মিথ্যার সুনামি এবং দুর্বৃত্ত-অধিকৃত বাংলাদেশ
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on October 20, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
মিথ্যার নাশকতা
“মিথ্যা সকল পাপের মা”–এ উক্তিটি কোন সাধারণ বিজ্ঞজনের কথা নয়। বলেছেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মহাজ্ঞানী হযরত মহম্মদ (সাঃ)। এ উক্তির মাঝে লুকিয়ে আছে দুর্বৃত্ত-মুক্ত সভ্য ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের এক বিপ্লবী দর্শন। রাস্তাঘাট, কৃষি, কলকারখানা বা তাজমহল নির্মাণের চেয়ে অধীক গুরুত্বপূর্ণ হলো মানব-উন্নয়ন। সে জন্য অতি অপরিহার্য হলো ব্যক্তির জীবন থেকে মিথ্যা নির্মূল। অপরদিকে মিথ্যার সুনামিতে গড়ে উঠে এক অসভ্য ব্যক্তি ও রাষ্ট্র। তখন দেশ ইতিহাস গড়ে চুরিডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম-খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের ন্যায় নানারূপ দুর্বৃত্তিতে। এবং এরই আধুনিক উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নাশকতাটি কখনোই রোগ-জীবানুর হাতে ঘটেনি, ঘটেছে মিথ্যার সুনামীতে। সে নাশকতাটি দুনিয়াতেই শেষ হয় না, পরকালে জাহান্নামে টানে। যুগে যুগে এটিই শয়তান ও তার অনুসারিদের মিশন।
যে শক্তির বলে মহান নবীজী (সাঃ) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে সফল হয়েছিলেন -সেটি কোন সামরিক বল ছিল না। সেটি ছিল মুসলিমদের চারিত্রিক বল। সে চারিত্রিক বল সম্পন্ন ব্যবসায়ীদের দেখেই ইন্দোনেশিয়ার জনগণ দলে দলে মুসলিম হয়ে যায়। সে চারিত্রিক বলের কারণ, নবীজী (সাঃ) তাঁর অনুসারিদের মুক্তি দিয়েছিলেন মিথ্যা বলার পাপ থেকে। এবং অভ্যস্থ করতে পেরেছিলেন জীবনের প্রতি পদে সত্য বলায়। সমাজে সত্যবাদিতা এতটাই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল যে, মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকেও বিচারক জামিন দিতে ইতস্ততঃ করেনি -এ বিশ্বাসে যে, সে ব্যক্তি ফিরে এসে মৃত্যুদন্ড মাথা পেতে মেনে নিবে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সত্যবাদীতার উপর প্রবল বিশ্বাসে তার পক্ষে আদালতে জামিন রূপে খাড়া হওয়া ব্যক্তিরও সেদিন অভাব হয়নি। ওয়াদা মাফিক আদালতে ফিরে এসে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী প্রমাণ করেছেন, এ জীবনে মৃত্যু সহনীয়; কিন্তু অসহনীয় ছিল ওয়াদা ভঙ্গ করে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে মিথ্যুক রূপ হাজির হওয়া। এসব ঘটনাগুলো আজও ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছে।
ব্যক্তির চরিত্র ও গুণাগুণ বিচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিচারটি হয় সে কতটা সত্যবাদী তা দেখে। সে বিষয়টি জানার জন্য কোন গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। সেটি বুঝা যায় মুখ থেকে উচ্চারিত উক্তির মাঝে। এক্ষেত্রে হযরত আলী (রাঃ)’র জ্ঞানগর্ভ একটি উক্তি হলো, “মানুষের ব্যক্তিত্ব তার জিহবাতে”। এর অর্থ, মানুষের ব্যক্তিত্ব তার দৈহিক বল, অর্থ-সম্পদ, গায়ের রং, বংশমর্যাদায় প্রকাশ পায় না। প্রকাশ পায়, মুখ খুললেই। হযরত আলী (রাঃ) নবীজী (সাঃ)’র সাহাবাকুলে অতি জ্ঞানী রূপে গণ্য হতেন। নবীজী (সাঃ)র হাদীস, “আমি জ্ঞানের গৃহ এবং আলী সে গৃহের দরজা।” হযরত আলী (রাঃ)’র জ্ঞানের সে গভীরতাটি ধরা পড়ে তার রচিত কিতাব “নাহাজুল বালাগা”র মধ্যে। কথা হলো, ব্যক্তিত্বের অর্থ কি? ব্যক্তিত্ব হলো চরিত্র, জ্ঞান ও গুণের এমন এক মিশ্রন যার ভিত্তিতে গড়ে উঠে ব্যক্তির নিজস্ব এক পরিচয় যা তাকে অন্যদের থেকে পৃথক করে। তবে চরিত্রের নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হলো সত্যবাদিতা। স্রেফ ইট, বালি, লোহা ও সুড়কি দিয়ে ইমারাত গড়া যায় না। সে জন্য অপরিহার্য হলো সিমেন্ট। ব্যক্তির চরিত্রে তেমনি সিমেন্টের কাজ করে সত্যবাদীতে। মিথ্যাবাদীদের দৈহিক বল, মেধা, শ্রম, কর্মকুশলতা যতই থাক, তাদের যেমন চরিত্র থাকে না, তেমনি ব্যক্তিত্বও থাকে না। তাদের পক্ষে অতি সহজ হয় ব্যক্তিত্বহীন ও অপরাধী রূপে বেড়ে উঠা।
সত্যবাদীতা ব্যক্তিকে লোভ-লালসায় হেলে পড়া থেকে বাঁচায়। অপরদিকে মিথ্যুকগণ স্বার্থ হাসিলের সুযোগ দেখলেই হেলে পড়ে। তাদের চরিত্রে কোন স্থায়ী রূপ থাকে না, তারা বহুরূপী হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরাই কখনো ফ্যাসিস্ট, কখনো জাতিয়তাবাদী, কখনো চীনপন্থি, কখনো ভারতপন্থি, আবার কখনো মার্কিনপন্থি হয়। কখনো আবার হজ্ব-ওমরায় যায়, মাথায় পটি বাধে, হাতে তাসবিহ নেয় এবং তাবলিগের মজলিসেও হাজির হয়।
ঈমানের প্রকাশ সত্যবাদীতায়
মানব সমাজে সর্বদাই দু’টি পক্ষঃ এক). সত্যের পক্ষ; দুই). মিথ্যা পক্ষ। ব্যক্তিকে সৎ, ধার্মিক ও দেশপ্রেমিক বানানোর লক্ষ্যে সর্বচেয়ে জরুরী হলো তাকে সত্যবাদি বানানো। সত্যবাদি হওয়াটাই হলো জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য এবং মানব জীবনে এটিই সবচেয়ে বড় বিপ্লব। তবে এ বিপ্লব কখনোই পানাহারে আসে না। এজন্য জরুরী হলো চেতনায় বিপ্লব। সে বিপ্লবের জন্য জরুরী হলো মহান আল্লাহতায়ালা এবং পরকালে বিচার দিনে জবাবদেহীতার উপর পূর্ণ ঈমান। ঈমানদারীর প্রকাশ যেমন সত্যবাদীতায়, বেঈমানীর প্রকাশ তেমনি মিথ্যাবাদীতায়। মানব তখনই সত্যাবাদি হয়, যখন সে বুঝতে পারে তার ঘাড়ে সর্বাবস্থায় ফেরশতা বসে আছে এবং তার প্রতিটি কথার উপর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে লাগাতর নজরদারি আছে। সিসিটিভি বিকল হয়, কিন্তু নিয়োজিত ফেরেশতারা কখনোই দায়িত্ব পালনে ক্ষান্ত দেন না। ঈমানদারের মনে যে ভয়টি সব সময় কাজ করে তা হলো, মিথ্যা বলার অপরাধে তাকে পরকালে জবাব দিতে হবে। ফলে ঈমানদারের পক্ষে অসম্ভব হয় মিথ্যাচারি হ্ওয়া।
অথচ আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান এবং পরকালে জবাবদেহীতার ভয় না থাকাতে সত্যবাদি হওয়া অসম্ভব হয় বেঈমানের পক্ষে। কে কতটা ঈমানশূণ্য, সে বিষয়টি অতি নিখুঁত ভাবে ধরা পড়ে কে কতটা মিথ্যা বললো তা থেকে। পরকালে জবাবদেহীতার ভয় না থাকাতে বেঈমানের কথা ও চরিত্রের উপর কোন লাগাম থাকে না। অথচ ঈমানদারের উপর সে লাগামটি হলো তার ঈমান এবং পরকালে জবাবদেহীতার ভয়। তাই তাকে শুধু পানাহারে হারাম-হালালের বাছ-বিচার করলে চলে না। তাকে কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা সেদিকে নজর রেখে প্রতিটি বাক্য উচ্চারণ করতে হয়। গলায় রশি না থাকলে গরু যেখানে গাস পায়, সেখানেই মুখ দেয়। হারাম-হালালের বিচার সে করে না। তেমনি ঈমানশূণ্য ব্যক্তিও যেখানেই নিজের স্বার্থ হাসিলের সুযোগ দেখে সেখানে যা খুশি বলে এবং যা খুশি তা করে। তার পক্ষে তখন অসম্ভব হয় সৎ ও চরিত্রবান হওয়া। তাদের সামনে দুর্বৃত্তির সকল রাস্তা তখন খুলে যায়। এমন একটি মিথ্যাচারি জনগোষ্ঠি দুর্বৃত্তিতে বিশ্বব্যাপী রেকর্ড গড়ে।
সভ্য সমাজ নির্মাণে বড় বাধা দুর্বৃত্ত-অধিকৃত সরকার
রাষ্ট্রের বুক থেকে মিথ্যা এবং সে সাথে দুর্বৃত্ত নির্মূলের কাজটি স্রেফ পুলিশ দিয়ে হয় না, সেটি শুরু করতে হয় জনগণের মাঝে আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান এবং পরকালে জবাবদেহীতার ভয়কে বদ্ধমূল করে। এবং সে কাজে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া কার্যকর হাতিয়ারটি হলো পবিত্র কোর’আন। তাই ইসলাম কবুলের প্রথম মুহুর্তে যে ইবাদতটি প্রথম ফরজ হয় সেটি হলো কোর’আনের জ্ঞানার্জন। মুসলিমদের উপর ৫ ওয়াক্ত নামায ফরজ হয়েছিল নবীজী (সাঃ)’র উপর নবুয়তের দায়িত্ব দেয়ার ১১ বছর পর। অথচ বাংলাদেশে পবিত্র কোর’আন থেকে জ্ঞানার্জনের ফরজ পালনে সবচেয়ে বড় বাধাটি সৃষ্টি করেছে সরকার। সরকারের শিক্ষানীতির কারণে বাংলাদেশের একজন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করতে হয় পবিত্র কোর’আন থেকে একটি আয়াত না বুঝেই। ফলে ছাত্রদের মনে কীরূপে গড়ে উঠবে আল্লাহর ভয়? কীভাবে গড়ে উঠবে সত্যবাদিতা ও চরিত্র? এতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যলয়ে পরিণত হবে খুনি, ধর্ষক ও নানারূপ দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কারখানায় –সেটি কি স্বাভাবিক নয়? বাংলাদেশের মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল সম্প্রতি রিপোর্ট দিয়েছে, দেশে প্রতি বছর ৫ লাখের বেশী শিশুর জন্ম হয় অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ানের মাধ্যমে। যা হয় দেশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে। (সূত্রঃ প্রথম আলো, ১৮.১০.২০১৯)। আর তাতে বহু হাজার কোটি টাকা ডাকাতি হয়ে যায় জনগণের পকেট থেকে। মেধাবী ছাত্রগণ মেডেক্যাল কলেজে ঢুকে কীরূপ অর্থলোভী ডাকাতে পরিণত হয় এ হলো তার প্রমাণ। ইঞ্জিনয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ঢুকে কীরূপ খুনিতে পরিণত হয় সে প্রমাণ তো মিললো সম্প্রতি বুয়েটে আবরার হত্যার মধ্য দিয়ে। এসব দুর্বৃত্তদের হাতেই অধিকৃত বাংলাদেশের প্রশাসন, রাজনীতি, আইন-আদালত, বুদ্ধিবৃত্তি এবং সাংবাদিকতা। সভ্য মানব, সভ্য সমাজ ও সভ্য রাষ্ট্র নির্মাণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা দুর্বৃত্তদের এ অধিকৃতি।
দেশ কি কবিরা গুনাহর আবাদভূমি?
প্রশ্ন হলো মিথ্যা ও মিথ্যুকের সংজ্ঞা কি? যা সত্য নয় সেরূপ প্রতিটি কথাই মিথ্যা। এবং যে ব্যক্তি সমাজে মিথ্যা রটায় সেই মিথ্যুক। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার অপরাধের তালিকাটি বিশাল। তবে সবচেয়ে বড় অপরাধটি হলো, তারা নিজেরা শুধু মিথ্যুক হয়নি, মিথ্যাচারি বানিয়েছে বাংলাদেশের বহু কোটি মানুষকে। শত শত মিথ্যার মাঝে যে মিথ্যাটি ছড়িয়ে শেখ মুজিব মিথ্যাচারিতায় বিশ্বরেকর্ড গড়েছে, সেটি হলো ১৯৭১’য়ে তিরিশ লাখ নিহতের মিথ্যা। অথচ একাত্তরের ৯ মাস যুদ্ধ কালে মুজিব বাংলাদেশে ছিলেন না। পাকিস্তানের জেল থেকে ফেরার পথে তিনি সে মিথ্যাটি বলেছিলেন লন্ডনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে। সাংবাদিকের প্রশ্নটি ছিল, একাত্তরের যুদ্ধে বাংলাদেশে কতজন নিহত হয়েছে তা নিয়ে। সে প্রশ্নের উত্তরটি কোন ব্যক্তিরই জানার কথা ছিল নয়। কারণ জানতে হলে সে জন্য তো দেশব্যাপী জরিপ করতে হয়। না জেনে যা বলা হয়, সেটিই তো মিথ্যা। তাই যে ব্যক্তি সত্য বলায় আগ্রহী সে কেন মিথ্যুক হওয়ার ঝুঁকি নিবে? ফলে শেখ মুজিব সত্যবাদী হলে তার জবাবটি হতো এরূপঃ “এ মুহুর্তে সে সংখ্যা বলা যাবে না। একমা্ত্র দেশ ব্যাপী জরিপ করেই বলা যাবে কত জন নিহত হয়েছে।” কিন্তু মিথ্যাচারি মুজিবের সত্য কথা বলা নিয়ে কোন আগ্রহ ছিল না। ফলে বললেন ভিত্তিহীন একটি মিথ্যা। মিথ্যা রচনায় তথ্য লাগে না, জরিপের প্রয়োজন পড়ে না। বললেন, নিহত হয়েছে ৩০ লাখ। সেটি মিথ্যাটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে ঠাঁই পেল।
প্রশ্ন হলো, যে মিথ্যা কথাটি বলে মুজিব মিথ্যাবাদিতায় ইতিহাস গড়লো, সে মিথ্যার কি কোন নিরপেক্ষ পরিমাপ হয়েছে? হয় নি। মিথ্যা বলা এবং মিথ্যাকে স্বীকৃতি দেয়া যখন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, তখন কে কতবড় মিথ্যা বল্লো -তা নিয়ে কোন বিচার বসে না। সে মিথ্যা নিয়ে্ও কোন চিন্তাভাবনা হয় না। বরং অপরাধ গণ্য হয় মিথ্যার বিরুদ্ধে খাড়া হওয়াটি। একাত্তরে বহু মানব নিহত হয়েছে। প্রতিটি হত্যাই অপরাধ। কিন্তু তিরিশ লাখ নয়, এক কোটি বা তার চেয়ে বেশী মানুষ নিহত হলেও মিথ্যা বলার নয় কবিরা গুনাহ জায়েজ হয় না। তিরিশ লাখের মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার মধ্য দিয়ে কোটি কোটি মানুষ পরিণত হয়েছে মিথ্যুকে এবং বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে মিথ্যার ন্যায় কবিরা গুনাহ আবাদের উর্বর ভূমি। এবং অপরাধ গণ্য হয় এ মিথ্যাকে মিথ্যা বলা। অথচ সভ্য দেশে মিথ্যুক ব্যক্তি অযোগ্য গণ্য হয় যে কোন সরকারি চাকুরির জন্যে। কোন মন্ত্রী মিথ্যা বললে তার মন্ত্রীত্ব কেড়ে নেয়া হয়। ইসলামের গৌরব যুগে মিথ্যাবাদিগণ অযোগ্য গণ্য হতো আদালতে সাক্ষিদানের জন্য; এবং অযোগ্য গণ্য হতো হাদীস বর্ণনার জন্য। নিষিদ্ধ ছিল মিথ্যুককে শিক্ষক বা মসজিদের ইমামের পদে বসানো। অথচ বাংলাদেশে মুজিব ও হাসিনার ন্যায় মিথ্যাবাদীও দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়! মিথ্যাবাদী মুজিবকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়ারও চেষ্টা হয়!
তিরিশ লাখ নিহতের তথ্যটি যে কীরূপ প্রকান্ড মিথ্যা –সেটি সামান্য ভাবলে একজন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রও সহজে টের পাবে। কিন্তু বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, পত্রিকার সম্পাদক বা পার্লামেন্টের সদস্যও এতবড় বিশাল মিথ্যা নিয়ে ভাবতে রাজী নয়, সে মিথ্যার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও রাজী নয়। মিথ্যার কাছে নীরবে আত্মসমর্পণেই তাদের আনন্দ। তিরিশ লাখের অর্থ তিন মিলিয়ন। একাত্তরে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি অর্থাৎ ৭৫ মিলিয়ন। যে কোন স্কুল ছাত্রও হিসাব করে বের করতে পারে, সাড়ে ৭ কোটির (৭৫ মিলিয়ন) মাঝে তিরিশ লাখ (তিন মিলিয়ন) মানুষের মৃত্যু হলে প্রতি ২৫ জনে একজনকে মারা যেতে হয়। যে গ্রামে ১ হাজার মানুষের বাস সে গ্রামে মারা যেতে হয় ৪০ জনকে। ঘটনাক্রমে সে গ্রামে কেউ মারা না গেলে পরবর্তী গ্রামটি যদি হয় ১ হাজার মানুষের বসবাস তবে সেখান থেকে মারা যেতে হবে কমপক্ষে ৮০ জনকে। যে থানায় ১ লাখ মানুষের বাস সেখানে মারা যেতে হবে ৪ হাজার মানুষকে। প্রতি থানায় ও প্রতি গ্রামে নিহতদের সংখ্যা এ হারে না হলে ৩০ লাখের সংখ্যা পূরণ হবে না।
তাছাড়া ৯ মাসে তিরিশ লাখ মানুষকে হত্যা করতে হলে প্রতিদিন গড়ে ১১, ১১১ জনকে হত্যা করতে হয়। ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশ ছিল একটি গ্রামীন জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি দেশ যার প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ জনগণই বাস করতো গ্রামে। সেনাবাহিনীর পক্ষে যেহেতু প্রায় ৭০ হাজার গ্রামের মাঝে ১০% গ্রামে পৌঁছাতে হলে নদীনালা, দ্বীপ, বিল, হাওর ও চরে পরিপূর্ণ ৭ হাজার গ্রামে পৌঁছতে হয়। সেটি কি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে ৯ মাসে পৌঁছা সম্ভব ছিল? ফলে সহজেই ধারণা করা যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী শতকরা ৯৫ ভাগ গ্রামেও পৌঁছতে পারিনি। ফলে তিরিশ লাখের বিপুল হত্যাকান্ডটি ঘটাতে হতো জেলা, মহকুমা বা উপজেলা শহরে। তখন পাড়ায় পাড়ায় অসংখ্য নারীকে ধর্ষিতা হতে হতো। এটি কি তাই বিশ্বাসযোগ্য? সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাক-বাহিনীর প্রকৃত সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫ হাজার। -(সূত্রঃ জেনারেল নিয়াজীর লেখা বই “Betrayal of East Pakistan”, ২০০১)। যুদ্ধবন্ধি রূপে যেসব পাকিস্তানীদের ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের মধ্যে অর্ধেকই ছিল বেসামরিক ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য। ৪৫ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের পক্ষে কি সম্ভব ছিল বিল-হাওর,নদী-নালা,দ্বীপ ও চরাভূমিতে পরিপূর্ণ একটি দেশের প্রায় ৭০ হাজার গ্রামে পৌছানো? প্রতিটি গ্রাম দূরে থাক প্রতিটি ইউনিয়নেও কি তারা যেতে পেরেছিল? প্রকৃত সত্য হল, যুদ্ধকালীন ৯ মাসে অধিকাংশ গ্রাম দূরে থাক, অধিকাংশ ইউনিয়নেও পাক বাহিনী পৌঁছতে পারিনি। প্রতিটি গ্রামে ও ইউনিয়নে গেলে সীমান্তে যুদ্ধ করলো কারা? কারা পাহারা দিল দেশের বিমান বন্দর, নদীবন্দর, সবগুলো জেলা-শহর ও রাজধানী?
