বাঙালি মুসলিমের রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

অধিকৃতি দুর্বৃত্তদের

জাতীয় জীবনের মূল ইঞ্জিন হলো রাজনীতি। রাষ্ট্র কোন দিকে যাবে সেটি দেশের ক্ষেত-খামার, কল-কারখানা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বা মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে নির্ধারিত হয় না, নির্ভর করে রাজনীতির কর্ণধার বা রাষ্ট্রীয় ইঞ্জিনের চালকদের উপর। তাই সরকার প্রধানের আসনে বসার অর্থ রাষ্ট্রের চালকের আসনে বসা। রাষ্ট্রীয় এই ইঞ্জিনই জাতিকে সামনে বা পিছনে টানে। একটি জাতির ব্যর্থতা দেখে নিশ্চিত বলা যায়, সে জাতির রাজনৈতিক নেতাগণ ব্যর্থ; তারা সঠিক ভাবে কাজ করেনি। বুঝতে হবে চালকের সিটে সৎ ও যোগ্য লোক বসেনি। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দীর্ঘকাল যাবত সেটিই ঘটেছে। কোন দেশের উন্নয়ন বা সুখ-সমৃদ্ধির জন্য জরুরি নয় যে, সে দেশের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে বিপ্লব আসতে হবে। বরং বিপ্লব আনতে হয় নেতৃত্বে এবং সে দেশের রাজনীতিতে।

 

রাজনীতির মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষ পায় পথ-নির্দেশনা। রাষ্ট্র নায়ক পথ দেখায়। রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে খুঁজে পায় অনুকরণীয় মডেল। আলেকজান্ডারের আমলে গ্রীস যখন বিশ্বশক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে ও গ্রীক সভ্যতার পত্তন করে তখন গ্রীসের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে কোন পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তন এসেছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বে। তেমনি আরবের মুসলিমগণ যখন বিশ্বের প্রধান বিশ্বশক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে তখনও আরবের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে কোন বিপ্লব আসেনি। বরং বিপ্লব এসেছিল তাদের চরিত্রে, নেতৃত্বে ও রাজনীতিতে। সরকার প্রধানের আসনে বসেছিলেন নবীজী’র ন্যায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। সেটিই ছিল মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নবীজী’র ইন্তেকালের পর সে আসনে বসেছেন জান্নাতের টিকেট পাওয়া খোলাফায়ে রাশেদা। ফলে নির্মিত হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র, সভ্যতা ও সংস্কৃতি।

 

রাজনীতি হলো ব্যক্তি নির্মাণ, রাষ্ট্র নির্মাণ, সভ্যতা নির্মাণ ও মানব কল্যাণের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান ও শিল্প। মানবের সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণের কাজে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার রূপে কাজ করে রাষ্ট্র। কারণ, রাষ্ট্রের হাতে থাকে বিশাল বিশাল প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে থাকে বিশাল কর্মী বাহিনী। এ কাজের সূন্নত রেখে গেছেন মহান নবীজী; এবং সে সূন্নত নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন খোলাফায়ে রাশেদাগণ। নবীজী’র সূন্নত হলো রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসাতে হবে দেশের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিকে -যিনি তাকওয়া ও যোগ্যতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ। যে আসনে খোদ নবীজী বসেছেন সে আসনে কোন দুর্বৃত্ত বা অযোগ্যকে বসানো জায়েজ হতে পারে না; সেটি তার সূন্নতের খেলাফ। তবে সে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিটি বেছে নেয়ার কাজটি রাজতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের কাঠামোতে অসম্ভব। কারণ, রাজতন্ত্রে রাজার অযোগ্য সন্তানও রাজা হয়; সেখানে গুরুত্ব পায় রক্তের উত্তারাধিকার। স্বৈরশাসনে গুরুত্ব পায় শাসকের স্বেচ্ছাচারিতা; অর্থাৎ শাসক যাকে তার আসনে বসাতে চায় -সেই শাসক হয়। যোগ্যতা, দক্ষতা ও জনগণের মতামতের সেখানে কোন গুরুত্ব থাকে না। এজন্যই সর্বজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা শুরা ভিত্তিক শাসন ফরজ করেছেন। তাই মুসলিম রাষ্ট্রে অবশ্যই থাকতে হয় সমাজের সবচেয়ে চরিত্রবান ও বিজ্ঞবান লোকদের নিয়ে গঠিত মজলিসে শুরা তথা পরামর্শ সভা। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি যারা আল্লাহতায়ালার রাস্তায় নিজের সময়, মেধা ও জান-মাল কুরবানী করতে দু’পায়ে খাড়া -এ কাজটি মূলত সেসব মোখলেছ ঈমানদার লোকদের জন্য। কিন্তু সমাজ সেবার এ শক্তিশালী মাধ্যমটি যদি ক্ষমতালিপ্সু দুর্বৃত্তদের হাতে হাইজ্যাক হয়ে যায় -তখন সে জাতির পতন, পরাজয় ও বিশ্বজোড়া অপমানের জন্য বিদেশী শত্রুর প্রয়োজন পড়েনা। তখন শাসকেরাই জনগণের শত্রুতে পরিণত হয়। স্বৈরাচারী দুর্বৃত্তদের অধিকৃত আজকের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি হলো তারই প্রমাণ। এদের কারণে মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু মুসলিমদের শক্তি, স্বাধীনতা ও ইজ্জত বাড়েনি।  

 

ঝাড়ুদার হতে হলেও সততা লাগে, নইলে রাস্তা থেকে আবর্জনা দূর হয় না। আর রাজনীতিবিদদের মূল দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে নাশকতার এজেন্ট তথা দুর্বৃত্তদের সরানো। সে সাথে সুনীতির প্রতিষ্ঠা। পবিত্র কুর’আনের ভাষায় মু’মিনের সে মিশনটি হলো “আমারু বিল মারুফ” এবং “নেহী আনিল মুনকার”। অর্থাৎ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল। সে কাজের প্রতি অতিশয় গুরুত্ব দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষনাটি হলো:

وَلْتَكُنْ ‌مِنْكُمْ ‌أُمَّةٌ ‌يَدْعُونَ ‌إِلَى ‌الْخَيْرِ ‌وَيَأْمُرُونَ ‌بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ 

অর্থ: “এবং তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একদল মানুষ থাকতে হবে যারা কল্যাণের পথে মানুষকে ডাকবে এবং ন্যায়ের নির্দেশ দিবে ও অন্যায়ের পথ থেকে রুখবে, এবং তারাই হলো সফলকাম”। -(সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৪)। উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিম জীবনের মিশন নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সেটি হলো দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। এ মিশন থেকে দূরে সরার সুযোগ নাই। রাজনীতি যেহেতু দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র হাতিয়ার, রাজনীতিতে অংশ না নিলে সে ফরজটি পালিত হয়না। তখন প্লাবন আসে দুর্বৃত্তির -বাংলাদেশ তো তারই উদাহরণ। একারণেই বাংলাদেশ দুর্বৃত্তিতে বার বার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। দুর্বৃত্তদের নির্মূলের কাজটি না হলে অসম্ভব হয় সত্য ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠা। এবং অসম্ভব হয় মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা বিজয়ী করা। মুসলিম উম্মাহর পরাজয় ও পতনের শুরু তো তখন থেকেই যখন রাজনীতিকে দুর্বৃত্তদের হাতে রেখে ধর্মপালনের নামে মানুষ নিজ গৃহ, মসজিদ, পীরের দরগা বা সুফি খানকা’তে আশ্রয় নিয়েছে এবং ইবাদতকে নামাজ-রোজা, হ্জ্জ-যাকাত ও দোয়া-ওজিফার মাঝে সীমিত রেখেছে। অথচ এরূপ ধর্মপালন নবীজী’র সূন্নত বিরোধী। ইবাদত এভাবে সীমিত হলে কি মহান আল্লাহতায়ালার উপরোক্ত হুকুম পালিত হয়? সফল হয় কি সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ? তাই মহান আল্লাহতায়ালার কাছে যারা সফল রূপে গণ্য হতে চায় তাদেরকে শুধু নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালন করলে চলে না; এ পবিত্র কাজকেও জীবনের মূল মিশন রূপে গ্রহণ করতে হয়। তাই প্রকৃত ঈমানদারদের কাজ শুধু রাজনীতিতে অংশ নেওয়া নয়; বরং সে কাজে অর্থদান, শ্রমদান এমনকি প্রাণদানও। সাহাবায়ে কেরামের জীবনে তো সেটিই দেখা গেছে।

 

অথচ বাংলাদেশের অবস্থাটি ভিন্নতর। দেশটির লাখ লাখ মসজিদে নামাজীর অভাব হয় না। এ দেশে কোটি কোটি মানুষ রোজা রাখে। বহু হাজার মানুষ প্রতিবছর হজ্জ করে। বহু লক্ষ মানুষ প্রতিদিন কুর’আন তেলাওয়াতও করে। অথচ ক’জন ওহীর জ্ঞান ও ন্যায়ের পথে মানুষকে ডাকছে? ক’জন রাষ্ট্রের বুকে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অবিচারের নির্মূলে কাজ করছে? দুর্বৃত্ত মানুষদের রুখছেই বা ক’জন? অথচ রাজনীতিতে দেশের নামাজীরা যে অংশ নিচ্ছে না তা নয়। তারাই বরং নির্বাচনের দিনে সারি বেধে ভোট দেয় দেশে পরিচিত ইসলামবিরোধী শক্তিকে বিজয়ী করতে। দুর্বৃত্তদের বিজয় নিয়ে উৎসব করে। তাই ১৯৭০ সালে মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি, ভারতসেবী ফ্যাসিস্ট ও দুর্বৃত্তদের পালনকারী তো নির্বাচিত হয়েছিল জনগণের বিপুল ভোটে। এভাবে মুজিবের পাপের সাথে জনগণও তার পাপের ভাগীদার হয়েছে। নমরুদ-ফিরাউনের ন্যায় শাসকগণ তো এভাবেই জনগণকে জাহান্নামে নেয়। নবীজী(সা:)’র আমলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা ছিল না, কোটি কোটি নামাজীও ছিল না। সংখ্যায় নগন্য সংখ্যক হয়েও তাঁরা নিজ অর্থ ও নিজ রক্ত ব্যয়ে শুধু আরব ভূমি থেকেই নয়, মিশর, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য এশিয়ার বিশাল ভূ-ভাগ থেকে দুর্বৃত্ত শাসকদের নির্মূল করেছিলেন। এবং প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন সত্য ও সুবিচারের।

 

নবীজী ও সাহাবাদের আমলে যা কিছু ঘটেছে বাংলাদেশে ঘটেছে তার উল্টোটি। এদেশটির সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের হাতে ইসলাম-বিরোধী দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক নেতারা শুধু বিপুল ভোটে নির্বাচিতই হয় না, প্রতিপালন এবং প্রতিরক্ষাও পায়। বিপুল গণসমর্থণ নিয়ে এরা নেতা, মন্ত্রী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা হয়। দেশটির জনগণের ভোট নিয়েই রাজনীতির ময়দান বার বার অধিকৃত হয়েছে অতি দুষ্ট ও দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোকদের হাতে। অথচ যে দেশে আইনের শাসন থাকে সে দেশে দুর্নীতিবাজদের পক্ষে নেতা হওয়া দূরে থাক, রাস্তার ঝাড়ুদার হওয়াও অসম্ভব। দুর্নীতিবাজদের দিয়ে রাস্তার ময়লা তোলার কাজটিও যথার্থভাবে হয় না। কারণ রাস্তা থেকে খুঁটে খুঁটে ময়লা তোলার কাজেও অতি নিষ্ঠাবান ও ঈমানদার হতে হয়। রোগজীবাণু যেমন সুস্থ দেহ নিয়ে বাঁচা অসম্ভব করে, দুর্বৃত্তরাও তেমনি অসম্ভব করে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ। এজন্যই সভ্য দেশে দুর্নীতিবাজদের স্থান হয় কারাগারে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ইসলামের নীতি অতি কঠোর; যারা চুরি করে পবিত্র কুর’আন তাদের হাত কাটতে বলে। এবং যারা খুন করে বা ধর্ষণ করে তাদের হত্যা করতে বলে।

 

রাজনীতি যখন দুর্বৃত্তায়নের হাতিয়ার

বাংলাদেশের ব্যর্থতা এজন্য নয় যে, দেশটিতে সম্পদের কমতি রয়েছে বা দেশের ভূগোল ও জলবায়ু প্রতিকূল। ব্যর্থতার জন্য মূলত দায়ী দেশের দুষ্ট রাজনীতি। কারণ, বাংলাদেশের রাজনীতি মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত পথে এগুচ্ছে না। মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত সে সরল পথটি হলো সিরাতাল মোস্তাকিম, যার বর্ণনা দেয়া হয়েছে পবিত্র কুর’আন ও নবীজী’র সূন্নাহতে। আর এ সিরাতাল মুস্তাকিম শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও ইবাদত-বন্দেগীর পথ দেখায় না। দেখায় রাজনীতি, প্রশাসন, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির সঠিক পথও। আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত পথ অনুসরণ না করেও রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারে শান্তি আনা সম্ভব -এরূপ বিশ্বাস করাই তো কুফরি তথা ঈমান-বিরুদ্ধ। এটি শিরক। তাই প্রশ্ন, এমন বিশ্বাস নিয়ে কি কেউ মুসলিম থাকতে পারে? আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত পথ ছাড়া শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাফল্য সম্ভব হলে তো ইসলামের প্রয়োজনই ফুরিয়ে যায়। অথচ তেমন একটি ইসলাম বিরোধী অপচেতনার প্রতিফলন ঘটছে বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি ও আইন-আদালতে। এ ক্ষেত্রগুলিতে ইসলামের প্রয়োজনই অনুভব করা হচ্ছে না। ইসলাম সীমিত হয়ে গেছে নিছক মসজিদ-মাদ্রাসা ও কিছু মানুষের ব্যক্তি জীবনের মাঝে। এবং সমগ্র রাষ্ট্র দখলে গেছে শয়তানী শক্তির হাতে। ফলে রাষ্ট্র জুড়ে বাড়ছে সূদ, ঘুষ, মদ্যপান, চুরি-ডাকাতি, দেহব্যবসা ও ব্যভিচারের ন্যায় নানাবিধ হারাম কাজ।

 

অথচ ইসলামের আগমন শুধু ব্যক্তির পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে হয়নি, বরং হয়েছে সমাজ, রাষ্ট্র ও সমগ্র মানব জাতির পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবেশ যদি পাপে জর্জরিত থাকে তবে কি কোন মানব শিশু সহজে সিরাতাল মুস্তাকীম পায়? নবীজী’র হাদীস: “প্রত্যেক মানব শিশুর জন্ম হয় মুসলিম রূপে। কিন্তু সে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে হয়ে অমুসলিম হয় (পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়) পরিবেশের প্রভাবে।” এজন্য মুসলিম রূপে জন্ম নেয়া শিশুকে মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাকে নিশ্চিত করতে হলে তার জন্য সহায়ক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। কোন শিশুই তার পরিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ার সামর্থ্য নিয়ে জন্মায় না। যারা নবেল প্রাইজ পেয়েছেন সে সামর্থ্য এমন কি তাদেরও ছিল না। সে সামর্থ্য তো তারই থাকে যার রয়েছে লাগাতার বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ লড়ার সামর্থ্য। এজন্য তো চাই ওহীর তথা কুর’আনের জ্ঞান। তাই কোন শিশুকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে হলে তাকে শুধু পানাহার দিলে চলে না, তাকে মুক্তি দিতে হয় জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতার অন্ধকার পরিবেশ থেকে। এরূপ বাঁচানোর কাজই পৃথিবী পৃষ্টে সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্ম। জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতার প্লাবনে ভাসা পরিবেশে সিরাতাল মুস্তাকীম খুঁজে পায় না এমন কি মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগণও। এজন্যই বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামকে বিজয়ী করা ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জিহাদে তাদেরকে দেখা যায়না। তারা স্রেফ নিজের ও নিজ পরিবারের পেট বাঁচানোর ধান্ধায় বন্দী।

অথচ জিহাদ হলো সিরাতাল মুস্তাকীমের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যারা জিহাদে নাই বুঝতে হবে তারা সিরাতাল মুস্তাকীমেও নাই। তাই নবীজী’র এমন কোন সাহাবা ছিলেন না যারা জিহাদে ছিলেন না। তাই সবচেয়ের সওয়াবে কাজ হলো, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াত-মুক্ত করা। এটি বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের কাজ। রাষ্ট্রের অবকাঠামো ও তার পরিচালনার কাজটি কুর’আনের জ্ঞানে অজ্ঞ সেক্যুলারিস্টদের হাতে রেখে রাষ্ট্র বা সামাজের পরিবেশকে কি জাহিলিয়াত-মুক্ত করা যায়? সেটি অসম্ভব বলেই নবীজী তার কর্মের পরিধি স্রেফ মসজিদ নির্মাণ ও কুর’আনের জ্ঞান বিতরণের মাঝে সীমিত রাখেননি। নিজ হাতে ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ করেছেন এবং নিজে সে রাষ্ট্রের প্রধান রূপে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরিতাপের বিষয় হলো, আজকের মুসলিমগণ নবীজী’র এ গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত থেকে কিছুই শিখেনি। শিখলে তো রাষ্ট্রক্ষমতায় কোন দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্ট ও ভোটডাকাত বসা মাত্রই জিহাদ শুরু করে দিত। হাসিনা কি তখন ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পেত? ভদ্র ও সভ্য মানুষের ঘরে আগাছা বেড়ে উঠার সুযোগ পায়না; সে গৃহে আবর্জনাও জমে না। তেমনি সভ্য মানুষের রাষ্টে দুর্বৃত্ত ফ্যাসিস্ট ও ভোটডাকাত শাসক হতে পারে না। তাই ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৬ বছরের শাসন বাঙালি মুসলিমের বহু অযোগ্যতা প্রকাশ করে দিয়েছে।    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *