বাংলাদেশে কিরূপে সম্ভব সভ্য মানুষ ও সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 8, 2025
- বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
দৃষ্টিনন্দন সুন্দর গহনা নির্মাণে চাই পরিশুদ্ধ খাঁটি সোনা। ভেজাল সোনায় সেটি হয়না। এজন্যই খনির স্বর্ণের অপরিশোধিত পাথর টুকরোকে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ করতে হয়। পরিশুদ্ধির কাজটি যতি সুন্দর হয় ততই তা মূল্য পায়। বিষয়টি মানুষদের বেলায়ও। সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে চাই খাঁটি মানুষ। জাহেল লোকদের দিয়ে সে কাজটি কখনোই হয় না। পরিশুদ্ধিকরণের সে কাজটি করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। একটি জাতির জীবনে এটিই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একটি জাতি কতটা সফল হবে ও গৌরবের অধিকারী হবে -সেটি নির্ভর করে এই শিক্ষা ব্যবস্থার উপর। দুর্বৃত্তির প্লাবনে ভাসা একটি জাতিকে দেখে নিশ্চিত বলা যায়, ব্যর্থতাটি দেশটির শিক্ষাব্যবস্থার। যুদ্ধটি এখানে অজ্ঞতার বিরুদ্ধে। মুসলিমদের জন্য এটিই পবিত্র জিহাদ। এবং সে জিহাদের অস্ত্র হলো পবিত্র কুর’আন। প্রতিটি মুসলিমের ফরজ শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত নয়, বরং ফরজ হলো এই জিহাদ। মহান আল্লাহতায়ালা এই জিহাদকে সুরা ফুর’কানের ৬২ নম্বর আয়াতে “জিহাদান কবিরা” তথা বড় জিহাদ বলেছেন। জাহেল মানুষদেরকে খাঁটি মানুষ বানায় কুর’আনের এই জ্ঞান।
বাংলাদেশে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দেশটির কুর‘আনের জ্ঞানশূন্য জাহেল জনগণ। দেশটিতে জনসংখ্যা বিপুল ভাবে বেড়েছে, কিন্তু পরিশুদ্ধ মানুষ বাড়েনি। ফলে গড়ে উঠেনি সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অধিকৃত হয়েছে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় অতি অসভ্য ও নৃশংস মানুষদের হাতে। অজ্ঞ মানুষের অবস্থা অনেকটাই অন্ধ মানুষের ন্যায়। তারা ভালো ও মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে জানে না। ফলে নির্বাচন হলে তারা দুর্বৃত্ত অপরাধীদেরও বিপুল ভোটে দিয়ে নির্বাচিত করে। বাংলাদেশের নির্বাচনগুলিতে সেটি বার বার হয়েছে। এবং সেটি যে আগামীতেও হবে -সে আলাম প্রচুর। কারণ দেশে সরকারের বদল হলেও জনগণ একটুও বদলায়নি। বার বার সেটিই হয়েছে। ফলে এক দুর্বৃত্ত শাসনের অবসান হলে নতুত আরেক দল দুর্বৃত্ত ক্ষমতায় বসে। তাই ক্ষমতার বদল হয়, কিন্তু সমস্যা ও সংকটের বদল হয় না। এমন দেশে শেখ মুজিবের ন্যায় একজন ফ্যাসিস্ট, খুনি, ভারতের সেবাদাস এবং ভয়ানক অপরাধী ব্য,ক্তিও জাতির পিতা, নেতা ও বঙ্গবন্ধুর খেতাব পাবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? এবং হাসিনার ন্যায় একজন গণহত্যার অপরাধী, আয়না ঘরের জননী, ভোটডাকাত ও ফ্যাসিস্ট সমাজে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপে সম্বোধিত হবে, সেটিও অস্বাভাবিক? বাংলাদেশীদের জন্য ভয়ানক বিপদের কারণ হলো কুর’আনী জ্ঞান শুন্য এই জাহেল জনগণ। সরকার যতই বদল হোক, এ জাহেল জনগণ না বদলালে দেশের জন্য কোন ভবিষ্যৎ নাই।
মহান নবীজী (সা:)’র হাতে কোন যাদু ছিল না; তাঁর হাতে ছিল পবিত্র কুর’আন। সেটি হলো মানব জাতির জন্য মহান রবের সার্বশ্রেষ্ঠ দান। তিনি জাহেল আরবদের সভ্য শুরু করেছিলেন এই পবিত্র কুর’আন থেকে প্রা’প্ত জ্ঞানে জ্ঞানবান করে। অথচ সে কুর’আন বাংলাদেশে চরম অবহেলার শিকার। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এ কিতাবে চুমু খেতে রাজী, বার বার তেলাওয়াত করতেও রাজী, কিন্তু বুঝতে রাজী নয়। হিদায়েতের এ কিতাব থেকে তারা হিদায়েত নিতে রাজী নয়। ফলে ইসলামের পথ ছেড়ে তারা বেছে নিয়ে সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, ভোগবাদ, পুঁজিবাদ ও বাম ধারার পথ।
বুঝতে হবে, জ্ঞানই মানুষকে পাল্টায় এবং তার চরিত্রে পরিশুদ্ধি ও বিপ্লব আনে। কুর’আনের জ্ঞান ছাড়া নামাজী, রোজাদার ও হাজী হওয়া যায়, কিন্তু সত্যিকার ঈমানদার হওয়া যায় না। কুরআনী জ্ঞানের অজ্ঞতায় ঈমান বাঁচেনা -কারণ ঈমান বাচাতে হলে তাতে পুষ্টি জোগাতে হয় পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান থেকে। সে কুর’আনী জ্ঞানশূণ্যতার কারণে বাংলাদেশের জনপদ, রাজনীতি ও অফিস-আদালত ঈমানদারের বদলে মুনাফিক দিয়ে ভর্তি। এরা নামাজ-রোজা পালন করেও মিথ্যা বলে, ঘুষ খায়, সূদ খায় এবং প্রতারণা করে। ফলে ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্ট্র। বাংলাদেশের বুকে সভ্য ও সুন্দর রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে জনগণকে প্রথমে খাঁটি ঈমানদার মানুষে পরিণত করতে হবে। সে কাজে কুর’আন অতীতে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে; আজও তার বিকল্প নাই। বুঝতে হবে কুর’আন সর্বকালের সর্ব মানুষের জ্ন্য, মহান আল্লাহ তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ এ দানটি তাই কখনোই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়না।
নবীজী (সা:)’র নবুয়ত প্রাপ্তির পর সর্বপ্রথম ৫ ওয়াক্ত নামাজ ও মাহে রমযানের এক মাস রোজা ফরজ হয়নি। বরং সর্বপ্রথম ফরজ হয়েছিল পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞানার্জন -অর্থাৎ ঈমানদার বানানোর কাজ। এ থেকে বুঝা যায়, পবিত্র কুর’আনের গুরুত্ব। অথচ শুরুর সে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বাংলাদেশের বুকে কখনোই হয়নি। এবং এখনো হচ্ছে না। ফলে বাঙ্গালি মুসলিমগণ পাচ্ছে না ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার সুযোগ। ফলে ইতিহাস গড়ছে অবাধ্য ও মুনাফিক রূপে।
বাংলাদেশের মানুষ যতদিন কুর‘আনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকবে ততদিন এদেশে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কোন সম্ভাবনাই নেই। বার বার নির্বাচন হলেও দেশের সমস্যা সমাধান হবে না। কোন ফেরেশতা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলেও সভ্য সুন্দর রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ সম্ভব হবে না। কারণ কাজের শুরুটি হতে জনগণের স্তর থেকে। ইট না হলে যেমন বিল্ডিং নির্মিত হয়না; তেমনি ঈমানদার না হলে সভ্য রাষ্ট্র তথা ইসলামী রাষ্ট্র নির্মিত হয়না। অতি বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই সহজ কথাটি বুঝতে বাঙালি মুসলিমরা রাজি নয়। বুঝলে তো তাদের মাঝে কুর’আন শিক্ষায় প্রবল আগ্রহ দেখা যেত।
তাই নবীজী যেখান থেকে ঈমানদার মানুষ সৃষ্টি ও সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজের শুরু করেছিলেন আমাদেরও সেখান থেকেই শুরু করতে হবে। তাই শুরুটি হতে হবে পবিত্র কুর’আন থেকে জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে। নবীজী (সা;)’র প্রসিদ্ধ হাদিস: “যারা কুরআন শিক্ষা করে এবং কুরআন শিক্ষা দেয় -তারাই সবার মাঝে শ্রেষ্ঠ মানুষ।” তাই মুসলিমের তাড়না থাকতে হবে শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার। আর যারা শ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে বেড়ে উঠে, একমাত্র তারাই তো শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারে। এ সহজ সত্য বিষয়টি আমাদের সবাইকে সর্বপ্রথম বুঝতে হবে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কল-কারখানা যতই নির্মিত হোক, মানুষের নিজের নির্মাণের কাজটি যদি সঠিক ভাবে না হয়, তবে কি সভ্য সমাজ ও সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণের কাজে সে অংশ নিতে পারে?
মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে এ হিসাব কখনোই দিতে হবে না যে, দেশে কতগুলি সড়ক, ব্রিজ বা কারখানা নির্মিত হয়েছিল। বরং এ হিসাব অবশ্যই দিতে হবে, কতটুকু সফল ভাবে হয়েছিল ঈমানদার মানুষ ও ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। কারণ, সে নির্মাণ কাজের সাথে জড়িত মহান আল্লাহ তায়ালার নিজস্ব এজেন্ডা। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালা তো চান তার জমিনে প্রতিষ্ঠা পাক তাঁর নিজের সার্বভৌমত্ব এবং তাঁর নিজের শরিয়তী আইন। তিন চান, মিথ্যা, দুর্বৃত্তি ও অন্যায়ের নির্মূল (নেহি আনিল মুনকার) এবং সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা (আ’মিরু বিল মারুফ)। চান, প্রতিটি ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র পরিণত হোক তাঁর সে এজেন্ডাকে বিজয়ী করার হাতিয়ারে। একাজের জন্যই তো প্রতিটি মুসলিম হলো তার খলিফা ও সৈনিক। তিনি চান, তার সৈনিকেরা সিসাঢালা দেয়ালের ন্যায় একতাবদ্ধ ভাবে জিহাদ করবে তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করতে। কিন্তু বাঙালি মুসলিম যে দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? তারা রাষ্ট্রকে পরিণত করেছে শয়তানী শক্তির হাতিয়ারে। এবং তাদের কাজ হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান, আদালত, প্রশাসনন ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ইসলামকে পরাজিত রাখার কাজে। এ অপরাধ কি রোজ হাশরের বিচার দিনে তাদেরকে আসামীর কাঠগড়ায় খাড়া করবে না? ০৮/০৩/২০২৫
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাংলাদেশে কিরূপে সম্ভব সভ্য মানুষ ও সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ?
- স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচ ও বাঙালি মুসলিমের ব্যর্থতা
- বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে রুখতে হবে ভূমিদস্যুদের
- রাষ্ট্র কিরূপে জান্নাতের বাহন হয় ও জনগণ কিরূপে জান্নাতের যোগ্য হয়?
- মুসলিমদের হাতে পবিত্র কুর’আন অবমাননা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- March 2025
- February 2025
- January 2025
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018