জরুরী মানব-উন্নয়ন
৩০ লাখ মানুষের নিহত হওয়ার এ তথ্য বিশ্বের দরবারে গ্রহণযোগ্য হওয়া দূরে থাক, বিশ্বাসযোগ্য হতে পারেনি বহু ভারতীয় সামরিক অফিসারের কাছেও। ভারতীয় রাজনীতিবিদগণ তিরিশ লাখের পক্ষে যতই বলুক, যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কোন কোন ভারতীয় জেনারেলদের কাছে এটি হাস্যকর মিথ্যা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাদের সে অভিমত একবার নয়, বহুবার প্রকাশ পেয়েছে। মিথ্যাচারিতায় মুজিব কন্যা হাসিনার রেকর্ডটিও কম নয়। হাসিনার মিথ্যাচার হলো, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের ভোট ডাকাতিকে তিনি সুষ্ঠ নির্বাচন বলেছেন। নির্বাচন সুষ্ঠ হলে কেউকি প্রদত্ত শতকরা শত ভাগ ভোট পায়। অথচ সেটি হাজার হাজার ভোট কেন্দ্রে হয়েছে। পরিতাপের বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষকও ভোট ডাকাতির সে নির্বাচনকে সুষ্ঠ বলেছে। মিথ্যুকগণ কোথায় পৌঁছেছে এ হলো তার নমুনা। কথা হলো, দেশে মশার আবাদ বাড়লো অথচ ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লো না –সেটি কি হয়? তেমনি দেশে মিথ্যাচারিতার সুনামি এলো অথচ দুর্বৃত্তির প্লাবন এলো না –সেটিও কি ভাবা যায়? মিথ্যা বেঁচে থাকলে, দেশবাসীর চেতনা ও চরিত্রের উপর তার নাশকতা্ও বাড়ে। তাতে দেশের উপর অধিকৃত বাড়ে দুর্বৃত্তদের। কারণ মিথ্যা ও দুর্বৃত্তি একত্র চলে। দুর্বৃত্ত-অধিকৃত দেশ তখন ইতিহাস গড়ে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, ভোট-ডাকাতির নির্বাচন ও ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারে। মুজিব আমলে বাংলাদেশ যে ভাবে ভিক্ষার আন্তর্জাতিক ঝুলিতে পরিণত হলো বা এ শতাব্দীর শুরুতে দুর্বৃত্তে বিশ্বে পর পর ৫ বার বিশ্বরেকর্ড গড়লো –সেটির কারণ কি দেশের ভূমি বা জলবায়ু? কারণ তো মিথ্যাচার ও দুর্বৃত্তির সুনামী। কথা হলো, বস্ত্র রপ্তানি, চিংড়ি রপ্তানি ও মানব রপ্তানি বাড়িয়ে কি এ বিপদ থেকে মুক্তি মিলবে? মুক্তি মিলবে কি স্রেফ রাস্তাঘাট নির্মাণ ও অর্থনেতিক উন্নয়ন ঘটিয়ে? বরং এজন্য যা জরুরী তা হলো মানব-উন্নয়ন। মানব-উন্নয়নের জন্য যা জরুরী তা হলো শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির অঙ্গণে মিথ্যচর্চার নির্মূল। এবং সে সাথে জরুরী হলো সত্যবাদী এবং দুর্বৃত্ত নির্মূলের লড়াকু সৈনিক রূপে জনগণকে গড়ে তোলা। ২০/১০/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018