বাংলাদেশে অপরাধীদের নৃশংস দখলদারী এবং গরু-ছাগল সদৃশ জনগণ  

ডা. ফিরোজ মাহবুব কামাল

 (বিলেতে কর্মরত কনসালটেন্ট ফিজিশিয়ান)

 

হায়েনার চেয়েও নৃশংসতর

 হিংস্র হায়েনা ও বাঘ-ভালুকের সাথে শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ও নৃশংস শাসকদের তুলনা চলে না। তুলনা করলে বন্য পশুদের মর্যাদকে দারুন ভাবে খাটো করা হয়। কারণ, এসব বন্য পশুগণ তাদের ন্যায় এতোটা নৃশংস ও বর্বর নয়। -যতটা নৃশংস  ও বর্বর হলো এই স্বৈরাচারি শাসকগণ। হায়েনা বা বাঘ-ভালুক কখনো গণহত্যা করে না। কাউকে আয়না ঘরে বা পুলিশী রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করতে জানে না। কাউকে ধর্ষণও করে  না। একান্ত ক্ষুদার্ত না হলে এ পশুগুলি কাউকে অযথা হত্যা করে না। এজন্যই জঙ্গলে কোন নিহত পশুর লাশ পড়ে থাকে না। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে তারা শিকার ধরে বটে, কিন্তু তা নিয়ে কখনোই উৎসব করে না। কিন্তু  হাসিনার ন্যায় শাসকদের কাছে গুম, খুন, অপহরণ,ধর্ষণ ও নির্যাতন হলো অতি আনন্দদায়ক স্পোর্স্টস। অন্যরা বিশ্বকাপের খেলা দেখে যতটা মজা পায়, হাসিনা ও তার সাথীরা গণ তার চেয়ে বেশী মজা পায় জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের ফাঁসী তারা উৎসব ভরে মিষ্টি খায় ও মিষ্টি বিতরণ করে। কারো মৃত্যু নিয়ে এমন ফুর্তি বনের পশুদের মাঝে কখনো দেখা যায় না। হিংস্র পশুর নৃশংসতা তাদের নৃশংসতার কাছে তুচ্ছ।  মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে কিছু মানুষকে পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতর বলেছেন। এই স্বৈরাচারি শাসকগণ হলো সেই শ্রেণীর পশু।

পশু-অধিকৃত জঙ্গলে জানাজার নামাজ পড়ায় বাধা নাই। সেখানে হাত তুলে যাাকে ইচ্ছা তাকে দোয়া করা যায়। কিন্তু আওয়ামী দুর্বৃত্তদের অধিকৃত এই বাংলাদেশে জানাজা পড়ার স্বাধীনতা নাই। এ দুনিয়া থেকে চিরতরে চলে যাচ্ছে এমন ব্যক্তিকেও এদেশে তাঁর আপনজনদের সাথে দেখা করার স্বাধীনতা নাই। স্বাধীনতা নেই মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করার। অপরাধী হাসিনার এরূপ নৃশংস বর্বর রূপটি জনগণের অজানা নয়। তার সে নৃশংস চরিত্রটি দেখেছে তার ১৭৩ দিনের হরতালের রাজনীতি, পেট্রোল ঢেলে বাস জ্বালানো, রাজপথে লগি বৈঠা নিয়ে মানব হত্যা ও লাশের উপর তার অনুসারিদের নাচানাচি দেখে।  ক’দিন আগে প্রখ্যাত মুফাচ্ছিরে কুর’আন আল্লামা দেলায়ার হোসেন সাঈদীর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে হাসিনার চরিত্রের  সে নৃশংস রূপটি মধ্যাহ্নের সূর্যের ন্যায় আবারো উদ্ভাসিত হলো।

ঢাকায় মাওলানা সাঈদীর লক্ষ লক্ষ ভক্ত। বছরের পর বছর পবিত্র কুর’আনের বানী শুনিয়ে তিনি তাদের মনকে আলোকিত করেছেন। সাঈদীর মৃত্যুর পর তাঁর ভক্তরা তাঁর জানাজার নামাজ ঢাকা শহরে পড়তে চেয়েছিল। কিন্তু সে সুযোগ তাদের দেয়া হয়নি। শাহবাগে সমবেত সাঈদী ভক্তদের পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। উপরুন্ত সেখানে হাজির হওয়ার অপরাধে ৫ হাজার ইসলামপন্থী নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ গণমামলা দায়ের করেছে। এমন কি গায়েবানা জানাজার নামাজও পড়তে দেয়া হয়নি ঢাকার বায়তুল মোকাররমে ও চট্টগ্রামে। বিশাল পুলিশ বাহিনী নামিয়ে সেটি রুখা হয়েছে। দৈনিক মানব জমিন ১৬/০৮/২০২৩ তারিখে  খবর ছেপেছে, মাওলানা সাঈদীর জন্য এক সমাবেশে দোয়া করায় বগুড়া জেলার পত্নীতলার এক আলেমকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এই হলো হাসিনার অধিকৃত বাংলাদেশ।   

 

স্বাধীনতা কেবল অপরাধীদের

জঙ্গলে স্বাধীনতা কেবল ধারালো দাঁত ও বড় বড় নখরওয়ালা হিংস্র পশুদের। গরু, ছাগল, ভেড়া, হরিন এরূপ নিরীহ জীবদের সেখানে কোন স্বাধীনতা থাকে না। হিংস্র পশুদের পেটের খোরাক হওয়াটাই তাদের নিয়তি। তেমনি বাংলাদেশে সকল স্বাধীনতা কেবল দখলদার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী অপরাধীদের। এ দেশে নিদারুন পরাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হয় সাধারণ জনগণকে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্টদের সে স্বাধীনতাটি হলো, গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি ও গৃহ থেকে তুলে আয়না ঘরে নিয়ে নৃশংস নির্যাতনের। পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও আদালতের বিচারকদের কাজ হলো এ দুর্বত্তদের স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দেয়া। এবং নির্বাচন এলে তাদের পক্ষে ভোটডাকাতি করে দেয়া। সেটি ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর দেখা গেছে। দেখা গেছে ২০১৪ সনের নির্বাচনেও।  

অপর দিকে দেশের জনগণের উপর চাপানো দায়টি হলো, দখলদার অপরাধীদের রাজস্ব দিয়ে বাঁচানো। দেশের সংসদের কাজ হয়েছে, দখলদার এ দুর্বৃত্তদের স্বাধীনতা বাঁচাতে নিত্যনতুন আইন বানানো। ডিজিটাল আইন ও সাইবার দমন আইন হলো সে ধরণের আইন। দেশে অপরাধের প্লাবন বইলেও পুলিশ, প্রশাসন ও আদালতের বিচারকদের ইচ্ছা নাই এবং রুচি নাই অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার।  শাপলা চত্বরে গণহত্যা, পিলখানায় সেনা অফিসার হত্যা ও ফাঁসিতে চড়িয়ে ইচ্ছামত ইসলামপন্থীদের হত্যাও ছিল সে দখলদার দুর্বৃত্তদের বাধাবিঘ্নহীন স্বাধীনতার বিষয়। এজন্যই সে অপরাধে অতীতে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কারো কোন শাস্তিও দেয়া হয়নি।

 

চিকিৎসার স্বাধীনতাও নেই

অপরাধীদের অধিকৃত এই বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী নেতাকর্মীদের -বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের চিকিৎসার পাওয়ার স্বাধীনতাও নেই।  সেটি হৃদরোগে আক্রান্ত আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে এ দুনিয়া থেকে বিনা চিকিৎসায় বিদায় নিয়ে প্রমাণ করলেন। দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হওয়ার এটিই হলো বড় আযাব। তখন দেশে নেক আমল করা কঠিন হয়ে যায় এবং সহজ হয়ে যায় হত্যা, গুম ও ধর্ষণের ন্যায় নৃশংস অপরাধগুলি। এ অধিকৃতির কারণেই বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ ব্যর্থ হলো দেশটির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে।

শত শত বছর পরও এ অপরাধ নিয়ে আজকের বাংলাদেশীদের বিচার বসবে। প্রশ্ন উঠবে, বাংলাদেশের সরকার এতোই নৃশংস ও অসভ্য ছিল! এতো বর্বর ও দুর্বৃত্ত অধিকৃত ছিল বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা! সে সাথে প্রশ্ন উঠবে দুর্বৃত্তদের দখলদারী নির্মূলে জনগণের নিদারুন ব্যর্থতা নিয়েও। কারণ এরূপ অসভ্য দুর্বৃত্তদের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে বাঁচায় কোন কৃতিত্ব নেই। বরং আছে অপমান। পরকালে আছে শাস্তি। এ ব্যর্থতা জাহান্নামে হাজির করবে। কারণ, এখানে গাদ্দারী ও বিদ্রোহ হয়েছে দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে।

 

যে ভাবে আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করা হলো

 সোসাল মিডিয়ার ছড়িয়ে পরা ভিডিও’তে দেখা গেল, হার্টের যে গুরুতর রোগী মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছেন তাঁকে পায়ে হাঁটিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হচ্ছে। দেখা গেল, তাকে পায়ে হাঁটিয়ে আই.সি.ইউতে নেয়া হচ্ছে।‌ এমন কান্ড কোন সভ্য দেশে ঘটলে সংশ্লিষ্টদের চাকুরি যেত এবং তাদের শাস্তি হতো। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের প্রমোশন দেয়া হয়। উন্নত দেশে কারো হার্ট এ্যাটাক সন্দেহ করা হলে তার জন্য বিছানা থেকে নামা নিষিদ্ধ করা হয়। তাকে অক্সিজেনের উপর রাখা হয়। কারণ, হার্ট এ্যাটাকে হৃৎপিন্ডে রক্তের সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগীকে অক্সিজেন দেয়া জরুরি। এমন রোগীকে হাটানো মানেই তার হার্টের উপর চাপ বৃদ্ধি। সে সতর্কতা না নিলে হার্টের রোগীকে অনেক সময় টয়লেটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে অবস্থা থেকে বাঁচাতে রোগীকে হাসপাতালের বিছানায় শুইয়ে রাখা হয় এবং কখনোই তাকে পায়ে হাটিয়ে স্থানান্তর করা হয় না। কিন্তু ভিডিওতে জনাব সাঈদীর নাকে কোন অক্সিজেন দিতে দেখা যায়নি। এটি গুরুতর অবহেলা ও অপরাধ।  

বাংলাদেশে মানব হত্যার কাজটি শুধু বিচারের নামে হয় না, হত্যা করা হয় চিকিৎসার নামেও। মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে সেটিই প্রমাণিত হলো। তাঁর হার্ট এ্যাটাকের বিষয়টি গাজীপুরের তাজুদ্দীন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারকগণই বুঝতে পেরেছিল। এজন্যই চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু স্থানান্তর করা হলেও চিকিৎসারৃ কাজটি হয়নি। বরং সে খুনীদের হাতে তুলে দেয়া যায় যারা মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুর দাবী নিয়ে শাহবাগের জমায়েতে হাজির হয়েছিল। জনাব সাঈদীর হৃৎপিন্ডে যে রোগটি হয়েছিল সে রোগের চিকিৎসার জন্য প্রতিদেশে পি.সি.ই. করা হয় তথা স্টেন্টিং করা হয়। সাঈদী সাহেবকে প্রথম দেখে ডাক্তার মোস্তাফা জামানও পি,সি,আই’য়ের কথা ভেবেছিল। কিন্তু পরে সেটি করা হয়নি। কিন্তু কেন করা হলো না সেটি নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হতে হবে।  

ডাক্তার মোস্তাফা জামানের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হচ্ছে তাঁর বুকের ব্যাথা বিলুপ্ত হয়েছিল, ফলে তাঁকে পি.সি.আই. করা হয়নি তথা রিং পড়ানো হয়নি। কথা হলো, বুকের ব্যাথা তো বিলুপ্ত হতেই পারে। কিন্তু সে জন্য পি.সি.আই করা যাবে না -সে যুক্তি হাস্যকর ও অজ্ঞতাপ্রসূত। যে কোন হার্টের রোগীর বুকের ব্যাথা ঔষধ দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই থামিয়ে দেয়া হয়। এবং সে ব্যাথা থামানো কোন কঠিন ব্যাপার নয়। ডাক্তার মাত্র সে কাজটি প্রথমেই করে। কারণ হার্ট এ্যাটাকে বুকের ব্যাথা গুরুতর ও অসহ্যকর হয়। সে ব্যাথা নিয়ে কখনোই রোগীকে পি.সি.আই’য়ের জন্য হাজির করা হয় না। পি,সি,আই করলে বুঝা যেত জনাব সাঈদী বাঁচানোর আন্তরিক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেটি করা হয়নি। সে সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি। এতে বুঝা যায়, পি.সি.আই করা জনাব সাঈদীর শত্রুদের কাছে কখনোই কাম্য ছিল না। কারণ তাতে তাঁর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পরিতাপের বিষয় হলো, জনাব সাঈদীর মৃত্যু চাইতো এমন শত্রুর হাতে তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব দেয়া হয়। এবং পরিকল্পিত ভাবেই তাঁর পুরোন চিকিৎসার জায়গা বারডেমে কার্ডিয়াকে নেয়া হয়নি। বুঝতে হবে, তথাকথিত যুদ্ধপরাধের বিচারের নামে যারা শাহবাগে জনাব সাঈদীর আমৃত্যু জেল বা ফাঁসি চেয়েছিল -তারা কখনোই চায়নি যে তিনি বেঁচে যান। তিনি বাঁচলে তো খুনি হাসিনা এবং তার সঙ্গীরা মাওলানা সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে উৎসব করার সুযোগ পেত না। তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলেই তারা উৎসব ভরে মিষ্টি খেতে পেরেছে।

 

বিরোধী নেতাদের হত্যাই যখন এজেন

শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক বিরোধীদের মৃত্যু চায়। সেটি কোন গোপন বিষয় নেয়। সে কথাটি হাসিনা জনসভাতেও বলে। কিছু কাল আগে ড. ইউনুসকে পানিতে চুবানো এবং খালেদা জিয়াকে পদ্মা ব্রিজ থেকে ফেলে দেয়ার বলেছিল। তার পিতার মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ কাঁদেনি এবং জানাজাও পাঠ করেনি। বরং খুশি করেছে। এখন জামায়াত ও বিএনপি’র জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করে হাসিনা তার প্রতিশোধ নিতে চায়। ভয়ংকর ব্যপার হলো, বাংলাদেশ এমন এক প্রতিজ্ঞাবদ্ধ খুনির হাতে অধিকৃত। সে এজেন্ডা নিয়েই বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাসিনা হাজির হয়েছে গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ ও আয়না ঘরের নৃশংসতা নিয়ে।

জামায়াত নেতাদের মৃত্যুকে নিশ্চিত করতেই ফাঁসির হুকুম শোনানোর  ব্যবস্থা করা হয়েছে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের নামে প্রহসনের আদালত বসিয়ে। কোটি কোটি টাকা অর্থ ব্যয়ে মিথ্যা মামলা নির্মাণের কারখানা বসানো হয়েছে। জনাব সাঈদীকে খুনি প্রমানিত করার জন্য আদালতে পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালিকে সাক্ষী রূপে হাজির করা চেষ্টা হয়। কিন্তু সরকারি ফরমায়েশ অনুযায়ী সাক্ষি দিতে রাজী না হওয়ায় সুখরঞ্জন বালিকে ঢাকার আদালতের সামনে থেকে গায়েব করে ভারতীয় কতৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়। সুখরঞ্জন বালিকে ৪ বছর ভারতের কারাগারে রাখা হয়। এ থেকে বুঝা যায়, মিথ্যা মামলা সাঁজিয়ে হাসিনা সরকার যেভাবে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের হত্যার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেটি শুধু হাসিনার একার প্রকল্প নয়, এর সাথে ভারত সরকারের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগসাজেশ।

মাওলানা সাঈদীকে কীরূপে আমৃত্যু কারাদন্ডের শাস্তি দেয়া হলো -সে বিবরণ ছাপা হয়েছিল বিলেতের বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকায়। পত্রিকা বিবরণ দিয়েছে, শুনানী শেষ করার আগেই কীভাবে বিচারের রায় লেখা হয়েছিল। মামলার রায় লিখে দিয়েছিল ব্রাসেল্স’য়ে বসবাসকারি এক বাংলাদেশী। ইকোনমিস্ট পত্রিকায় সে বিষয়টি স্কাইপি কেলেংকারি নামে ফাঁস হয়েছিল। সে বিবরণ “আমার দেশ” পত্রিকাতে ছাপা হয়েছিল। সে অপরাধে “আমার দেশ” পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনার মতো অপরাধীর কাছে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই অতি উৎসবের বিষয়। বিরোধীদের মৃত্যু দিয়ে স্যাডিস্ট হাসিনার প্রচুর আনন্দ। বিরোধী দলীয় নেতাদের বেঁচে থাকাটাই হাসিনা ও তার ও তার সহযোগীদের কাছে অসহ্য। তাই অতীতে যেমন মাওলানা নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদ ও সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ন্যায় নেতাদের হত্যা করে উৎসবভরে মিষ্টি খেয়েছে, সেটি দেখা গেল মাওলানার ইন্তেকালের পরও। তারা আরেক মহা উৎসবের অপেক্ষা আছে খালেদা জিয়াকে এ দুনিয়া থেকে বিদায় দেয়া নিয়ে।  হিংস্র ও ক্ষুদার্ত হায়েনা থেকে করুণা আশা করা যায় না। তেমনি হাসিনার ন্যায় ক্ষমতালোভী নৃশংস খুনি থেকে কি সভ্য ও ভদ্র আচরণ আশা করা যায়। শাপলা চক্রের গণহত্যা ও পিলখানায় সামরিক অফিসারদের হত্যাকান্ড ঘটেছে তো তার আমলেই।

 

খুনের নেশা নিয়ে খুনিরা সর্বত্রই

সোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ, ডাক্তার মোস্তাফা জামান তার সন্তানদের নিয়ে মাওলানা সাঈদীর মত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মৃত্যুর দাবী নিয়ে শাহবাগের সমাবেশে হাজির হয়েছিল। জামায়াত নেতাদের মৃত্যু ছাড়া আদালত থেকে অন্য কোন শাস্তি মানতে রাজী নয় -সেটিই ছিল তাদের দাবী। তাদের সে দাবী মেনে নিয়ে আদালত জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার শাস্তি জেল থেকে ফাঁসিতে রূপান্তরিত করে। শাহবাগীদের দাবীর সাথে সেদিন একাত্মতা প্রকাশ করেছিল শেখ হাসিনাও। মাওলানা সাঈদীর দুর্ভাগ্য যে, তাঁকে এমন এক খুনির হাতে হাসপাতালে এসে ধরা দিতে হলো যে তাঁর মৃত্যুর দাবীতে বহু আগে থেকেই রাস্তায় নেমে ছিল। এটি গোপন বিষয় নয়, হাসিনার খুনিরা শুধু আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ ও যুব লীগে নয়, হত্যার নেশা নিয়ে তারা ওঁত পেতে বসে আছে আদালতে, পুলিশে, প্রশাসনে, এমন কি হাসপাতালেও। ডাক্তার মোস্তাফা জামান তো তাদেরই একজন। এমন দেশে কি মাওলানা সাঈদীর মত ব্যক্তিগণ কি নিরাপত্তা পেতে পারে?

গরু-ছাগল সদৃশ জনগণ

 পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা এক শ্রেণীর মানুষকে শুধু গরু-ছাগল বলেননি, বরং গরুছাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। পবিত্র কুর’আনে সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালার সে বয়ানটি হলো “উলায়িকা কা’আল আনয়াম, বাল হুম আদাল”। অর্থ: ঐ লোকগুলিই হলো গবাদি পশু, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট।  আরবী ভাষায় গরু, ছাগল, ভেড়া এ ধরণের গবাদি পশুকে “আনয়াম” বলা হয়। প্রশ্ন হলো কারা সেই গরু-ছাগলের ন্যায় মানুষ? এবং কারা গরু-ছাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট? যে মানুষগুলির পরিচয় অবশ্যই জানতে হবে। মানবরূপী পশুগুলি মানব সৃষ্টির মূল এজেন্ডাকে ব্যর্থ করে দোয়। মহান আল্লাহতায়ালার খলিফার বদলে তারা শয়তানের খলিফায় পরিণত হয়। এবং তাদের কারণে এমনকি বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশেও শয়তানের এজেন্ডা বিজয়ী হয়। শরিয়তের বদলে প্রতিষ্ঠা পায় কুফরি বিধান।

মহান আল্লাহতায়ালার উপরুক্ত বয়ানের মধ্য প্রতিটি মানুষের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। বুঝানো হয়েছে, সমাজে কিছু লোক অবশ্যই গরু-ছাগলের মত বাঁচে। এবং যারা এভাবে বাঁচে তারা মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রচণ্ড অপছন্দের। তাদেরকে তিনি ঘৃণা করেন। আর যাদেরকে তিনি ঘৃণা করেন, তাদের পক্ষে অসম্ভব হয় তার করুণা-লাভ ও জান্নাত-লাভ। তাই অবশ্যই জানতে হবে কারা সেসব মানুষ যারা গরু-ছা্গল সদৃশ বা গরু-ছা্গলের চেয়েও নিকৃষ্ট। বুঝতে হবে গরু-ছা্গলের ন্যায় হওয়ার অর্থ গরু-ছাগলের ন্যায় ৪ পা বিশিষ্ঠ পশু হওয়া নয়। এবং গরু-ছাগলের ন্যায় ঘাস খাওয়াও নয়। বরং সেটি হলো, গরু-ছাগলের স্বভাব ও চরিত্র নিয়ে বাঁচা। প্রশ্ন হলো, কি সে গরু-ছাগলের স্বভাব ও চরিত্র?  

গরু-ছাগলের স্বভাব হলো, তারা স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচে না। তা নিয়ে তারা ভাবেও না। তারা বাঁচতে অভ্যস্থ গোলামী নিয়ে। তাদের গলার রশিটি হলো সে গোলামীর প্রতীক। গরু-ছাগলেরা ঘাস পেলেই মনিবের প্রতি খুশি। গরু-ছাগলের সামনে গৃহে আগুন লাগলে তারা তা থামায় না। কেউ খুন, ধর্ষিতা বা নির্যাতিত হলে তারা কখনো প্রতিবাদ করে না। সে সামর্থ্য তাদের থাকে না। ফলে তারা মনের আনন্দে ঘাস খায়। কোনটি সত্য ও ন্যায় এবং কোনটি মিথ্যা ও অন্যায় -সে হুশ গরু-ছাগলের থাকে না।  বিশাল এক পাল গরু বা ছাগলকে একজন কিশোর রাখালও তার হাতের লাঠি ও পোষা কুকুর দিয়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অবাধ্য় গরু বা ছাগলকে তার কুকুর সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসিনাও তেমনি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশকে।  

যেদেশের জনগণ দুর্বৃ্ত্ত শাসকের নির্মূলে যুদ্ধে নামে না এবং সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ দেখায় না, তারা দেখতে মানুষের ন্যায় হলেও চরিত্রে ও আচরণে কি গরু ছাগলের চেয়ে ভিন্নতর বা উন্নততর? এমন দেশে জনগণের ভোটডাকাতি হয়ে গেলেও রাজপথে মিছিল হয়না। ইউরোপ-আমেরিকার মত দেশের নাগরিকগণ কি কখনো হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাত দুর্বৃত্তকে এক ঘন্টার জন্যও শাসক রূপে মেনে নিত? এ অপরাধে তো তার জেলে যেতে হত। কিন্তু বাংলাদেশীরা মেনে নিয়েছে বছরের পর বছর। তারা তো এ দুর্বৃত্তকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় বলে। এমন আত্মসমর্পিত জনগণ কি কখনো কোন সভ্য সমাজ ও সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারে? এমন জনগণ কি বেড়ে উঠে ঈমানদার রূপে? এমন দেশবাসী বরং অসভ্যতা, বর্বরতা ও দুর্বৃত্তিতে রেকর্ড গড়ে। এমন দেশে দেলাওয়ার সাঈদীদের মত লোকদের আমৃত্যু জেলে থাকতে হয় অথবা বিনা চিকিৎসায় বা ফাঁসিতে প্রাণ হারাতে হয়।

সভ্য মানুষ শুধু পানাহার, বাড়ি-গাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ নিয়ে বাঁচে না। তারা পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র কবরে যাবে এবং ক্ষমতার মসনদে বসে থাকবে এক দুর্বৃত্ত ভোটডাকাত -সেটি তাদের কাছে অসহ্য। তারা বরং কবরে পাঠায় স্বৈর শাসককে। তাদের অবিরাম যুদ্ধ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য। আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করতে তারা অর্থ ও রক্ত দেয়। এরূপ স্বাধীনতার যুদ্ধে মানব ইতিহাস ভরপুর। সেরূপ যুদ্ধ যারা করতে জানে না, তারা বাঁচে পরাধীনতা নিয়ে। তারাই হলো গরু-ছাগল সদৃশ। বাংলাদেশ এমন গরু-ছাগল সদৃশ জনগণে ভরপুর। বাংলাদেশের মূল সমস্যাটি হলো এটি। অথচ সেটি বুঝার সামর্থ্য ক’জনের? ফলে বিজয় এখানে ভোটডাকাত হাসিনার। এবং পরাজয় এখানে ইসলামের।

মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে গোলাম রূপে সৃষ্টি করেননি। জন্মের সময় তাই শিশুর গলায় রশি থাকে না। গলায় গোলামির রশিটি পড়ায় জালেম শাসকেরা। তারা মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্রকে কবরে পাঠায়। বাংলাদেশের মানুষের গলায় গোলামের রশি পরিয়েছিল শেখ মুজিব। শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়েছিল, এবং প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ। মুজিবের আমলে শুরু হয় বিনা বিচারে হত্যা। রক্ষী বাহিনী ৩০ হাজার মানুষের বেশি হত্যা করেছিল। মুজিবের দেখানো বিনা বিচারে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে শেখ হাসিনাও।

হাসিনা নিশ্চিত জানে, নির্বাচনে গেলে সে পরাজিত হবেই। তাই সেই কখনোই স্বাধীন ও সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা মুখে আনে না। নিরপেক্ষ নির্বাচন বন্ধ করতেই তত্ত্বাবধায় সরকারের বিধানকে সে বিলুপ্ত করেছে। সে জানে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় যাওয়া সহজ। সে জানে, ভোটডাকাতিতে তাকে পূর্ণ সহয়তা দিবে দেশের পুলিশ, সেনা বাহিনী, প্রশাসন ও আদালত -যেমনটি দিয়েছে ২০১৮ সালে।  তাই ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডাকাতি হবে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ডাকাত কখনোই স্বেচ্ছায় ডাকাতির অভ্যাস ছাড়ে না। তাকে বরং জোর করে ডাকাতি থেকে নিবৃত করতে হয়।

মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে দৈহিক শক্তি, বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তি দিয়েছেন। সেগুলি শুধু পানাহারের জন্য নয়, বরং স্বাধীনভাবে ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচার জন্য। এজন্যই স্বাধীনচেতা সভ্য মানুষেরা সে শক্তি নিয়ে পশক্তির  বিরুদ্ধে লড়াই করে। ইসলামে এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এখানেই ঈমানে পরীক্ষা হয়। যার মধ্যে জিহাদের এই ইবাদত নাই -সেই মুনাফিক। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত সূদ খোর, ঘুষখোর, মিথ্যাবাদী, হাসিনার ন্যায় স্বৈরাচারীও পালন করতে পারে। আব্দুল্লাহ বিন উবাই নবীজী (সা:)র পিছনে প্রথম কাতারে নামাজ পড়েছে। কিন্তু সে নামাজ তাকে মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচাতে পারিনি। কারণ সে ইসলামকে বিজয়ী করা জিহাদে ছিল না। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশেই বা ক’জন সে জিহাদে আছে? নাই বলেই তো হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত আজ বিজয়ী। লাশ হচ্ছে ইসলামপন্থীগণ। গরু-ছাগল ইসলামের বিজয় নিয়ে ভাবে না। বাংলাদেশের জনগণের কি সে পথই বেছে নিয়েছে? ১৮/০৮/২০২৩

One Responseso far.

  1. Fazlul Aziz says:

    বাংলাদেশের অবৈধ শাসকশ্রেণী যে বর্বরতা কায়েম করেছে ঠিক একই ধরনের বর্বরতা আমরা মিশর সহ আরও কিছু দেশে দেখতে পাচ্ছি। কোন একটি দেশে এই ধরনের হিংশ্রতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বহির্বিশ্বে এক ধরনের বিশেষ পটভূমির একান্তভাবে আবশ্যক, তা না হলে কোন শাসকগূষ্ঠি এইধরনের পৈশাচিক আচরণ করে বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না।

    এখন বর্হিরর্বিশ্বে সেইরকম পটভূমি বিরাজমান, মে কারনে হাসিনা এবং আল–শিশি এইধরনের হিংশ্র আচরন করার সাহস পায় এবং টিকে থাকতে সক্ষম। আমরা যদি বহির্বিশ্বে এই পটভূমি কারা, কখন, কেন এবং কিভাবে প্রতিষ্ঠা করে তা যদি যদি অনুধাবন না করতে পারি তাহলে আসল সমস্যা এবং এই সমস্যার আসল শিকর কোথায় তা বুঝতে পারবো না এবং সমাস্যার মুল উতপাটনও করতে পারবো না।

    বহির্বিশ্বের এই ভয়াবহ পটভূমি তৈরি হয় ২০০১ শালে ১১ সেপ্টেম্বরে। এবং বর্তমানের হাসিনার শাসন তার পরেই প্রতষ্ঠা লাভ করে এবং তার বর্বরতা আমেরিকার মৌন অনুমতি এবং আশীর্বাদ নিয়েই চালিয়ে যেতে পেরেছিল। আল–শিশিও ঐ আমেরিকার মৌন অনুমতি এবং আশীর্বাদ সহকারেই তার বর্বর শাসন এবং নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *