ব্যর্থতা মুসলিম হওয়ায়
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 12, 2021
- Bangla Articles, ইসলাম
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
যে ব্যর্থতা জনগণের
সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা শুরু করলে সে পথটির শেষ অবধি চলতে হয়। শুধু নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলের মাঝে সীমিত থাকলে পথচলার সে কাজটি পুরা হয় না। হাজারো মাইলের যাত্রা পথে যদি এক বা আধা মাইল পথও বাঁকি থাকে তাতে গন্তব্যস্থলে পৌঁছা যায় না। পথের মাঝে যেমন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশ আসে, তেমনি ধুসর মরুভূমি, দুর্গম পাহাড়, নদ-নদী, অশান্ত সমূদ্রও আসে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হলে বাঁধাবিঘ্নতা যত বিশলই হোক, তা দেখে দমে গেলে চলে না। ধৈর্য ধরে ও কষ্ট সয়ে সবটাই চলতে হয়। সফলতা তো আসে এভাবেই। নইলে ব্যর্থতাই অনিবার্য হয়। একই রূপ অবস্থা আল্লাহর পথে পথ-চলায়। এ পথে শুধু নামায-রোযা-হজ-যাকাতই আসে না, আসে প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকে প্রতিরোধও। আসে রক্তাত্ব লড়াই ও জিহাদ। আসে আর্থিক ও দৈহিক ক্ষয়ক্ষতি। আসে মৃত্যু। তবে বাধাবিঘ্নতা ও ক্ষয়ক্ষতি যত বিশালই হোক, সিরাতুল মোস্তাকিমে চলার পথে কোথাও থামার সুযোগ নেই। অনুমতি নেই বিচ্যূত হওয়ারও। বিচ্যুত ও পথভ্রষ্ট হওয়ার অর্থই হলো মহান আল্লাহপাকের কাছে অভিশপ্ত হওয়া। সে বিচ্যুতির পরিনাম জাহান্নামের আগুণ। অপর দিকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার আগে নিজ ইচ্ছায় থেমে গেলে ব্যর্থ হয় পূর্বের সকল মেহনত। প্রকৃত মুসলিমের কাছে সেটিও তাই অচিন্তনীয়। মু’মিনের পথ চলা শেষ হয় একমাত্র আল্লাহর পথে শাহাদতে অথবা মৃত্যুতে। সে কখনোই আল্লাহর পথে চলায় থেমে যায় না।
কিন্তু যারা মু’মিনের অকল্যাণ চায়, তারা কখনোই তাকে কল্যাণের পথে তথা সিরাতুল মুস্তাকীমের সবটুকু চলতে দিতে রাজী নয়। তারা চায়, মুসলিমের জীবন সকাল-সন্ধা ঘুরপাক খাক স্রেফ নামায-রোযা, হজ-যাকাত ও কিছু নফল ইবাদতের মাঝে। পুরা জীবন ইসলামী করতে রাজী নয়। মহান অআল্লাহতায়ালা কি চান -তা নিয়েও তাদের ভ্রুক্ষেপ নাই। তাই মসজিদের জায়নামাজে ও রোযার মাসে অনেকেই মুসলিম, কিন্তু রাজনীতিতে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদী, বিদেশ নীতিতে কাফের রাষ্ট্রের বন্ধু, অর্থনীতিতে সূদখোর, আদালতে কাফরদের আইনের আত্মসমর্পিত, সংস্কৃতিতে হিন্দু, এবং পুলিশ ও প্রশাসক রূপে পতিতাপল্লী, জুয়া, ক্যাসিনো ও মদের ব্যবসার পাহারাদার। মুসলিম রূপে নিজেকে দাবি করলে কি হবে, জীবনের বেশী ভাগ ক্ষেত্রই ইসলামী বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে পরিপূর্ণ। মহান আল্লাহতায়ালার একটি মাত্র হুকুম অমান্য করায় ইবলিস অভিশপ্ত শয়তানের পরিণত হয়। অথচ মুসলিম সেরূপ অবাধ্যতার একটি নয়, বরং অসংখ্য। তারা নিজেদের দূরে রাখে ইসলামের বিজয় সাধনের ফরজ জিহাদ থেকে। শুধু বাংলাদেশের সরকারেরই নয়,বহু ইসলামি দল বা জামায়াতেরও সেটিই মূল প্রকল্প। তারা মুসলিম জনগণকে জিহাদের অংশটুকু অতিক্রমে অনুমতি বা সমর্থণ দিতে রাজী নয়। ফলে বাঙালী মুসলিমের জীবন ব্যর্থতায় ভরে উঠেছে।
বহু কোটি বাঙালী মুসলিমের মাঝে ক’জন অতিক্রম করেছে জিহাদের ধাপ? ক’জন পুরা পথটা চলেছেন আল্লাহর রাস্তায়? ক’জন নামায-রোযা-হজ-যাকাতের গণ্ডি ডিঙ্গিয়ে সামনে এগিয়েছেন? যে মুসলিম ভূমিতে ইসলাম পরাজিত এবং ইসলামের শরিয়ত গিয়ে পড়েছে আঁস্তাকুড়ে -সে ভূমিতে মু’মিনের জীবেন জিহাদ থাকবে না -সেটি কি ভাবা যায়? কিন্তু ক’জনের জীবনে এসেছে সে জিহাদ? সাহাবাগণ চলেছেন সিরাতুল মুস্তাকীমের পুরাটা পথ। অথচ এক্ষেত্রে বাঙালী মুসলিমদের ব্যর্থতাটি বিশাল। সংখ্যায় বিশাল হয়েও মহান আল্লাহর দ্বীনের পরাজয়কে তারা নিরবে সয়ে নিয়েছে। সে পরাজয় নিয়ে তাদের মধ্যে কোন দুঃখবোধ বা মাতমও নেই। বরং আছে বছরের নানা দিনে নানা রূপ উৎসব। মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের সাথে বাঙালী মুসলিমের সংযোগ যে কতটা ছিন্ন -সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাঁকী থাকে? এরূপ বিচ্ছেদের মূল কারণ, ইসলামের শত্রুশক্তির হাতে অধিকৃতি। দেশ অধিকৃত হলে অধিকৃতি বাড়ে মুসলিমের চেতনার ভূমিতেও। ইসলামের সাথে বিচ্ছেদের সে বিষয়টি তাই শুধু দেশের সেক্যুলারিস্টদের একার নয়।বিচ্ছেদ বেড়েছে তাদেরও যারা নিজেদের ইসলামের পক্ষের শক্তি রূপে দাবী করে তাদের জীবনেও। ফলে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে তাদের ময়দানে দেখা না গেলে কি হবে, রাজপথে তারা বিরাট বিরাট বিজয় মিছিল নিয়ে নামে ইসলামের শত্রুপক্ষের বিজয় দিবসগুলোতে।
ব্যর্থতা শিক্ষাঙ্গণে
বাঙালী মুসলিমদের এরূপ ব্যর্থতার মূল কারণ, ঈমান পুষ্টি পায়নি দেশের প্রচলিত শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে। বরং বাড়িয়েছে ভয়ানক অপুষ্টি। ঈমান তো পুষ্টি পায় পবিত্র কোর’আনের জ্ঞান থেকে। অথচ অবহেলা সে জ্ঞানার্জনে। দুষিত পরিবেশে দেহের স্বাস্থ্যহীন ঘটে, তেমন ঈমানের স্বাস্থ্যহানি ঘটে দূষিত শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে। এতে অসম্ভব হয় সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা। তখন বেশী বেশী খরিদদার পায় দেশের পতিতালয়, মদ্যশালা, নৈশক্লাব, সূদী ব্যাংক, সেক্যুলার রাজনৈতীক দল ও ধর্মব্যবসায়ীগণ। একই রূপ কারণে অতীতে সিরাতুলে চলার সামর্থ্য পায়নি জাহিলী যুগের বহু আরব। রাষ্ট্র ইসলামি না হওয়ার কারণে অনুরূপ জাহিলী জামানা ফিরে আসে তথাকথিত মুসলিম ভূমিতেও। দেশবাসী তখন নিজেদেরকে মুসলিম রূপে পরিচয় দেয় নিজ চেতনা, নিজ দেশ ও নিজ সমাজের ইসলামিকরণ না করেই। ব্যক্তির জীবনে ইসলাম গুরুত্ব পেলে জগত ও জীবন নিয়ে সমগ্র ধারণাই পাল্টে যায়। পাল্টে যায় জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পাল্টে যায় নৈতিক চরিত্র, আচরণ, পোষাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য-পানীয়, কর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। একজন কাফের থেকে জীবনের এসব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে কতটা পার্থক্য সৃষ্টি হলো -তা থেকেই নির্ণীত হয় তার মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার সঠিক পরিমাপ। নবীজী (সাঃ)র আমলে সে পার্থক্যটি ছিল বিশাল। কাফেরদের থেকে সাহাবাদের পার্থক্য শুধু নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাতের ইবাদতে সীমিত ছিল না। সে পার্থক্যটি স্রেফ মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর নবী-রাসূল, ফেরেশতা, পরকাল, দোযখ-বেহেশত ও হাশর দিনের বিশ্বাস নিয়ে নয়। বরং সুস্পষ্ট পার্থক্য ছিল জীবনের স্বপ্ন, মিশন, ভিশন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে।
যে ব্যক্তি পূর্ব দিকের দিকের যাত্রী, সে কি কখনো পশ্চিমে যাওয়া ব্যক্তির সাথে কি একই ট্রেনে উঠে? তেমনি মুসলিমও পারে না কাফের বা সেকুলার ব্যক্তির সাথে একই লক্ষ্যে রাজনীতি করতে। পারে না যুদ্ধবিগ্রহেও অংশ নিতে। কারণ জীবনের ভিশন ও মিশনের ন্যায় কখনই এক হতে পারে না উভয়ের রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহ। নবীজী (সাঃ) থেকে বর্নীত হয়েছে, এ দুনিয়ার যাদের সাথে জীবন কাটবে হাশরেরর দিনেও তাদের সাথেই বিচারেরর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সাথেই হবে পরকালের বাসস্থান।ফলে বংশসূত্রে মুসলিম রূপে পরিচিত হয়েও যারা কাফের, মুশরিক ও নাস্তিকদের সাথে দল বাঁধে এবং তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহ করে পরকালে সে কাফেরদের সাথেই তাদের জাহান্নামে হাজির হতে হবে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে কি সেটিই বেশী বেশী হয়নি? মুসলিমের রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহ হলো মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন ও শরিয়তকে বিজয়ী করার হাতিয়ার। অপরদিকে কাফেরগণ রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহ করে ইসলামের নির্মূলে এবং মুসলিম রাষ্ট্র দখলে।একাত্তরে তেমন একটি যুদ্ধেই সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদীগণ ভারতীয় কাফেরদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে। মুসলিমদের প্রতিটি যুদ্ধই জিহাদ,এবং সে যুদ্ধে যারা প্রাণ দেয় তারা সবাই শহীদ। কিন্তু একাত্তরের বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধটি কখনোই জিহাদের মর্যাদা পায়নি। জিহাদে পরিণত করা তাদের লক্ষ্যও ছিল না। এটি ছিল বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের পুরাপুরি একটি ডি-ইসলামাইজড যুদ্ধ। ফলে সে যুদ্ধে বাঙালী জাতীয়তাবাদীগণ বিজয়ী হলেও তাতে ইসলাম ও মুসলিমের শক্তি বা গৌরব বাড়েনি। বরং শক্তি ও গৌরবে বেড়েছ ভারতীয় হিন্দুদের; এবং শক্তিহানি হয়েছে উপমহাদেশের মুসলিমদের।
ইসলাম থেকে দূরে সরার পরিনাম
সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামীকরণ কতটা হলো সেটি ধরা পড়ে কাফেরদের থেকে মুসলিম নাগরিকের বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আচরণগত পার্থক্য থেকে। ইসলাম থেকে দূরে সরাটি যতই বিশাল হয় ততই বিলুপ্ত হয় সে পার্থক্য।তখন মিল বা অভিন্নতাটি প্রবল হয় কাফেরদের সাথে। উভয়ের বিজয় উৎসবও তখনই একই লগ্নে উপনিত হয়। ভারতীয় পৌত্তলিক ও বাঙালী মুসলিমের উভয়ের বিজয় উৎসব তাই ১৬ই ডিসেম্বর। সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে এটি এক অভিনব ঘটনা। মিলগুলি ধরা পড়ে আরো অনেক ক্ষেত্রে।তারই উদাহরণঃ ভিন্নতা নেই ভারতীয় সূদী ব্যাংক, প্রশাসন, মিডিয়া, বুদ্ধিবৃত্তি, সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, পতিতাপল্লী, মদ্যশালা, সিনেমা ও নাচগানের আসর থেকে বাংলাদেশী ব্যাংক, প্রশাসন, মিডিয়া, বুদ্ধিবৃত্তি, সাহিত্য-সংস্কৃতি,পতিতাপল্লী, মদ্যশালা, সিনেমা ও নাচগানের।ভিন্নতা নাই ভারতীয় হিন্দুদের রাজনীতি ও শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকেও। এরূপ অবিকল অভিন্নতার কারণেই বাংলাদেশে ইসলামের উত্থান ও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা রুখতে ভারতীয় কাফেরদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে যুদ্ধ লড়তে কোনরূপ আপত্তি নাই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীর। যে ইসলামে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার আছে এবং জিহাদও আছে -সে ইসলামকে উভয়ের দেশের সরকারই গলা মিলিয়ে জঙ্গিবাদ বা জঙ্গি ইসলাম বলে। ইসলামের পরাজয় বাড়লে,এবং পাকিস্তানের ন্যায় কোন মুসলিম দেশ খণ্ডিত হলে বরং উভয়েরই আনন্দ বাড়ে।
কোন কিছুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ বা ওজন মাপা যেমন সহজ, তেমনি অতি সহজ হলো কুফরি, মুনাফেকী বা অনৈসলামের পরিমাপ। কারণ এগুলো গোপন থাকার বিষয় নয়। সে সহজ বিষয়গুলোকে সনাক্ত করার মধ্যেই মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজ্ঞা। ইসলামে সে জ্ঞানার্জনটি ফরজ।বাঘ-ভালুকের ন্যায় হিংস্র জানোয়ারদের চিনবার সামর্থ্য না থাকলে সেগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যুক্তি থাকে কি? তেমনি ইসলামের শত্রুদের চেনার সামর্থ্য মানুষকে দেয়া না হলে মুসলিম জীবনে জিহাদের ন্যায় সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের বৈধতা থাকে কি? তাই ইসলামের শত্রুদের চেনার সে কাজকে সহজ করতেই মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত নাযিল করেছেন। সে সাথে কাণ্ডজ্ঞানও দিয়েছেন। সেটি না হলে ইসলামের সহিংস শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব করার ন্যায় কবিরা গুনাহ থেকে ঈমানদারগণ রক্ষা পেত কি করে? মুসলিম রাষ্ট্রের শিক্ষা-সংস্কৃতির দায়িত্ব হলো সে সামর্থ্য বাড়ানো। চেনার সে কাজটি অতি সহজ হয় ব্যক্তির রাজনীতি,সংস্কৃতি, অর্থনীতি,আইন-আদালত ও শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামের শিক্ষা, দর্শন, বিধিবিধান ও মূল্যবোধ থেকে কতটা বিচ্যুৎ তা দেখে। ব্যক্তির বেঈমানী বা মুনাফিকী শুধু মহান আল্লাহতায়ালাই নন,ব্যক্তিও টের পায়। টের পাওয়াটি অতি সহজ বলেই হযরত উমর (রাঃ) অতি মহামূল্যবান কথা বলেছেন।তিনি বলেছেন, “মহান আল্লাহতায়ালার কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নাও।” মানুষের প্রজ্ঞা ও কল্যাণ শুধু তার কাজের মধ্যে নয়; বরং সে কাজ কতটা নির্ভূল ও কল্যাণকর সে হিসাবটি বার বার নেয়ার মধ্যে। ব্যস্ত সড়কে গাড়ির চালকের কি এক নিমিষের জন্যও চোখ বন্ধ করার সুযোগ থাকে? তেমনি চোখ বন্ধ রাখার সুযোগ নাই জীবন চালনাতেই। সেটি হলে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুতিটি অনিবার্য। এবং চোখ খোলে মহান আল্লাহতায়ালার পথে চলাটাই হলো ঈমানদারের তাকওয়া। এখানে থাকে যেমন সে পথ থেকে বিচ্যুতির ভয়,তেমনি থাকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে হিসাব দেয়ার ভয়। প্রকৃত গাফেল বা আহাম্মক তো সে ব্যক্তি,যার মধ্যে সে হিসাব নেয়ায় আগ্রহ নেই। প্রকৃত মু’মিন ব্যক্তি শুধু নিজের হিসাবটিই নেয় না, নিজ পরিবার, নিজ সমাজ,নিজ দেশ, ও নিজ উম্মাহর হিসাবটিও নেয়। এভাবেই তো বাড়ে উম্মাহর সাথে ঈমানদারের সংশ্লিষ্টতা। তখন তার জীবনে আসে জিহাদ এবং সে জিহাদে পরম কোরবানীর প্রেরণা। তাই নিজ পরিবার, নিজ দেশ,নিজ উম্মাহর ব্যাপারে চোখ বুঁজে চলাটি ঈমানদারী নয়। বরং ঈমানশূণ্যতা তথা কুফরির আলামত। তাদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহতায়ালার হুশিয়ারি, “এ দুনিয়ায় যারা অন্ধ থাকাকে পছন্দ করলো, আখেরাতেও তারা হবে অন্ধ;এবং এরাই হলো চরমপথভ্রষ্ট।”–(সুরা বনি ইসরাইল,আয়াত ৭২)।মু’মিন ব্যক্তির ঈমানদারী তাই নিজ দেশ,নিজ উম্মাহর কল্যাণে অর্থদান, মেধাদান, শ্রমদান ও রক্তদান করায়। এ জন্যই শ্রেষ্ঠ ঈমানদার ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবী, শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ও শ্রেষ্ঠ শহীদ হন। ঘরের দরজা বন্ধ করে কখনোই তিনি জীবনটি ধ্যানে কাটিয়ে দেন না। দেশের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও জিহাদে তারা সব সময়ই সম্মুখ কাতারে থাকেন। নবী-জীবনের এটিই তো অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এবং সে শিক্ষা অতিশয় গুরুত্ব পেয়েছিল সাহাবাদের জীবনেও। মহান নবীজী (সাঃ) যে ১০ জন সাহাবীকে তাদের মৃত্যুর পূর্বেই জান্নাতের সুখবর শুনিয়েছিলেন তাদের কেউই খানকাবাসী সুফি ছিলেন না, তাদের সবাই ছিলেন তৎকালীন রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহের সম্মুখভাগের সৈনিক। তাদের অধিকাংশই শহীদ হয়েছেন এবং তাদের মধ্য থেক ৪ জন খোলাফায়ে রাশেদাও হয়েছেন।কিন্তু সে শিক্ষা কতটা গুরুত্ব পেয়েছে বাঙালী মুসলিমের জীবনে?
শত্রুর প্রজেক্ট
বাঙালী মুসলিমগণ ইসলাম থেকে এতটাই দূরে সরেছে যে ইসলামের বিজয় বা প্রতিষ্ঠা নিয়ে তাদের আগ্রহ সামান্যই। তাদের কারণেই বাংলাদেশ দখলে গেছে ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে এবং বিলুপ্ত হয়েছে নবীজী (সাঃ) শিক্ষা। যে আদর্শ, যে দর্শন ও যে বিধিবিধান বাংলাদেশে প্রবল ভাবে বিজয়ী সেটি ইসলামের নয়। বাঙালী সেকুলারিস্টগণ সে চেতনাকে বলছে একাত্তরের চেতনা। তাদের কথা,সে চেতনার প্রতিষ্ঠা একাত্তরে ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধজয় ও পাকিস্তানের পরাজয়ের ফলে। সে চেতনার মূল কথা, ডি-ইসলামাইজেশন তথা “ইসলাম হঠাও”। তাদের কাছে পাকিস্তান চিত্রিত হয়েছিল ইসলামি থিওক্রাটিক দেশ রুপে।দেশটির জন্মের মূলে ছিল প্যান-ইসলামিক চেতনা।তাদের দাবী, ইসলামী চেতনার সাথে সংযোগ ছিন্ন করতেই বাংলাদেশের সৃষ্টি। তাদের কথা, বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে কোন রাজনীতি থাকতে পারে না। একাত্তর পরবর্তী ডি-ইসলামাইজেশন প্রজেক্টের এটাই ছিল মূল ভিত্তি। প্রতিটি যুদ্ধের শুধু সামরিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্যই থাকে না। থাকে আগ্রাসী আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক লক্ষ্যও। তাই একাত্তেরর যুদ্ধ শুধু পাকিস্তান ভাঙ্গার মধ্যে সীমিত ছিল না। বিজয়ী ভারত সরকারের আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক লক্ষ্যটি ছিল বাঙালী মুসলিমদের ইসলামশূণ্য করা। বাঙালী জাতিয়তাবাদীদের কাছে সেটিই হলো একাত্তরের চেতনা। এ চেতনায় রাজনীতিতে ইসলামের প্রতি অঙ্গীকার রাখাকে বলা রাজাকারের চেতনা। তাদের দাবী,পাকিস্তানের পরাজয়ের সাথে বাংলাদেশে ইসলামের পরাজয়কেও মেনে নিতে হবে। সে দাবী পূরণের লক্ষ্যে একাত্তরের পর জোরে শোরে শুরু হয় ইসলাম সরানোর কাজ।তাই যেখানেই ইসলাম ও মুসলিম ছিল সেখানেই হাত পড়ে। সে প্রজেক্ট নিয়ে সামনে এগুনোর লক্ষেই দিল্লীর শাসক চক্র তাদের নিজ খেলোয়াড় আওয়ামী বাকশালীদের ক্ষমতায় রাখতে চায়। এমন কি সেটি ভোট শূণ্য নির্বাচনের মাধ্যমে হলেও।
প্রশ্ন হলো,বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম কি ভারতীয় কাফেরদের প্রজেক্টকে বাংলাদেশের মাটিতে মেনে নিবে? বাঙালী সেক্যুলারিস্ট ও তাদের ভারতীয় প্রভুদের কাছে একাত্তরের চেতনা যত প্রাণপ্রিয়ই হোক মুসলিমদের কাছে চেতনা মাত্র একটিই। এবং সেটি হলো ইসলামী চেতনা। সে চেতনায় যেমন মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর মহান রাসূল (সাঃ)’য়ের উপর অটল বিশ্বাস আছে,তেমনি তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন অঙ্গীকারও আছে। মুসলিম মাত্রই একমাত্র মহাপ্রভু মহান আল্লাহতায়ালার উপাসক,তার চেতনার উপর দখলদারি একমাত্র তাঁর। ঈমান-আক্বীদার এ পবিত্র ভূমিতে অন্য কোন ধর্ম, দর্শন বা চেতনার সামান্যতম স্থানও নাই। তাছাড়া একাত্তরের চেতনার উপাদান রূপে পরিচিত সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষবাদ ও সমাজতন্ত্র কোন নতুন বিষয় নয়, এগুলো হলো পুরনো জাহিলিয়াত। মু’মিনের মনের পবিত্র ভূমিতে এ পরিত্যক্ত আবর্জনাগুলো কি সামান্যতম স্থানও পেতে পারে? ঈমানদারের চেতনাই তাকে স্বপ্ন দেখায়;এবং সে স্বপ্ন তাকে সে অনুযায়ী গড়ে উঠায় ও পথ চলায় প্রেরণা ও নির্দেশনা দেয়। জীবনের সফলতা নিয়ে একজন মুসলমানের স্বপ্ন এবং কাফেরের স্বপ্ন এক নয়। এক নয় সফলতা ও বিফলতার মাপকাঠিও। আজকের ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নিয়ে একজন মুসলিম ও একজন সেকুলারের ভাবনাও তাই এক নয়। সে ভিন্নতার কারণেই একাত্তরের চেতনাধারীরা হিন্দু ভারতের রাজনীতি ও সংস্কৃতির সাথে যতটা একাত্ম হতে পারে,নিজ দেশের মুসলিমদের সাথে তা পারে না। তাদের কাছে স্বদেশী এবং স্বভাষী মুসলিমগণ বিদেশী মনে হয়। অনেকের কাছে এসব স্বদেশী ও স্বভাষী বাংলাদেশীরাও পাকিস্তানী রাজাকার গণ্য হয়।এবং আপন মনে হয় ভারতীয় হিন্দুগণ। আওয়ামী বাকশালীগণ সেটি প্রকাশ্যে বলেও। ভারতীয় সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের এটি এক বিশাল সফলতা। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য এটি এক উচ্চমাত্রার বিপদ সংকেত।
লক্ষ্য ডি-ইসলামাইজেশ
ডি-ইসলামাইজেশনের নাশকতাটি বিশাল। এক ভাষা, এক বর্ণ ও এক ভূগোলে বসবাস করলেও বাংলাদেশের মানুষের মনের ভূবনটি আজ দারুন ভাবে ভিন্ন। বাংলাদেশের মানুষ প্রচণ্ড মেরুকরণের শিকার। মুসলিমগণ নিজরাই আজ দ্বি-জাতীতে বিভক্ত। একদল ইসলামের পক্ষে আরেক দল বিপক্ষে।বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে মসজিদ ও মাদ্রাসার সংখ্যা বিপুল হারে বাড়লেও দেশে ইসলামিকরণ বাড়েনি, বরং দিন দিন সেটি কমছে। আর সেটি ধরা পড়ছে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভিশন, মিশন ও রাজনীতিতে। ভিশন হল সেই স্বপ্ন যা একজন ব্যক্তি তার নিজের ভবিষ্যৎকে নিয়ে দেখে। অনৈসলামিকরণের ফলে অনিবার্য রূপে যেটি ঘটে সেটি হল, মুসলিম ও অমুসলিমের স্বপ্নের মানচিত্রের যে বিভাজনের সীমারেখা সেটির বিলুপ্তি। ইসলামি শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল, চেতনার সে ভিন্ন মানচিত্রকে মজবুত করা। সেটি ধ্বসে গেলে মুসলমানের পৃথক রাজনৈতিক ভূগোলও বাঁচে না। সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা সে চেতনার পৃথক মানচিত্রকেই ধ্বসিয়ে দেয়। বাংলাদেশে সেটিই ঘটেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশটির হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও নাস্তিকগণ যে স্বপ্ন দেখে, সেই অভিন্ন স্বপ্ন দেখে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানগণও।
সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আদর্শিক স্রোতের টানটিও অতি প্রবল। সে স্রোতে ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচতে হলে যেটি প্রয়োজন তা হল, ঈমানের বল। আর সে বল আসে পবিত্র কোরআন থেকে। এজন্যই কোরআনের জ্ঞানার্জন প্রতিটি নরনারীর উপর ফরয। আর বাংলাদেশে সে কোরআন চর্চাই বাড়েনি। ফলে পালিত হয়নি সে ফরয। কোরআন চর্চার নামে দেশে যে কাজটি হয় সেটি হল কোরআন পাঠ বা তেলাওয়াত, কোরআন বুঝা নয়। অনেক আলেম একথাও বলেন, “কোরআনা বুঝা সাধারণ মানুষের কাজ নয়, একাজ আলেমদের।” ভাবটা এমন, সাধারণ মুসলমানের কাজ তেলাওয়াতের ন্যায় নফল কাজে ব্যস্ত হওয়া, কোরআন বুঝার ন্যায় ফরয কাজে নয়। এভাবে রুদ্ধ করা হয়েছে ইসলামি জ্ঞানের প্রসারের কাজ এবং মুসলিম সমাজে হিন্দুধর্মের অনুকরণে একশ্রেণীর পরগাছা ব্রাক্ষ্মণ শ্রেণী গড়ে তোলা হয়েছে। আর সাধারণ মুসলমানদেরকে খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েলসহ ইসলামি জ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে তথাকথিত আলেমদের উপর নির্ভরশীল করা হয়েছে। আর এভাবে বন্ধ করা হয়েছে সমাজের ইসলামিকরণের কাজ। অথচ আলেম হওয়া প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ। কারণ, ঈমানের খাদ্য ও ইসলামিকরণের মূল হাতিয়ার হল এই কোরআনী জ্ঞান। পানাহার ছাড়া যেমন স্বাস্থ্য বাঁচে না তেমনি কোরআনী জ্ঞান ছাড়া ঈমানও বাঁচেনা। দেশের মানুষের শারীরিক সুস্থ্যতা বাড়াতে যেমন প্রতি গ্রামের প্রতি ঘরে খাদ্যের সরবরাহকে সুনিশ্চিত করতে হয় তেমনি মুসলিম রূপে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করতে প্রতি ঘরের প্রতি ব্যক্তির কাছে কোরআনের জ্ঞানকে পৌঁছাতে হয়। মুসলিম রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের এর চেয়ে বড় দায়িত্ব নেই। রাস্তাঘাট, কলকারখানা ও কৃষির উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ, তবে ঈমানদার গড়ার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ নেই। একমাত্র এ পথেই মানুষের সবচেয়ে বড় কল্যাণটি নিশ্চিত হয়। নবীজীর আমলে মুসলমানদের সে সীমিত লোকবল ও অর্থবল থাকা সত্ত্বেও নবী পাক (সাঃ) এমন কি অনিরাপদ স্থানেও তাঁর সাহাবাদের পাঠিয়েছেন এবং বহু সাহাবা শহীদও হয়েছেন। কিন্তু সে জন্য কোরআনের জ্ঞান প্রচারের কাজ বন্ধ করেননি। এভাবে যতই বেড়েছে কোরআনের জ্ঞান, ততই বেড়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের ইসলামিকরণ। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজ গুরুত্ব পায়নি। ফলে বেড়েছে ডি-ইসলামাইজেশন। বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও আইন-আদালত থেকে ইসলাম হঠানোর কাজ এতটা সফলতা পাচ্ছে তো একারণেই। তেমনি ভোটের লড়াইয়ে বিজয়ী হচ্ছে ইসলাম বিরোধী পক্ষ। বিশাল বাজার পাচ্ছে মদের দোকানদার, পতিতা, সূদী ব্যাংকার, অশ্লিল সিনেমা ও নাচগানের নট-নটিরা।
কোরআনী জ্ঞানের অভাবে এমনকি নামায কালাম পড়েও সাধারণ মুসলমানেরাও বেড়ে উঠছে ইসলামের প্রতি চরম দায়িত্বশূণ্যতা নিয়ে। ফলে চোখের সামনে আল্লাহর দ্বীন পরাজিত ও তার বিধান ডাস্টবিনে যেতে দেখেও তাদের মধ্যে কোন শিহরন জাগে না। আল্লাহর এ সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত কোরআনকে কিছু লোকের মাঝে সীমিত রেখে সমগ্র সমাজকে কি ইসলামী করা যায়? তাই একটি সমাজ কতটা ইসলামি হল সেটির সঠিক ধারণা মসজিদ-মাদ্রাসা গণনা করে পাওয়া যায় না। মুসলমানের শতকরা হার গণনা করেও সে পরিচয় মেলে না। দেখতে হয় সে সমাজে কোরআনী জ্ঞানের বিস্তার ও সে জ্ঞানে অনুপ্রাণিত মানুষের সংখ্যা। বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ৯০ভাগের বেশী। নবীজী (সাঃ)র আমলে আরবের মানুষ এমন হারে ঈমান আনেনি। বাংলাদেশের একটি জেলায় যত মুসলমানের বাস সে সময় সমগ্র মুসলিম রাষ্ট্রে এত মুসলমানের বাস ছিল না। কিন্তু সে আমলে মদিনার ন্যায় এক ক্ষুদ্র শহরে যত আলেম গড়ে উঠেছিলেন তা বাংলাদেশের ন্যায় অতি জনবহুল দেশে বিগত হাজার বছরেও গড়ে উঠেনি। মুসলমানদের প্রতিটি ঘর পরিণত হয়েছিল মাদ্রাসায়। ফলে মাত্র কয়েক বছরে ইসলামি জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার গড়ে উঠেছিল। অথচ বাংলাদেশে ইসলামের ইতিহাস ৮ শত বছরেরও বেশী। কিন্তু ১০০ বছর আগেও বাংলাদেশের মুসলমানেরা কোরআনের একখানি তফসিরও লেখেনি। কোরআনী জ্ঞানের এমন দারিদ্রতা নিয়ে কি রাষ্ট্রে ইসলামাইজেশনের স্বপ্ন দেখা যায়? বিজয়ী হয় কি ইসলাম?
ডি-ইসলামাইজেশনের কাজটি যে শুধু অমুসলিম কাফেরদের দ্বারা হচ্ছে তা নয়, হচ্ছে মুসলমানদের দ্বারাও। সেকুলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, এনজিও, সেকুলার মিডিয়া, সেকুলার সাহিত্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিই ডি-ইসলামাইজেশনের মূল কারণ নয়। এ কাজটি চরম ভাবে হচ্ছে দেশের আলেম ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বনি ঈসরাইলের বিরুদ্ধে যে মূল অভিযোগ এনেছেন সেটি এ নয় যে তারা পৌত্তলিক, নাস্তিক বা কাফের হয়ে গিয়েছিল। এটিও নয় যে, তারা মূসা (আঃ) ও তাঁর উপর নাযিলকৃত তাওরাত কিতাবকে অবিশ্বাস করতো। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি এনেছেন তা হল, আল্লাহর দ্বীনকে তারা পূর্ণভাবে অনুসরণই করেনি। আল্লাহর বাণীতে তারা ইচ্ছামত পরিবর্তন এনেছিল। গাফলতি করেছিল আনুগত্যে। সিরাতুল মোস্তাকিমের পুরা পথটি তারা চলেনি। গন্তব্যস্থলে পৌঁছার বহু আগেই তারা বিচ্যূত হয়েছে। ভেসে গেছে সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক স্রোতে। ভেসে গেছে নিজেদের স্বার্থ চিন্তায়। মূসা (আঃ) মাত্র ৪০ দিনের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়েছিলেন, আর এর মধ্যেই তারা গরু-পুঁজা শুরু করেছিল। মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে সিনা উপত্যাকার ধূসর মরুর বুকে ৪০ বছর মেঘের ছায়া দিয়েছিলেন। আসমান থেকে মান্না সালওয়া নামিয়ে খাইয়েছেন। এরপর তাদেরকে যখন কানান থেকে জালেমদের জবর দখল হটানোর হুকুম দিলেন তখন তারা হযরত মূসা (আঃ)কে বলেছিল, “যাও তুমি ও তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা অপেক্ষায় থাকলাম।” ইসলামি চেতনা সমৃদ্ধ কোন জনগোষ্ঠি কি এমন কথা বলতে পারে? এ ভাষা তো বিদ্রোহের। আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে এমন বিদ্রোহ তাদের উপর আল্লাহর আযাবকেই ত্বরান্বিত করেছিল।
ডি-ইসলামাইজেশন একটি উম্মাহকে কিভাবে আল্লাহর প্রদর্শিত পথ থেকে বিচ্যুত করে সে বিষয়ে জ্ঞানদান করেছেন মহান আল্লাহতায়ালা স্বয়ং নিজে। সে বিষয়ে তিনি উপমা পেশ করেছেন বনি ইসরাইলের ইতিহাস থেকে। মহান আল্লাহতায়ালার অপার নেয়ামত পেয়েছে বনি ইসরাইল। সবচেয়ে বড় নিয়ামত ছিল, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকিম যা অবিরাম দেখাতে তিনি ইহুদীদের জনপদে বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। কিন্তু তারা সে পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ডি-ইসলামাইজেশনের এ এক করুণ চিত্র। তবে এ বিচ্যুতির কারণ সেকুলার মিডিয়া, সেকুলার এনজিও, পৌত্তলিক কাফের বা বিধর্মী মিশনারী ছিল না। আল্লাহপাক সে জন্য বনি ইসরাইলের আলেমদের দোষী বলেছেন। রাষ্ট্র জুড়ে অজ্ঞতার অন্ধকার দেখে সেটিকে গালী দেওয়া অহেতুক। প্রকৃত দোষী তো সেসব ব্যক্তি যাদের উপর আলো জ্বালানোর দায়িত্ব ছিল কিন্তু তারা সে দায়িত্বই পালন করেনি। বনি ইসরাইলের আলেমগণ সে অপরাধে অপরাধী। আজকের মুসলিম বিশ্বের বিশেষ করে বাংলাদেশের আলেমদের অপরাধ ও ব্যর্থতাও তাদের চেয়ে ভিন্নতর নয়। পবিত্র কোরআনে প্রচন্ড জোর দেয়া হয়েছে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে অবশ্যই একটি উম্মাহ থাকতে হবে যারা মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকবে এবং ন্যায়ের হুকুম দিবে এবং অন্যায়কে রুখবে। এবং তারাই হল সফলকাম।” –(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৪)।
সফলতার পথ নিছক নামায-রোযা নয়, হ্জ্ব-যাকাতও নয়, বরং সে লক্ষ্যে ঈমানদারকে আরো সামনে এগুতে হয়। সফলতা আসে কল্যাণের পথে ডাকা এবং ন্যায়ের হুকুম এবং অন্যায়কে রুখার মধ্যে। রাষ্ট্রে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলের এটিই হল মূল কৌশল। এটিই হল ইসলামাইজেশন। মুসলমানের জীবনের এটিই হল মূল মিশন এবং এ পথেই আসে পরকালের সফলতা। যে ব্যক্তি পবিত্র কোরআন মনযোগ সহকারে পড়বে সে ব্যক্তির কাছে আল্লাহর সহজ সরল এ নির্দেশটিও সুস্পষ্ট হবে যে, সফলতা লাভের পথ শুধু তাবলীগের পথ নয়। তাকে আরো সামনে যেতে হয়। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরো্ধেও তাকে বহু দূর অগ্রসর হতে হয় এবং সে পথে অগ্রসর হলে সংঘাত ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অনিবার্য। এমন যুদ্ধ এড়াতে পারেননি মহান নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়েই কেরাম। বাংলাদেশের মুসলমানদের সমস্যা, লক্ষ লক্ষ মানুষ দ্বীনের তাবলীগে পথে বেরুলেও এর বেশী তারা এগুতে রাজী নয়। অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার যে কোন উদ্যোগকে তারা বলছে মৌলবাদ। এমন চেতনাকে বলছে চরমপন্থি ইসলাম। অথচ মুসলমানের ঈমানের মূল পরীক্ষাটি তো হয় এক্ষেত্রটিতেই। কোরআনের মূল জোর ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় ও অন্যায়ের প্রতিরোধে। এ কাজের মধ্যেই ইসলামিকরণের মূল চাবিকাঠি। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরাম তো এগুলোই করেছেন।
ধর্মের নামে ডি-ইসলামাইজেশন
সনাতন ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজটি স্রেফ সেকুলারিস্টদের দ্বারা হয়নি, হয়েছে ধর্ম ও ইবাদতের নামেও।বাংলাদেশে মুসলিমদের বড় দূর্ভাগ্য হল, ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে তাদের পরিচয় লাভই হয়নি। এদেশটিতে ইসলাম প্রচার লাভ করেছে বিদেশ থেকে আগত সূফীদের দ্বারা। সূফীগন ইসলামের কিছু মজহাবগত বিষয়ের প্রচার করলেও নবীজী (সাঃ) ও তার সাহাবাগণ যে সিরাতুল মোস্তাকিমটি পুরাপুরি অতিক্রম করেছিলেন, তা তারা করেননি। তারা কোরআনের বিধানকে বিজয়ী করতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে নেননি। অথচ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের বিষয়টি নবীজীর অতিগুরুত্বপূর্ণ সূন্নত। একাজ ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য ব্যক্তি বা বাদশাহদের হাতে ছেড়ে দিলে সে সমাজে ইসলামের বিজয় আসে না, রাষ্ট্রের ইসলামিকরণও হয় না। অথচ সূফীগণ নবীজী (সাঃ)র সে সূন্নত বা আদর্শকে নিজেরা যেমন পালন করেননি তেমনি বাংলাদেশের মুসলমানেরকেও সেটি পালনে অনুপ্রাণিত করেননি। ইসলামেরর পথে কিছু দূর এগিয়ে তারা আর এগুননি। ফলে শুরু থেকেই বাংলাদেশে ইসলামিকরণের কাজটি পূর্ণাঙ্গতা পায়নি।
কোর’আনের সাথে আলেমদের এমন আচরণ শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়। একই পথের পথিক ভারতীয় আলেমগণ। বরং বাংলাদেশের আলেমগণ এক্ষেত্রে ভারতীয় আলেমদের অনুসারি মাত্র। একথা অনস্বীকার্য যে তারা বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসা গড়েছেন। আজীবন কোরআন-হাদিসের জ্ঞান বিতরণও করেছেন। কিন্তু সে সব মাদ্রাসায় কোরআনচর্চা কীরূপ হয়েছে তার উপর অভিমত এসেছে উপমহাদেশের দুইজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন থেকে। তাদের্ একজন হলেন শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান। আরেকজন হলেন মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী। শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসানকে অনেকে সে সময়ের মোজাদ্দেদও মনে করেন। তাঁকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার গ্রেফতার করে মাল্টা দ্বীপে কারাবন্দী করেছিল। মাল্টা জেল থেকে মূক্তি পাওয়ার পর দেওবন্দে তিনি তৎকালীন ভারতের প্রখ্যাত আলেমদের এক বৈঠক ডাকেন। সে জলসায় মাওলানা মূফতি শফি (পরবর্তীকালে পাকিস্তানের গ্রান্ড মূফতি), মাওলানা হোসেন আহমেদ মাদানী, মাওলানা শাব্বির আহম্মদ ওসমানিসহ ভারতের বড় আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সে জলসায় মাওলানা মাহমূদুল হাসান বলেন, আমি মুসলমানদের দুরাবস্থার কারণ নিয়ে যা কিছু চিন্তা ভাবনা করেছি তা থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে মুসলমানদের এ দূর্দশার কারণ মূলতঃ দু’টি।
প্রথম কারণটি হল, কোর’আনের জ্ঞানার্জনে গুরুত্ব না দেওয়া। দ্বিতীয় কারণটি, মুসলমানদের অনৈক্য। এসব আলেমগণ বেশী জোর দিয়েছেন হাদীস ও ফিকাহর উপর। তাদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলো বহু হাদীস বিশারদ জন্ম দিয়েছে, কিন্তু খুব কমই মোফাস্সিরে কোরআন সৃষ্টি করেছে। মুফতি শফি লিখেছেন, মাওলানা মাহমূদুল হাসান দু’টি কারণের কথা বল্লেও তা মূলতঃ একটি। আর সেটি হল, কোরআনের জ্ঞানে অনিহা। মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী উপমহাদেশের আরেক প্রখ্যাত দেওবন্দি আলেম। তারই এক শিষ্য তাঁকে একদিন অতিশয় বিচলিত ও পেরেশান দেখলেন। তাকে তাঁর পেরেশানির কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বড় দুশ্চিন্তায় আছি আল্লাহর দরবারে কি করে জবাব দিব। তার শিষ্য জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুর, আপনি সারাজীবন হাদিস পড়িয়েছেন, দ্বীনের খেদমত করেছেন। আপনার দুশ্চিন্তার তো কারণ দেখি না। আপনি কেন এত পেরেশান হবেন।” আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী বলেন, “সারাজীবন হানাফী মজহাবের ফিকাহগত ফায়সালাগুলোকে সঠিক প্রমাণিত করার চেষ্টা করেছি। অথচ শাফেয়ী মজহাবের বিষয়গুলোও তো সঠিক হতে হবে।” এ অবস্থা শুধু আনোয়ার শাহ কাশ্মিরীর নয়, অনুরূপ অবস্থা প্রায় অধিকাংশ আলেমদেরও। তারা ফেরকাগত ও মাজহাবগত বিষয়ে এতটা বেশী ডুবে ছিলেন যে কোরআনের জ্ঞান বিতরণের তেমন ফুরসতই পাননি।
ইসলাম থেকে সরানো হচ্ছে তাবলীগের নামে
কোন ঈমানদার ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহর বিভক্তিতে কখনই খুশি হতে পারেনা, তেমনি সে বিভক্তির কাজে অংশ নিতে পারে না। আর বিভক্তি সৃষ্টি করা যেমন হারাম তেমনি সেটিই টিকিয়ে রাখাও হারাম। সমাজ যখন ইসলামি হয় তখন সে বিভক্তিগুলোও বিলুপ্ত হয়। আর যখন অনৈসলামের পথে যাত্রা শুরু করে তখন সে বিভক্তি আরো গভীরতর হয়। তাই ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশে যেরূপ প্যান-ইসলামী চেতনা ছিল সেটির কথা এখন ভাবাই যায় না। বাংলাদেশে যতই বাড়ছে ডি-ইসলামাইজেশন ততই বাড়ছে বিশ্বের অন্যভাষার মুসলমানদের থেকে দূরত্ব। ভারতের নানা ভাষাভাষী হিন্দুরা আজ একতাবদ্ধ। একতাবদ্ধ ইহুদী ও খৃষ্টানরাও। কিন্তু প্রচন্ডভাবে বিভক্ত মুসলমানেরা। আল্লাহর কাছে এমন বিভক্তি বড্ড অপছন্দের। যার অন্তরে ঈমান আছে, মুসলিম বিশ্বের এমন বিভক্তি তার মনে মাতম সৃষ্টি করবে সেটিই কি কাঙ্খিত নয়? কিন্তু সে মাতম সাধারণ মুসলমান দূরে থাক এমনকি আলেম-উলামা ও ইসলামি সংগঠনের নেতাদের মাঝেও সৃষ্টি হয় না। বরং সে বিভক্তি আজ তাদের কাছেও উৎসবের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎসবের সে আয়োজনে আলেম ও ইসলামী দলের নেতারাও মিলিত হচ্ছে দেশের ইসলামের দুষমন সেকুলারদের সাথে। ডি-ইসলামইজেশন যে কতটা গভীরভাবে দেশের আলেম ও তথাকথিত ইসলামি সংগঠনগুলোকে গ্রাস করেছে এ হল তার নমুনা। সারা জীবন নামায পড়েও লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী মুসলমান মুসলিম উম্মাহর একতার পক্ষে কিছু করা দূরে থাক তা নিযে বলিষ্ঠ কোন আওয়াজও তুলছে না। ময়দানে নামছে না অন্যায়ের প্রতিরোধে ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায়। অথচ এমন আচরণ হল আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, প্রশাসন ও আইন-আদালতসহ দেশটির সর্বত্র জুড়ে এ বিদ্রোহীরাও আজ বিজয়ী। ডি-ইসলামাইজেশনের এর চেয়ে বড় নজির আর কি হতে পারে? ১২/০২/২০২১।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018