বিবিধ ভাবনা ৮১
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on April 23, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. সরকারের স্বাধীনতা ও পরাধীন জনগণ
স্বাধীনতা বলতে বুঝায় জনগণের স্বাধীনতা। সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের সে স্বাধীনতাকে সুরক্ষা দেয়া। সে কাজের জন্যই জনগণ সরকারকে রাজস্ব দেয়। কোন গণতান্ত্রিক দেশে সরকার আদৌ স্বাধীন নয়; সরকারের সকল কর্ম নিয়ন্ত্রিত হয় দেশের বিধিবদ্ধ আইন ও সংবিধান দিয়ে। কিন্তু স্বৈরাচার কবলিত দেশে ঘটে এর উল্টোটি। এমন দেশে পরাধীন হলো জনগণ এবং স্বাধীন হলো সরকার। তখন দেশের সংবিধান, আইন ও বিচারকগণ নিয়ন্ত্রিত হয় সরকার কর্তৃক। তাই এমন দেশে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লাথি খেয়ে দেশ ছাড়তে হয়। যেমনটি হয়েছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সাথে। যা তিনি লিখেছেন তাই নিজের লেখা বইতে। তাই স্বৈরাচার কবলিত দেশে জন জীবনে স্বাধীনতার যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে।
জনগণের স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায় সেটি বুঝতে হলে পাকিস্তানের দিকে নজর দিন। সেখানে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে ও জনসভায়। সেখান আজাদী ভোগ করে দেশের লেখক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীগণ। সেখানে ডিজিটাল আইন বলে কোন আইন নাই। ফলে কথা বলা, মিছিল করা ও লেখালেখীতে কোন নিয়ন্ত্রণ নাই। তাই সরকারের নিন্দা করায় কাউকে গ্রেফতার হতে হয় না। সেদেশে কোন আলেমই জেলে নাই। কোন টিভি চ্যানেল ও কোন পত্রিকা বন্ধ করা হয়নি। এবং জেলে নাই বিরোধদলীয় কোন একজন রাজনৈতিক নেতাও। সেদেশ জেলের মাঝে নির্যাতনে কাউকে মারা যেতে হয় না। সেখানে গুম, খুন ও অপহরনের শিকার হতে হয় না। জনগণের স্বাধীনতা দেখুন শ্রীলংকায়। রাজপথে সেখানে প্রচণ্ড বিক্ষোভ। বিক্ষোভের প্রকোপে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের সব মন্ত্রীরা পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ কি সে স্বাধীনতার কথা ভাবা যায়? অথচ কি বিস্ময়! এ দেশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়! স্বাধীনতা নিয়ে বড়াই করা হয়!
বাংলাদেশে স্বাধীনতা বলতে যা বুঝায় তা হলো একমাত্র সরকারের স্বাধীনতা। সেটি ভোট ডাকাতি, গুম-খুন-সন্ত্রাস এবং জনগণকে কারারুদ্ধ করা ও ইচ্ছামত বিরোধীদের পিটানোর স্বাধীনতা। সরকারের এমন স্বাধীনতায় চরম পরাধীনতা জুটে জনগণের। একাত্তরের পর বাংলাদেশের জনগণ এরূপ স্বাধীনতাই পেয়েছে। ১৯৪৭য়ে এদেশের জনগণ যে স্বাধীনতা পেয়েছিল তা এখন কবরে শায়ীত। সরকার জনগণের স্বাধীনতার সুরক্ষা না দিয়ে সেটির উপর ডাকাতি করেছে। জনগণের গলায় এখন গোলামীর রশি। যে কোন সভ্য বিচারে বাংলাদেশের সরকার তাই একটি অপরাধী ও অসভ্য সরকার। কোন সভ্য দেশে এরূপ অপরাধী সরকারের কর্ণধারদের বিচার করা ও তাদের শাস্তি দেয়ার দায় জনগণকেই নিতে হয়। নইলে সভ্যতা বাঁচে না। ভদ্র ও সভ্য সমাজও গড়ে উঠে না।
২. অপরাধ জনগণের স্তরেও
বাংলাদেশে অপরাধ শুধু সরকারের স্তরে নয়, সেটি জনগণের স্তরেও। ঘোড়ার আগে গাড়ী জোড়া যায় না। তেমনি জনগণকে সভ্য, সচেতন ও দায়িত্ববান রূপে গড়ে না তুলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দেয়া যায় না। বেহুশ মানুষকে দিয়ে কি কোন কাজ হয়? তাদের ঘুম ভাঙ্গাতে হয়। জনগণ তো তখনই বদলায় যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গে এবং তাদের চেতনা ও জ্ঞানের ভুবন পাল্টায়। সে ঘুম ভাঙ্গানো ও চেতনা মেরামতের কাজটি আদৌ হয়নি। চেতনা ও জ্ঞানের ভুবন পাল্টানোর কাজটি হয় দেশের শিক্ষাঙ্গণে, সাহিত্যে ও মিডিয়ায়। কিন্তু এগুলো বাংলাদেশে নিদারুন ব্যর্থ খাত।
গণতন্ত্রের হত্যাকারী একজন বাকশালী স্বৈরাচারিকে যারা সম্মান করে তারা কি চেতনার দিক দিয়ে কোনরূপ সুস্থ্য ও সভ্য হতে পারে? অথচ বাংলাদেশে সেই অসুস্থ্য চেতনার মানুষের সংখ্যাটি বিশাল। এরাই গণতন্ত্রহত্যাকারী একজন ফ্যাসিস্টকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বলে। এমন বিলুপ্ত বিবেকবোধ নিয়েই এক পাল মানবরূপী পশু আবরার ফাহাদের মত বুয়েটের একজন নিরীহ ছাত্রকে দল বেঁধে পিটিয়ে লাশ করতে পারে।
পরিবেশ কতটা নোংরা সেটি বোঝা যায় মলমূত্রের উপর বসা মশা মাছির সংখ্যা দেখে। পরিবেশ যত নোংরা হয় সেখানে ততই বাড়ে মশা মাছির সংখ্যা। অথচ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেরূপ মশামাছি দেখা যায় না। কারণ মশা মাছি জন্মানোর জায়গা পায় না। তেমনি একটি দেশ কতটা অসভ্য ও বর্বর সেটি বুঝা যায় দুর্বৃত্ত ভোটডাকাত শাসকের প্রতি সাধরণের মানুষের ভক্তি ও আত্মসমর্পণ দেখে। একটি অসভ্য দেশে ফিরাউনগণ যেমন ভগবান রূপে গণ্য হয়, তেমনি স্বৈরাচারিগণ শাসকও জনগণের ভক্তি ও রাজস্ব পায়। যে জনগণ ভোটডাকাতির সর্দারনীকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে তারা কখনোই সৎ, সভ্য ও ভদ্র হতে পারে না। এমন জনগণকে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজটি অসম্ভব। যারা বাংলাদেশে সভ্য শাসনের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাবে তাদের বিষয়টি বুঝতে হবে। খারাপ ইট দিয়ে ভাল ইমারত গড়া যায় না। তেমনি অসভ্য ও অসৎ মানুষ দিয়ে গণতান্ত্রিক সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় না। এখানেই বাংলাদেশের ব্যর্থতা। তাই যে কোন সভ্য দেশের সাথে বাংলাদেশের পার্থক্য সহজেই নজরে পড়ে।
জাতি গঠন খেলা নয় যে ১১ জন খেলবে, বাকিরা দর্শক। কাজটি শুধু সরকারের নয়, প্রতিটি ব্যক্তির। ব্যক্তি গড়ার কাজটি তাই গুরুত্বপূর্ণ। মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র গড়ার নবীজী (সা:)কে তাই মক্কাতে ১৩ বছর মানুষ গড়তে হয়েছে। এরপর মদিনাতে শুরু হয় ইসলামী রাষ্ট্রের মহান কাজ। ইসলামে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এটি জিহাদ। একমাত্র এ জিহাদই দেশের বুক থেকে দুর্বৃত্তদের নির্মূল করে এবং ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা পায়। জাতি তখনই সামনে এগুয়, যখন সবাই দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু বাংলাদেশের মূল ব্যর্থতা এখানেই। জনগণ পরিণত হয়েছে দর্শকে। খেলার মাঠ দখলে নিয়েছে চোরডাকাত ও ভোটডাকাত দুর্বৃত্তরা।
৩. জিহাদ, ঈমান ও সভ্য রাষ্ট্রের নির্মাণ
নদী পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ না হলে সে নদী গ্রামেগঞ্জে প্লাবন আনেনা। তেমনি ব্যক্তির মন ঈমানে পূর্ণ না হলে সে প্রানে জিহাদের জজবা জাগে না। জিহাদ হলো পূর্ণ ঈমানের আলামত। তাই মন ঈমানে পূর্ণ হলে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে জিহাদ সৃষ্টি হবেই। যাদের জীবনের জিহাদ নাই তাদের বাঁচতে হয় গোলামীর রশি গলায় নিয়ে। ব্রিটিশ তাড়াতে বাঙালি জিহাদে নামিনি। এ পাপটি ছিল বিশাল। সে পাপের শাস্তি পেতে হয়েছে ১৯০ বছরের গোলামীর ঘানি টেনে।
তাছাড়া ইতিহাসের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হলো, জিহাদে শহীদ হওয়া থেকে যারা বাঁচে, তারা নিহত হয় অন্যভাবে। তখন তাদের মৃত্যু হয় অতি দুরবস্থা ও জিল্লতি নিয়ে। সেটিও দেখা গেছে বাঙালীর জীবনে। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জিহাদে প্রাণ দেয়া থেকে বাঙালী বেঁচেছে। কিন্তু বাংলার এক-তৃতীয়াংশ জনগণ মরেছে ব্রিটিশের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে। সেটি এসেছে অপরাধের শাস্তি রূপে। অপরাধ ছিল শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ না করা। বাঙালী মুসলিম যদি পলাশীতে সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের সাথে সাথে ব্রিটিশ তাড়াতে দেশ জুড়ে জিহাদে নামতো তবে তারা বাঁচতো ডাকাত ব্রিটিশদের সৃষ্ট ছিয়াত্তরের সেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ থেকে।
বাঙালির ভীরুতার ইতিহাস অতি পুরনো। ব্রিটিশ, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আগ্রাসন শুরুর সাথে সাথে আফগানগণ জনগণ যেমন হাতের কাছে যে অস্ত্র পেয়েছে তা দিয়েই জিহাদ শুরু করেছে। কিন্তু ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জনগণ সেরূপ জিহাদে নামেনি। এমন ভীরু-কাপুরুষদের উপর শুধু বিদেশী ডাকাতেরাই দখল জমায় না, তাদের মাথার উপর দেশী ডাকাতেরাও রাজত্ব করে। আজ বাংলাদেশে চলছে মূলত দেশী ডাকাতদের শাসন। আর দেশী ডাকাতদের বিরুদ্ধে জিহাদ না থাকায় গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের শিকার হতে হচ্ছে জনগণকে। এবং এ শাস্তি সহজে শেষ হবার নয়। গরুছাগলেরা জম্মায় জবাই হওয়ার জন্য, তেমনি ভীরু-কাপুরুষও জম্মায় গলায় গোলামীর রশি নিয়ে বাঁচার জন্য। গণতান্ত্রিক সভ্য জীবন এদের জন্য নয়। এমন দেশে প্রচুর মানুষ, বিস্তর গরু-ছাগল এবং বিপুল মাছ ও ফসল উৎপাদিত হলেও কখনোই সভ্য রাষ্ট্র জন্ম নেয় না। ইতিহাস এমন উদাহরনে ভরপুর।
সভ্য রাষ্ট্রে বাঁচার বিশাল মূল্য আছে। জান ও মালের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি আছে। কিন্তু সে মূল্য পরিশোধের সামর্থ্য কি বাঙালীর আছে? মানুষ যতই পশুর স্তরে নামতে থাকে ততই স্বাধীনতায় আগ্রহ হারায়। তখন তারা ভোট ডাকাতকেও শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় বলে। এটি ঈমানহীনতা ও বিবেকহীনতারই প্রমাণ। অথচ মানুষ যখনই মানবিক গুণে বেড়ে উঠতে চায় তখনই স্বাধীনতা চায়। আজ পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক সরকার, সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ফলে জনগণ সুশাসনের প্রচুর সুফল পাচ্ছে। কিন্তু এ পর্যায়ে পৌঁছার জন্য তাদের বহু বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে। বহু রাজা ও স্বৈরাচারি শাসকের গর্দান কাটতে হয়েছে। বহু দুর্গের দেয়াল ভাঙ্গতে হয়েছে। কিন্তু বাঙালীর জীবনে সেরূপ বিপ্লব একটি বারও আসেনি। একাত্তরের যুদ্ধ নিয়ে বাঙালীর প্রচণ্ড অহংকার। অথচ সে যুদ্ধের পুরা বিজয়টাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর। এবং ভারত সেটি করেছে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য নয়, বরং একটি পদানত গোলাম রাষ্ট্র বানানোর জন্য। মুসলিমের স্বাধীনতায় আগ্রহ থাকলে ভারত বহু আগেই কাশ্মিরকে স্বাধীনতা দিত। এবং ভারতীয় মুসলিমগণ খুন ও ধর্ষণের শিকার হত না। প্রকৃত ইতিহাস হলো, মুক্তিবাহিনী নিজ সামর্থ্যে একটি জেলা, একটি মহকুমা ও একটি থানাও স্বাধীন করতে পারিনি। কিন্তু এ সত্য কথাটি বাংলাদেশে বলা হয় না।
৪. নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ ও আল কুর’আনের জিহাদ
বাংলাদেশে জিহাদের ন্যায় পবিত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয় নানা ভাবে। বলা হয়, সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ। একথাটি বলার মধ্যে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। সেটি বলা হয় স্বৈরাচারি শাসন বাঁচানোর স্বার্থে। এরা চায়, জনগণ তাদের লড়াইয়ের লক্ষ্যটি স্বৈরাচারি শাসকদের থেকে সরিয়ে নিজের নফসের বিরুদ্ধে স্থির করুক। অথচ তারা এ কথা বলে না যে, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে কেউ শহীদ হয় না। নফসের বিরুদ্ধে যে জিহাদের কথা হাদীসে বলা হয়েছে, সেটি মূলত নিজের আত্মার পরিশুদ্ধির জিহাদ। এ জিহাদ হয় পবিত্র কুর’আন দিয়ে। নিজের নফসের বিরুদ্ধে চলা এ জিহাদে রাজনীতির অঙ্গণ থেকে ইসলামের শত্রু নির্মূলের কাজটি হয় না। এটি তাই সেই জিহাদ নয় যারা কথা পবিত্র কুর’আনে বলা হয়েছে।
লক্ষণীয় হলো, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদের বয়ান সেই সব আলেমগণ বেশী বেশী দেয় যাদের জীবনে জান ও মালের জিহাদ নাই। তারা কি জানে না, অর্ধেকের বেশী সাহাবী জিহাদে শহীদ হয়ে গেছেন? এবং তাদের জিহাদের কারণে রোমান ও পারসিক -এই দুটি বিশ্বশক্তির পতন ঘটেছ এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শক্তিশালী ইসলামী রাষ্ট্র। এবং তা থেকে জন্ম নিয়েছে ইসলামী সভ্যতা। প্রশ্ন হলো, যেসব আলেমের জীবনে অন্যায় নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জিহাদ নাই- সে সব আলেমদের থেকে শিখবার কি আছে? তারা নিজেরাই তো ব্যর্থ ছাত্র নবীজী সা: ও তাঁর সাহাবাদের জিহাদী জীবন থেকে শিক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে।
পবিত্র কুর’আনে যেখানেই আল্লাহর পথে জিহাদের কথা বলা হয়েছে সেখানেই সে জিহাদে নিজের জান ও মালের বিনিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। একমাত্র এমন জিহাদেই মানুষ শহীদ হয়। নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে জান ও মালের কুর’আনী কোথায়? বরং যে ব্যক্তি সশস্ত্র জিহাদে নিজের জান ও মালের বিনিয়োগ করে এবং শহীদ হয়, বুঝতে হবে নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে সেই প্রকৃত বিজয়ী। একমাত্র সে শহীদই মৃত্যুকে জয় করে।
জিহাদ মু’মিনের জীবনে রাজনৈতিক বিপ্লব আনে। ঈমানদারের রাজনীতিই হলো তার জিহাদ। এ জিহাদ দুর্বৃত্তির নির্মূলের এবং ইসলামী বিধানকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার। এ জিহাদ রাষ্ট্র ও সমাজ বিপ্লবের। সেক্যুলার রাজনীতি থেকে এখানেই ঈমানদারের রাজনীতির ভিন্নতা। হাজার হাজার মানুষ লড়াই করে ও প্রাণ দেয় দল ও নেতার নামে। কিন্তু তাতে জান্নাত জুটে না। জান্নাত জুটে আল্লাহর পথে অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জিহাদে। কিন্তু বাংলাদেশে এ জিহাদে লোক নাই।
৫. বিজয় কেবল হাসিনার
বাংলাদেশে বিজয় কেবল শেখ হাসিনার। এবং বিশাল পরাজয় সকল দলের ও জনগণের। শেখ হাসিন যা চেয়েছে তাই করতে পেরেছে। যেমন: গণতন্ত্রের কবর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তি, জামাত নেতাদের ফাঁসি, বিলুপ্ত স্বাধীন মিডিয়া, আলেমদের জেল, বিএনপি’র কোমর ভাঙ্গা এবং প্রতিবাদ শূণ্য রাজপথ। সর্ব ক্ষেত্রেই হাসিনার বিশাল বিজয়। তাই হাসিনার আনন্দ দেখে কে?
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী নেতাকর্মীদের প্রতিদিনই এখন ঈদের খুশি। এবং মাতম জনগণের। দেশের জনগণকে হাসিনা গণতন্ত্রের কলা দেখিয়েছে। তাই ক্ষমতার উচ্চ শিখরে বসে হাসিনার ফুর্তির সীমা নাই। তারা প্রাণভরে কাঁদাতে পেরেছে জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীদের। দেশকে দিয়েছে কবরের নিরবতা। খোয়াড়ে ঢুকিয়েছে জনগণকে। উপরুন্ত ভারতের গোলামীকে সফল ভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছে।
৬. কুর’আনের অবমাননা ও মুনাফিকি
পবিত্র কুর’আন হলো মহান আল্লাহতায়ালার আইনের কিতাব। এতে যেমন রয়েছে হারাম-হালাম বিধান। তেমনি রয়েছে প্রশাসন, বিচারের মূলনীতি ও ফৌজদারী অপরাধের শাস্তির বিধান। রয়েছে সম্পত্তির বন্টনের বিধান। রয়েছে নারী-পুরুষের অধিকারের বিধি এবং রয়েছে ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা। সভ্যতর জীবন যাপনের জন্য এবং জান্নাতের যাত্রী হওয়ার জন্য পবিত্র কুর’আন হলো একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভূল বিধান।
আইনের অবমাননা হয় যখন সে আইনের অবাধ্যতা হয়। সে অবাধ্যতা প্রতি দেশেই গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন অবাধ্যতা গুরুতর শাস্তি যোগ্য অপরাধ ইসলামেও। অথচ সেরূপ অবাধ্যতা ও অবমাননা হচ্ছে পবিত্র কুর’আনী আইনের সাথে। সে অবাধ্য ব্যক্তিকে কাফের, জালেম ও ফাসেকে পরিণত করে। সে ঘোষণাটি এসেছে সুরা মায়েদার ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে, “যারা আমার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার করে না তারা কাফের …তারা জালেম ….তারা ফাসেক।” অথচ কি বিস্ময়! কুর’আনের সে বিধানের প্রয়োগ কোন মুসলিম দেশেই নাই্। একমাত্র আফগানিস্তান এ কাজে চেষ্টা করছে।
অথচ কি বিস্ময়! কোটি কোটি মুসলিম ভক্তি ভরে কুরআন পড়ে ও কুরআনে চুমু খায়। মাহে রমজানে সেটি আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। কিন্তু কুর’আন পড়ে এবং কুর’আনে চুমু খেয়ে কি লাভ -যদি কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ না থাকে? আল্লাহকে রব বলেই বা কি লাভ -যদি আদালতে তার আইন মানা না হয়? এসব কি মুনাফিকী নয়? ২৩/০৪/২০২২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018