বাঙালি মুসলিম জীবনে গাদ্দারি
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on June 8, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
গাদ্দারিটি মহান আল্লাহতায়ালার সাথে
চিকিৎস্যকের কাজ রোগীর স্বাস্থ্যের গুণকীর্তন নয়; বরং তার রোগগুলিকে সনাক্ত করা এবং সেগুলির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তেমনি দায়িত্ববান লেখকের কাজ জাতির কিছু ছোট খাটো অর্জনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বর্ণনা করা নয়। বরং গুরুতর রোগগুলিকে সনাক্ত করা। এ দায়িত্বটি প্রতিটি বিবেকমান লেখকের। এ কাজের মধ্যেই ঈমানদারের বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ। একটি জাতির উত্থানের শুরু এখান থেকেই। মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি, হিন্দুত্ববাদী ভারতের একনিষ্ঠ দালাল এবং একদলীয় ফ্যাসিবাদের জনককে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলার মাঝে কোন সততা নাই। এমন এক অপরাধীকে নেতা, পিতা ও বন্ধুর আসনে বসানোর মধ্যে কোন বিবেকবোধ নাই। বরং এটি এক বিবেকহীন চাটুকারীতা। এটি আওয়ামী tribalism’য়ের প্রকাশ। তেমনি এর চেয়ে বড় ভন্ডতা নাই, যখন এমন একটি জনগণকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলা হয় -যারা বাঁচে হাসিনার ন্যায় এক ভোটডাকাতের কাছে আত্মসমর্পণ নিয়ে। এবং বাঁচে তাকে মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী বলে। অথচ বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তির নামে এরূপ নির্লজ্জ চাটুকারীতাই বেশী বেশী হয়েছে। ফলে বাঙালি মুসলিমের চরিত্রের কদর্য রূপটি সামনে আসেনি। আর সে কাজটি না হওয়া বাঙালি মুসলিম জীবনে বেড়েছে আত্মঘাতী অহংকার ও আত্মপ্রবঞ্চনা।
বুঝতে হবে, গুরুতর পাপ শুধু মানুষ খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি ও সন্ত্রাস নয়, বরং সবচেয়ে বড় পাপ হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে গাদ্দারি ও বিদ্রোহ। মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়িত্ব শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, কুর’আন পাঠ ও তাসবিহ-তাহলিল নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার প্রতিষ্ঠা দিয়ে বাঁচা। এ কাজে বিনিয়োগ করতে হয় সকল সামর্থ্যের। এখানেই ঈমানের মূল পরীক্ষাটি হয়। যারা সেরূপ বাঁচে – একমাত্র তারাই আখেরাতে পুরস্কৃত হয় জান্নাত দিয়ে। সেরূপ বাঁচার কাজটি নিছক নামাজ-রোজা পালনে যেমন হয়না, তেমনি স্রেফ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়লেও হয় না, বরং সে জন্য অবশ্যই ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে হয়। কারণ, ইসলামী রাষ্ট্র না গড়লে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তি আইন শুধু কিতাবেই থেকে যায়। এবং কিতাবে থেকে যায় ইসলামের শিক্ষা নীতি, জনকল্যাণ নীতি, সুবিচারের প্রতিষ্ঠা ও দুর্বৃত্তির নির্মূলের ন্যায় এজেন্ডা।
অন্যদের ন্যায় বাঙালি মুসলিমগণও রাষ্ট্র গড়েছে। তবে সেটি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে নয়। নবীজী (সা:) যেরূপ রাষ্ট্র নির্মাণ করেছিলেন তাদের লক্ষ্য সেরূপ রাষ্ট্র নির্মাণ তাদের লক্ষ্য ছিল না। বরং তারা বেছে নিয়েছে ইসলামী চেতনাশূণ্য এক সেক্যুলার রাষ্ট্র নির্মাণের ভাবনা। ইসলাম থেকে দূরে থাকাই তাদের সাংবিধানিক নীতি। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বাঙালি মুসলিমের এটিই হলো সবচেয়ে বড় বিদ্রোহ ও গাদ্দারি। তারা ভূলে গেছে ঈমানী দায়বদ্ধতার কথা। মুসলিমকে শুধু তার নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাতে ঈমানের পরিচয় রাখলে চলে না, সেটির প্রকাশ ঘটাতে হয় রাষ্ট্র নির্মাণ ও রাষ্ট্র পরিচালনাতেও। এটিই ইবাদতের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে ব্যয়বহুল খাত। এটিই জিহাদের খাত। মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা এবং তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণের নিয়েত শুধু নামাজ-রোজায় থাকলে চলে না, থাকতে হয় রাষ্ট্র নির্মাণের ন্যায় মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্মেও। একটি জাতির ঈমান, দর্শন ও বাঁচার এজেন্ডা মসজিদ-মাদ্রাসায় ধরা পড়ে না, বরং সেটি ধরা পড়ে তাদের নির্মিত রাষ্ট্রের এজেন্ডা, চরিত্র ও গুণাগুণে। অথচ বাঙালি মুসলিমদের গড়া রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা পায়নি মহান আল্লাহতায়ালার সে কাঙ্খিত সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন। বরং তারা প্লাবন এসেছে দুর্বৃত্তির; এবং বিজয় বাড়িয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, হিন্দুত্ববাদ ও সেক্যুলারিজমের। ফলে বড় গাদ্দারি হয়েছে এক্ষেত্রেও। একাত্তরের যে যুদ্ধকে বাঙালিরা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের যুদ্ধ বলে গর্ব করে -ব্যর্থতা সে ক্ষেত্রেও কি কম? গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা আজ কবরে শায়ীত। জনগণ হারিয়েছে নির্বাচনে ভোটদানের অধিকার। দেশটিতে লাগামহীন স্বাধীনতা পেয়েছে কেবল শেখ হাসিনার ডাকাত দলের চোরডাকাত, খুনি ও সন্ত্রাসীরা। দেশ পরিণত হয়েছে ভারতের অধিকৃত করদ রাজ্যে।
অথচ প্রায় ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে শতকরা ৯১ ভাগ হলো মুসলিম। মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো, সে প্রতিদিন বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুমে লাব্বায়েক বলে। মুসলিমের ঈমান এজন্যই গোপন থাকে না। সে যেমন নামাজের আযানে লাব্বায়েক বলে, তেমনি জিহাদের আযানেও লাব্বায়েক বলে। ফলে তাকে যেমন মসজিদের নামাজে দেখা যায়, তেমনি দেখা যায় ইসলামকে বিজয়ী করার বিরামহীন জিহাদে। তখন তাঁর রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও যুদ্ধ-বিগ্রহে প্রকাশ পায় ইসলামকে বিজয়ী করার বিরামহীন তাড়না। সে তাড়নার কারণেই প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ এশিয়া,আফ্রিকা ও ইউরোপের বিশাল ভূ-ভাগ জুড়ে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন। সে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব এবং শরিয়তী আইনের বিচার। সেরূপ একটি তাড়না না থাকার অর্থ ঈমানের মৃত্যু। তখন নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত নিছক প্রাণহীন আনুষ্ঠিকতায় পরিণত হয়। তাতে যোগ দিতে দেখা যায় এমন কি সূদখোর, ঘুষখোর, ব্যাভিচারী, মিথ্যাবাদী ও জাতীয়তাবাদী বেঈমানদেরও। এমন কি এজিদ ও শেখ হাসিনার ন্যায় ইতিহাসের নৃশংস স্বৈরাচারীদেরও।
সংবিধান বিরোধী যেখানে ঈমানদার হওয়া!
বাংলাদেশে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো, রাজনীতিতে রাখা যাবে না মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনকে প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা। সেটি সংবিধান বিরোধী। বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি হলো সেক্যুলারিজম। সে নীতিতে যে দল ইসলামের বিজয় চায় এবং শরিয়তী আইনের বিচার চায় -সে দলের নিবন্ধন না দেয়াই সংবিধানিক রীতি। ফলে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন পায়নি। নির্বাচনী কমিশনের যুক্তি, ইসলামের বিজয় ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চাওয়াটি সংবিধানবিরোধী। তাতে লংঘিত হয় সংবিধানের সেক্যুলার চরিত্র। ফলে বাংলাদেশের সংবিধান সরাসরি দাঁড়িয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা তো তাঁর নিজের সার্বভৌমত্ব ও আইনের প্রতিষ্ঠা। বাংলাদেশের সংবিধান তাই মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দলিল। এটি এক ভয়ানক বিষয়।
বাংলাদেশের মুসলিম নাগরিকদের অপরাধ, তারা এ বিদ্রোহের এ দলিলকে শুধু মেনেই নেয়নি, বরং এ সংবিধানকে যারা প্রতিষ্ঠা দেয় তাদেরকে রাজস্ব দিয়ে প্রতিপালনও দেয়। তারা এ সংবিধানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছে তার প্রমাণ নাই। এ গুরুতর অপরাধের শাস্তি কি কিছু মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে ও নামাজ-রোজা পালনে দূর হয়? প্রকৃত ঈমানদারী তো এখানে এ বিদ্রোহাত্মক সংবিধানের বিলুপ্তিতে জিহাদে নামা। একমাত্র তখনই বুঝা যায়, ঈমান এখনো বেঁচে আছে। তখন বুঝা যায়, বেঁচে আছে মহান আল্লাহতয়ালার এজেন্ডার প্রতি আত্মসমর্পণ।
একটি মুসলিম দেশের সংবিধানে থাকতে হয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি আত্মসমর্পণ ও তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করার দায়বদ্ধতার ঘোষণা -যেমন একটি কম্যুনিস্ট দেশের সংবিধানে থাকে কম্যুনিজমকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার দায়বদ্ধতা। সে দায়বদ্ধতা না থাকাটাই মুনাফিকি। সেরূপ একটি দায়বদ্ধতার কারণেই পাকিস্তানের সংবিধানে স্বীকৃতি পেয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব। এবং গুরুত্ব পেয়েছে শরিয়তী আইন। ফলে সে দেশে শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা চাওয়াটি সংবিধান বিরোধী নয়। ফলে পাকিস্তানে সে কারণে কোন দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়না। অথচ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছিল ভারতীয় হিন্দুবাদীদের এজেন্ডা পূরণে; এবং সেটি তাদের আওয়ামী সেবাদাসদের দ্বারা। এ সংবিধান রচনায় দেশের ইসলামপন্থীদের বাদ রাখা হয়েছে। ফলে এ সংবিধানে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার প্রতি কোন দায়বদ্ধতা এবং ঈমানদারদের কোন অভিপ্রায় স্থান পায়নি। বরং গুরুত্ব পেয়েছে সেক্যুলারিজমের ন্যায় হারাম মতবাদকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। সেক্যুলারিজমের মূল কথা হলো, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে থাকতে হবে ইসলামের প্রতি অঙ্গীকারশূণ্যতা। অঙ্গীকার রাখাটাই এখানে অপরাধ। অথচ ঈমানদার হওয়ার শর্ত হলো তাকে প্রতিক্ষণ বাঁচতে হয় ইসলামের প্রতি অটল অঙ্গীকার নিয়ে। সে অঙ্গীকার না থাকাটাই নিরেট বেঈমানী। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান বেঈমানীকে আইন-সিদ্ধ করা হয়েছে এবং নিষিদ্ধ করা হয়েছে ঈমানদারীকে।
ব্যর্থতা ও বেঈমানীর শো’কেস
বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা ও বেঈমানীর শো’কেস শুধু তাদের সংবিধান নয়। বরং সেটি হলো তাদের রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি, প্রশাসন, বিচার-আচার ও যুদ্ধ-বিগ্রহ। এগুলির কোনটিতেই গৌরব যুগের মুসলিমদের কোন সূন্নতই স্থান পায়নি। এরই প্রমাণ হলো, ইসলাম থেকে দূরে থাকাই দেশের সাংবিধানিক নীতি, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও শিক্ষা-সংস্কৃতি। একটি দেশের শাসনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর ঈমান-আক্বীদা ও চেতনা কথা বলে। অথচ বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র হলো আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দলিল। শিক্ষানীতিতে গুরুত্ব পায় না পবিত্র কুর’আনের জ্ঞানদান। দেশের রাজনীতিবিদগণ মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমে লাব্বায়েক বলে না; বরং লাব্বায়েক বলে নিজেদের নফসের খায়েশ ও শয়তানের এজেন্ডা পূরণে। সেটিরই প্রমাণ হলো, তারা মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্বের বদলে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে নিজেদের সার্বভৌমত্ব। তাঁর শরিয়তী আইনকে হটিয়ে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে ইংরেজ কাফিরদের রচিত আইনকে। এই হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে বাঙালি মুসলিমদের গাদ্দারির নমুনা।
মহান আল্লাহতায়ালার উপর ঈমানের অর্থ শুধু তাঁর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস নয়, বরং তাঁর সার্বভৌমত্ব, তাঁর এজেন্ডা, তাঁর নাযিলকত কুর’আনী রোডম্যাপ ও তাঁর শরিয়তী আইনের উপর বিশ্বাস। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলিমের বিশ্বাসে ও কর্মে প্রকাশ পায় চরম অপূর্ণাঙ্গতা; স্থান পায়নি মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, তাঁর শরিয়তী আইন এবং কুর’আনী রোডম্যাপ। সেটি বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র, রাজনীতি, প্রশাসন এবং আইন-আদালতের দিকে নজর দিলেই বুঝা যায়। তাদের হৃদয়ে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করায় যদি সামান্যতম অঙ্গীকার থাকতো, তবে তারা বাঁচতো নবীজী (সা:) যেভাবে ইসলামকে বিজয়ী করেছিলেন সে সূন্নতকে অনুসরণ করে। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিমগণ সে পথে নাই। সিরাতাল মুস্তাকীমের বদলে তারা বেছে নিয়েছে ইসলাম থেকে দূরে সরার পথ। সিরাতাল মুস্তাকীমে চলা এ দেশে সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ। সিরাতাল মুস্তাকীমে চলতে হলে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দিয়ে বাঁচতে হয়। বাঁচতে হয় দুর্বৃত্তি নির্মূলের জিহাদ নিয়ে। চলতে হয় নবীজী (সা:)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলামকে বিজয় করে। অথচ বাংলাদেশে সেটি হয়নি। বরং মুজিবের ন্যায় যাদেরকে নেতা, পিতা ও বন্ধু রূপে সম্মান করে -তাদের যুদ্ধটি ছিল ইসলামের উত্থানকে প্রতিরোধ করায়। তারা বিজয়ী করেছে ভারতের ন্যায় হিন্দুত্ববাদী শক্তিকে।
নবীজী (সা:)’র ইসলামের মূল পরিচয় হলো, তাতে ছিল মহান আল্লাহতায়ালার একক সার্বভৌমত্ব, আদালতে ছিল তাঁর শরিয়তী আইন এবং জিহাদ ছিল দুর্বৃত্তির নির্মূলে ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠায়। এবং রাষ্ট্রের পলিসি ছিল জনগণকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো ও তাদেরকে জান্নাতে নেয়ায়। শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্ব পেয়েছিল পবিত্র কুর’আন ও হাদীস থেকে জ্ঞানদান। প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্ব -তাতে গড়ে উঠেছিল আরব, ইরানী, কুর্দী, তুর্কী, হাবশী, মুর ইত্যাদি নানা ভাষী মানুষদের নিয়ে এক বিশাল মুসলিম উম্মাহ। অথচ সে ইসলাম বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পায়নি। তারা প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের বদলে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদে মানবতা বাঁচেনা। কবরে মুসলিম ভাতৃত্ববোধ। তাই মানবতা ও মুসলিম ভাতৃত্ববোধ বাঁচেনি বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের জীবনে। তাদের কাছে শত্রু গণ্য করেছে বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রায় ৬ লাখ বিহারী মুসলিম। ১৯৪৭’য়ের পর ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের থেকে প্রাণ বাঁচাতে তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল। একাত্তরের সকল বিহারী যে বাঙালিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল -সে প্রমাণ নাই। কিন্তু প্রতিটি বিহারীর গৃহ, দোকান ও চাকুরি কেড়ে নিয়ে বস্তিতে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের সংবিধান হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দলিল। এদেশে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব যেমন অসাংবিধানিক, তেমনি অসাংবিধানিক হলো সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা উপর আস্থা এবং তাঁর শরিয়তী আইনের বিচার। ফলে মুখে নিজেদের মুসলিম রূপে ঘোষণা দিলেও তারা বাঁচছে নবীজী (সা)’র প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ছাড়াই।
যুদ্ধ যেখানে ইসলামের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশের শাসক মহলে ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা এতোই প্রবল যে, কোন রাজনৈতিক দল মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতিতে নামলে সে দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়না। ফলে সে দল হারায় নির্বাচনে প্রতিযোগিতার অধিকার। এভাবে পরিকল্পিত ভাবে ইসলামপন্থীদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এভাবে প্রতিরোধ গড়া হচ্ছে জনগণের রায়ের ভিত্তিতে ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের বিরুদ্ধে। অথচ ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পূর্ণ অধিকার দেয়া হয়েছে কম্যুনিস্ট, নাস্তিক, হিন্দুত্ববাদীদের। হাসিনা সরকারের পলিসি হলো, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটিতে ইসলামের উত্থানকে অসম্ভব করা এবং সে সাথে ভারতমুখী আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে বলবান করা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছে দিনের ভোট রাতে ডাকাতী করে নেয়ার মাধ্যমে। সে ভোটডাকাতিকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে ভারত। অবৈধ হাসিনা সরকারের বৈদেশিক নীতির মূল কথা হলো, হিন্দুত্ববাদী ভারতের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। অথচ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজিপি)’র সাবেক সভাপতি অমিত শাহ বাংলাদেশীদের ভারতে অনুপ্রবেশকারী উইপোকা বলে অভিহিত করে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশীদের নিয়মিত সীমান্তে হত্যা করে। কিন্তু সে হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের প্রতিবাদ নাই। বরং শেখ হাসিনার পলিসি হলো, ভারতকে অর্থনৈতিক বাজার, করিডোর ও বন্দরের সুবিধা দেয়া।
আওয়ামী শাসক দলের রাজনীতিতে রয়েছে বিরামহীন যুদ্ধ। সে যুদ্ধের লক্ষ্য যেমন ফ্যাসিবাদের প্রতিষ্ঠা, তেমনি ইসলামের উত্থান রোধ। সে এজেন্ডাটিই মূলত ভারতের এজেন্ডা; এক্ষেত্রে হাসিনা কাজ করছে ভারতের প্রতিনিধি রূপে। সে অভিন্ন ভূমিকাটি ছিল শেখ মুজিবেরও। মুজিবের শাসনামলে বিলুপ্ত হয় জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা; কবরস্থ হয় গণতন্ত্র। প্রতিষ্ঠা পায় এক দলীয় বাকশাল। ক্ষমতায় এসেই শেখ মুজিব ইসলামপন্থী সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেন এবং কারাবন্দী করেন সেসব দলের নেতাদের। শেখ হাসিনা ইসলামপন্থী দলগুলিকে নিষিদ্ধ না করলেও অসম্ভব করেছে সে দলগুলির নির্বাচনে অংশ নেয়াকে। অথচ দেশটিতে হিন্দুত্ববাদী ও কম্যুনিস্ট এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতি করায় কোন বাধা নাই। কিন্তু শরিয়তী আইন ও নবীজী (সা:)’র হাতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ইসলামের কথা বললে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী রূপে চিহ্নিত করা হয় এবং গুম, খুন, কারাবন্দী ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। শত শত আলেমকে তাই কারাবন্দি করা হয়েছে এবং ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে বহু ইসলামপন্থী নেতাদের। তাই শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি প্রচণ্ড প্রসন্ন হলো ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার। শেখ হাসিনা ভোটডাকাতি করে ক্ষমতায় এলেও ভারত সেটিকে গণতন্ত্রের বিজয় বলে প্রশংসা করে। এবং আন্তর্জাতিক মহলে হাসিনা সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায় করে। তবে ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থের বিরুদ্ধে গাদ্দারি শুধু শেখ হাসিনার একার নয়। অপরাধ বাংলাদেশের জনগণেরও। জনগণই ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে নির্বাচিত করেছে এবং ১৫ বছরের অধিক কাল প্রতিপালন দিয়েছে রাজস্ব দিয়ে। তারা নাই ইসলামবিরোধী এ ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্মূলের জিহাদে।
বাঙালি মুসলিমদের ব্যর্থতা মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মাণে নয়। নামাজ-রোজা এবং হজ্জ-যাকাত পালনেও নয়। বরং মসজিদ-মাদ্রাসার নির্মাণে তাদের সাফল্যটি বিশাল। এদেশটিতে প্রায় ৫ লাখের বেশী মসজিদ এবং বহু হাজার মাদ্রাসা। নামাজ-রোজা ও হজ্জ-যাকাত পালনকারীদের সংখ্যাও বিশাল। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণে তারা চরম ভাবে ব্যর্থ। সভ্য মানুষকে কি শুধু পানাহার নিয়ে বাঁচলে চলে? তাকে নিরাপদ গৃহও নির্মাণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠা দিতে হয় রাষ্ট্রের। গৃহ কতটা সুন্দর ও নিরাপদ -তা থেকে গৃহবাসীর রুচির পরিচয় মেলে। সভ্য ও ভদ্র মানুষের গৃহ এজন্যই অসভ্য ও অভদ্র মানুষের গৃহ থেকে ভিন্নতর হয়। সেরূপ ভিন্নতাটি ধরা পড়ে রাষ্ট্রের বেলায়ও। কাফিরদের রাষ্ট্র ও ঈমানদারদের রাষ্ট্র তাই কখনো একই রূপ হয়না। ভিন্নতা ধরা পড়ে দেশ দুটির শাসনতন্ত্র, আইন-আদালত, শিক্ষানীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি, এবং বিদেশ নীতির মধ্যে। ঈমানদারদের রাষ্ট্রে দেহব্যবসা, সূদী কারবার, ঘুষ, গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতির ন্যায় হারাম কর্ম থাকে না। বরং থাকে সেসব দুর্বৃত্তির নির্মূলে বিরামহীন জিহাদ। থাকে শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের জিহাদ। সেরূপ জিহাদ নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাদের জীবনেও ছিল। এবং সে জিহাদের ফসল হলো ইসলামী রাষ্ট্র। সেরূপ একটি রাষ্ট্র নির্মাণে ফলেই মুসলিমগণ পেয়েছিল পূর্ণ ইসলাম পালনের সহায়ক পরিবেশ। সে রকম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই ছিল নবীজী (সা:)’র সর্বশ্রেষ্ঠ সূন্নত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের মুসলিমগণ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও মসজিদ-মাদ্রাসা নিয়ে থাকলেও নবীজী (সা)’র সর্বশ্রেষ্ঠ এ সূন্নত নিয়ে বাঁচে না।
বস্তুত বাঙালি মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাটি ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণে। সে ব্যর্থতার কারণেই তারা ব্যর্থ হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর এজেন্ডাকে বিজয়ী করায়। এতো মসজিদ-মাদ্রাসা ও নামাজ-রোজা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উপর দখলদারিটি শয়তানের অনুসারীদের। ফলে আদালতে নাই শরিয়তের আইন, শিক্ষাব্যবস্থায় নাই কুর’আন-হাদীসের জ্ঞানদান, রাজনীতিতে নাই দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদ। এগুলিই হলো মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে বাঁচার আলামত। লক্ষণীয় হলো, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ ভোট দিয়ে, রাজস্ব দিয়ে, সরব ও নীরব সমর্থন দিয়ে ইসলামের এ পরাজয় এবং শয়তানী শক্তির এ বিজয়কে বাঁচিয়ে রেখেছে। শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকলে তারা কি ইসলামের এরূপ পরাজয় কখনো মেনে নিত? মেনে নিত কি ইসলামবিরোধী শক্তির বিজয়? এটি নিছক ব্যর্থতা নয়, গুরুতর অপরাধও। অপরাধ এখানে মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে গাদ্দারির। এমন অপরাধ আযাব ডেকে আনবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়?
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018