বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাত ও সম্ভাবনা
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on October 26, 2020
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
কেন এতো সংঘাত?
বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দান জুড়ে চলছে গভীরতর বিতন্ডা ও সংঘাত। সংঘাত নিছক সভা-সমাবেশ, লেখা-লেখি, গালিগালাজ ও রাজনৈতিক দলাদলির মধ্যে সীমিত নয়, ঠেলে দিচ্ছে গুম, সন্ত্রাস ও হত্যাকান্ডের দিকেও। দেশের ইসলামের বিপক্ষ শক্তটি এ সংঘাতকে আরো তীব্রতর ও রক্তাত্ব করতে চায়। ইসলামের পক্ষের শক্তিকে জঙ্গি আখ্যায়ীত করে তাদেরকে এ বিপক্ষ শক্তিটি নির্মূলেরও ঘোষণা দেয়। তারা দাবী তুলেছে, একাত্তরের ন্যায় আরেকটি যুদ্ধের। অভিন্ন দেশ, ভাষা, খাদ্য-পানীয় ও জলবায়ুর দেশ বাংলাদেশ। জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশী মুসলমান। অথচ খোলাফায়ে রাশেদার আমলে মুসলিমগণ মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগও ছিল না। নানা ধর্ম, নানা বর্ণ ও নানা ভাষার ভিন্নতায় ভরপুর ভারতসহ বিশ্বের বহুদেশ। অথচ এ দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনন্য। মুষ্টিমেয় উপজাতীয়দের বাদ দিলে দেশটিতে সে ভিন্নতা অতি সামান্যই। প্রশ্ন হল, এতটা অভিন্নতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে কেন এ বিরামহীন সংঘাত? কারণ একটিই। ভাষা, বর্ণ ও পোষাকপরিচ্ছদে এক হলেও এক নয় তাদের চেতনা, জীবনবোধ ও দর্শন। আর সকল বিতর্ক ও সংঘাতের শুরুতো এ ভিন্ন ভিন্ন জীবনবোধ বা দর্শন থেকেই। রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ হয়েছে সে বিভক্তির উপাদানগুলোকে আরো তীব্রতর করা। ফলে বাড়ছে সংঘাতও।
নবীপাক (সাঃ)এর যুগে আরবদের ভাষা, বর্ণ ও পোষাক-পরিচ্ছদে কোন পার্থক্য ছিল না। অথচ সেখানে রক্তক্ষয়ী প্রচন্ড যুদ্ধ হয়েছে বার বার। সে যুদ্ধেরও কারণ ছিল দুটি ভিন্ন চেতনা ও দর্শন। একটি হল ইসলাম, অপরটি জাহেলিয়াত তথা অজ্ঞতা। একদল চেয়েছিল আল্লাহর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতার নির্মাণ। আরেক দল চেয়েছিল আদিম অজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত আরবের সমাজ ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ। কোন পক্ষই নিজ নিজ অভিষ্ট লক্ষ থেকে এক পা পিছু হটতে রাজী ছিল না। কোন সমাজে যখন এমন দুটি আপোষহীন প্রতিপক্ষ জন্ম নেয়, সে সমাজে সংঘাত তো অনিবার্য। তখন ভাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এবং পিতা পুত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। তাই এ সংঘাত নিছক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা বা নামায-রোযার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সীমাবদ্ধ ছিল না নিছক মুর্তি গড়া বা ভাঙ্গার মধ্যেও। বরং সে সংঘাত প্রবেশ করেছিল সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রতিটি অঙ্গণে। সে সংঘাতে সেদিন বিজয়ী হয়েছিল ইসলামের পক্ষের শক্তি। তাদের সে বিজয়ে আরব থেকে যে শুধু মুর্তি ও মুর্তিপুজা অপসারীত হয়েছিল তাই নয়, অপসারিত হয়েছিল মদ্যপান, উলঙ্গতা, ব্যাভিচার, সূদ, সন্ত্রাস, অপসংস্কৃতি, অপ-সাহিত্যসহ সকল প্রকার মিথ্যাচার ও দুর্বৃত্তি। ইসলামের সে বিজয়ে ন্যায়, সুবিচার ও পবিত্রতা নেমে এসেছিল শুধু আরব ভূমিতেই নয়; ইরান, মিশর, তুরস্ক, আফগানিস্তান, মধ্য-এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, স্পেনসহ বিশ্বের বিশাল ভূ-ভাগে। ইসলামের বিজয়ে সেদিন মহাকল্যাণ ঘটেছিল মানব জাতির।
কেন এতো পরাজয়?
বাংলাদেশের মানুষের বড় দুর্ভাগ্য যে দেশটিতে ইসলামের একটি পরিপূর্ণ বিজয় কোন কালেই ঘটেনি। দেশটির শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম হলেও দেশটির রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বুদ্ধিবৃত্তিতে ইসলাম কোন কালেই বিজয়ী শক্তি রূপে আবির্ভূত হয়নি। আসেনি বুদ্ধিবৃত্তিক আমূল বিপ্লব। তবে এর কারণও ছিল। দেশটি বিজিত হয়েছিল তুর্কি মুসলিমদের হাতে। তাদের নিজেদের জীবনেও ইসলামের বহু মৌলিক বিষয় অজানা ছিল। তাদের অনেকেই মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছিল আব্বাসীয় খলিফাদের কৃতদাস রূপে। তাদের বাহাদুরী ছিল শুধু রণাঙ্গণে। ফলে তুর্কিদের হাতে বিস্তুর সাম্রাজ্য বিস্তার হলেও, ইসলামী জ্ঞানের বিস্তার বা উন্নয়ন তেমন ঘটেনি। শাসক মুর্খ বা জ্ঞানবিমুখ হওয়ায় বাংলাদেশে জ্ঞানার্জনের ন্যায় ফরয ইবাদতটি যথার্থ ভাবে পালিত হয়নি। গুরুত্বও পায়নি। ফলে ইসলামের বহু মৌলিক বিষয়ই বাংলাদেশীদের অজানা থেকে গেছে। এবং সেটি শত শত বছর ধরে।
মুসলিম জনসংখা বিচারে আরব, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পরই বাঙালী মুসলিমের স্থান। দেশটিতে ইসলামের ইতিহাস ৮ শত বছরের। অথচ মাত্র সত্তর বছর আগেও বাংলায় ইসলামি বই বলতে বুঝানো হত মীর মোশররফের লেখা “বিষাদ সিন্ধু”, বেহশতি জেওয়ার, নেয়ামল কোর’আন, “আনোয়ারা” উপন্যাস এবং কিছু প্রাচীন পুঁথি সাহিত্য। কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদ হয়েছে গিরিশ চন্দ্র নামক একজন হিন্দুর হাতে। সেটিও উনবিংশ শতাব্দীতে। এটি কি কম ব্যর্থতা? দেহ বাঁচাতে খাদ্য-পানীয় অপরিহার্য; নইলে মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠার জন্য চাই কোর’আনের জ্ঞান। নইলে অনিবার্য হয় ঈমানের মৃত্যু। এজন্যই হযরত আদম (আঃ)কে সৃষ্টির সাথে সাথে তাঁকে জ্ঞানদান করা হয়েছে। এবং সেটি দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। সে জ্ঞানের বলেই ফেরেশতাদের সাথে প্রতিযোগিতায় হযরত আদম (আঃ) শ্রেষ্ঠতর ও তাদের সেজদা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়েছিলেন। একই কারণে মুসলিমদের উপর সর্বপ্রথম নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ফরজ না করে জ্ঞানার্জনকে ফরজ করা হয়েছে। নামায-রোযা ফরজ হয়েছে নবীজী (সাঃ)র নবুয়ত লাভের ১১ বছর পর-সেটি মিরাজ থেকে ফেরার পর। অপরদিকে জাহেল ব্যক্তি পশুর চেয়েও নিকৃষ্টে জীবে পরিণত হয়।
অথচ জ্ঞানার্জনের সে ফরজ আদায়ে প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগানোর সামর্থ্য বাংলা ভাষার ছিল না। সে কাজ “বিষাদ সিন্ধু”, বেহশতি জেওয়ার, নেয়ামুল কোর’আন এবং কিছু পুঁথি সাহিত্য দিয়ে সম্ভব ছিল না। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশের নানা ভাষী মুসলিমগণ তাদের ঈমানে পুষ্টি জোগাতো উর্দু ও ফারসি ভাষা থেকে। তখন এমন কোন শিক্ষিত বাঙালী মুসলিম ছিল না যে উর্দু বুঝতো না। কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের পরিবারের ন্যায় বহু হিন্দু পরিবার ফার্সি ভাষার চর্চা হত। রবীন্দ্র নাথ নিজে ফার্সি কবি হাফিজের ভক্ত ছিলেন। উর্দু ভাষায় সবচেয়ে বেশী বই ও পত্রিকা ছাপা হতো বাংলার রাজধানী কলকাতা থেকে, দিল্লি বা লাহোর থেকে নয়। উর্দু ভাষার সবচেয়ে শক্তিশালী কবি হলো পাঞ্জাবী-ভাষী আল্লামা মহম্মদ ইকবাল। আর সবচেয়ে শক্তিশালী গদ্য লেখক হলেন বাঙালী পিতার সন্তান এবং কলকাতাবাসী মাওলানা আবুল কালাম আযাদ।
বাঙালী হিন্দুর রেনাসাঁ ও বাঙালী মুসলিমের রেনাসাঁ
উপমহাদেশের বুকে প্রথম রেনেসাঁ বা জাগরণ আসে হিন্দু বাঙালীদের মাঝে। সেটি ছিল বাংলা সাহিত্যে হিন্দু লেখকদের অবদানের কারণে। এরপর আসে মুসলিম রেনেসাঁ। তবে সে মুসলিম জাগরণের পিছনে “বিষাদ সিন্ধু”, বেহশতি জেওয়ার, বা পুঁথি সাহিত্য ছিল না। হিন্দুদেরও রচিত সাহিত্য ছিল না। বরং হিন্দুদের সাহিত্য ছিল মুসলিম বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। বাঙালী মুসলিম রেনেসাঁর মূলে ছিল উর্দু সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, শরৎচন্দ্রের সাহিত্যের চেয়ে ইকবাল, গালিব, হালী, দাগ, মাওলানা মহম্মদ আলী জওহার, শিবলী নোমানী, হাসরাত মোহানী, মাওলানা আবুল কালাম আযাদের লেখনী বাঙালী মুসলিমদের বেশী নাড়া দিত। তাদের কবিতা বাঙালী উলামাদের ওয়াজে ধ্বনিত হতো। বাঙালী হিন্দুদের ন্যায় তাদের লেখনীর পরিসর কোন প্রাদেশিক সীমানা দিয়ে সীমিত ছিল না। তারা লিখতেন সমগ্র মুসলিম উম্মহর কল্যাণ নিয়ে। তাদের সে লেখনীর ফলে ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে প্রবল ভাবে গড়ে উঠে প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্বের চেতনা। সে বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লবের ফলে নানা প্রদেশের নানা ভাষাভাষী মুসলিমদের নিয়ে মুসলিম লীগের পাকিস্তান প্রকল্প সহজেই জনপ্রিয়তা পায়। বস্তুতঃ মুসলিম লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই লড়েছিলেন এসব কলম সৈনিকেরা। তাদের সে জনপ্রিয় সাহিত্য ঢাকার নবাব পরিবারসহ বাংলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারগুলোতেও পৌঁছতো। পৌঁছেছিল বাংলার শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবী মুসলিম মহলেও। ফলে ঢাকার বুকে নবাব সলিমুল্লাহ নেতৃত্বে গড়ে উঠে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠন ঐতিহাসিক মুসলিম লীগ।
বাঙালী মুসলিমের সে রেনাসাঁর কারণেই ব্রিটিশ আমলে অবিভক্ত বাঙলার প্রধানমন্ত্রী কোন হিন্দু হতে পারিনি। হয়েছেন শেরে বাংলা ফজলুল হক, হাসান শহীদ সহরোয়ার্দি এবং খাজা নাযিমুদ্দীন। তখন বাংলা পরিণত হয় পাকিস্তান আন্দোলনের মূল দুর্গে। মুসলিম লীগের শক্তি উপমহাদেশের অন্য কোন প্রদেশে এতটা ছিল না। তাই যুক্তি সঙ্গত ভাবেই বলা যায়, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল বাঙালী মুসলিমদের হাতে। কিন্তু সেটি যেমন ভারতীয় হিন্দুদের ভাল লাগেনি, তেমনি ভাল লাগেনি বাঙালী সেক্যুলারিষ্টদের। তাই দেশটি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র শুরু হয় ১৯৪৭ সাল থেকেই। শেখ মুজিব সে কথাটিই বলেছেন পাকিস্তান ফিরে এসে ১৯৭২ সালে ১০ই জানুয়ারীর সহরোয়ার্দি ময়দানের জনসভায় –যা এ নিবন্ধের লেখক নিজ কানে শুনেছেন। মুজিব সেদিন অতি গর্বভরে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের শুরু একাত্তর থেকে নয়, শুরুটি ১৯৪৭ সাল থেকে।” এর অর্থ দাঁড়ায়, মুজিবের সমগ্র রাজনীতি ছিল পাকিস্তান খন্ডিত করার ষড়যন্ত্র। ভারত যেহেতু সেটিই চাইতো, তাই ভারতের সাথে যৌথ ভাবে কাজ করা মুজিবের জন্য সহজ হয়ে যায়। সে লক্ষেই যৌথ প্রজেক্ট ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র। মুজিবের সে ভারতসেবী রাজনীতিকে অব্যাহত রাখাই হলো হাসিনার নীতি।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাঙালী মুসলিমদের প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাকে যারা প্রচন্ড গুরুত্ব দিতেন তারা সেদিন নতুন দেশটির রাষ্ট্র ভাষা রূপে উর্দুকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছিলেন। কায়েদে আযম, খাজা নাযিম উদ্দিন, নূরুল আমিনের ন্যায় নেতাগণ মোল্লা বা মৌলবী ছিলেন না। কিন্তু তারা মুসলিমদের ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠার গুরুত্ব বুঝতেন। বুঝতেন সে কাজে কোর’আনী জ্ঞানের গুরুত্ব। তাতে ব্যর্থ হলে পাকিস্তান যে অখন্ড থাকবে না -সেটিও তারা বুঝতেন। কারণ, পাকিস্তান কোন ভাষা বা বর্ণ ভিত্তিক রাষ্ট্র রূপে প্রতিষ্ঠা পায়নি। দেশটি প্রতিষ্ঠার মূলে ছিল প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্বের চেতনা। এ চেতনা পুষ্টি পায় কোর’আন ও হাদীস থেকে। ইসলামী চেতনা নির্মাণের সে কাজটি তাই ক্ষেত-খামার, পার্টি দফতর বা অফিস-আদালতে হয় না, হয় কোর’আনী জ্ঞান-সমৃদ্ধ ভাষার মাধ্যমে। সে প্রয়োজন মিটাতেই প্রয়োজন দেখা দেয় উর্দু ভাষার। কারণ, আরবী ভাষার পর উর্দুই হলো কোর’আনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ সবচেয়ে উন্নত ভাষা। উর্দু ভাষাটি কোন একক প্রদেশের ভাষা ছিল না, এ ভাষার সমৃদ্ধিতে অবদান ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের সকল প্রদেশের মুসলিমদের। অবদান ছিল বাঙালী মুসলিমদেরও। বাংলাদেশ সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত বাংলার সকল মাদ্রাসা শিক্ষার মিডিয়াম ছিল উর্দু। মিডিয়াম ছিল সমগ্র ভারতবর্ষের সকল মাদ্রাসাতেও। পাকিস্তানের পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পাঠান ও বেলুচ জনগণ এ বিষয়টি অনুধাবন করেই নিজেদের মাতৃভাষার বদলে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা রূপে গ্রহণ করতে দ্বিধা করেনি। তাদের সে সুবুদ্ধির কারণে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশ নিয়ে খন্ডিত পাকিস্তান আজও টিকে আছে। নইলে সেখানেও বাংলাদেশের ন্যায় ভারতের প্রতি নতজানু চারটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হতো। এক পারমানবিক শক্তি রূপে পাকিস্তানের উত্থান কি তখন সম্ভব হতো?
কিন্তু যাদের কাছে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার চেয়ে অধীক গুরুত্ব পায় বাঙালী রূপে বেড়ে উঠাটি, তাদের কাছে গুরুত্ব হারায় ঈমানের পুষ্টির বিষয়টি। বরং ক্ষমতালোভী সেক্যুলারিস্ট বাঙালীদের রাজনীতিতে বাঙালী মুসলিমদের প্যান-ইসলামিক চেতনাটি গণ্য হয় প্রবল বাধা রূপে। সে চেতনার বিলুপ্তিতে প্রয়োজন পড়ে কোর’আনী জ্ঞানের বিলুপ্ত। ফলে ক্ষমতা হাতে পাওয়ার সাথে সাথে সেক্যুলারিস্টদের এজেন্ডা হয়, কোর’আনের জ্ঞানচর্চা সংকুচিত বা নিয়ন্ত্রিত করা। স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে বাদ পড়ে ইসলাম। ইসলাম থেকে দূরে সরার কারণে নিজেদের উপার্জন বাড়াতে ছাত্রগণ ইংরেজীসহ বিশ্বের যে কোন ভাষা শিখতে তারা রাজী, কিন্তু রাজী নয় আরবী বা উর্দুর ন্যায় কোর’আনী জ্ঞান-সমৃদ্ধ কোন ভাষা শিখতে। প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের থেকে বাঙালী মুসলিমের এখানেই মূল পার্থক্য। মিশর, সুদান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আলজিরিয়া, মালি, মরক্কোসহ প্রায় ২০টি দেশের মুসলিম জনগণ স্রেফ কোর’আনী জ্ঞানের সাথে সরাসরি সংযোগ বাড়াতে নিজেদের মাতৃভাষাকে কবরে পাঠিয়ে আরবী ভাষাকে গ্রহণ করেছে। তারা শুধু জাহেলী যুগের পুতুল পুজাই ছাড়েনি, ভাষা পুজাও ছেড়েছে। এক্ষেত্রে বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতাটি বিশাল। ভাষা পুজায় তারা বাঙালী হিন্দুদেরও হার মানিয়েছে। সেটি বুঝা যায় কলকাতায় হিন্দি ভাষার জোয়ার দেখে। অথচ বাঙালী মুসলিমগণ না পেরেছে বাংলা ভাষায় ইসলামী জ্ঞানের সমৃদ্ধি বাড়াতে, না পেরেছে অন্য কোন সমৃদ্ধ ভাষার সাথে সংযোগ গড়তে। ফলে বাড়ছে ইসলাম নিয়ে অজ্ঞতা। এজন্যই নবীজী (সাঃ)র ইসলাম –যাতে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, জিহাদ, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, তা তাদের কাছে সন্ত্রাস মনে হয়।
বাঙালী মুসলিমদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে ভাতে-মাছে বেঁচে থাকাটি, ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠা নয়। এরই ফলে তাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে ইসলাম বিরোধীদের বর্বর শাসন। দেশ পরিণত হয়েছে ভারতের ন্যায় শত্রু দেশের গোলাম রাজ্যে। সে গোলামীর নজির হলো, ঘরে কোর’আনের তাফসির ও হাদীসের বই রাখা গণ্য হয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রূপে। এবং কোর’আনের বিখ্যাত তাফসিরকারীকে হয় জেলে পচতে হয় অথবা দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। বাংলার বুকে ইসলামের শত্রুপক্ষের প্রথম ও সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিজয়টি আসে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সে বিজয়ের জের ধরেই তাদের দ্বিতীয় বিজয়টি আসে ১৯৭১’য়ে। সেটি ভারতের সামরিক বাহিনীর হাতে অধিকৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে। লক্ষ্যণীয় হলো, এ দুটি বিজয় নিয়ে বাঙালী কাপালিকদের ন্যায় ভারতীয় কাফের শক্তিও প্রচন্ড উল্লসিত। তা নিয়ে ভারতে উৎসব হয় প্রতি বছর। সেটি বুঝা যায় প্রতি বছর ২১শে ফেব্রেয়ারি ও ১৬ই ডিসেম্বরে ভারতীয় পত্র-পত্রিকার দিকে নজর দিলে। বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের আজকের পরাজিত ও নির্যাতিত অবস্থার শুরু বস্তুতঃ ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে সে ঐতিহাসিক পরাজয় থেকেই।
বাঙালী মুসলিমদের আরেক দুর্ভাগ্য, তারা একটি উপনিবেশিক কাফের শক্তির গোলামী করেছে ১৯০ বছর ধরে। সমগ্র মুসলিম জাতির ইতিহাসে এমন ঘটনা দ্বিতীয়টি নেই। নিজদেশে সংখাগরিষ্ঠ অন্য কোন মুসলিম জনগোষ্ঠী এত দীর্ঘকাল ধরে কোন কাফের শক্তির গোলামী করেনি। বাঙ্গালী মুসলমানদের সে গোলামী শুরু হয়েছিল ১৭৫৭ সালে। উত্তর-ভারত, মহিশুর ও পাঞ্জাবের মুসলিমদের জীবনে সেটি শুরু হয়েছিল এর প্রায় একশত বছর পর। সিরিয়া, ইরাক ও ফিলিস্তিনে শুরু হয়েছিল ১৯১৭ সালে। মুসলিম বিশ্বে উপনেবিশিক কাফের শাসনের শুরুটি মূলতঃ এ বাংলা থেকেই। মুসলিম উম্মাহর ভিতরে ঢুকতে শত্রুগণ সবসময়ই দুর্বল স্থানটি খুঁজেছে। আর সেদিন সবচেয়ে দুর্বল গণ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। সম্পদশালী বাংলা জয়ের ফলেই শত্রুর পক্ষে দিল্লি-বিজয় সহজ হয়ে যায়। অখন্ড পাকিস্তানেও পূর্ব পাকিস্তান গণ্য হয় সবচেয়ে দুর্বল ক্ষেত্র রূপে। ফলে ভারত সহজেই এ মুসলিম ভূমিকে অধিনত করে নেয়।
ফরজ হলো জিহাদের প্রস্তুতি
মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু এ নয়, সে শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত আদায় করবে এবং মসজিদ পূর্ণ করবে। তাকে পূর্ণ করতে হয় জ্বিহাদের ময়দানও। আর অতি গুরুত্বপূর্ণ জ্বিহাদ হলো, মুসলিম ভূমিতে কাফেরী হামলার প্রতিরোধ। এ লক্ষ্যে শক্তিসঞ্চয় করা ও রণাঙ্গণে নামা প্রতি মুসলিমের উপর ফরয। পবিত্র কোরআনে সে নির্দেশটি এসেছে এভাবেঃ “ওয়াআয়িদ্দুলাহুম মা’স্তাতা’তুম মিন কুউয়া” অর্থঃ “এবং তাদের (শত্রুর) বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সম্ভাব্য সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুত হও।” –(সুরা আনফাল আয়াত ৬০)। পবিত্র কোর’আনের উপরুক্ত আয়াতে যে বিষয়টির উপর জোর দেয়া হয়েছে তা হলো, যেখানেই শত্রুর হামলার সামান্যতম সম্ভাবনা আছে সেখানেই সে হামলার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের প্রস্তুতিও থাকতে হবে। তাই সামরিক ভাবে দুর্বল থাকা হারাম। সেটি হলে সে অধিকৃত ভূমিতে ঈমান ও সৎকর্ম নিয়ে বাঁচাটি কঠিন হয়। এরই উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। উপরুক্ত আয়াতের শেষ ভাগে আরো বলা হয়েছে, “তুরহিবুনাবিহি আদুউ’আল্লাহ ও আদুউ’কুম”। অর্থঃ “সে প্রস্তুতি দিয়ে সন্ত্রস্ত্র করো আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের নিজেদের শত্রুকে”। তাই শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কাজটি শুধু বেতনভোগী সেপাইয়ের নয়। সে দায়ভার প্রতিটি মুসলিমের। তাই শত্রুর হামলার মুখে অপ্রস্তুত থাকায় গুরুতর অবাধ্যতা হয় মহান আল্লাহতায়ালার উপরুক্ত নির্দেশের। এমন অবাধ্যতা শুধু পরাজয় নয়, ভয়ানক আযাবও ডেকে আনে। মহান আল্লাহতায়ালা সে আযাবের বিবরণ শুনিয়েছেন ইহুদী জাতির ইতিহাস থেকে। ইহুদীদের অবাধ্যতা তাদের অপমান ও বিপর্যয় বাড়িয়েছে দেশে দেশে। তাই নবীজী (সাঃ)র আমলে জ্বিহাদে ময়দানে নামেননি এমন কোন সাহাবী খুঁজে পাওয়া যাবে না। নবীজী (সাঃ) স্বয়ং নেমেছেন এবং বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আফগানিস্তানে ও ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মোজাহিদদের বিরামহীন প্রবল প্রতিরোধ যুদ্ধের মুল দার্শনিক ভিত্তি তো এটিই।
কিন্তু মার্কিনীরা ও তাদের সেক্যুলার মিত্ররা মুসলিমদেরকে সে কোরআনী দর্শন ও নির্দেশ থেকে দূরে হটাতে চায়। তারা চায়, মুসলিমগণ বেড়ে উঠুক হৃদয়ে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ধারণা ধারণ না করেই। অতীতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশেরাও তেমন একটি স্ট্রাটেজীর পরিচর্যা দিয়েছে তাদের অধিকৃত মুসলিম ভূমিতে। জ্বিহাদের কোর’আনী নির্দেশ ভূলিয়ে দিতে তারা গোলাম আহম্মদ কাদিয়ানীর ন্যায় এক ভন্ড নবীর জন্ম দিয়েছিল। জিহাদের ধর্মীয় বৈধতা নেই -সে কথাটি তারা সে ভন্ড নবীর মুখ থেকে শুনিয়েছিল। ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার দায়ভার নবাব সিরাজ-উদ্দৌলার একার ছিল না। তাই পরাজয়ের দায়ভার শুধু মীর জাফর ও তার সহযোগীদের ঘাড়ে চাপালে সুবিচার হয়না। সেদিন মুসলিম নাগরিকগণই বা কোন দায়িত্বটি পালন করেছে? মীর জাফর তো প্রতিদেশেই থাকে। আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ায় এরাই দখলদার কাফের বাহিনীর সাথে সহযোগিতা করছে। কিন্তু দেশ দুটির ধর্মপ্রাণ মানুষ কি সেটি মেনে নিয়েছে? তারা তো নেমেছে প্রতিরোধ যুদ্ধে। এরূপ জ্বিহাদী মুসলিমগণই তো আফগানিস্তানে পরাজিত করেছিল এককালের বিশ্বশক্তি রাশিয়াকে। এবং দুই বার পরাজিত করেছে হানাদার ব্রিটিশদের। কিন্তু ১৭৫৭ সালে বাংলাদেশে সেটি হয়নি। সিংহকে বছরের পর বছর চিড়িয়াখানায় রাখার পর ছেড়ে দিলে স্বাধীন শিকার ধরারও যোগ্যতা হারায়। রুচী লোপ পায় স্বাধীন জীবনেরও। দরজা খুলে দিলেও তখন সে ঘর থেকে বের হয় না। তেমন অবস্থা দীর্ঘকাল গোলামী জীবনে অভ্যস্থ্ একটি জাতিরও। তখন বেড়ে উঠে ভিখারী-সুলভ মানসিকতা। সত্তরের দশকে বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক ভিক্ষার ঝুলির খেতাব পেয়েছিল সেটির কারণ নিছক দুর্ভিক্ষ ছিল না, ছিল গোলামী মানসিকতাও। গোলামের চেতনায় প্রতিরোধের সাহস থাকে না। সে গোলামী মানসিকতার কারণেই ভারত ও ভারতসেবী দাসেরা পেয়েছিল অবাধ লুন্ঠনের সুযোগ। উপনেবেশিক শাসনের এটিই বড় কুফল। বিদেশী অধীনতা থেকে মূক্তিপ্রাপ্ত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি এখনও তাই সাহায্য-নির্ভর তথা পর-নির্ভর। ১৯০ বছরের গোলামীর কারণে বাংলাদেশে সে পর-নির্ভর অবস্থা তীব্রতর হয়েছে। সেটি শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নয় -আদর্শিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষেত্রেও। এরূপ এক গোলামী অবস্থার কারণেই দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দিলেই রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা ধর্ণা দেয় বিদেশী দূতাবাসে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া কেয়ার টেকার সরকারটি ছিল মূলতঃ তেমন একটি মানসিকতার ফসল। অআজও সেটিই বেঁচে আছে। কোন স্বাধীন দেশে কি এটি সম্ভব? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স বা জার্মানী কি একটি দিনের জন্যও এমন বিদেশী হস্তক্ষেপ মেনে নিবে?
অধীনতা ইসলামী শত্রুপক্ষের
বাংলাদেশের বহু বিষয় নিয়েই বহু বিতর্ক রয়েছে। তবে যা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই তা হল, দেশটিতে প্রবল ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির বিজয়। তাদের দখলে গেছে দেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিসহ প্রশাসন, আইন-আদালত, সংস্কৃতি, সেনাবাহিনী ও অর্থনীতির ময়দানও। মুসলমানদের জন্য এটি শুধু রাজনৈতিক পরাজয় নয়, আদর্শিক ও চেতনাগত বিপর্যয়ও। ইসলামের বিপক্ষ শক্তিটির দীর্ঘকালব্যাপী বিজয়ের ফলে দেশটিতে ব্যাভিচার যেমন বৈধ কর্ম, তেমনি বৈধ হল সূদ-ঘূষ, মদ্যপান এবং সিনেমা, নাটক ও নাচের নামে উলঙ্গতা ও অশ্লিলতা। ইসলাম পরিণত হয়েছে একটি পরাজিত জীবন-দর্শনে। ইসলাম অতিশয় জড়সড় হয়ে টিকে আছে মসজিদে। মূর্তি-নির্মাণের ন্যায় হারাম কাজও গণ্য হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মরূপে। সে হারাম কর্মটি বাঙালী মুসলমানের সাংস্কৃতিক কর্মরূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ঢাকা বিমান-বন্দরের সামনে প্রধান সড়কের উপর লালন শাহের মুর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে। সেটি অপসারিত হয়েছে। কিন্তু সে হারাম কাজটির সমর্থণে কলম ধরেছে দেশের সেকুলার বুদ্ধিজীবীরা। মুসলিম নামধারি অনেকে মুর্তি-নির্মান ও মুর্তি-স্থাপনের পক্ষে রাজপথে মিছিলেও নেমেছে। অনেকে এটিকে ইসলাম-সম্মত করারও চেষ্টা করেছে। অথচ তাদের এ বোধটুকুও নেই, মুর্তি-নির্মান ধর্মীয় বৈধতা পেলে সবচেয়ে বেশী মুর্তি নির্মিত হত মক্কা-মদিনায়। কারণ মুসলিম ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষদের সিংহভাগ জন্ম নিয়েছে তো সেখানে। ইসলামে মুর্তি নির্মান হারাম। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে নবীজী(সাঃ)র হাদীসঃ “বিচারের দিন ঐ সব লোকেরা সর্বাপেক্ষা তিরস্কারের পাত্র হবে যারা আল্লাহর সৃষ্টির অনুসরণে জীবজন্তু প্রস্তুত করবে তথা মুর্তি গড়বে।” -সহীহ আল-বোখারী। ফলে মূর্তিগড়া ইসলাম সম্মত হয় কি করে? মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দরতম সভ্যতর জন্ম দিয়েছে ইসলাম। কিন্তু কোথাও কি নির্মিত হয়েছে মুর্তি? ভারতবর্ষে দীর্ঘ ৮ শত বছর মুসলিম শাসনে বহু মিনার, বহু স্মৃতী সৌধ নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে তাজমহল। কিন্তু কোন মুর্তিও কি মুসলমানদের হাতে নির্মিত হয়েছে? মুর্তি নির্মিত হয়েছে কি উমাইয়া ও আব্বাসী আমলে?
রোগ ঈমানহীনতার
দেহে ব্যাধী বাড়লে জ্বরও বাড়ে। তখন ওজন কমে, ক্ষুধাও কমে যায়। এগুলো দৈহিক অসুস্থ্যতার লক্ষণ। তেমনটি ঘটে চেতনা-রাজ্যে বা ঈমানে রোগ ধরলে। ব্যক্তির রোগাগ্রস্ত চেতনা বা ঈমানহীনতার লক্ষণ হলো, সে শুধু সূদ-ঘুষই খায় না বা শুধু ব্যাভিচারিতেই নামে নামে না, বরং মুর্তি গড়ে বা সেটির স্থাপনেও আগ্রহ দেখায়। হ্রাস পায় বা পুরাপুরি বিলুপ্ত হয় কোর’আনী জ্ঞানার্জনের আগ্রহ। একটি রাষ্ট্রে কতজন বেঈমান মানুষের বসবাস সেটির পরিমাপটি যেমন সে দেশের সুদী ব্যাংক, পতিতাপল্লি, নৈশ ক্লাব, মদের দোকান ও কোর’আনী জ্ঞানে অজ্ঞ মানুষের সংখ্যা থেকে ধরা পড়ে, তেমনি ধরা পড়ে রাস্তা-ঘাটে কতটা মুর্তি নির্মিত হল সেটি দেখেও। ইরানের বাদশাহ রেজা শাহের শাসনামলে বহু মুর্তি গড়া হয়েছিল। তুরস্কে মুর্তি গড়া হয়েছে মোস্তাফা কামাল পাশা ও তার অনুসারিদের শাসনামলে। জামাল আব্দুন নাসেরের শাসনামালে মুর্তি নির্মিত হয়েছে মিশরে। যাদের হাতে এটি ঘটেছে তাদের সবাই ছিল ইসলামের বিপক্ষ শক্তি। আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতাই ছিল তাদের রাজনীতি। এভাবে আল্লাহর অবাধ্যতা যেখানেই বিজয়ী হয়েছে, সেখানে মুর্তি-গড়ারও রেওয়াজ বেড়েছে। কথা হল, এসব পথভ্রষ্ট-পাপীদের পাপকর্মকে মুসলিমগণ কেন বৈধতা দিবে? অথচ বাংলাদেশে মুর্তিগড়া জায়েজ করতে গিয়ে কেউ কেউ তাদের সে নজিরও হাজির করেছে। বাংলাদেশে মুসলিম নামধারি সেকুলারদের চেতনা রাজ্যে আল্লাহর অবাধ্যতা যে কতটা প্রকট সেটি বুঝা যায় মুর্তি নির্মাণের পক্ষে তাদের এরূপ বক্তব্য ও বিপুল আয়োজন দেখে। দেশ যে কত দ্রুততার সাথে ভ্রষ্টতার পথে এগুচ্ছে -এসবই হলো তার প্রমাণ।
বিদ্রোহ মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে
ইসলামের মূল কথা, আল্লাহ ও তার বিধানের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। তারই শাশ্বত মডেল হলেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। আল্লাহর পক্ষ থেকে যখনই কোন হুকুম এসেছে তখনই তিনি সে হুকুমের প্রতি “লাব্বায়েক” তথা “আমি হাজির” বলেছেন। এমনকি নিজ সন্তানের কোরবানীতেও। মুসলিম শব্দটিও তাঁর দেওয়া, এর অর্থ মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ। মুসলিম জীবনে সে আনুগত্যের প্রতিফলন ঘটাতে হয় শুধু নামায-রোযায় নয়, বরং প্রতিটি আচরণ, কাজকর্ম ও সংস্কৃতিতে। এক্ষেত্রে সামান্যতম অবাধ্যততাই হল পথভ্রষ্টতা বা কুফরি। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমানদের জীবনে সে আনুগত্য কতটুকু? পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছেঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যখন কোন বিষয়ে হুকুম এসে যায় তখন কোন পুরুষ বা মহিলা ঈমানদারের কোন অধিকারই থাকে না যে সে হুকুমের অবাধ্য হবে। এবং যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলীর অবাধ্য হলো তারাই পথভ্রষ্ট হলো সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতার দিকে।”-(সুরা আল-আহযাব, আয়াত ৩৬)। এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকটি হলো, যে বিষয়ে মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট বিধান এসে গেছে সে বিষয়ে মত প্রকাশ বা গ্রহণ-বর্জন নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে মুসলিমের কাজ হলো সে হুকুম পালন করা। নইলে সে শামিল হয় সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টদের দলে। বাংলাদেশ মসজিদ-মাদ্রাসার দেশ। গভীর শ্রদ্ধা নিয়ে ব্যাপক ভাবে পঠিত হয় পবিত্র কোরআন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার এ কোরআনী ঘোষণাটি কি এসব লক্ষ লক্ষ পাঠকদের নজরে পড়েনি? আর পড়লে তা থেকে তারা শিক্ষাটি কি পেল? শিক্ষা পেলে তার বাস্তবায়নই বা কোথায়? সূদ, ঘুষ, ব্যাভিচার, মদ্যপাণ ইসলামে হারাম। এব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে মহান আল্লাহর। কিন্তু সে নির্দেশের পরও বাংলাদেশে সেগুলি অবাধে চলছে। এসব পাপকর্ম সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রহরাও পাচ্ছে। মুসলিম পুলিশ পতিতাপল্লি পাহারা দিবে, ব্যাংকে বসে রোযাদার মুসল্লী সূদের হিসাব কষবে –নবীজী (সাঃ)’র আমলে কি এরূপ পাপকর্মের কথা ভাবা যেত? এগুলি তো মহান আল্লাহতায়ালার সুস্পষ্ট অবাধ্যতা।
সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে পথভ্রষ্ট হওয়া এবং জাহান্নামে পৌঁছার জন্য কি মুর্তিপুজারী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে? সে জন্য তো এটুকুই যথেষ্ট, কোন বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসার পরও সেটি অমান্য করা হলো। উপরের আয়াতে তো সেটিই বলা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সেটিই অহরহ হচ্ছে। সূদীব্যাংক, পতিতাপল্লি, আদালতে বৃটিশ-আইন, সরকারি উদ্যোগে মদের দোকান –এসব তো আল্লাহর অবাধ্যতারই প্রতীক। এখন দাবী উঠেছে রাস্তায় রাস্তায় মুর্তি স্থাপনের। যে কোন ব্যক্তির সামনে রাস্তা মাত্র দুটি। একটি আল্লাহর, অপরটি গায়রুল্লাহর তথা শয়তানের। হয় সে আল্লাহর আনুগত্যকে মেনে নিবে। নতুবা শয়তানের|।ব্যক্তির ন্যায় রাষ্ট্রের সামনেও এ দুটি রাস্তা ভিন্ন তৃতীয় রাস্তা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রশাসন ব্রিটিশ আমল থেকেই শয়তানের তথা গায়রুল্লাহর পথ অনুসরণ করে আসছে। ব্রিটিশেরা বিদায় নিয়েছে, কিন্তু তাদের গড়া আল্লাহর অবাধ্যতার পথে চলায় পরিবর্তন আনা হয়নি। এজন্যই বাংলাদেশে আইন-সিদ্ধ হলো পতিতাবৃত্তির ন্যায় জ্বিনা বা ব্যাভিচার। এমন পাপও স্বীকৃতি ও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে একটি পেশা রূপে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে সূদী কায়-কারবার। বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি পেলেও সে মুসলিমটি চরিত্র পায়নি। কোন ধর্মপ্রাণ মুসলিম কি এ অবস্থা মেনে নিতে পারে?
শত্রুর বিনিয়োগ ও নতুন লড়াই
ফলে সংঘাত শুধু ঢাকার রাস্তা থেকে মুর্তি সরানো নিয়ে নয়। লড়াইয়ের কারণ আরো গভীরে। সেটি হলো, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র থেকে মহান আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতা নির্মূল করা। দেশের ৯০% ভাগ মুসলিমের উপর এটিই হলো সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা হলে সারা জীবন নামায পড়েও কি লাভ হবে? মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন উবাই কোন ঘুষখোর-সূদখোরের বাড়ীতে মিলাদ পড়েনি। এমন কি কোন ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লা-মৌলভীর পিছনেও নামায পড়েনি। নামায পড়েছিল খোদ মহান নবীজী(সাঃ)র পিছনে। এবং সেটি প্রথম কাতারে। কিন্তু সে নামায তাকে মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেনি। তার অপরাধ, ইসলামের বিজয়ের বদলে সে আত্মনিয়োগ করেছিল ইসলামের পরাজয়ে। জোট বেঁধেছিল মক্কার কাফেরদের সাথে। আজও সেরূপ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বাংলাদেশের বহু রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কমকর্তা, বুদ্ধিজীবী ও এনজিও প্রধান। এমনকি তাদের সাথে জড়িত ধর্মের লেবাসধারি বহু ধর্মব্যবসায়ীও। এরাই সম্মিলিত ভাবে টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশের ইসলামবিরোধী চরিত্র। এবং ভবিষ্যতেও সে চরিত্রকে অক্ষুণ্ন রাখতে রায়। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বলতে তারা দেশের ইসলাম-বিরোধী চরিত্রের এ অক্ষুন্নতাকেই বুঝায়। এবং পরিবর্তনের যে কোন উদৌগকেই বলছে মৌলবাদী সন্ত্রাস। এ কাজে তারা বিপুল সাহায্য পাচ্ছে কাফের রাষ্ট্রগুলো থেকে। এ লড়াই কে বলছে মৌলবাদী সন্ত্রাস ঠ্যাকানোর লড়াই। আসলে এটিই হলো, ইসলামের মৌলিক শিক্ষা তথা আল্লাহর বিধান প্রতিহত করার লড়াই। ইসলামের বিরুদ্ধে এটি হলো শয়তানী শক্তির আরেক ক্রসেড্ বা ধর্মযুদ্ধ। এবং এ যুদ্ধ চলছে হয়েছে মুসলিমবিশ্ব জুড়ে।
ইসলামের বিজয় রুখতে একমাত্র বাংলাদেশেই শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ আসছে বিদেশী রাষ্ট্র থেকে। কোন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কি তার নিজ বিশ্বাসের পরাজয়ের রাজনীতিতে জড়িত হতে পারে? তার লড়াই তো হবে ইসলামের বিজয়ে|। আল্লাহর কাছে প্রকৃত মুসলিম রূপে স্বীকৃতি পেতে হলে ইসলামের বিজয়ের এ লড়ায়ে যোগ দেওয়া ছাড়া ঈমানদারের সামনে ভিন্ন পথ আছে কি? ঈমানদার কখনোই কোন বিদেশী শক্তির মন জুগাতে রাজনীতি করে না। তার রাজনীতির লক্ষ্য তো একমাত্র আল্লাহকে খুশি করা। এবং আল্লাহকে খুশি করার মাধ্যমে জান্নাত-প্রাপ্তীকে সুনিশ্চিত করা। অথচ সে অতি পরাজিত-দশাটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের। নিজ দেশে ইসলামের পরাজয়ও তারা নীরবে মেনে নিয়েছে। যেন কিছু করার নেই, সে পরাজয় রোধের সামর্থ্যও যেন তাদের নেই। ইসলামি সংগঠনের বহু নেতা তো প্রতিযোগীতায় নেমেছে কীরূপে মার্কিনীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া যায় তা নিয়ে। তাদের অনেকে জ্বিহাদমূক্ত ইসলামের আবিস্কার নিয়ে ব্যস্ত। প্রশ্ন হলো, তারা কি নবীজীর (সাঃ)আমলের মুসলিমদের চেয়েও দরিদ্র ও অক্ষম? নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাথীদেরকে তিন বছর অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। অনাহারে ও অর্থাভাবে দিনের পর দিন তাঁদেরকে গাছের পাতা খেতে হয়েছে। বাংলাদেশের মুসলমানদের জীবনে আজ তেমন খাদ্যভাব ও অর্থাভাব আছে কি? ফলে কোথায় সে অক্ষমতা? পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমাদের আয়োজন বা প্রস্তুতি কম হোক অথবা বেশী হোক, বেরিয়ে পর আল্লাহর রাস্তায় এবং জ্বিহাদ কর নিজেদের মাল ও জান দিয়ে। এটিই তোমাদের জন্য অতি কল্যাণকর -যদি তোমরা সেটি বুঝতে পার।” –(সুরা তাওবাহ, আয়াত ৪১)।
বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশি মুসলিমের বসবাস। নবীজী (সাঃ)’র আমলে সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যা বাংলাদেশের একটি জেলার অর্ধেকের সমানও ছিল না। ২০ লাখের বেশী হাজির হয় তাবলিগ জামাতের ইজতেমায়। বাংলাদেশের ন্যায় লক্ষ লক্ষ মসজিদ, হাজার হাজার মাদ্রাসা, কোটি কোটি মুসল্লি এমনকি খোলাফায়ে রাশেদার আমলেও ছিল না। অথচ সে সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সে আমলের মুসলিমগণ একমাত্র নবীজী (সাঃ)’র আমলেই ৫০ বারের বেশী জ্বিহাদে নেমেছেন। অথচ বাংলাদেশের মুসলিমগণ বিগত ৮০০ বছরের মুসলিম ইতিহাসে ক’বার নেমেছে? ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ইসলামের পরাজিতদশা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস জুড়ে। শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত ও দোয়া-দরুদে কি বিজয় অর্জিত হয়? বিজয় অর্জনের এটি কি সূন্নতী তরিকা? এতো মুসলিম, এতো মসজিদ, এতো মাদ্রাসা ও এতো ইসলামি প্রতিষ্ঠান তৈরীর হওয়ার পরও কি বলতেই থাকবে, এখনও তাদের সে সামর্থ্য সৃষ্টি হয়নি? তবে সে সামর্থ্য কি সৃষ্টি হবে ইসলামের জেগে উঠার শক্তি পুরাপুরি বিলুপ্ত হওয়ার পর? এমন নীতি বহু কাল চললে তাতে কি বেঁচে থাকে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের আগ্রহ? পবিত্র কোর’আনে তাবলিগ জামায়াতের ছিল্লা নাই, গাশত নাই, এজতেমা নাই, আখেরাত মুনাজাতও নাই। আছে মহান আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার জিহাদ। ২০ লাখের জনতা যদি তাবলিগ জামায়াতে ইজতেমার বদলে ঢাকার রাস্তায় নামতো তবে ইসলাম বিরোধী দুর্বৃত্তগণ কি বাঁচার সুযোগ পেত? তখন সমগ্র রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ও তার কর্মচারিগণ দ্বীনের তাবলিগে। তখন বাংলাদেশ গড়ে উঠতো একটি ইসলামী রাষ্ট্র রূপে।
বাংলাদেশে ইসলামের আজ যে পরাজয়, ক্ষমতাসীন ইসলামের শত্রুপক্ষটি সেটিরই একটি স্থায়ী রূপ দিতে চায়। তাই দেশ এগুচ্ছে ভারতের প্রতি স্থায়ী আত্মসমর্পণের দিকে। ভারতের প্রতি এরূপ আত্মসমর্পণের চেতনাকেই তারা বলে একাত্তরের চেতনা। শুধু বর্তমান সরকার ও তার বিদেশী প্রভুগণই নয়, বাংলাদেশের সকল সেক্যুলার দলগুলিও সেটিই চায়। চায়, একাত্তরে যারা ভারতের কোলে আশ্রয় নিয়েছিল তারাও। কারণ, ভারতের ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী শক্তিবর্গ হলো বাংলাদেশী ইসলামবিরোধীদের আদর্শিক কাজিন। ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে তাদের নীতিতে এজন্যই কোন পার্থক্য নাই। এজন্যই কাশ্মিরে লক্ষাধিক মুসলিম নিহত হলে বা বাবরি মসজিদকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে বা সেদেশের মুসলিমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলেও ভারতসেবী এসব বাংলাদেশী দাসদের মুখে কোন প্রতিবাদ নাই। হাসিনা বরং নিয়মিত উপঢৌকন পাঠায়। কারণ, একাত্তরের চেতনা তো ভারতীয় এজেন্ডার সাথে তো এভাবেই একাত্ম হতে শেখায়। এবং প্রতিরোধে খাড়া হওয়া তো রাজাকারের চেতনা।
এরূপ একটি পরাজিত ও আত্মসমর্পিত অবস্থান থেকে যারাই বেরুনোর পথ খুঁজে তাদেরকেই মৌলবাদী বলা হয়। তারা হত্যাযোগ্যও গণ্য হয়। বুয়েটে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হলো তো তেমন একটি ইসলামবিরোধী হিংস্র চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই। কথা হলো, যাদের ঈমান আছে এবং আছে সর্বশক্তিময় রাব্বুল আ’লামীনের হুকমু মানা ও তাঁর কাছে আত্মসমর্পণের আগ্রহ, দেশের এমন একটি পরাজিত ও আত্মসমর্পিত অবস্থা কি তারা মেনে নিতে পারে? পারে না বলেই সংঘাত অনিবার্য। এ কথা সত্য, বাংলাদেশে অসংখ্য মীর জাফর আছে। তবে দেশটিতে অসংখ্য ঈমানদারও আছে। রাজপথে সেটি দৃশ্যমানও হচ্ছে। তাই এটি আর এখন ১৭৫৭ সাল নয়। একাত্তরও নয়। তাই সে সম্ভাবনা এখন কম যে, কিছু মীর জাফরদের কারণে বীনা লড়ায়েই আত্মসমর্পণ ঘটবে। এরূপ সাহসী ঈমানদারদের কারণে এখন এ সংঘাতটি নিছক ভোট-যুদ্ধ নয়। নিছক ক্ষমতা দখলের লড়াইও নয়। বরং এটি তার চেয়েও গুরুতর এক যুদ্ধ। তাই আজকের যে অস্থিরতা ও সংঘাত সেটি এক গুরুতর সংঘাতের শুরু মাত্র, শেষ নয়। এরূপ একটি সংঘাতের গুরুতর রক্তাক্ষরণে বিলুপ্ত হয়েছে সোভিয়েত রাশিয়া এবং ডুবু ডুবু অবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সে সংঘাতই নির্মূল করবে বাংলাদেশের ইসলামের শত্রুপক্ষের। বাংলাদেশে ইসলামের ৮০০ বছরের ইতিহাসে এটিই হবে দেশটির সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরণের গুণগত পরিবর্তন। এবং বাংলাদেশের উদ্ভব ঘটবে শক্তিশালী এক মুসলিম রাষ্ট্র রূপে। শীত যখন এসেছে, বসন্ত কি দূরে থাকতে পারে? ১ম সংস্করণ ০১/১১/০৮; ২য় সংস্করণ ২৬/১০/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018