বিবিধ ভাবনা ৬৬
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on July 15, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. মহান নবীজী (সা)’র নালিশ
পবিত্র কুর’আনের সুরা ফুরকানে মহান আল্লাহতায়ালা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মানব জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। সেটি নবীজী (সা:) পক্ষ থেকে উত্থাপিত একটি অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে। নবীজী (সা:) তাঁর প্রভুর দরবারে নালিশ তুলেছেন তাঁর কাউমের অপরাধী লোকদের বিরুদ্ধে। তাদের অপরাধ, তারা কুর’আনকে পরিতাজ্য মনে করে। এবং অন্যদেরও পরিত্যাগ করতে বলে। মহান আল্লাহতায়ালা নবীজী (সা:)’র সে বয়ানটি তুলে ধরেছেন এভাবে: “এবং রাসূল বললেন, “হে আমার রব! আমার কাউমের লোকেরা তো এই কুর’আনকে পরিত্যাজ্য মনে করে।” -(সুরা ফুরকান, আয়াত ৩০)। নবীজী (সা:)’র অভিযোগের জবাবে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “এই ভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছিলাম সমাজের অপরাধীদেরকে। আপনার পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী রূপে আপনার রবই যথেষ্ট।” –(সুরা ফুর’কান, আয়াত ৩১)।
মহান আল্লাহতায়ালার বয়ান থেকে বুঝা যায় সত্যবানীর প্রচার কোথায় শুরু হলে তার বিরোধীতা হবেই। প্রতি সমাজেই কিছু অপরাধী লোক থাকে। মক্কার কাফেরদের মাঝেও ছিল। তারা কুর’আনের বানীকে অবিশ্বাস করতো এবং তা নিয়ে হাসিতামাশা করতো। তারা সে বানীকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে চাইতো। নবীদের এবং নবীর অনুসারীদের সে বিরোধীতা মোকাবিলা করেই সামনে এগুতে হয়। তবে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অভয় বানী শোনানো হয়েছে এবং জানানো হয়েছে সাহায্যের কথা।
প্রতিটি মুসলিমকেই বুঝতে হবে পবিত্র কুর’আনের অপরিসীম গুরুত্বের কথা। ইসলামের মূল শক্তি হলো পবিত্র কুর’আন। মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান হলো এই কুর’আন। এই পবিত্র গ্রন্থ্যই হলো মহান আল্লাহতায়ালার সাথে বান্দার একমাত্র যোগসূত্র। যে কুর’আনকে বুঝলো, সেই মহান আল্লাহতায়ালার কুদরতকে বুঝলে। উন্নত মানুষ রূপে বেড়ে উঠা ও উচ্চতর সভ্যতার নির্মাণে একমাত্র রোডম্যাপ হলো এই পবিত্র কুর’আন। মুসলিমগণ যে তাদের গৌরব কালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল তার মূলে ছিল এই কুর’আনী রোডম্যাপ।
অন্য কোন কিছুই অনন্ত-অসীম কালের জান্নাতের সন্ধান দেয় না। পথও দেখায় নায়। পথ দেখায় একমাত্র পবিত্র কুর’আন। জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর ন্যায় মানব জাতির সবচেয়ে বড় কল্যাণটি করে এই পবিত্র কুর’আন। এরূপ কল্যাণ-কর্মটি কি হাজার কোটি টাকা দানেও সম্ভব? অথচ মানবের ঘরে ঘরে সে কল্যাণকর্মটিই পৌছে দেয়াই ছিল মহান নবীজী (সা:)’র মূল মিশন। কুর’আনের মাধ্যমে তিনি যেমন নিজে জান্নাতের পথ পেয়েছেন, তেমনি অন্যদেরও সে পথটি দেখানোর কাজকে নিজ জীবনের আমৃত্যু মিশন পরিণত করেছিলেন। এটিই ছিল নবী (সা:)’র জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ম। এটিই নবীজী (সা:)’র শ্রেষ্ঠ সূন্নত। এবং যারাই পবিত্র কুর’আনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তারাই হলো অপরাধী।
যেখানে কুর’আন নাই সেখানে সিরাতুল মুস্তাকীমও নাই। তখন সে জনপদে অনিবার্য হয় জাহান্নামের পথে চলা। শয়তান তো সেটিই চায়। সে কাজে শয়তান একা নয়, তার সাথে রয়েছে সমাজের অসংখ্য অপরাধী মানুষ। এরাও মানবরূপী শয়তান। এসব অপরাধীদের সবচেয় বড় অপরাধটি স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, মানুষ খুন, চুরিডাকাতি, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস নয়, বরং সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো কুর’আনের পথ থেকে তথা জান্নাতের পথ থেকে মানুষদের দূরে রাখা। সে লক্ষ্যে তারা যেমন স্কুল-কলেজে কুর’আন শিক্ষাকে বিলুপ্ত করে, তেমনি মাঠে-ময়দানে কুর’আনের তাফসিরের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে। এবং প্রসিদ্ধ তাফসিরকারকদের কারারুদ্ধ করে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা তো সেটিই করেছে। এর পূর্বে তার পিতা শেখ মুজিবও একই কাজ করেছিল। তাদের অভিযোগ, কুর’আন পড়লেই মানুষ রাজাকার হয়। এবং আওয়ামী লীগের সেক্যুলারিজম ও জাতীয়তাবাদী নীতিকে ঘৃনা করে। তাই তারা মাদ্রাসাগুলিকে রাজাকারের ঘাঁটি বলে। এরা শরিয়তী আইনকে কাদিম যুগের আইন বলে অবজ্ঞা করে। মহান নবীজী (সা:) তাঁর আমলের এরূপ অপরাধীদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে নালিশ তুলেছেন। অথচ এমন অপরাধীদের সংখ্যা বাংলাদেশে বিপুল। দেশটি মূলত তাদেরই দখলে।
কুর’আন থেকে দূরে রাখার শয়তানী কৌশলগুলি বহুবিধ। নবীজী (সা)’র আমলে কাফেরদের কৌশল ছিল, কুর’আনের বানী যাতে মানুষের কানে না পৌছে তার ব্যবস্থা নেয়া। সে লক্ষ্যে কুর’আনের তেলাওয়াত শুনলেই তারা জোরেশোরে শোরগোল শুরু করতো। পবিত্র কুর’আনে কাফেরদের সে কৌশলটি নিয়ে বলা হয়েছে, “কাফেরগণ (তাদের সাথীদের) বলে, তোমরা এই কুর’আন শ্রবন করো না এবং কোথাও এর তেলাওয়াত হলে শোরগোল করো -যাতে তোমরা বিজয়ী হতে পার।” –(সুরা ফুস্সিলাত, আয়াত ২৬)।
পৃথিবীর সর্বত্রই আধুনিক শয়তানী গোষ্ঠির একই রূপ স্ট্রাটেজী। তাদের মূল লক্ষ্য, পবিত্র কুর’আন থেকে মানুষদের দূরে থাকা। সে লক্ষ্যে শয়তানের কৌশলগুলি বিবিধ। প্রথম কৌশলটি হলো: মানুষ যাতে কুর’আন পড়ার সামর্থ্য অর্জন না করতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলিতে কুর’আনের ভাষা আরবী শেখান হয় না। অথচ কুর’আন শিক্ষা প্রতিটি নরনারীর উপর ফরজে আইন। ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ, হিসাববিদ, উকিল বা অন্য কোন পেশাদারী হওয়া কারো উপরই ফরজ নয়; এগুলি জীবিকা বা জনসেবার মাধ্যম মাত্র। জান্নাতের পথ চেনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এ জীবনে আর কি হতে পারে? সঠিক পথ চেনার পরই সে পথের উন্নত বাহন নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
শয়তানের দ্বিতীয় কৌশলটি হলো: কুর’আন শিক্ষাকে শুধু তেলাওয়াতের মাঝে সীমিত রাখা। এবং নিশ্চিত করা, যাতে মানুষ কুর’আন বার বার পড়েও তার অর্থ বুঝতে না পারে। বিশ্বের আর কোন কিতাবের সাথে এরূপ আচরণ করা হয়না। পাঠের সাথে সেটি বুঝাই হলো সভ্য মানুষের রীতি। তেমন একটি অদ্ভুত কাজকে জনপ্রিয় করতে না বুঝে কুর’আন পড়াকে মোল্লা-মৌলভীদের পক্ষ থেকে ছওয়াবের কাজ রূপে প্রচার করা হয়। শয়তানের তৃতীয় কৌশলটি হলো: কুর’আন বুঝলেও সেগুলির উপর যেন আমল না হয়। শয়তান এ শেষাক্ত লক্ষ্যেও পুরাপুরি সফল হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ন্যায় দেশে বহু লক্ষ মানুষ আছে যারা কুর’আন বুঝে কিন্তু তার উপর আমল করে না।
অথচ পবিত্র কুর’আনের সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে অতি সহজ সরল ভাষায় বলা হয়েছে যারা কুর’আনে নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই কাফের, তারাই জালেম এবং তারাই ফাসেক। এর অর্থ দাঁড়ায়, শরিয়ত আইন ছাড়া দেশের আদালত চালানো শত ভাগ হারাম। অথচ বাংলাদেশের আদালতে সেটিই হচ্ছে। এরূপ কাজ কাফের, জালেম ও ফাসেকে পরিণত করে। একথা মাদ্রাসার সব শিক্ষক এবং মসজিদের সব ইমামই জানে। কিন্তু তারা বুঝেসুঝেও পরিত্যাগ করেছে কুর’আনের বিধানকে। এবং জিহাদে নামে না শরিয়তের প্রতিষ্ঠায়। অথচ ইউরোপীয় কাফেরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্বে শরিয়তই ছিল বাংলাসহ সকল মুসলিম দেশের আদালতের একমাত্র আইন।
এর অর্থ কি দাঁড়ায়? মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে নবীজী (সা:) তৎকালীন মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে কুর’আন পরিত্যাগের যে নালিশ তুলেছিলেন সে অপরাধের জড়িত তো আজকের মুসলিমগণও। পার্থক্য এটুকু যে, কাফেরগণ কুর’আন না পড়ে পরিত্যাজ্য গণ্য করতো। কিন্তু আজকের মুসলিমগণ কুর’আন পড়েও তার বিধানকে পরিত্যাজ্য মনে করে।
২. হারাম নীতির বিজয়
ইসলাম শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতের বিধান দেয় না। বিধান দেয় দেশ শাসন, আইন-আদালত ও শিক্ষা-সংস্কৃতিরও। মুসলিমকে মেনে চলতে হয় প্রতিটি বিধানকেই। সে বিধানের বিরুদ্ধে কারো কোন রূপ বিদ্রোহের অধিকার নাই। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া যে কোন বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ব্যক্তিকে কাফেরে পরিণত করে। এবং প্রতিটি বিদ্রোহই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একটি মাত্র হুকুম অমান্য করায় ইবলিস অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হয়। অথচ আজকের মুসলিমদের পদে পদে অবাধ্যতা।
রাজনীতিতে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধানটি হলো, রাজত্বের অধিকার কোন রাজা, প্রধান মন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের নাই। সে ক্ষমতা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর শাসন পরিচালনা করেন নিজ খলিফাদের মাধ্যমে। তার শাসনে কোন রাজা নাই, সবাই প্রজা। আদালত চলে তাঁর আইনের উপর। পবিত্র কুর’আনের পরিভাষায় মহান আল্লাহতায়ালা হলেন “মালিকুল মুলক”। আইন প্রণয়নের অধিকারও একমাত্র তাঁরই। ইসলামে সে আইনকে বলা হয় শরিয়ত। যেসব শাসক, পার্লামেন্ট বা জনগণ নিজেদেরকে সার্বভৌম এবং আইন প্রণেতা রূপে ঘোষণা দেয় -তারা মূলত যুদ্ধ ঘোষণা করে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে। তাদের অপরাধ তারা মহান আল্লাহতায়ালাকে শাসকের পবিত্র আসন থেকেই হটিয়ে দেয়। এরাই সমাজের ফিরাউন। মুসলিমদের বাঁচতে হয় এসব ফিরাউনে বিরুদ্ধে পবিত্র জিহাদ নিয়ে। একাজে তাঁরাই মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক।
রাষ্ট্রগঠন মুসলিম ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। মুসলিম ইতিহাসে প্রথম রাষ্ট্র গঠন করে খোদ মহান নবীজী (সা:)। এর আগে ছিলেন হযরত দাউদ (আঃ) ও হযরত সুলাইমান (আঃ)। নবীজী (সা:) রাষ্ট্রনায়কের আসনে ছিলেন ১০ বছর। তাঁর পর সে আসনে বসেন হযরত আবু বকর (রা:), হযরত উমর (রা:), হযরত উসমান (রা:) এবং হযরত আলী (রা:)। তাদের পরে আসেন উমাউয়া, আব্বাসীয় ও উসমানিয়া শাসকগণ। তারা পরিচিত ছিলেন খলিফা রূপে, রাজা বা সম্রাট রূপে নয়। তখনও পৃথিবীতে বহু দেশ ছিল। সেসব দেশের শাসকদের বলা হতো রাজা। বাকি সবাই ছিল প্রজা। রাজারা ছিল সার্বভৌম। আইন তৈরী হতো রাজার ইচ্ছা অনুযায়ী। রাজ হতো বিচার ও আইনের উর্দ্ধে। যাকে ইচ্ছা তাকে রাজা ফাঁসি দিতে পারতো। এবং যাকে ইচ্ছা মাফ করে দিত।
ইসলাম রাজা ও রাজত্বের ধারণাই পাল্টে দেয়। রাজা কেবল মহাপ্রভু মহান আল্লাহতায়ালা। আইন দেয়ার অধিকারও একমাত্র তাঁরই। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে আইন দেয়া হয়েছে পবিত্র কুর’আনে। শাসন ক্ষমতায় যে ব্যক্তি বসে সে কেবল তাঁর খলিফা তথা প্রতিনিধি, সার্বভৌম শাসক নয়। ইসলাম তাই রাজনীতির অঙ্গণে যোগ করে নতুন পরিভাষা এবং সেটি হলো “খলিফা”। কোন ব্যক্তি বা পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে সার্বভৌম হওয়ার দাবী করা তাই শতভাগ হারাম। তেমনি শরিয়ত আইনের বদলে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব নিজ হাতে নেয়াও হারাম। রাজনীতির অঙ্গণে এই হলো ইসলামের মৌল নীতি।
বিস্ময়ের বিষয় হলো বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশগুলিতে হারাম রীতিই বিজয়ী হয়েছে। এবং বিলুপ্ত হয়েছে ইসলামী বিধান। মুসলিম জনগণের অপরাধ হলো তারা এই হারাম রাজনীতিকেই মেনে নিয়েছে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, মহান আল্লাহতায়ালার যে শাসন ও তাঁর শরিয়তী বিধানের উপর শয়তানী শক্তির যে ডাকাতি হলো মুসলিমদের মাঝে সেটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেয়ার কোন ভাবনাই নাই। অথচ মুসলিম তো সেই -যে বাঁচে মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার দায়বদ্ধতা নিয়ে। একাজের জন্যই সে তাঁর সৈনিক। কথা হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনেরই যদি বিলুপ্তি ঘটে তবে শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে কি পরকালে মুক্তি মিলবে? মুসলিমদের গৌরবকালে মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে মুজাহিদ পয়দা হয়েছে। কিন্তু কোথায় আজ সে মুজাহিদ?
৩. ক্ষুধা বিলুপ্তির বিপদ
ক্ষুধা না থাকলে রোগীকে খাওয়ানো যায় না। গুরুতর ব্যাধীর এটিই হলো বড় লক্ষণ। ঔষধ দিয়ে খাদ্যের কাজ হয়। সেজন্য ক্ষুধা ও ক্ষুধা মেটাতে পানাহার চাই। সেটি না হলে মৃত্যু দ্রুত ঘনিয়ে আসে। বাংলাদেশীদের সমস্যা হলো তাদের লোপ পেয়েছে স্বাধীনতা, মানবিক অধিকার ও ইজ্জত নিয়ে বাঁচার ক্ষুধা। ফলে মারা গেছে গণতন্ত্র। ফলে দেশ চোরডাকাত, ভোটডাকাত, খুনি ও সন্ত্রাসীদের দখলে গেলেও তারা তা নিয়ে ভাবে না। চোরডাকাত তাড়াতে তারা রাস্তায় নামে না। তাই দেশের ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের জন্য শুধু ভোটচোর হাসিনা দায়ী নয়, দায়ী জনগণও।
ইজ্জত নিয়ে বাঁচার একটি খরচ আছে। যে খরচে মেটাতে সভ্য মানুষেরা যুদ্ধে নামে এবং প্রাণের কুর’বানী দেয়। ইসলাম এমন যুদ্ধকে জিহাদের মর্যাদা দেয়। ফলে এ যুদ্ধ একটি পবিত্র ইবাদত। কিন্তু বাংলাদেশে মানুষে সে পবিত্র কাজে রুচি নাই। নিজের ও পরিবারের পানাহার ও আয়-উপার্জন ছাড়া কোন উচ্চতর কাজে তাদের রুচি নাই। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যুর কারণ জনগণের এ রুচিহীনতা। গণতন্ত্রের শত্রুরা সেটি জানে। যে গ্রামে জনগণ ডাকাত তাড়াতে রাস্তায় নামে না, সে গ্রামে বার বার ডাকাত পড়ে। বাংলাদেশের ভোটডাকাগণও জানে, বার বার ভোটডাকাতি করলেও জনগণ কখনোই রাস্তায় নামবে না। তাই তারা ভোটডাকাতিতে নামে। যে দেশের জনগণ গণতন্ত্র নিয়ে ভাবে সে দেশে কি এরূপ ভোটডাকাতির ঘটনা ঘটে?
৪. নেয়াতেই আগ্রহ, দেয়াতে নয়
বাংলাদেশের রাজস্ব ভান্ডার থেকে সবাই নেয়ার ধান্দায়। কেউ বা নিচ্ছে বৈধ ভাবে, কেউবা অবৈধ ভাবে। কেউবা নেমেছে রাষ্ট্রীয় ভান্ডারের উপর চুরি-ডাকাতি। কিন্তু ক’জন দিতে আগ্রহী? আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে ধনি দেশ। কারণ, সে দেশে রয়েছে বিল গেটসের মত অসংখ্য সৃষ্টিশীল মানুষ যারা দেশকে দিয়েছে শত শত বিলিয়ন ডলার।
মুসলিমগণ তো তখনই বিজয় ও গৌরব পেয়েছে যখন জনগণের মাঝে নেয়ার চেয়ে দেয়ার আগ্রহটি ছিল প্রবল। রাষ্ট্রকে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা দেয়ার কাজে সাহাবাগণ দিয়েছেন তাদের অর্থ, শ্রম ও রক্ত। তখন মুসলিম সেনাদলে কোন বেতন ভোগী সৈনিক ছিল না। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্য শ্রম দেয়া, মেধা দেয়া এবং অর্থ ও রক্ত দেয়াকে মুসলিমগণ নিজেদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করতো। সে কাজকে তারা পবিত্র জিহাদ গণ্য করতো। ফলে নিজের ঘোড়া, নিজের তলোয়ার, নিজের ঘরের খাবার নিয়ে মুসলিমগণ জিহাদের ময়দানে হাজির হতো। তারা সে বিনিয়োগের প্রতিদান আশা করতো আখেরাতে। যত বিনিয়োগ ততো প্রতিদান –এ বিশ্বাসে তাদের মাঝে বিনিয়োগে কোন কার্পণ্য ঘটতো না। নিহত হলো শহীদের মর্যাদা এবং বিনা হিসাবে জান্নাত সেটি তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতো। এমন একটি আত্মত্যাগী চেতনাই তো দেশকে সমৃদ্ধ ও বিজয়ী করে। তবে সে চেতনা হাওয়ায় গড়ে উঠে না, সে জন্য ঈমান লাগে। আর ঈমান গড়তে কুর’আনের জ্ঞান লাগে। কিন্তু বাংলাদেশে এসবেরই প্রচণ্ড অভাব। ফলে অসম্ভব হচ্ছে সভ্য ভাবে বেড়ে উঠা।
৫.ঈমানদারের বাঁচা ও বেঈমানের বাঁচা
ঈমানদার ও বেঈমানের মাঝে পার্থক্যটি শুধু ঈমান ও ইবাদতে নয়। বরং সেটি বাঁচার রুচিতে। এ জীবনে প্রতি দিনের লাগাতর লড়াইটি নিছক নিজের বা পরিবারের সদস্যদের আনন্দঘন বাঁচা নিয়ে হলে তাতে ঈমানের প্রকাশ ঘটে না। লড়াইটি হতে হয় নিজ দেশের প্রতিরক্ষার পাশাপাশি ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও বিজয় বাড়াতে। একমাত্র তখনই ঈমানদারের বাঁচাটি হয় মহান আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে বাঁচা। সাহাবাগণ এভাবে বাঁচতে গিয়ে দলে দলে শহীদ হয়েছেন। এরাই ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। মহান আল্লাহতায়ালাও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের মাঝে গর্ব করেন। কাফের বা সেক্যুলারিস্টদের বাঁচা থেকে মুসলিমের বাঁচার মূল পার্থক্যটি এখানেই।
দুনিয়ার স্বার্থপরতা থেকে বাঁচতে হলে পরকালের স্বার্থে প্রচণ্ড মনযোগী হতে হয়। জান্নাত লাভের প্রচণ্ড ভাবনাই দুনিয়ার বুকে মানুষকে স্বার্থহীন ফেরেশতায় পরিণত করে। তখন সে জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত এবং প্রতিটি সামর্থ্য ব্যয় করে নেক আমল বাড়াতে। নেক আমল শুধু ইবাদত-বন্দেগী নয়, প্রতিটি জনকল্যাণমূলক কাজই হলো নেক আমল। পথের একটি কাঁটা তুলে ফেলাও নেক কর্ম। এমন মানুষের জীবনে চুরি-ডাকাতি, ধোকাবাজী ও দুর্নীতির ভাবনা আসে না। সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা বাড়লে পুলিশ ও কোর্ট-কাচারির প্রয়োজন কমে যায়। জনগণ তখন নিজেরাই পুলিশে পরিণত হয়। চোরডাকাত, ভোটডাকাত, খুনি, ব্যাভিচারি ও সন্ত্রাসী ধরতে তখন পুলিশ লাগে না, তাদের ধরতে জনগণ নিজেরাই রাস্তায় নামে। তখন দেশ ইতিহাসে গড়ে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে। সভ্যতর সমাজ নির্মাণের এটাই তো রোডম্যাপ। এ রোডম্যাপ অনুসরণ করেই মুসলিমগণ অতীতে বিজয়ের পর বিজয় ও গৌরব এনেছিলেন। নির্মাণ করেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। কিন্তু বাংলাদেশে সে রোডম্যাপের অনুসারি কই? ১৪/০৭/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018