বেঈমানদের উপর সংস্কারের দায়ভার?

ফিরোজ মাহবুব কামাল

সূরা মায়েদার ৪৪,৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা: যাদের বিচার-বিবেচনা ও রায় শরীয়তী আইন অনুসারে হয় না, তারা কাফের, তারা জালেম এবং তারা ফাসেক। শরীয়তের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বন্টন বিষয়ক আইন। এ বিষয়ে আইন রচনা দায়িত্ব মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার হাতে ছেড়ে দেননি, পুরাটাই নিজ দায়িত্বে রেখেছেন। এমনকি নবীজী (সা:)’র হাতেও নয়। ফলে আজ অবধি কোন মুসলিম শাসক এই আইনে হাত দেয়নি। এমন কি ব্রিটিশরা ১৯০ বছর ভারত শাসন করলেও শরিয়তের এ আইনে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন করেনি। তবে আজ কেন ইসলামের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ? এবং সেটি প্রফেসর ইউনুসের সংস্কারকদের দ্বারা। এটি কি শয়তানের প্ররোচনায়? এটি হিন্দুত্ববাদী ভারতের উস্কানিতে?   

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটি শরীয়তী আইনের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। এ কমিটিতে যারা আছে তারা বহু আগে থেকেই এনজিওজীবী এবং পরিচিত তাদের ইসলামিরোধী বয়ানের জন্য। তাদের যুদ্ধটি এখানে আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে। তারা মহান স্রষ্টার দেয়া আইনের সংস্কার চায়। প্রশ্ন হলো, এতবড় স্পর্ধা তারা পায় কোত্থেকে? তারা কি নিজেদেরকে সর্বপ্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহ তা’আলার চেয়েও অধিক বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান মনে করে? তারা কি মনে করে নারীর কল্যাণের বিষয়গুলি করুণাময় মহান স্রষ্টার চেয়েও বেশি বুঝেন! নাউজুবিল্লাহ। তাদের দাবি, ছেলে ও মেয়ে উভয়কে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির সমান ভাগ দিতে হবে। তাদের বিদ্রোহ মহান আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।

তাদের বিদ্রোহ আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে। আমরা সবাই জানি, পতিতাবৃত্তির ন্যায় ব্যভিচারের অসভ্য বাণিজ্য হচ্ছে বাংলাদেশে। এটি পাপের বাণিজ্য। কোন মুসলিম এ পাপকে প্রশ্রয় দিতে পারে না। বরং প্রতিটি মুসলিমের ও মুসলিম রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হলো এ পাপের নির্মূল। এ পাপ শাস্তিযোগ্য গুরুতর অপরাধ। ব্যাভিচারী বিবাহিত হলে তার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। অবিবাহিত হলো শাস্তি হলো ১০০টি বেত্রাঘাত। এরূপ গুরুতর অপরাধ কখনোই  বৈধ পেশা রূপে গণ্য হতে পারেনা। অথচ ইউনুস সরকারের নারী সংস্কার কমিটির সদস্যগণ ব্যভিচারীদের আইনসম্মত শ্রমজীবীর মর্যাদা দিতে বলেছে। অর্থাৎ তাদের যথার্থ মজুরি, পেনশন ও বোনাস থাকতে হবে। তাদের পেশার আইনী স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এটি তো সুস্পষ্ট বিদ্রোহ ও বেইমানী মহান আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে।

যারা এরকম প্রস্তাব রাখে তাদের বেঈমানী এবং বিবেকশূণ্যতা কি গোপন থাকার বিষয়। কোনটি বৈধ পেশা আর কোনটি শাস্তিযোগ্য পাপ -সে স্বাভাবিক বোধটুকুও তো তাদের নাই। পাপ করাই শুধু পাপ নয়, পাপকে এরূপ স্বীকৃতি ও প্রশ্রয় দেয়াও তো পাপ।  সকল সংস্কারের আগে যারা এই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটির সদস্যদের চেতনার ও চরিত্রের সংস্কার দরকার। তাদের আচরণ তো কাফের, জালিম ও ফাসিকের মত। নারী অধিকারের নামে এদের যুদ্ধ তো ইসলামের বিরুদ্ধে।

বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করতে হয়, ইসলামের এই চিহ্নিত শত্রুদের হাতে কেন সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হলো? ইসলামের এই চিহ্নিত শত্রুদের চিনতে এতো ব্যর্থতা কেন? এরূপ ব্যর্থতা হতে থাকলো তো প্রফেসর ইউনুসের নিজের ঈমান ও যোগ্যতা নিয়ে মানুষকে সন্দেহ সৃষ্টি হবে। এরূপ চিহ্নিত বিদ্রোহী ও বেইমানদের উপর সংস্কারের দায়িত্ব দেয়ার গুরুতর অপরাধটি ইউনুস সরকারকেও অপরাধী রূপ চিত্রিত করবে।

দেশের জনগণ চায় না, তাদের প্রিয় মানুষটি শয়তানের প্রিয় মানুষে পরিণত হোক। তুরস্কের কামাল পাশা নিয়ে অন্যান্যদের মত আল্লামা ইকবালও বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন। কারণ তিনি বীর বিক্রমে শত্রুবাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন এবং তুরস্কের স্বাধীনতা বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কামাল পাশাই পরবর্তীতে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। আরবীতে আযান, আরবী বর্ণমালা, দাড়ি রাখা, টুপি পড়া ও মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করেন। মদ, উলঙ্গ নাচ-গান ও বেপর্দাকে প্রসার দেন। দেশকে পাশ্চাত্যমুখী করেন। শত শত আলেমকে হত্যা করেন। নিজেও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে সৃষ্ট জটিল রোগে মারা যান। কবি আল্লামা ইকবাল তখন ফার্সিতে আফসোস ভরে লিখলেন: “মোস্তাফায়ে মা মোস্তাফায়ে ফিরাউন শোদ।” অর্থাৎ আমাদের পছন্দের মানুষটি তো ফিরাউনের পছন্দের মানুষে পরিণত হলো।

বাংলাদেশের মানুষও চায় না, তাদের প্রিয় মানুষটি শয়তানের প্রিয় মানুষে পরিণত হোক। জুলাই-আগস্টের ন্যায় ছাত্র-জনতাকে যেন আরেক বার যুদ্ধে নামতে না হয়।  অতএব অনুরোধ, প্রফেসর ইউনুস সাবধান হয়ে যান। আগুন নিয়ে খেলবেন না। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবেন না। ছাত্র-জনতা তাড়া করলে পালাবার রাস্তা পাবেন না। ২১/০৪/২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *