বিবিধ ভাবনা (৩৬)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on March 14, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. বাঙালীর চরিত্র
নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা বাইরে প্রচার করায় স্বাস্থ্য বাড়ে না। বরং ভাবতে হয়, অন্যকে বলতে হয় এবং ত্বরিৎ ডাক্তারের কাছে যেতে হয় -যদি রোগ দেখা দেয়। রোগকে অবহেলা করলে বা গোপন রাখলে ভয়ানক ক্ষতি হয়। তাতে যেমন চিকিৎসা হয় না, তেমনি রোগ বাড়ে ও মৃত্যু ঘটায়। অনেক সময় রোগ গোপন করার পিছনে থাকে নিজেকে সুস্থ্য রূপে জাহির করে গর্ব করার বাতিক। দেহকে সুস্থ্য রাখার জন্য জরুরি হলো শরীরের দিকে নিয়মিত নজর রাখা। অনিয়ম দেখা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
বিষয়টি তেমনি একটি জাতির ক্ষেত্রেও। মানব দেহের ন্যায় জাতির দেহেও অনেক রোগ-ব্যাধী দেখা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে সে রোগ-ব্যাধী নিয়ে তল্লাশীর কাজটিই হয়নি। বরং জাতীয় জীবনের রোগগুলিকে গোপন রাখার কাজটিই বেশী বেশী হয়েছে। দেশটিতে এমন লোকের অভাব নাই -যারা মনে করে বাঙালীরাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। অন্যরা ভাষার জন্য প্রাণ দেয়না, বাঙালীরা দেয় –তা নিয়ে কত গর্ব! অনেকে বলে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা শ্রেষ্ঠ বাঙালী। এবং অনেকে আবার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলে শেখ মুজিবকে। কিন্তু তাদের অপরাধগুলো কি কখনো খুঁতিয়ে দেখা হয়েছে? তাদের হাতে কত নিরপরাধ মানুষ খুন হয়েছে, কত মিথ্যাচার হয়েছে এবং কত দুর্নীতিত হয়েছে -সে হিসাব কি কেউ নিয়েছে? ইতিহাসের বইয়ে ফুলিয়ে ফাঁফিয়ে শুধু বিজয় গাঁথা লিখলে চলে না, ভূলভ্রান্তি ও ভয়ানক অপরাধের কথাগুলোও লিখতে হয়। নইলে ইতিহাস থেকে শেখার তেমন কিছু থাকে না। ফলে জাতীয় জীবনে পরিশুদ্ধিও আসে না।
বাংলাদেশীদের জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে ১৯৭১’য়ে। দেশে যখন পুলিশ, আদালত ও প্রশাসন কাজকর্ম বন্ধ করে দেয়, তখন জনগণের আসল রূপটি দেখা যায়। বাঘও খাঁচার মধ্যে শান্ত দেখায়, কিন্তু তার হিংস্র রূপটি দেখা যায় খাঁচা থেকে বের করলে। বাঙালীর আসল চরিত্রটি দেখা গিয়েছিল একাত্তরে –যখন তাদের অপরাধ কর্মে বাধা দেয়ার কেউ ছিল না। তাই যারা বাঙালীর আসল চরিত্র জানতে চায় -তাদের জন্য একাত্তরের ইতিহাস অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে সে ইতিহাস নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। সে কাজে কারো আগ্রহ আছে -সেটিও নজরে পড়ে না। বিষয়টি অবিকল ঘরের আবর্জনাকে কার্পেটের নীচে চাপা দেয়ার মত। বরং একাত্তরের সকল দোষ চাপানো হয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও অবাঙালীদের উপর।
১৯৭১’য়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশে অপরাধ রুখার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কেউ ছিল না। পুলিশ, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা তখন ভেঙ্গে পড়ে। তারা তখন দেশ জুড়ে অসহযোগে। দেশ তখন অপরাধীদের জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। সে সুযোগ থেকে ফায়দা নিতে দেখতে যারা শিক্ষিত ও ভদ্র দেখায় তারাও চোরডাকাত, খুনি ও ধর্ষকে পরিণত হয়। সে সময় সবচেয়ে অসহায় ও প্রতিরক্ষাহীন হয়ে পড়ে বিহারীরা। কেউ তাদের হত্যা করলে, ঘরবাড়ী ও দোকান লুটপাঠ করলে এবং তাদের মহিলাদের ধর্ষণ করলে –কেউ ছিল না রক্ষা দেয়ার। একাত্তরে বহু বাঙালী নিহত হয়েছে, অনেক বাঙালীর ঘরবাড়ী জ্বালানো হয়েছে এবং অনেক বাঙালী মহিলা ধর্ষিতাও হয়েছে। কিন্তু বিহারীগণ যেরূপ খুন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার তূলনা হয়না। একাত্তরে সবচেয়ে জঘন্য গণহত্যার শিকার হয়েছে তারাই। অথচ এখানে কি মিথ্যাচার কম হয়েছে? একাত্তরের ইতিহাস লেখা হয়েছে সে বীভৎসতার বিবরণ না দিয়েই।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ক্ষমতায় এসেছেন শেখ মুজিব। কিন্তু বিহারীদের ঘরবাড়ী ও দোকান-পাটের উপর যে ডাকাতী হলো -তার কোন বিচার তিনি করেননি। ডাকাতদের শাস্তি না দিয়ে ডাকাতী করা ঘরবাড়ীর মালিকানা দেয়া হয়েছে ডাকাতদের। মুজিবের পর ক্ষমতায় এসেছেন জেনারেল জিয়া। তিনিও অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে বরং ডাকাতদের হাতে বিহারীদের ঘরবাড়ীর মালিকানা দলিল তুলে দিয়েছেন। কোন সভ্য দেশে কি চোরডাকাতদের এভাবে পুরস্কৃত করা হয়? যার মধ্যে সামা্ন্য ঈমান আছে সে কি এমন কাজ করতে পারে? অথচ বাংলাদেশে সেটিই পরিণত হয়েছে সংস্কৃতিতে। ফলে জনগণ নিজেই আজ গুম, খুন ও ডাকাতির শিকার।
ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার বিবরণ দেয়া যাক। ১৯৭১’য়ের মার্চের প্রথম তারিখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের (পার্লামেন্টের) আসন্ন অধিবেশন মুলতবীর করার ঘোষণা দেন। ঐদিন ঢাকা স্টেডিয়ামে হচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের সাথে পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ। আমি তখন স্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকের গ্যালারীতে বসে খেলা দেখছিলাম। বিকেল তিনটার দিকে স্টেডিয়ামের পূর্বপাশের প্যান্ডেল কিছু যুবক আগুণ ধরিয়ে দেয়। খেলাওয়ারগণ দৌড়ে মাঠ ছাড়ে; আমরা দ্রুত বেড়িয়ে গেলাম। তখন জিন্নাহ এভেনিউ (আজকের মুজিব এভেনিউ)তে গ্যানীস নামে অবাঙালীদের একটি বড় দোকান ছিল। দেখলাম, বিপুল সংখ্যক মানুষ লুটপাটে লেগে গেছে। এদের কাউকে দেখে বস্তির লোক মনে হচ্ছিল না, প্যান্টসার্ট বড়া কেতুদুরস্তই দেখাচ্ছিল। শহরের নানা স্থানে সেদিন অবাঙালীদের দোকানগুলো বেছে বেছে লুট করে হয়েছে। তখন ঢাকার নবাবপুর ও ইসালামপুর রোডে বড় বড় দোকান ছিল অবাঙালীদের। সেগুলোও লুট হয়েছে। রাস্তায় স্লোগান দেয়া হচ্ছে “একটা একটা মাওরা (বিহারী/অবাঙালী) ধরো, সকাল বিকাল নাশতা করো।” সে এক সহিংস অবস্থা। সে সময়ে অনেকে ঢাকা ছেড়ে বিমানে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ী দেয়ার চেষ্টা করেছে, এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে তাদের পকেট হাতড়িয়ে লুট করা হয়েছে।
এতো গেলে রাজপথের কথা। দেশে যখন এরকম অবস্থা হয় তখন নেতাদের কিছু দায়দায়িত্ব থাকে। তখনো প্রধান দুই নেতা শেখ মুজিব ও ভাষানীসহ দেশের সকল রাজনৈতিক নেতাগণ মুক্ত। তখনও দৈনিক পত্র-পত্রিকা গুলো নিয়মিত ছাপা হচ্ছে। দেশে বহু বুদ্ধিজীবীও ছিল। তাদের চোখের সামনেই চলছে অবাঙালীদের উপর হিংস্র অপরাধ কর্ম। অথচ লক্ষণীয় বিষয় হলো, সে অপরাধ থামাতে না মুজিব কোন বিবৃতি দিয়েছেন, না ভাষানী। কেউ অসহায় বিহারীদের পাশে দাঁড়ায়নি। যেন তারা কিছুই দেখেননি। এ হলো নেতাদের বিবেকের মান। রাজনীতি যে কত বিবেকহীন মানুষের হাতে জিম্মি ছিল -এ হলো তার নমুনা। এ অপরাধ থামাতে পত্রিকাগুলোও কোন প্রতিবেদন ছাপেনি; কোন উপসম্পাদকীয় লেখেনি। অবাঙালী হওয়াটাই বিহারীদের জন্য যেন অপরাধ; তাদের উপর সকল প্রকার নৃশংসতাই যেন জায়েজ। অথচ তখনও পাকিস্তান আর্মি কোন অপারেশনে যায়নি। বিহারীরা কোথাও বাঙালীদের উপর অত্যাচারে নেমেছে -সেরূপ ঘটনাও তখন ঘটেনি। ২৫মার্চ পর্যন্ত বিহারীদের উপর সব নৃশংসতাই সংঘটিত হয়েছে বিনা উস্কানীতে।
তূলনামুলক একটি বিবরণ দেয়া যাক। কারণ, তুলনা ছাড়া মানবতায় নীচে নামাটি বুঝা যায় না। চিকিৎসক রূপে ১০ বছর ইরানে থাকার সুযোগ হয়েছিল আমার। ১৯৮০ সালে যখন ইরান পৌঁছি, দেশটিতে ১৯৭৯ সালে ঘটে যায় বিরাট বিপ্লব। ইরানের বাদশাহ মহম্মদ রেজা শাহ দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তারা হাজার হাজার সমর্থক, তাঁর সমর্থক রাস্তাখিজ পার্টির বহু নেতাকর্মী্ তখনোও ইরানে ছিল্। শাহপন্থীদের বহু দোকান-পাট ও বিলাসবহুল ঘরবাড়ীও ছিল। ছিল গোয়েন্দা বাহিনী সাভাক ও সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সদস্য। কিন্তু তাদের কারো বাড়ী লুটপাট হয়েছে, তাতে আগুণ দেয়া হয়েছে বা তাদের ঘরবাড়ী জবর দখল করা হয়েছে –এমনটি ঘটেনি। অথচ তাদের প্রতিরক্ষা দেয়ার জন্য থানায় কোন পুলিশ ছিল না, রাস্তায় সেনাবাহিনীও ছিল না। পুলিশ থানা ছেড়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু জনগণ এরপরও রাস্তায় চুরিডাকাতি ও ঘরবাড়ী দখলে নামেনি। রাস্তায় প্রতিটি দোকানপাট অক্ষত থেকেছে –একমাত্র মদের দোকানগুলি ছাড়া। অথচ একাত্তরে অবাঙালী পরিবারের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও শিশুদের রাস্তায় বসিয়ে তাদের ঘরবাড়ী দখলে নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান ও পরকালের ভয় আছে -সে কি কখনো এমন ডাকাতিতে নামতে পারে?
আজ দেশ আছে। এ দেশে অবাঙালী তেমন নাই। যারা আছে তারা আজ সহায়সম্পদহীন বস্তির বাসিন্দা। কিন্তু দুর্বৃত্তরা বেড়েছে বিপুল হারে। এসব দুর্বৃত্তদের চোখে বাঙালীর অর্থ ও বাঙালী নারী কি অবাঙালীর অর্থ ও অবাঙালী নারীর চেয়ে চেয়ে কম লোভনীয়? যে ডাকাতেরা ডাকাতি করেছে অবাঙালীদের উপর এবং ধর্ষণ করেছে অবাঙালী নারীদের -তারাই এখন ডাকাতী ও ধর্ষণে নেমেছে বাঙালীদের উপর। কারণ দুর্বৃত্তরা তো দুর্বৃ্ত্তির নেশা ছাড়তে পারে না। তাছাড়া দেশ তে তাদের হাতে অধিকৃত; ফলে তাদের সামর্থ্য বেড়েছে বিপুল ভাবে। পুলিশের কাজ হয়েছে তাদের প্রতিরক্ষা দেয়া। রোগ না সারালে তো রোগ বাড়বেই। তাই দ্রুত বেড়ে চলেছে ডাকাতের সংখ্যা ও ডাকাতদের নৃশংসতার মাত্রা। দেশ জুড়ে আজ গুম, খুন ও ধর্ষণের প্লাবন, ডাকাতি হয়েছে জনগণের ভোট এবং ডাকাতি হয়ে গেছে পুরা দেশ -এসবই হয়েছে বাঙালী ডাকাতদের হাতে। যে কোন সভ্য দেশে এরূপ ভয়ানক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সচেতন মানুষেরা ময়দানে নেমে আসে; কিন্তু বাংলাদেশে সে সবের কোন বালাই নাই। একাত্তরের ইতিহাস থেকে জাতি যদি শিক্ষা নিত, তবে দেশ আজ যেখানে পৌঁছেছে সেখানে কি পৌঁছতো? অন্য যে কোন বিজ্ঞানের চেয়ে ইতিহাস বিজ্ঞানের গুরুত্ব তাই অধিক। ইতিহাসের কাজ তো অতীতের ভূলগুলো তুলে ধরা এবং ভবিষ্যতের পথ চলায় সঠিক সিগনাল দেয়া। যারা সে শিক্ষা নেয় না, তাদের পা একই গর্তে বার বার পড়ে। বাকশালী অসভ্যতা থেকে তাই মুক্তি মিলছে না।
২.ছোট লোক ও বড় লোক
মানুষ কতটা ছোট বা বড় মাপের -সেটি দৈহিক মাপে বুঝা যায় না। সেটি বুঝা যায় তাদের চেতনার মানচিত্র দেখে। ছোট লোকেরা পশুর ন্যায় পেট নিয়ে ভাবে, দেশ নিয়ে ভাবে না। দেশ ডাকাতদের দখলে গেলেও এরা ডাকাত তাড়াতে রাস্তায় নামে না। এরা বরং ডাকাতদের চাটুকরে পরিণত হয়। ডাকাত যতই বড় মাপের হয়, এ চাটুকরগণ ততই বেশী পদলেহন দেয়। এবং সে চিত্রটা দেখা যায় বাংলাদেশে। তাই হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ভোটডাকাতও দেশের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেনা অফিসার, পুলিস অফিসার ও মিডিয়া কর্মীদের কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপে গণ্য হয়।
কোন ভদ্র লোকই চোরডাকাতকে কেউ ভাল মানুষ বলে না। তাদের পক্ষে কোন ভাল মানুষ কখনো সাক্ষীও দেয় না। চোরডাকাতদের পক্ষে সাক্ষী দেয় একমাত্র চোরডাকাতগণ। কিন্ত বাংলাদেশ যারা ভোটডাকাতির মাধ্যমে সমগ্র দেশ ডাকাতী করে নিল -তাদের পক্ষে সাক্ষী দিয়েছে এবং ভোটডাকাতিকে সুষ্ঠ নির্বাচন বলেছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা, আদালতের বিচারপতি ও সেনাপ্রধান। এ হলো তাদের বিবেকে মান। এমন দেশে সততা ও দেশপ্রেম বাঁচে না। এবং অসম্ভব হয় বিবেকবোধ, গণতন্ত্র এবং মানবিক অধিকার নিয়ে বাঁচা।
৩. ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব
জালেমে বিরুদ্ধে হক কথা বলা উত্তম জিহাদ। -(হাদীস)। ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা দেশবাসী, বিশ্ববাসী তথা মানবতার কল্যাণে অর্থদান, শ্রমদান, মেধাদান ও রক্তদানকে ফরজ করেছে। যারা একাজে নিহত হয় তাদেরকে শহীদ বলে। অপরদিকে হারাম করেছে দুর্বৃত্তের সমর্থক ও সাহায্যকারী হওয়াকে। মানব কল্যাণে নিজ সামর্থ্যের এমন বিনিয়োগ হলো পবিত্র জিহাদ। ইসলাম যে শান্তি ও মানব কল্যাণের ধর্ম -সেটি তো এভাবেই প্রমাণিত হয়। জিহাদ হলো দুর্বৃত্ত শক্তির দখলদারী মুক্ত করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার খোদায়ী প্রজেক্ট। তাই যে দেশে জিহাদ নাই -সেদেশে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা নাই। সেদেশে চেপে বসে দুর্বৃত্তদের শাসন।
দুর্বৃত্তগণ ইসলামের মিশনকে শুধু নামায,রোযা, হজ্জ ও যাকাতের মধ্যে সীমিত রাখতে চায়। এরা জিহাদকে বলে সন্ত্রাস। অথচ জিহাদ নিষিদ্ধ করার অর্থ হলো, অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় ইসলামের যে পবিত্র এজেন্ডা -সেটিকে পন্ড করে দেয়া। লক্ষ্য এখানে শয়তানী প্রজেক্টকে বিজয়ী করা।
৪. সন্ত্রাসী সরকার ও জাতিসংঘের দায়ভার
খবরে প্রকাশ: বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের কাছ সন্ত্রাস দমনে উন্নত প্রযুক্তি সাহায্য চেয়েছে। অথচ দেশে সরকার নিজেই হলো সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। তাদের সন্ত্রাসের শিকার দেশের জনগণ। মানুষ গুম, খুন, ধর্ষিতা এবং নির্যাতিত হচ্ছে সরকারী সন্ত্রাসীদের হাতে। সে সন্ত্রাসে হাতিয়ার রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী, আদালত বাহিনী ও সরকারী দলের ক্যাডার বাহিনী। নতুন প্রযুক্তি হাতে পেলে সন্ত্রাসে সরকারের সামর্থ্য বাড়বে; এবং সেটি ব্যবহৃত হবে বিরোধী দল দমনে। জাতিসংঘের উচিত জনগণের পাশে দাঁড়ানো। সামর্থ্য থাকলে তাদের উচিত জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি থেকে প্রটেকশন দেয়া এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। দেশ একমাত্র তখনই সন্ত্রাস মুক্ত হবে।
৫. অনৈক্যের নাশকতা
আল্লাহ মুসলিমদের একতা চান। শয়তান চায় অনৈক্য। মুসলিমগণ শয়তানের অনুসরণ করছে, তাই তারা ৫৭টি দেশে বিভক্ত। শয়তান কাফেরদের একতা চায়। তাই ভারতের ১২০ কোটি হিন্দু একতাবদ্ধ। স্পেনে মুসলিমদের ৭ শত বছরের শাসন বাঁচেনি। কারণ, তারা ছিল নানা দলে বিভক্ত। পুত্র পিতার বিরুদ্ধে এবং ভাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। অপরদিকে খৃষ্টানগণ ছিল একতবদ্ধ। ফলে মুসলিমদের বিপুল সম্পদ ও অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও নির্মূল হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা ঐক্যকে ফরজ করেছেন এবং বিভক্তিকে হারাম করেছেন।
কিন্তু মুসলিমগণ মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের প্রতি ভ্রক্ষেপ করিনি; বরং তারা বেছে নিয়েছে হারাম পথকে। তারা বেছে নিয়েছে পরাজয় ও নির্মূলের পথ। নামায-রোযা, হজ্জ-যাকাত ও দোয়া-দরুদ কি নির্মূল হওয়া থেকে মুক্তি দেয়? অতীতে মুক্তি দেয়নি; ভবিষ্যতেও দিবে না। কারণ, এগুলো তো ঐক্যের বিকল্প নয়। অনৈক্য যে আযাব আনে -সেটি তো পবিত্র কোর’আনের কথা। এবং সে আযাব আসে শত্রুশক্তির হাতে পরাজয় রূপে। অতীতে সেটি বার বার হয়েছে। কিন্তু সে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ায় আগ্রহ কই?
৬. ঈমানদারীর ও বেঈমানীর লক্ষণ
ঈমানদারী ও বেঈমানী সুস্পষ্ট দেখা যায়। ঈমানদারীর লক্ষণ: চেতনায় থাকে জাহান্নামে আগুণ থেকে বাঁচার ভাবনা। থাকে মৃত্যুর জন্য সদা প্রস্তুতি। কারণ, মৃত্য যখন তখন বিনা নোটিশে হাজির হয়। ফলে ঈমানদারের জীবনে থাকে নেক আমলের সার্বক্ষণিক তাড়াহুড়া। বেঈমানীর লক্ষণ: ভাবনাশূণ্যতা মৃত্যু নিয়ে। তার সকল তাড়াহুড়া পেশাদারী সাফল্য, সন্তানদের প্রতিষ্ঠা ও সম্পদের বৃদ্ধি নিয়ে।
ঈমানদারীর প্রকাশ ইবাদত, ঐক্য, ইসলামী রাষ্ট্র, জিহাদ ও শরিয়ত পালন নিয়ে বাঁচায়। এবং বেঈমানীর প্রকাশ সেক্যুলার রাজনীতি, বিভক্ত ভূগোল, কুফরী আইন, পতিতালয়, সূদী ব্যাংক, মদ,জুয়া ইত্যাদি হারাম কাজ নিয়ে বাঁচায়। এ পথ জাহান্নামের। কিন্তু এরূপ বেঈমানী থেকে বাঁচার ভাবনা ক’জনের?
৭. নবীজী (সা:)’র রাজনৈতিক সূন্নত
নবীজী (সা:) নিজে রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে রাজনীতিতে নিষ্ক্রীয় বা নিরপেক্ষ থাকার প্রশ্নই উঠেনা। তিনি ছিলেন মুসলিম সেনাবাহিনীর সেনাপতি। দূত পাঠিয়েছেন নানা দেশে। প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন শরিয়ত। যারা নিজেদের নবীজী (সা:)’র উম্মত মনে করে তাদের জীবনে নবীজী (সা:)’র সে রাজনীতি কই? যেসব আলেমগণ নবীজী (সা:)’র সূন্নত নিয়ে বড় বড় ওয়াজ করেন তাদের জীবনে নবীজী (সা:)’র সে গুরুত্পূর্ণ সে সূন্নত কই? অথচ ইসলামকে বিজয়ী করার একমাত্র পথ হলো নবীজী (সা:)’র এ সূন্নত। যাদের জীবনে এ সূন্নত নাই তারা পরাজয় বাড়ায় ইসলামের এবং বিজয়ী করে শয়তানী পক্ষকে। ১৪/০৩/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018