বিবিধ ভাবনা ৮৪
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on June 21, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
সুরক্ষিত ডাকাত এবং অরক্ষিত জনগণ
মানুষের প্রতি ন্যূনতম দরদ ডাকাতদের থাকে না। তারা জনগণের শত্রু। মানুষের ঘরে নৃশংস ভাবে ডাকাতি করাই তাদের পেশা। এতেই তাদের আনন্দ। এরা দুর্বলের অর্থ-সম্পদ কেড়ে নেয়, বাধা দিলে পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। তেমন ডাকাতের সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করে ভোটডাকাতগণ। তারাও জনগণের শত্রু। জনগণের প্রতি তাদের সামান্যতম ভালবাসা বা দরদ নাই। দরদ থাকলে তারা জনগণের ভোটের ইজ্জত দিত। ডাকাতগণ জানে তারা ডাকাত। এ পরিচয় নিয়েই তারা ডাকাতি করে। তেমনি ভোটডাকাতগণও জানে তারা ভোটডাকাত। নির্বাচনে তারা ভোট পাবে না -সেটি জানে। তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ বন্ধ করে ভোটের উপর ডাকাতি করে। প্রতিবাদে নামলে গণহত্যা চালায়। এরই উদাহরণ হলো বাংলাদেশের ভোট ডাকাত শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি হাসিনা বলেছে, সে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চায়। সেটি নাকি উন্নয়নের জন্য জরুরি। যেন বিশ্বের উন্নত দেশগুলো উন্নয়ন করেছে ভোটডাকাতি ও ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে। তার দলীয় নেতাকর্মী বলা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ২০৫০.সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। কথা হলো, শুধু ২০৫০ পর্যন্ত কেন, শত বছর ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের আপত্তি থাকবে কেন? কিন্তু সেটি তাদের ইচ্ছার বিষয় নয়, সেটি তো জনগণের ইচ্ছার বিষয়। কতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে -সেটি নির্ধারিত হতে হবে সুষ্ঠ নির্বাচনে জনগণের রায়ের ভিত্তিতে। জনগণের রায় ছাড়া একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই্। সে আইন ভঙ্গ করলে অপরাধ গণ্য হবে।
এমন কি প্রতিটি খেলাতে সুনির্দিষ্ট আইন থাকে। আইন ভাঙ্গলে পেনাল্টির শাস্তি পেতে হয়। ফুটবল খেলা তাই হাত দিয়ে খেলা যায় না। বলকে বাদ দিয়ে কারো পায়ে লাথি মারা যায় না। তেমনি গণতান্ত্রিক দেশে দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করা যায় না। সেটি দিনের বেলায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠ ভাবে হতে হয়। কিন্তু ডাকাতেরা যেমন আইন মানে না, হাসিনাও তেমনি সে নির্বাচনী আইন মানতে রাজী নয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন বলে হাসিনার কাছে কিছু নাই। সে চায় ব্যালটের উপর ডাকাতির অধিকার। হাসিনা আরো চায়, সে ডাকাতিতে দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী, আদালতের সহযোগিতা –যেমনটি দিয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে।
ডাকাতেরা যেমন ভদ্র ও সভ্য ভাবে উপার্জন করতে জানে না, হাসিনাও তেমনি ভদ্র ও সভ্য ভাবে নির্বাচিত হতে দিতে জানে না। এটিই মুজিবের লিগ্যাসি। দেশ যেন শেখ হাসিনার পৈত্রিক সম্পতি। রাজার পুত্র যেমন আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকার বৈধতা চায়, হাসিনাও সেটিই চায়। জনগণের কর্তব্য যেন তার ভোটডাকাতি ও অবৈধ শাসনকে বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়া। যে কোন বিরোধীতা হাসিনা ও তার অনুসারীদের কাছে গণ্য হয় রাষ্ট্রদ্রোহ রূপে। অতএব তার শাস্তি হত্যা বা জেল। বাংলাদেশ যেন মগের মুল্লুক –এখানে আইনের শাসন বলে কিছু নাই। পুলিশ, আদালত ও সেনাবাহিনীর কাজ হয়েছে হাসিনার ভোটডাকাতির অপরাধকে বিজয়ী করা।
যে কোন সভ্য ও সুশীল সরকারের মূল দায়িত্ব হলো, দেশের পুলিশ বিভাগ, প্রশাসন ও আইন আদালতকে নিরপেক্ষ করা। একমাত্র তখনই জনগণ ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ও জনসেবা পায়। নইলে সে রাষ্ট্র সভ্য ও সুশীল থাকে না; অসভ্য ও বর্বর জঙ্গলে পরিণত হয়। এমন কি খেলা পরিচালনার জন্যও নিরপেক্ষ রিফারী চাই। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী হাসিনা চায়, দেশের পুলিশ বিভাগ, আদালত এবং প্রশাসন তার চাকর-বাকরের ন্যায় কাজ করুক। তার গদির পাহারা দিক। জনগণ কী চায় -সেটি শেখ হাসিনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং গুরুত্বপূর্ণ তাই -যা সে নিজে চায়। তার শাসনে চোরডাকাত, ভোটডাকাত, গুম-খুন-ধর্ষণের নায়কগণ সুরক্ষিত এবং অরক্ষিত হলো দেশের আম জনগণ।
ভোটডাকাত মাত্রই গণতন্ত্র, সভ্য রীতি-নীতি ও জনগনের শত্রু। সভ্য ও ভদ্র ভাবে জীবন যাপন করাকে অসম্ভব করাই তাদের রীতি। আইনের শাসনকে তারা অকার্যকর করে। হিংস্র বাঘ-ভালুক তাড়ানোর চেয়ে এমন সরকারের নির্মূল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বনের হিংস্র পশু কিছু মানূষের প্রাণ নাশ ঘটালেও তারা সভ্য ও ভদ্র ভাবে বাঁচার স্বাধীন কেড়ে নেয় না। কেড়ে নেয় রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা। কিন্তু ফ্যাসিবাদী শাসকগণ যেমন বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণনাশ ঘটায়, তেমনি কেড়ে নেয় সভ্য ও ভদ্র ভাবে বাঁচার স্বাধীনতা। তাই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হলো এমন দুর্বৃত্ত শাসনের নির্মূল। ইসলামে এটি জিহাদ। এ জিহাদ না হলে কোন সুস্থ সভ্যতা গড়ে উঠে না।
তাছাড়া প্রতিটি সভ্য ও দায়িত্ববান নাগরিকই রাষ্ট্রের সুষ্ঠ পরিচালনায় ও জনগণের কল্যাণে সাধ্যমত কিছু করতে চায়। সভ্য মানুষের জীবনে এটি সহজাত। তাছা প্রতিটি নাগরিকের জন্য এমন কাজে অংশগ্রহণ ঈমানী দায়বদ্ধতাও। ইসলামে এরূপ অংশগ্রহণ ফরজ। তাই ঈমানদারকে শুধু নামাজ-রোজা পালন ও মসজিদ-মাদ্রাসা গড়লে চলে না, ইসলামী রাষ্ট্রও গড়তে হয়। নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ রাষ্ট্র গড়তে জিহাদ করেছেন এবং অর্ধেকের বেশী সাহাবা সে কাজ শহীদ হয়েছেণ। প্রতিটি সভ্য দেশে সরকারের দায়িত্ব হলো, সে কাজে প্রতিটি নাগরিককে নিজ সামর্থ্যের বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দেয়া। জনগণের সামর্থ্য বাড়াতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশক্ষিণ দেয়া। একটি দেশ তো তখনই সামনে এগোয়। অথচ হাসিনার কাজ হয়েছে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষকে রাষ্ট্র গঠনের সে কাজ থেকে দূরে রাখা। কারণ, তাঁরা তার দলের নয়। অপর দিকে তার নিজ দলের লোকদের ভোটডাকাতে পরিণত করা।
প্রতিটি স্বৈরাচারী শাসকই মনে করে দেশের উপর মালিকানা একমাত্র তার ও তার দলের। মনে করে, দেশ নিয়ে ভাবা এবং দেশ পরিচালনার অধিকার একমাত্র তাদের। এরূপ কর্তৃত্ববাদী খায়েশ নিয়েই ফ্যাসিবাদীগণ বর্বর জালেম শাসকে পরিণত হয়। হাসিনা বাংলাদেশে সে নিরেট ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারকেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। হাসিনা চায়, জনগণ দায়িত্ব কেবল অনুগত চাকর-বাকরে পরিণত হওয়া। বিরোধীদের রাজনীতিকে সে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ বলে আখ্যায়ীত করে। তাদেরকে দেশের শত্রু্ও বলে। এমনকি প্রফেসর ইউনুসের মত জগত-বিখ্যাত ব্যক্তিকে পানিতে চুবানোর কথা বলে। সাধারণ মানুষের প্রতি তার ধারণা যে কতটা ইতর ও নৃশংস প্রকৃতির -সেটি বুঝতে এরপরও কি কিছু বাকি থাকে? অথচ সভ্য দেশে সরকারী নীতির বিরোধীতা জনগণের নাগরিক অধিকার; সেটি কখনোই দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নয়, অপরাধও নয়।
২. শিল্পবিনাশী শেখ মুজিব
পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানে যত দ্রুত বেশি শিল্পোন্নয়ন হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানে ততটা হয়নি। ফলে দুই প্রবেশের মাঝে বৈষম্য বেড়েছে। তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ রয়েছে যা বাংলাদেশে পড়ানো হয় না। শিল্পোন্নয়নে এই বিরাট বৈষম্যের জন্য দায়ী শেখ মুজিব, ভাষানী ও অন্যান্য বামপন্থী রাজনীতিবিদগণও। সেটি বুঝতে হলে তাদের সে সময়ের রাজনীতির দিকে নজর দিত হবে। এ নিবন্ধে তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।
শিল্পোন্নয়নের জন্য শুধু কাঁচামাল ও সস্তা শ্রমিক থাকলেই চলে না, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুঁজি ও দক্ষতা আছে এমন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারী। বাংলাদেশ সবসময় কাঁচামাল ও সস্তা শ্রমিক ছিল, কিন্ত পূঁজির মালিক ছিল না। দক্ষ বিনিয়োগকারীও ছিল না। ফলে শিল্পোন্নয়ন হয়নি। যা হয়েছে তা কলকাতাতে হয়েছে। ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পায় তখন বাঙালি মুসলিমদের মাঝে একজনও বৃহৎ পুঁজির মালিক ছিল না। কোন বাঙালি মুসলিমও শিল্পপতি ছিল না। এ সত্য কথাটি বাংলাদেশের ইতিহাসের বইয়ে পড়ানো হয় না। পাকিস্তানের সকল পুঁজিপতি ও সকল শিল্পপতি ছিল অবাঙালি। যেমন আদমজী, দাউদ, বাওয়ানী, সায়গল, ইস্পাহানী, রেঙ্গুনওয়ালা এবং আরো অনেকে। পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে তারা ছিল একমাত্র ইস্পাহানী ছাড়া সবাই ভারত থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে যায়।
আজ বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগের জন্য জাপানী, কোরিয়ান, ইউরোপীয়ান ও নানা দেশের শিল্পপতিদের তোষামোদ করতে হয়। তাদের জন্য নানারূপ সুযোগও দিতে হয়। কিন্তু তোষামোদ ছাড়াই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর অবাঙালী পুঁজিপতিদের অনেকেই পূর্ব পাকিস্তানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছিল। যেমন আদমজী গ্রুপ আদমজী জুট কল প্রতিষ্ঠা করে। এটিই ছিল সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বড় পাটকল। বাওয়ানী ও ইস্পাহানীরাও কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। ষাটের দশকের মাঝমাঝি পর্যন্ত সে বিনিয়োগ চলতে থাকে। তখন শিল্পোন্নয়ন এত দ্রুত হচ্ছিল যে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রতিনিধি দল সে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে দেখতে আসতো। তখন পাকিস্তান চিত্রিত হতো তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের মডেল রূপে।সাপ্তাহিক টাইম পত্রিকায়পাকিস্তানের সে সফলতা নিয়ে একটি প্রচ্ছদ নিবন্ধও ছাপা হয়। শিল্পখাত থেকে অর্জিত লাভের অর্থে এসব অবাঙালি শিল্পপতিগণ পূর্ব পাকিস্তানে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। যেমন ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ বাওয়ানীদের গড়া। তারা কিছু স্কুল কলেজও গড়েছে। আদমজী গ্রুপ গড়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাঝে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ। ইস্পাহানীরা গড়েছে ফার্ম গেটে ইস্পাহানী চক্ষু হাসপাতাল।
কিন্তু উন্নয়নের সে পাকিস্তানী যুগে ষড়যন্ত্রকারীগণ বসে থাকেনি। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে যারা ছিল বাঙালি সেক্যুলারিস্ট, জাতীয়তাবাদী, সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্ট -তাদের কাছে শিল্পে অবাঙালি পুঁজিপতিদের এই বিনিয়োগ পছন্দ হয়নি। ষাটের দশকে তাদের পক্ষ থেকে বাঙালির শত্রু রূপে দুই শ্রেণীর মানুষকে চিহ্নিত করা হতো। তারা হলো: এক. অবাঙালী পাকিস্তানী এবং দুই. অবাঙালি শিল্পপতি। পুঁজি ও শিল্পের মালিক হওয়াকে তখন অপরাধী রূপে বলে প্রচার দেয়া হয়। ধারণা দেয়া হয়, শিল্পপতি মানেই শোষক এবং শ্রমিকের দুশমন। এ বিষয়টি শুধু প্রচারেই থেমে থাকেনি, আদমজী জুটমিলে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেওয়া হয় বাঙালি-অবাঙালিদের মাঝে। এভাবেই শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে পুঁজির বিতাড়ন। এবং বন্ধ করে দেয়া হয় অবাঙালি মুসলিমদের পুঁজির বিনয়োগ। এতে আনন্দে ডুগডুগি বাজিয়েছে ভারত।
অথচ শিল্পোন্নয়নের জন্য শর্ত হলো পুঁজিকে নিরাপত্তা দেয়া। নইলে কেউই তার নিজের কষ্টে উপার্জিত পুঁজি অনিরাপদ স্থানে বিনিয়োগ করে না। ষাটের দশকে মস্কোপন্থী ও চীনপন্থী এই দুই ছাত্র ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা ছাত্রনেতারা শ্রমিক আন্দোলনের নামে শিল্প ধ্বংসে মনযোগী হয়। ভাবে এটাই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লেলিনবাদী পথ। তারা তাদের রাজনীতির ঘাঁটি নির্মাণ শ্রমিক এলাকাগুলোতে। যেমন চীনপন্থী কাজী জাফর আহমেদ টঙ্গি এলাকায়, মস্কোপন্থী সাইফুদ্দীন আহমেদ মানিক ডেমরার বাওয়ানী জুট মিল এবং আওয়ামী লীগ দখলে নেয় আদমজী জুট মিলের শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এভাবেই শ্রমিক আন্দোলনের দুর্গে পরিণত হয়। শ্রমিকদের সামনে মিল মালিকদের শ্রেণীশত্রু রূপে চিত্রিত রূপে পেশ করা হয়।
অশ্রমিকদের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক আন্দোলনের সর্বত্রই একটি অভিন্ন চরিত্র ছিল। এমন সব দাবীর তালিকা নিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করতো যা মালিকদের জন্য মেনে নেয়া অসম্ভব ছিল। ফলে কোন মালিক-শ্রমিক আলোচনাই সফল হতো না। শ্রমিক আন্দোলন তাই কখনো থামতো না। দাবীগুলি পরিকল্পিত ভাবে রচিত হতো মালিকের সাথে শ্রমিকদের দ্বন্দকে জীবিত রাখার স্বার্থে। এর ফল হলো, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবাঙালি শিল্পপতিদের পক্ষ থেকে শিল্পায়ন যেভাবে দ্রুত শুরু হয়েছিল -তা ষাটের দশকের মাঝামাঝি এসে পুরাপুরি বন্ধ হয়ে যায়। উপরুন্ত, পূর্ব পাকিস্তান থেকে পুঁজি উধাও হতে শুরু করে। পুঁজিপতিগণ চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে পূর্বপাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যও আবার দ্রুততার সাথে বাড়তে শুরু করে। ফলে কোরিয়ার আগে যে শিল্পোন্নয়ন পাকিস্তানে শুরু হয়েছিল -তা পাকিস্তানে মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু কোরিয়া এগিয়ে যায়। একাত্তরের পর পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পখাতটি ধ্বংস করে জুলফিকার আলী ভূট্রো। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে জাতীয়করণ করে ম্যানেজার পদে ভূট্টো তার দলীয় কর্মীদের বসায়। তাঁর এ পলিসিতে শিল্পের ধ্বংসই ত্বরান্বিত হয়।
একাত্তরের পর বাংলাদেশে শিল্পের ধ্বংসে নামেন খোদ শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব দেশের সকল কল-কারখানাগুলোকে জাতীয়করণ করেন। সেগুলির পরিচালনায় দায়িত্বে বসান নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের -যাদের এ ব্যাপারে কোনো রূপ দক্ষতাই ছিল না। শিল্প-কারখানা পরিচালনার দক্ষতা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেখা যায় না। সেটি ছাত্র রাজনীতি ও দলীয় রাজনীতি থেকেও শেখা যায় না। এটি এক হাইস্কিল যোগ্যতা। পুঁজিপতিগণ সে যোগ্যতা অর্জন করে কাজে নেমে। সেটি শিখতে তারা বহু বছর শিল্প ক্ষেত্রে ব্যয় করে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরও সাইকেলের একখানি চাকা বা একটি সূচ নির্মাণ করতে পারবে না -যদি না সে ফাক্টরিতে প্রাকটিকাল দক্ষতা অর্জন না করে। ক্লাসের পাঠ এবং কর্মক্ষেত্রের কাজ এক নয়। সে হুশ মুজিবের ছিল না।
পুঁজি বিনিয়োগে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে ব্যক্তি তাঁর নিজ অর্থে ও ব্যাংকের লোন নিয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করে -সে ব্যক্তি নিজ গরজে সে অর্থের পাহারা দেয়। পাহারাদারীর সে কাজটি কয়েক ঘন্টার অফিস টাইমের কাজ নয়, সেটি সার্বক্ষণিক। নইলে সে অর্থ দুর্বৃ্ত্তদের হাতে লোপাট হয়ে যায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশ যেখানে ক্ষুদার্ত চোর-ডাকাতেরা সর্বত্র গিজ গিজ করে। কিন্তু পুঁজি ও শিল্পের পাহারায় সরকারি চাকুরিজীবী অফিসারদের সে আগ্রহ থাকে না। তাই শিল্পের জাতীয়করণ হলো শিল্পধ্বংসের নিশ্চিত পথ। শেখ মুজিব সে পথটিই বেছে নেয়।
ফলে জাতীয়করণের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক শিল্প প্রতিষ্ঠান আদমজী জুটমিল রাতারাতি লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে থাকে। ফলে যে আদমজী জুটমিলের লাভের অর্থে বিশাল আদমজী স্কুল ও কলেজ গড়ে উঠেছিল সে প্রতিষ্ঠানটি নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে অক্ষম হয়। আদমজী জুটমিল দেশের অর্থনীতির উপর বিশাল বোঝা হয়ে খাড়া হয়। ক্ষতির বোঝা থেকে বাঁচতে সরকার সে মিলটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
তবে শিল্পখাতের মড়ক শুধু আদমজী জুটমিলে সীমিত থাকেনি, সে মড়ক মহামারীর ন্যায় সমগ্র শিল্পাঙ্গণে ছড়িয়ে পড়ে। শেখ মুজিব এভাবেই বাংলাদেশের শিল্পের খাতে বিপর্যয় নামিয়ে আনে্। ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয় ভারতীয় পণ্যের বাজারে। পাকিস্তান আমলে পাটজাত শিল্পে সমগ্র বিশ্বে পূর্ব পাকিস্তান প্রথম ছিল। মুজিব আমলে সে স্থান ভারতের দখলে চলে যায়। বাংলাদেশের কাঁচা পাট দিয়ে ভারতের বন্ধ পাটকলগুলো তরতাজা হয়ে উঠে। শেখ মুজিবের ভারত-সেবী পলিসি এভাবেই ষোলকলায় পূর্ণ হয়। এবং বাংলাদেশ পরিণত হয় ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি। মুজিব এভাবেই শিখিয়ে গেছেন, একটি জাতি কীভাবে ব্যর্থ, ভিক্ষুক ও ইজ্জতহীন হয় -সেটি। ২১/০৬/২০২২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018