বাংলাদেশে অপরাধীদের অধিকৃতি এবং রাজনৈতিক ভূমিকম্প
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 3, 2019
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ঘৃণার লাভা ও স্বৈরশাসকের মৃত্যুভয়
ভূমিকম্প শুরুর আগে ভূতলে তোলপাড় শুরু হয়। তারই ফল হলো ভূমিকম্প। তেমনি দেশের রাজনীতিতেও ভূমিকম্প আসার আগে তোলপাড় শুরু হয় জনগণের চেতনা-রাজ্যে। বাংলাদেশের জনগণের চেতনায় সেরূপ তোলপাড় যে চরমে পৌঁছেছে তার আলামত তো প্রচুর। ভূমিকম্প রোধের সামর্থ্য কোন সরকারেরই থাকে না। তেমনি সামর্থ্য থাকে না রাজনৈতিক ভূমিকম্প রক্ষার সামর্থ্যও। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মিশর বা ইরানের জনগণের চেয়ে সংখ্যায় কম নয়, দুর্বলও নয়। আরো সত্য হলো, মিশরের হোসনী মোবারক, লিবিয়ার গাদ্দাফী, রাশিয়ার জার বা ইরানে শাহের চেয়ে শেখ হাসিনাও শক্তিশালী নয়। এখানেই বাংলাদেশের বুক থেকে স্বৈরশাসনের নিপাতে বিপুল আশাবাদ। তাছাড়া শীত সব সময় থাকে না। ২০১৪ সালের ভোটাবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ভোটডাকাতির নির্বাচন হাসিনার দুর্বৃত্ত ও স্বৈরাচারি চরিত্রকে ষোল আনা ন্যাংটা করে দিয়েছে। এরূপ চোর-ডাকাতদের পাশে কি বিবেকমান সভ্য মানুষ দাঁড়াতে পারে? এখানেই জনগণের বল। সশস্ত্র ডাকাতের হাতে নিরস্ত্র জনগণের সম্পদ লুটের মধ্য দিয়ে কিচ্ছা শেষ হয় না; শুরু হয় মাত্র। ফলে তাতে বিপদ বাড়ে ডাকাতের জন্য।
হিংস্র পশুরা দিনের আলোয় জনপদে নামতে ভয় পায়। কারণ, জনগণের মাঝে নামার বিপদটি তারা বুঝে। একই কারণে ভোট-ডাকাতগণও জনগণের কাতারে নামতে ভয় পায়। এজন্যই মুজিবের প্রয়োজন পড়েছিল বিশাল রক্ষিবাহিনীর। ভোট-ডাকাতি, চুরি-ডাকাতি ও সকল প্রকার দুর্বৃত্তিকে ঘৃণা করার মধ্যে সভ্য মানুষের পরিচয়। সেরূপ ঘৃণার মধ্যেই তো ব্যক্তির ঈমানদারি। যার মধ্য সে ঘৃণা নাই, বুঝতে হবে তার মধ্যে সভ্যতা, ভদ্রতা ও সুস্থ্য বিবেকবোধও নাই। নাই ঈমানও। তবে ঈমানদারের দায়ভারটি শুধু ঘৃনা করার মধ্যে শেষ হয় না। তাঁকে অন্যায়কারিদের নির্মূলেও নামতে হয়। নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত তো সে বিশেষ মিশনের জন্য মুমিনকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনে। এমন মিশন নিয়ে নবীজী (সাঃ)র শতকরা ৭০ ভাগ সাহাবা শহীদ হয়ে গেছেন। বুঝতে হবে, সমগ্র বাংলাদেশ জঙ্গল নয়, ডাকাত পাড়াও নয়। ফলে চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাতদের জন্য এদেশের ভূমি নিরাপদ হবে –সেটি কি ভাবা যায়? সামান্য পকেটমারদেরকে এদেশের মানুষ ঘৃণা ভরে পিটিয়ে হত্যা করে। ফলে কোটি কোটি মানুষের ভোটের উপর যারা ডাকাতী করে তাদেরকে জনগণ শ্রদ্ধাভরে মাথায় তুলবে -সেটি কি ভাবা যায়? সে বিষয়টি যেমন দেশের চোর-ডাকাতগণ ষোল আনা বুঝে, তেমনি বুঝে শেখ হাসিনা ও তার সহচর ভোট-ডাকাতগণও। এজন্যই শেখ হাসিনা ও তার সহচরগণ ক্ষমতা থেকে নামতে ভয় পায়। ফলে যে কোন রূপে ক্ষমতায় থাকাটি শেখ হাসিনা ও দলের নেতাকর্মীদের কাছে নিছক রাজনীতি বা ক্ষমতালিপ্সার বিষয় নয়, বরং সেটি তাদের প্রাণ বাঁচানোর বিষয়। জনগণের হাতে ব্যালট পেপার দিলে তাদের নিজেদের বিপদ যে বাড়তো -সেটি তারা পূর্বেই টের পেয়ে যায়। এরূপ বিপদে অপরাধীদের লজ্জা-শরম থাকে না। ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে রাতের আঁধারেই ব্যালট পেপার ডাকাতি হয়ে যায়।এভাবে ডাকাতি হয়ে যায় নির্বাচন প্রক্রিয়া ও জনগণের ভোটাধিকার।
চুরি-ডাকাতি ও দুর্বৃত্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির ঘৃণা যতই তীব্রতর হয়, ততই জেগে উঠে তাঁর বিবেক। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বিপ্লবের জন্য জনগণের মাঝে এরূপ ঘৃনার সামর্থ্যটি অপরিহার্য। স্বৈরশাসকের দেশে রাজনৈতিক ভূমিকম্পের প্রেক্ষাপট তৈরী হয় তো এ ঘৃণা থেকেই। শেখ হাসিনার বিগত ১০ বছরের নৃশংস স্বৈরশাসন জনগণের চেতনা রাজ্যে যে পরিমান ঘৃনা উৎপাদন করেছে –সেটি কি হাজার হাজার জনসভা করেও সম্ভব ছিল? সম্ভব ছিল কি দশ-বিশটি দৈনিক পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল খুলে? রোগজীবাণু বা বনের হিংস্র পশু যেমন নিজের নাশকতা নিজেই জানিয়ে দেয়, তেমনি জানিয়ে দেয় স্বৈরশাসকগণও। ইরানের শাহ বা মিশরের স্বৈরশাসক হোসনী মোবারকের স্বৈর-শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে তাই বিরোধী দলের মিটিং-মিছিল করতে হয়নি। টিভি চ্যানেল বা পত্র-পত্রিকাও প্রকাশ করতে হয়নি। মিছিল-মিটিং ও পত্রিকা প্রকাশের অধিকার না থাকাতেও স্বৈরশাসক নির্মূলের ভূমিকম্প সেগুলিতে থেমে থাকেনি। একই পথে দ্রুত এগুচ্ছে বাংলাদেশ। হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণাপূর্ণ গভীর লাভা জমেছে এমন কি কিশোর-কিশোরীদের মনেও। সে ঘৃনা নিয়েই সম্প্রতি রাস্তায় নেমেছিল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীগণ। তেমন আগ্নেয় লাভা জমেছিল মুজিবের বিরুদ্ধেও। শেখ মুজিব সকল দল, পত্র-পত্রিকা ও জনসভা নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তাতে তাঁর গদি বাঁচেনি। এমন কি তাঁর নিজের জীবনও বাঁচেনি।
আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সৌভাগ্য হলো, ১৯৭৫ সালের অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব নিহত হলেও আওয়ামী লীগ বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক ভূমিকম্পে শুধু স্বৈরশাসক নিপাত যায় না। নিপাত যায় তার পারিবারীক ও রাজনৈতিক গোত্র। মারা পড়ে স্বৈরাচারের রাজনৈতিক আদর্শও। সামরিক অভ্যুত্থান থেকে রাজনৈতিক ভূমিকম্পের এখানেই মূল পার্থক্য। তাছাড়া জনগণের কাছে এখন যে বিষয়টি অতি পরিস্কার তা হলো, ফ্যাসিবাদের ক্যান্সারটি শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার একার বা তাদের পরিবারীক রোগ নয়। সেটি মূলতঃ আওয়ামী লীগের দলীয় রোগ। তাই মুজিব মারা গেলেও ফ্যাসিবাদের ক্যান্সার শুধু বেঁচে নেই, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বরং দেশের আনাচে কানাচে জন্ম নিয়েছে ফ্যাসিবাদের চেতনাধারি হাজার হাজার মুজিব ও হাসিনা। এরই ফলে রাজনীতির অঙ্গণে সৃষ্টি হয়েছে ফ্যাসিবাদের জোয়ার। ফলে উধাও হয়েছে গণতন্ত্র এবং নিষিদ্ধ হয়েছে রাজপথের মিটিং-মিছিল। এবং অবাধ হয়েছে সরকারি সন্ত্রাস, গুম, খুন এবং দমন। ফ্যাসিবাদের সে নৃশংস বর্বরতা থেকে মুক্তি পেতে জার্মানবাসীগণ শুধু হিটলারের শাসনকেই নির্মূল করেনি, নির্মূল করেছে তার মতবাদ ও দলকে। ফলে ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা বলা সেদেশে ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশীদের সামনেও কি ভিন্ন পথ আছে?
উম্মোচিত আওয়ামী চরিত্র ও ইতিহাস
আওয়ামী লীগ এখন আর অজানা শক্তি নয়। প্রকাশ পেয়েছে তার প্রকৃত দর্শন, চরিত্র ও ইতিহাস। কোনটি আগুণ আর কোনটি বরফ -সেটি জানার জন্য কি ইতিহাস পাঠের প্রয়োজন পড়ে? নিরক্ষর মানুষও সেটি টের পায়। তেমনি আওয়ামী লীগের চরিত্রও গোপন বিষয় নয়। জনগণের চোখের সামনে দলটি তার প্রকৃত পরিচয় নিয়ে দীর্ঘকাল যাবত হাজির। যে কোন গণবিপ্লবের জন্য স্বৈরাচারি শক্তির সঠিক পরিচয়টি জরুরী। ইতিহাসের অতি শিক্ষণীয় বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশ ও দেশবাসীর মুখে কালিমা লেপন শুরু হয়। সেটি পাকিস্তান আমল থেকেই। পাকিস্তান আমলে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী এ দলটি পাকিস্তানের মুখে কালিমা লাগায় ঢাকাস্থ্ প্রাদেশিক সংসদের অভ্যন্তরে ডিপুটি স্পীকার শাহেদ আলীকে হত্যা করে। এমন বর্বরতা পাকিস্তানের অন্য ৪টি প্রাদেশিক পরিষদের কোনটিতেই ঘটেনি। কারণ সে প্রদেশগুলির কোনটিতে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ছিল না। দলটি তার অতিকায় কদর্য রূপটি দেখিয়েছে ১৯৭১’য়ে। মুজিবের অনুসারিদের হাতে নিহত হয়, ধর্ষিতা হয় এবং ঘর-বাড়ী, চাকুরি-বাকুরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে রাস্তার পাশে বস্তিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় বহু লক্ষ অবাঙালী মুসলিম। আজ যে বর্বরতা মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের জীবনে নেমে এসেছে, সেরূপ বর্বতার শিকার হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভারত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আসা অবাঙালীগণ। বাংলার ইতিহাসে আর কোন কালেই এমন নৃশংসতা ঘটেনি। তবে নৃশংসতা সেখানেই থেমে যায়নি, হাসিনার শাসনামলে অবাঙালীদের বস্তিগুলোতে আগুণও দেয়া হচ্ছে।
মায়ানমারে যেমন বার্মিজ অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে প্রশ্রয় দেয়া হয়, বাংলাদেশেও তেমনি আওয়ামী লীগের অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে প্রশ্রয় দেয়া হয়। বরং বলা যায়, মায়ানমারের ফ্যাসিবাদি শাসকচক্রের খুনিরা আওয়ামী লীগারদেরই আদর্শিক আত্মীয়। মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ভীরুতা, কাপুরুষতা ও বেঈমানী হলো চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখেও নিশ্চুপ থাকা। পবিত্র কোরআনে মুসলিম উম্মাহকে মানব জাতির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলা হয়েছে। তবে সেটি এজন্য নয় যে তারা বেশী বেশী নামায-রোযা করে। বরং এজন্য যে তারা অন্যায়কে নির্মূল করে এবং ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করে। -(সুরা আল ইমরান আয়াত ১১০ দ্রষ্টব্য)। অথচ আওয়ামী বাকশালীদের মিশনটি এর বিপরীত। নিজ দলের নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের মাঝে তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে অসত্য ও অন্যায়কে। এবং প্রবলতর করেছে অসত্য ও অন্যায়ের সামনে নিশ্চুপ থাকার সংস্কৃতিকে। একাত্তরে ৩০ লাখ নিহতের কিসসা তো এভাবেই বাজার পেয়েছে। দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে নৃশংসতার বিরুদ্ধে নীরবতা এতটাই প্রবল যে, তাদের কথা শুনলে মনে হয়, একাত্তরে অবাঙালীদের বিরুদ্ধে যেন কিছুই করা হয়নি। যেন প্রায় ৫ লাখ অবাঙালী মুসলিম নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ী ছেড়ে বস্তিতে গিয়ে উঠেছে। অথচ তাদের কাছে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হচ্ছে সত্য কথা বলা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামাটি। সম্প্রতি কিশোর বিদ্রোহীদের উপর পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দেয়ার হেতু তো সেটিই।
একাত্তেরর পর মুজিবের ফ্যাসিবাদী নৃশংসতা এবং ভারতের পদসেবার রাজনীতি থেকে পাকিস্তান বেঁচে গেছে। সে বাঁচার কারণে পাকিস্তান পরিণত হয়েছে পারমানবিক শক্তিতে। সামরকি শক্তিতে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তানের সমকক্ষ অন্য কোন দেশ নেই। তাতে সামর্থ্য পেয়েছে ভারতের সামনে শক্ত মেরদণ্ড নিয়ে দাঁড়ানোর। দেশটিতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছ বহুদলীয় গণতন্ত্র। কিন্তু সে নৃশংসতা এবং ভারতের পদসেবার রাজনীতি থেকে বাংলাদেশ বাঁচেনি। নিহত হয়েছে গণতন্ত্র। বাংলার মাটিতে আজ থেকে ৬৪ বছর পূর্বে ১৯৫৪ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেরূপ একটি নির্বাচনের কথা আজ কল্পনা করাও অসম্ভব। মুজিবের আগরতলা ষড়যন্ত্র ১৯৬৮ সালে সফল হয়নি। কিন্তু সফল হয়েছে ১৯৭১’য়ে। ফলে ১৯৭১’য়ে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ পরিচিতি পায় ভারতের আশ্রিত রাষ্ট্র রূপে। এরূপ একটি কারণে শুরুতে চীন, ইরান, সৌদি আরব, তুরস্কসহ বিশ্বের বহুদেশ স্বাধীন দেশ রূপে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ইতস্ততঃ করেছে।
মুজিবের হাতে বাংলাদেশের মুখে কালিমা লেপনের অতি কুৎসিত কর্মটি হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশকে ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি বানানোর মধ্য দিয়ে। মুজিব ও প্রভূ রাষ্ট্র ভারতের অর্থনৈতিক নাশকতার কারণে ১৯৭৩-৭৪ সালে জন্ম নেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। কংকালসার বাংলাদেশী শিশু পরিণত হয়ে ভিক্ষা সংগ্রহের আন্তর্জাতিক পোস্টার শিশুতে। সোনার বাংলা রূপে পরিচিত দেশটির এমন ইজ্জতহানি আর কোন কালেই হয়নি। মুজিবের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছিল। তবে দুর্ভিক্ষের দিনেও মুজিব ইতিহাস গড়েছেন অন্য ভাবে। দেশের সে দুর্দিনে তিনি পুত্রকে বিয়ে দিয়েছেন মাথায় সোনার মুকুট পড়িয়ে। গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন বাকশালী স্বৈরাচার। পিতার সে পথটি ধরেছেন শেখ হাসিনাও। মুজিবের ন্যায় তিনিও ডিগবাজি দিলেন গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে। পিতার ন্যায় তিনিও হত্যা করলেন গণতন্ত্র। পুলিশ ও সেনা বাহিনী পরিণত হয়েছে তার নিজস্ব লাঠিয়ালে। দেশের আদালত পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক শত্রুদের ফাঁসিতে হত্যা বা কারারুদ্ধ করার হাতিয়ারে। নির্বাচনের নামে এমন ভোট-ডাকাতি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, সমগ্র মানব ইতিহাসেও বিরল। তবে সবচেয়ে বড় নাশকতাটি ঘটেছে ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ নির্মূলের ক্ষেত্রে। সেটি ব্যাপক ভাবে হলে জনগণ হারায় দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তদের ঘৃনা করার সামর্থ্য। চোর-ডাকাতগণ নেতা-নেত্রী, বন্ধু, পিতা ও ফিরাউনের ন্যায় ভগবানরূপে গণ্য হয় তো বিবেকের অঙ্গণে ব্যাপক নাশকতার কারণেই।
ঘৃনার রাজনীতি ঘৃনাই জন্ম দেয়; তাতে ভাতৃত্ব ও পারস্পরিক সম্প্রীতি জন্ম নেয় না। আওয়ামী লীগের ঘৃনা ও নাশকতার রাজনীতিতে ধ্বসে গেছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার ভিত্তি। বেড়েছে স্বৈরাচার বিরোধী তীব্র ঘৃণা। ফলে শত শত পুলিশ প্রহরা ছাড়া রাস্তায় নামার সাহস শেখ হাসিনার নেই। তাঁর আশে পাশে যারা ঘুরাফেরা করে তারা উচ্ছিষ্টভোগী চাকর-বাকর মাত্র। এমন কি তাঁর দলীয় নেতাকর্মীগণও তাঁকে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে অসহায়। শেখ হাসিনাকে তারা আর কি প্রহরা দিবে, তারা নিজেরাও পিঠের চামড়া বাঁচাতে পুলিশ, RAB ও সেনাবাহিনীর উপর নির্ভরশীল। শেখ হাসিনার সামনে এখন উভয়মুখি সংকট; পালাবার রাস্তা নাই। নিরপেক্ষ নির্বাচনে তাঁর পরাজয় অনিবার্য। অপর দিকে ভোট-ডাকাতির নির্বাচন হলে অনিবার্য হবে গণবিদ্রোহ। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তির মূল কারণ তো পরাজয়-ভীতি। সেটি নিরক্ষর মানুষও বুঝে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর প্রতিষ্ঠা করেছেন নিরংকুশ নিজের দখলদারি। কৌশলটি হলো, নির্বাচনি কমিশনারের নামে দলীয় রিফারীকে ময়দানে নামানো। যার মূল কাজটি হবে, বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের লাল কার্ড দেখিয়ে নির্বাচনের ময়দান থেকে বেড়ে করে দেয়া; এবং পেনাল্টি করলেও সরকার দলীয়দের পুরস্কৃত করা। নির্বাচনি কমিশনারের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই জামায়াতে ইসলামীকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে। লাল কার্ড দেখানো হচ্ছে খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র তারেক জিয়াকেও। একাজে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের আদালত। বিরোধী দলীয় নেতাদের ফাঁসি ও কারারুদ্ধ করা হচ্ছে তো সে পরিকল্পনার অংশ রূপে।
লাইফ সাপোর্টে স্বৈর-সরকার
এমন কি কিশোর বিদ্রোহ রুখতে রাস্তায় হাজার হাজার পুলিশ নামানোর ঘটনা তো এটিই সাক্ষ্য দেয়, শেখ হাসিনা হারিয়েছেন নিজ শক্তিতে বাঁচার সামর্থ্য। তাঁর স্বৈরশাসন বেঁচে আছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ, RAB ও ভারতীয় সরকারের দেয়া লাইফ সাপোর্টে। লাইফ সাপোর্টটি তুলে নিলে হাসিনার সরকার যে সাথে সাথে বিলুপ্ত হবে –তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? অপর দিকে স্বৈরশাসনকে সমর্থণ করার বদনামটি তো বিশাল। প্রতিটি সভ্য সমাজেই অতি অসভ্য নিন্দিত কাজটি হলো, চোর-ডাকাতদের সমর্থণ দেয়ার ন্যায় ভোট-ডাকাতদের সমর্থণ করা। ভারতের বুদ্ধিজীবী মহলে ইতিমধ্যেই ভারতের এ নীতির বিরুদ্ধে গুঞ্জন উঠেছে। কারণ ভারতে শুধু নরেন্দ্র মোদির বাস নয়, সেদেশে অরন্ধতি রায়ের মত ব্যক্তিও আছেন। ভারত সরকার হাসিনার স্বৈরশাসনকে সাপোর্ট দেয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিছক তার নিজ স্বার্থ বাঁচাতে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের স্বার্থ প্রচণ্ড হামলার মুখে পড়বে -যদি ভারত সরকার গণবিরোধী স্বৈরশাসককে সমর্থণ দেয়ার কাজটি অব্যাহত রাখে। জনগণ মারমুখি হলে ভারত যে নিজের স্বার্থ বাঁচাতে হাসিনার উপর থেকে লাইফ সাপোর্ট উঠিয়ে নিবে -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? কারণ, ভারতের কাছে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থটি বড়, হাসিনা নয়।
কাশ্মীরে মুসলিম গণহত্যা ও হাজার হাজার মুসলিম নারীকে ধর্ষণের কারণে পাকিস্তানের মাটিতে ভারতপন্থি হওয়াটি গুরুতর নৈতীক ও রাজনৈতিক অপরাধ। সেটি গণ্য হয় মানবতাহীন নিরেট অসভ্যতা রূপেও। একই অবস্থা নেপালে। কারণ, দিল্লির আধিপত্যবাদী সরকার নেপালের রাজনীতিতে তার অনুগতদের প্রতিষ্ঠা দিতে ও নেপালী সরকারের মেরুদণ্ড ভাঙ্গতে ভারতের উপর দিয়ে নেপালে জ্বালানী তেলসহ ও অন্যান্য সামগ্রী বহনকারি ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। এবং এভাবে জন্ম দিয়েছিল চরম অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুরাবস্থার। নেপালের মানুষ ভারতসৃষ্ট সে যাতনার কথা ভূলেনি। একইরূপ প্রচণ্ড ভারত-বিরোধী ঘৃনা মালদ্বীপ ও শ্রীলংকায়। সেরূপ অবস্থা দ্রুত জন্ম নিচ্ছে বাংলাদেশেও। আরো বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠ নেপাল নয়; ক্ষুদ্র মালদ্বীপ বা শ্রীলংকাও নয়। এটি ১৭ কোটি মানুষের মুসলিম দেশ। বাঙালী মুসলিমগণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বৈরাচার বিরোধী জনগণের তুলনায় রাজনীতির অঙ্গণে ঐতিহ্যহীনও নয়। বরং তাদের রয়েছে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গৌরবময় ইতিহাস। এই বাঙালী মুসলিমগণই ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে প্রকাণ্ড ভূমিকম্প এনেছিল এবং পাল্টে দিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র। কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান আন্দোলনের মূল দুর্গটি ছিল বাংলায়; পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু বা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য কোন প্রদেশে নয়।
বাংলার বুকে মুসলিম লীগের জন্মই শুধু হয়নি, বরং সমগ্র ভারত মাঝে এ বাংলাতেই প্রতিষ্ঠা পায় মুসলিম লীগের প্রথম এবং একমাত্র দলীয় সরকার। সিন্ধু ও পাঞ্জাবে মুসলিম লীগের সরকার প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীনতা লাভের পূর্ব মুহুর্তে। ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগষ্ট জিন্নাহর ঘোষিত “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান”য়ের ডাকে সাড়া দিয়ে কলকাতার রাজপথে প্রায় ৭ হাজার বাঙালী মুসলিম প্রাণ দিয়েছিল কংগ্রেসী গুণ্ডাদের হাতে। অন্য কোন প্রদেশে সেরূপ প্রাণদানের ঘটনা ঘটেনি। বাঙালী মুসলিমদের রক্তদানের ফলে পাকিস্তানের অনিবার্যতা বুঝাতে মুহম্মদ আলী জিন্নাহকে আর কখনোই ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রেস নেতাদের সামনে নতুন করে উকিলসুলভ যুক্তিতর্ক পেশ করতে হয়নি। অবিভক্ত ভারতে হিন্দু-মুসলিমের একত্রে অবস্থান যে অসম্ভব -সেটি বুঝে ফেলে। ফলে ত্বরিৎ মেনে নেয় পাকিস্তান দাবীকে। বাঙালী মুসলিমগণ এভাবেই সেদিন ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছিল আধিপত্যবাদী হিন্দুদের অখণ্ড ভারত নির্মাণের স্বপ্ন। কলকাতার রাজপথে তাদের রক্তদানের ফলেই দ্রুত প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। বাঙালী মুসলিমের সর্বকালের ইতিহাসে এটিই হলো তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। পাকিস্তানের সংখ্যগরিষ্ঠ বাঙালী জনগোষ্ঠি ১৯৭১য়ে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও দেশটি এখনো টিকে আছে ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি রূপে –যার ভাণ্ডারে রয়েছে শতাধীক পারমানবিক বোমা। ১৭৫৭ সালে পলাশীর ময়দানে বাঙালী মুসলিমগণ পরাজয় রুখতে পারেনি, কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠি রূপে নিজেদের দায়বদ্ধতা কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিয়েছে।
নতুন দিনের আশাবাদ
শীত কখনোই চিরকাল থাকে না। শীত আসলে বসন্তের আসাটিও অনিবার্য হয়ে উঠে। তাই সেদিন বেশী দূরে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বুকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ আবারো ১৯০৬-৪৭’য়ের ন্যায় রাজনীতির পাওয়ার হাউসে পরিণত হবে। সেটি ভারতসহ সকল ইসলামি বিরোধী শক্তি বুঝে। শেখ হাসিনা সে ভয় দেখিয়েই ভারত থেকে তাঁর নিজের সেবাদাসী রাজনীতির বিশাল মুজুরি দাবী করছে। দিল্লীর শাসকদের কাছে হাসিনার মূল দাবীটি হলোঃ “বাংলাদেশে এবং সে সাথে সমগ্র পূর্ব-ভারতে তোমাদের স্বার্থ বাঁচাতে হলে, আমাকে বাঁচাও।” বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের যে বিকল্প নেই –সেটিই ভারতীয় কানে বার বার ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ভারত সে যুক্তি মেনে নিয়েই শেখ হাসিনার সরকারকে লাগাতর লাইফ সাপোর্টে রেখেছে। শেখ মুজিবকে যেভাবে তারা হারিয়েছে সেভাবে তারা হাসিনাকে হারাতে চায়। ভারতীয় লাইফ সাপোর্ট তুলে নিলে হাসিনা সরকারের যে ত্বরিৎ পতন ঘটবে –তা নিয়ে বহু বাংলাদেশীর সন্দেহ থাকলেও ভারতীয়দের নেই। হাসিনাকে বাঁচাতে তাই সেনা ছাউনীসহ বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ভারতীয় গোয়েন্দারা আস্তানা গেড়েছে। আগামী নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করতে ভারত যে যথাসাধ্য চেষ্টা করবে –তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? হাসিনার রাজনীতির মূল ভরসা তাই বাংলাদেশের জনগণ নয়, সেটি ভারত।
বাঙালী মুসলিমগণ ১৯০৬-৪৭’য়ের রাজনীতিতে যে ভূমিকম্প এনেছিল তার পিছনে বাংলার ভূমি বা জলবায়ু ছিল না; সেটি ছিল ইসলামের প্যান-ইসলামিক চেতনা এবং উমমহাদেশে মুসলিম স্বার্থরক্ষার ভাবনা। সে চেতনার বলেই বাঙালী মুসলিমগণ অবাঙালীদেরও ভাই রূপে গ্রহণ করার সামর্থ্য অর্জন করেছিল এবং কায়েদে আযমকে নেতারূপে গ্রহণ করেছিল। ফলে সম্ভব হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই –তা যে অঞ্চল, যে ভাষা বা যে বর্ণেরই হোক না কেন। এ বিশেষ পরিচিতিটি মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া, সেটি অমান্য হলে কি কেউ মুসলিম হতে পারে? এমন প্যান-ইসলামিক মুসলিম ভাতৃত্বের কারণেই আরব-কুর্দি, ইরানী-তুর্কী মুসলিমগণ জন্ম দিয়েছিল সবেচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তির। সে ভাতৃত্বের কারণে আজও উর্দু, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পশতু ও বেলুচ ভাষাভাষী পাকিস্তানীরা জন্ম দিয়েছে ৫৭টি মুসলিম দেশের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের। অথচ এ পাকিস্তান ভেঙ্গে ৫টি বাংলাদেশের ন্যায় পৃথক পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টি হতে পারতো। মুসলিম জীবনে ঐক্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ -সেটি তো এভাবেই প্রমাণিত হয়।
তাই যে বাঙালী মুসলিমের অন্তরে সামান্য ঈমান আছে, সে কি প্রতিবেশী আসামী, রোহিঙ্গা ও ভারতীয় মুসলিমের বেদনা ভূলে থাকতে পারে? সেটি ভূললে কি ঈমান থাকে? তাই কোন আসামী, রোহিঙ্গা বা ভারতীয় মুসলিমের গায়ে গুলি লাগলে বাঙালী মুসলিম তার বেদনা যে হৃদয়ে অনুভব করবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। অথচ হাসিনা ও তাঁর অনুসারিদের মাঝে সে বেদনা নাই। তাদের রাজনীতিতে মুসলিম ভাতৃত্বের সে ভাবনাও নাই। তাদের মূল ভাবনাটি হলো দলীয় স্বার্থ ও ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারি। সে স্বার্থ বাঁচাতেই তাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো, বাঙালী মুসলিম রাজনীতির মূল দুর্গে আঘাত হানা। তাই হামলার লক্ষ্য হলো ইসলাম ও ইসলামি চেতনা-সমৃদ্ধ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বই-পুস্তক। তাদের কাছে নবীজী (সাঃ)’র ইসলাম –যাতে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ, প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব ও জিহাদের ধারণা, গণ্য হয় সন্ত্রাস রূপে। ইসলাম বলতে তারা বুঝে দেওবন্দি, তাবলিগী, মাজভাণ্ডারী ও কবর-পূজার ইসলাম –যাতে নাই ইসলামি রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ ও জিহাদের ন্যায় পবিত্র কোরআনের মৌল আহকামগুলি প্রতিষ্ঠায় সামান্যতম আগ্রহ। এবং নবীজী সাঃ)’র ইসলাম নির্মূল কল্পে তারা শুরু করেছে রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, মিডিয়া ও ধর্ম শিক্ষার অঙ্গণে ব্যাপক সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং। একাজে হাসিনাকে রশদ জোগাচ্ছে শুধু ভারত নয়, বরং বহু অমুসলিম সরকার। তাবত ভারতীয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ যে ঘনিষ্ট পার্টনার -সেটি আজ আর গোপন বিষয় নয়। মহান আল্লাহতায়ার বিরুদ্ধে নেমেছিলেন শেখ মুজিব। তিনি কেড়ে নিয়েছিলেন ইসলামকে বিজয়ী করার সকল স্বাধিনতা। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল ইসলামী দল ও ইসলামী পত্র-পত্রিকা। অথচ কম্যুনিষ্ট পার্টিকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন মুসলিম ভূমিতে কম্যুনিজমের ন্যায় কুফরি মতবাদকে বিজয়ী করতে।
একই নীতি শেখ হাসিনার। তাঁর মন্ত্রী সভায় স্থান পেয়েছে চিহ্নিত ইসলামবিরোধীগণ।শেখ হাসিনা শুধু কোরআনের তাফসির, মসজিদে খোতবাদান, ইসলামি পুস্তক-প্রকাশ এবং মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীর উপরই শুধু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেননি, মাদ্রসাগুলিতে হিন্দু শিক্ষকদেরও নিয়োগ দিয়েছেন। সে সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার বাড়তি নৃশংসতাটি হলো ইসলামপন্থিদের ফাঁসিতে ঝুলানোর নীতি। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র নতুন নয়। ইংরেজদের হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্বে বাংলার এক-তৃতীয়াংশ জমি লা-খেরাজ তথা খাজানা মুক্ত ছিল। সে জমি বরাদ্দ ছিল মাদ্রাসাগুলির জন্য। কিন্তু ইংরেজগণ সে ভূমি ছিনিয়ে নিয়ে হিন্দু জমিদারদের হাতে তুলে দেয়; ফলে বিলুপ্ত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। এর ফলে বাংলার মুসলিমগণ দ্রুত নিরক্ষরে পরিণত হয়। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ১৯৪৭ সালে তারাই প্রকাণ্ড রাজনৈতিক ভূমিকম্পের জন্ম দেয়। কারণ, ইংরেজদের জুলুম এবং হিন্দু জমিদারদের শোষণ আমূল বিপ্লব এনেছিল তাদের চেতনায়। ভূমিকম্পের জন্ম ভূমির গভীরে; আর রাজনৈতিক ভূমিকম্প জন্ম নেয় মনের গভীরে।
বাংলাদেশের জনগণের মনের গভীরে জমেছে প্রচণ্ড আগ্নেয় লাভা। এ লাভা ঘৃণার। দিন দিন তা বেড়ে উঠছে ভারত ও ভারতীয়পন্থি স্বৈরশাসকের নৃশংসতার বিরুদ্ধে তীব্র ক্রোধ নিয়ে। আগ্নেয়গিরির ন্যায় যখন তখন তা বিস্ফোরিত হতে পারে। হাসিনার নৃশংসতা থেকে বাঁচতে লক্ষ লক্ষ বাঙালীদেশী নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে পালিয়ে দিবারাত্র দৌড়ের উপর আছে। সে ঘৃণার আগুণে পেট্রোল ঢালছে ভারতীয় মুসলিমদের উপর হিন্দু সন্ত্রাসীদের বর্বরতা। গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে আসাম থেকে ৪০ লাখ মুসলিমকে বাংলাদেশে প্রেরণ ও তাদের ভোটাধিকার, ঘরবাড়ি, জমিজমা, অর্থসম্পদ ও চাকুরি-বাকুরি ছিনিয়ে নিতে। নীল নকশার কারণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্রুত জমে উঠছে ভারতবিরোধী ঘৃণার লাভা। শুধু আসাম থেকেই নয়, হিন্দুত্ববাদি সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, পশ্চিম বাংলা থেকেও তারা অনুপ্রবেশকারি বাঙালী মুসলিমদের বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিবে। তাদের দাবী, ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে। মুসলিম ভীতি তাদেরকে এতটাই পাগলে পরিণত করেছে যে, প্রতিটি পূর্ব-ভারতীয় মুসলিমই তাদের কাছে বাংলাদেশী মনে হয়। স্রেফ গরুর গোশত ঘরে রাখার সন্দেহে সে দেশে মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এরূপ জালেমদের সাথে বন্ধুত্ব করা তো গুরুতর অপরাধ। সে বন্ধুত্ব জালেমকে উৎসাহিত করে আরো নৃশংস হতে। সে অপরাধ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় রাজনীতির অঙ্গণে ঘনিয়ে আসছে ভারত–বিরোধী ভূমিকম্প। ভারতের এরূপ মুসলিম বিরোধী নীতিতে শেখ হাসিনা ও তাঁর দল নীরব থাকতে পারে; কিন্তু তাতে বাংলাদেশের জনগণও নীরব থাকবে? মোদীর পাশে দাঁড়ানোটি হাসিনার রাজনীতির বিষয় হতে পারে; কিন্তু বিপদে পড়া ভারতীয় মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোটি বাঙালী মুসলিমদের নূন্যতম ঈমানী বিষয়। সে দরদটুকু না থাকলে যে ঈমান থাকে না -সেটি হাসিনা না বুঝলেও নিরক্ষর বাঙালী মুসলিম ষোল আনা বুঝে। হাসিনার কাছে বাঙালীর ইতিহাসের শুরুটি ১৯৭১ থেকে। কিন্তু বাঙালী মুসলিমের গৌরবের ইতিহাসের সৃষ্টি তো ১৯০৪৭’য়ে। ইতিহাস থেমে থাকে না। বস্তুতঃ ১৯৪৭’য়ের বিজয়ের গৌরবই তাদেরকে আরেক বিজয়ে অনুপ্রাণীত করবে।
বাঙালী মুসলিম জীবনে এখন নিদারুন ক্রান্তিকাল। ভাগ্য নির্ণয়ের মুহুর্ত এখন বাঙালী মুসলিমের। এখন না দাঁড়ালে আগ্রাসী ভারত উঠে দাঁড়ানোর সামর্থ্যই বিলুপ্ত করে দিবে। দীর্ঘকাল খাঁচায় বন্দি রেখে খাঁচা খুলে দিলেও সিংহ বেড় হয় না। জনজীবনে একই অবস্থা নেমে স্বৈরশাসকের হাতে অধিকৃত হওয়ায়। তখন সমগ্র দেশ পরিণত হয় খাঁচায়। ভারত চায়, বাংলাদেশের জনগণ বেঁচে থাকুক খাঁচায় বন্দি সার্কাসের জীব রূপে। হাসিনা চায়, সে খাঁচার প্রহরী হতে। খাঁচার জীবনে মিছিল-মিটিং ও গণতন্ত্র থাকে না। প্রহরীর দায়িত্ব পেয়ে শেখ মুজিবও নিজেকে ধন্য মনে করতেন। তার হাতে ভারত ধরিয়ে দিয়েছিল ২৫ শালা দাসচুক্তির দলিল। যাদের মাথায় সামান্য ঘেলু আছে, তারা বিষয়টি বুঝে। এরূপ অবস্থায় আক্বলমন্দগণ দ্রুত কেবলা পাল্টায়। সময় থাকতে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ফলে দেখা দেয় দ্রুত রাজনৈতিক মেরুকরণ। সেনাবাহিনী ও পুলিশের যেসব লোকেরা ভারতমুখি হাসিনাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে, তারা যে সহসাই মত পাল্টাবে -তাতেও কি সন্দেহ আছে? স্বৈরাচার নির্মূলকালে ইরান, মিশর, তিউনিসিয়া এবং লিবিয়াতে তো সেটিই ঘটেছে। এমন কি ১৯৭৫ সালে সেটি বাংলাদেশেও দেখা গেছে। কেবলা পরিবর্তনের সে হাওয়া ইতিমধ্যেই বইতে শুরু করেছে। যারা এক সময় কাদের মোল্লার ফাঁসি চাইতো তারাই এখন হাসিনার পতন চেয়ে ময়দানে নামছে। ঢাকার রাজপথের সাম্প্রতিক কিশোর বিদ্রোহ তো সেটিরই আলামত।
এমন দেশপ্রেমিক চেতনার কারণে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারির রাজনীতি যে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং দেশদ্রোহীতা গণ্য হবে –তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? এরূপ অবস্থাতেই ক্ষোভে ও ঘৃণায় গণবিস্ফোরণ হয়। জনগণ অপরাধী ভারতীয়দের ধরতে না পারলেও তার কলাবোরেটরদের অবশ্যই হাতেনাতে ধরবে। শাস্তিও দিবে। একাজের জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, শিবির বা ছাত্রদল লাগবে না। এক কালে যারা আওয়ামী লীগকে অন্ধভাবে সমর্থণ দিয়েছে -তারাই দ্রুত ময়দানে নেমে আসবে। নেমে আসবে অগণিত নির্দলীয় মানুষ। কারণ, বিষয়টি কোন দলের নয়, এটি সমগ্র দেশের। একাত্তরে পাকিস্তান বাঁচানোর প্রশ্নে বাঙালী মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল; সেটি বাংলাদেশ বাঁচানো নিয়ে দেখা দিবে না। কারণ, স্বাধীন বাংলাদেশ না বাঁচলে তাদের নিজেদের স্বাধীন ভাবে বাঁচাটিও ভয়ানক বিপদে পড়বে। সেটি বুঝার সামর্থ্য এমন কি স্কুল ছাত্রদেরও আছে। সাম্প্রতিক কিশোর বিদ্রোহটি ছিল মূলতঃ সে সমঝ-বুঝেরই প্রদর্শণী। ২৩/০৯/২০১৮ Tweet:@drfmkamal; facebook.com/firozkamal
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018