বিবিধ ভাবনা ৬৮
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on July 24, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- 1 Comment.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. শুধু কিছু ভাল কাজ দিয়ে কি সভ্য দেশ গড়া যায়?
শুধু ভাল কাজ করলেই দেশ সভ্য হয় না। শান্তিও আসে না। ভাল কাজের সাথে দুর্বৃত্ত নির্মূলেরও লাগাতর লড়াই থাকতে হয়। পবিত্র কুর’আন তাই শুধু আমারু বিল মারুফ (ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা)’র কথা বলে না, নেহী আনিল মুনকার (অন্যায়ের নির্মূল)’র কথাও বলে। এ দুটি কাজ একত্রে চালাতে হয়। ইসলামে অন্যায় তথা দুর্বৃত্তদের নির্মূলের কাজটিই হলো পবিত্র জিহাদ। যে দেশে জিহাদ নাই সে দেশ দুর্বৃত্তদের দখলে যায়। যেমন শুধু বিজ ছিটালেই না, আগাছা নির্মূলের কাজটি নিয়মিত না হলে সেখানে গাছ বাঁচে না। তেমনি দেশ দুর্বৃত্তদের দখলে গেলে সুনীতি নিয়ে সভ্য মানুষের বাঁচাটি অসম্ভব হয়। এমন একটি দেশের উদাহরণ হলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পুরাপুরি দখলে নিয়েছে চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত এবং গুম-খুন-সন্ত্রাসের নৃশংস হোতারা। তাদের নির্মূলের কোন আয়োজন নাই। বন-জঙ্গলে যেমন বিনা বাধায় ঝোপ-ঝাড়-আগাছা বেড়ে উঠে, বাংলাদেশে তেমনি বিনা বাধায় দুর্বৃত্তগণ বেড়ে উঠে। যারা ইসলামকে ভাল বাসে তারা ভেবে নিয়েছে, মসজিদ-মাদ্রাসা গড়লে এবং নামায-রোযা আদায় করলেই দেশ শান্তিতে ভরে উঠবে। অথচ সেটি ইসলামের রীতি নয়। মহান নবীজী (সা:)’র সূন্নতও নয়। নবীজী (সা:) যেমন নামায-রোযা করেছেন, মসজিদ গড়েছেন এবং নানাবিধ ভাল কাজ করেছেন, তেমনি দুর্বৃত্তদের নির্মূলে জিহাদে নেমেছেন। অথচ বাংলাদেশের মানুষের মাঝে নবীজী (সা:)’র সে ইসলাম বেঁচে নাই। তারা জিহাদমুক্ত এক বিকৃত ইসলাম আবিস্কার করে নিয়েছে। সে ইসলামে নবীজী (সা:)’র আমলের ইসলামী রাষ্ট্র নাই, শরিয়ত নাই, জিহাদ নাই এবং কুর’আন শিক্ষার রাষ্ট্রীয় আয়োজন নাই। দুর্বৃত্তদের দখলদারী নিয়ে বাঁচাটি তারা অভ্যাসে পরিণত করেছে। ফলে চোখের সামনে ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের নির্মূল হতে থাকলেও তাদের মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া নাই।
অপর দিকে দেশের চোরডাকাত ও ভোটডাকাত সরকারের পক্ষ থেকে লাগাতর যুদ্ধ শুরু হয়েছে জিহাদের বিরুদ্ধে। জিহাদকে বলা হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস। জিহাদ বিষয়ক বই রাখাকে দন্ডনীয় অপরাধ গণ্য করছে। পুলিশের কাজ হয়েছে জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করা। যেমন জিহাদ বলে কুর’আন-হাদীসে কোন কথাই নাই। এটি নিতান্তই তাদের নিজেদের বাঁচার স্বার্থে। কারণ তারা জানে, জিহাদ হলো মুসলিমের হাতিয়ার। তাদের মত চোরডাকাত ও ভোটডাকাত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ঈমানদারের যুদ্ধকে বলে জিহাদ। এমন একটি যুদ্ধ তারা চায় না। তাই নিজেদের বাঁচাটি নিরাপদ করতে তারা ইসলামের শিক্ষাকেই বিকৃত করছে। নবীজী (সা)’র ইসলামকে ভূলিয়ে দিতে তারা নামায-রোযা, মিলাদ মহফিল ও দোয়া-দরুদের মাঝে ইসলামকে সীমিত রাখছে। এটি হলো তাদের ইসলামের জিহাদ নির্মূলের যুদ্ধ।
২. শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অপরাধটি প্রসঙ্গে
দেশ কতটা সভ্য সেটি দালান-কোঠা, রাস্তা-ঘাট ও কল-কারখানা দেখে বুঝা যায় না। কারণ এগুলি ন্যায়-নীতি, সত্য-মিথ্যা ও সভ্য-অসভ্যতার কথা বলে না। এগুলির নিজস্ব কোন চরিত্র থাকে না। এগুলি কথা বলে না। চরিত্র থাকে এবং সরবে নীতি-নৈতিকতা ও দুর্নীতির বয়ান দেয় দেশের আদালত। আদালতের রায়ের মধ্য দিয়ে সভ্য-অসভ্যতা, ন্যায় নীতি, দুর্বৃত্তি, ও বিবেক বোধ কথা বলে। একটি সভ্য জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিটি কখনোই প্রাসাদ, রাস্তাঘাট বা কল-কারখানা নয়। সেটি হলো ন্যায় বিচারের আদালত। অসভ্য দেশে সেটি থাকে না। অসভ্য জাতির অসভ্যতা শুধু পতিতাপল্লী, মদ-গাঁজার আসর, ডাকাত পাড়ায় ধরে পড়ে না, সে অসভ্যতা দেখা যায় দেশের আদালতে। বাংলাদেশে সেটি দেখা গেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে। দেখা গেছে হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতকে বিচারের বাইরে রাখাতে।
তাই জাতির সভ্যতা ও অসভ্যতার বিচারে ঘরে ঘরে নেমে গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। পুলিশের খাতায় দুর্বৃত্তদের তালিকার খোঁজ নেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। সেটি দেশের আদালতের দিকে নজর দিলেই সুস্পষ্ট বুঝা যায়। সূর্য দেখে যেমন দিনের পরিচয় মেলে তেমনি আদালতের ন্যায় বিচার দেখে সভ্যতার পরিচয় মেলে। সভ্য মানুষের কাছে দুর্গন্ধময় আবর্জনা যেমন অসহ্য, তেমনি অসহ্য হলো আদালতের বিচারকদের দুর্বৃত্তি ও অবিচার। এটিকেই বলা হয় অবিচারের বিরুদ্ধে সভ্য মানুষের জিরো টলারেন্স। এটিই ঈমানদারের গুণ। কিন্তু দুর্বৃত্ত, অসভ্য ও বেঈমানদের সে রুচি থাকে না। মশামাছি যেমন আবর্জনায় বাচে এরাও তেমনি দুর্বৃত্তি নিয়ে বাঁচে। দুর্বৃত্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা ধরে রাখাই যেমন তাদের রীতি, তেমনি তাদের বড় দুর্বৃত্তি হলো আদালতে অবিচারের প্রতিষ্ঠা দেয়া।
অথচ সভ্য শাসকদের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণটি রাস্তাঘাট ও কলকারখানা গড়া নয়, সেটি হলো দেশে ন্যায় বিচারকে প্রতিষ্ঠা দেয়া। মহান নবীজী (সা:) দশ বছর রাষ্ট্র-প্রধান ছিলেন। তিনি প্রাসাদ, কলকারখানা ও রাস্তাঘাট গড়েননি, প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন ন্যায় বিচারকে। মহান আল্লাহতায়ালা রোজ হাশরের বিচার দিনে কোন শাসককে প্রাসাদ, কলকারখানা ও রাস্তাঘাট গড়া নিয়ে কাঠগড়ায় তুলবেন না। কিন্তু অবশ্যই কাঠগড়ায় তুলবেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা নিয়ে। এবং সে ন্যায় বিচারের জন্য তিনি আইনও দিয়েছেন। পবিত্র কুর’আনে ঘোষিত সে আইনকে বলা হয় শরিয়ত। যারা সে শরিয়ত অনুসারে বিচার করে না তাদেরকে কাফের, জালেম ও ফাসেক বলা হয়েছে। তাই শাসকের ঈমানদারী ধরা পড়ে রাষ্ট্রে শরিয়তী আইনের বিচার দেখে। এবং বেঈমানী ধরা পড়ে নিজেদের গড়া কুফরি আইনের অবিচার দেখে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে অসভ্য ও ব্যর্থ খাতটি হলো বিচার ব্যবস্থা। জেনারেল এরশাদ বন্দুকের জোরে পুরা দেশ ডাকাতি করে নিল তার কোন শাস্তি হলো না। শেখ হাসিনাও পুলিশ ও সেনাবাহিনী দিয়ে জনগণের ভোট ডাকাতি করে নিল, তারও কোন শাস্তি হলো না। অথচ ফাঁসি দেয়া হলো বিরোধী দলীয় নেতাদের। কথা হলো যে দেশের আদালতে নিরপরাধদের ফাঁসি দেয়া হয়, দন্ডপ্রাপ্ত খুনিকে জেলখানা থেকে মুক্তি দেয়া হয় এবং ভোটডাকাতকে প্রধানমন্ত্রী রূপে রায় দেয়া হয় -সে দেশকে কি আদৌ সভ্য বলা যায়? শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় অপরাধ এই নয় যে সে জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করেছে। বরং তার সবচেয়ে বড় অপরাধটি হল, দেশের আদালতে অবিচারকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। এবং আদালতের বিচারকদের মানুষ খুনের লাঠিয়ালে পরিনত করেছে। এভাবে বাংলাদেশকে একটি অসভ্য দেশের পর্যায়ে নামিয়েছে। এভাবে বাংলাদেশীদের জন্য বাড়িয়েছে বিশ্বজুড়া অপমান। এ অপরাধের স্মৃতি নিয়ে শেখ হাসিনা বহু শত বছর ইতিহাসে বেঁচে থাকবে। বাংলাদেশীদের যদি কোন দৃর্বৃত্তকে যুগ যুগ ধরে সর্বাধিক ঘৃনা করতে হয় তবে সে দুর্বৃত্তটি যে নিশ্চয় শেখ হাসিনাই হবে -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে?
৩. সময়টি কি ঘুমিয়ে থাকার?
কোন পথে জাতির ধ্বংস ও অপমান এবং কোন পথে বিজয় ও গৌরব -সেটি কোন জটিল রকেটি সায়েন্স নয়। ইতিহাসের বইগুলি সেসব কাহিনীতে ভরপুর। যে কোন শিক্ষিত ব্যক্তিই তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। তবে ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়াই মানব জাতির ইতিহাস। রোগের মহামারি অসংখ্য মানবের জীবনের মৃত্যু ডেকে আনে। তবে মহামারিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটলেও তাতে কোন দেশ বা জাতি ধ্বংস হয় না। কিন্তু দেশবাসীর ভাগ্যে ধ্বংস, পরাজয় ও অপমান আনে দুর্বৃত্তদের শাসন। তারা সভ্য ভাবে বাঁচাটাই অসম্ভব করে। তাই দুর্বৃত্ত শাসকগণই হলো জাতির সবচেয়ে বড় শত্রু। সাধারণ ছিঁছকে চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসী ও খুনিদের কারণে দেশের এত বড় ক্ষতি হয় না।
তাই দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণে মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণের ন্যায় কাজগুলি করাই শুধু ভাল কাজ নয়, বরং সবচেয়ে সেরা ভাল কাজটি হলো দুর্বৃত্ত শাসন নির্মূলের জিহাদ। এটিই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। দেশের মানুষ পুরাপুরি ইসলাম পালন করতে পারবে কিনা –সে বিষয়টি নির্ভর করে এই জিহাদের উপর। যে দেশে জিহাদ নাই সেদেশে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা থাকেনা এবং আদালতে থাকে নাশরিয়তের বিচার। আর শরিয়ত পালন ছাড়া কি ইসলাম পালন হয়?
একমাত্র জিহাদের মাধ্যমেই জাতি দুর্বৃত্তমুক্ত হয়। এবং বিজয়ী হয় ইসলাম। একাজ স্রেফ নামায-রোযা ও দোয়াদরুদে হওয়ার নয়। নবীজী (সা:)কে তাই শত শত ভাল কাজের সাথে জিহাদেও নামতে হয়েছে। এ জিহাদে নিহত হলে বিনা হিসাবে জান্নাত মেলে। এতবড় কল্যাণকর কাজ দ্বিতীয়টি নাই। একাজের পুরস্কারও তাই বিশাল। এ কাজে নিহত হলে বিনা হিসাবে মেলে জান্নাত। দুর্বত্ত শাসকগণ শুধু জনগণের শত্রু নয়, শত্রু মহান আল্লাহতায়ালার। যারা জিহাদ করে একমাত্র তারাই মহান আল্লাহতায়ালার শত্রুদের নির্মূল করে। এজন্য রাব্বুল আলামীন তাদের উপর এতো খুশি।
দুর্বৃত্ত শাসকের নির্মূল না করে কোন সভ্য রাষ্ট্র গড়ার কাজটি অসম্ভব। যেমন আগাছার শিকড় না তুলে সেখানে গাছ লাগানো যায় না। দুর্বৃত্তির বিশাল বট গাছটি স্বস্থানে রেখে কি ইসলামের চারা লাগানো যায়? ইসলামবিরোধীদের নির্মূলের পথ ধরতেই হবে। দুর্বৃত্ত শাসনের নির্মূলের মধ্য দিয়েই বিজয়ী হয় ইসলাম। মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার এটিই একমাত্র পথ। শত শত মসজিদ-মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট ও কল-কারখানা গড়ে দুর্বৃত্ত নির্মূলের কাজটি সমাধা করা যায় না। নির্মূলের কাজে যে জিহাদ তার কোন বিকল্প নাই। তাই যারা প্রকৃত ঈমানদার ও জ্ঞানী তারা দুর্বত্ত নির্মূলের জিহাদে মনযোগী হয়। সে জিহাদে বিনিয়োগ করে নিজেদের অর্থ, মেধা, বুদ্ধিবৃত্তি, ও রক্ত। এটিই নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামদের পথ। একাজে সাহাবাদের অর্ধেকের বেশী শহীদ হয়ে গেছেন। মসজিদ মাদ্রাসার নির্মাণে কোটি কোটি টাকা দিলেও বিনা হিসাবে জান্নাত প্রাপ্তির কোন প্রতিশ্রুতি নাই। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি আছে জিহাদে প্রাণদানে।
বাংলাদেশে যারা শাসন ক্ষমতায়, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতা কি কোন গোপন বিষয়? দ্বীনের এ শত্রুগণ কুর’আনের তাফসির হতে দিতে রাজী নয়। দেশের সবচেয়ে বড় তাফসিরকারক দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আজীবন জেলবন্দী করার ব্যবস্থা করেছে। শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব স্কুলের সিলেবাস থেকে বিলুপ্ত করেছিল ধর্ম শিক্ষা। একই ভাবে হাসিনাও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। স্কুল-কলেজের পাঠদানে কুর’আন-হাদীস ও নবীজী (সা:)’র চরিত্রের উপর কোন পাঠের ব্যবস্থা নাই। ইসলামপন্থীদের ফাঁসি দিচ্ছে, জেলে নিচ্ছে এবং গুম করছে। ইসলামের বিরুদ্ধে হাসিনার যুদ্ধ দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এ অবস্থায় ইসলামপন্থীদের কি ঘুমিয়ে থাকার সময়?
৪. কেন এ পরাজয় ও আযাব?
নিয়মিত নামায-রোযা করে এবং টুপি-দাড়ি আছে -এমন লোকের সংখ্যা বাংলাদেশে বহু কোটি। কিন্তু আল্লাহর হুকুম ও তাঁর শরিয়তি আইন প্রতিষ্ঠার জিহাদে লোক নাই। ঈমানের ফাঁকিটি এখানেই ধরা পড়ে। এরূপ ফাঁকিবাজীর ফলে দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, আদালত ও শিক্ষা-সংস্কৃতির অঙ্গণে বিজয়টি শয়তানের পক্ষের শক্তির এবং পরাজয় ইসলামের। যার মধ্যে সামান্য ঈমান আছে সে কি শয়তানের এ বিজয় মেনে নিতে পারে? মেনে নিলে কি মহান আল্লাহতায়ালা খুশি হন?
ইসলামের পক্ষের শক্তির এখন বড়ই দুর্দিন। রাস্তায় নামলে এবং ইসলামের পক্ষে কথা বলেই তাদের গুম হতে হয়। অথবা জেল ও পুলিশী নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। এটি কি কম আযাব? অথচ এ আযাব তাদের নিজ হাতের কামাই। অনৈক্যের পথে এমন আযাব যে অনিবার্য -সে হুশিয়ারী তো মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুর’আনে বার বার শুনিয়েছেন। কিন্তু সে আযাব থেকে বাঁচায় ইসলামপন্থীদের আগ্রহ কই? অনৈক্যের পথটি যে নিশ্চিত পরাজয় ও নৃশংস দুর্গতির পথ -সেটি জেনেও বাংলাদেশে ইসলামপন্থীগণ অনৈক্যের পথই বেছে নিয়েছে।
কিন্তু কেন এতো অনৈক্য? কারণটি সুস্পষ্ট। মানুষ যখন একমাত্র মহান আল্লাহতায়াকে খুশি করার জন্য কাজ করে তখন একতা গড়া তাদের জন্য অতি সহজ হয়। তাই কোথাও লক্ষাধিক নবী-রাসূল একত্রে কাজ করলে তাদের মাঝে সীসাঢালা দেয়ালের ন্যায় একতা দেখা দিত। এবং ইসলামের গৌরবের দিনগুলিতেও দেখা গেছে। কিন্তু একতা অসম্ভব হয় যদি লক্ষ্য হয় দল, নেতা, ফেরকা, পীর, মাজহাবকে বিজয়ী করা। বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে। তাদের গরজ যতটা নিজ দল, নিজ ফেরকা ও নিজ পীরগিরি বিজয়ী করা নিয়ে সে গরজ মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করা নিয়ে নাই। ফলে অসম্ভব হয়েছে একতাবদ্ধ হওয়া ।
৫. ঈমানদারী ও বেঈমানী
ঈমান ও বেঈমানী সুস্পষ্ট দেখা যায়। সেটি ব্যক্তির চিন্তাধারা, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, কর্ম ও আচরনের মধ্যে। যার মধ্যে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে সে কি কখনো জাতীয়তাবাদ, বর্ণবাদ, সেক্যুলারিজম, সমাজবাদের বিশ্বাসী হতে পারে? সে ভ্রান্ত মতবাদগুলি বিজয়ী করার জন্য লড়াই করতে পারে? এগুলিকে বিজয়ী করার অর্থ তো ইসলামকে পরাজিত করা। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামের পরাজয় এবং শয়তানের বিজয় এসেছে তাদের হাতে যারা নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দেয়।
কথা হলো, শুধু নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত পালন করলেই কি মুসলিম হওয়া যায়? তাকে তার রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং যুদ্ধ-বিগ্রহকে ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে হতে হয়। মুসলিমের জন্য এটি পুরাপুরি হারাম যে, সে বিশ্বাস করবে ইসলামে অথচ যুদ্ধ করবে জাতীয়তাবাদ, সমাজবাদ, সেক্যুলারিজম বা বর্ণবাদকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। এমন কর্মগুলি মূলত ইসলামের সাথে গাদ্দারী।
৬. জিজ্ঞাস্য বিষয়
প্রতিটি বাংলাদেশীর নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, সে কি সত্যিই মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনের বিজয় চায়? এবং চাইলে আদালতে শরিয়তের আইন নাই কেন? ব্যক্তি কি চায় এবং কি চায়না –তার মধ্যেই প্রকাশ পায় তার ঈমান বা বেঈমানী। ঈমানদার মাত্রই তাই ইসলামের বিজয় চায়। এবং বেঈমান মাত্রই ইসলামের পরাজয় চায়। কিন্তু শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশে সে বিজয়টি কোথায়?
লাখ লাখ সৈনিক পুষে লাভ কি যদি রাজার সার্বভৌমত্ব ও আইনই না চলে? মুসলিম মাত্রই তো মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক। তাদের উপর ঈমানী দায়ভার তো মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠা দেয়া। সেকাজে ইসলামের গৌরব কালে মুসলিমদের জীবনে লাগাতর যুদ্ধ দেখা গেছে। কিন্তু সে কাজে বাংলাদেশের মুসলিমদের বিনিয়োগ কই? সাফল্যই বা কতটুকু? তারাই কি নিজেদের রাজস্বের অর্থে ও নিজেদের সমর্থনে ইসলামের শত্রুদের বিজয়ী করেনি? মুজিবের ন্যায় ইসলামের শত্রু কি অমুসলিমদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল? ইসলামের বিরুদ্ধে মুজিবের শত্রুতা কি কোন গোপন বিষয়? মুজিবই তো স্কুল-কলেজে ইসলামের পাঠ নিষিদ্ধ করেছিল, কারাবন্দী করেছিল ইসলামী দলগুলির নেতাদের, নিষিদ্ধ করেছিল ইসলামের নামে সংগঠিত হওয়াকে এবং জাতীয় আদর্শ রূপে ঘোষণা দিয়েছিল জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও সমাজবাদের ন্যায় হারাম মতবাদগুলিকে। তাজ্জবের বিষয় হলো, ইসলামের সে প্রমাণিত শত্রুকে আজও তারা বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা বলে।
অথচ ব্যক্তির ঈমান তো তার কথা ও বিশ্বাসে ধরা পড়ে। যে হিন্দু পুরোহিতটি মুর্তিপূজা পরিচালনা করে -তার সে হারাম কর্মকে সমর্থন ও প্রশংসা করলে কি কেউ মুসলিম থাকে? তেমনি যে নেতা জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম ও সমাজবাদের ন্যায় হারাম মতবাদকে দেশবাসীর উপর চাপিয়ে দেয় -তাকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বললে কি ঈমান থাকে? এরূপ হারাম কর্মে কি মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা যায়? ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ধর্মকর্ম, রাজনীতি, আইন-আদালত, প্রশাসন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ও যুদ্ধ-বিগ্রহের ন্যায় সর্বক্ষেত্রে রয়েছে ইসলামের দিক-নির্দেশনা। মুসলিমদের ঈমানী দায়বদ্ধতা তো একমাত্র ইসলামকে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে অনুসরণ করা। মুজিব ও হাসিনার ন্যায় কোন হারাম মতবাদকে অনুসরণ করা নয়। ইসলামকে পুরাপুরি বিশ্বাস করার মধ্যেই তো ঈমানদারী। অথচ বাংলাদেশীদের মাঝে সে ঈমানদারীটি কই? এ নিয়ে আপন মনে প্রশ্নই বা ক’জনের মনে? মহান আল্লাহতায়ালার কাছে হিসাব দেয়ার আগে এ হিসাব নেয়া কি জরুরি নয়? ২৪/০৭/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018
100% correct.