বাংলাদেশে যে শিক্ষা শিক্ষিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on December 18, 2020
- Bangla Articles, শিক্ষা ও সংস্কৃতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
লেখক পরিচিতি: বিলেতে মেডিসিনের কনসালটেন্ট; গবেষণা নিবন্ধ, পত্রিকার কলাম এবং বইয়ের লেখক; ইন্টার ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সায়েন্টিফিক স্টাডিস অব পপুলিশেন (আই.ইউ.এস.এস.পি)’র ১৯৯৭ সালের চীনের বেইজিংয়ে ও ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলে এবং ২০২0 সালের ফেব্রেয়ারীতে ফ্রান্সে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় ও নরম্যান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান ও গবেষণা পেপার পেশ।
উপেক্ষিত শিক্ষার মূল লক্ষ্য
শিক্ষার মূল লক্ষ্যটি স্রেফ স্বাক্ষর-জ্ঞান, গণিতের জ্ঞান বা পড়ালেখার সামর্থ্য বৃদ্ধি নয়। স্রেফ উপার্জনের কৌশল শেখানো নয়। নিছক তথ্য ও তত্ত্ব জানানোও নয়। এমন কি বিজ্ঞান বা কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ করাও নয়। বরং সে মূল উদ্দেশ্যটি হলো ব্যক্তির বিবেককে জাগ্রত করা। জ্ঞানের সন্ধান ও জ্ঞানার্জনের পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া। মিথ্যা থেকে সত্য, অন্যায় থেকে ন্যায়কে চেনার কান্ডজ্ঞান দেয়া। ছাত্রকে পরিশুদ্ধ চেতনা ও মানবিক গুণে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। তখন শুধু ব্যক্তির বিশ্বাস, দর্শন ও রুচীবোধই পাল্টে যায় না, পাল্টে যায় তার কর্মকান্ড, আচার-আচরণ ও চিরায়ত অভ্যাস। অসভ্য ও অসুন্দর মানুষ থেকে শিক্ষিত মানুষ তখন ভিন্নতর মানুষে পরিণত হয়। শিক্ষার মাধ্যমে জাতি এ ভাবেই পায় পরিশীলিত, সভ্য ও সুন্দর চরিত্রের মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশ তা পায়নি। বাংলাদেশের এ বিশাল ব্যর্থতাটি মিথ্যাপূর্ণ গলাবাজি করে ঢাকা যায় না। সে ব্যর্থতার প্রমাণ তো হলো, দেশজুড়ে সন্ত্রাস, খুন, গুম, ধর্ষণ, দুর্নীতি, অরাজকতা, স্বৈরাচারিদের দখলদারি ও দূর্নীতিতে বিশ্বে বার বার প্রথম স্থান অর্জন। এসব ব্যর্থতার কারণ অনেক। তবে মূল ব্যর্থতাটি শিক্ষাব্যবস্থার। গরু-ছাগল বেড়ে উঠে গোয়ালে এবং মানব শিশু মানবিক গুণে বেড়ে উঠে বিদ্যালেয়। বাংলাদেশের ব্যর্থতাগুলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা জাতিকে শিক্ষিত করতে এবং ছাত্রদের প্রকৃত মানব রূপে গড়ে তুলতে চরম ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। এ শিক্ষা শুধু দূর্নীতি, সন্ত্রাস, স্বৈরাচারই বাড়ায়নি, বাড়িয়েছে পরনির্ভরতাও। মেরুদণ্ড গড়ার বদলে সেটিকে বরং চুর্ণ বা পঙ্গু করছে। এ শিক্ষাব্যবস্থা ব্যক্তির নিজেকে, তার বাঁচবার মূল লক্ষ্যকে ও তার প্রভুকে জানতেও তেমন সাহায্য করছে না।
শিক্ষার মূল লক্ষ্য, কোনটি সত্য ও কোনটি মিথ্যা এবং কোনটি জান্নাতের পথ আর কোনটি জাহান্নামের পথ -সেটি জানায় ছাত্রের সামর্থ্য বাড়ানো। সেটি না হলে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি শয়তানের শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়। তখন ছাত্রগণ কর্মজীবনে ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, প্রকৌশলী, প্রশাসক বা বিচারক হয়েও মিথ্যার জোয়ারে ভাসতে থাকে ও শয়তানের সেপাহীতে পরিণত হয়। এমন দেশে ভিনদেশী শত্রুগণও তাদের পক্ষে বিপুল সংখ্যক ভাড়াটে সৈনিক পায়। বিশ্ববিদ্যালের সেরা ডিগ্রি নিয়েও এমন ব্যক্তি নিরেট জাহেল, ইসলামের শত্রু ও জাহান্নামের যাত্রীতে পরিণত হয়। ইসলামের বিজয় রুখতে তারা বহুজাতিক সাম্রাজ্যবাদি শক্তির সাথেও কোয়ালিশন গড়ে। ইসলামে জাহেল থাকাটিই এজন্যই কবিরা গুনাহ। সকল গুনাহর এটিই হলো জননী। অজ্ঞতা ও কুশিক্ষা নিয়ে অসম্ভব হয় সত্যিকার মুসলিম হওয়া। তাই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী কোন ব্যক্তি যখন সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী বা সমাজবাদী রাজনীতির ক্যাডার বা সমর্থক হয় -তখন কি বুঝতে বাঁকি যে ব্যর্থতাটি মূলত শিক্ষালাভে?
সমাজে পেশা বা কাজের সংখ্যা অসংখ্য। তবে জীবনে সফল হতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনটি -সে হুশটি ষোল আনা থাকতে হয়। একই বলে sense of prioratisation. সে বোধ থাকলে গাড়ীর গায়ে রঙ লাগানোর চেয়ে ইঞ্জিন ঠিক করাটি অধীক গুরুত্বপূর্ণ গণ্য হয়। নইলে সে গাড়ী চলে না। ইসলামের সে ইঞ্জিনটি হলো ঈমান। সে ঈমান পানাহারে বেড়ে উঠে না। ঈমান বাড়ে এবং পুষ্টি পায় পবিত্র কোরআন-হাদীসের জ্ঞানে। তাই নবীজী (সাঃ)র উপর নাযিলকৃত প্রথম ওহীটি নামায-রোযা বা হজ-যাকাত ফরজ করতে নাযিল হয়নি। সেটি ছিল জ্ঞানার্জন ফরজ করতে। “ইকরা” তাই পবিত্র কোর’আনের প্রথম শব্দ। গাড়ির শক্তিশালী ইঞ্জিনের সাথে যেটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ –সেটি হলো সঠিক পথের তথা সিরাতুল মুস্তাকীমের রোডম্যাপ। পবিত্র কোরআন হলো সে রোড ম্যাপ। পবিত্র কোরআনের জ্ঞান ছাড়া কোন ব্যক্তির নিজের বুদ্ধিতে –তা সে যতবড় বুদ্ধিমানই হোক না কেন, জান্নাতের পথ পাওয়া সম্ভব। সেটি এমনকি নবীজী (সা:)র পক্ষে সম্ভব ছিল না। “ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক” -অর্থ: “পড় যিনি সৃষ্টি করেছেন সে মহান প্রভুর নামে”, পবিত্র কোরআনে ঘোষিত মহান আল্লাহর এ প্রথম আয়াতটি এবং প্রথম এ হুকুমটি মূলত সে অপরিহার্য বিষয়টিই সুস্পষ্ট করে। এবং সে নির্দেশটি স্রেফ নবীজী (সা:)র প্রতি নয়, বরং প্রতিটি মানুষের উপর। যার মাঝে সে জ্ঞানার্জনের হুকুম পালনে আগ্রহ নাই সে ব্যক্তি নামাযী, রোযাদার বা হাজী হতে পারে, কিন্তু যেরূপ জ্ঞানবান মুসলিম মহান আল্লাহতায়ালার কাছে পছন্দীয় সে পর্যায় পৌঁছা তাঁর পক্ষে অসম্ভব।
পবিত্র কোরআনের জ্ঞান থেকে যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিল, সে মূলত জাহেল। এমন জাহেলগণ মুসলিম হওয়ার পরিবর্তে কাফের, মুনাফিক, ও জালেম হয়। এরাই অন্তহীন কালের জন্য জাহান্নামের বাসিন্দা হয়। জ্ঞান ছাড়া ঈমান-আক্বিদা যেমন ঠিক হয় না, অন্য ইবাদতও সঠিক হয় না। কোর’আনী ইলমে জ্ঞানবান ব্যক্তিকে আলেম বলা হয়, সে জন্য মাদ্রাসার ডিগ্রি জরুরি নয়। সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ অবধি মুসলিম ইতিহাসে যারা শ্রেষ্ঠ আলেম রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাদের কোন ডিগ্রি ছিল না। গভীর জ্ঞান ও জ্ঞানলব্ধ উন্নত আমলই ছিল তাদের সার্টিফিকেট বা সনদ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা, “ইন্নামা ইয়াখশাল্লাহ মিন ইবাদিহিল উলামা”। অর্থ: সমগ্র মানবসৃষ্টির মাঝে একমাত্র আলেমগণই আল্লাহকে ভয় করে। এর অর্থ দাঁড়ায়, অন্তরে আল্লাহতায়ালার ভয় সৃষ্টি করতে হলে তাকে আলেম হতে হয়। আল্লাহতায়ালার ভয় ছাড়া কি মুসলিম হওয়া যায়? মুসলিম হতে হলে তাই আলেমও হতে হয়। জ্ঞানার্জন এ জন্যই অপরিহার্য। এবং সে জ্ঞানের সবচেয়ে বিস্ময়কর ও সর্বশ্রেষ্ঠ ভাণ্ডারটি হলো পবিত্র কোর’আন। এটিই মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান; তেল, গ্যাস, হিরক বা সোনা-রূপা নয়। কোর’আনের জ্ঞান ছাড়া তাই প্রকৃত জ্ঞানী হওয়া চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। অথচ বাংলাদেশের মত দেশগুলিতে জ্ঞানী হওয়ার কাজটি হচ্ছে কোর’আনের জ্ঞান ছাড়াই। ফলে দেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিগ্রিধারীদের সংখ্যা বিপুল সংখ্যায় বাড়লেও, প্রকৃত জ্ঞানীর সংখ্যা বাড়েনি। বরং ভয়ানক ভাবে যা বেড়েছে ডিগ্রিধারীদের মাঝে খুনি, ধর্ষক, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের সংখ্যা। মানুষকে লাশ বানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গণে।
পালিত হচ্ছে না জ্ঞানার্জনের ফরজ
খাওয়ার অর্থ কোন কিছু শুধু মুখে পুরা নয়। বরং সেটিকে চর্বন করা, গলধঃকরণ করা এবং হজম করা। নইলে খাওয়ার কাজটি যথার্থ হয়না। তাতে দেহের পুষ্টিও বাড়ে না। তেমনি পড়ার অর্থ শুধু তেলাওয়াত নয়, বরং যা পড়া হয় তার অর্থ পুরাপুরি বুঝা তথা আত্মস্থ করা। অথচ বাংলাদেশে কোরআন পড়ার নামে স্রেফ তেলাওয়াত হয়, কোরআন বুঝা হয় না। কোরআনী জ্ঞানার্জনের ফরযও তাতে আদায় হয় না। অথচ পবিত্র কোর’আনে “আ’ফালা ইয়াতাদাব্বারুন” (অর্থ: তোমার কোন গভীর ভাবে মননিবেশ করো না?) এবং “আ’ফালা তা’ক্বুলুনর” (অর্থ: তোমার কেন নিজের বিবেক বু্দ্ধিকে কাজে লাগানো না?) এরূপ প্রশ্ন রেখে মহান আল্লাহতায়ালা মূলত পবিত্র কোর’আন বুঝার উপর অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছেন। নবীর যুগে সাহাবাগণ সেটি বুঝেছিলেন। তাই সে সময় যারা নিরক্ষর ছিলেন বা ভেড়া চড়াতেন তারাও দ্রুততার সাথে অতি উচ্চমানের জ্ঞানী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো, বাংলাদেশের আলেমগণ অর্থ না বুঝে তেলাওয়াত করাকে নিন্দা করেন না। বরং সেটিকে সওয়াবের কাজ বলে প্রশংসা করেন। মহান আল্লাহতায়ালা তাদাব্বারুন, তায়াক্কুল ও তাফাহহুমের যে গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটি বাংলাদেশী আলেমদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। ফরজ পালনের বদলে সওয়াব হাছিলই তাদের কাছে বেশী গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে কোরআন তেলাওয়াত ও কোর’আনের হাফেজ হওয়ার আয়োজন বাড়লেও কোরআন বুঝার আয়োজন বাড়েনি।
অথচ না বুঝে তেলাওয়াতের যে সওয়াব –সেটি হাসিল না করলে গুনাহ হয় না। মাথা টানলে কান এমনিতেই চলে আসে। ফলে বুঝে কোর’আন পাঠ করলে তেলাওয়াতের সওয়াব তো সে সাথে জুটবেই। কিন্তু কোর’আন না বুঝলে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের যে চরম অবাধ্যতা হয় এবং তাতে সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা যে সম্ভব হয় না -সে হুশ কি আছে? কোর’আন হিদায়েত তথা পথনির্দেশনা দেয়ার কিতাব। হিদায়েত নিতে হলে তো কিতাব বুঝতে হয়; না বুঝায় সেটি সম্ভব কি করে?
মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের প্রতিটি অবাধ্যতাই কুফরি। পবিত্র কোরআনের অর্থ বুঝা যে কতটা জরুরী সেটি বুঝা যায় মহান আল্লাহতায়ালার পবিত্র ঘোষণা থেকে: “ইয়া আইয়োহাল্লীযীনা আমানু লা তাকরাবুস সালাতা ও আনতুম সুকারা ও হাত্তা তা’লামু তা কূলুনু।” –(সুরা নিসা, আয়াত ৪৩)। আয়াতটির অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমার নামাযের নিকটবর্তী হয়ো না যদি মদ্যপ অবস্থায় থাকো; এবং ততক্ষণ পর্যন্ত নয় যতক্ষণ না তোমরা যা বলো তা বুঝতে না পারো।” আয়াতটি যখন নাযিল হয়েছিল তখনও মদ্যপান হারাম ঘোষিত হয়নি। ফলে মাদকাসক্ত অবস্থায় অনেকে নামাযে দাঁড়াতো। ফলে যে আয়াতগুলো নামাযে তেলাওয়াত করা হতো -তাঁর অর্থ তাঁরা বুঝতো না। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে সেটি অতি অপছন্দনীয় ছিল। তিনি চান, পবিত্র কোরআন কেউ পাঠ করলে তার অর্থও তাকে বুঝতে হবে। অথচ সেটি মদ্যপ অবস্থাতে অসম্ভব। তবে আরেকটি কারণেও মহান আল্লাহতায়ালার অপছন্দনীয় সে কাজটি ঘটে, সেটি হলো না বুঝে কোরআন তেলাওয়াতে।
তাই ইসলামে মদ্যপান যেমন হারাম ঘোষিত হয়েছে, তেমন ফরজ করা হয়েছে পবিত্র কোরআন বুঝাকে। কোরআন বুঝার সে গুরুত্বটি বুঝার কারণেই মিশর, সিরিয়া, ইরাক, সূদান, লিবিয়া,মরক্কো, মালি, আলজিরিয়ার ন্যায় দেশের অনারব মুসলিমগন নিজেদের মাতৃভাষা পরিহার করে আরবী ভাষাকে গ্রহণ করেছিলেন। অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হওয়াতে পবিত্র কোরআনের বার বার খতম তেলাওয়াতেও বাঙালী মুসলিমদের জ্ঞানের ভূবনে বৃদ্ধি ঘটছে না। ফলে আল্লাহ-ভীরু মুসলিম সৃষ্টি হচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ ঘন্টা এভাবে ব্যয় হলেও প্রকৃত জ্ঞানী বা আলেম সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশে প্রচলিত তাফসির গ্রন্থগুলির প্রায় সবগুলিই উর্দু বা আরবী ভাষা থেকে অনুদিত। প্রকৃত আলেম সৃষ্টি হলে তো মুজাহিদও সৃষ্টি হতো। তখন আল্লাহর নির্দেশিত শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠাও ঘটতো। শিক্ষার ময়দানে বাঙালী মুসলিমদের এটিই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। সে ব্যর্থতার কারণে দ্রুত বাড়ছে জাহেলদের সংখ্যা। ফলে বাড়ছে ১৬ কোটি মুসলিমের দেশে ইসলামের পরাজয়। এবং বলবান হচ্ছে ইসলামের শত্রুপক্ষের অধিকৃতি।
শিক্ষাই জীবনের মূল্য বাড়ায়
ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে ভ্যালু এ্যাড বা মূল্য সংযোজন হয় শিক্ষার মাধ্যমে। মানব জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো এরূপ লাগতর মূল্য সংযোজন। রাষ্ট্রের এবং মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো এটি। ভূমি, কৃষিপণ্য, খনিজ সম্পদের গায়ে মূল্য সংযোজনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মহান আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির গায়ে মূল্য সংযোজন। এবং সবচেয়ে বড় মূল্য-সংযোজনটি হয় হিদায়েত বা সিরাতুল মুস্তাকীম-প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। তখন সে জান্নাতের যোগ্য রূপে বিবেচিত হয়। সেটি না হলে ব্যক্তি ও সমষ্টির সকল খাত ব্যর্থ হতে বাধ্য। সেটি যেমন আখেরাতে, তেমনি এ দুনিয়াতে। তখন ব্যর্থ হয় প্রশাসন, রাজনীতি, প্রতিরক্ষা, আইন-আদালত, শিল্প, কৃষি, বিজ্ঞানসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য খাত। মূল্য সংযোজনের অর্থ, ব্যক্তির জীবনে লাগাতর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ঈমান, চারিত্রিক পরিশুদ্ধি ও কর্ম-কুশলতা বৃদ্ধি। এখাতে ব্যর্থ হলে জিডিপি বা মাথাপিছু আয় বাড়িয়েও জাতি দুর্বৃত্তিতে রেকর্ড গড়ে।
শিক্ষাকালটি কখনোই স্কুল-কলেজের শিক্ষা শেষে শেষ হওয়ার নয়। বরং আজীবন সে ছাত্র। এবং তার জ্ঞানার্জন চলে কবরে যাওয়ার পূর্ব-মুহুর্ত পর্যন্ত। নবীজী (সা:) বলেছেন, তার জন্য ধ্বংস যার জীবনে পর পর দু’টি দিন অতিবাহিত হলো, অথচ জ্ঞানে বৃদ্ধি ঘটলো না। ঈমানদার ব্যক্তিকে তাই দিন শেষে ভাবতে হয়, তার জ্ঞানের ভূবনে সে দিনটিতে কতটুকু অর্জিত হলো -তা নিয়ে। পাটের আঁশে মূল্য সংযোজন না হলে সেটি স্রেফ আঁশই থেকে যায়। মূল্য সংযোজন হলে সে পাটই মূল্যবান কার্পেটে পরিণত হয়। মূল্য সংযোজনের ফলে খনির স্বর্ণ বা হীরক খন্ড অতি মূল্যবান গহনাতে পরিণত হয়। মানব জীবনে মূল্য সংযোজনের সে ইন্ডাস্ট্রিগুলো হলো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও মসজিদ-মাদ্রাসা। কিন্তু বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যর্থ খাত হল এগুলি। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে হচ্ছে এর উল্টোটি। গ্রামের সুবোধ বালকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে খুনি, সন্তুাসী ও ধর্ষকে পরিনত হচ্ছে। অসংখ্য ছাত্রী ধর্ষিতা হচ্ছে, আবরার ফাহাদগণ লাশ হচ্ছে তো তাদের হাতেই।হলের রুমগুলো পরিণত হচ্ছে ধর্ষণপুরি ও টর্চার সেলে।
শিক্ষাঙ্গণ যেখানে ক্রাইম ইন্ডাস্ট্রি
বাংলাদেশকে যারা সন্ত্রাসী, স্বৈরাচারি, ধর্ষক ও দূর্নীতিবাজদের দেশে পরিণত করেছে -তারা ডাকাত পাড়ায় বেড়ে উঠেনি। তারা শিক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নবীজী (সা:)’র বিখ্যাত হাদীস, “প্রতিটি শিশুর জন্ম হয় মুসলিম রূপে।” মুসলিম দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত কাজ হলো, প্রতিটি শিশুর জীবনে কোর’আনীর জ্ঞানের মূল্য সংযোজন ঘটিয়ে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা। এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ছাত্র-ছাত্রীদের জান্নাতে পৌঁছতে সাহায্য করবে –সেটিই তো কাঙ্খিত। কিন্তু কাফের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এজেন্ডাটি হয় এর উল্টো। সেগুলি ব্যবহৃত হয় ছাত্রদের ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে ইসলামের শত্রু রূপে গড়ে তোলার কাজে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালের ডিগ্রিধারী ছাত্রগণ যখন সন্ত্রাসী, খুনি, ঘুষখোর, ধর্ষক, মাদকাসক্ত হয় এবং জাতীয়তাবাদী, সমাজবাদী ও সেক্যুলারিস্ট রাজনীতির ক্যাডার রূপে খাড়া হয় -তখন কি বুঝতে বাঁকি থাকে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কিসের ইন্ডাস্ট্রি? এগুলোর কারণে মুসলিম শিশু ডিগ্রি পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এসব ডিগ্রীধারিগণই বাংলাদেশকে পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ রূপে।
প্রতিটি ব্যক্তির গভীরে যে সম্পদ লুকিয়ে আছে তা সোনার খনি বা তেলের খনির চেয়েও বহুগুণ সমৃদ্ধ। শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় এবং উন্নততর সভ্যতার নির্মাণে বস্তুতঃ এ মানবিক সম্পদই মূল। অন্যসব সম্পদের প্রাচুর্য আসে এ সম্পদের ভিত্তিতেই। তাই উন্নত জাতিসমূহ শুধু মাটি বা সাগরের তলাতেই অনুসন্ধান করে না, বরং মানুষের গভীরেও আবিস্কারে হাত দেয়। মানুষের নিজ শক্তি আবিস্কৃত না হলে প্রাকৃতিক শক্তিতে তেমন কল্যাণ আসে না। তাই আফ্রিকার সোনার খনি বা আরবদের তেলের খনি সে এলাকার মানুষকে উপহার দিয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শোষন ও মানবেতর স্বৈরাচার। অথচ নবী পাক (সাঃ) মানুষকে সভ্যতর কাজে ও সভ্যতার নির্মানে ব্যক্তির সুপ্ত শক্তির আবিস্কারে হাত দিয়েছিলেন। ফলে মানব-ইতিহাসের বিস্ময়কর মানুষে পরিণত হয়েছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। ফেরেশতাদের চেয়েও তারা উঁচুতে উঠতে পেরেছিলেন। তবে বীজ থেকে অঙ্কুরোদগমের জন্য চাই উপযুক্ত মাটি, পানি ও জলবায়ু। নইলে তা থেকে চারা গজায় না, বৃক্ষও বেড়ে উঠে না। তেমনি ব্যক্তির সুপ্ত শক্তি ও সামর্থ্যের বেড়ে উঠার জন্যও চাই উপযুক্ত পরিবেশ। সেরূপ একটি পরিবেশ দিয়ে সাহায্য করাই বিদ্যালয়ের মূল কাজ। তখন জেগে উঠে ব্যক্তির ঘুমন্ত বিবেক। বেড়ে উঠে তার ব্যক্তিত্ব। বিদ্যালয়ে এ কাজ না হলে তখন দেহ হত্যা না হলেও নিহত হয় শিশুর সৃষ্টিশীল সুপ্ত সামর্থ্য। তখন বিদ্যালয় পরিণত হয় বিবেকের বধ্যশালায়। তখন মানুষ পরিণত হয় নিজেই নিজ বিবেক ও প্রতিভার কবরস্থানে।
বাংলাদেশের বিদ্যালয়ে এভাবেই খুন হচেছ বহু খালেদ, তারেক, ইবনে সিনা, ফারাবী, তারাবীর ন্যায় প্রতিভা। তবে বিপদ শুধু প্রতিভার হত্যাকান্ডতেই সীমাবদ্ধ নয়। জমিতে ফসল না ফলালে যেমন বিপদ বাড়ে আগাছার তান্ডবে, তেমনি সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্বের আবাদ না বাড়ালে সেখানে বেড়ে উঠে দুর্বৃত্তরা। বাংলাদেশে সেটিই হয়েছে অতি ব্যাপক ভাবে। দেশেটির আজকের বিপদের মূল হেতু এখানেই। এরা যে শুধু পতিতা পল্লি, জোয়ার আসর ও ড্রাগের বাবসা দখলে নিয়েছে তাই নয়, রাজনীতি, অফিস আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির উপরও আধিপত্য জমিয়েছে। নিছক রাস্তার চোর-ডাকাত বা সন্ত্রাসীদের কারণে বাংলাদেশ দূর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হয়নি। বরং সে উপাধিটি জুটেছে দেশের সর্বস্তরে দুর্বৃত্তদের দখলদারি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে।
পশু থেকে মানুষ পৃথক তার চেতনার কারণে। এ চেতনা দেয় চিন্তা-ভাবনার সামর্থ্য। এবং এ চিন্তা-ভাবনা থেকেই ব্যক্তি পায় সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় এবং ধর্ম-অধর্ম বেছে চলার যোগ্যতা। মহৎ মানুষ রূপে বেড়ে উঠার জন্য এটি এতোই গুরুত্বপুর্ণ যে পবিত্র কোরআনে বার বার বলা হয়েছে, ‘আফালাতা’কীলুন’, ‘আফালাতাদাব্বারূন’ ‘আফালাতাফাক্কারুন’ বলে। অর্থঃ ‘তোমরা কেন চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাও না?’ ‘তোমরা কেন ধ্যানমগ্ন হও না?’, ‘তোমরা কেন ভাবনা?’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক গুণ দৈহিক বল নয় বরং তার চিন্তাভাবনার সামর্থ্য। চিন্তাভাবনাই জ্ঞানের জন্মদাতা। চিন্তার সামর্থ্য অর্জিত হলে নিজেকে শিক্ষিত করার কাজে সে শুধু সুশীল ছাত্র রূপেই বেড়ে উঠে না, নিজেই নিজের শিক্ষকে পরিণত হয়। এমন ব্যক্তির জীবনে শেখা এবং শেখানো -এ দুটোই তখন দ্রুত সমানে সামনে এগুয়। ঈমানদার তাই সর্বাবস্থাতেই যেমন ছাত্র, তেমনি শিক্ষকও। ফুলে ফুলে ঘুরে মধুসংগ্রহ যেমন মৌমাছির ফিতরাত, তেমনি সর্বমুহুর্তে ও সর্বস্থলে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান-দানের ফিতরাত হলো প্রকৃত জ্ঞানীর। তখন জ্ঞানের সন্ধানে সাগর, মরুভুমি, পাহাড়-পর্বত অতিক্রমেও সে পিছপা হয়না। বিদ্যালয়ের কাজ তো সে ফিতরাতকে জাগ্রত করা। একমাত্র তখনই নর-নারীগণ জ্ঞানার্জনের মেশিনে পরিণত হয়। তখন দেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রবল জোয়ার আসে।
শিক্ষকের দায়িত্ব জ্ঞানার্জনের সে ধারাকে শুধু বিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি কোনে পৌঁছে দেয়া। তখন সমগ্র দেশ পরিণত হয় পাঠশালায়। নবীজীর আমলে সেটিই হয়েছিল। ফলে সে সময় কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও যে হারে ও যে মাপে জ্ঞানী ব্যক্তি সৃষ্টি হয়েছিলেন -মুসলিম বিশ্বের শত শত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আজ তা পারছে না। সে আমলে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব একজন গৃহবধু যতটুকু বুঝতেন এ আমলের প্রফেসরও তা বুঝেন না। এবং সে প্রমাণ তো ইতিহাসে প্রচুর। শিশু আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)এর মাতা জীবনের সকল সঞ্চয় শিশুপুত্রের জামার আস্তিনে বেঁধে ইরানের গিলান প্রদেশ ছেড়ে হাজার মাইল দূরের বাগদাদে পাঠিয়েছিলেন। অথচ সে সময় আধুনিক যানবাহন ছিল না। পথে ছিল ডাকাতের ভয়, যার কবলে তিনি পড়েছিলেনও। মুসলমানগণ তাদের গৌরব কালে জ্ঞানার্জনকে কতটা গুরুত্ব দিতেন -এটি হলো তারই নমুনা। অথচ আজ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জ্ঞানদানের কাজে ফাঁকি দিয়ে বিদেশী সংস্থায় কাজ করেন। মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ভবিষ্যৎ ডাক্তার তৈরীর কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে অর্থ কামাই করেন। তারা নিজ সন্তানের ধর্মজ্ঞান দানে এতই উদাসীন যে, সে লক্ষ্যে হাজার মাইল দূরে দূরে থাক, পাশের অবৈতনিক মাদ্রাসাতেও পাঠাতে রাজি নন।
যা সকল ব্যর্থতার মূল কারণ
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই দেশের প্রতিটি মানুষ জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানবৃদ্ধির বিরামহীন মেশিনে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে ইসলামের অর্জনটি সমগ্র মানব ইতিহাসে অভূতপূর্ব। পবিত্র কোরআনের পূর্বে আরবী ভাষায় কোন গ্রন্থ ছিল না। ছিল শুধু কিছু কবিতা ও কাসিদা। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা জ্ঞানার্জনকে ফরজে আইন তথা প্রত্যেকর উপর বাধ্যতা মূলক ঘোষণা করে। ফলে সে ফরজ পালনের তুমুল আগ্রহে অতি অল্প সময়ের মধ্যে জ্ঞানের ভূবনে মুসলিম বিশ্বে বিশাল সমৃদ্ধি আসে। ঘরে ঘরে তখন লাইব্রেরি গড়ে উঠে। যারা সেদিন ইসলাম কবুল করেছিলেন তাদের অনেকের মাতৃভাষা আরবী ছিল না। কিন্তু জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাণ্ডার কোর’আনের সাথে সম্পর্ক গড়ার প্রয়োজনে নিজেদের মাতৃ ভাষা দাফন করে আরবী ভাষাকে নিজেদের ভাষা রূপে গ্রহণ করেছেন। ফলে সমর্থ হন জ্ঞানের বিস্তারে ও ইসলামী সভ্যতার নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যর্থতাটি বিশাল। দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা যেমন জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাণ্ডার পবিত্র কোরআনের সাথে সম্পর্ক গড়তে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি শিক্ষকগণ ব্যর্থ হয়েছেন আদর্শ শিক্ষক রূপ বেড়ে উঠতে। ছাত্রদেরও গড়ে তুলতে পারেনি প্রকৃত ছাত্র রূপে। তারা পুরাপুরি ব্যর্থ হয়ছেন শিক্ষার গুরুত্ব বুঝাতে। বস্তুত শিক্ষাঙ্গণই হলো বাংলাদেশের সকল ব্যর্থতার জন্মভূমি। নিছক পড়ন, লিখন বা হিসাব-নিকাশ শিখিয়ে সেরূপ গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়? এজন্য তো জরুরী হলো, ব্যক্তির বিশ্বাস ও দর্শনে হাত দেয়া। নবীজীর (সাঃ) আগমনে আরবের আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তন আসেনি তাদের দৈহিক বল বা খনিজ সম্পদে। বরং বিপ্লব এসেছিল তাদের জীবন-দর্শনে। সে দর্শন পাল্টে দিয়েছিল বাঁচবার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও রূচীবোধ। ফলে বিপ্লব এসেছিল শিক্ষা খাতে।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় লিখন, পড়ন বা হিসাব-নিকাশ গুরুত্ব পেলেও গুরুত্ব পায়নি দর্শন। ফলে জীবন পাচেছ না সঠিক দিক-নির্দেশনা। পুষ্টি পাচ্ছে না শিক্ষার্থীর বিবেক ও চেতনা। ফলে ছাত্র পাচ্ছে না সুষ্ঠ চিন্তার সামর্থ্য। অথচ জাতি আদর্শ নেতা, বুদ্ধিজীবী, সংস্কারকের সরবরাহ পায় দর্শনসমৃদ্ধ সুশিক্ষিত ব্যক্তিদের থেকে; পেশাজীবী, কর্মজীবী বা টেকনোক্রাটদের থেকে নয়। দর্শনের প্রতি অবহেলায় মানুষ নিছক নকল-নবীশে পরণিত হয়। বাংলাদেশে উন্নত বিবেকবোধ, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি বেড়ে না উঠার অন্যতম কারণ হলো এটি। তাছাড়া জ্ঞান শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, তা ছড়িয়ে আছে আসমান-জমিনের ছত্রে ছত্রে। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহনক্ষত্রই শুধু নয়, গাছপালা, জীবজন্তু, নদীনালা, অনু-পরমানু তথা দৃশ্য-অদৃশ্য প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে লুকিয়ে আছে জ্ঞানের উপকরণ। কোরআনেরর ভাষায় এগুলি হলো আল্লাহর আয়াত। যা পড়তে হয় শুধু চোখের আলাতে নয়, মনের আলোতেও। ইসলাম তাই আলোকিত মনের মানুষ গড়তে চায়। তখন সমগ্র বিশ্বটাই পাঠশালা মনে হয়। এ পাঠশালারই শিক্ষক ছিলেন মহান নবীপাক (সাঃ)। জ্ঞান বিতরণে ও মানুষকে চিন্তাশীল করার কাজে আল্লাহর এ আয়াতগুলিকে তিনি কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছেন। সেখান থেকেই গড়ে উঠেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানসাধকগণ। জীবনের মূল পরীক্ষায় তথা মহান আল্লাহকে খুশী করার কাজে তাঁরাই মানব-ইতিহাসে সর্বাধিক সফল হয়েছিলেন। পবিত্র কোর’আনে তাঁদের নিয়ে তিনি গর্বও করেছেন।
এমন কি সক্রেটিস যে পাঠশালার শিক্ষক ছিলেন সেটিও আজকের মত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। সেটিও ছিল এথেন্সের উম্মূক্ত অলিগলি ও মাঠঘাট। অথচ জ্ঞানচর্চায় তিনিও অবিস্মরণীয় ইতিহাস গড়েছেন। জ্ঞানবিতরণে জ্ঞানকেন্দ্রের চেয়ে শিক্ষকই যে মূল সেটি তিনিও প্রমাণ করে গেছেন। অথচ আমরা বিদ্যালয় গড়ে চলেছি যোগ্য শিক্ষক না গড়েই। সেটি ডাক্তার না গড়ে হাসপাতাল চালানোর মত। সমাজের অযোগ্য মানুষগুলোর ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে গিয়ে এরিস্টটল বলতেন, “এটি ঐখানে তথা বিদ্যালয়ে, যেখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।” অথচ বাংলাদেশে সকল ব্যর্থতার কারণ খোঁজা হচ্ছে অন্যত্র। শিক্ষার বিস্তারে শিক্ষককে প্রথমে শিক্ষিত হতে হয়। শুধু জ্ঞানদাতা হলেই চলে না, প্রতিটি শিক্ষককে ছাত্রদের সামনে অনুকরণীয় মডেলও হতে হয়। এটি নিছক বাড়তি দায়িত্ব নয়, এটিই শিক্ষকের মৌলিক দায়িত্ব। ফলে যে চরিত্র নিয়ে প্রশাসনের কর্মচারি, বিচারক বা ব্যবসায়ী হওয়া যায়, শিক্ষককে তার চেয়েও উত্তম চরিত্রের অধিকারি হতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি যথার্থ ভাবে হয়নি। দেশে নিদারুন কমতি হলো উপযুক্ত শিক্ষকের। শিক্ষকের যে স্থানটিতে বসেছিলেন নবীপাক (সাঃ) স্বয়ং নিজে, সেখানে প্রবেশ করেছে বহু নাস্তিক, পাপাচারি ও চরিত্রহীনেরা। ফলে ছাত্ররা শুধু জ্ঞানের স্বল্পতা নিয়েই বেরুচ্ছে না, বেরুচ্ছে দুর্বল চরিত্র নিয়েও।
ব্যর্থতা ব্যক্তিত্বের মডেল খাড়া করায়
ইতিহাস ঘেঁটে ছাত্রের সামনে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বা ‘ফিগার অব হাইনেস’ তুলে ধরা শিক্ষানীতি ও শিক্ষকের অন্যতম বিশাল দায়িত্ব। মডেলকে সামনে রেখে শিল্পি যেমন ছবি আঁকে, ছাত্রও তেমনি তার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বকে সামনে রেখে স্বচেষ্ট হয় নিজেকে গড়ায়। এরূপ মডেল নির্বাচনে প্রতি দেশেই নিজ নিজ ধর্মীয় চেতনা ও জাতীয় ধ্যানধারণা গুরুত্ব পায়। গরুকে দেখে যেমন ভেড়ার ছবি আঁকা যায় না, তেমনি অমুসলিম রাজনীতিক, কবি সাহত্যিক বা বুদ্ধিজীবীকে সামনে রেখে ছাত্রও নিজেকে মুসলিম রূপে গড়ে তুলতে পারে না। পাশ্চাত্য দেশে এজন্যই নিজ নিজ ইতিহাস থেকে খ্যাতিনামা বীর, ধর্মীয় নেতা, সমাজ সংস্কারক, বৈজ্ঞানিক, রাজনীতিবিদ, কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের তুলে ধরে, মুসলিম ইতিহাস থেকে নয়। কিন্তু এদিক দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অপরাধগুলি কম হচ্ছেনা।
দেশটির জাতীয়তাবাদীদের অপরাধ শুধু এ নয়, জাতীয় জীবনে উন্নয়ন উপহার দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। জাতিকে প্রচন্ড ভাবে অহংকারিও করেছে। আহত ও দুর্বল করেছে প্যানইসলামি চেতনাকে। ফলে জাতীয় জীবনে গুরুত্ব হারিয়েছেন ইসলামের মহান ব্যক্তি ও বীরপুরুষগণ। ফলে ছাত্ররা হারিয়েছে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বা ‘ফিগার অব হাইনেস’ এর মডেল। নিছক বাঙ্গালী হওয়ার কারণে অতিশয় দুর্বল ও সামান্য চরিত্রগুলোকে বড় করে দেখানো হয়েছে। নিছক রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কোন কোন ব্যক্তিকে হাজার বছরের সেরা বাঙ্গালী রূপেও চিত্রিত করা হয়েছে। অথচ তাদের অনেকে যেমন ছিলেন মিথ্যাচারি ও খুনি, তেমনি ছিলেন নিষ্ঠুর স্বৈরাচারিও। গণতন্ত্রের নামে ভোট নিয়ে তারা চরম স্বৈরাচার উপহার দিয়েছেন। ফলে চরিত্র গঠনের টার্গেট রূপে জাতি কোন উন্নত মডেলই পায়নি। ফলে ছাত্ররা কাদের অনুসরণ করবে? শূণ্যস্থান কখনই শূণ্য থাকে না, ফলে সে শূণ্যতা পূরণ করেছে দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ, সন্ত্রাসী ও ব্যাভিচারি ব্যাক্তি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে সন্ত্রাস, ছিনতাই ও ব্যাভিচারির অভয় অরন্যে। এ ব্যর্থতারই বড় প্রমাণ, সেখানে ধর্ষনে সেঞ্চুরি-উৎসবও হয়েছে।
ইবাদত গণ্য হয়নি শিক্ষালাভ ও শিক্ষাদান
শিক্ষা-সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশে অতীতে বহু পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। বহু শিক্ষা-কমিশন রিপোর্টও রচিত হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজে কিছুই হয়নি। ব্যর্থতার জন্য দায়ী স্রেফ সরকারি বা বেসরকারি দল নয়, সবাই। কারণ, কারো পক্ষ থেকেই দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালিত হয়নি। এ ব্যর্থতার কারণ, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ও দর্শন শিখাতেই আমরা ব্যর্থ হয়েছি। মূসলিম নামধারিরাও এটিকে ইবাদত ভাবেনি। তারাও জ্ঞানার্জনকে ফরজ জ্ঞান করেনি। শিক্ষকগণ এটিকে উপার্জনের মাধ্যমে ভেবেছেন, ছাত্রদের কাছে এটি পরিণত হয়েছে কোনরূপে সার্টিফিকেট লাভের উপায় রূপে। ফলে ফাঁকিবাজি হয়েছে উভয় দিক থেকেই। চিকিৎসায় ফাঁকিবাজি হলে রোগী বাঁচে না, তেমনি শিক্ষাদানে ফাঁকিবাজি হলে জাতি বাঁচে না। শিক্ষাক্ষেত্রের এ ব্যর্থতা থানা-পুলিশ বা আইন-আদালতে লোক বাড়িয়ে দিয়ে দূর করা যায় না। তাই বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা এখন শিক্ষা সমস্যা। ভূল চিকিৎসায় কোন রোগী মারা গেলে তা নিয়ে আন্দোলন হয়। অথচ বিস্ময়ের বিষয়, ভূল শিক্ষায় সমগ্র জাতি যেখানে বিপদগ্রস্ত -তা নিয়ে আন্দোলন দূরে থাক উচ্চবাচ্যও নেই। মুমূর্ষ ব্যক্তির যেমন সে সামর্থ্য থাকে না, তেমনি অবস্থা যেন জাতিরও। আর এটি হলো জাতির নৈতিক মুমূর্ষতা।
এরূপ নাজুক অবস্থায় শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়লে চলে না। হাত দিতে হয় আরো গভীরে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মানের লক্ষ্যে শিক্ষালাভ ও শিক্ষাদানের বিষয়ে একটি পরিপূর্ণ আন্দোলনে রূপ দিতে হয়। শিক্ষা নিজেই কোন উদ্দেশ্য নয়। বরং এটি হলো একটি উদ্দেশ্যকে সফল করার মাধ্যম মাত্র। মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে জানমালের বিনিয়োগের এটি হলো পবিত্র অঙ্গণ। তাই স্রেফ শিক্ষার খাতিরে শিক্ষা নয়, নিছক উপার্জন বাড়ানোর লক্ষ্যেও নয়। বরং এটি হলো, জীবনের মূল পরীক্ষায় পাশের মাধ্যম। মুসলিম জীবনে গুরুত্বপূরণ ইবাদত হলো শিক্ষাদান ও শিক্ষালাভ। শিক্ষালাভের মাধ্যমেই মানুষ হিদায়েত পায়। তাই শিক্ষা হিদায়েত লাভের মাধ্যমও। অমুসলিমদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মুসলিমদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল পার্থক্যটি হলো বস্তুত এখানে। অথচ শিক্ষার এ মূল দর্শনটিই বাংলাদেশে আলোচিত হয়নি। গুরুত্বও পায়নি। বরং প্রভাব বিস্তার করে আছে সেক্যুলার দর্শন ও চেতনা। ফলে পবিত্র ইবাদতের বদলে স্রেফ রুটিরুজির পেশাতে পরিণত হয়েছে। তাই শিক্ষা সংস্কারে কাজ শুরু করতে হবে শিক্ষার এ মূল দর্শন থেকে। কেন শিখবো, কেন শেখাবো এবং কেন এটিকে আমৃত্যু সাধনা রূপে বেছে নেব – এসব প্রশ্নের উত্তর অতি সুস্পষ্ট ও বলিষ্ঠ ভাবে দিতে হবে। এটি যে পেশা নয়, নেশা নয় বরং ফরজ ইবাদত সেটিও ছাত্র ও শিক্ষকের মনে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল হতে হবে। এবং সেটি বুঝাতে হবে মানব সৃষ্টির মূল-রহস্য ও দর্শনকে বোঝানোর মধ্যে দিয়ে। আলোকিত করতে হবে ব্যক্তির বিবেককে। জ্ঞান অর্জনের এ অঙ্গণে ব্যর্থ হলে ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের কোন অঙ্গণেই যে বিজয় সম্ভব নয় -সে ধারনাটিও স্পষ্টতর করতে হবে।
জীবনের মূলযুদ্ধ ও জয়-পরাজয়ের ভাবনা
মু’মিনের জীবনে যুদ্ধ সর্বত্র। তবে দ্বীনের বিজয়ের মূল যুদ্ধটি হয় শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানেই। অন্য যুদ্ধগুলি আসে পরে। বরং সত্যতো এটাই, সে লড়াইটি বাংলাদেশে ইতিমধ্যে শুরুও হয়ে গেছে। আরো বিপদের কারণ, এ লড়াইয়ে ইসলামের পক্ষের শক্তি লাগাতর হেরেই চলেছে। আজ থেকে ৭০ বছর পূর্বে বাঙালী মুসলিমের জীবনে যে ইসলামি চেতনা, প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব ও সততা ছিল, আজ সেটি নেই। ছিল না দেশের অভ্যন্তরে চিহ্নিত বিদেশী শত্রুর এত দালাল। ফলে আজ বিধ্বস্ত হতে চলেছে বাঙালী মুসলিমদের মনবলও। দেশের সরকার সাহস হারিয়েছে এমনকি মায়ানমারের মত দেশের বিরুদ্ধে সত্য কথার বলার। ফলে দেশের ভিতরে ও বাইরে গুঞ্জন উঠেছে স্বাধীন দেশরূপে বাংলাদেশের টিকে থাকার সামর্থ্য নিয়ে। তাই এখন চলছে নিছক টিকে থাকার লড়াই। এ লড়ায়ে হেরে গেলে হারিয়ে যেতে হবে ইতিহাস থেকে। বাঁচতে হলে এবং এ যুদ্ধে জিতলে হলে হাত দিতে হবে শিক্ষার আশু সংস্কারে। কারণ শিক্ষাঙ্গণেই নির্মিত হয় জাতির মেরুদণ্ড। এবং গড়ে উঠে সাহসী ও ঈমানদার নেতৃত্ব। সেটি শুধু সরকারি ভাবে নয়, বেসরকারি ভাবেও। শিক্ষাঙ্গণের এ যুদ্ধে সৈনিক হতে হবে প্রতিটি ঈমানদারকে।
শিক্ষার সংস্কারে প্রথমে যেটি সুস্পষ্ট করতে হবে তা হলো, আমরা কোন পরিচয়ে বেড়ে উঠতে চাই সেটি। ধর্মনিরপেক্ষ বাঙ্গালী না মুসলিম রূপে। এটি আমাদের বাঙালী মুসলিমের জীবনে মূল প্রশ্ন। কারণ, শিক্ষার মূল দর্শন ও দিক-নির্দেশনা আসবে সে বিবেচনা থেকেই। এ যাবত যে চেষ্টা হয়েছে সেটি হলো, সেক্যুলার বাঙ্গালী রূপে বেড়ে উঠার চেষ্টা। আমরা আজ যেখানে পৌঁছেছি -সেটি সেই সেক্যুলার বাঙ্গালী হওয়ার নিরসল চেষ্টাতেই। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাঙ্গালীর সাহিত্য-সংস্কৃতি, পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন বস্তুতঃ এ যাবত সে লক্ষেই কাজ করেছে। কিন্তু সেটি কোন মহৎ লক্ষে আমাদের পৌঁছায়নি। তাছাড়া বাঙ্গলী রূপে বিরাট কিছু হতে পারলেও আমাদের জীবনের মূল পরীক্ষায় তাতে পাশ জুটতো না। এভাবে অর্জিত হতো না, মহান আল্লাহ পাক আমাদের যে জন্য সৃষ্টি করেছেন সেটিও। বিচার দিনে যে হিসাব আমাদের দিতে হবে সেটি হলো মুসলিম রূপে আমাদের সফলতা কতটুকু সেটি। বাঙ্গালী-অবাঙ্গালীর পরিচয় সেখানে অর্থহীন। মুসলিমের শিক্ষার মূল লক্ষ্য, শুধু পার্থীব সফলতাকে নয়, পরকালের সফলতাকে নিশ্চিত করা। এটুকু নিশ্চিত না হলে নিছক ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, আইনজ্ঞ, বিজ্ঞানী, শিক্ষক বা অন্য কোন পেশায় সফল ভাবে বেড়ে উঠায় কল্যান নেই। নিছক পেশাদারি সাফল্যে হয়তো সচ্ছল ভাবে বাঁচা যায়, কিন্তু তাতে মূল পরীক্ষায় সফলতা জুটে না। আমাদের হারাম-হালাল ও আচার-আচরণ যে অন্যদের থেকে ভিন্ন -সেটি তো এই ইসলামি চেতনার কারণেই। সেক্যুলার বাঙ্গালী রূপে বেড়ে উঠার মধ্যে যে কোন কল্যাণ নেই -সেটি এক বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে পরিণত করতে হবে। এ লক্ষ্যে অর্থব্যয় যে হারাম ও অতি বিপদজনক -সেটিও জনমলে বদ্ধমূল করতে হবে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমাদের জন্য কল্যানকর করতে হলে সেটি হতে হবে পরিপূণ ইসলামের আলোকে। হালাল-হারামের ক্ষেত্রে যেমন আপোষ চলে না, তেমনি আপোষ চলে না ইসলামি শিক্ষা লাভের ফরজ আদায়ে। নইলে অনর্থক হবে শিক্ষার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থব্যয় ও শ্রমব্যয়। এরূপ অনর্থক কাজে শুধু দুনিয়াবি অকল্যাণই বাড়বে না, বরং তা পরকালে জাহান্নামের অনন্ত আযাবে নিয়েও হাজির করবে। ১ম সংস্করণ ১৯/১১/২০১৭; ২য় সংস্করণ ১৮/১২/২০২০।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
- রাষ্ট্র কিরূপে ফিতনা ও নাশকতার হাতিয়ার?
- সংবিধানে প্রতিটি ব্যক্তির রায়ের ইজ্জত সুনিশ্চিত করত হবে
- একাত্তর প্রসঙ্গ, কিছু আলেমের বিভ্রান্তি এবং মুসলিমের জিহাদে কবিরা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018