বাংলাদেশীদের মুর্তিপূজারী বানানোর ষড়যন্ত্র এবং বাঙালী মুসলিমের বেহাল অবস্থা
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 14, 2020
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
হাইজ্যাক হয়েছে দেশ
অপরাধীকে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসানোর বিপদটি ভয়াবহ। তখন যাত্রীদের দোয়াদরুদ ও কান্নাকাটিতে লাভ হয়না। যাত্রীরা তখন দুর্বৃ্ত্ত চালকের হাতে হাইজ্যাক হয় যায়। বাংলাদেশ একটি গাড়ি নয়, এটি ১৭ কোটি মানুষের দেশ। ফলে দেশটির চালকের সিটে কোন ডাকাতকে বসানোর বিপদটি অতি ভয়াবহ। তখন দেশবাসী এবং তাদের জানমাল, ইজ্জত-আবরু ডাকাতের হাতে হাইজ্যাক হয়। বাংলাদেশে তো তাই হয়েছে। হাসিনা যে ভোটডাকাত সে বিষয়ে কি কারো সন্দেহ আছে? অথচ সেই এখন বাংলাদেশের ড্রাইভিং সিটে। ফলে গুম, খুন, ধর্ষণ, জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছে অগণিত নারী-পুরুষ ও যুবক-যুবতীরা। চুরি-ডাকাতির শিকার হ্চ্ছে সমগ্র দেশবাসী। এই জন্যই মানব জীবনে সবচেয়ে বড় নেক কাজটি বাঘ-ভালুক হত্যা নয়, বরং দেশের ড্রাইভিং সিট থেকে দুর্বৃ্ত্ত শাসককে নির্মূল করা। পবিত্র কোর’আনে এ কাজকে মহান আল্লাহতায়ালার পথে পবিত্র জিহাদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে।এ কাজে যে নিহত হয় -তাকে মৃত বলা হারাম করা হয়েছে। সে পায় শহীদের মর্যাদা। নিহত হওয়ার সাথে সাথে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া। রোজ হাশর ও পুলসিরাতের ভাবনা থেকে তাকে মু্ক্তি দেয়া হয়।
বাঘ-ভালুক আর ক’জন মানুষকে হত্যা করে? বনের সকল হিংস্র পশু মিলে বাংলার যতজন মানুষকে বিগত হাজার বছরে হত্যা করেছে শেখ মুজিব একাই তার চেয়ে বেশী মানুষ হত্যা করেছে তাঁর ৩ বছর ৯ মাসের শাসন কালে। তার আমললে ৩০ হাজারের বেশী বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে রক্ষি বাহিনী দিয়ে। লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করা দুর্ভিক্ষ ডেকে এনে। আজ নিহত হচ্ছে, গুম হচ্ছে, ধর্ষিতা হচ্ছে, অত্যাচারিত হচ্ছে মুজিবকণ্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে। পশুর গণহত্যা করে না, গুম বা ধর্ষণের রাজনীতিও করে না। কিন্তু সেগুলি প্রতিষ্ঠা পায় দুর্বৃত্ত শাসকের হাতে। হাজার হাজার হিংস্র পশুর যে নাশকতা তার চেয়ে বেশী নৃশংস নাশকতা নিয়ে হাজির হয় স্বৈরাচারি শাসকগণ। অপর দিকে লক্ষ লক্ষ নেকবান্দা যত নেক আমল ব্যক্তিগত ভাবে করতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশী নেককাজ করতে পারে নেক শাসক। কারণ, ভাল ও মন্দ –ঊভয় কাজেই রাষ্ট্রের ক্ষমতা বিশাল। তাই সমাজে সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমলটি মসজিদ-মাদ্রসার নির্মাণ নয়, বরং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। মসজিদ-মাদ্রসার নির্মাণে যুদ্ধের প্রয়োজন হয় না। ফলে সে কাজে কেউ শহীদ হয় না। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে শত্রুর পক্ষ থেকে বাধা অনিবার্য; ফলে অনিবার্য হয়ে উঠে জিহাদও। সে জিহাদে নিহত হলে তাকে শহীদ বলা হয়। নবীজী (সাঃ) ১৩ বছর মক্কায় থাকা কালে একটি মসজিদও নির্মাণ করেননি। অথচ ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে মদিনায় হিজরতের পর প্রথম দিনই তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের জন্ম দিন। অন্য কোন ধর্মের চেয়ে ইসলামে দ্রুত প্রসারের কারণ হলো ইসলামের হাতে শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল।
সবচেয়ে বড় নেক কর্ম ও দুষ্কর্ম
মানব সভ্যতার সবচেয়ে সেরা নেক কর্মটি হলো রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় সবচেয়ে সেরা ব্যক্তিকে বসানো। এ কাজটি সবচেয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। বহু অর্থ ও রক্তের ব্যয় হয়। প্রয়োজন পড়ে জিহাদের। নবীজী (সাঃ)র আমলে সে আসনটিতে তিনি নিজে বসেছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সে আসনে বসেছেন হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ), হযরত উসমান (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)’র ন্যায় শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ। ফলে তখন নেক আমলের জোয়ার এসেছিল এবং নির্মিত হয়েছিল মানব ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। আর সবচেয়ে গোনাহর কাজটি হলো শাসকের আসনে কোন ডাকাতকে বসানো। তখন জোয়ার আসে দুর্বৃত্ত কর্মে। বাংলাদেশ ৫ বার দুর্বৃত্তি বিশ্বে প্রথম হয়েছে তো সে জোয়ারের কারণেই। কারণ, শাসন ক্ষমতা গিয়েছিল দুর্বৃত্তদের হাতে। পরিতাপের বিষয় হলো, শাসকের যে আসনে খোদ নবীজী (সাঃ) ও তাঁর মহান সাহাবীগণ বসেছেন, বাংলাদেশে সে আসনে বসেছে ভোটচোর হাসিনা।
বাংলাদেশে এমন চোর বা ডাকাত পাওয়া মুশকিল যে সারা জীবনে ১০০টি ঘরে চুরি বা ডাকাতি করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা ডাকাতি করেছে কোটি কোটি মানুষের ঘরে। ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের ভোট –যা অর্থের চেয়েও মূল্যবান। অর্থ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ কেনা যায় না। কিন্তু ভোট দিয়ে কেনা যায়। এজন্যই হাসিনা তাদের ভোটের উপর ডাকাতি করেছে। এরূপ সফল ডাকাতির পর বসেছে প্রধানমন্ত্রীর আসনে এবং সুযোগ পেয়েছে দেশের রাজস্বভান্ডার, বিদেশী লোন, সরকারি প্রকল্প এবং ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর অবাধ ডাকাতির। ডাকাতসর্দার দলের অন্য ডাকাতদের সুযোগ করে দেয়। ফলে হাসিনার শাসনামলে দলীয় ডাকাতদের হাতে ডাকাতি হয়েছে দেশের শেয়ার মার্কেট, সরকারি জমি, নদীর পার ও বনভূমির উপর। হাসিনার দলীয় ডাকাতদের উৎপাতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে তার হাত গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। নইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই অনেক কম খরচে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়ে যেত।
মুজিবপূজার স্বরূপ
দুর্বৃত্তদের জীবনে ধর্মকর্ম না থাকলেও পূজনীয় প্রিয়জন থাকে। মিশরে এরূপ দুর্বৃত্তরাই ফিরাউনকে খোদা বানিয়েছিল। এবং বাংলাদেশেই এরাই মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্র হত্যাকারি, বাকশালী স্বৈরাচারি ও ভারতীয় এজেন্টকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা বানিয়েছে। এবং এখন তার মুর্তিকে পূজা দেয়া শুরু করেছে। মুর্তিপূজার অর্থ মুর্তির সামনে গিয়ে নামায পড়া নয়। সেজদা দেয়াও নয়। মুর্তিপূজক হিন্দুরা মন্দিরে গিয়ে যা করে তা হলো মুর্তির সামনে হাত তুলে প্রনাম জানায়, পায়ে ফুল দেয় এবং মুর্তির প্রশংসা গীত গায়। মুজিবের মুর্তির সামনে তো সেটিই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা গেল, বাংলাদেশের এক স্কুলের ছাত্রীগণ সারিবদ্ধ ভাবে বারান্দায় রাখা মুজিবের মুর্তির আসনে ভক্তিভরে হাত বুলিয়ে ক্লাসে ঢুকছে।
এতকাল বাংলাদেশে হিন্দুরা মুর্তি গড়েছে নিজেদের অর্থ দিয়ে। অথচ বাংলাদেশে মুজিবের মুর্তিগড়া হচ্ছে জনগণের দেয়া রাজস্বের অর্থে। এমনকি ভারতীয় হিন্দুরাও স্কুল-কলেজে তাদের শীর্ষ নেতা গান্ধি বা নেহেরুর মুর্তি গড়ে এরূপ পূজা দেয় না, যা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। প্রবাদ আছে, কোন হিন্দু মুসলিম হলে গরুর গোশতো বেশী বেশী খায়। এখন দেখা যাচ্ছে, যেসব মুসলিম সন্তানেরা মুর্তি পূজায় দীক্ষা নিচ্ছে হিন্দুদের চেয়ে তারাই বেশী বেশী মুর্তির পূজা করছে। তারই আরেক প্রমাণ, হিন্দুরা মুর্তিপূজাকে মন্দিরে সীমিত রাখলেও মুজিবের মুর্তিপূজারীরা সেটিকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যলয়, রাস্তা-ঘাট ও প্রশাসনিক দফতরে টেনে এনেছে।
যুদ্ধের ময়দানে এবার আদালত ও প্রশাসন
বাংলাদেশের পত্রিকায় প্রকাশ, চট্টগ্রামে আদালতের বিচারকগণ ও প্রশাসনিক কর্মচারিগণ রাস্তায় মুর্তিপূজার পক্ষে মিছিল করছে। তাদের কথা, মুর্তিনির্মাণের যারা বিরোধী তাদেরকে তারা নির্মূল করবে। তাদের সভায় মুর্তিনির্মাণের বিরোধীদের রাষ্ট্রবিরোধী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কথা হলো, রাষ্ট্র এবং মুর্তি কি এক? মুর্তি নির্মাণ নিয়ে দেশবাসী আজ বিভক্ত। ইসলাম থেকে দূরেসরা ভারতসেবীরা ছাড়া সবাই তো মুর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধে। অতএব আদালতের বিচারকগণ ও প্রশাসনিক কর্মচারিগণ কেন একটি পক্ষ নিবেন? তাদেরকে নামানো হয়েছে কি জনগণকে ভয় দেখানোর জন্য? তবে কি তারা আওয়ামী লীগের দলীয় লাঠিয়াল? তারা একটি দলের পক্ষে হলে তাদের থেকে নিরপেক্ষ বিচার ও প্রশাসনিক কাজ আশা করা যাবে কীরূপে? আওয়ামী দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকায় দেশের প্রশাসন ও আদালতকে যে কতটা গভীর ভাবে দলীয়করণ করেছে –এ হলো তার উদাহরন। এর আগে কোন সরকারের আমলেই প্রশাসনের কর্মচারি ও আদালতের বিচারকগণ এভাবে একটি দলের পক্ষে রাস্তায় নামেনি। দেশ আছে খুন,গুম, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি ও সন্ত্রাসে ছেয়ে গেছে। আদালতে এর বিচার নাই। প্রশাসনেরও এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নাই। অথচ তারা রাস্তায় নেমে মুজিবের মুর্তির নিরাপত্তা দিতে। তবে এ থেকে বুঝা যায় অবৈধ হাসিনা সরকারের নিজের বেহাল অবস্থাও। তার নিজের কর্মীবাহিনীর উপর তার আস্থা নেই। ফলে সরকারি আমলা ও বিচারকদের পরিণত করেছে দলীয় ক্যাডারে।
বিশাল পরীক্ষা ঈমানের
বাঙালী মুসলিমের সামনে ঈমানের বিশাল পরীক্ষা। মুর্তি পূজার পক্ষ নেয়ার অর্থ শয়তানের পক্ষ নেয়া। মুর্তি শুধু মুর্তি নয়, মুর্তির মধ্য দিয়ে একটি চেতনা কথা বলে। সেটি পৌত্তলিকতার। প্রতিটি ঈমাদারকে মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ নিয়ে বাঁচতে হয়। চেতনায় মুর্তির স্মরণ জাগলে বিলুপ্ত হয় মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ। আর মহান আল্লাহতায়ালার স্মরণ বিলুপ্ত হওয়ার শাস্তি তো ভয়ানক। সে শাস্তিটি হলো, তার ঘাড়ে তখন শয়তানকে বসিয়ে দেয়া হয়।এবং সে শয়তানের কাজ হয় তাকে জাহান্নামে নেয়া। সেটি হুশিয়ারি শুনানো হয়েছে সুরা জুখরুফের ৩৭ নম্বর আয়াতে। হাদীসে বলা হয়েছে, যে ঘরে মুর্তি থাকে সে ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করে না। এবং মুর্তির ঘরে নামায পড়া যায় না। মুর্তি ঘরকে মন্দির বানিয়ে ফেলে। ফলে মুর্তিনির্মাণ নিতান্তই একটি শয়তানী প্রকল্প। এ প্রকল্প বান্দাকে মহান আল্লাহতায়ালার রহমত থেকে দূরে রাখে। এ প্রকল্পে সময়দান, সমর্থনদান, শ্রমদান ও অর্থদান হারাম। অথচ হাসিনা সরকারের কাজ হয়েছে জনগণকে এ হারাম কাজে সমর্থনদান ও অর্থদানে বাধ্য করা। বাধ্য করছে মুজিবের মুর্তির সামনে ভক্তি জানাতে। বাংলাদেশে মহান নবীজী (সাঃ)কে গালীগালাজ করলে শাস্তি হয় না, অথচ দন্ডনীয় আপরাধ গণ্য হচ্ছে মুজিবের মুর্তিকে অসন্মান করা।
প্রতিটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শেরই নিজস্ব প্রতীক বা আইকন থাকে। ইসলামের সে প্রতীক হলো মসজিদ, মিনার ও মাদ্রাসা। অপরদিকে পৌত্তলিকতার প্রতীক হলো মন্দির, মুর্তি, মঠ, বেদী ও ঢাক-ডোল। কথা হলো সংখ্যাগরিষ্ট একটি মুসলিম দেশে ইসলামের প্রতীকগুলি প্রতিষ্ঠা পাবে সেটিই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে মুসলিম জনগণের রাজস্বের অর্থে প্রতিষ্ঠা দেয়া হচ্ছে পৌত্তলিক সংস্কৃতির প্রতীকগুলিকে। কোন ঈমাদার কি এটি সহ্য করতে পারে? সহ্য করলে কি ঈমান থাকে? একটি তো হারাম। স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতে কি এ হারাম থেকে মুক্তি মিলবে? মুর্তি ও মুর্তিপূজার নির্মূলে্ নবীজী(সাঃ)কে জিহাদ করতে হয়েছে। বহু সাহাবীকে শহীদ হতে হয়েছে। আজও সে পথে চলাই নবীজী (সাঃ)’র আদর্শ। নইলে যা অনিবার্য হয় তা হলো ভয়ানক আযাব। তাছাড়া মুসলিম বাঁচে ইসলামের শরিয়তি নিযামকে বিজয়ী করার জন্য। কিন্তু মুর্তিপূজারী সরকারকে নির্মূল না করে কি ইসলামকে বিজয়ী করা যায়?
আলেমদের আত্মঘাতী অনৈক্য
বাংলাদেশের জনগণের মাঝে মেরুকরণ এখন প্রকট। একদিকে মুর্তিপূজার সমর্থকগণ, অপরদিকে ইসলামের পক্ষের শক্তি। এ দু্টি পক্ষের মাঝে তৃতীয় কোন পক্ষ নাই। মুর্তিপূজার সমর্থকগণ তাদের এজেন্ডা নিয়ে একতাবদ্ধ। তাদের মাঝে কোন বিরোধ নাই। বরং তাদের সাথে যোগ দিয়েছে সরকারি প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিচার বাহিনী ও পুলিশ। অপরদিকে যারা ইসলামের পক্ষের শক্তি রূপে দাবী করে তাদের মধ্যে রয়েছে চরম অনৈক্য ও বিভ্রান্তি। এমনকি ইসলামের মৌল বিষয় নিয়ে। ইসলামে একতা গড়া ফরজ এবং বিভক্তি গড়া হারাম। অআল্লাহর আযাব নামিয়ে আনার জন্য মুর্তিপূজারী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, বিভক্তির পথে পা রাখাই সে জন্য যথেষ্ট –যার হুশিয়ারী এসেছে সুরা আল-ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। অথচ বাংলাদেশের আলেমদের কাছে বিভক্তি গড়ার ন্যায় হারাম কাজটি অতি প্রিয়তর হয়ে গেছে। ইসলামকে বিজয়ী করার চেয়ে নিজের দল বা ফেরকাকে বড় করাই তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে তারা আবিস্কার করে বিভক্তির সূত্র। সেটির একটি উদাহরণ দেয়া যাক। হেফাজতে ইসলামের যুগ্মসচিব এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব হলেন মাওলানা মহম্মদ মামূনুল হক। তিনি বলেন জামায়াতে ইসলামের সাথে হিফাজতে ইসলামের একতা সম্ভব নয়। জামায়াতকে প্রথমে একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়ার জন্য মাফ চাইতে হবে।
প্রশ্ন হলো, মাওলানা মামুনুল হক কি একাত্তরের ইতিহাস জানেন? জানলে নিশ্চয়ই এরূপ কথা বলতেন না। উনার জন্ম একাত্তরের পর, অতএব জানার কথাও নয়। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রভূমি হলো চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রসা। একাত্তরে এ মাদ্রাসার প্রধান ছিলেন প্রখ্যাত মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ সাহেব। তিনি ছিলেন মাওলানা শফি আহমেদ সাহেবের চেয়েও অনেক প্রবীন। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের অন্যতম রাজনৈতিক দল নেজামে ইসলামী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা। এ পার্টি থেকে চৌধুরী মহম্মদ আলী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ইনিই ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র দিয়েছিলেন। এবং এ পার্টির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত মাওলানা আতাহার আলী সাহেব। মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ সাহেব ও মাওলানা আতাহার আলী সাহেব ঊভয়েই একাত্তরে বার বার বলেছেন, পাকিস্তান ভাঙ্গা হারাম। এ নিয়ে যদি কারো সন্দেহ থাকে তবে তিনি যুদ্ধকালীন ৯ মাসে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
পাকিস্তানের পক্ষ নেয়ায় মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ সাহেবকে মুজিব সরকার জেলে নিয়েছিল। জেল থেকে বেরিয়ে মাওলানা আব্দুর রহীম সাহেবের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামকে সাথে নিয়ে তিনি ইসলামিক ডিমোক্রাটিক লীগ (আই.ডি.এল) বানিয়েছিলেন। সাথে আরো কয়েকটি ইসলামী দল ছিল। মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ সাহেব একতার গুরুত্ব বূঝেছিলেন জেলে গিয়ে। পাকিস্তানের পক্ষ নেয়ার জন্য তিনি কি কখনো মাফ চেয়েছিলেন? আই.ডি.এল প্রতিষ্ঠার পর সাংবাদিক সম্মেলনে একাত্তর নিয়ে তিনি অতি সাহসীকতার সাথে ইসলামপন্থিদের কথাগুলি তুলে ধরেছিলেন। কওমী মাদ্রাসার আলেমদের সাথে জামা্য়াতে ইসলামীর সেদিন যে ঐক্য হয়েছিল সেটি বেঁচে থাকলে আওয়ামী লীগ কোনকালেই ক্ষমতায় আসতে পারতো না। ফলে জামায়াত নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলতে হতো না। এবং হেফাজত নেতাদেরও শাপলা চত্ত্বরে লাশ হতে হতো না। এবং শিবির কর্মীদেরও ১৬ই ডিসেম্বর এলে “স্বাধীনতা এনেছি” বলে মিছিল বের করতে হতো না। হাতিকে একা পেলে বাঘের পাল তাকে লাশ বানিয়ে ফেলে। ইসলামপন্থিদের ঐক্য মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করে; এবং অনৈক্য শয়তানকে খুশি করে ও আযাব ডেকে আনে। অনৈক্যের কারণেই বাংলাদেশের ইসলামপন্থিরা আজ আযাবের শিকার।
মাওলানা মুমিনুল হকদের জানা উচিত, শুধু জামা্য়াতে ইসলামী ও নেজামে ইসলামী কেন, অন্য কোন ইসলামী দল, কোন আলেম বা কোন পীর কি পাকিস্তান ভাঙ্গাকে সমর্থন করেছিল? তারা সবা্ই মুসলিম দেশ ভাঙ্গাকে হারাম মনে করতেন। তাদের কাছে মুসলিম রাষ্ট্রের সংহতি ছিল ইসলামের এমন একটি মৌল বিষয় –যাতে কোন আপোষ চলে না। ঘরে সাপ ঢুকলে সাপ তাড়াতে হয়, ঘরে আগুন দেয়া তো বেওকুফি। এতে তো শত্রু খুশি হয়। ইসলাম তাই দেশের দুর্বৃত্ত শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে বলে, কিন্তু হারাম বলে ভূগোল ভাঙ্গাকে। এমন একটি চেতনার কারণেই উসমানিয়া খেলাফতকে তার ৫ শত বছরের ইতিহাসে মুসলিম প্রজাদের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধের মুখে পড়তে হয়নি। তুর্কি, আরব, কুর্দ, আলবেনী ও অন্যান্য বহুভাষী মুসলিমগণ একত্রে বসবাস করেছে। ভাষার নামে বিচ্ছিন্নতা শুরু হয় ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তির উস্কানীতে এবং সেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কালে। পাকিস্তানেও তেমন একটি বিচ্ছন্নতার জন্ম দেয় ভারত। সকল ইসলামী দল ও আলেমগণ ভারতের সে ষড়যন্ত্র বুঝতো। ফলে তাদের কাছে একাত্তরের যুদ্ধ ছিল ভারতের occupational war; অর্থাৎ বাংলাদেশকে পরাধীন করার যুদ্ধ। ইসলামী চেতনাশূন্য যে সেক্যুলারিস্টগণ একাত্তরে ভারতের পক্ষ নিয়েছিল তাদের অধিকাংশই আজ ফ্যাসিস্ট ও ভোটচোর হাসিনার নেতৃত্বে একতাবদ্ধ।
কোথায় দুর্বৃত্তদের ঘৃনার সামর্থ্যে?
বাংলাদেশের আলেমদের অজ্ঞতা শুধু একাত্তর নিয়ে নয়। বিকট সমস্যা হলো, তাদের অনেকের মাঝেই বিলুপ্ত হয়েছে দুর্বৃত্তদের ঘৃনা করার সামর্থ্য। এ এক বিরাট নৈতিক বিকলাঙ্গতা। ঈমানের প্রকাশ শুধু ভাল মানুষকে ভালবাসার মধ্যে নয়, চোর-ডাকাতদের ঘৃণা করার মাঝেও। হাসিনা যে ভোটচোর এবং সে যে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী -তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ চলে? এ্টি তো বাংলাদেশের শিশুরাও জানে। কোন চোর বা ডাকাতকে কি কোন ভদ্র ব্যক্তি মাননীয় বলতে পারে? একাজ তো তার সহযোগী চোরদের। অথচ আলেমদের অনেকে মুর্তির বিরুদ্ধে কথা বল্লেও তাদের মুখে হাসিনা ও তার দলের দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে কোন কথা নাই। বিস্ময়ের বিষয়, তারা ওয়াজের মাহফিলে চোর হাসিনার নামের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লাগায়। অথচ না সে বৈধ প্রধানমন্ত্রী, না সে মাননীয় হওয়ার যোগ্য। কোদালকে কোদালই বলতে হয়, তাকে সোনার টুকরা বলা যায না। আরো বিস্ময়ের বিষয় হলো, হেফাজতে ইসলামের অনেক আলেম এ দুর্বৃত্তকে কওমী জননীও বলে।
ইসলামে মিশন হলো, অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। এবং এরূপ একটি মিশন নিয়ে বাঁচার জন্যই সুরা আল-ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ জাতির খেতাব দেয়া হয়েছে। এ বিশেষ মর্যাদাটি বেশী বেশী মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য নয়। কিন্তু হাসিনার ন্যায় এক অবৈধ ও ভোটচোরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললে কি সে দুর্বৃত্ত ব্যক্তির নির্মূলে উৎসাহ জাগে? বরং এমন চেতনায় তো তার সাথে আপোষকামীতা ও সংহতিতে আগ্রহ জাগে। এমন একটি চেতনারর কারণেই হেফাজতে ইসলামী নেতাদের হাসিনার সাথে একই মঞ্চে দেখা গেছে।
অনীহা নবীজী (সাঃ)র সূন্নতে এবং সামনে ভয়ানক দুর্দিন
আলেমদের আরেক সমস্যা হলো রাজনীতিতে তাদের অনীহা। সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, তারা রাজনীতিতে নেই। রাজনীতি থেকেই নির্ধারিত হয়ে কে বসবে রাষ্ট্রের চালকের সিটে। কথা হলো, রাজনীতিতে না নামলে তারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমত করবেন কি করে? কি করে নির্মূল করবেন দেশের উপর থেকে দুর্রৃত্তদের দখলদারি। কি করে প্রতিষ্ঠা দিবেন শরিয়ত? তারা কি জানেন না যে নবীজী (সাঃ) ছিলেন রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ছিলেন সেনাপ্রধান। নবীজী (সাঃ)’র জীবনে রাজনীতি না থাকলে তিনি রাষ্ট্রনায়ক হলেন কি করে? এবং কি করে্ই বা মুসলিমগণ জন্ম দিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা? শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে কি সভ্যতার জন্ম দেয়া যায়? রাজনীতি তো নবীজী (সাঃ)র শ্রেষ্ঠ সূন্নত। তাই যারা রাজনীতি করেন না তারা অস্বীকার করেন নবীজী (সাঃ)র একটি শ্রেষ্ঠ সূন্নতকে। এটি টুপি-দাড়ির ন্যায় মামূলি সূন্নত নয়। শুধু সূন্নত নয়, ইসলামকে বিজয়ী করার যে রাজনীতি -সেটি তো শ্রেষ্ঠ জিহাদ।
ফলে বাংলাদেশের মুসলিমদের সামনে আজ এক মহাদুর্দিন। একদিকে হাসিনার নৃশংস ফ্যাসিবাদের তান্ডব, অপরদিকে ইসলামপন্থিদের মাঝে গভীর অনৈক্য ও নেতৃত্বের বিকট শূণ্যতা। ইসলাম থেকে দূরে সরানোর সাথে সাথে চলছে সাংস্কৃতিক অঙ্গণে দ্রুত ভারতীয়করণের প্রক্রিয়া। এখন শুধু বাঁকি আছে সিকিমের ন্যায় ভারতের প্রদেশ রূপে ঘোষণা দেয়ার। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনেও মুজিবের মুখে পাকিস্তান ভাঙ্গার স্লোগান ছিল না, বরং প্রতি জলসায় তাঁর মুখে শোনা যেত পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বানি। অথচ একাত্তরে পা রেখেই অর্থাৎ নির্বাচন শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতের কোলে গিয়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার যুদ্ধ শুরু করে দিল। সিকিমের ন্যায় ভারতের প্রদেশ হওয়ার ঘোষণাও যে কোন মুহুর্তে হঠাৎ করে আসতে পারে -সে সম্ভাবনা কি কম? কারণ সিকিমের ন্যায় বাংলাদেশেও কি লেন্দুপ দর্জির সংখ্যা কম?
মাঠে গরম গরম ওয়াজের লোক আছে, কিন্তু নেতৃত্ব দেয়ার সাহসী লোক নাই। নাই একতা। নাই ইতিহাস জ্ঞান। নাই শত্রুর এজেন্ডা নিয়ে সম্যক ধারণা। অপর দিকে মহান আল্লহতায়ালার ভয়ের চেয়ে পুলিশের ভয়ই বেশী। এবং জান্নাতের চেয়ে দুনিয়ার টানটাই অধিক। নবীজী (সাঃ)’র শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন। শাহাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মৃত্যু নাই। তাই শাহাদতের জন্য শুধু দোয়া নয়, তাঁরা মনেপ্রাণে জিহাদের ময়দান খুঁজতেন। নিজ খরচে সেখানে হাজির হতেন।শহীদ না হতে পারলে আফসোস করতেন। অথচ আজ বাংলাদেশীদের ঘরের সামনে জিহাদের ময়দান। কিন্তু সেখানে লোক নাই। শহীদ হওয়া দূরে থাক, ইসলামের বিজয় আনতে জেলে যেতে বা পুলিশের হাতে মার খাওয়ার মত লোকও নাই। যে কোর’আন প্রতি পদে পথ দেখায় সে কোর’আন বুঝারও তেমন আয়োজন নাই। আলেমগণ শেখাচ্ছে এবং গুরুত্ব দিচ্ছে না বুঝে তেলাওয়াতে। এভাবে আড়াল করা হচ্ছে মহান আল্লহতায়ালার হিদায়েত। অথচ মুসলিম তেলাওয়াত করবে তো হিদায়েত লাভের জন্য। হিদায়েত লাভ না হলে স্রেফ তেলাওয়াতে লাভ কি? শুধু কি কিছু ছওয়াব লাভ? জান্নাতলাভের জন্য ছওয়াব নয়, হেদায়েত দরকার। ফরজ তো কোর’আনের আয়াতগুলির উপর তাদাব্বুর, তায়াক্কুল ও তাফাহহুম। একমাত্র কোর’আনই এ বিপদের মুখে আমাদের পথ দেখাতে পারে। এবং নামিয়ে আনতে পারে মহান আল্লহতায়ালার সাহায্য। তিনি ছাড়া অতীতেও কোন সাহায্যকারি ছিল না, আজও নাই। ১৪/১২/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018