বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণে রুখতে হবে ভূমিদস্যুদের

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বাংলাদেশে সবচেয়ে দামী হলো দেশের ভূমি। তাই ডাকাতদের নজর পড়েছে এ ভূমির উপর। দেশ পরিণত হয়েছে ভূমিদস্যুদের অভয় অরণ্যে। যাদের ডাকাতির ক্ষমতা আছে তারা ইচ্ছামত ডাকাতি করছে এ ভূমির উপর। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিদস্যু হলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। সেনা বাহিনীর কাজ হয়েছে সরকারি সহায়তায় ঢাকার অভিজাত এলাকার জমি দখলে নিয়ে সে জমির উপর সেনা অফিসারদের জন্য প্লট নির্মাণ।। পাকিস্তান আমলের সে ভূমিদস্যুতাকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীও বাঁচিয়ে রেখেছে। যেসব প্লট অফিসারদের জ্ন্য বরাদ্দ করা হয় তার মূল্য কোটি কোটি টাকা। এটি হলো সেনা অফিসারদের কোটিপতি বানানোর প্রকল্প। কোন সভ্য দেশে কি এমন রীতি আছে?

যখনই সেনাবাহিনী দেশের শাসন ক্ষমতা হাতে নিয়েছে -তখন সে ডাকাতি বেগবান হয়েছে। অপর দিকে তাদেরকে ডাকাতির সুযোগ করে দিয়েছে শেখ হাসিনার ন্যায় ফ্যাসিস্টগণও। কারণ ভোটডাকাতির কাজে তারা যেমন সেনাবাহিনীকে কাজে লাগিয়েছে, তেমনি তাদের ডাকাতির সুযোগও করে দিয়েছে। সেনাবাহিনীকে দিয়ে যে শেখ হাসিনা শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়েছে। প্রতিদানে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর গলার রশি ঢিল করে দিয়েছে এবং সে সাথে সুযোগ-সুবিধাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন হলো, আবসিক প্লটের প্রয়োজন কি শুধু আর্মির অফিসারদের? শুধু কি তারাই দেশের খেদমত করে? দেশে কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ, রেমিট্যান্স শ্রমিক ও অন্যান্য নানা পেশার লোক যারা নানা কর্মের মধ্য দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করছে -তাদের অবদান কি কম? তাদের পরিবারের জন্য কি প্লটের প্রয়োজন নাই? সেনাবাহিনীর হাতে যেহেতু অস্ত্র আছে, ফলে তাদের ডাকাতির সামর্থ্যও আছে -তবে এজন্যই কি তাদের বাড়তি অধিকার? এটি তো নিরেট ডাকাতি। ডাকাতগণ তো অস্ত্রের জোরে সেটিই করে থাকে। কোন সভ্য দেশে কি সেনা বাহিনীর অফিসারদের এরূপ প্লট দেয়া হয়? সে সুযোগ প্রতিবেশী ভারতে দেয়া হয়না। ইউরোপের দেশগুলিতে দেয়া হয়না। বাংলাদেশেই বা দেয়া হবে কেন?

গাড়ি, বাড়ি, অর্থ ও প্লটের লোভ দেখিয়ে কাউকে সেনাবাহিনীতে ভর্তি করার প্রয়োজন নাই। দেশের প্রতিরক্ষার কাজটি ইসলামে পবিত্র ইবাদত। এ কাজ দেশপ্রমের প্রতীক। তাই যাদের মাঝে পবিত্র ইবাদতের তাড়না আছে এবং আছে প্রবল দেশপ্রেম -একমাত্র তাদেরকেই সেনাবাহিনীতে নিতে হবে। বাংলাদেশে এমন ঈমানদার ও দেশপ্রেমিকদের সংখ্যাটি বিশাল। এবং তারা বেকার। সেনাবাহিনীতে একমাত্র এসব ঈমানদার ও দেশপ্রেমিকদের নেয়া হোক এবং বন্ধ করা হোক স্বার্থান্বেষী অর্থলিপ্সুদের নিয়োগ।

শুধু সেনাবাহিনী নয়, ভূমিদস্যুতে নেমেছে রাজউক’য়ের ন্যায় সরকারি প্রতিষ্ঠানও। আবাসিক প্রকল্পের নামে তারাও জনগণের জমি কবজা করে তার উপর প্লট বানিয়ে মন্ত্রী, এমপি, সরকারি দলের রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ দেয়। ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা হলো সেসব প্রকল্পের উদাহরণ। এগুলি হলো কিছু লোককে কোটিপতি এলিট বানানোর প্রকল্প। এভাবেই সৃষ্টি করা হচ্ছে পরিকল্পিত বৈষম্য। যে কোন সভ্য সরকারের দায়িত্ব হলো বৈষম্যমুক্ত ও সুবিচারপূর্ণ সমাজ নির্মাণ। অথচ বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে না। বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি পরিণত হয়েছে জুলুম, অবিচার ও বৈষম্য সৃষ্টির হাতিয়ারে। বাংলাদেশকে একটি সভ্য রাষ্ট্র রূপে গড়ে তোলার স্বার্থে এরূপ ভূমি ডাকাতিকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ আবাসিক প্রকল্প গড়ে প্লটগুলিকে খোলা বাজারে বাজার দরে বিক্রয় করতে হবে এবং সকল নাগরিককে প্লট ক্রয়ের সমান সুযোগ দিতে হবে। এভাবে রাষ্ট্রীয় ভাণ্ডারে জমা হতে পারে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা -যা ব্যয় হতে পারে গ্রামিন দরিদ্র মানুষের গৃহায়নে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *