বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তাণ্ডব, রাজনীতিতে ভারতীয় এজেন্ডা এবং বিপ্লবের বিস্ফোরণোন্মুখ প্রেক্ষিত
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on February 9, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ফ্যাসিবাদের টেক্সট বুক কেস
ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন কিরূপে জন্ম নেয়, শিকড় কিভাবে সমাজের গভীরে দেয়, কিভাবে বেড়ে উঠে, কিভাবে দেশের বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের চাকর-বাকরে পরিণত করে এবং কিভাবে তা বীভৎস বর্বরতাং রূপ নেয় -তারই টেক্সট বুক কেস (text book case) হলো বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদী শাসনের বর্বরত থেকে যারা বাঁচতে চায়, তাদের জন্য বাংলাদেশ থেকে শেখার বিষয় যেমন বহু; তেমনি গবেষণার বিষয়ও বহু। শিক্ষণীয় তাদের জন্যও -যারা ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ চায়। ফিরাউন-নমরুদেরা আজ বেঁচে নাই। কিন্তু তাদের নৃশংস ঐতিহ্য নিয়ে বেঁচে আছে তাদের একান্ত অনুসারীরা। ফলে এসব স্বৈরশাসকেরা কিরূপে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করে এবং ইসলামপন্থীদের নির্মূলে কতটা নৃশংস ও নিষ্ঠুর হতে পারে -সেটিরও টেক্সট বুক কেস হলো বাংলাদেশ। লক্ষ্যণীয় হলো, দেশটির ফ্যাসিবাদী শক্তিটি বেঁচে আছে ভারতের সর্ববিধ সহায়তা নিয়ে। নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ অসম্ভব করে এবং ব্যালট পেপার ডাকাতি করে বিজয়ী হলেও ভারত সে ভোটডাকাতিকে সমর্থন করে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের ফ্যাসিবাদী প্রকল্পের সাথে সরাসরি জড়িত হয়েও ভারতীয় নেতাদের অহংকার, তারা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে। কিন্তু কোথায় সে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ? আরো লক্ষণীয় হলো, যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়েছে জনগণের স্বাধীন ভাবে কথা বলা, লেখালেখি করা, মিছিল-মিটিং করা ও ভোট দেয়ার অধিকার, তাদের দাবী, তারাই নাকি বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, .দেশবাসীর মৌলিক মানবিক অধিকারের উপর এরূপ ফ্যাসিবাদী ডাকাতীকে কি কখনো স্বাধীনতা বলা যায়? এরূপ ফ্যাসিবাদী তাণ্ডবকে স্বাধীনতা বললে পরাধীনতা কাকে বলে? পরাধীনতার অর্থ শুধু বিদেশী শত্রুদের দখলদারী নয়, সেটি দেশী শত্রুদের দখলদারীও।
বাংলাদেশে রাজতন্ত্র নাই। তবে গণতন্ত্র এ দেশে বার বার লাশ হয় এবং জনণের ঘাড়ে স্বৈর সরকার বার বার চেপে বসে মূলত দুই ভাবে। এক). সেনা বাহিনীর সামরিক অভ্যুত্থানে; দুই). ভোটডাকাতদের হাতে জনগণের ব্যালট পেপার ডাকাতি হয়ে যাওয়ার কারণে। বস্তুত গণতন্ত্র হরণের এ দুটি পদ্ধতিই হলো, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস। অতীতে বাংলাদেশের জনগণের অধিকার ছিনতাই হয়েছে উপরিউক্ত দুই ভাবেই। দেশটি পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের দেশে।
একাত্তর নিয়ে মিথ্যাচার, ভারতীয় এজেন্ডা এবং যুদ্ধ ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় রকমের মিথ্যাচার ও স্বৈরাচার হয়েছে একাত্তরের যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিজয়ের পর থেকে। সে বিজয় শেখ মুজিব ও তার দলের হাতে শুধু শাসনক্ষমতাই তুলে দেয়নি, বরং তার জন্য সীমাহীন মিথ্যাচার ও স্বৈরাচারের সুযোগও সৃষ্টি করে দিয়েছে। মুজিব পরিণত হয়েছিল বাংলার ফিরাউনে। সে মূল্যায়নটি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালিক উকিলের। পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর পরই গণতন্ত্রকে প্রথমে কবরে পাঠায় খোদ শেখ মুজিব। সার্বজনিন ভোটাধিকার ও সকল দলের সমান গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে শেখ মুজিব ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে ভোট নেন। কিন্তু সে ওয়াদা তিনি রাখেননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটডাকাতির শুরু তার হাতেই। তিনি ১৯৭২ সালের জানুয়ারীতে দেশে ফেরেন এবং ক্ষমতা হাতে নেন। ক্ষমতা হাতে পেয়েই তিনি ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কেড়ে নেন তাদের রাজনীতিতে অংশ নেয়া ও সংগঠন করার অধিকার । স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দিয়ে ইসলামপন্থী নেতাদের তিনি কারাবন্দী করেন। অথচ এটি ছিল ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নিরেট মিথ্যাচার।
পরিতাপের বিষয় হলো, ইসলামপন্থীদের নিয়ে মুজিবের এ মিথ্যাচার নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি তেমন আলোচনা নাই। অথচ এ বিষয়ে বস্তুনিষ্ট বিশ্লেষণ হওয়া জরুরি। কারণ এ মিথ্যচার যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই থাকবে। বাস্তবতা হলো, ইসলামপন্থীগণ আদৌ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন না, তারা ছিলেন প্রচণ্ড দেশপ্রেমিক। সে গভীর দেশপ্রেম নিয়েই তারা বিরোধী ছিলেন পাকিস্তান ভাঙ্গার। অখণ্ড পাকিস্তানে থাকার মধ্যেই তারা নিজেদের স্বাধীনতার সুরক্ষা মনে করতেন। এটিই হলো ১৯৪৭’য়ের চেতনা। মুজিবের কাছে তাদের অপরাধ, তারা মুজিবের ন্যায় ভারতপন্থী ছিলেন না। ইসলামপন্থীদের বিশ্বাস, ভারত কখনোই বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতার রক্ষক হতে পারেনা। যেমন নয় কাশ্মীরী ও ভারতীয় মুসলিমদের স্বাধীনতার রক্ষক। তারা মনে করতেন, পাকিস্তান থেকে পৃথক হলে এবং বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় বাহিনী ডেকে আনলে বাঁচবে না বাঙালি মুসলিমের স্বাধীনতা। তখন হারিয়ে যেত হবে ভারতেররার পেটে। তাদের যুক্তি হলো, ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধের সামর্থ্য ক্ষুদ্র, পশ্চাৎপদ এবং সামরিক দিয়ে দুর্বল বাঙালি মুসলিমদের নাই। সেটি বুঝতেন হোসেন শহীদ সহরোওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দীন, তমিজউদ্দীন খান, আকরম খাঁর মত ১৯৪৭’য়ের মুসলিম লীগের সকল নেতৃবৃন্দ। তাদের দেশপ্রেম ও স্বাধীনতাপ্রেম নিয়ে কি সন্দেহ করা চলে? সন্দেহ চলে কি তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি নিয়ে? হায়দারাবাদ, কাশ্মীর, গোয়া, মানভাদরেরর ন্যায় ভারতের পেটে বিলিন হওয়া থেকে বাঁচতেই তারা স্বাধীন বাংলাদেশ না বানিয়ে পাকিস্তানে যোগ দেন। পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতার বাঁচানোর সম্ভাবনা দেখলে তারা ১৯৪৭’য়েই স্বাধীন বাংলাদেশ বানাতেন। তখন সেটি সহজও ছিল -একাত্তরের ন্যায় তখন যুদ্ধ করতে হতনা। বরং ঘটেছে উল্টোটি। পাকিস্তানে শামিল হওয়ার জন্য বাংলার মুসলিম নেতৃবৃন্দ ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের দিল্লি সম্মেলনে ১৯৪০ সালে গৃহীত লাহোর প্রস্তাবে সংশোধনী আনেন। কারণ লাহোর প্রস্তাবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল না।
১৯৪৭’য়ের ভারতভীতি এবং ভারতীয় আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশকে বাঁচানোর সে ভাবনা একাত্তরেও অনেক দেশপ্রেমিক বাঙালি মুসলিমের মনে বেঁচে ছিল। এরাই ১৯৭১’য়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ডেকে এনে পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধীতা করেন। প্রশ্ন হলো, তাদের সে ভাবনাকেও কি স্বাধীনতাবিরোধী বলা যায়? তাদের স্বাধীনতাবিরোধী বললে তো স্বাধীনতাবিরোধী বলতে হয় ১৯৪৭’য়ের পাকিস্তানপন্থী মুসলিম লীগ নেতাদেরও। তাছাড়া ১৯৭১’য়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের তুলনায় ১৯৪৭’য়ের মুসলিম লীগ নেতাদের চরিত্র, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও গুণগত মানটাই ছিল ভিন্ন। হোসেন শহীদ সহরোওয়ার্দী জন্মেছেন কলকাতায়। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বেড়ে উঠেছেন এবং রাজনীতি করেছেন কলকাতার হিন্দুদের মাঝে। খাজা নাজিমুদ্দীন জন্মেছেন ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং দীর্ঘকাল অবিভক্ত বাংলায় রাজনীতি করেছেন হিন্দু নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করে। সহরোওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দীন উভয়ই ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। মৌলভী তমিজুদ্দীন খান জন্মেছেন ফরিদপুরে। পড়াশুনা করেছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। বাংলার রাজনীতির সাথেও তিনি দীর্ঘকল জড়িত ছিলেন। প্রশ্ন হলো, যে শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা এবং হিন্দু নেতাদের মন ও মানসিকতার সাথে যে গভীর পরিচিত ১৯৪৭’য়ের মুসলিম লীগ নেতাদের ছিল, তা কি শেখ মুজিব, তাজুদ্দীন,তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান, আ.স.ম আব্দুর রবের ন্যায় একাত্তরের আওয়ামী লীগ নেতাদের ছিল? ভারতীয় হিন্দু নেতাদের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা ও মুসলিম বিদ্বেষের সাথে এসব একাত্তরের নেতাদের পরিচয় লাভের সুযোগই জুটেনি। সে জ্ঞান, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার কারণেই ১৯৭১’য়ে যারা পাকিস্তান ভাঙ্গায় নৃতৃত্ব দেন তাদের মধ্য দেখা যায় অন্ধ ভারতপ্রম। এরূপ অন্ধ ভারতপ্রেমের কারণ, নিজেদের স্বার্থান্বেষী রাজনীতির লক্ষ্য পূরণে ভারতকে ব্যবহার করা। উল্লেখ্য যে, একাত্তরের যুদ্ধে এই নেতারা নিজ শক্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের একটি জেলা বা মহকুমা দূরে থাক একটি থানাকে স্বাধীন করতে পারিনি। পুরা পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করে দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনী। বুঝতে হবে ভারত একাত্তরে পাকিস্তান ভেঙ্গেছে নিজ প্রয়োজনে। বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা দেয়ার জন্য নয়। ভারত পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে ১৯৪৭ থেকেই; শুধু শেখ মুজিবের ন্যায় ভারতসেবী নেতার অপেক্ষায় ছিল। আজও ভারতের সাথে শেখ হাসিনার যে পার্টনারশিপ -সেটিও ভারতের নিজস্ব প্রয়োজনে। একাত্তরে মুজিবের সাথে ভারতের কোয়ালিশনের মূল লক্ষ্য ছিল, পাকিস্তান ভাঙ্গা। এখন হাসিনার সাথে কোয়ালিশনের লক্ষ্য, বাংলার ভূমিতে ইসলামের উত্থানকে প্রতিহত করা। ভারত জানে, নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভারতপন্থীদের বিজয়ী হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নাই। তাই তারা বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করে অথবা ভোটডাকাতি করে। ভারত সেটিকে সমর্থন করে।
শেখ মুজিব: ফ্যাসিবাদের জনক এবং স্বাধীনতার খুনি
শেখ মুজিব ছিলেন মনেপ্রাণে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট। তার হাতেই বাংলাদেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদের জন্ম। ফ্যাসিবাদের জনক কখনোই স্বাধীনতার জনক হতে পারে না। পরাধীনতা এখানে জনগণের স্বাধীনতার শত্রুদের হাতে। যে কোন ফ্যাসিস্ট রাজনীতিবিদের ন্যায় মুজিবও ছিল স্বাধীনতার খুনি। জনগণকে রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়াই ছিল তার রাজনীতি। বিরোধী দলকে সহ্য করার মত গণতান্ত্রিক মানসিকতা মুজিবের ছিল না। তার ছিল প্রচণ্ড বিরোধী-দল-ভীতি। বিরোধী দল সংসদের ৩০০টি আসনের মাঝে ৩০টি আসন পাক, সেটিও মুজিব চাননি। বিরোধী দলীয় নেতাদের বিজয় রুখতে তিনিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভোটডাকাতি শুরু করেন। মুজিবের অনুসারীদের রাজপথে স্লোগান ছিল “এক নেতা, এক দেশ: শেখ মুজিবের বাংলাদেশ”। একমাত্র ফ্যাসিবাদেই এমন স্লোগান মানায়, গণতন্ত্রে নয়। গণতন্ত্রে জন্ম নেয় বহু নেতার বহু দলের রাজনীতি।
আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজ যেরূপ প্রচণ্ড ফ্যাসিবাদী নৃশংসতা -তার জন্ম শেখ মুজিবের হাতে। ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক অধিকার হরনের পর মুজিবের যুদ্ধটি শুরু হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও সর্বহারা পার্টিসহ অন্যান্য সকল বিরোধ দলের বিরুদ্ধে। তাদের দমনে লেলিয়ে দেয়া হয় তার রাজনৈতিক অনুসারীদের দিয়ে গড়া রক্ষিবাহিনীকে। রক্ষিবাহিনীর সশস্ত্র সেপাহীদের হাতে বহু হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী গুম, খুন, নির্যাতন ও অপহরণের শিকার হয়। অনেকের মতে সে সংখ্যাটি ৩০ হাজার বলেন। কিন্তু মুজিব তাতেও খুশি হননি। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রেয়ারীতে সকল বিরোধী দল নিষিদ্ধ করেন এবং চালু করেন একদলীয় বাকশালী (বাকশাল: বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) শাসন প্রক্রিয়া। নিষিদ্ধ করেন সকল বেসরকারি ও বিরোধীদলীয় পত্রিকা। এভাবে কেড়ে নেয়া হয় জনগণের স্বাধীন ভাবে দলগড়া, কথা বলা ও পত্রিকা প্রকাশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার।
স্বৈরশাসক মাত্রই গুরুতর অপরাধী
ডাকাত দলের সদস্যদের কাছে ডাকাত সর্দারের নৃশংস নিষ্ঠুরতা কখনোই নিন্দিত হয় না, বরং প্রশংসিত হয়। বর্বর স্বৈরাচারও তেমনি প্রশংসিত হয় ফ্যাসিবাদী দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। এজন্যই শেখ মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি, নৃশংস বাকশালী ফ্যাসিস্ট এবং ভারতীয় স্বার্থের সেবাদাসও দলটির নেতাকর্মীদের কাছে গণ্য হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি রূপে। মুজিবের পর বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানোর কাজটি করেন জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদ। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর এটি ছিল আরেক ডাকাতি। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুর সাত্তারকে হঠিয়ে এ দুর্বৃত্ত জেনারেল দেশের শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে নিয়ে নেন। তৃতীয়বার গণতন্ত্র হাইজ্যাক হয় আরেক সামরিক সন্ত্রাসী জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের হাতে। এ সামরিক স্বৈরশাসক ২০০৬ সালে রাষ্ট্রের উপর ডাকাতি করে এবং ২০০৮ সালে দরজা খুলে দেয় শেখ হাসিনার নৃশংস সিভিল স্বৈরশাসনের। যে কোন সভ্যদেশে জনগণের রায় না নিয়ে শাসনক্ষমতায় বসাই শাস্তিযোগ্য ফৌজাদারি অপরাধ। অথচ বাংলাদেশে সে অপরাধটিই বার বার হচ্ছে স্বৈরশাসকদের হাতে। সেটি সামরকি ক্যু, ভোটডাকাতি ও একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার সরকার শতকরা ৫ ভাগ ভোটারকেও ভোটকেন্দ্রে হাজির করতে পারেনি। ভোট যখন মূল্য ও ইজ্জত হারায়, ভোটারগণও তখন আগ্রহ হারায় ভোট দেয়ায়। অথচ ভোট গুরুত্ব পেলে বৃদ্ধ নারী পুরুষ নানারূপ অসুস্থতা সত্ত্বেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসে এবং লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়। অথচ ভোটের সে মূল্য ভোট ডাকাতির নির্বাচনে থাকে না। কে নির্বাচিত হবে -সে বিষয়টি ভোটাদের হাত থেকে ছিনিয়ে সরকার নিজ হাতে নিয়ে নেয়। নির্বাচন তখন প্রহসনে পরিণত হয়। ডাকাত যেমন গৃহস্থের অর্থ নিজ পকেটে পুরে, সন্ত্রাসী সরকারও তেমনি জনগণের ভোট ইচ্ছামত হাতিয়ে নেয়। এজন্যই এমন নির্বাচনকে বলা হয় ভোট ডাকাতির নির্বাচন। ২০১৪ সালে নির্বাচন এতটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে যে, সরকার সংসদের ১৫৩ সিটে কোনরূপ ভোটকেন্দ্র খোলার প্রয়োজন বোধ করেনি।
স্বৈরশাসক মাত্রই অপরাধী। তারা শত্রু জনগণের। চোর-ডাকাতদের সাথে কেউই বন্ধুত্ব করে না; বরং সুযোগ খোঁঝে তাকে শাস্তি দেয়ার। চোর-ডাকাতগণও সেটি বুঝে। এজন্যই যে গৃহে তারা ডাকাতি করে, কখনোই সে গৃহের মালিকের সামনে তারা যায় না। এরূপ অপরাধীগণ সাধারণতঃ নিশাচর হয়। একই অবস্থা স্বৈরশাসকদেরও। চোর-ডাকাতদের ন্যায় তাদের মনেও যে ভয়টি প্রতি মুহুর্তে বিরাজ করে -সেটি হলো গণপিটুনিতে মারা পড়ার । সেটি কল্পিত ভয় নয়, বরং নিরেট বাস্তবতাও। চোর-ডাকাতদের ন্যায় বহু স্বৈরশাসকও যে জনগণের চপথাপ্পড়ে মারা পড়ে –সেটি তো ইতিহাসের নতুন বিষয় নয়। রাশিয়ার সর্বশেষ জার দ্বিতীয় নিকোলাস, লিবিয়ার মোয়াম্মার গাদ্দাফি, আফগানিস্তানের নজিবুল্লাহ এবং রোমানিয়ার চশেস্কুর ন্যায় বহু স্বৈরশাসক তো এভাবেই মারা পড়েছে। অথচ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে পরবর্তী নির্বাচনে গদি গেলেও গণপিটুনিতে প্রাণ যায়না। বরং আরেক নির্বাচনে আবার নির্বাচনের সম্ভাবনাও থাকে। শান্তিপূর্ণ ভাবে যেমন গদিতে উঠতে পারে, তেমনি নামতেও পারেন। কিন্তু স্বৈরশাসকের ক্ষেত্রে ক্ষমতা থেকে নামাটি আদৌ নিরাপদ হয় না। কারণ, নামার সিঁড়িটি তারা নিজেরাই ধ্বংস করে দেয়। ক্ষমতা থেকে তাদেরও যে একদিন নামতে হতে পারে –সে সামান্য বোধটুকুও তাদের থাকে না। অবৈধ শাসকদের জীবনে এজন্যই আসে মহা বিপদ। সে বিপদের রূপটি নিজ চোখে দেখে গেছেন শেখ মুজিব। সে ভয়ে শেখ হাসিনা এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত যে রাস্তায় নিরস্ত্র কিশোরদের আওয়াজেও তিনি আঁতকে উঠেন। সম্প্রতি স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের মিছিল থামাতে হাজার হাজার পুলিশের পাশে সশস্ত্র দলীয় গুণ্ডাদের নামানোর কারণ তো সে ভয়।
নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের স্তরে স্বৈরশাসকদের শিকড় থাকে না। নিপাতগ্রস্ততার ভয়ে চারিদিকে তারা শুধু শত্রুই দেখতে পায়। ভয়ের কারণে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে তারা দেশের কারাগারগুলি পূর্ণ করে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষ দিয়ে। যে বিমানে বা ট্রেনে সাধারণ জনগণ চড়ে, প্রাণভয়ে সেখানে তারা উঠে না। তারা নিজেদের জন্য পৃথক বিমান বা বাহনের ব্যবস্থা করে। তারা যে রাস্তায় নামে সে রাস্তা পুলিশ দিয়ে রাস্তা খালি করা হয়। এটি সত্য, স্বৈরশাসকদের নির্বাচনে হারানো যায় না। হারানো যায় না অস্ত্রবলেও। কিন্তু তারপরও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যতটা স্থিতিশীলতা থাকে, স্বৈরাশাসনে সেটি থাকে না। প্রচুর পুলিশ-প্রহরা সত্ত্বেও তারা ধরাশায়ী হয় গণঅভ্যুত্থানে। কারণ পুলিশ ও সেনাবাহিনী দিয়ে আর যাই হোক গণঅভ্যুত্থান থামানো যায় না। বিপুল অর্থ ব্যয়ে চাকর-বাকরের গোলামী কিছু দিনের জন্য কেনা সম্ভব হলেও বেশী দিনের জন্য কেনা যায় না। ফলে রাশিয়ার জার, ইরানের শাহ, ফিলিপাইনসের মার্কোস, মিশরের হোসনী মুবারক, তিউনিসার বিন আলী এবং বাংলাদেশের জেনারেল এরশাদের ন্যায় অসংখ্য স্বৈরশাসকের নিপাত ঘটেছে নিরস্ত্র মানুষের গণঅভ্যুত্থা
স্বৈরশাসনে কেন অসম্ভব নিরপেক্ষ নির্বাচন?
শুধু ভাল কাজের সামর্থ্য থাকলেই চলে না। সে জন্য নিয়েত ও প্রচেষ্টা থাকতে হয়। তখন সেটি নেক আমলে পরিণত হয়। মহান আল্লাহতায়ার দরবারে প্রতিটি আমল কবুল হয় নিয়েত অনুসারে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা কোন জটিল রকেট সায়েন্স নয়। এমন কি নেপালের মত অনুন্নত দেশেও সুষ্ঠ ও নিরেপক্ষ নির্বাচন হয়। দেশের সকল দলের কাছেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও তা গ্রহণযোগ্য হয়। এমন কি বাংলাদেশের মাটিতে আজ থেকে ৭৯ বছর আগে (১৯৫৪) সর্বজন সমাদৃত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল। সেটি সম্ভব হয়েছিল এ কারণে যে, পূর্ববাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুসলিম লীগের জনাব নূরুল আমিন ভোট-ডাকাত ছিলেন না। বাকশালীও ছিলেন না। তিনি ছিল গণতন্ত্রী। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও টেকনিকাল সামর্থ্যের দিক দিয়ে আজকের চেয়ে সে আমলের প্রশাসন দুর্বল হলেও সরকার প্রধানের সৎ নিয়েত ছিল। ফলে সম্ভব হয়েছিল নিরপেক্ষ নির্বাচন। জনাব নূরুল আমিন হেরে গিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তার সৎ নিয়েত ছিল।
কিন্তু শেখ হাসিনাকে নিয়ে মূল সমস্যাটি হলো, তাঁর নিয়েত ভোট ডাকাতির, নিরপেক্ষ নির্বাচন নয়। প্রশাসনের কর্মচারি, পুলিশ এবং দলীয় কর্মীদের তিনি ব্যবহার করতে চান ভোটডাকাত রূপে। সেটি দেখা গেছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। সেরূপ ভোটডাকাতির লক্ষ্যেই তিনি সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করেন নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিধান। অথচ নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবীতে ১৯৯৬ সালে তার দল অসংখ্যবার হরতাল করেছে। শেখ হাসিনা তখন বার বার বলেছেন, বাংলাদেশে কোন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব। ফলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব -এটি যারা বলে বেড়ায় তারা হয় শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ দালাল অথবা অসুস্থ মস্তিষ্কের। শেখ হাসিনার স্বার্থান্বেষী স্বৈরাচারী মানসিকতার সাথে যাদের সামান্যতম পরিচিতি আছে -তারা তার অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা কল্পনাও করতে পারে না। কারণ, কল্পনার জন্যও তো বিশেষ প্রেক্ষাপট লাগে। শেখ হাসিনার এজেন্ডা তো তাঁর পিতার ন্যায় বিরোধীদলমুক্ত বাকশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। শেখ মুজিবের আদর্শ কখনোই বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল না, বরং সেটি ছিল সকল বিরোধী দল ও সকল বিরোধী মতের নির্মূল। সেটি তিনি নিজেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। হাসিনার গর্ব শেখ মুজিবের আদর্শ নিয়ে, বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে নয়। প্রশ্ন হলো, বিরোধী দল ও বিরোধী মতের নির্মূল না হলে শেখ মুজিবের আদর্শের প্রতিষ্ঠা সম্ভব কি রূপে? লক্ষ্য যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তিনি বিলুপ্ত করবেন কেন? বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের খুন বা গুমই বা করবে কেন? মাঠে-ময়দানে মিছিল-মিটিংই বা নিষিদ্ধ করবেন কেন? ভোট-ডাকাতি কি শুধু ভোট কেন্দ্রে হয়? ডাকাতির কাজের শুরু তো জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিনতাই করার মধ্য দিয়ে। সেটি তো প্রতিদিন চলছে হাসিনার বিগত ১৫ বছরের শাসনকাল ধরে।
হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অর্থই হলো, তাকে বিজয়ী করার ভোট ডাকাতিতে শরীক হওয়া এবং তাঁর অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া। দেশবাসীর বিরুদ্ধে সেটি তো অমার্জনীয় গাদ্দারি। সে অপরাধ থেকে বাঁচতেই ২০১৪ সালের ভোট ডাকাতির নির্বাচনে কোন সভ্য ব্যক্তি অংশ নেয়নি। ২০২৪ সালেও নেয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বোকামী প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে ৩০০ সিটের সংসদের মাঝে ১৪৯ সিট পেলেও কি কোন লাভ হবে? তাতেও কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে? স্বৈরশাসককে ক্ষমতায় রেখে তার নীতিতে পরিবর্তন দূরে থাক, তার গায়ের একটি পশমও খসানো যায় না। জেনারেল এরশাদের অধীনে তাই সংসদে গিয়ে লাভ হয়নি। তাকে গদি থেকে নামাতে হয়েছে। অনেকে ভাবছেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে বসে অন্ততঃ প্রতিবাদের আওয়াজ তুলে হৈচৈ করা যাবে। এটি শিশুসুলভ কল্প বিলাস। যারা রাস্তায় কিশোরদের শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে দেয় না, তারা কি সংসদে বিরোধীদের হৈচৈ বা আওয়াজ করতে দিবে? সড়কের হৈচৈ তো সড়কেই হারিয়ে যায়। কিন্তু সংসদের হৈচৈ তো দেশময় ছড়িয়ে যায়। স্বৈর শাসক কি সেটি সহ্য করে?
স্বৈরশাসকের কাছে অতি অসহ্য হলো, কারো মুখ থেকে উচ্চারিত সমালোচনা –সেটি যেমন রাজপথে, তেমনি সংসদে ও মিডিয়াতে। যারা হাসিনার অধীনে সংসদে বসে আওয়াজ তোলাকে গণতন্ত্র বলে -তারা নিশ্চয়ই পরিচিত নয় হাসিনার নৃশংস মানসিকতার সাথে। সংসদে বেশী হৈচৈ করলে হাসিনার চাকর-বাকরদের হাতে জুতাপেটা বা লাঠিপেটা হয়ে সংসদের ভিতরে বা বাইরে মারা পড়তে হবে। সে কাজে আওয়ামী লীগের হাত কতটা পাকা -সেটির প্রদর্শনী তারা অতীতে করেছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী বিজয়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদে শেরে বাংলা ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-প্রজা পার্টির সদস্য সংখ্যা আওয়ামী লীগের চেয়ে অধিক ছিল। তখন শেরে বাংলা ফজলুল হক নিজে ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দল থেকেই ডিপুটি স্পিকার ছিলেন জনাব শাহেদ আলী। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগের সদস্যদের গুণ্ডামী থেকে জনাব শাহেদ আলী প্রাঁণে বাঁচেননি। সংসদের মধ্যেই তাঁকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয় এবং পরে হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি নিহত হন। সে খুনের বিচারও খুনিরা হতে দেয়নি। এখন তো সে খুনের রাজনীতি আওয়ামী দলীয় কালচার হয়ে গেছে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যে গুম ও খুনের নৃশংসতা এখন সংসদের বাইরে চলছে, সেটি তখন সংসদের ভিতরে হবে। ফলে শাপলা চত্ত্বর সৃষ্টি হবে সংসদের অভ্যন্তরে।
বিরোধী দল ও বিরোধী মতের নির্মূলের কাজে হাসিনার চাকর-বাকর কি শুধু তাঁর দলীয় ক্যাডারগণ। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে চাকর-বাকরে পরিণত হয়েছে তো পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যগণও। সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিলুপ্ত হয়েছে দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাও। এ সন্ত্রাসীরা গৃহবন্দী করেছে এমনকি দেশের প্রধান বিচারপতিকে। তাকে লাথি মেরে এবং বিমানে তুলে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের কলংকিত ইতিহাসে যোগ হয়েছে আরেক কলংক। সম্প্রতি হাসিনার চাকর-বাকরদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছেন রাস্তার কোন সাধারণ মানুষ নন, বরং দিয়েছেন দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শ্রী সুরেন্দ্রকুমার সিনহা। শেখ হাসিনাকে তিনি অতি কাছে থেকে দেখেছেন। এক কালে তিনি তারই দলের লোক ছিলেন। শেখ হাসিনাকে এখনো যারা পুরাপুরি চিনে উঠতে পারিনি তাদের উচিত শ্রী সিনহার লেখা এবং সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনী মূলক বই “A Broken Dream: Rule of Law, Human Rights and Democracy”টি পড়া।
শ্রী সুরেন্দ্রকুমার সিনহা ভূমিকায় বলেছেন, সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে তাঁকে দেশত্যাগ করতে হয়েছে। কীভাবে তাকে দেশত্যাগ বাধ্য করা হয়েছে এবং সরকার কতটা মিথ্যাচারী -সে বিষয়ে তাঁর বইতে থেকে কিছু অংশ তুলে ধরা যাক: “প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দলের অন্যান্য সদস্য ও মন্ত্রীরা পার্লামেন্টের সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য আমার কঠোর নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রীসহ ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা আমার বিরুদ্ধে অসদাচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগ এনে বদনাম করতে শুরু করেন।’‘আমি যখন আমার সরকারি বাসভবনে আবদ্ধ, তখন আইনজীবী এবং বিচারকদের আমার সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছিল না, তখন সংবাদ মাধ্যমকে বলা হয় – “আমি অসুস্থ. আমি চিকিৎসার জন্য ছুটি চেয়েছি।” একাধিক মন্ত্রী বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবো।’‘অক্টোবরের ১৪ তারিখ, যখন আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই – তখন একটি প্রকাশ্য বিবৃতিতে আমি পরিস্থিতি স্পষ্ট করার চেষ্টায় একটি বিবৃতি দেই যে, “আমি অসুস্থ নই এবং আমি চিরকালের জন্য দেশ ছেড়ে যাচ্ছি না।’‘ আমি আশা করছিলাম যে আমার প্রত্যক্ষ অনুপস্থিতি এবং আদালতের নিয়মিত ছুটি – এ দুটো মিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সহায়ক হবে, এবং শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সরকার ওই রায়ের যে মর্মবস্তু – অর্থাৎ বিচারবিভাগের স্বাধীনতা যে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর – তা বুঝতে পারবে।” শেষ পর্যন্ত দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা – যার নাম ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স – তাদের ভীতি প্রদর্শন এবং আমার পরিবারের প্রতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে আমি বিদেশ থেকে আমার পদত্যাগপত্র জমা দেই।’
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিষয়টি নিয়ে বিবিসির সাথে সাক্ষাতকারও দিয়েছেন। সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমাকে যখন পুরাপুরি হাউজ এ্যারেস্ট করা হলো, …তখন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন একজন করে ডাক্তার আমার কাছে পাঠানো হতো। আমি নি:শ্বাস নিতে পারছিলাম না।’‘এর মধ্যে ডিজিএফআইয়ের চিফ এসে বললেন, হ্যাঁ আপনাকে বলা হলো আপনি বিদেশ যাবেন, আপনি যাচ্ছেন না।’‘আমি বললাম: কেন যাবো আমি বিদেশে?’‘আপনি চলে যান, আপনার টাকা পয়সার আমরা ব্যবস্থা করছি।’‘আমি বললাম, এটা হয় না, আমি আপনাদের টাকা নেবো না। আর আপনারা বললেই আমি ইয়েস বলবো না। আমি চাই সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমি আলাপ করি । ব্যাপারটা কি হয়েছে আমি জানতে চাই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার সাথে কথা বলবেন না।”
স্বৈরশাসনের অধিনে দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির যখন এরূপ অসহায় অবস্থা, সে দেশের সাধারণ জনগণের কি স্বাধীনতা বাঁচে? স্বৈরশাসনের অর্থই হলো নিদারুন পরাধীনতা। এমন পরাধীন দেশে স্বাধীনতা কেবল স্বৈর শাসকের। এমন দেশে জনগণ শুধু ভোটদানের অধিকার ও মতপ্রকাশের অধিকারই হারায় না, বরং স্বাধীনতা হারায় নিজ দেশে বাঁচা ও বসবাসের। গুম, খুন ও দেশছাড়া হতে হয় সরকারের ইচ্ছামত। সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ভাগ্য ভাল যে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু জামায়াত নেতাদের সে সুযোগ মেলেনি। তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কবরে পাঠানো হয়েছে। হিফাজতে ইসলামের শত শত নিহত কর্মীদের লাশ তো কবরও পায়নি। শাপলা চত্বরে যারা সেদিন নিহত হয়েছিল তাদের লাশগুলি ময়লার গাড়িতে তুলে গায়েব করা হয়েছে। ৫৩ জন অফিসারকে লাশ হতে হয়েছে পিলখানায়। তাদের লাশগুলিকে মলমুত্রের ড্রেনে ফেলা হয়েছিল। অপর দিকে বিএনপি’র ইলিয়াস আলীর ন্যয় প্রায় ৬ শত নিরীহ মানুষ কোথায় গায়েব হলো -তার কোন হদীস নাই।
এসবই হলো স্বৈরশাসনের নাশকতা। মানবের জন্য এরূপ শাসন এক ভয়ংকর বিপদের কারণ। দুর্বৃত্ত শাসকেরা শয়তানের হাতিয়ার রূপে কাজ করে। এরা যেমন পূর্ণ ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠা অসম্ভব করে, তেমনি অসম্ভব করে সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা হলো মানব জাতিকে স্বৈরশাসনের এ নাশকতা থেকে মুক্তি দেয়া। তাই নবীজী (সা:) শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতের পথ দেখাননি; স্বৈরশাসনের এ নৃশংস নাশকতা থেকে বাঁচার রাস্তাও দেখিয়েছিলেন। সেটি নিজে ময়দানে নেমে। এটি নবীজী (সা:)’র ১০ বছর মেয়াদী সূন্নত। সেটি যেমন ইসলামী রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার সূন্নত, তেমনি সেটি পরিচালনা করার সূন্নত। একমাত্র এমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলেই মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তের আইন প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়। তাই কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিশ্রুত রহমতও নেমে আসে। অপরদিকে সেরূপ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গাফলতির শাস্তিটি বিশাল। তখন বিদ্রোহ হয় শুধু নবীজী (সা:)’র সূন্নতের বিরুদ্ধে নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধেও। কারণ, যারা নবীজী (সা:)’র অনুসারী, তারাই তো অনুসারী মহান আল্লাহতায়ালার -এ কথাটি বলা হয়েছে সুরা নিসার ৮০ নম্বর আয়াতে। এবং যারা নবীজী (সা:)’র সূন্নতকে পরিত্যাগ করে, তারা পরিত্যাগ মহান আল্লাহতায়ালাকেও। তখন নেমে আসে প্রতিশ্রুত শাস্তিও। তখন স্বৈরশাসকগণ ব্যবহৃত হয় শাস্তির হাতিয়ার রূপে।
মুক্তির পথ: গণঅভ্যুত্থান
কীরূপে সম্ভব স্বৈরশাসনের নির্মূল? তারা নিরস্ত্র নয়। ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্সসহ স্বৈরশাসকদের হাতে থাকে ভোট-ডাকাতির সকল সামগ্রী ও কলাকৌশল। সংসদের সকল সিট দখল করা তাদের জন্য কোন ব্যাপারই নয়। ভোট ডাকাতির সে সামর্থ্য স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ যেমন প্রমাণ করেছেন, তেমনি ২০১৮সালে শেখ হাসিনাও প্রমাণ করেছেন। এরজন্যই তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দীতা সুফল দেয় না। এরশাদের অধীনে নির্বাচনে নেমেছে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত আন্দোলন, জাসদ, ফ্রিডম পার্টি এবং আরো কিছু দল; কিন্তু তাতে স্বৈরাচারী শাসকের পতন দূরে থাক তার গায়ে আঁচড়ও লাগেনি। বরং তাদের অংশগ্রহণ অবৈধ এরশাদের সরকারকে দীর্ঘকাল বৈধতা দিয়েছে। এরশাদের পতন ঘটেছে গণঅভ্যুত্থানে। নির্বাচনে না গিয়ে সকল দল মিলে গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরলে আগেই পতন হতো এরশাদের। এক নেকড়ে আরেক নেকড়ের নিপাত চায় না। সেটি স্বৈরাচারীদের ক্ষেত্রেও। তাই ফ্যাসিবাদী হাসিনা অতীতে স্বৈরাচারি এরশাদের নিপাত চায়নি -বরং নির্বাচনে অংশ নিয়ে বৈধতা দিয়েছে। একই কারণে এরশাদও চায়নি হাসিনার নিপাত। এরশাদ যখন বিএনপির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে তখন যে দলটি তাকে স্বাগত জানায় -সেটি হলো আওয়ামী লীগ। এতে বুঝা যায় দলটির স্বৈরাচার প্রেম। আরো বাস্তবতা হলো, নির্বাচনের ন্যায় অস্ত্রবলেও স্বৈরশাসকদের হারানো যায় না। কারণ তাদের হাতে থাকে অস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার। তাছাড়া তাদের হাতে থাকে সেবাদাস চরিত্রের বিশাল প্রশাসন, দলীয় ক্যাডার বাহিনী, অনুগত পুলিশ ও সেনাবাহিনী। স্বৈরশাসকদের কাজ, জনগণের পকেট থেকে অর্থ নিয়ে অনুগত চাকর-বাকর প্রতিপালন। এরূপ বেতনভোগী দাসদের সাহায্য নিয়ে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশগণ ১৯০ বছর ভারত শাসন করেছে; কোন নির্বাচন দেয়ার প্রয়োজন বোধ পড়েনি। হাসিনাও নির্বাচন ছাড়াই যতদিন ইচ্ছা ক্ষমতায় থাকতে পারে। ৫ বছর পর পর ভোটডাকাতির সাঁজানো নির্বাচন স্রেফ জনগণের সামনে নিজেকে গণতন্ত্রী রূপে দেখানোর নাটক মাত্র। গণতন্ত্রের সাথে এটি মুনাফিকি। সিরিয়ার স্বৈরাশাসক বাশার আল-আসাদ নিজের গদি বাঁচাতে প্রায় ছয় লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ৬০ লাখের বেশী মানুষকে তাদের ঘরবাড়ী থেকে তাড়িয়ে রিফিউজি বানিয়েছে। এবং সিরিয়ার জনগণ এ নৃশংস দুর্বৃত্তকে হটাত পারিনি। কারণ, তার পাশে সাহায্যদাতা রূপে খাড়া হয়েছে রাশিয়া ও ইরান, যেমন হাসিনার পাশে দাড়িয়েছে ভারত ও চীন।
গদি রক্ষার কাজে প্রতিটি স্বৈরাচারী শাসকই অতিশয় বর্বর ও নৃশংস হয়। সে নৃশংস বর্বরতা বাংলাদেশের মানুষ ১০১৩ সালের ৫ মে’ ঢাকার শাপলা চত্বরে দেখেছে। সেটি মিশরের মানুষ দেখেছে ২০১৩ সালে ১৪ আগস্টে কায়রোর রাবা আল আদাবিয়া ময়দানে। দু’টি স্থানেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অংশ নেয়া শত শত নিরস্ত্র ও নিরপরাধ মানব হত্যায় ট্যাংক, কামান, মেশিনগান ও ভারি গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে। রাজপথ পরিণত হয়েছে বধ্যভূমিতে। জঞ্জাল সরানোর ন্যায় ঢাকা মিউনিসিপালিটির গাড়িতে তুলে শাপলা চত্বর থেকে নিহতের লাশ সরানো হয়েছে। জনগণের রাজস্বে পালিত পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সরকার এভাবে নিজেদের ক্ষমতার লিপ্সা পূরণে চাকর-বাকরের ন্যায় ব্যবহার করেছে। তবে ইতিহাসের আরেক সত্য হলো, স্বৈরশাসকদের হাতে এরূপ দুর্বৃত্ত শ্রেণীর বেতনভোগী চাকর-বাকর বিপুল সংখ্যায় থাকলেও তাদের প্রকৃত বন্ধু বা আপনজন বলে কেউ নেই। প্রতি সমাজেই সুযোগসন্ধানী নানারূপ দুর্বৃত্ত থাকে। তারা সহজেই স্বৈরশাসকদের চাকর-বাকরে পরিণত হয় নিছক সুবিধা হাছিল ও অর্থপ্রাপ্তির লোভে। এমন লক্ষ লক্ষ সেবাদাস পেয়েছে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসকগণও।
তবে বাস্তবতা হলো, স্বৈরশাসকদের ন্যায় এরূপ সেবাদাসদের কাছেও তাদের নিজ স্বার্থটাই বড়। স্বৈরশাসকের স্বার্থ বাঁচাতে নিজেদের জান দেয়াতে তাদের নিজেদের স্বার্থ যে বাঁচে না –সেটি তারা বুঝে। তাছাড়া স্বৈরশাসক বাঁচানোর কাজটি জিহাদ নয় যে একাজে মরলে জান্নাত মিলবে। বরং তাতে যে জাহান্নামে যাওয়াটিই সুনিশ্চিত হয় –সেটি বুঝে উঠা কি এতোই কঠিন? ফলে গণঅভ্যুত্থানের বেগ দেখলে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও গোয়ান্দা বিভাগের লোকেরা স্বৈরশাসকের পাশে দাঁড়ায় না, সরকারের পক্ষ ছেড়ে দ্রুত জনগণের পক্ষে যোগ দেয়। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে জনগণের উপর গুলি চালানোর হুকুম দেয়া হলেও তাতে রাজী হয় না। স্বৈর শাসকের সে বিপদের মুহুর্তে তাদের লক্ষ্য হয়, নিজেদের পিঠের চামড়া বাঁচানো, স্বৈরশাসককে বাঁচানো নয়। এভাবে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যেও শুরু হয় স্বৈর-সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। বিশ্বের সকল স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের শেষ দিকে সেটিই দেখা গেছে।
স্বৈরসরকারের চাকর-বাকরেরাও জানে, তাদের বেতন স্বৈরশাসকগণ নিজের পকেট থেকে দেয় না, দেয় জনগণ। এবং বেতন দেয় যে জনগণ, তাদেকে হত্যা করা যে অমার্জনীয় অপরাধ সেটি কে না বুঝে? সে অপরাধের শাস্তি থেকে বাঁচতেই পরাজয় দেখলে দলে দলে স্বৈরাচারের পক্ষ ছাড়ে মোসাহেবী চরিত্রের পত্র-পত্রিকা, টিভি ও মিডিয়ার লোকজনও। গণরোষ থেকে প্রাণ বাঁচাতে এজন্যই স্বৈরশাসকদের হয় একাকী দেশ ছাড়তে হয়, নতুবা গণরোষে একাকী লাশ হতে হয়। বিপদের দিনে তাদের পাশে কেউ থাকে না। তখন লাশ মাটিতে পড়ে থাকলেও জানাজা পড়া ও দাফন করার লোক থাকে না। ক্ষমতা থেকে অপসারিত হলে তাদের পক্ষে কথা বলারও কেউ থাকে না। বরং এক কালের সাথীরাই উল্টো সুরে কথা বলা শুরু করে। তাই শেখ মুজিবের পতনের পরক্ষণেই এককালের আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব আব্দুল মালেক উকিল বলেছিলেন, “ফিরাউনের পতন হয়েছে”। আওয়ামী লীগের দলীয় পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক তার মৃত্যুতে সামান্যতম দুঃখ প্রকাশ করেনি। কোন সম্পাদকীয় বা উপসম্পাদকীয়ও লেখেনি। যারা এক কালে তাকে নেতা রূপে মাথায় তুলেছিল, তাঁরাও তাঁর মৃত্যুতে কোন শোক সভা করেনি। জানাযা বা গায়েবানা জানাযাও পাঠ করেনি।
রাজনৈতিক ভূমিকম্প কেন অনিবার্য হয়?
ভূমিকম্প শুরু হওয়ার আগে সবার অজান্তে ভূমির নিচে তোলপাড় শুরু হয়। সে তোলপাড়েরই ভয়ানক ফলটি হলো ভূমিকম্প। দেশের রাজনীতিতেও তেমনি ভূমিকম্প আসার আগে তোলপাড় শুরু হয় জনগণের চেতনা-রাজ্যে। বাংলাদেশের জনগণের চেতনায় সেরূপ তোলপাড় যে চরম পৌঁছেছে তার আলামত তো প্রচুর। জমিনের ভূমিকম্প রোধের সামর্থ্য কোন সরকারেরই থাকে না। তেমনি সামর্থ্য থাকে না রাজনৈতিক ভূমিকম্প রক্ষার সামর্থ্যও। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মিশর বা ইরানের জনগণের চেয়ে সংখ্যায় কম নয়, দুর্বলও নয়। শেখ হাসিনাও মিশরের হোসনী মোবারক, লিবিয়ার গাদ্দাফী, রাশিয়ার জার বা ইরানে শাহের চেয়ে শক্তিশালী নয়। এখানেই স্বৈরশাসনের নিপাতে বিশাল আশাবাদ। তাছাড়া বাংলাদেশের বুকে রাজনৈতিক ভূমিকম্প যে অতি আসন্ন -সেটির উত্তাপ প্রবল ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। প্রতিটি রাজনৈতিক ভূমিকম্পের শুরু তো এখান থেকেই। কোথায় রোগ এবং সে রোগের জীবাণুর উৎসটি কোথায় -তা নিয়ে জনগণের মনে এখন আর কোন সংশয় নেই্। রোগ মুক্তির পথে এমন বোধোদয়টি যেমন দৈহিক রোগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য, তেমনি অপরিহার্য রাজনীতির ক্ষেত্রেও। ভয়ানক রোগের কারণটি জানা গেলে ভুক্তভোগীগণ তখন রোগমুক্তির লক্ষ্যে নিজেরাই উদ্যোগী হয়।
শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের নৃশংস স্বৈরশাসন জনগণের মনে যে পরিমান ঘৃনা উৎপাদন করেছে –সেটি কি বহ লক্ষ জনসভা করেও সম্ভব ছিল? সম্ভব ছিল কি দশ-বিশটি দৈনিক পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল খুলে? রোগজীবাণু বা বনের হিংস্র পশু যেমন নিজের বন্যতা নিজেই জানিয়ে দেয়, তেমনি নিজেদের অসভ্য বর্বর পরিচিতিটি জানিয়ে দেয় স্বৈরশাসকগণও। ইরানের শাহ বা মিশরের স্বৈরশাসক হোসনী মোবারকের স্বৈর-শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে তাই বিরোধী দলের মিটিং-মিছিল করতে হয়নি। টিভি চ্যানেল বা পত্র-পত্রিকাও প্রকাশ করতে হয়নি। মিছিল-মিটিং ও পত্রিকা প্রকাশের অধিকার না থাকাতেও স্বৈরশাসক নির্মূলের ভূমিকম্প তাই থেমে থাকেনি। একই পথে দ্রুত এগুচ্ছে বাংলাদেশ। হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণাপূর্ণ উত্তপ্ত গভীর লাভা জমেছে জনগণের মনে -এমন কি কিশোর-কিশোরীদের মনেও। সে ঘৃনা নিয়েই রাস্তায় নেমেছিল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীগণ। তেমন আগ্নেয় লাভা জমেছিল মুজিবের বিরুদ্ধেও। শেখ মুজিব সকল দল, পত্র-পত্রিকা ও জনসভা নিষিদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তাতে তাঁর গদি বাঁচেনি। এমন কি তাঁর নিজের জীবনও বাঁচেনি।
আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সৌভাগ্য হলো, ১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব নিহত হলেও আওয়ামী লীগ বেঁচে গিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক ভূমিকম্পে শুধু স্বৈরশাসক নিপাত যায় না। নিপাত যায় তার পারিবারিক ও রাজনৈতিক গোত্র। মারা পড়ে স্বৈরাচারের রাজনৈতিক আদর্শও। সামরিক অভ্যুত্থান থেকে রাজনৈতিক ভূমিকম্পের এখানেই মূল পার্থক্য। তাছাড়া জনগণের কাছে এখন যে বিষয়টি অতি পরিস্কার তা হলো, ফ্যাসিবাদের ক্যান্সারটি শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার একার এবং তাদের পরিবারীক রোগ নয়। সেটি মূলত আওয়ামী লীগের দলীয় রোগ। তাই মুজিব মারা গেলেও ফ্যাসিবাদের ক্যান্সার শুধু বেঁচে নেই, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বরং দেশের আনাচে কানাচে জন্ম নিয়েছে ফ্যাসিবাদের চেতনাধারি হাজার হাজার মুজিব ও হাসিনা। এরই ফলে রাজনীতির অঙ্গণে সৃষ্টি হয়েছে ফ্যাসিবাদের জোয়ার। ফলে উধাও হয়েছে গণতন্ত্র এবং নিষিদ্ধ হয়েছে রাজপথের মিটিং-মিছিল। এবং অসম্ভব হয়েছে মুক্ত গণতন্ত্র চর্চা। বরং অবাধ হয়েছে সরকারি সন্ত্রাস, গুম, খুন এবং দমন। ফ্যাসিবাদের সে নৃশংস বর্বরতা থেকে মুক্তি পেতে জার্মানবাসীগণ শুধু হিটলারের শাসনকেই নির্মূল করেনি, নির্মূল করেছে তার মতবাদ ও দলকে। ফলে ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা বলা সেদেশে ফৌজদারি অপরাধ। বাংলাদেশীদের সামনেও কি ভিন্ন পথ আছে?
উম্মোচিত হয়েছে আওয়ামী চরিত্র
আওয়ামী লীগ এখন আর কোন অজানা শক্তি নয়। প্রকাশ পেয়েছে তার প্রকৃত দর্শন, চরিত্র, ইতিহাস ও ভারতনির্ভরতা। কোনটি আগুন আর কোনটি বরফ -সেটি জানার জন্য কি ইতিহাস পাঠের প্রয়োজন পড়ে? নিরক্ষর মানুষও সেটি টের পায়। তেমনি আওয়ামী লীগের চরিত্রও গোপন বিষয় নয়। জনগণের চোখের সামনে এ দলটি তার প্রকৃত পরিচয় নিয়ে দীর্ঘকাল যাবত দৃশ্যমান। যে কোন গণবিপ্লবের জন্য স্বৈরাচারী শক্তির সঠিক পরিচয়টি জরুরি। ইতিহাসের অতি শিক্ষণীয় বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশ ও দেশবাসীর মুখে কালিমা লেপন শুরু হয়। সেটি পাকিস্তান আমল থেকেই। পাকিস্তান আমলে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী এ দলটি পাকিস্তানের মুখে কালিমা লাগায় ঢাকাস্থ প্রাদেশিক সংসদের অভ্যন্তরে ডিপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে হত্যা করে। এমন অসভ্য বর্বরতা পাকিস্তানের অন্য ৪টি প্রাদেশিক পরিষদের কোনটিতেই ঘটেনি। কারণ সে প্রদেশগুলির সংসদে আওয়ামী লীগ ছিল না। দলটি তার অতিকায় কদর্য রূপটি দেখিয়েছে ১৯৭১’য়ে। সে সময় মুজিবের অনুসারীদের হাতে নিহত হয়, ধর্ষিতা হয় এবং ঘর-বাড়ী, চাকুরি-বাকুরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে বস্তিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় প্রায় ৬ লক্ষ অবাঙালি মুসলিম। আজ যে বর্বরতা মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের জীবনে নেমে এসেছে, সেরূপ বর্বতার শিকার হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভারত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আসা অবাঙালি মুসলিমগণ। বাংলার ইতিহাসে এরূপ বর্বরতা আর কোন কালেই ঘটেনি। তবে নৃশংস কান্ড সেখানেই থেমে যায়নি, হাসিনার শাসনামলে মীরপুরে অবাঙালিদের বস্তিগুলিতেও আগুন দেয়া হয়েছে। মায়ানমারে যেমন রোহিঙ্গা বিরোধী বার্মিজ অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে প্রশ্রয় দেয়া হয়, বাংলাদেশেও তেমনি শাস্তি না দিয়ে প্রশ্রয় দেয়া হয় আওয়ামী লীগের অপরাধীদের।
মানব জীবনের সবচেয়ে বড় ভীরুতা, কাপুরুষতা ও বেঈমানী হলো চোখের সামনে অন্যায় হতে দেখেও নিশ্চুপ থাকা। নবীজী (সা:)র হাদীস, চোখের সামনে অন্যায় দেখলে ঈমানদার ব্যক্তির দায়িত্ব হলো, অন্যায়কারীকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়া। সে শক্তি না থাকলে মুখ দিয়ে নিষেধ করবে। সে সামর্থ্য না থাকলে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। এবং এটিই হলো ঈমানের সর্বশেষ ধাপ। প্রশ্ন হলো সে সামর্থ্যটুকুও যদি না থাকে তবে কি তাকে ঈমানদার বলা যায়? কিন্তু প্রশ্ন হলো, খুন, গুম, অপহরণ. নির্যাতন, ভোট-ডাকাতি, গণতান্ত্রিক অধিকার হনন, শাপলা চত্বরের গণহত্যার ন্যায় নৃশংস বর্বরতার যিনি মূল নেত্রী তাকে না থামিয়ে বা ঘৃণা না করে যদি সমর্থন দেয়, ভোট দেয় এবং মনের মাধুরি মিশিয়ে মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় নেত্রী বলে -তাকে কি ঈমানদার বলা যায়? পবিত্র কুর’আনে মুসলিম উম্মাহকে মানব জাতির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলা হয়েছে। তবে সেটি এজন্য নয় যে তারা বেশী বেশী নামাজ-রোজা করে। বরং এজন্য যে তারা অন্যায়কে নির্মূল করে, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করে এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে। -(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১১০)। অথচ আওয়ামী বাকশালীদের মিশনটি এর বিপরীত। নিজ দলের নেতা-কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের মাঝে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে অসত্য ও অন্যায়কে সমর্থন করার সংস্কৃতিকে। একাত্তরে ৩০ লাখ নিহতের কিসসা তো এভাবেই বাজার পেয়েছে। নৃশংস বর্বরতার বিরুদ্ধে নীরবতা এতটাই প্রবল যে, যেন একাত্তরে অবাঙালিদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধই করা হয়নি। যেন প্রায় ৬ লাখ অবাঙালি মুসলিম নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ী ও দোকান ছেড়ে বস্তিতে গিয়ে উঠেছে। সে সাথে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য হচ্ছে সত্য কথা বলা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামা। সম্প্রতি কিশোর বিদ্রোহীদের উপর পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দেয়ার হেতু তো সেটি।
লাইফ সাপোর্টে স্বৈর-সরকার
বাংলাদেশে স্বৈরশাসন বেঁচে আছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, RAB এবং ভারতীয় সরকারের দেয়া লাইফ সাপোর্টে। লাইফ সাপোর্টটি তুলে নিলে হাসিনার সরকার যে সাথে সাথে বিলুপ্ত হবে –তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? অপর দিকে স্বৈরশাসনকে সমর্থন করার বদনামটি তো বিশাল। প্রতিটি সভ্য সমাজেই অতি অসভ্য নিন্দিত কাজটি হলো, চোর-ডাকাতদের সমর্থন দেয়ার ন্যায় ভোট-ডাকাতদের সমর্থন করা। ভারতের বুদ্ধিজীবী মহলে ইতিমধ্যেই ভারতের এ নীতির বিরুদ্ধে গুঞ্জন উঠেছে। কারণ ভারতে শুধু নরেন্দ্র মোদির বাস নয়, সেদেশে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা তার হিন্দুত্ববাদের বিরোধী। ভারত সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নিছক নিজ স্বার্থ বাঁচাতে হাসিনার স্বৈরশাসনকে সমর্থন দেয়, এবং কয়েক বছর আগে হাসিনাকে বাধ্য করেছে অধিক দামে আদানী কোম্পানীর বিদ্যুৎ কিনতে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের স্বার্থ প্রচণ্ড হামলার মুখে পড়বে -যদি ভারত সরকার গণবিরোধী স্বৈরশাসককে সমর্থন দেয়ার কাজটি অব্যাহত রাখে। জনগণ মারমুখি হলে ভারত যে নিজের স্বার্থ বাঁচাতে হাসিনার উপর থেকে লাইফ সাপোর্ট তুলে নিতে বাধ্য হবে।
ভারতীয় সৈন্যদের হাতে কাশ্মীরে মুসলিম গণহত্যা ও বহু হাজার মুসলিম নারী ধর্ষিত হওয়ার কারণে পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভারতপন্থী হওয়াটি গুরুতর নৈতিক অপরাধ। সেদেশে সেটি গণ্য হয় নিরেট অসভ্য কর্ম রূপে। একই অবস্থা নেপালে। কারণ, দিল্লির আধিপত্যবাদী সরকার নেপালের রাজনীতিতে তার অনুগতদের প্রতিষ্ঠা দিতে ও নেপালী সরকারের মেরুদণ্ড ভাঙ্গতে ভারতের উপর দিয়ে নেপালে জ্বালানী তেলসহ ও অন্যান্য সামগ্রী বহনকারি ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। এবং জন্ম দিয়েছিল চরম অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুরাবস্থার। নেপালের মানুষ ভারতসৃষ্ট সে যাতনার কথা ভূলেনি। একইরূপ প্রচণ্ড ভারত-বিরোধী ঘৃনা মালদ্বীপ ও শ্রীলংকায়। সেরূপ অবস্থা দ্রুত জন্ম নিচ্ছে বাংলাদেশেও। আরো বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠ নেপাল নয়; ক্ষুদ্র মালদ্বীপ বা শ্রীলংকাও নয়। এটি ১৮ কোটি মানুষের মুসলিম দেশ। বাঙালি মুসলিমগণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বৈরাচার বিরোধী জনগণের তুলনায় রাজনীতির অঙ্গণে ঐতিহ্যহীনও নয়। বরং তাদের রয়েছে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গৌরবময় ইতিহাস। এই বাঙালি মুসলিমগণই ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে প্রকাণ্ড ভূমিকম্প এনেছিল এবং পাল্টে দিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র। কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তান আন্দোলনের মূল দুর্গটি ছিল বাংলায়; পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু বা ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য কোন প্রদেশে নয়।
নতুন দিনের প্রত্যাশা
সেদিন বেশী দূরে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বুকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ আবারো ১৯০৬-৪৭’য়ের ন্যায় রাজনীতির পাওয়ার হাউসে পরিণত হবে। সেটি ভারতসহ সকল ইসলামী বিরোধী শক্তি বুঝে। শেখ হাসিনা ভারত সে যুক্তি দেখিয়েই নিজের সেবাদাসী রাজনীতির বিশাল মুজুরি দাবী করছে। দিল্লীর শাসকদের কাছে হাসিনার মূল দাবী, “বাংলাদেশে এবং সে সাথে সমগ্র পূর্ব-ভারতে তোমাদের স্বার্থ বাঁচাতে হলে, আমাকে বাঁচাও।” বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী লীগের যে বিকল্প নেই –সেটিই ভারতীয়দের কানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ভারত সে যুক্তি মেনে নিয়েই শেখ হাসিনার সরকারকে লাগাতর লাইফ সাপোর্টে রেখেছে। শেখ মুজিবকে যেভাবে তারা হারিয়েছে সেভাবে হাসিনাকে হারাতে চায় না। ভারতীয় লাইফ সাপোর্ট তুলে নিলে হাসিনা সরকারের যে ত্বরিৎ পতন ঘটবে -তা নিয়ে বহু বাংলাদেশীর সন্দেহ থাকলেও ভারতীয়দের নেই। শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে বসিয়ে যেভাবে নিবীড় প্রশিক্ষণ দিয়েছে -সেরূপ প্রশিক্ষণ মুজিবকে দেয়ার সুযোগ ভারত পায়নি। ফলে মুজিবামলে ভারত যা কিছু লুটেছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশী লুটেছে হাসিনার আমলে। তাই তারা হাসিনাকে ভারত হারাতে চায়না। হাসিনাকে বাঁচাতে তাই সেনা ছাউনীসহ বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ভারতীয় গোয়েন্দারা আস্তানা গেড়ে বসেছে। অন্যান্য দেশে বিদেশী গোয়েন্দাদের গোপন আস্তানা গড়তে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দারা ঘাঁটি বানায় ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে জেনারেলদের চোখের সামনে। হাসিনার রাজনীতির মূল ভরসা তাই বাংলাদেশের জনগণ নয়, সেটি ভারত।
বাঙালি মুসলিমগণ ১৯০৬-৪৭’য়ে রাজনীতিতে যে ভূমিকম্প এনেছিল তার পিছনে বাংলার ভূমি বা জলবায়ু ছিল না; সেটি ছিল ইসলামের প্যান-ইসলামীক ভাতৃত্বের চেতনা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম স্বার্থরক্ষার ভাবনা। সে চেতনার বলেই বাঙালি মুসলিমগণ অবাঙালিদেরও ভাই রূপে গ্রহণ করার সামর্থ্য অর্জন করেছিল এবং অবাঙালি কায়েদে আযমকে নেতারূপে গ্রহণ করেছিল। ফলে সম্ভব হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই –তা যে কোন অঞ্চল, ভাষা বা বর্ণেরই হোক না কেন। এ বিশেষ পরিচিতিটি মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া, সে পরিচিতিকে অমান্য ও অশ্রদ্ধা জানালে কেউ কি মুসলিম হতে পারে? এমন প্যান-ইসলামীক মুসলিম ভাতৃত্বের কারণেই অতীতে আরব-কুর্দি, ইরানী-তুর্কী মুসলিমগণ জন্ম দিয়েছিল সবেচেয়ে শক্তিশালী বিশ্বশক্তির। সে ভাতৃত্বের কারণে আজও উর্দু, পাঞ্জাবী, সিন্ধি, পশতু ও বেলুচ ভাষাভাষী পাকিস্তানীরা জন্ম দিয়েছে ৫০টির বেশী মুসলিম দেশের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রের। অথচ এ পাকিস্তান ভেঙ্গে ৫টি বাংলাদেশের ন্যায় পৃথক পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টি হতে পারতো। মুসলিম জীবনে ঐক্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ -সেটি তো এভাবেই প্রমাণিত হয়।
তাই যে বাঙালি মুসলিমের অন্তরে সামান্য ঈমান আছে সে কি প্রতিবেশী আসামী, রোহিঙ্গা ও ভারতীয় মুসলিমের বেদনা ভূলে থাকতে পারে? সেটি ভূললে কি ঈমান থাকে? তাই কোন আসামী, রোহিঙ্গা বা ভারতীয় মুসলিমের গায়ে গুলি লাগলে বাঙালি মুসলিম তার বেদনা যে হৃদয়ে অনুভব করবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। অথচ হাসিনা ও তাঁর অনুসারীদের মাঝে সে বেদনা নাই। তাদের রাজনীতিতে মুসলিম ভাতৃত্বের সে ভাবনাও নাই। তাদের মূল ভাবনাটি হলো দলীয় স্বার্থ ও ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারি। সে স্বার্থ বাঁচাতেই তাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো, বাঙালি মুসলিম রাজনীতির মূল দুর্গে আঘাত হানা। তাই হামলার লক্ষ্য হলো ইসলাম ও ইসলামী চেতনা-সমৃদ্ধ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বই-পুস্তক। তাদের কাছে নবীজী (সা:)’র ইসলাম –যাতে রয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ, প্যান-ইসলামীক ভাতৃত্ব ও জিহাদের ধারণা, গণ্য হয় সন্ত্রাস রূপে। ইসলাম বলতে তারা বুঝে দেওবন্দী, তাবলিগী, মাজভাণ্ডারী ও কবর-পূজার ইসলাম –যাতে নাই ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ ও জিহাদের ন্যায় পবিত্র কুর’আনের মৌল আহকামগুলি প্রতিষ্ঠায় সামান্যতম আগ্রহ। এবং নবীজী সা:)’র ইসলাম নির্মূল কল্পে তারা শুরু করেছে রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, মিডিয়া ও ধর্ম শিক্ষার অঙ্গণে ব্যাপক সোসাল ইঞ্জিনীয়ারিং। একাজে হাসিনাকে রশদ জোগাচ্ছে শুধু ভারত নয়, বরং বহু অমুসলিম সরকার। তাবত ভারতীয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ যে ঘনিষ্ট পার্টনার -সেটি আজ আর গোপন বিষয় নয়। মহান আল্লাহতায়ার এজেন্ডার বিরুদ্ধে নেমেছিলেন শেখ মুজিব। তিনি নিষিদ্ধ করছিলেন ইসলামকে বিজয়ী করার সকল রাজনৈতিক ও বু্দ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টা। সে স্বাধিনতা পাকিস্তান আমলে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে মুজিব সেটি রদ করেন। কারণ, ভারত সেটি চায়না। অথচ এ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের ভূমিতে নিষিদ্ধ নয় কম্যুনিজমের ন্যায় কুফরি মতবাদকে বিজয়ী করার রাজনীতি।
একই নীতি শেখ হাসিনার। তাঁর মন্ত্রী সভায় স্থান পেয়েছে চিহ্নিত ইসলামবিরোধীগণ। শেখ হাসিনা শুধু কুর’আনের তাফসির, মসজিদে খুতবাদান, ইসলামী পুস্তক-প্রকাশ এবং মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীর উপরই শুধু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেননি, মাদ্রসাগুলিতে হিন্দু শিক্ষকদেরও নিয়োগ দিয়েছেন। মাদ্রাসার অফিসে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি টানাতে বাধ্য করা হচ্ছে। সে সাথে ইসলামের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার বাড়তি নৃশংসতাটি হলো, ইসলামপন্থীদের ফাঁসিতে ঝুলানোর নীতি। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র নতুন নয়। ইংরেজদের হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্বে বাংলার প্রায় সিকি ভাগ জমি লা-খেরাজ তথা খাজানা মুক্ত ছিল। সে জমি বরাদ্দ ছিল দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলির জন্য। কিন্তু ইংরেজগণ সে ভূমি ছিনিয়ে নিয়ে হিন্দু জমিদারদের হাতে তুলে দেয়; ফলে বিলুপ্ত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। এর ফলে বাংলার মুসলিমগণ দ্রুত নিরক্ষরে পরিণত হয়। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ১৯৪৭ সালে তারাই প্রকাণ্ড রাজনৈতিক ভূমিকম্পের জন্ম দেয়। কারণ, ইংরেজদের জুলুম এবং হিন্দু জমিদারদের শোষণ আমূল বিপ্লব এনেছিল তাদের চেতনার ভূমিতে। ভূমিকম্পের জন্ম ভূমির গভীরে; আর রাজনৈতিক ভূমিকম্প জন্ম নেয় মনের গভীরে।
সম্ভাবনা নতুন বিপ্লবের
বাংলাদেশের জনগণের মনের গভীরে জমেছে আগ্নেয় লাভা। এ লাভা তীব্র ঘৃণার। দিন দিন তা বেড়ে উঠছে ভারত ও ভারতীয়পন্থী স্বৈরশাসকের নৃশংসতার বিরুদ্ধে। আগ্নেয়গিরির ন্যায় যখন তখন তা বিস্ফোরিত হতে পারে। হাসিনা সরকারের নৃশংসতা থেকে বাঁচতে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে দিবারাত্র দৌড়ের উপর আছে। সে ঘৃণার আগুণে পেট্রোল ঢালছে ভারতীয় মুসলিমদের উপর হিন্দু সন্ত্রাসীদের বর্বরতা। গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে আসাম থেকে ৪০ লাখের বেশী মুসলিমকে বাংলাদেশে প্রেরণ ও তাদের ভোটাধিকার, ঘরবাড়ি, জমিজমা, অর্থসম্পদ ও চাকুরি-বাকুরি ছিনিয়ে নেয়ার। শুধু আসাম থেকে নয়, নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, পশ্চিম বাংলা থেকেও তারা অনুপ্রবেশকারী বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে তাড়িয়ে দিবে। তাদের দাবী, ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশের মুসলিমদের উঁই পোকা বলে?
ইসলাম ও মুসলিম ভীতি ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতাদের এতটাই পাগলে পরিণত করেছে যে, প্রতিটি পূর্ব-ভারতীয় মুসলিমই তাদের কাছে বাংলাদেশী মনে হয়। স্রেফ গরুর গোশত ঘরে রাখার সন্দেহে মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এরূপ জালেমদের সাথে বন্ধুত্ব করা তো গুরুতর নৈতিক অপরাধ। সে বন্ধুত্ব জালেমকে উৎসাহিত করে আরো নৃশংস হতে। সে অপরাধ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘনিয়ে আসছে ভারত-বিরোধী ভূমিকম্প। ভারতের এরূপ মুসলিম বিরোধী নীতিতে শেখ হাসিনা ও তাঁর দল নীরব থাকতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ কি তাতে নীরব থাকবে? মোদীর পাশে দাঁড়ানোটি হাসিনার রাজনীতির বিষয় হতে পারে; কিন্তু বিপদে পড়া ভারতীয় মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোটি বাঙালি মুসলিমদের ঈমানী বিষয়। সে দরদটুকু না থাকলে যে ঈমান থাকে না -সে বিষয়টি হাসিনা না বুঝলেও নিরক্ষর বাঙালি মুসলিম ষোল আনা বুঝে। শেখ হাসিনার কাছে বাঙালির ইতিহাসের শুরুটি ১৯৭১ থেকে। কিন্তু বাঙালি মুসলিমের গৌরবের ইতিহাসের সৃষ্টি তো ১৯০৬’য়ে ঢাকায় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এবং ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাই হলো বাঙালি মুসলিমের সবচেয়ে বড় গৌরবের বিষয়। ইতিহাস থেমে থাকে না, সামনে এগুয় এবং নতুন ইতিহাস গড়ে। বস্তুত ১৯৪৭’য়ের বিজয়ের গৌরবই তাদেরকে আরেক বিজয়ে অনুপ্রাণীত করবে।
বাঙালি মুসলিম জীবনে এখন নিদারুন ক্রান্তিকাল। নতুন ইতিহাস নির্মাণের মুহুর্ত এখন বাঙালি মুসলিমের। এখন মাথা তুলে না দাঁড়ালে আগ্রাসী ভারত মাথা তুলে দাঁড়ানোর সামর্থ্যই বিলুপ্ত করে দিবে। দীর্ঘকাল খাঁচায় বন্দী রেখে খাঁচা খুলে দিলেও সিংহ খাঁচা থেকে বের হয় না। জনজীবনে একই অবস্থা নেমে আসে স্বৈরশাসকের হাতে দীর্ঘদিত অধিকৃত থাকায়। সমগ্র দেশ আজ বদ্ধখাঁচা। ভারত চায়, বাংলাদেশের জনগণ বেঁচে থাকুক খাঁচায় বন্দী সার্কাসের জীব রূপে। শেখ হাসিনা চায়, সে খাঁচার পাহারাদার হতে। খাঁচার বন্দী জীবনে মিছিল-মিটিং, নির্বাচন ও গণতন্ত্র থাকে না। প্রহরীর দায়িত্ব পেয়ে শেখ মুজিবও নিজেকে ধন্য মনে করছিল। তার হাতে ভারত ধরিয়ে দিয়েছিল ২৫ সালা দাসচুক্তির দলিল। ২৫ সালা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু হাসিনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে অলিখিত দাসত্ব। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারির রাজনীতি যে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং দেশদ্রোহীতা গণ্য হবে –তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? এরূপ অবস্থাতেই ক্ষোভে ও ঘৃণায় গণবিস্ফোরণ ঘটে।
জনগণ অপরাধী ভারতীয়দের ধরতে না পারলেও তার কলাবোরেটরদের অবশ্যই হাতে নাতে ধরবে। শাস্তিও দিবে। একাজের জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, শিবির বা ছাত্রদল লাগবে না। এক কালে যারা আওয়ামী লীগকে অন্ধভাবে সমর্থন দিয়েছে -তারাই দ্রুত ময়দানে নেমে আসবে। নেমে আসবে অগণিত নির্দলীয় মানুষ। মুজিবকে কি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, শিবির বা ছাত্রদল সরিয়েছিল? বুঝতে হবে, মাথা থেকে অসভ্য ও নৃশংস স্বৈরশাসককে নামানোর বিষয়টি কোন দলের দলীয় বিষয় নয়, সেটি সমগ্র দেশবাসীর বাঁচা-মরার বিষয়। একাত্তরে অখণ্ড পাকিস্তান বাঁচানোর প্রশ্নে বাঙালি মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল; কিন্তু সেরূপ বিভক্তি স্বাধীন বাংলাদেশ বাঁচানো নিয়ে দেখা দিবে না। মুজিব স্বায়ত্বশাসন ও সোনার বাংলা বানানোর নামে ধোকা দিয়ে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের জারিজুরি মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে। সোনার বাংলার বদলে মুজিব দিয়েছে তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি, দুর্ভিক্ষ ও ভারতের দাসত্ব। এ সময়ের ইস্যু বাংলাদেশ বাঁচানো। স্বাধীন বাংলাদেশ না বাঁচলে নিজেদের স্বাধীন ভাবে বাঁচাটিও যে ভয়ানক বিপদে পড়বে -সেটি বুঝার সামর্থ্য এমন কি স্কুল ছাত্রদেরও আছে। কিছু কাল আগে ঢাকার রাস্তায় কিশোর বিদ্রোহটি ছিল মূলতঃ সে সমঝ-বুঝেরই প্রদর্শণী। ১ম ২৩/০৯/২০১৮; ২য় ০৬/০২/২০২৪।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018