বিবিধ ভাবনা ৮৫
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on October 30, 2022
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
এক): বই পড়ায় অনাগ্রহ ও তার নাশকতা
বেশী বেশী ভাত-মাছ-গোশতো খেলে দেহ তাজা-মোটা হয় বটে, কিন্তু তাতে মনের স্বাস্থ্য বাঁচে না। মনের স্বাস্থ্য বাঁচাতে হলে ভাল বই পড়তে হয়। এবং ভাল বই প্রকাশ করতে হয়। কারণ মনের খাদ্য হলো ভাল বই। একটি দেশে মানুষ কতটা সভ্য, ভদ্র ও সুশীল -সেটি বুঝা যায় সেদেশে কতটা ভাল প্রকাশিত হয় এবং সে বইয়ের পাঠক কতজন। এনিয়ে কোন জটিল হিসাব নিকাশের প্রয়োজন পড়ে না। বইয়ে দোকানা গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেই সেটি বুঝা যায়।
বিলেতের পথে ঘাটে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি যাত্রীর ব্যাগে –সে নারী হোক বা পুরুষ হোক, একটি পানির বোতল এবং একখানি বই থাকে। যেন এ দুটি না হলে তাদের কোন সফর বা যাত্রাই হয়না। বাসে বা ট্রেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বা সিট পেলে বসে বসে বই পড়ে। অনেকে হাতে দেখা যায় বিশাল মোটা বই। এটি এদেশের জনগণের এক দারুন গুণ। বুঝা যায়, তাদের জ্ঞানের ক্ষুধাটি কতটা তীব্র। এবং বুঝা যায়, এদেশের মানুষ শুধু দেহের পুষ্টি নিয়ে ভাবে না, মনের পুষ্টি নিয়েও ভাবে। ভাল স্বাস্থ্যের লক্ষণ, সে দেহে থাকে ক্ষুধার তীব্রতা। কিন্তু যে রোগী মরতে বসেছে তার মরণের বহু আগেই ক্ষুধা লোপ পায়। সামনে প্লেট ভরা আঙ্গুর বা বিরানী দিলেও তা তার মুখে উঠেনা।
দেশবাসীর বই পড়া দেখে বোঝা যায়, দেশটা কতটা সামনে এগুবে। লন্ডন শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ –অর্থাৎ ঢাকার প্রায় অর্ধেক। অথচ এই শহরটি যে পরিমাণ বই ও পত্র-পত্রিকা ছাপা হয় তা ১৫০ কোটি মুসলিমের ৫০টির বেশী মুসলিম দেশেও ছাপা হয় না। লন্ডনের পত্রিকার দৈনিক মেইলের সার্কুলেশন প্রায় ১০ লাখ। ঢাকার সবগুলো বইয়ের দোকানে যে পরিমান বই পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশী বই সম্ভবত লন্ডনের বহুতল বিশিষ্ঠ “ফয়েলস” নামক একটি মাত্র বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে। শুধু ইংরাজীতে নয়, বিশ্বের নানা ভাষায়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসে ন্যায় একটি মাত্র প্রকাশনা সংস্থায বছরে যে পরিমান বই ছাপে ও বিদেশে রপ্তানী করে তা ২২টি আরব দেশেও ছাপা হয়না। সম্ভবত বাংলাদেশেও তা ছাপা হয় না। ২০২১ সালের রিপোর্ট এই একটি মাত্র কোম্পানী ব্রিটেনে অর্থনীতিতে ১৫ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশী জোগান দেয় –যা বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিদেশ থেকে পাঠানো সমুদয় রিমিট্যান্সের চেয়ে বেশী।
বাংলাদেশে কোন ভাল বই এক হাজার কপি ছাপলে তা বিক্রি হতে পাঁচ বা দশ বছর লাগে। অর্থাৎ ভাল বই যা ছাপা হয়, সেগুলিও পড়ার লোক নাই। মশা-মাছি যেমন ফুলের উপর বসে না, তেমন অসভ্য ও অভদ্র চেতনার মানুষেরাও ভাল বই কেনে না। যারা অর্থশালি বাঙালি তারাও গাড়ি বা গহনা কিনবে, কিন্তু বই কিনবে না। সেটিকে তারা অপচয় ভাবে। অথচ বই হলো বাড়ির সবচেয়ে উৎকৃষ্ট অলংকার। মুসলিমদের গৌরব যুগে একটি পরিবারের মর্যাদা নির্ধারিত হতো সে বাড়িতে বইয়ের সংগ্রহ দেখে। এথেকেই বুঝা যায়, বাংলাদেশীর কত নীচে নেমেছে এবং তাদের চেতনায় অপুষ্টির মাত্রাটি কত মারাত্মক। চিত্তে যাদের এতো অপুষ্টি, তাদের নিয়ে কি কোন সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায়?
ইসলামের যাত্রা শুরু হয়েছিল বই দিয়ে। সে পবিত্র বইটি হলো পবিত্র কুর’আন। পবিত্র কুর’আনের আগে আরবী ভাষায় কোন বই ছিল না। নামাজ-রোজা ফরজ হওয়ার ১১ বছর পূর্বে সর্বপ্রথম এই বই পড়া ফরজ করা হয়। অর্থাৎ কুর’আন পড়া ফরজ করা হয়। প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ এই কিতাব এতো বেশী পাঠ করতো যে, হাজার হাজার মুসলিমের এর পুরাটাই মুখস্থ হয়ে যায়। বিশ্বের আর কোন কিতাবের ক্ষেত্রেই সেটি হয়নি। বিশ্বে এমন একজন ব্যক্তিও পাওয়া যাবে না যে কুর’আন ভি্ন্ন অন্য কোন বই বা ধর্মগ্রন্থের পুরাটা মুখস্থ করেছে। এমন কি কোন লেখকও তাঁর নিজের বইয়ের পুরাটা মুখস্থ্য বলতে পারে না।
বীজ বপনের আগের জমি চাষ দিতে হয়। নইলে সে ভূমিতে বীজ গজায় না। তেমনি কুর’আনী জ্ঞানের চাষ না বাড়ালে সে চিত্তে ইসলামের বৃক্ষ গজায় না। এখানেই আজকের মুসলিমদের সমস্যা। তারা কুর’আন পড়লেও জ্ঞানের এই সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাবটি না বুঝে পড়ে। ফলে মুসলিমগণ দারুন ব্যর্থ হচ্ছে প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠতে। ব্যর্থ হচ্ছে ইসলামের মূল শিক্ষাগুলির প্রকাশ ঘটাতে। এজন্যই নবীজী (সা)’র আমলের ইসলাম –যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, ঐক্য ও জিহাদ তা বাংলাদেশের মত দেশে বেঁচে নাই।
আরব দেশগুলিতে বহু হারাম ও নিষিদ্ধ বস্তুই সিদ্ধ। এমনকি সৌদি আরবে নাচগান, কনসার্টসহ পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক পণ্যের বাজার অবাধ করা হচ্ছে। কিন্তু নিষিদ্ধ হলো স্বাধীন জ্ঞানচর্চা। জনগণ সেটিই পড়তে পারে যা সরকার পড়াতে চায়। মিশর, সৌদি আরব, আমিরাত, সিরিয়া, কাতারসহ ২২টি আরব দেশের কোন একটিতেও বই লেখার বা পত্রিকা প্রকাশের কোন স্বাধীনতা নাই। আরব দেশগুলির কোনটিতেই গণতন্ত্র নাই। সবগুলিই স্বৈরাচার কবলিত। এক পৃষ্ঠার লিফলেট ছাপাতেও সরকারের অনুমতি লাগে। একই অবস্থা বাংলাদেশেও। বই যত সত্যনির্ভর এবং জ্ঞানগর্ভই হোক না কেন, তাতে সরকারের ভাবমুর্তির ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে -সেটি নিষিদ্ধ। এরূপ বই লেখাই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশে এ অপরাধে (?) প্রাণ দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ প্রতিটি স্বৈরাচার কবলিত দেশে চলছে চরম বুদ্ধিবৃত্তিক ফ্যাসিবাদ। জেলখানায় তো জ্ঞানচর্চা হয়না। সেখানে যা খেতে দেয়া হয় বা পড়তে দেয়া হয়ে সেগুলিই খেতে হয় ও পড়তে হয়। সেখানে আয়োজনটি স্রেফ কোনমত বাঁচিয়ে রাখার। ফলে এমন কারাবন্দী অবস্থায় জ্ঞানচর্চা কীভাবে এগুবে? সভ্যমানুষই বা গড়ে উঠবে কীরূপে? স্বৈরশাসনের এটিই হলো সবচেয়ে বড় নাশকতা। সমগ্র দেশ তখন জেলখানায় পরিণত হয়। এরূপ অসভ্য শাসন অসম্ভব করে সভ্য মানুষ রূপে বেড়ে উঠা। আর মানুষ সভ্য রূপে বেড়ে না উঠলে তারা অসভ্য ভোটডাকাতকেও মাননীয় ও শ্রদ্ধে্য় প্রধানমন্ত্রী বলবে –সেটিই তো স্বাভাবিক।
দুই). নাই জনগণ পরিবর্তনের আন্দোলন
বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু জনগণ পরিবর্তনের আন্দোলন নাই। এমনকি বাংলাদেশীদের পরিচালিত টিভি ও ইউটিউব টক শোগুলিতেও জনগণ পরিবর্তনের কোন আলোচনা নাই। যেন দেশের যত সমস্যা তা শুধু সরকারকে নিয়েই। এনিয়ে বিতর্ক নাই যে, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী-ভোটডাকাত-দুর্বৃত্তদের সরকার দেশের জন্য দারুন সমস্যা। কিন্তু সে সাথে গুরুতর সমস্যা তো দেশের জনগণকে নিয়েও।
যে দেশের জনগণ গণতন্ত্রের খুনি, বাকশালী ফ্যাসিবাদের জনক, হিন্দুত্ববাদী ভারতের সেবাদাস ও দুর্নীতির লালন কর্তাকে ঘৃণা না করে বরং নেতা, জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলে, সে জনগণকে দিয়ে কি সভ্য রাষ্ট্র নির্মিত হয়? এমন জনগণ বরং ভোট ডাকাত হাসিনাকে মাননীয় ও শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী বলবে –সেটিই তো স্বাভাবিক। এমন জনগণই তো ক্ষেত্র তৈরী করে ভোটডাকাতির ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের।
ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়া যায় না। তেমনি জনগণকে না পাল্টালে সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় না। এটিই নবীজী (সা:)’র জীবনের শিক্ষা। জনগণের মাঝে সর্বপ্রথম মিথ্যা ও দুর্বৃত্তিকে ঘৃণা করার সামর্থ্য এবং সত্যকে ভালবাসার গুণ সৃষ্টি করতে হয়। তাদেরকে দুর্বৃত্ত নির্মূলের মুজাহিদে পরিণত করতে হয়। মদিনায় হিজরতের পর নবীজী (সা:) ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় একদিনও বিলম্ব করেননি। তিনি ১০টি বছর সে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। কিন্তু তার আগে মক্কায় ১৩টি বছর নিরলস ভাবে কাজ করেছেন জনগণ পাল্টানোর এজেন্ডা নিয়ে। এটি ছিল তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ। সে জিহাদের অস্ত্র ছিল কুর’আন। পবিত্র কুর’আনে সে জিহাদের হুকুম এসেছে এভাবে, “জাহিদু বিহি জিহাদান কবিরা”। অর্থ: এই কুর’আন দিয়ে বড় জিহাদ করো। কিন্তু সে শুরুর কাজটিই বাংলাদেশে হচ্ছে না। অনেকেই ভিত না গড়ে বিশাল ইমারত নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে।
তিন). পাকিস্তানের ইমরান খান: এক বিরল ব্যতিক্রম
সমগ্র মুসলিম বিশ্বের বুকে পাকিস্তানের ইমরান খান এক বিরল ব্যতিক্রম। তাঁর লড়াইটি শুধু সরকার পরিবর্তনের নয়। লড়াইটি জনগণের পরিবর্তনেও। তিনি দেশজুড়ে খুলেছেন এক উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কোটি কোটি শিক্ষিত যুবক এবং সাধারণ মানুষ। তাদের নিয়েই তাঁর প্রতিদিনের ক্লাস। সে ক্লাসে তাঁর প্রতিটি লেকচারই অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ ও শিক্ষণীয়। রাজনীতিকে তিনি গণশিক্ষার মাধ্যমে পরিণত করেছেন। তাঁর হাজার হাজার ভক্ত সোসাল মিডিয়ার সাহায্যে তাঁর বয়ানকে কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। জনগণ সরকারী টিভির বদলে সোসাল মিডয়ায় তার কথা শুনে। ফলে সমগ্র দেশ পরিণত হয়েছে পাঠশালায়।
ইমরান খান তাঁর লেকচারে পবিত্র কুর’আনের দর্শন, নবীজী (সা:)’র জীবন চরিত ও ইসলামের ইতিহাসের বীরপুরুষদের কাহিনী নিয়ে আসেন। বক্তৃতা শুরু করেন কুর’আনের আয়াত দিয়ে। তার বক্তৃতায় ধ্বনিত হয় আল্লামা ইকবালের প্যান-ইসলামিক দর্শন। তিনি শুধু পাকিস্তান নিয়ে ভাবেন না, তাঁর ভাবনয় স্থান পায় সমগ্র মুসলিম উম্মাহ কল্যাণের চিন্তা। সেজন্য ইমরান খান শুধু পাকিস্তানীদের নয়, বহু মুসলিম দেশের ঈমানদার মানুষদেরও মনজয় করেছেন। তাঁর মধ্যে তারা দেখছেন নিজেদের স্বপ্ন-পূরণের সম্ভাবনা।
ইমরান খানের কারণে পাকিস্তানের রাজপথে ও জনসভায় “নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর” এবাং “পাকিস্তান কা মতলব কিয়া, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” য়ের ন্যায় ১৯৪৭য়ের স্লোগানগুলি আবার ফিরে এসেছে। জেগে উঠেছে প্যান-ইসলামিজম। ফলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ইমরান খান অসম্ভব করেছেন নওয়াজ শরীফ ও ভূট্টো পরিবারের শাসন। এমনকি অসম্ভব করেছে সেনাবাহিনীর দখলদারীও। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি একটি আশাপ্রদ দিক। ৩০/১০/২০২২
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018