বাঙালি মুসলিমের উপর শত্রুর সাংস্কৃতিক আধিপত্য

ফিরোজ মাহবুব কামাল

কেন সাংস্কৃতিক আধিপত্য?

পাশ্চাত্য দেশবাসী একটি সুনির্দিষ্ট মূল্যবোধ সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচে। সে মূল্যবোধ সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে বহু লক্ষ মদ্যশালা, নৃত্যশালা, ক্লাব, ক্যাসিনো, পতিতাপল্লী সেখানে দিবারাত্র কাজ করছে। সে সেক্যুলার মূল্যবোধ সংস্কৃতিকে বলবান করতে সেগুলির পাশে কাজ করছে হাজার হাজার কলেজবিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য পত্রপত্রিকা টিভি চ্যানেল। সে পাশ্চাত্য সংস্কৃতিকেই তারা বিশ্বময় করতে  চায়। কারণ সংস্কৃতির ধারকদের বাঁচাটি এখন আর শুধু নিজ দেশে সীমিত নয়। তাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, ব্যবসাবাণিজ্য সমরনীতির কোন সীমানাসরহাদ নাই। সেগুলির বিস্তার বিশ্বব্যাপী। ফলে বিশ্বের নানা দেশে বছরের পর বছর তাদের কাটাতে হয়। আফগানিস্তান ইরাকে লক্ষাধিক মার্কিনী ইউরোপীয়ান সৈন্যরা অবস্থান নিয়েছিল বিশ বছরেরও বেশী কাল ধরে। ১৯৫৩ কোরিয়া যুদ্ধের সময় সেখানে মার্কিন সৈন্যদের আগমন ঘটে। যুদ্ধ বহু আগেই শেষ হয়েছে,কিন্তু বহু হাজার মার্কিন সৈন্য এখনো সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। দেশে ফেরার নাম নিচ্ছে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও মার্কিন সৈন্যরা এখনো রয়ে গেছে জার্মানী জাপানে।

মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না, তেমনি মানুষ বাঁচে না নিজ সংস্কৃতি ছাড়া। ফলে পাশ্চাত্যাবাসীরা যেখানেই যায় সেখানে শুধু পানাহার চায় না, মদ, জুয়া, ব্যভিচার, সমকামিতার ন্যায় আরো বহু কিছু চায়। তাই মুসলিম দেশে তাদের বাঁচাটি দুরুহ হয়ে পড়েছে। ফলে চায় নিজ সংস্কৃতির বিশ্বময় প্রসার। সে লক্ষ্যেই তারা বিশ্বব্যাপী সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং নেমেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই তারা নিজ সংস্কৃতির আবহে বাঁচতে চায়। সেটি চায় বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশেও। তাই মুসলিমদের ধর্মান্তর না ঘটাতে পারলেও তারা চায় তাদের কালচারাল কনভার্শন। সে কাজে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করছে জাতিসংঘকে। জাতিসংঘ ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীস্বাধীনতা, পেশার স্বাধীনতার নামে একটি বিধিমালা তৈরী করেছে। সে বিধামালা অনুসারে সমকামিতার ন্যায় পাপকর্ম যেমন অন্যায় অবৈধ নয়, তেমনি অবৈধ নয় ব্যভিচারও। পতিতাদের ইজ্জত বাড়াচ্ছে যৌন কর্মী বলে। মদ্যপান, জুয়াও তাদের কাছে কোন অপরাধকর্ম নয়। মূল্যবোধ সংস্কৃতির এই যে পাশ্চাত্যের সংজ্ঞা, সেটিকে তারা মুসলিম দেশগুলির উপরও চাপিয়ে দিতে চায়। পাপাচারের যে অবাধ স্বাধীনতাকে বলে মানবাধিকার। তাদের সে দাবী না মানলে অবাধ্য রাষ্ট্রগুলির উপর বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করছে, সেসব রাষ্ট্রের নেতাদের হত্যায় কোথাও কোথাও ড্রোন হামলাও করছে। এটিই হলো পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদ। মিশরের খুনি প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবুল ফাতাহ সিসি ভারতের খুনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের  তাদের বন্ধু। কিন্তু শত্রু হলো ইসলামপন্থীগণ। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দেয়ার কারণ এটিই। মার্কিনীদের আজ্ঞাবহ বহু মুসলিম রাষ্ট্র অবৈধ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু স্বীকৃতি দিচ্ছে না তালেবান শাসিত আফগানিস্তানকে। পাশ্চাত্যের পরিকল্পিত সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ রূপে বাংলাদেশের মহিলাদের যেমন রাস্তায় মাটি কাটা বা গাছ পাহারায় নিয়োজিত করছে, তেমনি আফগানিস্তানের পর্দাশীল মহিলাদের বেপর্দা করে তাদের নাচগান শিখিয়েছিল এবং হাতে হারমনিয়াম তুলে দিয়েছিল। তালেবান সরকার সেসব পাপকর্মের স্বাধীনতা দিচ্ছে বলেই তারা পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের স্বীকৃতি পাচ্ছে না।

 

বাঙালি মুসলিমের সাংস্কৃতিক ব্যর্থতা

বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশে জনগণের ইসলাম গ্রহণ ধর্মান্তরের মাঝেই সীমিত রয়ে গেছে। সাংস্কৃতিক কনভার্শনের কাজটি সফল ভাবে হয়নি। যে ইসলাম নিয়ে প্রাথমিক যুগের আরব মুসলিমগণ নানা দেশে গিয়েছিলেন, সে ইসলাম নিয়ে বাংলাদেশ বা ভারতে কেউ আসেননি। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার হয়েছে প্রধানতঃ ইরান,ইয়েমেন, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া থেকে আগত সুফিদের দ্বারা। নবীজী (সা🙂 এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম যে ইসলাম পেশ করেছিলেন এসব সুফিগণ সে ইসলাম নিজ চোখে কখনোই দেখেননি। তারা বাংলার বুকে এসেছে নবীজী (সা🙂 ইন্তেকালের প্রায় শত বছর পর। ইসলামের জ্ঞানলাভ যেমন তাদের জীবনে ঘটেনি, তেমনি সে ইসলামের পূর্ণ প্রকাশও তাদের জীবন ঘটেনি। তারা বেড়ে উঠেছেন পীরের খানকায়, কোন ইসলামী রাষ্ট্রে নয়। ফলে অপূর্ণাঙ্গতা রয়ে গেছে তাদের বেড়ে উঠায়। অধিকাংশ পীরদের জীবনে জিহাদ এবং রাজনীতি যেমন ছিল না, তেমনি ইসলামের সংস্কৃতিও পুরোপুরি ছিল না। ফলে তাদের হাতে যেসব হিন্দু ইসলাম কবুল করেন তারা ইসলামের সংস্কৃতির পূর্ণ পরিচয় পায়নি। অথচ ইসলাম কবুলের অর্থ পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ। কুরআনে নির্দেশ এসেছে,“উদখুলু ফি সিলমে কাফ্ফা অর্থ: তোমরা ইসলামে পুরিপুরি প্রবেশ করো। অর্থাৎ ইবাদতবন্দেগী, অর্থনীতি, পোশাকপরিচ্ছদ, সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তি, রাজনীতির কোন অংশকেই ইসলামের বাইরে রাখা যাবে না।

নবীজী (সা🙂 ইসলামে গুরুত্ব পেত কুরআন বুঝা,অন্যদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দেয়া, শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ এবং ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দেয়া। কিন্তু সুফীদের ইসলামই এগুলি নাই। নানা তরিকার সুফীদের হাতে নানারূপ খানকা গড়ে উঠেছে, পীরমুরিদী বেড়েছে, রুহানী পরিশুদ্ধির নামে নানারূপ ওজিফার প্রচলন হয়েছে। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র ইসলামী সভ্যতার নির্মাণ সে ইসলামে স্থান পায়নি। সে কাজে নিজেদের জান মালের বিনিয়োগটি তাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়নি। তাদের কাছে অপরিচিত রয়ে গেছে নবীজী(সা🙂 সে জিহাদী ইসলাম। নবীজী (সা🙂 ইসলামে ছিল কুরআন শিক্ষা, ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, দুর্বৃত্তির নির্মূলে জিহাদ। বাঙালি মুসলিমদের কাছে সেরূপ ইসলাম জঙ্গি বা সন্ত্রাসি ইসলাম মনে হয়।তাবলিগ জামায়াতের উদ্ভবও হয়েছে সুফিদের দ্বারা। এজন্যই তারা নানারূপ আমলের ফাজায়েলের কথা বল্লেও ফাজায়েলে জিহাদের কথা বলে না। অথচ জিহাদ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। একমাত্র জিহাদে যারা যোগ দেয় তারাই শহীদ হওয়ার সুযোগ পায় এবং বিনা হিসাবে সাথে সাথে জান্নাতে যায়। তাবলিগের হুজুরগণ নফসের বিরুদ্ধে জিহাদের কথা বলেন, কিন্তু ইসলামের শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের কথা বলেন না। অথচ নবীজী (সা🙂 জীবনে শুধু নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ ছিল না, শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদও ছিল। অর্ধেকে বেশী সাহাবা জিহাদে শহীদ হয়েছেন।

 

সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধ

সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট, জাতীয়তাবাদী নাস্তিকদের যুদ্ধটি মুসলিমদের একতার বিরুদ্ধে। একতার মাঝেই শক্তি ও নিরাপত্তা। অনৈক্যের মাঝে পরাজয় ও গোলামী। তাই একতা ফরজ এবং অনৈক্য হারাম। অথচ ইসলামের শত্রুরা ভাষা, বর্ণ ও এলাকার নামে মুসলিমদের মাঝে অনৈক্য বাড়াতে চায়। এক্ষেত্র বাঙালি মুসলিমদের উপর তারা বিজয়ী হয়েছে। ইসলামের এই শত্রুদের যুদ্ধ জিহাদের বিরুদ্ধেও অথচ জিহাদই হলো মুসলিমদের প্রতিরক্ষার মূল হাতিয়ার। জিহাদ না থাকলে মুসলিমদের প্রতিরক্ষা থাকে না। তখন গোলামী অনিবার্য হয়। এজন্যই জিহাদ ঈমানের অঙ্গ। যার জীবনে জিহাদ নাই, বুঝতে হবে তার ঈমানও নাই। নবীজী (সা:)’র যুগে জিহাদ থেকে দূরে থাকা ব্যক্তিদের মুনাফিক বলা হয়েছে।  

অথচ পবিত্র জিহাদকে সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট, জাতীয়তাবাদী নাস্তিকগণ সন্ত্রাস বলে। সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ব্যস্ত জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করা নিয়ে। যাদের কাছে জিহাদ বিষয়ক বই পাওয়া যায় তাদেরকেই বন্দী করা হয়। সরকার এভাবেই বাংলাদেশের বুকে ইসলামের বিজয় প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করতে চায় জিহাদের পথ বেয়েই ইসলামের বিজয় আসে এবং মুসলিম দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়। অথচ সে জিহাদকেই সরকার নিষিদ্ধ করতে চায়।  এভাবে ইসলাম বিরোধী সরকার যেমন ইসলামের পরাজয় বাড়ায় তেমনি দুর্বল ও অরক্ষিত করে বাংলাদেশে স্বাধীনতা।

অথচ সরকারের পক্ষ থেকে দেশে সেরূপ কোন যুদ্ধ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে নাই। উদ্যোগ না গুমখুনের নায়ক, পর্ণব্যবসায়ী, ড্রাগব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, অর্থপাচারকারী, ব্যাংক ডাকাত ভোটডাকাতদের গ্রেফতার করায়। বরং সরকারি দলের লোকজন নিজেরাই এসব অপরাধের সাথে জড়িত। এবং তাদের অপরাধের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র। সেটি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে দেখা গেছে দেশ জুড়ে ব্যালট ডাকাতির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করার অপরাধ কর্মে এমন ডাকাতি পৃথিবীর আর কোন দেশে কোন কালেই ঘটেনি। এমন দুর্বৃত্তির রেকর্ড একমাত্র বাংলাদেশের। সে রাতে ভোট ডাকাতির কাজে ডাকাত রূপে ব্যবহৃত হয়েছে দেশের পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, নির্বাচনি কমিশন এবং প্রশাসন। এভাবে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের সরকারই হলো দেশটিতে সবচেয়ে বড় অপরাধী সংগঠন। তাদের ক্ষমতা রয়েছে সমগ্র দেশের মালিকানা তথা শাসনক্ষমতা ডাকাতি করে নেয়ার। সেরূপ ডাকাতি তারা করেছেও। কথা হলো, সেরূপ ডাকাতির ক্ষমতা কি সাধারণ চোরডাকাত দলের থাকে?

ইতিহাসের সাক্ষ্য, অতীতে ইসলাম নিয়ে যারাই দাঁড়িয়েছে তারাই বিজয় মর্যাদা পেয়েছে। আর যারাই ইসলাম থেকে দূরে সরেছে তারাই পরাজিত অপমানিত হয়েছে। ইসলামের ঝাণ্ডা তুলে নেয়াতে বিশ্বশক্তির মর্যাদা পেয়েছে আরব, কুর্দি, আফগানী, মুর তুর্কী মুসলিমগণ।  বাঙালি মুসলিমগণ সংখ্যায় কম নয়; কুর্দি, আফগান, মুর মুসলিমদের চেয়ে তারা বহুগুণ অধিক। কিন্তু ইসলামের গৌরব বিজয় বাড়াতে তাদের অবদান কোথায়? তারা বরং ১৯৭১ সালে বিজয়ী করেছে ভারতীয় পৌত্তলিকদের। এবং নিজেরা পরিণত হয়েছে ভারতের রাডারের নীচে এক পরাধীন রাষ্ট্রে। ১৯৪৭য়ে বাঙালি মুসলিমগণ ইসলামের পক্ষ নিয়েছিল; ফলে ত্বরিৎ বেগে গৌরবও পেয়েছিল।  খাজা নাযিমুদ্দীন, মহম্মদ আলী বোগরা হোসেন শহীদ সহরোওয়ার্দীবাংলার তিন জন ব্যক্তি বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সরকার প্রধান হওয়ার গৌরব পেয়েছিল।

 

বাঙালি মুসলিমের সাংস্কৃতিক কনভার্শন

পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিম সুযোগ পেয়েছিল বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাব ফেলার। কিন্তু সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট জাতীয়তাবাদীদের খপ্পড়ে পড়ে তারা ইসলাম থেকে দূরে সরে। ফলে তারা এখন আর ইসলামের বিজয় নিয়ে ভাবে না। বাঙালি মুসলিমের জীবনে এসেছে সাংস্কৃতিক কনভার্শন। এবং সেটি প্রবল ভাবে। এর ফলে আগ্রহ বেড়েছে গৌরবের বদলে গোলামীতে। অবাঙালি মুসলিমদের ছেড়ে তারা অবাঙালি ভারতীয় হিন্দুদের  বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছে। ১৯৭১য়ে তারা  ভারতে কোলে গিয়ে উঠে। তাতে পাল্টে গেছে তাদের রুচি রাজনীতির প্রায়োরিটি। এজেন্ডা হয় ভারতের গৌরব বৃদ্ধি। ফলে ইসলামের পক্ষে ভারতের মজলুম মুসলিমদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে তারা দাঁড়ায় ভারতের হিন্দুবাদী শাসকদের পক্ষে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে তারা ভাবে বাংলাদেশের উত্তরপূর্বে ভারতের যে ৭টি রাজ্য, সেসব রাজ্যে ভারতের নিরাপত্তার কথা। সে অঞ্চলে  কোন স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়। তারা কথা বলে না কাশ্মীরের মজলুল স্বাধীনতাকামীদেরও পক্ষে। ভারতে মুসলিম নির্মূলে দাঙ্গা হলে বা মসজিদ ধ্বংস করা হলেও তারা তার নিন্দা করে না।

ভারত যা চায়, তা দেয়াতেই সেক্যুলারিস্ট বাঙালির গর্ব আনন্দ। ভারতের ইচ্ছাপূরণকে শেখ হাসিনার ন্যায় অনেকেই নিজেদের দায়বদ্ধতা মনে করে। শেখ হাসিনার দাবী, সে সাথে অহংকার, ভারতকে সে যা দিয়েছে, ভারত কখনো তা ভূলতে পারবে না। পদ্মা তিস্তাসহ বহু বাংলাদেশী নদীর পানি নিয়ে তার ভাববার সময় নাই। কারণ পানি চেয়ে সে ভারতকে নারাজ করতে রাজী নয়। ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে হাসিনা ভারতের সাথে বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেয়, বাঙালি মুসলিমের স্বার্থকে নয়। এমন কি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষির গুলিতে বাংলাদেশীরা নিয়মিত নিহত হলেও সরকারের মুখে প্রতিবাদ নাই।

এমন ইসলামবিমুখ ভারতমুখী চেতনার কারণটি সুস্পষ্ট। যে জ্ঞান ব্যক্তিকে ইসলামমুখী মুসলিমপ্রেমী করেসে জ্ঞানের চর্চাই অধিকাংশ বাঙালি মুসলিমের জীবনে তেমন একটা ঘটেনি। না স্কুলকলেজে, না স্কুলকলেজের বাইরে।  বাঙালি মুসলিমগণ জ্ঞান চর্চা করে বাংলা ভাষায়। ভাষার শতকরা ভাগ বইয়ের লেখক হিন্দু, সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট, নাস্তিকতথা ইসলাম বিরোধী বা ইসলামী জ্ঞানশূণ্য ব্যক্তিবর্গ। ঈমানে পুষ্টি জুগাবে বা ইসলামী চেতনা গড়বেএমন বইয়ের সংখ্যা বাংলা ভাষায় অতি সামান্য। শতকরা ১০ ভাগও নয়। অথচ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো ইসলামী জ্ঞান। ইসলামী জ্ঞানশূণ্য মানুষ কি ইসলামপ্রেমী এবং মুসলিম স্বার্থের রক্ষক হতে পারে? ইসলামি রাষ্ট্র, প্যানইসলামিক ভাতৃত্ব মুসলিম ঐক্যের গুরুত্বই বা তারা বুঝবে কেমনে? তারা যে ভারতমুখী হিন্দুত্ববাদী হবে সেটিই তো স্বাভাবিক।  

 

ব্যর্থতা পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হওয়ায়

পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হতে হলে ইবাদত শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে সীমিত রাখলে চলে না। নবীজী (সা:)যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেছেন সে ইসলাম নিয়ে বাঁচতে হয়। সে ইসলামে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ছিল না, তাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, দুর্বৃত্তির নির্মুল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ এবং ভাষা-বর্ণ-অঞ্চল ভিত্তিক পরিচয়ের গন্ডি ডিঙ্গিয়ে প্যান-ইসলামিক হওয়া। বাঙালি এসবে নাই। তাদের গর্ব বাঙালিত্ব নিয়ে। পূর্ণাঙ্গ মুসলিম রূপে বেড়ে উঠতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বাঙালি মুসলিমগণ ইসলামের প্রচার প্রতিষ্ঠায় নামেনি। মুসলিম হওয়ার অর্থ শুধু নিজে মুসলিম হওয়া নয়, বরং প্রতিক্ষণ অন্যদের মুসলিম করার তাড়না নিয়ে বাঁচা। সভ্য মানুষ মাত্রই আগুনে পড়া বা পানিতে পড়া মানুষকে রক্ষা করতে চাইবে। সে বোধ না থাকলে বুঝতে হবে, সে মানব নয়। সে আসলে মানবরূপী পশু। কারণ পশুর সে বোধ থাকে না। বুঝতে হবে অমুসলিম মাত্রই জাহান্নামের যাত্রী। ফলে কাউকে মুসলিম বানানোর অর্থ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো। প্রকৃত মুসলিম মাত্র তাই অমুসলিমদের জাহান্নমের আগুন থেকে বাঁচাতে তৎপর হবে। এর চেয়ে বড় সওয়াবের কাজ নাই। শত কোটি টাকা দানেও এরূপ সওয়াব মেলে না। তেমন একটি তাড়নার কারণেই বহু হাজার মাইল দূরের আরব, ইরান, ইয়েমেন থেকে বহু মুসলিম বাংলার বুকে ইসলামের বাণী নিয়ে ছুটে এসেছিলেন। অন্যদের মুসলিম করার কাজে সাহাবাগণ পাহাড়পর্বত, মরুভূমি নদীসাগর পাড়ি দিয়েছেন।

কিন্তু অন্যদের মুসলিম করার সে তাড়না বাঙালি মুসলিমের মাঝে সৃষ্টি হয়নি। কারণ সেরূপ তাড়না ভাতেমাছে সৃষ্টি হয়না। সেজন্য চাই গভীর ইসলামী জ্ঞান। বিশেষ করে কুর’আন-হাদীসের জ্ঞান। অথচ সে জ্ঞানশূণ্যতা বাঙালি মুসলিমের চেতনায় অতি গভীর। ফলে ইসলামের ঢেউ বাংলাদেশে এসেই থেমে গেছে; দেশটির উত্তর বা পূর্ব সীমান্তের বিশাল ভূভাগে ইসলামের বাণী এক মাইলও  সামনে এগুয়নি। যেন ইসলামের প্রচারে ও প্রতিষ্ঠায় বাঙালি মুসলিমের কোন দায়-দায়িত্ব নাই। বাংলার বুকে ইসলামের যা কিছু প্রচার ঘটেছে, সেটি হয়েছে বিদেশ থেকে আগত অবাঙালি মুসলিমদের হাতে। তবে বাঙালি মুসলিম বিশ্ব রেকর্ড গড়ছে অন্য ক্ষেত্রে। সেটি দুর্নীতি, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, ধর্ষণ, সন্ত্রাস দেশের সম্পদ লুন্ঠনে। প্রতিবেশী অমুসলিমদের মাঝে ইসলামের প্রচার দূরে থাক, থেমে গেছে খোদ মুসলিমদের মাঝে ইসলামের সাংস্কৃতিক কনভার্শনও। স্রোত বরং উল্টো দিকে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। মুসলিমগণ দীক্ষা নিচ্ছে অনৈসলামিক ধ্যানধারণা সংস্কৃতিতে। সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে ইসলাম থেকে লোকদের দূরে সরানোর কাজে। এবং দ্রুত বিজয় পাচ্ছে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। বাংলার হাজার বছরের মুসলিম ইতিহাসে মুসলিমদের হাতে কোথাও কোন মুর্তি নির্মিত হয়নি। একাজ ছিল একান্তই হিন্দুদের। এবং সেটি শোভা পেত শুধু মন্দিরে। অথচ আজ মুর্তি উপচিয়ে পড়ছে পথেঘাটে। মুসলিমদের রাজস্বের অর্থে মুজিবের মুর্তি নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বসানো হচ্ছে। ফুল দিয়ে সে মুর্তির পূজাও করা হচ্ছে। মঙ্গলপ্রদীপ নানা জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে মিছিল হচ্ছে হিন্দুদের জোট বেঁধে। মুসলিম মহিলারা সিঁধুর লাগাচ্ছে। সে সাথে প্রবলতর হচ্ছে অশ্লীলতা, উলঙ্গতা ব্যভিচার। বিজয় এখানে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির। এবং পরাজয় এখানে ইসলামের। এবং বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলিম বাঁচছে ইসলামের এই পরাজয় নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *