বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

মানব জাতির বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্টদের নাশকতাটি অতি ভয়ানক। তাদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রতিটি পর্বই যেমন দুর্বৃত্তির, তেমনি প্রতিটি যুদ্ধই যুদ্ধাপরাধের। সমগ্র মানব ইতিহাস তাদের অপরাধের বিবরণে পরিপূর্ণ। বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ফ্যাসিস্টগণও এর ব্যতিক্রম নয়। মহান আল্লাহতায়ালা মানব সন্তানদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে চান এবং তাদের প্রস্তুত করতে চান জান্নাতের জন্য। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তিনি লক্ষাধিক নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং বহু কিতাব নাযিল করেছেন। আর সেক্যুলারিস্টদের এজেন্ডা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা মানুষকে প্রস্তুত করে এ ক্ষুদ্র পার্থিব জীবনের সম্ভোগ বাড়াতে। সে লক্ষ্যেই তাদের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, সংস্কৃতি এবং রক্তাক্ত যুদ্ধ। মানবের চেতনা থেকে এরা বিলুপ্ত করে আখেরাতে জবাবদেহীতার ভয়কে। এটিই হলো সেক্যুলারিজমের মূল নাশকতা। সেক্যুলারিজমের সাথে ইসলামের মূল বিরোধটি এখানেই। সেক্যুলারিস্টদের প্রতিক্ষণের যুদ্ধটি তাই মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে; এবং সেটি তাঁর এজেন্ডাকে পরাজিত রাখায়।  

সেক্যুলারিজমের আভিধানিক অর্থ হলো ইহজাগতিকতা; ইহজাগতিক প্রাপ্তিকে বড় করতেই সেক্যুলারিজমের গর্ভে জন্ম নিয়েছে বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদের ন্যায় নানারূপ রাক্ষুসী মতবাদ। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা জুড়ে নিজেদের শোষণ ও লুন্ঠনের অধিকার বহাল রাখতে এসব মতবাদের অনুসারীরা বার বার গণহত্যা, বর্ণবাদী নির্মূল, আঞ্চলিক যুদ্ধ এবং দুটি বিশ্বযুদ্ধ উপহার দিয়েছে। একমাত্র দুটি বিশ্বযুদ্ধে তারা সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণনাশ ঘটিয়েছে। গণহত্যার পাশাপাশি মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে লক্ষ লক্ষ ঘর-বাড়ি, দোকানপাট এবং বহু নগর-বন্দরকে। যারা উগ্র বর্ণবাদী, জাতীয়তাবাদী, উপনিবেশবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী -তারাই বেড়ে উঠে উগ্র ফ্যাসিস্ট রূপে। রাজনীতির অঙ্গণে তারা নির্মূলমুখী হয়। তাই ইংরেজদের রেড ইন্ডিয়ান নির্মূল, স্প্যানীশদের মুসলিম নির্মূল এবং জার্মানদের ইহুদী নির্মূলে দেখা যায় অভিন্ন কারণ ও অভিন্ন নৃশংসতা। ।

মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্ট ফ্যাসিস্টদের সাম্প্রতিক কালের নৃশংসতাও কম ভয়াবহ নয়। সেটি যেমন আরব বিশ্বে দেখা গেছে খেলাফত ধবংসে এবং অনারব মুসলিমদের হত্যায়, তেমনি বাঙালি ফ্যাসিস্টদের জীবনে বীভৎস নৃশংসতা দেখা গেছে ১৯৭১’য়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ভাঙ্গায়, অবাঙালি  বিহারী হত্যায়, বিহারী মহিলাদের ধর্ষণে ও তাদের ঘর-বাড়ী ও সহায়-সম্পদ দখলে। এমন কি দেখা গেছে বাঙালি হিন্দুদের জমিজমা ও সম্পদ দখলেও। সেক্যুলারিজম মানবকে যে কতটা হিংস্র ও মানবতাশূণ্য করতে পারে -একাত্তরের বাংলাদেশ হলো তার উত্তম দৃষ্টান্ত। নজির। ইতিহাসে এমন নমুনা অসংখ্য।

ফ্যাসিবাদ মানুষকে মানবতাশূণ্য এক হিংস্র জীবে পরিণত করে; তখন অবিরাম স্বার্থশিকার নিয়ে বাঁচাই বাঁচার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। ভিন্ন বর্ণ, ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানে ফ্যাসিস্টগণ রাজী নয়, তারা বাঁচতে চায় ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন ভূগোল ও ভিন্ন ধর্মের মানুষদের বিরুদ্ধে লাগাতর নির্মূলমুখী যুদ্ধ ও ঘৃণা নিয়ে। এমন একটি আগ্রাসী চেতনার কারণে পাশ্চাত্য বিশ্বের ফ্যাসিস্টগণ দুটি বিশ্বযুদ্ধকে অনিবার্য করেছিল। একাত্তরে বাঙালি মুসলিমের জীবনে তেমনি একটি যুদ্ধ ডেকে এনেছিল বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ফ্যাসিস্টগণ। ফ্যাসিস্টগণ ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন ভূগোল ও ভিন্ন বর্ণের মানুষের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধ শুরু করে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বহু আগেই। উগ্র হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের পক্ষ থেকে ভারতে তেমন একটি লাগাতর যুদ্ধ চলছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। মুসলিম নির্মূল সেখানে বার বার হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। নির্মূলকে জায়েজ করতে মুসলিমদের উঁই পোকা বলা হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে মুসলিমদের গৃহ, দোকানপাট ও মসজিদ। একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের বুকে সেরূপ একটি যুদ্ধ শুরু করেছিল ফ্যাসিস্ট মুজিবও। ২৫ শে আগস্টের রাতে পাক সেনাবাহিনীর ময়দানের নামার আগেই মুজিব ৭ মার্চ যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল, “হাতের কাছে যা পাও তা নিয়ে যুদ্ধে নামার।” তখন থেকেই শুরু হয় অবাঙালি হত্যা ও তাদের দোকান-পাট লুট। কিছু সংখ্যক ক্যান্টনমেন্টের বাইরে পাক সেনাকে হত্যা করেছিল। মুজিব ক্যান্টনমেন্টগুলিতে খাদ্য-পানীয় সরবরাহ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।

ফ্যাসিস্টরা দখলদারী চায় শুধু দেশের ভৌগলিক মানচিত্রের উপর নয়, মনের মানচিত্রের উপরও। তাদের সে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারাই খাড়া হয়, তাদেরকেই এরা নির্মূল করতে চায়। এরাই বাংলাদেশ সৃষ্টির পর পরই ইসলামপন্থীদের নির্মূলে নির্মূল কমিটি গড়েছিল। বিশ্বের সর্বত্র বর্ণবাদী ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নির্মূলের কান্ডগুলি ঘটেছে বস্তু এই সেক্যুলারিস্ট ফ্যাসিস্টদের হাত ধরেই। ক্ষুদ্র মনের এসব ছোট লোকেরা কখনোই বড় কিছু নিয়ে ভাবতে পারে না। তাদের ভাবনাগুলি সীমিত থাকে ব্যক্তি স্বার্থ, পরিবারের স্বার্থ, গোত্রীয় স্বার্থ এবং ভাষা ও বর্ণভিত্তিক স্বার্থ নিয়ে। তাদের পক্ষে নানা ভাষা ও নানা ভৌগলিক পরিচয়ের মানুষদের নিয়ে বিশ্বময় মুসলিম উম্মার কথা চিন্তা করা যেমন অসম্ভব,  তেমনি অসম্ভব হলো মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে কিছু করা। ‌ ক্ষুদ্র চিন্তার এই ক্ষুদ্র কীটগুলির সামর্থ্য থাকে না নিজ শক্তিতে কিছু করার; তাই লক্ষ্য অর্জনে বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ফাসিস্টগণ ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কোলে গিয়ে উঠেছিল এবং তাদের অর্থে প্রতিপালন নিয়েছিল। তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শক্তির সেবাদাস হতে। ভারতের সাথে তাজুদ্দীনের ৭ দফা এবং মুজিব ২৫ সালা চুক্তি ছিল বস্তুত সেই দাসচুক্তি।

প্রতি যুগে শত্রু শক্তি এভাবেই ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্টদের মধ্য থেকেই বিপুল হারে দাস সৈনিক পেয়েছে। ভারত ইসলামী চেতনাশূণ্য এমন দাসদেরকে ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজে কাজে যুদ্ধে নামিয়েছিল। এসব সেক্যুলারিস্ট ফ্যাসিস্টরাই হলো মুসলিম উম্মাহর ঘরের শত্রু। মুসলিম সমাজে তাদের সংখ্যা এতোই অধিক যে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ১০ লাখ আরব মুসলিম এবং আড়াই লাখ ভারতীয় মুসলিম ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে ইরাক ও ফিলিস্তিনে খলিফার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল। মুসলিম উম্মাহর মাঝে এরূপ ঘরের শত্রুর উৎপাদন বন্ধ করতেই ইসলাম বর্ণবাদ, জাতীয়তাবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ ও সেক্যুলারিজমকে হারাম করেছে। এবং হারাম করেছে ফ্যাসিবাদকেও।

যারা ঈমানদার  তাদের ভাবনার জগতটি জগতময়। তারা ভাবে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্ববাসীর স্বার্থ নিয়ে। ভাবনার ক্ষেত্রেও প্রতিটি ঈমানদার মহান নবীজী (সা:) ও মহান আল্লাহ তায়ালার সুন্নতের অনুসারী।‌ নবীজী (সা:)’র জন্ম আরবের মক্কা নগরীতে। তারও বর্ণ, পরিবার ও গোত্র ছিল। নিজস্ব জন্মভূমিও ছিল। কিন্তু সে জন্য তিনি বর্ণবাদী ও গোত্রবাদী হননি;  আরব  জাতীয়তাবাদীও হননি। বরং তার মন ছিল প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের চেতনায় পরিপূর্ণ। ফলে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ বিলাল, ইরানের সালমান ফার্সি ও রোমের সোহায়েলের মত ভিন্ন ভাষা ও ভিন্ন দেশের মানুষদেরকে তিনি অতি আপন রূপ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। উপমহাদেশের মুসলিমগণ অনুপ্রাণীত হয়েছিল নবীজী (সা:)’র অনৃসৃত সে প্যান- ইসলামী চেতনায়, ফলে দক্ষিণ এশিয়ার নানা ভাষা, নানা বর্ণ ও নানা এলাকার মুসলিমগণ তখন কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল।

কিন্তু সে নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য ও ভাতৃত্ব ইসলামশূন্য জাতীয়তাবাদী, আঞ্চলিকতাবাদী ও বর্ণবাদী বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের ছিল না। সেটি ছিল তাদের নৈতিক পঙ্গুত্ব। সে পঙ্গুত্ব নিয়ে তাদের পক্ষে অসম্ভব ছিল নানা বর্ণ, নানা ভাষা ও নানা অঞ্চলের মুসলিমদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের রক্ষক হওয়া। তারা বরং পাকিস্তানের শত্রুতে পরিণত হয় এবং পাকিস্তানের ধ্বংসে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের সাথে কোয়ালিশন গড়েছিল। তারা হিন্দুত্ববাদীদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তানপন্থী ও ইসলামপন্থীদের হত্যায় যুদ্ধ নেমেছিল। প্রশ্ন হলো, এমন মুসলিম বিরোধী নাশকতার কাজ কি কোন ঈমানদার করতে পারে? কাফিরদের সাথে এমন বন্ধুত্ব ও কোয়ালিশন গড়াটি মহান আল্লাহতায়ালা হারাম করেছেন -সে ঘোষণা এসেছে সুরা আল ইমরানের ২৮ নম্বর এবং সুরা মুমতাহানার ১ নম্বর আয়াতে। সুরা আল ইমরানের ২৮ নম্বরে বলা হয়েছে:

لَّا يَتَّخِذِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْكَـٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ ٱللَّهِ فِى شَىْءٍ ٓ

অর্থ: “মুমিনরা যেন মুমিন ভিন্ন কাফিরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ না করে। আর যে কেউ এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই।”

   সুরা মুমতাহানার ১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ عَدُوِّى وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَآءَ

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ, আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না।”

মহান আল্লাহ তায়ালার যেখানেই সুস্পষ্ট নির্দেশ, সে নির্দেশ মানা তখন ফরজ হয়ে যায়। সে নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে সে অভিশপ্ত কাফির হয়ে যায় -যেমনটি হয়েছিল ইবলিস শয়তান। মূর্তিপূজারী হিন্দুত্ববাদীরা যে কাফির -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে। তারা যে মুসলিমদের শত্রু এবং মহান আল্লাহ তায়ালার শত্রু তা নিয়েও কি কোন সন্দেহ আছে? তাদের প্রতিদিনের যুদ্ধটি তো ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ভারতে মসজিদ এবং মুসলিমদের গৃহ ও দোকানপাট ধ্বংস করা হচ্ছে, মুসলিমদের হত্যা ও মুসলিম মহিলাদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। কাশ্মীর পরিণত হয়েছে এক জেলখানায়। লক্ষাধিক কাশ্মীরীকে হ্ত্যা করা হয়েছে। তাই প্রশ্ন হলো, ১৯৭১’য়ে যারা হিন্দুত্ববাদী ভারতের কোলে গিয়ে আশ্রয় নিল এবং তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করলো -তাদেরকে কি মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমের অনুগত ঈমানদার বলা যায়? তাদের বিদ্রোহ তো সুস্পষ্ট।

কিন্তু বাংলাদেশে মূল সমস্যা হলো, আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যত প্রবলই হোক -সেটিকে বিচারে আনা হয়না। তাই যে লম্পট দুর্বৃত্তটি নিয়মিত পতিতা পল্লীতে যায় বা নিজ গৃহে ব্যাভিচারি করে বা সূদ-ঘুষ খায় এবং আদালতে শরিয়তী বিচারকে অস্বীকার করে -এমন বিদ্রোহীরাও নিজে মুসলিম রূপে জাহির করে। এমন কি সাধারণ মানুষও তাকে মুসলিম মনে করে। দেশের নামাজী ও রোজাদাররাও পতিতাপল্লীর পুলিশ পাহারাদারীতে রাজস্ব দিয়ে খরচ জোগায়। তারা কাফিরকেও কাফির বলতে রাজী নয়। একারণেই পৌত্তলিক কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা বা তাদের হৃকুমের গোলাম হওয়াটি বাঙালি সেক্যুলারিস্টদের কাছে কুফুরি বা বেঈমানী গণ্য হয়না। হিন্দুত্ববাদী কাফির শক্তির সেবাদাসকে জাতির পিতা, নেতা ও বঙ্গবন্ধুও বলেছে।  বস্তুত এউ হলো তাদের চেতনার অসুস্থতা ও ইসলাম থেকে দূরে সরার মাত্রা। কোন কোন বিশেষ কর্মটি ব্যক্তিকে কাফিরে পরিণত করে -পবিত্র কুর’আনে সে বিষয়গুলি স্পষ্ট রূপে বলে দেয়ার পরও সে কাজগুলি কাউকে প্রকাশ্যে করতে দেখেও তারা তাকে কাফির বলতে রাজী নয়। প্রশ্ন হলো এমন বিভ্রান্ত ও বিপথগামী ব্যক্তিরা দখলদার শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করবে কি করে?      

মুসলিম উম্মাহর বিপর্যয়ের আরো কারণ, যারা ইসলাম থেকে দূরে সরে, তারা শুধু প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্বের চেতনা থেকেই দূরে সরে না, দূরে সরে হারাম-হালালের বিধান থেকেও। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কোলে উঠতে হলে প্রথমে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজটি পূর্ণভাবে হওয়া জরুরি। কারণ, ইসলামের সাথে বন্ধন অটুট রেখে সেটি অসম্ভব। বস্তুত যাদের চেতনায় ইসলাম বিলুপ্ত করার কাজটি পূর্ণতা পেয়েছিল একমাত্র তারাই একাত্তরে ভারতের ঘরে বিজয় তুলে দিতে যুদ্ধ করেছিল, কোন ইসলামী দলের নেতাকর্মী ও আলেম সে হারাম কাজে নামেনি। ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজটি করেছিল সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে -যা প্রণয়ন করেছিল ঔপনিবেশিক ইংরেজ কাফিরগণ।  মুসলিম উম্মাহ আজ যেরূপ ৫০টির বেশী টুকরোয় বিভক্ত, শক্তিহীন, মর্যাদাহীন ও স্বাধীনতাহীন -তার মূল কারণ তো ইসলামী চেতনাশূণ্য এই সেক্যুলারিস্টগণ। পূর্ণ সেক্যুলারিকরণের আলামত হলো, নামে মুসলিম হলেও ইসলামের বিজয় ও গৌরব বাড়াতে তাদের সামান্যতম আগ্রহ নাই। বরং এসব বাঙালি সেক্যুলারিস্ট ফ্যাসিস্টগণ ভারতের পক্ষে ভূমিকা রাখায় এক নতুন ইতিহাস গড়েছে। তাদের উৎসব বরং পাকিস্তানের বিভক্তি ও মুসলিমদের পরাজয় নিয়ে -সেটি দেখা যায় ১৬ ডিসেম্বর এলে। মুসলিম উম্মাকে এক দেহের সাথে তুলনা করেছেন। দেহের এক অংশে আঘাত লাগলে সারা দেহে সে ব্যথা অনুভুত হয়। তাই কোন মুসলিমের ঘর ভাঙ্গা দেখে মুসলিম মাত্রই ব্যাথিত হয়। সে ব্যথা না জাগলে বুঝতে হবে সে নিশ্চিত মুসলিম নয়; বরং মুসলিম উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন জীব। তেমনি মুসলিম দেশ ভেঙ্গে যাওয়া দেখেও যে ব্যক্তি ব্যথিত হয়না -তাকে কি মুসলিম বলা যায়? অথচ বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ ব্যথিত হওয়া দূরে থাক – পৌত্তলিকদের সাথে মিলে তা নিয়ে উৎসব করে! মুনাফিকদের মুনাফিকি কখনোই গোপন থাকতে দেয়া হয়না, সেটি প্রকাশ করে দেয়াই মহান আল্লাহতায়ালার অঙ্গীকার। সে অঙ্গীকারের কথা ঘোষিত হয়েছে সুরা আনকাবুতের ১১ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:

وَلَيَعْلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَلَيَعْلَمَنَّ ٱلْمُنَـٰفِقِينَ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *