বিবিধ ভাবনা (২১)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১.

কুকুর শুধু খাবার চায়, সেটি পেলে মনিবের ঘর রাত জেগে পাহারা দেয়। বাংলাদেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী, আমলাবাহিনী ও আদালত বাহিনীত্ রয়েছে বিপুল সংখ্যক কুকুর চরিত্রের মানুষ। সরকার তাদের বেতন দ্বিগুণ করে খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদানে তারা সরকারের পক্ষে ভোটডাকাতিঁও করে দিয়েছে। এবং এখনো পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। তারা ভূলে যায়, ভোটডাকাত শেখ হাসিনা নিজের পকেট থেকে তাদের বেতন দেয়না। বরং জনগণ তাদের বেতন জোগায় রাজস্ব দিয়ে। ফলে তাদের গাদ্দারীটা জনগণের সাথে।  

২.

অসভ্য ও ইতর মানুষের স্বভাব হলো সে গায়ে মলমূত্র নিয়ে চলাফেরা করে। এবং চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর অসভ্য জাতির পরিচয় হলো তারা দুর্নীতি নিয়ে চলা ফেরা করে ও বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির গন্ধ ছড়ায়। সম্প্রতি সে দুর্গন্ধ আল-জাজিরার কাছেও ধরা পড়েছে। সেটি তারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছ।

অসভ্যদের বড় পরিচয় হলো, তারা চোরডাকাত, ভোটডাকাত, খুনি, সন্ত্রাসী ও স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তকে মাথায় তোলে ও শাসক রূপে মেনে নেয়। তখন সরকার ও জনগণ -উভয়ে মিলে দুর্বৃত্তিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। বাংলাদেশ এমন রেকর্ড় অতীতে ৫ বার করেছে। সেটি দুর্নীতি বিশ্বে প্রথম হয়ে। কিন্তু এ নিয়ে কি বাঙালীর কোন অনুশোচনা আছে? যারা কদর্যতা নিয়ে বাঁচে, সেরূপ বাঁচাটাই তাদের কাছে অহংকারে পরিণত হয়। এমন এক অহংকার নিয়েই একাত্তরে যে ভয়ানক অপরাধীরা বিহারীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা করলো, বিহারী নারীদের ধর্ষণ করলো এবং তাদের ঘরবাড়ী-দোকান-পাঠকে জবরদখল করলো -তাদেরকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে চিত্রিত করা হয়।   

৩.

সভ্য জাতি কখনোই অসভ্য শাসককে সহ্য করে না। মহল্লায় নেকড়ে ঢুকলে যেমন তাড়া করে, শাসকের গদিতে কোন অসভ্য ব্যক্তি বসলেও তাড়া করে। তিনি বাংলাদেশে সে্টি হয়নি। তাই ভোট ডাকাত হাসিনা ১২ বছর বিনা বাধায় শাসন করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ভোটডাকাত বা বাকশালী মুজিবের ন্যায় কোন ফ্যসিস্টকে ইংরেজরা কি এক মুহুর্তের জন্যও শাসক রূপে মেনে নিত? কিন্তু বাংলাদেশীগণ মুজিবকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলে এবং হাসিনাকে বলে মাননীয় প্রধনমন্ত্রী।

সভ্য জনগণ ও অসভ্য শাসকের কখনোই ম্যাচিং হয়না; উভয়ের মাঝে লড়াই অনিবার্য হয়ে উঠে। সে লড়াইটি না থাকলে বুঝতে উভয়ের মান একই। তাই একটি জাতি কতটা সভ্য ও অসভ্য -সেটি বুঝার জন্য গ্রাম-গঞ্জে ঘরে ঘরে ঢুকে গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। চরিত্রর সে পরিচয়টি দেশের ক্ষমতাসীন শাসকের মাঝে পাওয়া যায়।

৪.

বেঈমানের বেঈমানী স্পষ্ট দেখা যায়। দেশের আদালতে শরিয়তের বিলুপ্তি ও শয়তানী শক্তির বিজয় দেখেও যে ব্যক্তি তার নিজের মেধা, অর্থ, বুদ্ধি এবং রক্ত আল্লাহর দ্বীনের বিজয় আনতে বিনিয়োগে করে না -পবিত্র কোর’আন তাকেই বেঈমান বলে। বেঈমানের সকল ভাবনা ও বিনিয়োগ শুধু নিজের সম্পদ ও আনন্দ বাড়াতে। এবং ঈমানদার তার মেধা, মেহনত, অর্থ, রক্ত ও সমগ্র সামর্থ্য ব্যয় করে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় ও দুর্বৃত্তদের নির্মূলে।                                                                                                                         ৫.

বাংলাদেশে অপরাধেরসকল পথ খোলা, কিন্তু ন্যায় বিচারের পথটি বন্ধ। বিচারের নামে শাস্তি দেয়া হয় এবং ফাঁসিতে চড়ানো হয় রাজনৈতিক বিরোধীদের। শেখ হাসিনা নিজেই ভোটডাকাত অবৈধ প্রধান মন্ত্রী। তার পাশে যারা তারা চোর। ডাকাত কি কখনো তার অধীনস্থ্য চোরদের বিচার করে? দেশে বিচার থাকলে সর্বপ্রথম বিচার হতো শেখ হাসিনার। ভোটডাকাতির অপরাধে তার স্থান হতো কারগারে, প্রধানমন্ত্রীর আসনে নয়।

৬.

সুস্থ্য দেহ নিয়ে বাঁচতে পুষ্টিকর পানাহার চাই। মানবতা ও ঈমান নিয়ে বেড়ে উঠার জন্য চাই পবিত্র কোর’আনের জ্ঞান। এ জ্ঞান মানব মনে আখেরাতের ভয় বাড়ায় -যা মানব মনে পুলিশের কাজ করে এবং অপরাধ থেকে দূরে রাখে। এ জ্ঞানের অভাবে সমাজে দুর্বৃত্তির জোয়ার আসে। দুর্নীতির সে জোয়ার পুলিশ, আইন ও আদালত দিয়ে রুখা যায় না। চরিত্রের পরিশুদ্ধিতে পবিত্র কোর’আনের জ্ঞানের বিকল্প নাই। চরিত্রের পরিশুদ্ধিতে কোর’আনী জ্ঞানের শক্তি বুঝা গেছে মুসলিমদের গৌরব যুগে।

৭.

বাংলাদেশ আজ গভীর সংকটে। হাসিনা গদি ছাড়তে রাজী নয়। নিরপেক্ষ নির্বাচনে গদি যাবে -এ ভয়ে জনগণকে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ভোটের অধিকার দিতে রাজী নয়। সে নিজে ভোটডাকাত এবং বসবাস আশে পাশে ডাকাতদের নিয়ে।

সভ্য দেশে ডাকাত দল করা কঠিন। কারণ সভ্য দেশে কঠিন হলো ডাকাত পাওয়া। কিন্তু বাংলাদেশে বিশাল ডাকাত দল গড়া যায় এবং সে ডাকাত দল নিয় ভোটডাকাতির মাধ্যমে সমগ্র দেশ ডাকাতি করে নেয়া যায়।

৮.

ইতিহাস পাঠ অতি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের জ্ঞান দেয় অতীতের অপরাধগুলো জানার সুযোগ এবং দেয় অপরাধীদের চেনার সামর্থ্য। অপরাধীদের চেনার সে কাজটি না হলে জনগণের স্মৃতিতে তারা সন্মান নিয়ে রূপে বেঁচে থাকে। দুর্বৃত্ত শাসনও তখন প্রশংসিত হয় এবং বার বার ফিরে আসে। তখন ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায় একাত্তরে বিহারীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মুজিবের গণতন্ত্র হত্যার ন্যায় ভয়ানক অপরাধগুলো। ইতিহাস পাঠের সে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বাংলাদেশে আদৌ হয়নি।

৯.

ভারতের কৃষকগণ ২ মাসের বেশী রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। অধীকার আদায় করতে হলে আন্দোলন ছাড়া উপায় নাই। সামরিক ক্যুর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে মায়ানমারের ছাত্র-ছাত্রীরা। কিন্তু আন্দোলন নাই বাংলাদেশে। বিরোধীদলগুলি ঘুমিয়ে আছে। তারা কি ভেবেছে, অন্যরা এসে দুর্বৃত্ত শাসনের আযাব থেকে মু্ক্তি দিবে?

আল জাজিরার উত্থাপিত অপরাধের তদন্ত দাবী করেছে জাতিসংঘ। কিন্তু সে অপরাধগুলি নিয়ে বিরোধী দলগুলির কোন বক্তব্য নাই। এ নিয়ে মিডিয়াতেও কোন আলোচনা নাই। বাংলাদ্শকে দুর্বৃত্ত শাসনের আযাব থেকে মুক্তি করার দায়িত্ব কি বিদেশীদর?

১০.

আল-জাজিরা দুর্বৃত্ত সরকারের মুখোশ খুলে দিয়েছে। এ অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার তুলে দিয়েছে। কিন্তু সে হাতিয়ার নিয়ে লড়াইয়ে জনগণ ও বিরোধী দলগুলির আগ্রহ আছে কি? তাছাড়া আল-জাজিরা জেনারেল আজিজ, শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ আনলো তা বাংলাদেশের আইনে গুরুতর অপরাধ। বাংলাদেশের মানুষ কি এঅপরাধীদের বিচার চাইবে না?

আল-জাজিরা একটি বিদেশী চ্যানেল হয়েও বাংলাদেশীদের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করেছে। এটি এক বিশাল কাজ। এ কাজটি করার দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশীদের। কিন্ত এত বড় ধাক্কার পরও তাদের ঘুম ভাঙ্গবে কী? গোলাম রূপে বাঁচার খরচ নাই; শুধু হুকুম মানলেই চলে। কিন্ত স্বাধীন ভাবে বাঁচার খরচ আছে। তখন জালেমের বিরুদ্ধে লড়তে হয় এবং জালেমকে হটাতে হয়। কিন্তু সে সভ্য কাজে বাঙালীর রুচি আছে কী?

১১.

ঈমানের দাবী করার সাথে সাথে ব্যক্তির আমলের পরীক্ষাও শুরু হয়ে যায়। তখন পরীক্ষা হয়, ঈমানের দাবীতে সে কতটা সত্যবাদী। মহান আল্লাহতায়ালা দেখেন, সে ব্যক্তির জান, মাল, মেধা ও সামর্থ্যের বিনিয়োগটি কি ইসলামকে বিজয়ী করায়, না পরাজিত করায়? যে দেশে তাঁর শরিয়তী আইন বিলুপ্ত এবং দেশের উপর অধিকৃতি শয়তানী পক্ষের –সে দেশ বসবাস করেও সে যদি নিষ্ক্রীয় থাকে তবে তার যে ঈমান আছে -তার প্রমাণ কোথায়? নিষ্ক্রীয়তা কখনোই ঈমানের পরিচয় নয়; সেটি নিজেই বেঈমানীর প্রমাণ। তাই নিষ্ক্রীয় ব্যক্তির জীবনে পরীক্ষা থাকে না। ০৬/০২/২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *