বিজয়ের পথ এবং পরাজয়ের পথ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বিজয়ের পথ

শত্রুর হামলার মুখে বাঁচার পথ মাত্র একটিই। সেটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার উপর নিজের ঈমানকে প্রবলতর করা এবং জিহাদ নিয়ে বাঁচা। জিহাদের অর্থ: মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লড়াই। এ লড়াই যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক হতে পারে, তেমনি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র হতে পারে। জিহাদ যেখানে থাকে, সেখানে থাকে মহান আল্লাহতাযালার রহমত ও সাহায্য। জিহাদের মধ্য দিয়ে ঈমানদার ব্যক্তি মহান আল্লাহতাযালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে নিজের সর্ব সামর্থ্যের বিনিয়োগ করে এবং তাঁর সাহায্যকারীতে পরিণত হয়। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারী হয়, মহান আল্লাহও তাঁর সাহায্যকারী হন। যুদ্ধের ময়দানে তার অবস্থানকে তিনি মজবুত করে দেন। তখন তাঁর জন্য বিজয়ের রাস্তা খুলে যায়। সে ঘোষণাটি এসেছে নিচের আয়াতে:

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تَنصُرُوا۟ ٱللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য করো, তবে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থানকে মজবুত করে দিবেন। -(সুরা মহম্মদ, আয়াত ৭)। প্রতিটি মুমিনের ফরজ শুধু তাই নামাজ-রোজা ও হ্জ্জ-যাকাত পালন নয়, বরং মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার কাজে তাঁর সাহায্যকারী হওয়া। সাহায্যকারী হওয়ার নির্দেশটি এসেছে নিচের আয়াতে:

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ كُونُوٓا۟ أَنصَارَ ٱللَّهِ

 অর্থ: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর আনসার তথা সাহায্যকারী হয়ে যাও।” –(সুরা সাফ, আয়াত ১৪)। তাই মুসলিম হওয়ার অর্থই হলো আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারী হওয়া। মুসলিমদের পরাজয়, গোলামী ও লাঞ্ছনার শুরু তো তখন থেকেই যখন মুসলিমগণ সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সাহায্যকারী হওয়ার বদলে গায়রুল্লাহ তথা শয়তানের সাহায্যকারীতে পরিণত হয়েছে। এটি মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের সাথে গাদ্দারি। মুসলিম বিশ্বজুড়ে তো সে গাদ্দারিরই প্রচণ্ড মহামারি। কোটি কোটি মানুষ নিজেদেরকে মুসলিম রূপে দাবী করলেও আল্লাহতায়লার আইনকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার সৈনিক নাই। ফলে মুসলিম বিশ্বের কোথাও মহান আল্লাহতয়ালার এজেন্ডা, তাঁর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর আইন প্রতিষ্ঠা পায়নি। বরং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে রাজতন্ত্র, সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, গোত্রবাদ, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের ন্যায় হারাম মতবাদ। আল্লাহতয়ালার সাহায্যকারী হওয়ার বদলে মুসলিমগণ পরিণত হয়েছে রাজা-বাদশাহ ও স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্টদের সাহায্যকারীতে। এমনকি লাখে লাখে যোগ দিয়েছে কাফির বাহিনীতেও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১০ লাখ আরব মুসলিম এবং আড়াই লাখ ভারতীয় মুসলিম যোগ দিয়েছিল ব্রিটিশ বাহিনীতে। অথচ তারা যদি আল্লাহতায়ালার সাহায্যকারি হতো তবে মুসলিম ইতিহাস ভিন্নতর হতো। তখন তাদের পক্ষে অসম্ভব হতো পরাজিত হওয়া। তারা প্রতিষ্ঠা পেত বিশ্বশক্তি রূপে -যেমনটি দেখা গেছে মুসলিমদের গৌরব যুগে। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি এসেছে নিম্নের আয়াতে:

إِن يَنصُرْكُمُ ٱللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا ٱلَّذِى يَنصُرُكُم مِّنۢ بَعْدِهِۦ ۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ

অর্থ: “যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন তবে কেউই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না; এবং তিনি তোমাদের লাঞ্ছিত করেন তবে কে আছে যে এরপর তোমাদের সাহায্য করতে পারে? মুমিনগন তো অবশ্যই আল্লাহর উপর ভরসা করেন। (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৬০)। এবং একথাও বলা হয়েছে সকল বিজয় আসে একমাত্র আল্লাহ থেকেই। সে ঘোষণাটি এসেছে নিম্নের আয়াতে:  

وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

অর্থ: “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোথাও থেকে বিজয় আসে না; নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।” –(সুরা আনফাল, আয়াত ১০)।  

 

পরাজয়ের পথ

কিন্তু মুসলিমগণ স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছে পরাজয়ের পথ। সেটি জিহাদ থেকে দূরে সরার পথ। এ পথ রক্তাক্ত বিভক্তির পথও। জিহাদ থেকে দূরে সরার অর্থ মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর এজেন্ডা থেকে দূরে সরা। তখন জীবন কাটে নিজ নফসের, নিজ দলের, নিজ নেতার বা কোন শাসকের এজেন্ডাকে বিজয়ী করার যুদ্ধে। একক আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বদলে তখন রাষ্ট্রের বুকে নানা দল, নানা মতবাদ ও নানা নেতা ভিত্তিক এজেন্ডা খাড়া হয়। সে সবের ভিত্তিতে মুসলিমদের মাঝে যেমন চরম বিভক্তি আসে, তেমনি আসে পরাজয় ও আযাব। মুসলিম ইতিহাসের বেশীর ভাগ যুদ্ধ-বিগ্রহ, সম্পদনাশ ও প্রাণনাশের ঘটনা হয়েছে এসব অনৈসলামী এজেন্ডাকে বিজয়ী করার লড়াইয়ে। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে বিজয়ী করার জিহাদে থাকার কারণে নবীজী ও তাঁর খোলাফায়ে রাশেদার আমলে যেমন মুসলিমদের মাঝে একতা এসেছে, তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বার বার সাহায্যও এসেছে -এমন কি নেমে এসেছে ফেরেশতাদের বাহিনী। ফলে মুসলিমগণ বার বার বিজয়ী হয়েছে। তাই মুসলিমের মূল কাজ হলো, ঈমানকে মজবুত করা এবং সর্বসামর্থ্য দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয়ী করার লক্ষ্যে তার সাহায্যকারী হয়ে যাওয়া। তিনি তো তাদের সাহায্য দানে সদাপ্রস্তুত -যারা তাঁর সাহায্যকারী -যার প্রতিশ্রুতি এসেছে উপরিউক্ত আয়াতে। আল্লাহতায়ালার সাহায্যের বদৌলতে বাংলাদেশের চেয়েও দরিদ্র অবস্থান থেকে অতীতে মুসলিমগণ এক নম্বর বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। বাঙালি মুসলিমগণ যে এখনো সাহায্য পাচ্ছে না তার কারণ, তারা ব্যর্থ হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার আনসার তথা সাহায্যকারী হতে। বরং তারা সাহায্যকারী হয়েছে সেক্যুলারিস্ট, ফ্যাসিস্ট, রাজতন্ত্রী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তির। এভাবে তারা নিজ সামর্থ্যের বিনিয়োগ করেছে শত্রুর বিজয় বাড়াতে। এভাবে তারা নিজেদের প্রস্তুত করছে জাহান্নামের যোগ্য করে।

 

আত্মসমর্পণের রাজনীতি ও বিপর্যয়

শত্রুশক্তির কাছে আত্মসমপর্ণে কখনোই মুক্তি মিলে না। বাংলাদেশের বুকে সে প্রমাণ পেশ করেছে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা। তারা উভয়ই ভারতের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করেছিল। ভারতকে খুশী করতে গিয়ে মুজিব সকল ইসলামী দলের নেতাদের কারাগারে তুলেছিল এবং ইসলামের নামে সংগঠিত হওয়াকে সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে ইসলাম ও মুসলিম শব্দ গুলি যুক্ত ছিল -সে শব্দগুলি বিলুপ্ত করেছিল। মুজিব ভারতের সাথে ২৫ সালা দাস-চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। সীমান্ত বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশের সীমান্তকে ভারতীয় পণ্যের জন্য উম্মূক্ত করেছিল এবং ভারতীয়দের হাতে তুলে দিয়েছিল বাংলাদেশের ভূমি বেরুবাড়ী। মুজিবের ন্যায় হাসিনাও ভারতকে শুধু দেয়াতেই আনন্দ পেত, ভারত থেকে কিছু আনায় নয়। তাছাড়া শত্রুর লক্ষ্য থাকে শুধু নেয়াতে, দেয়াতে নয়। ভারত তাই তার ব্যতিক্রম ছিল না। হাসিনা নিজেকে ও তার প্রভু ভারতকে খুশি করতে গিয়ে ইসলামপন্থীদের কারাগারে তুলেছে, তাদের উপর নির্যাতন করেছে এবং অনেককে ফাঁসিতে চড়িয়েছে। কিন্তু পরিণাম তার জন্য ভাল হয়নি।

চিহ্নিত শত্রুর কাছে আত্মসমপর্ণের পথটি শুধু অপমানেরই নয়, সে পথটি আত্মবিনাশেরও। মুজিব তার আত্মসমর্পণের রাজনীতির মাধ্যমে সেটি শতভাগ সত্য রূপে প্রমাণ করেছে। মুজিবের বড় অজ্ঞতা হলো, সে বুঝতেই পারিনি যে নেকড়কে যেমন পোষ মানানো যায়না, তেমনি হিন্দত্ববাদী ফ্যাসিস্টদেরকে কখনোই বন্ধু বানানো যায়না। পবিত্র কুর’আনে এ বিষয়ে বার বার বয়ান এসেছে। এজন্যই তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা শরিয়তে হারাম। সে ঘোষণা এসেছে সূরা আল ইমরানের ২৮ নম্বর আয়াতে এবং সূরা মুমতাহানার ১ নম্বর আয়াতে। তাই ইসলামে অতি গুরুতর অপরাধ হলো মহান আল্লাহাতায়ালার শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব করা। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীগণ ১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলিমদের বন্ধু ছিলনা, ১৯৭১’য়েও বন্ধু ছিল না। তারা আজ যেমন বন্ধু নয়, ভবিষ্যতেও বন্ধু হবে না। বিস্ময়ের বিষয় হলো, ইতিহাসের এ সত্য বিষয়টি পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে জড়িত মুসলিম লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মী বুঝলেও মুজিব সে আন্দোলনে সাথে জড়িত হয়েও বুঝতে পারিনি। ইতিহাসের এ সহজ পাঠ নিতে মুজিব ব্যর্থ হয়েছে। কারণ ক্ষমতাদখলের স্বার্থান্বেষী রাজনীতি তাকে অন্ধ ও বিবেকহীন বানিয়েছিল। এ কারণেই তার রাজনীতি পরিণত হয়েছে বাঙালি মুসলিমদের জন্য নাশকতার রাজনীতিতে। নাশকতা ডেকে আনে তার নিজের জন্যও। হাসিনাও একই পথ ধরেছিল। তাদের রাজনীতি বাঙালি মুসলিম জীবনে যেমন বিপর্যয় বাড়িয়েছে, তেমনি বিপর্যয় বাড়িয়েছে তাদের নিজেদের জীবনেও।

মুসলিমকে আত্মসমর্পণ বাড়াতে হয় একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালাতে। প্রতিটি মুসলিমের জন্য এটি ঈমানী বাধ্যবাধকতা। অথচ মুজিব বেড়ে উঠেছে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে। তাই তার রাজনীতিতে যুদ্ধ ছিল ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে ছিল মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি। এবং তাতে অঙ্গীকার ছিল, দেশ থেকে শরিয়ত বিরোধী আইনের বিলুপ্তির। কিন্তু মুজিবের তৈরি বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে সেরূপ ঘোষণা স্থান দেয়নি। বরং তার যুদ্ধ ছিল মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। মুজিবের সে নীতি নিয়ে রাজনীতি করেছে তার কন্যা শেখ হাসিনা। হাসিনা তাই আলমদের যেমন কারাগারে তুলেছে তেমনি বহু ইসলামপন্থী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। পৌত্তলিকতা প্রতিষ্ঠা দিতে দেশ জুড়ে শত শত মূর্তিও গড়েছে। এভাবে মহান আল্লাহতায়ালার রহমতের বদলে আযাব ডেকে এনেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলিতে বিপর্যয়ের বড় কারণ, সে দেশগুলি অধিকৃত হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার শত্রুদের হাতে।

 

লড়াইয়ের বিকল্প নাই

শত্রুদের হামলা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে প্রতিটি মুসলিমের মনে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি আত্মসমর্পণ এবং তাঁর এজেন্ডার সাথে একাত্মতাকে প্রবলতর করতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে একাত্মতা মুসলিমকে যোদ্ধায় পরিণত করে। তখন তাঁর জীবনে লাগাতর লড়াই আসে। প্রতিটি জীবিত দেহকে কোটি কোটি জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিক্ষণ মোকাবেলা করে বাঁচতে হয়, তেমনি জীবিত জাতিকে বাঁচতে হয় শত্রুর প্রতিটি হামলার বিরুদ্ধে লড়াই করে। লড়াইয়ের বিকল্প নাই। লড়াই গড়ে দেহের ইম্যুউনিটি তথা প্রতিরোধের সামর্থ্য। তাই যে দেহে লড়াই নাই সে দেহে প্রতিরোধের সামর্থ্য থাকে না। নিষ্ক্রিয় দেহ মাত্রই দিন দিন নির্জীব হয়। এজন্যই মুসলিমগণ তাদের সমগ্র ইতিহাসে তখনই সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল, যখন তারা সবচেয়ে বেশী সংখ্যক যুদ্ধ করেছেন। শত্রুর অসংখ্য হামলা তাদের ঈমান ও মনবলকে আলো ধারালো করেছে। প্রবলতর করেছে তাদের প্রতিরোধের সামর্থ্যকে। নবী (সা:) ১০ বছর শাসন কার্য পরিচালনা করেছেন। সে ১০ বছরে নবীজী যতগুলি যুদ্ধ লড়েছেন, বাঙালি মুসলিমগণ ইসলামের জন্য ততগুলি যুদ্ধ বিগত হাজার বছরেও লড়েনি। কিন্তু তাতে কি তাদের শক্তি ও প্রতিষ্ঠা বেড়েছে? বেঁচেছে কি তাদের সম্পদ? মুসলিম জাতি যে কারণে ধ্বংস ও পরাজিত হয় সেটি হলো তাদর জিহাদে অনাগ্রহ। তখন শত্রু বিনা যুদ্ধে বা সামান্য যুদ্ধে বিজয়ী হয়। পলাশীর ময়দানে যেমন বিজয় পেয়েছিল ক্লাইভের ইংরেজ বাহিনী।

বাঙালি মুসলিম জীবনে জিহাদে আগ্রহ ও সামর্থ্য বৃদ্ধিই আজকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। এবং সেটি নামাজ-রোজার ন্যায় ফরজও। কারণ জিহাদের জন্য সদা প্রস্তুত থাকার হুকুমটি এসেছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। সেটি সূরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। মাহে রমজানের রোজার হুকুম এসেছে পবিত্র কুর’আনে মাত্র একবার। আর তাতেই রমজানের মাসব্যাপী রোজা ফরজ হয়ে গেছে। অথচ সূরা আনফালে জিহাদের জন্য সর্বসামর্থ্য নিয়ে প্রস্তুত থাকার যে নির্দেশ এলো -সে প্রস্তুতি ক’জনের? অথচ সেরূপ প্রস্তুতি নবীজী’র ছিল। প্রস্তুতি ছিল প্রত্যেক সাহাবীরও। প্রতিটি মুসলিমের গৃহ সেদিন সশস্ত্র ছিল। সে সাথে প্রত্যেক সাহাবীর সামরিক প্রশিক্ষণও ছিল।

ইসরাইলের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে সামরিক প্রশিক্ষণ এবং রয়েছে প্রতি পুরুষের তিন বছরের এবং প্রতিটি মহিলার দুই বছরের সামরিক বাহিনীতে কাজের অভিজ্ঞতা। সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে ইরান ও সুইজারল্যান্ডের প্রতিটি নাগরিকের। সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে প্রতিটি আফগান মুসলিমের। প্রায় প্রতিটি আফগান গৃহে রয়েছে যুদ্ধাস্ত্র। কিন্তু সে সামরিক প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি ক’জন বাঙালি মুসলিমের। যাদের জীবনে সে প্রস্তুতি নাই তারা তো বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে -যে হুকুমটি এসেছে সুরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে। বিদ্রোহ নিয়ে কেউ কি মুসলিম হতে পারে? এরূপ বিদ্রোহ কি পরাজয় ও আযাবকেই অনিবার্য করে না?

মুসলিম জীবনে মাত্র দুইটি অবস্থা। হয় সে বাঁচবে জিহাদের মাঝে, নতুবা সে বাঁচবে জিহাদের প্রস্তুতির মাঝে। গৌরব যুগের মুসলিমদের তো সেভাবেই বাঁচতে দেখা গেছে। অথচ তাদের সে সূন্নত আজকের মুসলিমদের মাঝে বেঁচে নাই। এরই পরিণতি হলো, মুসলিম বিশ্বের কোথাও বেঁচে নেই নবীজীর ইসলাম -যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, ছিল মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, ছিল শরিয়তী আইনের বিচার, ছিল প্যান-ইসলামী মুসলিম ভাতৃত্ব এবং ছিল দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জিহাদ। সে ইসলাম নিয়ে বাঁচতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বের  ১৫০ কোটির বেশী মুসলিম বাঁচছে পরাজয়, অপমান ও আত্মসমর্পণ নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *