বাংলাদেশে ইসলামের এজেন্ডা এবং শয়তানের এজেন্ডা
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 16, 2020
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
লড়াই দুইটি এজেন্ডার
ইসলাম ঈমানদার ব্যক্তির জীবনে সুনির্দিষ্ট একটি এজেন্ডা বেঁধে দেয়। তেমনি এজেন্ডা সুনির্দিষ্ট করে দেয় মুসলিম রাষ্ট্রেরও। সেটি মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের তথা ইসলামের বিজয়। কোন ব্যক্তির মুসলিম রূপে বাঁচাটি নির্ভর করে সে এজেন্ডার বাস্তবায়নে আমৃত্যু জিহাদে থাকায়। নইলে তাকে কাফের হয়ে মরতে হয়। এবং পৌঁছতে হয় জাহান্নামে। তবে ইসলামের বিজয়ের এজেন্ডা নিয়ে বাঁচার অর্থই হলো লড়াই নিয়ে বাঁচা। তখন স্রেফ পানাহারে বাঁচলে চলে না। কারণ রাষ্ট্রে যারা ইসলামের বিপক্ষ শক্তি তথা শয়তানী শক্তি তাদেরও এজেন্ডা থাকে। একটি দেশের ইতিহাস মূলত বিপরীত এজেন্ডার অনুসারিদের মাঝে ক্ষমতা দখলের লড়াই। তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তেমন একটি লড়াই যেমন অতীতে ছিল, এখনও আছে। এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই এ লড়াইয়ে জিততে হলে জরুরি হলো শুধু নিজেকে জানা নয়, শত্রুকে জানাও। এক্ষেত্রে অজ্ঞ থাকায় যা অনিবার্য হয় -তা হলো পরাজয়। তবে নিজেকে জানার অর্থ স্রেফ নিজের সামর্থ্যকে জানা নয়, নিজের দুর্বলতাগুলিকে জানাও। এবং সচেষ্ট হতে হয় সে দুর্বলতাকে কাটিয়ে উঠায়। সে সাথে জানতে হয় শত্রুর শক্তি ও এজেন্ডাকেও।
মুসলিম হওয়ার অর্থ তাই স্রেফ কালেমা পাঠ, নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালন নয়। পবিত্র কোর’আন শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত প্রতিষ্ঠা দিতে নাযিল হয়নি। চায়, এ পৃথিবী পৃষ্ঠে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের পূর্ণ বিজয়। চায়, তাঁর শরিয়তী বিধানের পূর্ণ প্রতিষ্ঠা। ইসলামের বিজয় স্রেফ দোয়া-দরুদে আসে না; সে লক্ষ্যে প্রতিটি মুসলিমের দায়ভারটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিকে পরিণত হওয়া। তখন সে সৈনিক জীবনে অনিবার্য হয় নিজ সামর্থ্যের বিনিয়োগ। এবং হারাম গণ্য হয় অমুসলিম বা ইসলামবিরোধী বাহিনীতে শামিল হয়ে যুদ্ধ লড়া। কারণ মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া আমানতের সবচেয় বড় খেয়ানতটি হয় এরূপ শয়তানী যুদ্ধে শ্রমদান ও প্রাণদানে। এজন্যই ১৯৭১’য়ে কোন ইসলামপন্থি ব্যক্তি ভারতে যায়নি এবং ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নেয়নি। একাজ ছিল ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থিদের। সে সাথে হিন্দুদের। ঈমানদার ব্যক্তি কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ ইত্যাদি নানা পেশার হতে মানুষ হতে পারে। কিন্তু তাতে মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিকও হওয়া থেকে নিষ্কৃতি মেলে না। তবে শত্রুর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধটির শুরু রণাঙ্গণে হয় না। এবং এ যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রটি আগ্নেয়াস্ত্র নয়। সেটি বুদ্ধিবৃত্তি। এবং এ যুদ্ধের শুরুটি হয় বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে। তবে আগ্নেয়াস্ত্রের যুদ্ধে বিরতি বা শেষ আছে, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তির যুদ্ধের কোন শেষ নাই; বিরতিও নাই। মহান নবীজী (সাঃ) তাঁর মক্কী জীবনের ১৩ বছর অবিরাম যুদ্ধ করেছেন বুদ্ধিবৃত্তির এ অঙ্গণে। অস্ত্র হাতে রণাঙ্গণে নেমেছেন মদিনায় হিজরতের পর। বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের হাতিয়ারটি হলো জ্ঞান। চাই তায়াক্কুল, তাফাক্কুর ও তাফাহ্হুম। চাই আক্বলের প্রয়োগ। এবং চাই চিন্তা-ভাবনা ও বোধশক্তির প্রয়োগ। ঈমানদারের পক্ষ থেকে এরূপ আত্মনিয়োগও পবিত্র ইবাদত। বুদ্ধিবৃত্তিক এ জিহাদে নবীজী(সাঃ)’র হাতে ছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবৃত্তিক হাতিয়ার। সেটি জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ ভান্ডার পবিত্র কোর’আন। এরূপ শক্তিশালী হাতিয়ার বিশ্বের আর কোন জাতির কাছেই ছিল না। সে হাতিয়ারের মোকাবেলায় মক্কার কাফেরগণ নেমেছিল আদিম অজ্ঞতা নিয়ে। ফলে সে লড়াইয়ে তাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। বুদ্ধিবৃত্তিক সে জিহাদটি চলে সমগ্র আরব জুড়ে; ফলে রক্তাত্ব যুদ্ধ ছাড়াই গোত্রের পর গোত্র ইসলাম কবুল করে।
আজকের মুসলিমদের দৈন্যতাটি শুধু আগ্নেয়াস্ত্রে নয়। বরং সবচেয়ে বড় দৈন্যতাটি জ্ঞানের অস্ত্রে। সেটি কোর’আনের জ্ঞানে। কোর’আন বুঝার চেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে না বুঝে কোর’আন তেলাওয়াত। নবীজী (সাঃ)’র যুগে আরবের ভেড়ার রাখালগণও কোর’আন বুঝার চেষ্টা করতো। অথচ বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে বহু প্রফেসরও কোর’আন বুঝার সামর্থ্য পায়না। অজ্ঞতা থাকাটি নবীজী (সাঃ)’র সাহাবাদের কাছে কবিরা গুনাহ গণ্য হতো। অথচ আজ হালাল গণ্য হচ্ছে অজ্ঞতা নিয়ে বাঁচা। আল্লামা মহম্মদ ইকবাল যথার্থই বলেছেন, “মুসলিমদের হাতে যখন কোর’আন ছিল তখন তাদের বিশ্বজুড়া শক্তি ও ইজ্জত ছিল। অথচ কোর’আন পরিত্যাগ করায় মুসলিমগণ আজ বিশ্বমাঝে সবচেয়ে পরাজিত ও অপমানিত।”
মুসলিমদের ভয়ানক পরাজয়টি এসেছে বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে। বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে বিজয় আসলে আগ্নেয়াস্ত্রের যুদ্ধ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তখন পরাজিত জাতির জনগণ পরিণত হয় মানসিক গোলামে। মানসিক গোলামকে দিয়ে তখন বিজয়ীরা যা ইচ্ছে তাই করিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে করিডোর নিতে বা দেশের সমুদ্রবন্দর গুলিতে অবাধ প্রবেশাধিকার নিতে ভারতকে তাই যুদ্ধ লড়তে হয়নি। অথচ এমন অধিকার পাকিস্তান থেকে নিতে হলে ভারতকে প্রকান্ড যুদ্ধ লড়তে হতো। মুর্তিপূজা বাঁচাতে মক্কার শয়তানী শক্তিবর্গ অস্ত্র হাতে বহুবার যুদ্ধে নেমেছে। অথচ তেমন একটি যুদ্ধ শয়তানী শক্তিকে বাংলাদেশে করতে হয়নি। বিনাযুদ্ধেই তারা চাপিয়ে দিয়েছে জাতিপূজা, গোত্রপূজা, দলপূজা, নেতাপূজা, ভাষাপূজা, পতাকাপূজা ও ফেরকাপূজার ন্যায় নানারূপ পূজা। অথচ ইসলামের গৌরবকালে এর কোনটাই ছিল না। এরূপ পূজাকে শিরক গণ্য করা হতো। শহীদ মিনার নাম দিয়ে বহু লক্ষ পূজা মন্ডপ গড়া হয়েছে সারা দেশ জুড়ে। মন্দিরে মন্দিরে মুর্তির পদতলে যেরূপ ফুল দেয়া হয়, তেমনি ফুল চড়ানো হয় এসব স্তম্ভের পদতলেও। শয়তানী শক্তির এরূপ দাপটের কারণ, তারা প্রবল ভাবে বিজয়ী বাঙালী মুসলিমের বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে।
শত্রুর হাতে বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণ অধিকৃত হওয়া শুরু হলে কর্পুরের ন্যায় হাওয়ায় হারিয়ে যেতে থাকে মুসলিমের ঈমান, আক্বিদা ও ইসলামি মূল্যবোধ। ভয়ানক বিপদের কারণ, বুদ্ধিবৃত্তিক সে পরাজয়টি বাঙালী মুসলিমের জীবনে দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। ফলে আজ থেকে ১০০ বছর আগে বাঙালী মুসলিমগণ যতটা ইসলামের কাছে ছিল এখন ততটাই দূরে। তখন বিছমিল্লাহ বা আল্লাহর উপর আস্থা নিয়ে অন্ততঃ মুসলিমদের মাঝে বিরোধ ছিল না। অথচ এখন ঈমানের সে মৌল বিশ্বাসটি শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে শাসনতন্ত্রে উল্লেখ করাও অসম্ভব। তখন বাংলাভাষী না হলেও বাঙালী মুসলিমের কাছে দ্বীনি ভাই রূপে গণ্য হওয়াতে ভারতের অন্য রাজ্যের ও অন্য ভাষার মুসলিমের কোন বাধা ছিল না। তেমন একটি মুসলিম ভাতৃত্ববোধের কারণে তারা ভারতে থেকে আসা উদ্বাস্তু মুসলিমদের নিজ নিজ শহর ও মহল্লায় ঘর বাঁধতে দিয়েছে। অথচ এখন তাকে শত্রু গণ্য করা হয়। এবং জায়েজ গণ্য করা হয় সেসব অবাঙালী মুসলিমদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা বানিজ্যের উপর জবরদখল। এবং সে জুলুমের শিকার হলো কয়েক লক্ষ বিহারী। ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে তাদের মহিলাদের। শুধু ইসলাম থেকে নয়, মানবিক পরিচয় থেকেও বাংলাদেশের মানুষ যে কতটা দূরে সরেছে -এ হলো তার নমুনা। আর এসবই সম্ভব হয়েছে চেতনার ভূমি শয়তানের দখলে যাওয়ায়।
দায়ী শিক্ষাব্যবস্থা
এ নৈতিক পতনের জন্য কি বাংলাদেশের জলবায়ু বা আলো-বাতাসকে দায়ী করা যায়? দায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা দেয় জ্ঞান; দেয় বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে লড়াইয়ের হাতিয়ার। মানুষ তো উচ্চতর চরিত্র পায় শিক্ষার গুণে। বুদ্ধিবৃত্তির অঙ্গণে পরাজয় এবং চারিত্রিক স্খলন দেখে নিশ্চিত বলা যায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কাজ দেয়নি। এটি অকেজো। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তক ছিল ব্রিটিশ শাসকেরা। এ শিক্ষার লক্ষ্য ঈমান বৃদ্ধি বা আল্লাহর উপর আস্থা বাড়ানো ছিল না; বরং সেটি ছিল ইসলাম থেকে দ্রুত দূরে সরানো। লক্ষ্য ছিল, ব্রিটিশদের সেবাদাস কেরানী ও লাঠিয়াল বাননো। এরাই এখন কেরানী ও লাঠিয়ালে পরিণত হচ্ছে দেশী দুর্বৃত্ত নেতা-নেত্রীদের। দুর্বৃত্তদের বিজয়ী করতে এরা যেমন ভোট ডাকাতি করে, তেমনি বিরোধীদের গুম-খুনও করে। মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর মহান রাসূল কি শেখালেন – এ শিক্ষাব্যবস্থায় সেটি গুরুত্ব পায় না। ভাল মানুষদের ভাল বাসতে ও দুর্বৃত্তদের ঘৃণা করতেও শেখায় না। ফলে সবচেয়ে দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারি শাসকও বাংলাদেশে নেতা, পিতা, বন্ধু ও মাননীয়’র খেতাব পায়। চোরও প্রধানমন্ত্রী হয়। অথচ শিক্ষার মূল কাজ তো মিথ্যাকে বর্জন এবং সত্যকে চিনতে শেখানো। কাজ, জীবনের মোড়ে মোড়ে পথ দেখানো। কাজ, চরিত্রের বল বাড়ানো। এবং সে সাথে ছাত্র-ছাত্রীর চিত্তে লাগাতর শেখা ও ভাবনার সামর্থ্য বাড়ানো।
বিষ যেমন দেহের অভ্যন্তুরে ঢুকে প্রাণশক্তি বিনষ্ট করে, ইসলাবর্জিত শিক্ষাও তেমনি বিনষ্ট করে ঈমান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামের শত্রুপক্ষের যে বিশাল জনবল -তা বন-জঙ্গলে বা মঠ-মন্দিরে গড়ে উঠেনি। বরং গড়ে উঠেছে এ সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে। তাই সংবিধান থেকে মহান আল্লাহতায়ালার উপর আস্থার বাক্যটি বিলুপ্ত করতে মুর্তিপুজারীদের লাঠি হাতে রাস্তায় নামতে হয়নি। একর্মটি তো তাদেরই যারা এ শিক্ষা ব্যবস্থার ফসল এবং নামে মুসলিম। এরাই কোট-কাছারি, আইন-আদালত, প্রশাসন ও রাজনীতি থেকে ইসলামকে সরিয়েছে। এবং বাড়িয়েছে স্তম্ভ নির্মাণ ও ছবিতে ফুল দেয়া ও মঙ্গল প্রদীপের কদর। ফল দাঁড়িয়েছে, দেশের জনসংখ্যার ৯০ ভাগ মুসলিম -এ পরিসংখ্যানটি নিছক বইয়ের পাতায় রয়ে গেছে; দেশবাসীর কাজ-কর্ম, ঈমান-আক্বীদা, নীতি-নৈতিকতায় নয়।
খাদ্য না পেলে ক্ষুধার্ত মানুষ অখাদ্য খায়। তেমনি সুশিক্ষার ব্যবস্থা না হলে ছাত্র-ছাত্রীগণ কুশিক্ষা নেয়। তখন ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়ে অর্থদান, শ্রমদান, মেধাদান ও রক্তদানের কাজটি কুশিক্ষাপ্রাপ্ত জনগণই নিজ গরজে করে। কুশিক্ষা এভাবেই ইসলামকে পরাজিত করার কাজে শত্রুর হাতিয়ারে পরিণত হয়। অপর দিকে সুশিক্ষা আনে ইসলামের বিজয়। একারণে যারা ইসলামের বিজয় এবং শত্রুর পরাজয় চায় -তারা সর্ব প্রথম যেটিকে গুরুত্ব দেয় সেটি হলো দেশবাসীর সুশিক্ষা। এবং বিলুপ্ত করে কুশিক্ষার সকল প্রতিষ্ঠানগুলি। এটিই তো নবী-রাসূলদের সূন্নত। সাম্প্রতিক ইতিহাসে ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব এবং সেক্যুলার শিক্ষার কুফল যারা সবচেয়ে বেশী বুঝেছিলেন তারা হলেন ইরানের আলেমগণ। ফলে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তাঁরা তিন বছরের জন্য বন্ধ রেখেছিলেন। কোন একটি আদর্শিক রাষ্ট্র বাঁচাতে হলে সে আদর্শের আলোকে গড়ে উঠা নাগরিকও চাই। সেক্যুলার নাগরিকদের দিয়ে সে কাজ হয় না। কিন্তু ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পেলেও বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে বহাল তবিয়তে থেকে যায় ব্রিটিশের প্রবর্তিত সেক্যুলার শিক্ষাব্যাবস্থা। সে সাথে দরজা খুলে দেয়া হয় পাশ্চাত্যের যৌন ফিল্ম এবং রাশিয়া ও চীনের সমাজতান্ত্রিক বইপত্রের আমদানিতে। যুবকদের চেতনায় নৈতিক মহামারি বাড়াতে এগুলিই ভয়ানক জীবাণু রূপে কাজ করে। অথচ পাকিস্তান আমলে দেশের রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটগুলিকে সে জীবাণু-ব্যবসায়ীদের হাতে লিজ দেয়া হয়েছিল। এভাবে দেশের এবং সে সাথে ইসলামের ঘরের শত্রু বাড়ানো হয়েছিল বিপুল হারে। একটি দেশের বিনাশে শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচারমাধ্যম যে কতটা ভয়ানক হতে পারে তারই উদাহরন হলো পাকিস্তান।পাকিস্তান আমলের সে জীবণু সংক্রামিত করে চলেছে বাংলাদেশীদেরও।
হিন্দুদের এজেণ্ডা ও মুসলমানের এজেণ্ডা
শতকরা ৯০ জন মুসলিমের দেশ হলো বাংলাদেশ। অথচ এদেশে ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয়টি অতি বিশাল। এ বিজয় নিয়ে নিয়মিত ফুর্তি হয় ভারতে। এবং শোচনীয় পরাজয়টি এসেছে ইসলামের পক্ষের শিবিরে। ইসলামকে এভাবে পরাজিত রাখার জন্য ভারত, ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাবত ইসলামী-বিরোধী শক্তির কাছে কদর বেড়েছে দেশের দুর্বৃত্ত শাসকচক্রের। ফলে তাদের ভোট ডাকাতির দুর্বৃত্তিও নির্বাচন রূপে স্বীকৃত পায়। তাদের কাছে গ্রহনযোগ্য হয় গুম, খুন, নির্যাতন ও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দ হত্যার নৃশংসতাও। এবং ভূয়সী প্রশংসা পায় ইসলামকে পরাজিত করার এ বাংলাদেশী মডেল। ফলে র্যাব বা পুলিশের হাতে ভয়ানক ভাবে মানবাধিকার লংঘিত হলেও তা নিয়ে পাশ্চাত্যের শাসকগণ নিন্দা দূরে থাক, মুখ খুলতেও রাজী নয়।
ঈমান নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের নিজেদের ভন্ডামীও কি কম? শরিয়তী আইন আইন-আদালত থেকে বিলুপ্ত হলে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের অবমাননার কিছু বাঁকি থাকে কি? শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকলে এবং মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি সামান্যতম ভালবাসা থাকলে এরূপ অবমাননা রুখতে ঢাকার রাজপথে কোটি মানুষের মিছিল হতো। সেটি হয়নি। অথচ এ বাঙালীরাই বিশাল বিশাল মিছিল করে নিজেদের বেতন বাড়াতে বা নিজ দলের নেতাকে জেল থেকে মুক্ত করতে। নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দিলে কি হবে, ইসলামের পরাজয় এবং মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত শরিয়তের অবমাননায় তাদের মাঝে কোন মাতম নাই। বিবেকে দংশনও নাই। বরং এরূপ অবমাননা নিয়েই বাঙালী মুসলিমদের নিত্য দিনের বসবাস।
উপমহাদেশের রাজনীতিতে সবসময়ই দুটি পক্ষ ছিল। দুই পক্ষের দুটি ভিন্ন এজেন্ডাও ছিল। ফলে ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্র নির্মানের দুটি বিপরীত ধারাও ছিল। সেটি ১৯৭১’য়েও ছিল। ১৯৪৭’য়ে সেটি ছিল অখন্ড ভারত নির্মাণের ধারা। এ ধারার নেতৃত্বে ছিল কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ। অপরটি ছিল প্যান-ইসলামিক মুসলিম ধারা। শেষাক্ত এ ধারাটির ফলেই জন্ম নেয় পাকিস্তান। পাকিস্তানের নির্মাণের মূল ভিত্তি ছিল জিন্নাহর দেয়া দ্বি-জাতি তত্ত্ব। যার মূল কথা হলোঃ চিন্তা-চেতনা, মন ও মনন, নাম ও নামকরণ, তাহযিব ও তামুদ্দুদের বিচারে মুসলিমগণ হিন্দুদের থেকে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন জাতি। তাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্র নির্মানে লক্ষ্য, ভিশন ও মিশন তাই হিন্দুদের থেকে ভিন্ন। তাই অখন্ড ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু-ভারতের কাঠামোর মাঝে মুসলমানদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শরিয়ত অনুসরণের অভিলাষ পূরণ অসম্ভব। এ অভিলাষ পূরণে অপরিহার্য গণ্য হয়েছিল পৃথক ও স্বাধীন পাকিস্তানের নির্মাণ। হিন্দু কংগ্রেস ও ব্রিটিশ শাসকদের প্রচণ্ড বিরোধীতা সত্ত্বেও ১৯৪৭’য়ে দ্বি-জাতির সে চেতনাই বিজয়ী হয় এবং প্রতিষ্ঠা পায় পাকিস্তান। কিন্তু অখন্ড-ভারত নির্মানের হিন্দু নেতারা ১৯৪৭’য়ের সে পরাজয়কে মেনে নেয়নি। সুযোগ খুঁজতে থাকে মুসলিমদের সে বিজয়কে পরাজয়ে পরিণত করা। সে সুযোগ আসে ১৯৭১’য়ে। ১৯৭১’য়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় লাভ করে দেশটির পূর্বাঞ্চলে। ফলে পাকিস্তানী চেতনার স্থলে এ অঞ্চলে আবার বেগবান হয় অখন্ড ভারতের হিন্দু ধারা। তবে হিন্দুরা তাদের সে সাম্প্রদায়ীক প্রকল্পকে মুসলিমদের কাছে আকর্ষণীয় করতে গায়ে সেক্যুলারিজমের লেবাস লাগায়।
সেক্যুলারিজমের মুসলিম বিরোধী আদি রূপটি নিয়ে বাংলাদেশের মুসলিমদের মনে প্রচণ্ড অজ্ঞতা থাকলেও সে অজ্ঞতা ভারতীয় মুসলিমদের মাঝে নেই। বরং ভারতের মুসলিম শিশুরাও সেটি বুঝে। তারা সেটি বুঝেছে হিন্দুদের দ্বারা সংঘটিত মুসলিম বিরোধী অসংখ্য দাঙ্গায় সহায়-সম্পদ ও আপনজনদের হারিয়ে; চোখের সামনে মা-বোনদের ধর্ষিতা হতে দেখে। কিন্তু হিন্দু-ভারতের সে কুৎসিত ভয়ংকর রূপটি পর্দার আড়ালে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের মুসলিমদের থেকে। এবং সেটি ভারতসেবী সেক্যুলার মিডিয়ার মাধ্যমে। বরং এরূপ ভারতসেবী মিডিয়ায় কুৎসিত রূপে চিত্রিত করা হয়েছে দেশের ইসলামপন্থি এবং একাত্তরের পাকিস্তানপন্থিদের। আর এভাবে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর মনে সৃষ্টি করা হয়েছে পাকিস্তান-বিরোধী প্রচণ্ড ঘৃনা। সে সাথে লালন করা হয়েছে অখন্ড ভারতের প্রতি মোহ। লাগাতর প্রচারণার ফলে বহু বাংলাদেশী মুসলিমদের মনে এ বিশ্বাসও জন্মেছে যে,পাকিস্তানের সৃষ্টিই ভূল ছিল এবং ভূল ছিল জিন্নাহর দ্বি-জাতি তত্ত্ব। অথচ এরাই আবার বাংলাদেশের সৃষ্টি নিয়ে গর্বিত। কিন্তু ভাবে না, পাকিস্তান সৃষ্টি না হলে আদৌ কি বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো?
অমুসলিম দেশ পরিবেষ্ঠিত এক ক্ষুদ্র মুসলিম দেশে নিজেদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ধর্ম নিয়ে বাঁচতে হলে চিন্তা-চেতনায় বলিষ্ঠ ইম্যুনিটি তথা প্রতিরোধ শক্তি চাই। শারিরীক রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বা টিকা সে ইম্যুনিটিই বাড়ায়। তখন কলেরা,যক্ষা বা পলিও’র মত ভয়ংকর রোগের মধ্যে থেকেও মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারে। ঈমা।নদারের চেতনায় সে ইম্যুনিটিই তীব্রতর করে কোর’আনের জ্ঞান ও ইসলামের দর্শন। তখন উলঙ্গতা, অশ্লিলতা ও নানা রূপ কুফরি মতবাদের মাঝেও মুসলিমগণ ঈমান নিয়ে বাঁচতে পারে। হিজরতের আগে মক্কার মুসলিমগণ তো তেমন এক ইম্যুনিটির কারণেই বলিষ্ঠ ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। অথচ মুসলিম অধ্যুষিত সেক্যুলার রাষ্ট্রগুলিতে অসম্ভব করা হয় ইম্যুনিটি গড়ার সে কাজ। সাম্প্রদায়িক বা মৌলবাদ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের ন্যায় বহু মুসলিম দেশে কোর’আনের জ্ঞানদান অসম্ভব করা হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। মক্কার কাফের সমাজে নবীজী (সাঃ)কে সে কাজ লুকিয়ে লুকিয়ে করতে হতো। এমন কি প্রকাশ্যে নামায পড়াও সেখানে বিপদজনক ছিল।
ইসলামী রাষ্ট্র কেন অপরিহার্য?
কোর’আন শিক্ষার ন্যায় দ্বীনের এ অপরিহার্য কাজের জন্য যে ব্যাপক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো দরকার সেটি যেমন কাফের অধ্যুষিত মক্কায় সম্ভব হয়নি, তেমনি সম্ভব নয় কোন অমুসলিম রাষ্ট্রেও। নবীজীকে তাই মদিনায় গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রের কাজ নিছক হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ বা কলকারখানা নির্মান নয়। বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। অনৈসলামের বিরুদ্ধে প্রতিটি নাগরিকের মনে ইম্যুনিটি গড়ে তোলা। নইলে অসম্ভব হয় দেশবাসীকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো। অথচ জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা আর কি হতে পারে? খাদ্য-পানীয় তো বিশ্বের সবদেশেই জুটে।এমন কি পশুও না খেয়ে মরে না। কিন্তু মুসলিম মন ও মানস কোর’আনী জ্ঞানের পুষ্টি পায় এবং ঈমানী পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠে একমাত্র ইসলামি রাষ্ট্রে। ইসলাম রাষ্ট্রের নির্মাণ তো এজন্যই ফরয। নইলে কুফরি ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতির স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। তখন সে শুধু বেঁচে থাকে পিতার দেয়া মুসলিম নামটি নিয়ে, মুসলিম চরিত্র নিয়ে নয়। সোভিয়েত রাশিয়ার কম্যুনিস্ট কবলিত মুসলিমগণ তো বহুলাংশে হারিয়ে গেছে একারণেই। একই কারণে বহু মুসলিম হারিয়ে যাচ্ছে পাশ্চত্যের দেশগুলিতেও।
বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট একটি দেশ হলে কি হবে, ১৯৭১’য়ে যে দর্শনের উপর দেশটি জন্ম নিয়েছিল তাতে মুসলিম রাষ্ট্রের কাঙ্খিত সে মূল কাজটিই গুরুত্ব হারিয়েছিল। বরং মাথায় তোলা হয়েছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষবাদ। অথচ কোরআন ও সূন্নাহ মতে এ তিনটি মতবাদে বিশ্বাস করাই হারাম। মুসলিম হওয়ার অর্থ ধর্ম-নিরপেক্ষ হওয়া নয়, বরং সর্ব-অবস্থায় ইসলামের পক্ষ নেয়া। এবং ইসলামের পক্ষে সে বিশ্বাসের বলিষ্ট প্রকাশ ঘটাতে হয় রাজনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ময়দানে। পক্ষ নেয়ার অর্থ, ইসলামের বিজয়ে নিজের অর্থ, শ্রম ও রক্ত দেয়া। শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী তো সে কাজে শহীদ হয়েছেন। মুসলিম কখনও জাতীয়তাবাদী হয় না, হয় প্যান-ইসলামিক। নিজের মূল পরিচয়টি সে ভাষা, ভূগোল, বর্ণ বা গোত্র থেকে পায় না। পায় ঈমান থেকে। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে ব্যক্তির এ পরিচয়টিই সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। রোজ হাশরের বিচার দিনে কে কোন ভাষার বা দেশের সে প্রশ্ন উঠবে না, উঠবে ঈমান ও আমল নিয়ে। আর সমাজতন্ত্র? সেটি আজ খোদ সোভিয়েত রাশিয়াতেই আবর্জনার স্তুপে। অথচ শেখ মুজিব সে আবর্জনাও বাংলাদেশীদের মাথায় চাপিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, সে অধিকার তাকে কে দিয়েছিল? সে কাজে তিনি তো জনগণ থেকে কোন রায় নেননি। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে এটি কোন ইস্যুও ছিল না। প্রভুভক্ত মুজিব বাঙালী মুসলিমদের মাথার উপর এসব কুফরি মতবাদগুলি চাপিয়েছেন নিছক নিজের প্রভুদেশ ভারত ও সোভিয়েত রাশিয়াকে খুশি করতে। ইসলামশূণ্য ব্যক্তিগণ শুধু নিজেরাই শয়তানের এজেন্ট হয় না, এজেন্ট করতে চায় দেশবাসীকেও –মুজিব হলো তারই উদাহরণ। নেতা নির্বাচনে সতর্ক হওয়াটি এজন্যই দেশবাসীর ঈমানী দায়িত্ব।
শেখ মুজিবের আরেক গুরুতর অপরাধ, ক্ষমতা হাতে পেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে কুফরি ধ্যান-ধারণা বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন না দিয়ে বরং টিকা লাগিয়েছেন ইসলামের বিরুদ্ধে। এক দিকে যেমন বন্ধ করেছেন বিসমিল্লাহ, অপর দিকে জাতীয় সঙ্গিত রূপে চাপিয়ে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথে পৌত্তলিক চেতনার গান। জোয়ার এনেছেন ইসলাম বিরোধী প্রচারণার। এ ভাবে কঠিন করেছেন বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের মনে ইসলামের মৌল শিক্ষার প্রবেশ। জিহাদ বা শরিয়তের প্রতিষ্ঠার ন্যায় ইসলামের এ মৌল বিষয়গুলো থেকে বাংলাদেশের মানুষেরা আজ যেরূপ দূরে –তা তো একারণেই। নতুন প্রজন্ম পায়নি দুষিত ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে ইসলামী জ্ঞানলব্ধ ইম্যুনিটি। ফলে জোয়ারের পানির ন্যায় তাদের চেতনায় ঢুকেছে হিন্দু রাজনীতির দর্শন -যার মূল কথাটি আজও অবিকল সেইটিই যা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে বলা হতো। যে দেশটি ইসলামী নয় সে দেশে ইম্যুনিটি গড়ার ফরয দায়িত্বটি পালন করে মসজিদ-মাদ্রাসা, আলেম-উলামা, ইসলামি সংগঠন, লেখক, বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ। তাঁরা সেটি করেন জনগণের মাঝে কোরআন-হাদিস ও ইসলামী দর্শনের জ্ঞান বাড়িয়ে। নবীজী (সাঃ)র মক্কী জীবন তো সেটিরই সূন্নত পেশ করে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার যেমন সে কাজ করেনি, সঠিক ভাবে করছে না দেশের আলেম-উলামাগণ। ইসলামি সংগঠনগুলো ব্যস্ত ক্যাডার-বৃদ্ধি,অর্থ-বৃদ্ধি ও ভোট-বৃদ্ধির কাজে, কোরআনের জ্ঞান ও ইসলামী দর্শন বাড়াতে নয়। তাদের অর্থের বেশীর ভাগ ব্যয় হয় দলীয় আমলা প্রতিপালনে। সে সাথে দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলো অধিকৃত ভ্রষ্ট চরিত্রের মানুষদের হাতে। সেখানে দখল জমিয়ে বসে আছে সেক্যুলার মোড়ল-মাতবর, রাজনৈতিক ক্যাডার ও আলেমের লেবাসধারী কিছু রাজনৈতিক বোধশূন্য ব্যক্তি। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও ইসলামের বিজয় বাড়ছে না। বরং মুসলিম নরনারীদের চেতনা রাজ্যে দূষণ বাড়ছে ভয়ানক ভাবে।
শত্রুশক্তির বিজয় এবং ঈমানদারের দায়ভার
১৯৭১’য়ে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের ন্যায় একটি ইসলাম বিরোধী শক্তির যে বিশাল সামরিক বিজয় এসেছিল তাতে শুধু পাকিস্তানের ভূগোলই পাল্টে যায়নি, পাল্টে গেছে বাংলাদেশী মুসলিমদের মনের ভূগোলও। ১৬ই ডিসেম্বরের বিজয়-উৎসবের সাথে ভারত আরেকটি মহা-উৎসব করতে পারে চেতনা রাজ্যের এ বিশাল বিজয় নিয়ে। বাঙালী হিন্দুর যখন রমরমা রেনেসাঁ, বাঙালী মুসলিমদের উপর এমন আদর্শিক বিজয় তখনও তারা পায়নি। তাই ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবের অতি বড় অপরাধ হলো, আগ্রাসী হিন্দুদের কোলে তিনি এরূপ একটি সহজ বিজয় তুলে দিয়েছেন। শত্রুর কোন সামরিক বিজয়ই পরাজিত দেশের জনগণের জীবনে একাকী আসে না। সাথে আনে আদর্শিক, নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিজয়ও। বাংলাদেশের ভূমিতে ভারতের বিশাল বিজয় তাই একাত্তরে এসে থেমে যায়নি। বিজয়ের পর বিজয় আসছে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে।
একাত্তরে ভারতীয়দের লক্ষ্য শুধু অখন্ড পাকিস্তানের বিনাশ ছিল না, ছিল ইসলামী চেতনার বিনাশও। তাছাড়া তাদের একাত্তরের যুদ্ধটি নিছক পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ছিল না, ছিল ইসলামের মৌল বিশ্বাস ও বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধেও। পাকিস্তান-বিরোধী যুদ্ধটি শেষ হয়েছে একাত্তরেই। কিন্তু শেষ হয়নি বাংলাদেশের মাটি থেকে ইসলামপন্থিদের নির্মূলের কাজ। তাই ভারতের কাছে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনও শেষ হয়নি। ভারত ভোট-ডাকাত হাসিনাকে রাজনৈতিক ভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে তো সে প্রয়োজনেই। বিদেশের দরবারে হাসিনার পক্ষে তারাই সাফাই গাচ্ছে। ভারত তার পদলেহীদের দিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ একটা অস্থির অবস্থা বজায় রেখেছে সেই ১৯৭১ থেকেই। তাছাড়া আওয়ামী লীগের আচরণ দেখেও বোঝা যায়, ভারতের পক্ষ থেকে বাঁকি কাজটি সমাধার মূল দায়িত্বটি পেয়েছে তারাই। এরই প্রমাণ, বেছে বেছে ইসলামী মিডিয়া নিষিদ্ধকরণ, ইসলামী দলের নেতাদের বিনা বিচারে গ্রেফতার ও পরিকল্পিত ফাঁসি, শাপলা চত্ত্বরে গণহত্যা, মাদ্রাসার পাঠ্যসূচী ও মসজিদে খোতবার উপর নিয়ন্ত্রণ, অফিসে ও ঘরে ঘরে গিয়ে ইসলামী বই বাজেয়াপ্ত-করণ -ইত্যাদি কর্মসূচী। এভাবে বাংলাদেশের সরকার চলছে ভারতীয় এজেন্ডার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিয়ে। বাংলাদেশের মুসলিমদের সামনে এখন এক বিশাল পরীক্ষা। সেটি এই শত্রুশক্তির অধিকৃতি থেকে মুক্তির। নইলে পরাজয় দীর্ঘায়ীত হবে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার। সে সুযোগে শয়তান লক্ষ লক্ষ মানুষকে নেবে জাহান্নামে। পরীক্ষার হলে নিষ্ক্রীয় থাকলে পাস জুটে না। তেমন ইসলামবিরোধী শক্তির এ অধিকৃতির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রীয় থাকলে পাস জুটবে না আখেরাতেও। মহান আল্লাহতায়ালা হাত-পা, জিহবা, মেধা ও মগজ দিয়েছেন তো পার্থিক এ পরীক্ষায় পাশের সুযোগ করে দিতে। পরকালে জাহান্নাম অনিবার্য হয় যদি এ আমানতকে কাজে লাগানো না হয়। আখেরাতের উপর যাদের সামান্যতম বিশ্বাস আছে তাদের অন্ততঃ এ নিয়ে ভাবা উচিত। ১ম সংস্করণ ০৭/০৬/২০১১; ২য় সংস্করণ ১৬/১১/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018