বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের সংকট

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অপরাধের রাজনীতি

রাজনীতির অঙ্গণে অপরাধীদের দখলদারীর ইতিহাসটি অতি পুরানো। ইসলাম ও বাঙালী মুসলিম স্বার্থের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের রাজনীতি ছিল শেখ মুজিবের। তার রাজনীতিতে প্রচণ্ড লাভবান হয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারত। হিন্দুগণ তাদের হাজার বছরের ইতিহাসে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোন বিজয় পায়নি। তারা প্রথম বিজয় পায় ১৯৭১ সালে। এবং সে বিজয়টি তাদের ঘরে তুলে দেয় মুজিবের নেতৃত্বে বাঙালী জাতীয়তাবাদীগণ। সেটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে বিজয়ী করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়ে। এজন্যই ভারতীয় শিবিরে শেখ মুজিব হলো সমগ্র বাঙালীদের মাঝে সবচেয়ে প্রিয়তম ব্যক্তি। হিন্দুত্ববাদীদের আনুসারী বাঙালীগণ এ জন্যই তাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলে। অথচ এই ভারতের বুকে মুসলিমগণ প্রতিদিন হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার। ধ্বংস করা হচ্ছে মসজিদ।এবং বহু লক্ষ আসামী মুসলিমের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে কনসেন্ট্রেশন শিবিরে বন্দী করা হয়েছে। হিন্দুত্ববাদীগণ চায়, মুজিবের ভারতসেবী রাজনীতিই হোক বাংলাদেশীদের রাজনীতির মডেল। এবং বাংলাদেশীগণ বাঁচুক ভারতের প্রতি নিঃশর্ত গোলামী নিয়ে।

যে দেশটি ইসলামী নয় সেদেশে বসবাসী মুসলিমদের চেতনায় ইসলামের প্রতিরক্ষায় ইম্যুনিটি গড়ার ফরয কাজটি করে মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম-মাশায়েখ, ইসলামী সংগঠন, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। তাঁরা সেটি করেন কুর’আন-হাদীস ও ইসলামী দর্শনের জ্ঞান বাড়িয়ে। নবীজী (সা:)’র মক্কী জীবন তো সেটিরই সূন্নত পেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার যেমন সে কাজ করেনি, সে কাজটি সঠিক ভাবে হয়নি আলেমদের পক্ষ থেকেও। ইসলামী সংগঠনগুলো ব্যস্ত ক্যাডার-বৃদ্ধি, অর্থ-বৃদ্ধি ও ভোট-বৃদ্ধির কাজে, কুর’আনের জ্ঞান ও ইসলামী দর্শন বাড়াতে নয়। তারা গড়ে তোলেনি বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে লড়াকু সৈনিক। তাদের অর্থের বেশীর ভাগ ব্যয় হয় দলীয় আমলা প্রতিপালনে। সে সাথে দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোও তাদের হাতে অধিকৃত যাদের চেতনায় ইসলামের বিজয় নিয়ে কোন ভাবনা নেই। মসজিদ ও মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটিগুলোতে দখল জমিয়ে আছে সেক্যুলার মোড়ল-মাতবর, রাজনৈতিক ক্যাডার ও আলেমের লেবাস ধারী কিছু রাজনৈতিক বোধশূন্য ব্যক্তি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও ইসলামের বিজয় বাড়ছে না। বরং মুসলিমদের চেতনা রাজ্যে দূষণ বাড়ছে ভয়ানক ভাবে। এমন এক দূষণ প্রক্রিয়াই ফলেই অখণ্ড ভারতের মোহ জেগে উঠছে এমন কি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝেও। এদের অনেকে বলে, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের সৃষ্টিই ভূল ছিল।

 

ভারতের বিরামহীন বিজয়

বাস্তবতা হলো, ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের যে সামরিক বিজয় এসেছিল তাতে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিচয়ই শুধু পাল্টে যায়নি, পাল্টে গেছে বাংলাদেশী মুসলিমদের মনের মানচিত্রও। ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয়-উৎসবের সাথে ভারত আরেকটি মহা-উৎসব করতে পারে বাঙালী মুসলিমের চেতনা রাজ্যে তাদের এ বিশাল বিজয় তথা দখলদারী নিয়ে। বাঙালী হিন্দুর যখন প্রবল রেনেসাঁ, মুসলিমদের উপর এমন আদর্শিক বিজয় তারা তখনও পায়নি। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো, হিন্দুদের কোলে তিনি এরূপ একটি সহজ  বিজয় তুলে দিয়েছেন। শত শত বছর পরও তিনি যে সেদিনের ইসলামপ্রেমী সচেতন মানুষের কাছে গভীর ঘৃণা কুড়াবেন -তা নিয়ে কি বিন্দুমাত্র সন্দেহ আছে? নিশ্চিত যে, সে সময় তাদের সে রায়ের প্রকাশ রুখতে আজকের মত ফ্যাসিবাদী নিয়ন্ত্রন থাকবে না।

সামরিক বিজয় কোন পরাজিত দেশেই একাকী আসে না। সাথে আনে আদর্শিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিজয়ও। বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতের বিশাল বিজয় তাই একাত্তরে এসে থেমে যায়নি। তারা বিরামহীন বিজয় পাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। একাত্তরে তাদের লক্ষ্য শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গা ছিল না, ছিল বাংলাদেশে ইসলামী চেতনার বিনাশও। তাছাড়া তাদের এ যুদ্ধটি নিছক পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ছিল না, ছিল ইসলাম ও বাংলাদেশের বাঙালী ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধেও। পাকিস্তান-বিরোধী যুদ্ধটি শেষ হয়েছে একাত্তরেই। কিন্তু শেষ হয়নি বাংলাদেশের মাটি থেকে ইসলামপন্থীদের নির্মূলের কাজ। তাই ভারত তার পদলেহীদের দিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ একটা অস্থির অবস্থা বজায় রেখেছে সেই ১৯৭১ থেকেই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের আচরণ দেখেও বোঝা যায়, ভারতের পক্ষ থেকে বাঁকি কাজটি সমাধার মূল দায়িত্বটি পেয়েছে তারাই যারা একাত্তরে তাদের ঘরে বিজয় তুলে দিয়েছিল। তারা তাদের পরীক্ষিত বন্ধু। ভারতের পক্ষ থেকে তাদের উপর অর্পিত দায়ভারটি হলো ইসলামী সংগঠন নিষিদ্ধকরণ, ইসলামী নেতাদের বিনা বিচারে গ্রেফতার, মাদ্রাসার পাঠ্যসূচী ও মসজিদে খোতবার উপর নিয়ন্ত্রণ, অফিসে ও ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলামী বই বাজেয়াপ্তি, ইত্যাদি। এভাবে ইসলামের পুণর্জাগরণকে প্রতিহত করা।

 

ভারতের বাংলাদেশ ভীতি এবং এজেন্ডা

বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতীয়দের এতো তৎপরতার মূল কারণ, বাংলাদেশে ভীতি। ভয়ের সে মূল কারণটি হলো ইসলাম। ভারতীয়রা বোঝে, ইসলামী দর্শন এবং কুর’আনের জ্ঞানই জোগাতে পারে যে কোন আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের শক্তি। অতীতে আফগান জনগণ যে শক্তির বলে ব্রিটিশ বাহিনী ও পরে সোভিয়েত বাহিনীকে পরাজিত করেছিল সেটি অস্ত্রবল নয়। অর্থবলও নয়। বরং সেটি ছিল কুর’আনী দর্শনের বল। সে শক্তির বলে তারা মার্কিনীদেরও পরাজিত করেছে। ২০ বছরের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার ৫০টি মিত্রদেশকে কখনোই বিজয়ের কাছে ভিড়তে দেয়নি। আর বাংলাদেশীরা আফগানদের থেকে সংখ্যায় প্রায় ৫ গুণ। এতবড় বিশাল জনশক্তির মাঝে ইসলামী চেতনার বিস্ফোরণ হলে তাতে কেঁপে উঠবে সমগ্র ভারত। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ ও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির মূলে ছিল তো এই বাঙালী মুসলিমগণই। জমিনে বীজ থাকলে তা পুণরায় গজিয়ে উঠতে পারে। ভারত সেটি বুঝে। ভারত ইসলামের সে বীজ বাংলার মাটি থেকে ধ্বংস করতে পারিনি। এখানেই ভারতের ভয়।

বাংলাদেশের মূল শক্তি তাই তার ভূগোল নয়, সম্পদও নয়। বরং সেটি এই মুসলিম জনশক্তি। আর এই জনশক্তির সাথে কুর’আনী জ্ঞানের যোগ হলে জন্ম নিবে রাজনৈতিক অঙ্গণে এক মহাশক্তি। মরুর নিঃস্ব আরবেরা বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল তো তেমন এক মিশ্রণ হওয়াতেই। ভারত তাই বাংলাদেশের মানুষকে কুর’আনের জ্ঞান থেকে দূরে সরাতে চায়। এজন্যই প্রতিটি বাংলাদেশীর উপর চলছে ভারতের পক্ষ থেকে বছরের প্রতিদিন এবং প্রতি ঘন্টা নজরদারী। মুজিবকে দিয়ে পাকিস্তানে আমলে চালু করা দ্বীনিয়াত বইটি স্কুলে নিষিদ্ধ করেছিল। হাসিনা বাজেয়াপ্ত করছে ইসলাম বিষয়ক বই। নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে কুর’আনের তাফসির ও জুম্মার খোতবার উপর।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জী বলেছিলেন, বাংলাদেশকে ভারতীয় রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। তবে ভারতের সুবিধা হলো, ভারত এ কাজে একা নয়। ভারত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে অতি আগ্রহী ও আত্মসমর্পিত কলাবোরেটর রূপে পেয়েছে। বাঙালী হিন্দুদের চেয়েও এ কাজে তারা ভারতের প্রতি বেশী বিশ্বস্থ ও তাঁবেদার। ভারত সে সুযোগটির সদ্ব্যাবহার করতে চায়। একাত্তরের বিজয়কে যুগ যুগ ধরে রাখার স্বার্থে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাঁধে লাগাতর বন্দুক রাখাটিই তাদের স্ট্রাটেজী। সেটিকে তারা অপরিহার্যও ভাবে। তবে এলক্ষ্যে তারা যে শধু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপরই পুঁজি বিনিয়োগ করছে -তা নয়। তাদের স্ট্রাটেজী, এক ঝুড়িতে সব ডিম না রাখা। তাই বিশাল পুঁজি বিনিয়োগ করেছে দেশের বামপন্থী নেতাকর্মী, মিডিয়া কর্মী, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যকর্মী, আলেম-উলামা, ছাত্রশিক্ষকদের উপরও। সে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে তারা ভারতে পড়ার সুযোগও করে দেয়েছে। এখন বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করছে দেশের ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মী, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়ার উপর। তবে ভারত জানে, তাদের হাত থেকে আওয়ামী লীগ হারিয়ে যাওয়ার নয়। ক্ষমতায় থাকার সার্থে এ দলটি নিজ গরজেই ভারতের পক্ষ নিবে। কারণ, ভারতের হাতে যেমন রয়েছে বাংলাদেশের হিন্দু ভোট, তেমনি আছে রাষ্ট্রীয় পুঁজি, আছে ভারত-প্রতিপালিত বিশাল মিডিয়া। নির্বাচনী জয়ের জন্য এগুলো জরুরি।

 

অরক্ষিত বাংলাদেশ

বাঘের পাল দ্বারা ঘেরাও হলে বিশাল হাতিও রেহাই পায় না। তাই যে জঙ্গলে বাঘের বাস সে জঙ্গলের হাতিরাও দল বেঁধে চলে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো, দেশটি মুসলিম বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এক দেশ। ঘেরাও হয়ে আছে আগ্রাসী হিন্দুদের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ দারুন ভাবে এক অরক্ষিত দেশ। তাই এদেশটির সীমাবদ্ধতা প্রচুর। যে কোন দেশের প্রতিরক্ষার খরচ বিশাল। আর ভারতের মত একটি বিশাল আগ্রাসী দেশের বিরুদ্ধে সে খরচ তো আরো বিশাল। এ বাস্তবতার দিকে খেয়াল রেখেই বাংলার তৎকালীন শীর্ষ স্থানীয় নেতা খাজা নাযিমউদ্দিন, সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আকরাম খাঁ, নূরুল আমীন, মৌলভী তমিজুদ্দীন খান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারী সভায় লহোর প্রস্তাবে সংশোধনী এনেছিলেন এবং পাকিস্তানে যোগ দেবার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সংশোধনীর কারণ, ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ গৃহীত লাহোর প্রস্তাবে বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করার কথা ছিল না।

১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিল সেদেশের সবচেয়ে বড় প্রদেশে রূপে। অথচ এরূপ স্বেচ্ছায় পাকিস্তানভূক্তিকেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলে বাংলার বুকে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন। এটি নিরেট মিথ্যাচার। কোন দেশে ঔপনিবেশিক শাসন গড়তে হলে যুদ্ধ লড়তে হয়। প্রয়োজন পড়ে দেশী মীর জাফরদের। প্রয়োজন পড়ে লর্ড ক্লাইভ ও পলাশীর। প্রশ্ন হলো, ১৯৪৭’য়ে কে ছিল সেই মীর জাফর? কে ছিল ক্লাইভ? সে মীর জাফর কি ছিলেন সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও আকরাম খাঁ -যারা বাংলাকে পাকিস্তান ভূক্ত করেছিলেন? আর ঔপনিবেশিক বাহিনীই বা কোথায়? কোথায় করলো তারা যুদ্ধ? জেনারেল ওসমানী, মেজর জিয়া, মেজর সফিউল্লাহ, মেজর আব্দুল জলিল, মেজর খালিদ মোশার্রফ কি তবে সে উপনিবেশিক বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন?

 

জনগণই যখন শত্রু

বাংলাদেশের মুসলিম জনগণও নির্দোষ নয়। জনগণের গুরুতর অপরাধটি হলো, তারা ১৯৭০ সালে নির্বাচিত করেছিল গণতন্ত্র হত্যাকারী এক নৃশংস ফাসিস্টকে। ফাসিস্ট মুজিবকে তারা যে শুধু ভোট দিয়েছে তাই নয়, তাকে ক্ষমতায় বসাতে অর্থ এবং রক্তও দিয়েছে। সে সাথে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছে মুজিবের মনিব ভারতীয়দের। মহান আল্লাহতায়ালার বিধান হলো, প্রতিটি অপরাধই অপরাধীদের জন্য শাস্তিকে অনিবার্য করে। বড় বড় অপরাধ ঘটতে পারে ভোট দানের মধ্য দিয়ে। পবিত্র কুর’আনে ঈমানদার ব্যক্তির গুণাবলী বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে তারা কখনোই মিথ্যাচারী অপরাধীদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়না। জনগণ সাক্ষ্য দেয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে। তখন গুরুতর অপরাধ হয় মিথ্যুক ও ধোকাবাজ অপরাধীকে ভোট দেয়ার মধ্য দিয়ে। সে গুরুতর অপরাধটি হয়েছে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। তাই  বাংলাদেশীদের জন্য সে প্রাপ্য শাস্তিই ঘিরে ধরেছে। সে শাস্তি যে শুধু কোভিড মহামারি, ভূমিকম্প বা সুনামী রূপে আসে তা নয়, বরং আসে ফ্যাসিবাদী নৃশংসতা নিয়েও। কোভিড, ভূমিকম্প বা সুনামী বিদায় নেয়, কিন্তু ফ্যাসিবাদী তান্ডব বেঁচে থাকে গুম, খুন, অপহরণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতি নিয়ে। ফলে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের যে দুঃসহ বিভীষিকা -সেটি মূলত জনগণের নিজ হাতের কামাই।

দুর্যোগ থেকে বাঁচতে হলে অপরাধের রাজনীতি থেকে বাঁচতে হয়। সেরূপ বাঁচাটি যেমন রাজনীতিবিদদের জন্য জরুরি, তেমনি জরুরি হলো জনগণের জন্যও। জনগণ না পাল্টালে দেশ পাল্টাবে না। বাংলাদেশে জন্য এখানেই মূল সংকট। গণতান্ত্রিক সভ্য শাসনের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধটি হতে পারে জনগণের পক্ষ থেকেও। ইতিহাসে সে প্রমাণ প্রচুর। ১৯৭১’য়ে সে অপরাধটি হয়েছিল মুজিবের ন্যায় গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টকে নির্বাচিত করে। জার্মানগণ গুরুতর অপরাধ করেছিল হিটলারকে নির্বাচিত করে। ভোট দিয়ে নিজেদের বিরুদ্ধে তারা নিজেরাই একটি বিশ্বযুদ্ধ উপহার দিয়েছিল। ফলে ধ্বংস হয়েছে দেশ এবং মারা গেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

প্রশ্ন হলো, জনগণ কতটুকু ভালবাসে ইসলামী বিধান ও মূল্যবোধকে? কতটুকু ভালবাসে চরিত্রবান মানুষদের? কতটুকু রুচি তাদের গণতন্ত্রে? এবং কতটুকু ঘৃণা করে ফ্যাসিবাদী দুর্বৃত্তদের? কতটুকু তারা নিজেরা সৎ, সত্যাবাদী ও দুর্নীতিমুক্ত? কতটুকু গুরুত্ব দেয় দেশে স্বাধীনতা বাঁচাতে? বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কীরূপ হবে -তা নির্ধারিত হবে জনগণের নিজের গুণাবলী থেকেই। সভ্য ও সমৃদ্ধ জীবনের বিশাল খরচ আছে। সেরূপ সভ্য জীবন কখনোই ডাকাতের গ্রামে জন্ম নেয় না। হিংস্র পশু অধ্যুষিত জঙ্গলেও গড়ে উঠে না। সেজন্য মূল্য পরিশোধ করতে হয় অসভ্য ফ্যাসিবাদী শক্তির নির্মূল করে। কিন্তু বাংলাদেশীগণ লাগাতর ব্যর্থ হচ্ছে সেরূপ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মূল্য পরিশোধে।

হংকংয়ের জনসংখ্যা ৮০ লাখ। সেখানে ২০ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছে গণতন্ত্রের দাবী নিয়ে। ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। কিন্তু গণতন্ত্রের দাবী নিয়ে ২০ হাজার মানুষও রাস্তায় নামে না। এমন ভীরু, কাপুরুষ ও দায়িত্বহীন জনগণকে কি সভ্য ও গণতান্ত্রিক শাসন আশা করতে পারে? বাঁচাতে পারে কি স্বাধীনতা? বরং এমন জনগণ যে একজন নৃশংস ভোটডকাতকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলবে –সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? শত্রুতা তো এখানে দেশ, ইসলাম ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। দেশের জনগণ যদি এভাবে শত্রু হয় -তবে সে দেশ কী ভাবে সভ্য শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে? কীরূপে সুরক্ষা পাবে স্বাধীনতা? বাংলাদেশে মূল সংকটটি এখানেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *