বাংলাদেশে দেশধ্বংসী রাজনীতি

রাজনীতিঃ গুরুত্ব ও ব্যর্থতার ভয়াবহতা

রাজনীতি যেমন দেশগড়ার অপরিহার্য হাতিয়ার, তেমনি হতে পারে দেশধ্বংসেরও। নানা বর্ণ,নানা ভাষা ও নানা অঞ্চলে বিভক্ত মানুষের মাঝে রাজনৈতিক দলগুলি যেমন সুদৃঢ় বন্ধন গড়তে পারে, তেমনি এ অস্ত্রের সাহায্যে দেশবাসীর মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘাতেরও জন্ম দিতে পারে। কলকারখানা, রাস্তাঘাট, ক্ষেতখামার বা শিল্পকলায় ব্যর্থতার কারণে দেশ দুর্বল হয় বটে তবে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায় না। দেশ বিধ্বস্ত হয় এবং রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায় বিধ্বংসী রাজনীতির কারণে। একশত বছর পূর্বের ঐক্যবদ্ধ উসমানিয়া খেলাফতের মানচিত্র আজ  ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। আরবদের এক ভাষা,এক ধর্ম ও এক বর্ণের ভূমি আজ  ২২ টুকরায় বিভক্ত এবং তার অনেকেগুলিই এখন বিদেশী শত্রুর পদানত এবং রক্তাত্ত্ব। বিধ্বংসী রাজনীতির কারণে আরবদের ১৪ শত বছরের পূর্বের বিশ্বশক্তির ইজ্জত যেমন লুণ্ঠিত হয়েছে তেমনি ঘাড়ে চেপেছে পরাজয়, পরাধীনতা এবং অপমান। তেমনি ১৭৫৭ সালের বাংলা যেমন নেই,১৯৪৭ সালের পাকিস্তানও নাই। আগামীতেও আজকের বহুদেশ যে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে তা নিয়েও কি সন্দেহ আাছে?

এরিস্টোটল মানুষকে সংজ্ঞায়ীত করেছেন “পলিটিক্যাল এ্যানিমাল” বা রাজনৈতিক জীব রূপে। পশুর মধ্যে রাজনীতি নেই। রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে ভাবনাও নেই। আছে শুধু জৈবিক ভাবে বাঁচা ও বংশবিস্তার, এবং সে লক্ষ্যে আছে স্রেফ পানাহার ও যৌন প্রেরণা। অথচ রাজনীতির মাঝে থাকে নিজেকে নিয়ে বাঁচার পাশাপাশি সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বকে নিয়ে ভাবনা। মানুষ পশু থেকে ভিন্নতর ও উচ্চতর পরিচয় পায়,এবং সমাজ ও সভ্যতা গড়ে তোলে বস্তুত এই রাজনৈতিক চেতনার কারণে। এখানে কাজ করে কল্যাণ-কর্মের পাশাপাশি সর্বপ্রকার অকল্যাণ থেকে দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষা করার ভাবনা। মানুষ স্রেফ মানুষ রূপে বাঁচে না। সে বাঁচে হয় ঈমানদার রূপে অথবা বেঈমান রূপে। মানবজাতির এ বিভক্তিটি হাবিল ও কাবিল থেকে। একটি আল্লাহর আনুগত্যের,অপরটি আল্লাহর অবাধ্যতার। এক দল বাঁচে “ফি সাবিলিল্লাহ” তথা আল্লাহর পথে,আরেক দল বাচেঁ “ফি সাবিলিশ শায়তান” তথা শয়তানের পথে। এভাবে কাজ করে রাজনীতির দুটি ভিন্ন ধারা এবং দুটি ভিন্ন এজেন্ডা। নিজ নিজ ধারায় বাঁচতে গিয়ে তারা যেমন অর্থ, শ্রম ও মেধা দেয়,তেমনি প্রাণও দেয়। তবে মুসলমান বাঁচে এরিস্টোটলের সংজ্ঞায়ীত রাজনৈতিক পশু হিসাবে নয়,বরং আল্লাহতে আত্মসমর্পিত ঈমানদার বান্দাহ বা গোলাম রূপে। আর সে আত্মসমর্পিত মুসলিম পরিচয়টির কারণে তাঁর রাজনীতিতে আসে বিপ্লবী পরিবর্তন। এমন বিপ্লবী মানুষদের কারণেই সমাজ ও রাষ্ট্রজুড়ে ঘটে মহাবিপ্লব। কোন পথে কল্যাণ এবং কোন পথে অকল্যাণ –সে বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশনাকে সে প্রতিপদে মেনে নেয়। তখন সে অন্যদের ন্যায় শুধু রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে না,বরং সে রাষ্ট্র ও সমাজকে আল্লাহর নির্দেশিত বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত করে। এখানে ঘটে ঈমানদারের সর্ববিধ সামর্থের বিনিয়োগ। একাজে সে অর্থ দেয়, শ্রম দেয়, মেধা দেয়, এমনকি প্রাণও দেয়। তাঁর এ রাজনীতি তখন রূপ নেয় পবিত্র “জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ”য়। একারণেই মুসলমানের জীবনে এরিস্টোটলের রাজনৈতিক পশুত্ব যেমন নাই,তেমনি মেকিয়াবেলীর রাজনৈতিক ছলচাতুরিও নেই,বরং আছে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যক্তি,সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিচালিত করার পবিত্র জিহাদ। মুসলমান হওয়ার অর্থই হল এ পবিত্র জিহাদের সাথে আমৃত্যু সম্পৃক্ততা। কিন্তু রাজনীতিতে বেঈমানি যখন প্রবলতর হয় তখন বিলুপ্ত হয় আল্লাহতে আত্মসমর্পণের সে চেতনা। রাজনীতি তখন পরিণত হয় ক্ষমতাদখলের হাতিয়ারে। রাষ্ট্র ও সমাজ জুড়ে তখন প্রতিষ্ঠা পায় স্বার্থসিদ্ধির প্রকল্প এবং পরাজিত হয় আল্লাহর শরিয়ত। সবচেয়ে বড় বেঈমানী এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বড় বিদ্রোহটা ঘটে মূলত এক্ষেত্রে।এবং বাংলাদেশের রাজনীতির এটিই প্রবলতর দিক।

 

সফলতা শ্রেষ্ঠতর মানব সৃষ্টিতে

একটি জাতি কতটা বিপুল সংখ্যক মানুষকে এমন কল্যাণধর্মী চেতনা নিয়ে রাজনীতিতে আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে পারলো তার উপর নির্ভর করে সে জাতি কতটা মানবিক ভাবে বেড়ে উঠবে এবং কতটা উচ্চতর সভ্যতা নির্মাণ করবে সে বিষয়টি। এক্ষেত্রে ইসলামের শেষ নবী(সাঃ)র সফলতা ছিল প্রায় শতভাগ। তিনি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিককে তাদের সর্ববিধ সামর্থ নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নামাতে পেরেছিলেন। সমগ্র মানব ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কোন কালেই ঘটেনি। ফলে কোন কালে এতবড় সভ্যতাও নির্মিত হয়নি। সে সভ্যতার অলংকার পিরামিড ছিল না,বড় বড়া প্রাসাদ বা তাজমহলও ছিল না। ছিল বিপুল সংখ্যায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সৃষ্টির। সে রাজনীতিতে সাহাবাদের সংশ্লিষ্টতা শুধু নবীজী (সাঃ)র প্রতি মৌখিক সমর্থণ­­-দান বা তাঁর প্রতি নির্বাচনী ভোটদান ছিল না;বরং সেটি ছিল অর্থ,শ্রম, সময় এবং প্রাণদানের মধ্য দিয়ে। আবু বকর (রাঃ)এর মত অনেক সাহাবী তাদের জীবনের সমগ্র সঞ্চয় নিয়ে ময়দানে হাজির হয়েছিলেন। বদর,ওহুদ,খন্দক,হুনায়ুন ও তাবুকের ন্যায় প্রতিটি জিহাদে প্রাণদানের ব্রত নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সাহাবাদের প্রায় সবাই। সে ধারা অব্যাহত ছিল নবীজী (সাঃ)র মৃত্যুর পরও। তাবুকের যুদ্ধে শামিল হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মাত্র তিনজন সাহাবী। সে ব্যর্থতার কারণটি ইসলামের মিশনের সাথে তাদের বিরুদ্ধচারণ ছিল না,বরং ছিল অলসতা ও গাফলতি। সে জন্য তারা চরম অনুতপ্তও হয়েছিলেন। কিন্তু সে ব্যর্থতার জন্য তাঁরা সামাজিক বয়কটের মুখে পড়েছিলেন রাষ্ট্রের সমগ্র নাগরিকদের পক্ষ থেকে। সে আত্ম-বিনিয়োগ ও কোরবানীর কারণেই রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের ন্যায় দুই বিশাল বিশ্বশক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মুসলমানগণ সেদিন প্রধানতম বিশ্বশক্তি রূপে আবির্ভুত হয়েছিল এবং জন্ম দিয়েছিল সমগ্র মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা।

দেশবাসীর কল্যাণ নিয়ে এমন ভাবনা ও আত্মনিয়োগ পশুর থাকে না। ফলে মানুষের মাঝে আজীবন বসবাস হলেও মানুষ থেকে পশুর বিশাল পার্থক্যটি থেকেই যায়। তবে এমন পশুত্ব নিয়ে সমাজে বসবাস করে বিপুল সংখ্যক মানুষও। দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণ নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নাই,অঙ্গিকার ও আত্মনিয়োগও নাই। দেশ শত্রু শক্তির হাতে অধিকৃত হলে গরু-ভেড়া যেমন দুশ্চিন্তায় পড়ে না বা ঘাস খাওয়ায় বিরতি দেয় না,এরাও তেমনি নিজের নিত্যদিনের কাজকর্ম ফেলে প্রতিরোধে নামে না। পরাজয় নিয়ে তাদের দুঃখবোধ থাকে না, বিবেকে দংশনও হয় না। তাই পলাশী যুদ্ধে বিজয়ের পর ইংরেজ বাহিনী যখন মুর্শিদাবাদে বিজয় মিছিল করেছিল,সে বিজয় মিছিল দেখতে এমন চরিত্রের মানুষেরা সেখানে কাতার বেঁধেছিল। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের হাতে দেশ অধিকৃত হলেও তা নিয়ে তাদের মনে দুঃখবোধ জাগেনি। অথচ দেশবাসীর কল্যাণে আত্মনিয়োগ ইসলামে ফরজ। ব্যক্তি শুধু এ জীবনে নয়,পরকালেও সফলতা পায় এমন আত্মনিয়োগের কারণে। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কল্যাণকর্মে আত্মনিয়োগের সে নির্দেশটি এসেছে এভাবে,“তোমাদের মধ্য থেকে অবশ্যই একটি দল থাকতে হবে যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং ন্যায়-কর্মের নির্দেশ দিবে এবং অন্যায়কে রুখবে।এবং তারাই হলো প্রকৃত সফলকাম।”–(সুরা আল ইমরান,আয়াত ১০৪)। আর এখানেই মুসলমানের রাজনীতির মূল প্রেরণা। কোরআনে নির্দেশিত “অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা” হলো তার রাজনীতির মূল কথা। কল্যাণমুখি ইসলামি রাষ্ট্রের নির্মান ঘটে মূলত এপথ ধরেই।

 

যে ভয়াবহতা দেশধ্বংসের রাজনীতিতে 

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা শতাধিক। দলগুলির সাথে জড়িত বহু লক্ষ নেতা-কর্মী ও সমর্থক। দলের পক্ষে তারা প্রচরণা করে,মিছিল-মিটিং করে,অর্থ দেয়,ভোট দেয়,প্রয়োজনে লড়াই করে এবং রক্তও দেয়।বাংলাদেশের সমগ্র ইতিহাসে আর কোন কালেই এত দল জন্ম নেয়নি,এত বিপুল সংখ্যক মানুষও রাজনীতিতে অংশ নেয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হলো,এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সংশ্লিষ্টতায় রাজনীতি কতটুকু সৃষ্টিশীল হয়েছে? দেশ এবং দেশবাসীরই বা কতটুকু কল্যাণ হয়েছে? আল্লাহতায়ালা ঈমানদারদের জন্য “অন্যয়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা”র যে এজেণ্ডা বেঁধে দিয়েছেন সেটাই বা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? কতটা নির্মূল ঘটেছে দুর্বৃত্তি ও অন্যায়ের? দুর্নীতিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হওয়ার মাধ্যমে কি এটাই প্রমানিত হয় না যে,এক্ষেত্রে ব্যর্থতা বিশাল। অথচ জনকল্যাণের এটাই সর্বোশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। দেশবাসীর নীতি-নৈতিকতা,শিক্ষা-সংস্কৃতি,আইন-আদালত,স্বাস্থ্য,কৃষি,শিল্প,বাণিজ্য,বিজ্ঞান ও রাস্তাঘাটসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় রাজনীতির অঙ্গন থেকে। ফলে রাজনীতি দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হলে তাতে দেশ ও দেশবাসীর সবচেয়ে বড় অকল্যাণটি ঘটে। তাই রাজনীতিবিদদের কাজ শুধু দল গড়া বা দলাদলি করা নয়। নিছক নির্বাচনে অংশ নেয়া বা নির্বাচনে শেষে সরকার গঠন করাও নয়। বরং লক্ষ্য,দেশের কল্যাণে সম্ভাব্য সবকিছু করা। রাজনীতির সফলতা যাচাই হয়,সে লক্ষ্য অর্জনে রাজনীতি কতটা সফল হলো তা থেকে।

রাজনীতি কোন ব্যক্তি,পরিবার বা দলের মালিকানাধীন ব্যবসা নয়,বরং এর সাথে জড়িত সমগ্র রাষ্ট্র। ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রাষ্ট্রে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিক। গাড়ীর অযোগ্য চালক যেমন যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে না পৌছিয়ে মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। তেমনি ভয়ানক অঘটন ঘটে যখন রাষ্ট্র কোন অযোগ্য ও দুর্বৃত্তের হাতে পড়ে। বিশ্বের বহু দেশের মানুষ এখনও যেরূপ আদিম অশিক্ষা,অজ্ঞতা ও বর্বরতা নিয়ে বসবাস করে সেটি তো রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে। মানব ইতিহাসের বড় বড় বিপর্যয়গুলো বন্য পশু হামলায় হয়নি,খড়া-প্লাবন ও ভূমিকম্প-সুনামীতেও ঘটেনি। ঘটেছে অতি দুর্বৃত্ত মানুষের হাতে রাজনীতি যাওয়াতে। এরাই মানব ইতিহাসে উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবাদের জন্ম দিয়েছে। হালাকু-চেঙ্গিজ, হিটলার-মুসোলীনি ও বুশ-ব্লেয়ারের ন্যায় ভয়ংকর মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে রাজনীতির ময়দান থেকে। এমন দুর্বৃত্তরাই মানব জাতিকে অতীতে বহু হাজার যুদ্ধ উপহার দিয়েছে। বিগত শতাব্দীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে তারা সাত কোটির বেশী মানুষকে হত্যা করেছে। সম্প্রতি লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে এবং এখনও করছে আফগানিস্তান,ইরাক,কাশ্মীর,ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। বাংলাদেশে এরাই একাত্তরে যুদ্ধ,চুয়াত্তরে দুর্ভিক্ষ,পঁচাত্তরে বাকশালী স্বৈরাচার ডেকে এনেছে। এবং আজ  উপহার দিচ্ছে লগি-বৈঠার রাজনীতি,র‌্যাব-পুলিশের সন্ত্রাস,মিথ্যামামলা,এবং মামলার নামে রিমাণ্ড ও ডান্ডাবেরীর নির্যাতন। মীরজাফরদের হাতে রাজনীতি যাওয়াতে অতীতে স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়েছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার,আর আজ লু্ণ্ঠিত হচ্ছে পদ্মা-তিস্তা-মেঘনার পানি,এবং অধিকৃত হচ্ছে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার,রাস্তাঘাট ও বন্দর। এভাবে রাজনীতি পরিণত হয়েছে দেশকে শত্রুর হাতে তুলে দেয়ার হাতিয়ারে। এমন রাজনীতির কারণে বাংলার স্বাধীনতা লুণ্ঠনে অতীতে আগ্রাসী শত্রুকে যুদ্ধ লড়তে হয়নি,তেমনি আজও  লড়তে হচ্ছে না।

 

সৃষ্টিশীল রাজনীতি 

অথচ সৃষ্টিশীল ভাল মনুষদের হাতে রাজনীতি গেলে দেশে শান্তি-সমৃদ্ধি ও কল্যাণের প্লাবন শুরু হয়। গড়ে উঠে উচ্চতর সভ্যতা।মানুষের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিশীলতা কৃষি,শিষ্প,স্থাপত্য বা বিজ্ঞানের আবিস্কারে নয়,বরং সেটি উচ্চতর মানুষ সৃষ্টিতে। আখেরাতে মানুষ মহান আল্লাহতায়ালা থেকে মহাপুরস্কার পাবে এ শিল্পে আত্মনিয়োগের জন্য,তাজমহল বা পিরামিড গড়ার জন্য নয়।কল্যাণমুখি রাজনীতিবিদদের কাজ,সে সৃষ্টিশীলতার প্রতি দেশবাসীকে অঙ্গিকারবদ্ধ ও আত্মনিবেদিত করা;এবং তাদের সে সৃষ্টিশীলতায় সমৃদ্ধি আনা। আর মানুষ গড়ার সে মহান সৃষ্টিশীলতা ও শিল্পটি স্কুল-কলেজে বা ল্যাবরেটরিতে শেখা যায় না। কোন বুদ্ধিজীবী বা তাদের সৃষ্ট ইজম বা মতবাদ থেকেও নয়।সেটি সম্ভব হলে পাশ্চত্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হিটলার, মুসোলীনি, বুশ, ব্লেয়ারের ন্যায় ভয়ংকর যুদ্ধাপরাধী বের হতো না। উপনিবেশবাদ,পুঁজিবাদ,সাম্রাজ্যবাদ,বস্তুবাদ,সমাজতন্ত্র ও কম্যুউনিজমের ন্যায় মানবতাধ্বংসী মতবাদও জন্ম নিত না। সে জ্ঞানের উৎস মাত্র একটিই এবং তিনি মহান আল্লাহ। উচ্চতর মানুষ গড়ার সে শিল্পটি হাতে-কলমে শেখাতেই মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠ মানুষদের দুনিয়ার বুকে নবী-রাসূল করে পাঠিয়েছেন। নবী-রাসূলদের শেখাতে ফেরেশতাদের পাঠিয়েছেন। আর পথ দেখানোর একাজটি তো একমাত্র মহান আল্লাহর। পবিত্র কোরআনে তাই বর্নিত হয়েছে “ইন্না আলাইনাল হুদা”। অর্থঃ পথ দেখানোর দায়িত্ব একমাত্র আমার। -(সুরা লাইল)। এভাবে মানুষ পেয়েছে সঠিক পথ। মানব জাতির জন্য এটিই হলো মহান আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ দান।

মুসলিম রাজনীতির মূল এজেণ্ডা হলো শয়তানের পথ থেকে মানুষকে বাঁচানো, এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ বেয়ে চলতে তাকে সাহায্য করা। তখন ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পায় সিরাতুল মোস্তাকিম। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কল্যাণটি তো এভাবেই ঘটে। তখন কল্যাণময় কর্মে ভরে উঠে সমগ্র সমাজ ও পরিবার। এভাবে নির্মিত হয় উচ্চতর সভ্যতা। ইসলামি রাষ্ট্রের বড় নিয়ামত তো এটাই। বস্তুতঃ নবীজী (সাঃ)ও তাঁর মহান সাহাবাদের ন্যায় ব্যক্তির হাতে রাজনীতি যাওয়াতেই মানব জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মিত হয়েছিল। ঈমানদারের কাজ তাই শুধু নবীজী (সাঃ) থেকে নামায-রোযা-হজ-যাকাত শেখা নয়,বরং রাষ্ট্র ও সমাজকে তাঁর অনুসৃত পথে সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে শেখা। মুসলমানের রাজনীতির গুণাগুণ যাচাই হয় নবীজী (সাঃ)র সে নীতি কতটা অনুসৃত হলো তা থেকে। আর একমাত্র এপথেই মুসলমানের রাষ্ট্র খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শে গড়ে উঠে।

 

অকল্যাণের রাজনীতি

কোন অফিস-আদালতেই সবার মান-মর্যাদা সমান হয় না। মর্যাদা নির্ধারিত হয় অর্পিত দায়িত্বের গুণে। মানুষ তেমনি সমগ্র সৃষ্টিকুলে আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদাটি পেয়েছে তার উপর অর্পিত দায়ভারের কারণে। সে দায়ভারটি আল্লাহ খলিফা রূপে দায়িত্বপালনের। আর সে দায়িত্বপালন জায়নামায়ে বসে তসবিহ পাঠে যেমন হয় না। তেমনি মাসভর রোযা পালনেও হয় না। বরং সেটি পালিত হয় রাষ্ট্রের বুকে আল্লাহর আইনের বিজয় আনার মধ্য দিয়ে। নামায-রোযা-হজ-যাকাত তো ব্যক্তির মাঝে সে বিপ্লবেরই দায়িত্ব-সচেতনা বাড়ায়। বাড়ায় ত্যাগস্বীকারের সামর্থ। ইসলামে এটাই তাকওয়া। ঈমানদারের জীবনে সে দায়ভারটি স্পষ্টতর করতেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাও।” –(সুরা সাফ,আয়াত ১৪)। বলা হয়েছে “তোমরা কখনই প্রকৃত কল্যাণটি পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি আল্লাহর রাস্তায় খরচ না করছো” –(সুরা আল ইমরান,আয়াত ৯২ )। ফলে দল গড়া ঈমানদারের জীবনে নেশা নয়,পেশাও নয়। রাজনৈতিক কোন এজেণ্ডাও নয়। বরং এটি অবশ্য পালনীয় একটি ফরজ। সে দলটির লক্ষ্য ক্ষমতাদখলের রাজনীতি যেমন নয়,তেমনি দলাদলি বাড়ানোও নয়।দল গঠনের উদ্দেশ্য মুসলমানদের একতাবদ্ধ করা,বিভক্ত করা নয়। দলের নামে দলাদলি বা বিভক্তি গড়া অতি নিকৃষ্ট হারাম। দলের উদ্দেশ্য নিজ ভাষা,নিজ গোত্র ও নিজ বর্ণের নামে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও সে রাষ্ট্রের গৌরব বৃদ্ধিও নয়। বরং সে দল গড়বে একমাত্র ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিরোধে। দল গড়বে বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিজয় আনতে।

রাজনীতিতে মুসলমানের লক্ষ্য,মহান আল্লাহর অভিপ্রায়পূরণ। মহান আল্লাহর সে অভিপ্রায়টি ঘোষিত হয়েছে এভাবে,“তিনিই সেই মহান আল্লাহ যিনি হেদায়েত ও সত্যদ্বীনসহ রাসূলকে পাঠিয়েছেন যাতে সকল মত ও ধর্মের উপর বিজয়ী হতে পারে। যদিও সেটি মুশরিকদের জন্য অপছন্দের।” -(সুরা সাফ, আয়াত ৯)। পবিত্র কোরআনে এমন ঘোষণা একবার নয়,তিনবার এসেছে। এখানেই ঈমানদারের রাজনীতির পিছনে মূল দর্শন। মহান আল্লাহর সে ঘোষিত অভিপ্রায়ের সাথে সম্পৃক্ততার এ রাজনীতি তখন ঈমানদারের জীবনে বাঁচার মূল প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মুসলমান সেক্যুলার হয় না। জাতিয়তাবাদী বা সমাজতন্ত্রিও হয় না। বরং আত্মত্যাগী মুজাহিদ হয়,এবং নির্ভেজাল জিহাদে পরিণত হয় তাঁর রাজনীতি। জিহাদের এ রাজনীতিতে প্রাণদান তখন শহিদের মর্যাদা আনে। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতি মুসলমানদের জীবনে এখানেই এনেছে সবচেয়ে বড় বিচ্যুতি ও বিপর্যয়। সেক্যুলার এ রাজনীতি বাড়িয়েছে সিরাতুল মোস্তাকিম থেকে ভয়ানক পথভ্রষ্টতা। জনগণকে যে তারা মুর্তিপুজায় ফিরিয়ে নিয়েছে তা নয়। বরং লক্ষ্যচ্যুত করেছে বাঁচার মূল প্রেরণা ও উদ্দেশ্যে থেকে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণের জীবনে এখানেই ঘটেছে সবচেয়ে বড় অকল্যাণ।

 

অধিকৃত রাষ্ট্র

রাজনীতির সফলতার মাপকাঠি এ নয় যে, দেশে কতটা পিরামিড,প্রাসাদ বা তাজমহল নির্মিত হলো। অতীতে বহু বর্বর দুর্বৃত্ত শাসকও এসবের নির্মাণে বিস্ময়কর সফলতা দেখিয়েছে। সেগুলোর নির্মানে হাজার মানুষ যেমন পাথর চাপা পড়ে মরেছে,তেমনি কষ্টার্জিত সম্পদের বিশাল অপচয়ও হয়েছে। অথচ তা দিয়ে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যবস্থা হতে পারতো। সমৃদ্ধ হতে পারতো সভ্যতা। সভ্যতার বিচারে মহান আল্লাহতায়ালার মানদণ্ড ভিন্ন। তিনি দেখতে চান,রাষ্ট্রের বুক থেকে কতটা অন্যায় ও পাপাচার নির্মূল হলো, কতটা প্রতিষ্ঠা পেল ন্যায়নীতি,সুবিচার ও সৎকর্ম। এবং কতটা বিজয় আসলো তাঁর দ্বীনের। যুগে যুগে মানবের সবচেয়ে বড় অকল্যাণটি ঘটেছে সমাজে অন্যায় ও অবিচার ব্যাপকতর হওয়ার ফলে। তাই গুরুত্বপূর্ণ ধর্মকর্ম হলো সেসব অন্যায় ও অবিচারকে প্রতিরোধ করা। সে সাথে আল্লাহর প্রদর্শিত ন্যায় ও সৎকর্মকে ব্যাপক ভাবে প্রতিষ্ঠা দেয়া। সে দায়িত্বটি প্রতিটি ব্যক্তির। সে দায়িত্ব পালন শুধূ সারাক্ষণ জায়নামাযে কাটালে বা সারা জীবন রোযা রাখলে হয়না। সেটি হয় না মহল্লায় মহল্লায় অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মানেও। অন্যায়ের বিলুপ্তিতে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী হাতিয়ার হলো রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের হাতেই আইন-আদালত,পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা। তাই অন্যায়ের রোধে ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রের উপর দখলদারিটি নিতে হয়,ব্যবহার করতে হয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। মহান নবীজী (সাঃ)র এটাই মহান সূন্নত। কল্যাণকর রাষ্ট্র নির্মানের স্বার্থেই তিনি নিজ ঘরবাড়ী ছেড়ে মদিনায় হিযরত করেছেন। নামায-রোযা তো গুহাতে বসেও চলে। কিন্তু তাতে রাষ্ট্র নির্মিত হয় না, ইসলামি সভ্যতাও গড়ে উঠে না। ফলে বিশ্বশক্তি রূপে ইসলামের প্রতিষ্ঠাও ঘটে না। কল্যাণকর রাষ্ট্রের নির্মানে নবীজী (সাঃ) সাহাবাদের নিয়ে বার বার সশস্ত্র জিহাদে নেমেছেন,সেসব জিহাদে প্রায় ৬০% সাহাবী শহিদ হয়েছেন। এত অর্থ, এত শ্রম ও রক্তের এতবড় কোরবানী মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মানে হয়নি। কৃষি বা শিল্পে সমৃদ্ধি আনতেও নয়।অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহ অধিকৃত ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে। মহান আল্লাহর শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তারা ততটাই উগ্র যতটা উগ্র একজন পৌত্তলিক কাফের ও ইহুদী-নাছারা।

 

অধিকৃতি দুর্বৃত্তদের

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যর্থতা কোন একক ক্ষেত্রে নয়,বরং সর্বক্ষেত্রে। এবং সেগুলি বিশাল বিশাল আকারে। সে ব্যর্থতা শুধু দারিদ্র্যতা ও বেকারত্বে নয়। রাস্তা-ঘাটের দুরাব্স্থা বা সার, পানি ও বিদ্যুতের অভাবেও নয়। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি ঘটেছে অন্যায়ের নির্মূলে এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। এ ব্যর্থতার কারণেই দেশটি দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর মানুষ সৃষ্টির সফলতা পরিমাপের যে মানদ্ণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছেন সে অনুসারে বাংলাদেশের অর্জন শূণ্য। ক্ষমতাসীন সরকার ও প্রশাসন দেশকে যে কতটা নীচে নামিয়েছে এ হলো তার প্রমাণ। দেশের জন্য এটি এক লজ্জাজনক রেকর্ড -শুধু বিশ্ববাসীর সামনে নয়, মহান আল্লাহতায়ালার সামনেও। সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহর দৃষ্টি থেকে কি এ ব্যর্থতা লুকানো যায়? তবে এ ব্যর্থতাটি শুধু ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য সেক্যুলারদের নয়,ঈমানদাররূপে পরিচয় দানকারীদেরও। তারা ব্যস্ত থেকেছে স্রেফ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায়। অথচ তাদেরই চোখের সামনে রাষ্ট্রের দখল চলে গেছে শয়তানী শক্তির হাতে। তাদের পক্ষ থেকে এ দখলদারির বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ উঠেনি,প্রতিবাদও উঠেনি।অথচ শয়তানী শক্তি মসজিদের দখল নিতে এতটা উৎসাহী নয়,সেখানে মুর্তি রাখা নিয়েও তাদের আগ্রহ নেই। বরং তারা তো মসজিদের নির্মানে ভূমি ও অর্থ দিতেও রাজী। এমনকি হোয়াইট হাউসেও তারা জায়নামাজ পেড়ে দেয় এবং ইফতারিও পেশ করে। তারা তো চায় রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের উপর নিজেদের দখলদারির প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্রকে তারা নিরংকুশ ব্যবহার করতে চায় ন্যায়ের প্রতিরোধ এবং অন্যায়ের প্রতিষ্ঠায়। সেখানে রুখতে চায় শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্র থেকে বিদায় দিতে চায় মহান আল্লাহর বিধানের কর্তৃত্ব। নির্মম বাস্তবতা হলো, মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ আজ  প্রবল ভাবে অধিকৃত এসব শয়তানি শক্তির হাতে। এবং সে শয়তানী শক্তির হাতে বাংলাদেশ যে কতটা অধিকৃত তার প্রমাণ মেলে দেশের নগরে-বন্দরে পতিতাপল্লি,সূদী ব্যংক,মদের দোকান,মদ্যশালা সেক্যুলার আইন-আদালত,সন্ত্রাস ও দূর্নীতির প্রবল প্রতিষ্ঠা দেখে।

দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির অন্যতম কাজ হয়েছে, নিজদলীয় অভিযুক্তদের আদালতের বিচার থেকে বাঁচানো। সে সাথে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের সাজা থেকে মুক্ত করে দেয়া। সাজাপ্রাপ্ত খুনীদেরকে ছেড়ে দিচ্ছেন খোদ প্রেসিডেন্ট নিজে। সংবিধানে তিনি শক্তিহীন হলে কি হবে,এ ক্ষমতা থাকে দেয়া হয়েছে নিজ দলীয় অপরাধীদের বাঁচাতে। দেশের বিচার বিভাগের কাজ হয়েছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত শত শত অপরাধের মামলাগুলোকে বেছে বেছে খারিজ করা,এবং সে সাথে জেল-হাজতে তোলা বিরোধী দলীয় কর্মীদের। ১৯৯৮ সালে জসিমউদ্দীন মানিক নামে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষণে সেঞ্চুরী করেছিল।এবং তা নিয়ে সে নিজ দলীয় কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে উৎসবও করেছিল। অপরাধ কর্মে নিজের পারঙ্গমতা নিয়ে সবাই উৎসব করে না। এর জন্য চাই প্রচণ্ড রকমের বিবেকশূণ্য এক বিকৃত মানসিকতা যা অপরাধীকে তার জঘন্য অপরাধকেও অপরাধ রূপে গণ্য করতে বাধা দেয়। জঘন্য অপরাধের পরও তখন সে হাস্যময় চিত্তে জনসম্মুখে আসে। যেরূপ উদ্ধতা নিয়ে এ জঘন্য অপরাধীটি জন-সম্মুখে উৎসব করেছিল সেটি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়,মানবজাতির ইতিহাসেও বিরল। ডাকাতও তার অপরাধ লূকাতে অপরাধগুলো রাতের আধারে করে। কিন্তু এ অপরাধীর সে লজ্জাশরম ছিল না।রাজনীতির নামে দেশে যে কতটা গভীর ভাবে দুর্বৃত্তায়ন ঘটিয়েছে এ হলো তার প্রমাণ।

কোন রাষ্ট্রে সভ্যতার মান নির্ধারণ হয় সে রাষ্ট্রে অপরাধ কর্ম কতটা ব্যাপক ভাবে হয় এবং অপরাধীর বিচার কতটা সুষ্ঠ ভাবে হয় তা থেকে। বনে জঙ্গলে পশুদের মাঝে কে ধর্ষিতা হলো বা কে খুণ হলো সেটি কেউ দেখে না। তা নিয়ে বিচারও হয় না। তাই সেটি পশু সমাজ। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো,সে বিচার বাংলাদেশেও হয়নি। অথচ এমন অপরাধের বিচার বসাতে বড় রকমের ধার্মিক বা অতি মানবিক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সামান্য কিছু মানবিক মূল্যবোধ থাকলেই যে কোন সরকার এমন অপরাধীর বিচারে আপোষহীন হয়। কিন্তু সে সামান্য মানবিক মূল্যবোধের পরিচয় সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেশ করতে পারেননি। কথা হলো, মানবিক মূল্যবোধের বিচারে এতটা নীচে না নামলে কি দূর্বৃত্তিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়া যায়?

শেখ হাসিনা বরং তাঁর কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন, একটি লাশের বদলে দশটি লাশ ফেলার। এমন লাশ ফেলার ব্রত নিয়ে তার দলীয় কর্মীরা লগি-বৈঠা নিয়ে ময়দানে নেমেছিল এবং ঢাকার রাস্তায় বহু লাশও ফেলেছিল। তাঁর দলের কর্মীরা যাত্রী ভর্তি বাসে আগুণও দিয়েছিল। এভাবে নিছক রাজনিতক প্রয়োজনে ব্যাপক দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে রাজনীতিতে। শেখ হাসিনা নিজেকে মুসলমান রূপে দাবী করেন। তিনি যে নামায পড়েন সে ঘোষণাটিও তিনি জনসভায় দিয়ে থাকেন। কিন্তু এটি কি কোন নামাযী মুসলমানের কাজ? মুসলমান হওয়ার অর্থ তো প্রতিপদে মহান আল্লাহতায়লার প্রতিটি হুকুম মেনে চলা। সে হুকুমের সামান্য অবাধ্যতাই হলো কুফুরি। সে অবাধ্যতা ব্যক্তিকে কাফেরে পরিনত করে। মহান আল্লাহর হুকুম তো হলো, অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। এক লাশের বদলে দশ লাশ ফেলা বা লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় নামা নয়। ধর্ষণে সেঞ্চুরিকারীকে বিচার থেকে রেহাই দেয়াও নয়। আর খুণ বা অন্যায়ের হুকুম দিলে কি অন্যায়ের নির্মূল হয়? বাংলাদেশে অন্যায় ও অবিচার ব্যাপক ভাবে বেড়েছে রাজনৈতীক মঞ্চ থেকে অপরাধীদের প্রশ্রয় ও আশ্রয় দেয়ার কারণে। বেছে বেছে ভয়ানক অপরাধীদের এখানে রাজনীতিতে নামানো হয়েছে স্রেফ দলীয় লাঠিয়াল রূপে তাদের ব্যবহার করার লক্ষ্যে। বাংলাদেশের সকল ডাকাত সর্দার মিলেও এত অপরাধীদের অপরাধ জগতে নামাতে পারিনি যা নামিয়েছে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় আওয়মী লীগ নেতারা। তাদের হাতে রাজস্বের শত শত কোটি টাকা যেমন অতীতে ডাকাতি হয়েছে,এখনও হচ্ছে। ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে রাস্তা ও বনভূমির গাছ,নদীর পাড়,সরকারি খাসজমি এবং বিদেশী ঋণের অর্থ। সরকারি দলের পক্ষ থেকে এমন দুর্বৃত্তি এখন আর কোন গোপন বিষয় নয়। এ খবর বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছে গেছে। তাই ক্ষমতাসীন দলের ডাকাতদের হাত থেকে পদ্মাসেতুর ঋণের অর্থ বাঁচাতে বিশ্ববাংক তার বরাদ্দকৃত ঋণই বাতিল করে দিয়েছে। মুজিব আমলেও এমনটিই ঘটেছিল। তখন বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে ভিক্ষা দিতেও অনীহা দেখাতো। তখন বাংলাদেশকে তারা তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি বলতো। ভিক্ষা দিলে সে ভিক্ষা থলিতে থাকবে না সে ভয় তাদের মধ্যে তখন প্রবল ভাবে ছিল। দুর্ভিক্ষে সে সময় লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। সেটিও কোন পেশাদার ডাকাত দলের কাণ্ড ছিল না,ঘটেছিল এ রাজনৈতিক ডাকাতদের লুণ্ঠনের ফলে।

 

বিভক্তির হাতিয়ার

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শুধু একতা প্রতিষ্ঠার হুকুমটিই আসেনি, এসেছে বিভক্তির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারিও। একতাবদ্ধ হওয়া ইসলামে ফরজ এবং বিভ্ক্ত হওয়া হারাম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা আল্লাহর রশি তথা কোরআনকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৩)। তবে মুসলমানের সে একতা শুধু জায়নামাযে কাতারবদ্ধ হওয়ার একতা নয়। স্রেফ জায়নামাযে কাতার বাঁধলে কি শয়তানী শক্তিকে পরাজিত করা যায়? তাতে কি আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আসে? এজন্য একতাকে জায়নামায়ের বাইরে রাজনীতির ময়দানেও নিয়ে যেতে হয়। মসজিদের মেঝেতে একত্রিত হয় একটি গ্রাম বা মহল্লার মানুষ। আর রাজনীতির ময়দানে একত্রিত হয় সমগ্র দেশের মানুষ। নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা মজহাবের মানুষ এখানে একতাবদ্ধ হয়। রাজনৈতিক দল এভাবে জনগণের মাঝে একতা গড়তে শক্তিশালী মাধ্যম রূপ কাজ করে।ভারতের মুসলমানেরা এক সময় বাংলা,বিহার,আসাম,পাঞ্জাব,সিন্ধূ,গুজরাত,উত্তর প্রদেশ,মধ্যপ্রদেশ,সীমান্ত প্রদেশ,বিলুচিস্তান এরূপ নানা প্রদেশে ও নানা ভাষায় বিভক্ত ছিল। একতার রাজনীতি তাদেরকে প্রছণ্ড ভাবে শক্তিশালী করেছিল। সে একতার বলেই ১৯৪৭ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল।অপরদিকে বিভক্তির কারণে বিশাল আরব ভূমি আজ শক্তিহীন ও ইজ্জতহীন।

রাজনীতির এ হাতিয়ারটি বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়েছে জনগণের মাঝে ঘৃণা ও বিভক্তি ছড়ানোর কাজে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য কোন দেশে ও কোন সমাজে নেই? এমন বিভক্তির মাঝে একতা গড়ার মহান শিল্পটি হলো রাজনীতি। বিভক্ত জনগণকে এটি শান্তিপূর্ণ ভাবে একত্রে বসবাস করতে শেখায়। তাই যে দেশে রাজনীতিতে পরিপক্কতা আসে সে দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যাই শুধু  কমে না,সংঘাতও কমে যায়। বাংলাদেশ শতাধিক রাজনৈতিক দল দেখে নিশ্চিত বলা যায়, একতা গড়ার সে ফরজ এ সমাজে পালিত হয়নি। নবীজী (সাঃ)র আমলে আউস ও খাজরাজ গোত্রের বহু শত বছরের সংঘাত বিলুপ্ত হয়েছিল এবং তারা সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত উম্মাহতে পরিনত হয়েছিল। ইতিহাসের নানা বাঁকে নানা বিষয়ে যে কোন দেশেই মতপার্থক্য হয়।তাতে সংঘাত আসে এবং জাতীয় জীবনে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এবং প্রচুর রক্তপাতও ঘটে। বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের কাজ হলো সে ক্ষতগুলোকে শুকানোর ব্যবস্থা করা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘটছে উল্টোটি। বহু বছরের পুরোন জখমগুলোকে আজ  শুধু তাজাই করা হচ্ছে না,তাতে মরিচও লাগানো হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে বহু লক্ষ মানুষ পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল। কিন্তু সে কারণে কাউকে জেলে নেয়া হয়নি, কারো পায়ে ডাণ্ডাবেড়ীও পড়ানো হয়নি। সেদিন কংগ্রেসী নেতারাও পাকিস্তানের সংসদে বসার সুযোগ পেয়েছে। সাতচল্লিশের নেতাদের এ ছিল রাজনৈতিক পরিপক্কতা। অথচ আজ ১৯৭১এ বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধীতার জন্য তাদের যুদ্ধাপরাধী রূপে চিত্রিত করা হচ্ছে,সে অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশী কাল পর আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। বস্তুতঃ সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে,বিভক্তির সূত্রকে আবিস্কার করা এবং সম্ভাব্য সকল উপায়ে সে বিভক্তিকে সংঘাতে রূপ দেয়া।এবং সে সাথে বিভক্তির সে আগুণে লাগাতর পেট্রোল ঢালা।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনদের মূল লক্ষ্য,কি করে দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা যায়। স্বাধীনতা, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা নাগরিক অধিকার নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নাই। একমাত্র মাথাব্যথা নিজেদের শাসন ক্ষমতাকে নিশ্চিত করা। সেটি নিশ্চিত করতেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিকেরা একাত্তরে ভারতের সাথে ৭ দফা চুক্তি করে দেশটির জন্মের আগেই তাকে শৃঙ্খলিত করেছিল। এরপর ২৫ সালা চুক্রি করে সে বন্দীদশাকে দীর্ঘায়ীত করেছিল। জনগণকে শৃঙ্খলিত করেছে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। পদ্মার পানি লুণ্ঠিত হচ্ছে, আজ  লুণ্ঠিত হতে যাচ্ছে সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনা, তিস্তার পানি, কিন্তু তাতে ক্ষমতাসীনদের মাথা ব্যথা নেই। তারা দেশের বাজার তুলে দিয়েছে ভারতীয়দের হাতে। ভারতের জন্য দিয়েছে দেশের মধ্যভাগ দিয়ে করিডোর। দিয়েছে চট্টগ্রাম এবং চালনা বন্দরে ট্রানজিট সুবিধা। সরকারের মাথাব্যাথা বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে রাজপথে হামলা, মামলা এবং মামলার নামে বছরের পর বছর কারারুদ্ধ করে রাখা। রাজনীতি পরিনত হয়েছে স্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ারে।

 

কেন এ বিধ্বংসী রূপ?

ইসলামের বড় শিক্ষা এবং সে সাথে নবীজীর বড় সূন্নত হলো,রাষ্ট্র পরিচালনার এ দায়িত্বটি পাবে রাষ্ট্রের সবচেয়ে আল্লাহভীরু যোগ্যতম ব্যক্তিটি। এটিই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা খোলাফায়ে রাশেদারও। ইসলামের বিজযের এ ছাড়া বিকল্প রাস্তা নেই। ঈমানদারদের বড় দায়িত্বটি হলো দেশের শাসক রূপে যোগ্য ব্যক্তির নির্বাচনের বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করা। নবীজী (সাঃ)র ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরাম তার মৃতদেহের দাফনের কাজ স্থগিত রেখে প্রথমে খলিফা নির্বাচনের কাজটি সমাধা করেছিলেন। কারণ এখানে গাফলতি হলে বিপর্যয় অনিবার্য। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সে কাজটি যথার্থ ভাবে হয়নি। মহান আল্লাহর সাথে এখানেই প্রকাশ পায় মোমেনের প্রকৃত ঈমানদারি। মুনাফিকরা নামায-রোযা পালন করে বটে, কিন্তু আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে তারা ত্যাগ স্বীকারে রাজী নয়। খোদ নবীজী (সাঃ)র যুগে এমন নামাযীরাই বরং ইসলামের বিজয় রুখতে মক্কার কাফের আর ইহুদীদের সাথে ষড়যন্ত্র পাকিয়েছিল। এরাই ওহুদের যুদ্ধে নবীজী (সাঃ)র বাহিনী থেকে দূরে সরেছিল।সে কাজ এরাই ইসলামের বিপক্ষ শক্তি। নামে মুসলমান হলেও তাদের রাজনীতির মূল এজেণ্ডা,দেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকে রুখা,ইসলামী শিক্ষাকে সংকুচিত করা এবং ইসলামের পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করা। অতীতে এরাই ভারতীয় আগ্রাসীদের সাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে একাকার হয়ে গিয়েছিল এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তাদেরকে ডেকে এনেছিল। আর আজ জোট বাঁধছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনে। আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিছক জ্বিনা-ব্যাভিচারি বা সূদখোরী নয়, বরং বড় বিদ্রোহ ও গাদ্দারী হলো রাষ্ট্র পরিচালনার এ দায়িত্বটি আল্লাহর অবাধ্যদের হাতে তুলে দেয়া। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সে গাদ্দারীটাই বেশী বেশী হচ্ছে অহরহ। মুসলিম দেশে রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসেছেন খোদ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।এ আসনে কি তাই আল্লাহর অবাধ্য ও বিদ্রোহীকে বসানো যায়? অথচ বাংলাদেশে বিপুল ভাবে অর্থদান,শ্রম দান বা ভোটদানের ঘটনা হচ্ছে এ বিদ্রোহীদের বিজয়ী করার লক্ষ্যে।

ইসলাম শুধু নামায-রোযা-হজ-যাকাতের সবকই দেয় না,শিক্ষা দেয় কি করে রাষ্ট্রের ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠাটিকে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগাতে হয়।নবীজী (সাঃ)র এটিই বড় সূন্নত। মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব নিছক নিজ দেশের সীমানা,নিজ গৃহ ও নিজ ব্যবসা বা মসজিদ-মাদ্রাসা পাহারা দেয়া নয়।বরং বড় দায়িত্বটি হলো এ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে শয়তানী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করা। কারণ এ প্রতিষ্ঠানটি একবার হাতছাড়া হলে অতি দ্রুত সমগ্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানই শয়তানের সর্বগ্রাসী হাতিয়ারে পরিণত হয়। দ্বীনের পরাজয় তখন আর শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ থাকে না,পরাজিত হয় খোদ মসজিদ-মাদ্রাসার অভ্যন্তরেও। শয়তান তখন শুধু ব্যক্তির কাঁধে ভর করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে না,বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করে সমগ্র জাতিকে। তখন নামাযী জনগণের রাজস্বের অর্থে সমগ্র রাষ্ট্র জুড়ে পথভ্রষ্টতার বড় বড় রাজপথ নির্মিত হয়। এবং কঠিন করে দেয়া হয় সিরাতুল মোস্তাকীমে চলা। তখন দেশজুড়ে গড়ে সিরাতুল মোস্তাকিমের বদলে উঠে সিরাতুশ শয়তান তথা শয়তানের পথ। বাংলাদেশে এজন্যই বেপর্দাগী,মদ-গাঁজা-হিরোইন,নাচগান,পতিতা,সুদ-ঘুষ ও নানারূপ দুর্বৃত্তি নিয়ে জীবন যাপন করা সহজ। অথচ বিপদজনক হয়ে দাড়িয়েছে ঘরে জিহাদী বই রাখা,রাজপথে শরিয়তের পক্ষে আওয়াজ তোলা,হিজাব করা এবং সূদ-ঘুষ এড়িয়ে জীবন যাপন করা।

ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে কঠিন হয় জনগণকে পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচানো। তখন হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েও সে কাজে সফলতা আসে না। অথচ রাষ্ট্র ইসলামি হলে মুসলমানদেরকে দ্বীনের পথে রাখার কাজ সহজতর হয়। সমগ্র রাষ্ট্র তখন ইবাদতগাহ ও মাদ্রাসায় পরিনত হয়। মাদ্রাসা রূপে কাজ করে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের একটি জেলায় আজ যতগুলি মাদ্রাসা ও মসজিদ আছে খোলাফায়ে রাশেদার আমলে তা ছিল না। কিন্তু সে আমলে ইসলামের বিজয় এসেছিল বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে। মুসলমানেরা তখন বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। মহান নবীজী (সাঃ)রাষ্ট্রের গুরুত্ব বুঝতেন। আর নবীজী (সাঃ) তো সেটিই বুঝতেন যা মহাজ্ঞানী মহান রাব্বুল আলামীন তাঁকে ওহী মারফত বুঝাতেন বা জ্ঞানদান করতেন। ফলে তাঁর উপলদ্ধিতে সামান্যতম ত্রুটি ছিল না। সেই সমোঝ-বুঝের কারণে মহান নবীজী (সাঃ) তার কর্মকে শুধু দ্বীনের দাওয়াতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি শুধু মসজিদই গড়েননি,বরং রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও গড়েছেন। অথচ সে সময় মদীনা ও মক্কাতে কোন রাষ্ট্র ছিল না। কোন রূপ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও ছিল না। শয়তানী শক্তির কাছে রাষ্ট্রের সে গুরুত্ব সেদিন অজানা ছিল না। ফলে কাফের শক্তির সম্মিলিত হামলা হয়েছে মদীনার উপর। রাষ্ট্র বাঁচাতে যুদ্ধ হয়েছে তৎকালীন বিশ্বশক্তি রোমানদের সাথে। সেকালে মুসলমানদের জানমালের সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ ও সেটিকে শক্তিশালী করতে। শতকরা প্রায় ৭০ ভাগের বেশী সাহাবা তাতে শহীদ হয়েছেন। অথচ আজকের মুসলমানেরা নবীজীর সে সূন্নত যেমন ভূলেছে, তেমনি ভূলেছে রাষ্ট্র নির্মান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখলে রাখার সে হিকমতকেও। অনেকে এটিকে দুনিয়াদারিও বলছে। আর তাতে বিজয় ও আনন্দ বাড়ছে শয়তানের শিবিরে। আজকের মুসলমানদের বড় ব্যর্থতা ও বিপর্যয় মূলত এখানেই। তাদের ব্যর্থতার কারণে রাষ্ট্র আজ  শয়তানী শক্তির কাছে অধিকৃত। অথচ মানুষের সবচেয়ে বড় দুষমন হলো শয়্তান। শয়তান ব্যক্তিকে শুধু তার মৃত্যু-পরবর্তী আখেরাতের জীবনকেই জাহান্নামে টানে না,জাহান্নাম গড়ে তোলে এ পার্থিব জগতেও। ফলে রাষ্ট্র পরিণত হয় অশান্তি ও অনাসৃষ্টির হাতিয়ারে। বাংলাদেশের রাজনীতির বিধ্বংসী রূপ এজন্যই এতটা প্রকট। ০৩/১২/১১

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *