বাঙালি মুসলিমের নাশকতার রাজনীতি এবং নতুন বিপদ পরাধীনতার

ফিরোজ মাহবুব কামাল

নাশকতার রাজনীতি

 

মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থীদের নাশকতাগুলি অতি গুরুতর। বিশ্বের প্রায় দেড়শত কোটি মুসলিম আজ যেরূপ শক্তিহীন, ইজ্জতহীন ও স্বাধীনতাহীন -তা মূলত তাদের নাশকতার কারণে। কোন সুনামী, ভূমিকম্প, সাইক্লোন বা মহামারি মুসলিম উম্মাহর এতো বড় ক্ষতি করতে পারিনি -যা করেছে সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী ও বামপন্থী ঘরানার ঘরের শত্রুগণ। আরব ও তুর্কী জাতীয়তাবাদের জোয়ারে উসমানিয়া খেলাফত ভেঙ্গে গেছে এবং আরব ভূমি ২২ টুকরোয় বিভক্ত হয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের জোয়ারে ১৯৭১’য়ে ভেঙ্গে যায় সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। অথচ মহান আল্লাহতায়ালা গড়াকে ভালবাসেন এবং চরম অপছন্দ করেন ভাঙ্গাকে। ফলে তাঁর সূন্নত হলো, তিনি গড়ার রাজনীতিকে করে পুরস্কৃত করেন, আর ভাঙ্গার রাজনীতিকে শাস্তি দেন। সে শাস্তি যেমন আরবগণ পাচ্ছে, তেমনি পেয়েছে বাঙালি মুসলিমগণও। বাঙালি মুসলিমগণ সে শাস্তি পেয়েছে ভারতের গোলাম হয়ে, লুণ্ঠিত হয়ে, দুর্ভিক্ষে লাখে লাখে মরে এবং ভিক্ষার তলাহীন ঝুলির খেতাব পেয়ে। আর আরবগণ সে শাস্তি পাচ্ছে ইসরাইলী ও মার্কিনীদের হাতে সামরিক অধিকৃতি, গণহত্যা ও নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞের টার্গেট হয়ে। ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া ও ইয়েমেনের জনগণ তার সাক্ষী।  

 

অথচ আরব ভূ-খন্ড অখন্ড থাকলে সেখানে ৪০ কোটি আরব জন্ম দিতে পারতো একটি বিশ্বশক্তির। সে জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও অর্থবল তাদের ছিল। এবং সে সাথে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান। তারা একতাবদ্ধ থাকলে আরব ভূমিতে কখনোই প্রতিষ্ঠা পেত না ইসরাইল। আরব জাতিয়তাবাদীদের অপরাধ, তারা খেলাফত ভেঙ্গে আরব ভূমিকে ২২ টুকরো করেছে এবং ইসরাইলের জন্য জায়গা করে দিয়েছে। ভৌগলিক অখণ্ডতা বাঁচালে ফিলিস্তিন, লেবানন, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়ার মুসলিমগণ বেঁচে যেত গণহত্যা ও ধ্বংস প্রক্রিয়া থেকে। তেমনি পাকিস্তান বেঁচে থাকলে দেশটি হতে পারতো চীন ও ভারতের পর ৪২ কেটি জনসংখার বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। তখন কাশ্মীর, আরাকান ও ভারতের মুসলিমগণ এতোটা অসহায় এতিম হতো না। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সে রাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বাঙালি মুসলিমগণ পেত বিশ্ব রাজনীতিতে -বিশেষ করে বিশ্বের মুসলিম রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার অভূতপূর্ব সুযোগ পেত। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮ -এই ১১ বছরের গণতান্ত্রিক পাকিস্তানে তিন জন বাঙালি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। অনেকে স্পীকার, প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, নির্বাচনি কমিশনার ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছে। কায়েদে আজমের মৃত্যুর পর তাঁর আসনে যিনি বসেছেন তিনি ছিলেন ঢাকার খাজা নাজিমুদ্দীন। এমন সুযোগ বাঙালি মুসলিমগণ অতীতে কোন কালেই পায়নি। তারা তো নিজেদের দেশও কখনো নিজেরা শাসন করেনি। ১৯৪৭’য়ের আগে চিরকাল শাসিত হয়েছে অবাঙালিদের দ্বারা।  

 

১০৪৭’য়ের অখণ্ড পাকিস্তান বেঁচে থাকলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আজ যেরূপ সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ চলছে -তা থেকে মুক্তি দিতে বাঙালি মুসলিমগণ বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারতো। কারণ, ১৯৬৯ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানকে সরানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল পূর্ব পাকিস্তানীরা। ২০২৪’য়ে আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরিয়ে বাঙালি মুসলিম ছাত্র-জনতা প্রমাণ করেছে তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সামর্থ্যের। ফলে গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের নির্মাণের মাঝেই ছিল বাঙালি মুসলিমদের প্রকৃত কল্যাণ; সে সাথে ছিল মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ। তখন সর্ববৃহৎ পাকিস্তানের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি রূপে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে পারতো। কিন্ত সব সুযোগই হাতছাড়া হয়ে গছে।

 

পাকিস্তান ভাঙ্গাতে যতটা ক্ষতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের হয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশী ক্ষতি হয়েছে বাঙালি মুসলিমদের। বাংলাদেশ আজ অরক্ষিত। ভারতের ন্যায় একটি আগ্রাসী দেশের হামলা থেকে দেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে যে অর্থবল, লোকবল ও অস্ত্রের বল লাগে – বাংলাদেশের তা নাই। পাকিস্তান খণ্ডিত হওয়াতে পশ্চিম পাকিস্তান ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি হয়নি; দেশটিতে দুর্ভিক্ষও আসেনি। ভারতের পদতলে কোন আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি। বরং একটি পারমানবিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রচুর পারমানবিক বোমা, বোমারু বিমান ও বালিস্টিক মিজাইল থাকাতে বাংলাদেশীদের ন্যায় পাকিস্তানীদের ভারতভীতি নিয়ে বাঁচতে হয়না।

 

ইসলাম থেকে দূরে সরা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বামপন্থীগণ মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ নিয়ে কখনো ভাবে না। মুসলিমগণ বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠুক -তা নিয়েও তাদের কোন আগ্রহ নাই। তাদের রাজনীতি ছিল স্রেফ ভারতের এজেন্ডা পূরণ নিয়ে। তাই ভারতকে নদীর পানি দেয়া, দেশের বাজার দেয়া, দেশের পেট চিরে করিডোর দেয়া, সমুদ্র বন্দরের সুবিধা দেয়া এবং সর্বোপরি উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্যের উপর ভারতীয় দখলদারী সুনিশ্চিত করতে সর্ববিধ সাহায্য দেয়াই তাদের রাজনীতি। ভারতসেবী এই বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের কাছে মেজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুনাচল ও মনিপুরের লোকদের স্বাধীনতার লড়াই অপরাধ গণ্য হয়। ফলে তারা তার বিরোধীতা করে এবং ভারতের পক্ষ নেয়। সেটি আওয়াম বাকশালীদের নীতি। অথচ ব্রিটিশদের হাতে অধিকৃত হওয়ার আগে এ ৭টি রাজ্য ভারতের অঙ্গ ছিল না। এমন কি মোগল আমলেও নয়।

 

বাঙালি বামদের যুদ্ধ কখনোই পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ছিল না, তাদের মূল যুদ্ধটি ছিল ইসলাম ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কারণ, বামধারার রাজনীতি পরিচালিত হতো হিন্দুদের দ্বারা; এসব হিন্দুদের অনেকেই ছিল জমিদার পুত্র। তাদের ক্ষোভের কারণ, পাকিস্তান সরকার হিন্দুদের জমিদারী কেড়ে নিয়ে বাঙালি মুসলিমদের জমির মালিক বানিয়েছিল। উল্লেখ্য যে, কম্যুনিস্টগণ বড় জোর বর্গাদারদের বিরুদ্ধে তে-ভাগা আন্দোলন করেছে; কিন্তু জমির মালিকানা জমিদারদের বদলে কৃষকদের দেয়া হোক -তা নিয়ে তারা কোন আন্দোলন করেনি।   

 

লক্ষণীয় হলো, যেখানেই কোন মুসলিম দেশকে খণ্ডিত করার জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী ও বামপন্থী আয়োজন, সেখানেই অর্থ, অস্ত্র ও সৈন্য নিয়ে সাহায্য করতে হাজির হয়েছে পৌত্তলিক, খৃষ্টান, ইহুদি ইত্যাদি নানা পরিচয়ের কাফিরগণ। কারণ, সেটিই হলো কাফিরদের নিজস্ব এজেন্ডা। তাই উসমানিয়া খেলাফত ভাঙ্গতে তারা আরব জাতীয়তাবাদীদের অর্থ, অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে এবং সেনাবাহিনী নামিয়ে যুদ্ধ করেছে ইংরেজ ও ফরাসী কাফিরগণ। অপরদিকে পাকিস্তান ভাঙ্গতে বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করেছে এবং অবশেষে নিজ দেশের সেনাবাহিনী নামিয়ে যুদ্ধ করেছে ভারতীয় পৌত্তলিকগণ।

 

নতুন বিপদ পরাধীনতার

বাঙালি মুসলিমদের বুঝতে হবে, যতদিন তারা ইসলামের অনুসারী হবে অর্থাৎ সত্যিকার মুসলিম রূপে বাঁচবে থাকবে -ততদিন তাদের বিরুদ্ধে ইসলামের শত্রুশক্তির অবিরাম যুদ্ধও থাকবে। এমন একটি অবস্থার কথা অবিশ্বাস করাই হারাম। কারণ সে ঘোষণাটি অন্য কারো নয়, সেটি খোদ মহান আল্লাহতায়ারার। সে ঘোষণাটি এসেছে সূরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

وَلَا يَزَالُونَ يُقَـٰتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ ٱسْتَطَـٰعُوا۟

অর্থ: “এবং তোমাদের বিরুদ্ধে তারা (তোমাদের শত্রুরা) কখনোই তাদের যুদ্ধকে থামাবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে তারা তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে নিতে পারবে -যদি সেটি তারা পারতো।”

তাই মুসলিম হওয়ার অর্থ, শত্রুর পক্ষ থেকে আরোপিত সার্বক্ষণিক যুদ্ধ নিয়ে বাঁচা। তাই বাঙালি মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের যুদ্ধ ১৯৭১’য়ে শুরু হয়নি। ১৯৪৭ সাল থেকেও নয়। বরং শুরু হয়েছিল তখন থেকেই যখন বাংলার মানুষ ইসলাম কবুল করেছিল। ইংরেজ শাসনামলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সে যুদ্ধে হিন্দুগণ ইংরেজদের পার্টনার রূপে পেয়েছিল। তাই বাঙালি মুসলিম জীবনে কাফির শক্তির যুদ্ধ যেমন অতীতে ছিল, তেমনি এখনো আছে। এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

 

যদি কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে সেরূপ একটি যুদ্ধ কাফির শক্তির পক্ষ থেকে না থাকে তবে বুঝতে হবে শয়তান ও তার অনুসারী কাফির-মুনাফিকগণ তাকে মুসলিম রূপে স্বীকারই করে না। চেতনা ও চরিত্রের দিক দিয়ে তাকে তারা নিজেদের মানুষ মনে করে বলেই তার বিরুদ্ধে তাদের কোন যুদ্ধ নাই। মুজিব ও অনুসারীদের বিরুদ্ধে এজন্যই ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কোন যুদ্ধ নাই। বরং আছে পরম বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা। যদি তাদেরকে সত্যিকার মুসলিম মনে করতো তবে তাদের বিরুদ্ধে লাগাতর যুদ্ধও শুরু করতো। তাই কে ঈমানদার, আর কে বেঈমান -সেটি জানার জন্য কোন গায়েবী জ্ঞানের প্রয়োজন পরে না; শয়তানই সেটি প্রকাশ করে দেয়। প্রশ্ন হলো, পৌত্তলিক কাফিরদের সাথে যুদ্ধ বা শত্রুতার বদলে যারা নিজেরাই কাফিরদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদেরকে কি বলা যাবে? ১৯৭১’য়ে মুক্তিবাহিনীর লোকেরা তো ভারতীয়দের সাথে নিয়ে সেরূপ একটি যুদ্ধই করেছিল। 

 

প্রশ্ন হলো, শত্রুর যুদ্ধ যেখানে লাগাতর, মুসলিম কি অবস্থায় যুদ্ধহীন হতে পারে? কখনোই না। এটি মরা-বাঁচার প্রশ্ন। তাই মহান আল্লাহতায়ালা শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত ফরজ করেননি। ফরজ করেছেন যুদ্ধকেও। নামাজের ওয়াক্ত দিনি ৫ বার, কিন্তু জিহাদের ওয়াক্ত প্রতিক্ষণ। যার জীবনে সে যুদ্ধ নাই তাকে নবীজী মুনাফিক বলেছেন। ফলে জিহাদবিমুখ আব্দুল্লাহ বিন উবাই নবীজীর পিছনে নামাজ পড়ে, রোজা রেখে এবং দান-খয়রাত করেও মুনাফিক হওয়া থেকে বাঁচেনি। মহান আল্লাহতায়ালা যেমন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ফরজ করেছেন তেমনি ফরজ করেছেন যুদ্ধের জন্য সদা প্রস্তুতি নেয়াকেও। সে নির্দেশটি এসেছে সূরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ

অর্থ: “এবং তোমরা শত্রুদের হামলার প্রতিরোধে সর্ব সামর্থ্য নিয়ে প্রস্তুতি নাও; প্রস্তুত করো তোমাদের যুদ্ধের ঘোড়াকে; এভাবে তোমরা ভীত সন্ত্রস্ত করো আল্লাহর শত্রুদের এবং তোমাদের নিজেদের শত্রুদের।”

পবিত কুর’আনে কোন একটি নির্দেশ দেয়া হলো অথচ সেটি মানা হলো না – সাহাবাদের জীবনে সেটি অভাবনীয় ছিল। মহান আল্লাহতায়ালার কোন হুকুম না মানাকে তারা কুফুরি বা বিদ্রোহ মনে করতেন। এমন বিদ্রোহ ব্যক্তিকে কাফিরে পরিণত করে। ফলে নবীজীর এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যার জীবনে যুদ্ধের প্রস্তুতি ছিলনা; এবং শত্রুর হামলা হলে যুদ্ধে যোগ দেননি। নবীজীর প্রতিটি সাহাবা ছিলেন যোদ্ধা এবং প্রতিটি মুসলিম মহল্লা ছিল সেনানীবাস। এভাবেই তো তারা সেদিন স্বাধীনতার সুরক্ষা দিয়েছেন এবং অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। নবীজীর ইন্তেকালের পর তার গৃহে কোন অর্থ-সম্পদ পাওয়া যায়নি। কিন্তু পাওয়া গেছে অনেকগুলি তরবারি, ঢাল এবং যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জাম। এ থেকে বুঝা যায় নবীজীর কতটা প্রস্তুতি ছিল যুদ্ধের।

 

মুসলিমদের পরাজয় ও পরাধীনতার শুরু তো তখন থেকেই যখন থেকে তারা বাঁচতে শুরু করেছে মহান আল্লাহতায়ালার উপরোক্ত নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে। অর্থাৎ যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি না নিয়ে। আর যারা মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচে -তাদেরকে কখনোই স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ইজ্জত দিয়ে তিনি পুরস্কৃত করেন না; বরং তাদেরকে শাস্তি দেয়াই তাঁর শাশ্বত সূন্নত। আর যারা যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয় ও শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিজের জান ও মালের বিনিয়োগ করে -তাদের জন্য তিনি সাহায্য পাঠান এবং বিজয় দেন। বাঙালি মুসলিমগণ ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ যেমন করেনি, তেমনি সেরূপ একটি যুদ্ধের প্রস্তৃতির প্রমাণও রাখেনি। আগ্রাসী ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে না নেমে তারা বরং নীরবে মুসলিম বাহিনীর পরাজয় দেখেছে। মুসলিমগণ সেদিন মুর্শিদাবাদে হাজির হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাপতি লর্ড় ক্লাইভের বিজয় মিছিল দেখতে। ফলে নিষ্ক্রিয়তার ও নীরবতার শাস্তিও পেয়েছে; সেটি ১৯০ বছর যাবত ব্রিটিশের নৃশংস গোলামীর মধ্য দিয়ে। বাঙালি মুসলিমগণ প্রতিরোধে খাড়া হয়নি এমন কি আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অধিকৃতির বিরুদ্ধেও। ফলে শান্তি পেয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার কারাগারে ১৬ বছর বন্দী জীবন কাটিয়ে। প্রশ্ন হলো, আজও বাঙালি মুসলিম জীবনে কোথায় সে জিহাদ? কোথায় সে জিহাদের প্রস্তুতি? ফলে বিপদ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুত শাস্তির। এবং সে শাস্তি আসতে পারে হিন্দুত্ববাদী ভারতের হাতে অধিকৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *