ও দুর্বৃত্ত শাসনের নির্মূল। এটিই ইসলামে সবচেয়ে পবিত্র কর্ম। এটি ইসলামে জিহাদ বলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে  সে কাজটি হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যা হয়েছে তা হলো সভ্য রীতি-নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। সরকারের কাজ হয়েছে জনগণের বদলে মানবরূপী শাসক দলের দুর্বৃত্তদের নিরাপত্তা দেয়া।  তাই দেশ জুড়ে ভোটডাকাতি এবং শাপলা চত্বরে গণগত্যার পরও হাসিনা ও তার ডাকাত দল নিরাপত্তা পায়। অপর দিকে ডিজিটাল আইনের ন্যায় আইন প্রণয়ন করা হয় জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে। সরকার সাধারণ জনগণকে কি নিরাপত্ত দিবে, নিরাপত্তা দিতে পারিনি সেনাবাহিনীর অফিসারদেরও।  ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রেয়ারি হলো বাংলাদেশীদের ইতিহাসে অতি কালো দিন। ঐদিন বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছে নতুন বিশ্ব-ইতিহাস। সেটি অতি অসভ্য নৃশংসতার। সেদিন ঢাকার পিলখানা ব্যারাকে ৫৭ জন সেনা অফিসার ও ১৭ জন বেসামরিক সদস্য বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নিহত হন। এ বিশ্বে বহু যুদ্ধ হয়েছে। দুই বার বিশ্বযুদ্ধও হয়েছে। কিন্তু কোন যুদ্ধেই কোন দেশের ৫৭ জন অফিসারকে এক দিনে বা এক রাতে নিহত হতে হয়নি। কিন্তু সে নৃশংস অসভ্যতার বিশ্বরেকর্ড একমাত্র বাংলাদেশের।

 

জনগণের অপরাধ ও অর্জিত শাস্তি 

বাংলাদেশের ব্যর্থতার কারণ শুধু ফ্যসিস্ট হাসিনা ও তার অনুসারিগণ নয়। গুরুতর অপরাধী হলো দেশের জনগণও। অপরাধীদের শাস্তি না দেয়া এবং তাদের শাসন মেনে নেয়াই তাদের বিরাট অপরাধ। তার ফ্যাসিস্ট দুর্বৃত্তদের স্বাধীনতা কেড়ে না নিয়ে তাদের গলার রশি ঢিল করে দিয়েছে। তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই অপরাধীরাই আজ বিজয়ী।  এরূপ ব্যর্থ জনগণের উপর শাস্তি নেমে আসবে সেটিই তো স্বাভাবিক।

ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতটি নামাজ-রোজা বা হজ্জ-যাকাত নয়, সেটি হলো দুর্বৃত্ত অপরাধীদের নির্মূল এবং ন্যায় ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা একমাত্র তখনই বিজয়ী হয়।  একমাত্র তখনই সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মিত হয়। অপরাধীদের ক্ষমতায় বসিয়ে কোন ভাল কাজই সম্ভব নয়। বুঝতে তবে, শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের কারণে সভ্য মানব ও সভ্য রাষ্ট্র নির্মিত হয় না। সে জন্য দুর্বৃত্তির নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা চাই। সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি রূপে ঘোষণা দিয়েছেন। সেটি এজন্য নয় যে তারা বেশী বেশী নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করে। বরং এজন্য যে তারা অন্যায়ের নির্মূল করে এবং সুবিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়। এ কাজটিই ঈমানদারের জিহাদ। কিন্তু বাংলাদেশীরা সে জিহাদে নাই। বরং আছে ভোটডাকাত ও গণতন্ত্রের খুনি ফ্যাসিস্টকে নেতা, পিতা, বন্ধু, মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় বলাতে। দুর্বৃত্তিতে বাংলাদেশ ৫ বার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। তবে সেটি শুধু দুর্বৃত্ত সরকারের কারণে ঘটেনি। জনগণের দুর্বৃত্তিও সে জন্য কম দায়ী নয়।

কোন লোকালয়ে নিরাপদে বাঁচতে হলে সে লোকালয়ের হিংস্র পশু ও বিষাক্ত পোকামাকড়গুলিকে চিনতে হয় ও তাদের নির্মূল করতে হয়। তেমনি দেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে এবং দেশবাসীদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে হলে সে সমাজের অপরাধীদেরও চিনতে হয় ও তাদের নির্মূল করতে হয়। তাই খুনি, দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীদের চেনার দায়িত্ব ও তাদের নির্মলের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের। ইসলামের সর্বশেষ নবী  (সা:) সে কাজটিই করেছেন। ফলে নির্মিত হয়েছে সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। বাঙালি মুসলিমগণ নবীজী (সা:)’র উম্মত রূপে দাবী করলেও তাঁর পথটি অনুসরণ করেনি।

যাদের সশস্ত্র যুদ্ধটি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, যারা কেড়ে নেয় জনগণের ভোটের অধিকার, যারা ছিনতাই করে বিরোধী নেতাকর্মীদের কথা বলা, লেখালেখি ও মিটিংয়ের স্বাধীনতা -তারা জনগণের শত্রু। তাদের স্বাধীনতা দেয়ার অর্থ তাদের অপরাধ কর্মের স্বাধীনতা দেয়া। কোন দেশেই চোর-ডাকাত-খুনিদের স্বাধীনতা থাকে না। তেমনি থাকে না  এসব খুনি অপরাধীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা। ভয়ানক অপরাধ সংঘটিত করেছে জার্মানীর নাযিবাদী হিটলার এবং ইতালীর ফ্যাসিবাদী মুসোলিনী।  তাদের সে অপরাধের কারণে কোটি কোটি মানুষের জীবনে মৃত্যু ও বিপর্যয় নেমে এসেছে। সে অপরাধের কারণেই নাযিবাদ ও ফ্যাসিবাদ শুধু জার্মানী ও ইতালিতে নয়, সমগ্র ইউরোপে আজ নিষিদ্ধ। কড়া নজরদারী রাখা হয় তাদের উপর যারা সে বিষাক্ত মতবাদ নিয়ে আবার রাজনীতি করতে চায়। বাংলাদেশেও সেটি হওয়া উচিত ছিল বহু আগেই। অপরাধীদের রাজনীতি ও মিথ্যা প্রচারণাকে নির্মূল না করলে চরম পেনাল্টি দিতে হয়। সে পেনাল্টিই লাগাতর দিতে হচ্ছে বাংলাদেশীদের। সেটি যেমন পিলখানা হত্যাকান্ড, শাপলা চত্বরের গণহত্যা, ২০১৪ সালের একদলীয় ভোটার-বিহীন রাজনীতি, ২০১৮ সালর ভোটডাকাতি এবং গুম-খুন-অপহরণ-ধর্ষণ, সন্ত্রাস, ফাঁসি, এবং আয়না ঘরের নির্যাতনের মধ্য দিয়ে।

 

দুর্বৃত্ত নির্মূলের লড়াই ছাড়া মুক্তি নাই

দেশ যখন ফ্যাসিস্ট দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত এবং জনগণের নাগরিক অধিকার যেখানে লুণ্ঠিত -সেখানে নীরবতায় ও আত্মসমর্পণে মুক্তি মেলে না। তখন দুর্বৃত্ত শাসকের নির্মূল ছাড়া মুক্তির অন্য কোন পথ থাকে না।  ফ্যাসিস্টগণ  কখনোই ন্যায়-নীতির ধার ধারে না। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থটি দেখে। ডাকাতদের আনন্দ অন্যের সম্পদের উপর ডাকাতিতে, তেমনি ফ্যাসিস্ট সরকারের আনন্দ জনগণকে পরাজিত ও অধিকারহীন রাখায়। ভোটের ইজ্জত দিতে এরা জানে না। জনগণের ক্ষমতাকে তারা ভয় করে। নিজেদের জন্য সেটিকে তারা চ্যালেঞ্জ মনে করে। ফলে জনগণকে ক্ষমতাহীন রাখাই স্বৈরাচারি শাসকদের স্ট্রাটেজী। এজন্যই হাসিনা জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করে।

দেশের সবচেয়ে বড় অপরাধী মহল্লা্র চোর-ডাকাতগণ নয়। তারা কিছু ঘরে ডাকাতি করে বটে কিন্তু দেশজুড়ে ঘরে ঘরে ডাকাতির সামর্থ্য তাদের থাকে না। তারা মানুষের ভোটের উপর ডাকাতি করে না। তারা জনগণের কথা বলার অধিকারও কেড়ে নেয় না। তারা অন্যদের চিন্তাভাবনা উপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেনা। কিন্তু সে অপরাধগুলি করে হাসিনার ন্যায় ফ্যাসিস্ট শাসকগণ। হাসিনার অপরাধটি এজন্যই বিশাল। তার অপরাধ দেশ জুড়ে জনগণের ক্ষমতার উপর ডাকাতি করা।

ভোট প্রতিটি নাগরিকের অতি মূল্যবান সম্পদ। ভোট দেয় জনগণকে সরকার নির্বাচিত করার অধিকার। ভোটের মাধ্যমেই জনগণ দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করে। জনগণে সেরূপ অধিকারের মালিক হবে -সেটি কোন স্বৈরাচারি শাসকই চায় না। জনগণে সেরূপ ক্ষমতা মুজিবের ন্যায় বাকশালী স্বৈরাচারির কাছেও ভাল লাগেনি। একজন্যই মুজিব জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং উপহার দিয়য়েছে একদলীয় ফ্যাসিবাদ। জনগণ পাবে রাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার -সেটি মুজিবের ন্যায় হাসিনারও ভাল লাগেনি। তাই সে ভোটের ইজ্জত না দিয়ে ভোটের উপরই ডাকাতি করে বসে। প্রশ্ন হলো, জনগণের ভোটের উপর যে ব্যক্তি ডাকাতি করে সে কি কখনো জনগণের বন্ধু হতে পারে?  তাই মুজিব যেমন জনগণের বন্ধু ছিল না, হাসিনাও নয়। তারা বরং নিজেদের প্রতিষ্ঠা দিয়েছে জনগণের শত্রু রূপে।    

 

হাসিনার বিদেশী মিত্র

হাসিনা একা নয়। যেমন একা নয় মায়ানমারের সামরিক জান্তাসহ বিশ্বের বহু স্বৈরাচারি জালেম সরকার। চীন, ভারত ও জাপান এ মুহুর্তে বাংলাদেশ থেকে অর্থনৈতিক ফায়দা নিতে চায়। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নাই। তারা চায় অর্থনৈতিক লুণ্ঠন। প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী বিদেশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বিদেশী মুদ্রা অর্জন করে। দেশের বহু লক্ষ নারী শ্রমিক অতি অল্প বেতনে গার্মেন্টস সেক্টরে উৎপাদন বাড়ায়। তাদের সস্তা পরিশ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিদেশী মুদ্রা উপার্জন করে। বহু কষ্টে অর্জিত সে বিদেশী মুদ্রার উপর লোলুপ দৃষ্টি ভারত, চীন ও জাপানের।  তারা জানে হাসিনার জনসমর্থন নাই।  তারাা জানে, ক্ষমতায টিকে থাকার জন্য হাসিনা চায় বিদেশীদের সাহায্য। তাই হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে তারাও খুঁজছে বাংলাদেশের উপর ডাকাতির সুযোগ। হাসিনা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বন্দরগুলির উপর ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলের ৭টি প্রদেশ ও জাপানের বাণিজ্যিক স্বার্থ পূরণ করতেই নির্মিত হতে যাচ্ছে মহেষখালীর মাতারবাড়ীতে আরেকটি সমুদ্র বন্দর। অথচ খরচ বইবে বাংলাদেশ।

চীন ও জাপানের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোন মানবতা ও ন্যায় নীতি নাই। সামান্যতম গণতন্ত্র প্রেমও নাই। আছে শুধু অর্থলুণ্ঠনের ধা।ন্ধা। তারই প্রমাণ, ২০১৮ সালে হাসিনা যখন ভোটডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে তখন চীনের ঢাকাস্থ দূত সোনার নৌকা দিয়ে হাসিনাকে সম্বর্ধনা জানিয়েছে। উল্লেখ্য যে, চীনেও কোন গণতন্ত্র নাই। আছে স্বৈরতন্ত্র। এক বাঘ কখনোই অন্য বাঘের নৃশংসতার নিন্দা করে না। তেমনি এক স্বৈরাচারি কখনোই অন্য স্বৈরাচারিকে নিন্দা করেনা। সেটিই ঘটছে চীনের ক্ষেত্রে। অপর দিকে মানবতা নাই জাপানের বিদেশ নীতিতেও। মানবতা নাই বলেই জাপান মায়ানমারের সামরিক জান্তার রোহিঙ্গা নির্যাতন পলিসিকে লাগাতর সমর্থন করে চলেছে।  মায়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা নির্মূলকে জাপান একটি বারের জন্যও নিন্দা করেনি। নিন্দা করেনি ভারত ও চীন। এরাই স্বৈরাচারি হাসিনার মিত্র।

 

দায়ভারটি একমাত্র বাংলাদেশীদের

দুর্বৃত্তদের নৃশংস অপরাধের নিন্দা করার সমর্থ্য যারা রাখেনা, বুঝতে হবে তারা জনগণের বন্ধু নয়। বুঝতে হবে, এরা নিজেরাও অপরাধী। কারণ, একমাত্র দুর্বৃত্তরাই দুর্বৃত্তদের সমর্থন করে, কোন সভ্য ও ভদ্র মানুষেরা নয়। তাই বাংলাদেশের উপর হাসিনার ন্যায় অপরাধীদের শাসন অবশ্যই নিশ্চিহ্ন করতেই হবে। এ দায়িত্ব একান্তই বাংলাদেশীদের; কোন বিদেশীর নয়। গৃহের সামনে আর্বজনা দেখে বলা যায় সে গৃহের বাসিন্দারা আদৌ সভ্য নয়। সভ্য ও ভদ্র হলে তারা আবর্জনা সরাতো। তেমনি দেশের উপর চোরডাকাতদের শাসন দেখে বলা যায় সে দেশের জনগণ কতটা ব্যর্থ দুর্বৃত্ত নির্মূলে। এটি তাদের ব্যর্থতার দলিল। ঈমান থাকলে অবশ্যই জালেমের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু হয়ে যায়। ঈমান নিয়ে বাঁচতে হলে অবশ্যই জিহাদ নিয়ে বাঁচতে হয়। আত্মসমর্পণ ও নীরবতা এখানে হারাম। এরূপ একটি লড়াইয়ের মধ্যেই বাংলাদেশীদের ইজ্জত-আবরুর বিষয়। সে সাথে তাদের ঈমানদারীর বিষয়ও। কারণ দুর্বৃত্ত শাসনের সামনে নীরবতা কোন ঈমানদারি নয়।

 

যে লোকালয়ে হিংস্র পশুর প্রতিদিনের হামলা, যে হামলার প্রতিরোধে সে লোকালয়ে প্রতি মুহুর্ত প্রস্তুত থাকতে হয়। তেমনি যে দেশে জনগণের মৌলিক অধিকারের উপর প্রতিক্ষণ হামলা, সেদেশের মানুষের জীবনে অবশ্যই যুদ্ধ থাকতে হয়। তেমন একটি যুদ্ধ না থাকার অর্থ জালেমদের কাছে আত্মসমর্পণ। সেটি বেঈমানী। জনগণের পক্ষ থেকে সেরূপ বেঈমানী হলে শাসকের আসনে বসে চোর ডাকাতগণ। মুজিব-হাসিনার ফ্যাসিবাদকে বৈধতা দেয়ার অর্থ: চোর-ডাকাতদের ডাকাতির অধিকার দেয়া। প্রতিদেশেই কিছু চোর-ডাকাত থাকে, তেমনি গণতন্ত্রের শত্রুও থাকে। দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের মৌলিক অধিকার বাঁচাতে হলে সে শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াইও থাকতে হয়। বাংলাদেশের মাটিতে এ লড়াইটি অন্য কারো নয়, সেটিড একমাত্র বাংলাদেশীদের। এ লড়াই স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার। এখানেই পরীক্ষা হবে ও প্রমাণ মিলবে বাংলাদেশীরা কতটা গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে চায় এবং কতটা সভ্য ভাবে বেড়ে উঠতে চায়  -সেটির।  ০৭/০৫/২০২৩ 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *