মেঠো আদালত যখন উচ্চ-আদালতে
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on July 7, 2019
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
আওয়ামী নৃশংসতা ও অধিকৃত আদালত
দেশে সরকারি আদালত থাকতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো আদালত বসিয়েছিল উম্মুক্ত ময়দানে। বিচারক রূপে হাজির করেছিল তাদের দলীয় নেতা-কর্মী ও তাদের রাজনীতির হাজার হাজার সমর্থকদের। লক্ষ্য ছিল, একাত্তরে যেসব আলেম-উলামা ও ইসলামপন্থি নেতাকর্মী পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল তাদেরকে ফাঁসিতে চড়িয়ে হত্যা করা। তাদেরকে বিরুদ্ধে হ্ত্যা বা খুনের নেশাটি আওয়ামী বাকশালী চক্রের বহুদিনের। একাত্তরের যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর বহুহাজার আলেম ও ইসলামী আন্দোলনের বহুহাজার নেতাকর্মীকে তারা খুন করিছিল কোররূপ বিচার না করেই। তখন নিরস্ত্র রাজাকারদের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করাটি ছিল আওয়ামী ক্যাডারদের রীতি। ১৮ই ডিসেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে হাত-পা বাঁধা কয়েকজন রাজাকারকে কাদের সিদ্দিকী যেভাবে বেয়োনেট দিয়ে হত্যা করে সে বীভৎস চিত্রটি বহুদেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল। সে খুনের চিত্রটি দেখে প্রখ্যাত সাংবাদিক ওরিয়ানী ফালাচী লিখেছিলেন,“মুক্তিবাহিনী বেয়োনেট দিয়ে যেরূপ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার পর এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম,এই ঘৃন্য নগরীতে আমি আর পা রাখবো না।” আওয়ামী বাকশালীরা নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল ভারতীয় হিন্দুদের আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে আসা বহুহাজার অবাঙালীকেও।অবাঙালীদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করে তাদেরকে রাস্তায় নামানো হয়।
একাত্তরে শাপলা চত্বর পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রতিটি নগরবন্দর। বহু স্থানে আলেমদের ছিন্ন মাথা নিয়ে আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও তাদের সেক্যুলার মিত্রগণ ফুটবলও খেলেছে।বাংলার মাটিতে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধ তো ছিল সে হত্যাকান্ডগুলো। কিন্তু সে অপরাধের বিচার আজও হয়নি।শাপলা চত্বরে গণহত্যার পর শেখ হাসিনা বলেছে সেখানে কোন মানুষ খুন হয়নি।লাশগোপন ও রাজপথে রক্ত ধোয়ার পর এখন গোপন করা হচ্ছে তাদের বর্বর কর্মগুলো। সুকৌশলে গোপন করেছে তাদের একাত্তরের বর্বরতাগুলো।বরং নিজেদের ভয়ংকর অপরাধগুলো ঢাকতে তারা রটিয়েছে তিরিশ লাখ বাঙালী হত্যার কিচ্ছা। তারপরও মহান আল্লাহর মেহেরবানিতে বহুআলেম ও ইসলামি দলের বহু নেতাকর্মী সে যাত্রায় বেঁচে যায়।কিন্তু তাদের সেই বেঁচে যাওয়াটি ভারতপন্থি আওয়ামী বাকশালি চক্র ও তাদের সেক্যুলারিস্ট ও সোসালিস্ট মিত্রদের কাছে অসহ্য।তাই বেঁচে যাওয়াদের নির্মূলে বহু বছর আগে থেকেই তারা নির্মূল কমিটি বানিয়েছে। নির্মূলের তেমন একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নব্বইয়ের দশকে ঢাকার সহরোওয়ার্দি উদ্দানে তারা মেঠো আদালতও বসিয়েছে। সে আদালতে বহু ইসলামপন্থি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়ও দিয়েছে।কিন্তু সে রায় বাস্তবায়নের ক্ষমতা সে মেঠো আদালতের ছিল না। ফলে সে বাসনা-পূরণও হয়নি। সে রায় বাস্তবায়নে জন্য জরুরী ছিল বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা। সে দখলদারিটি প্রতিষ্ঠা পায় ২০০৮ সালে নির্বাচনে, এবং সেটি আওয়ামী বাকশালিদের বিজয়ের পর। আজ বাংলাদেশের উচ্চ আদালত মুলত তাদের হাতেই অধিকৃত।ফলে যে রায় সহরোয়ার্দি উদ্দানের মেঠো আদালতে ঘোষিত হয়েছিল বা ঘোষিত হয়েছে শাহবাগের মঞ্চ থেকেই তাই এখন ঘোষিত হচ্ছে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পক্ষ থেকে। পার্থক্য হলো, বিচারের নামে সরকারি খরচে একটি প্রহসন ঘটানো হচ্ছে।
কোন মুসলিম দেশে শুধু মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করলে ইসলাম বাঁচে না। ইসলাম বাঁচাতে হলে দেশের শাসন ক্ষমতা ও আদালতের উপর ইসলামের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করতে হয়। প্রতিষ্ঠা করতে হয় আইনে শাসন এবং প্রণয়োন করতে হয় কোরআনে বর্নিত মহান আল্লাহর শরিয়তি আইন। নবীজী (সাঃ) সেটি নিজে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। সাহাবায়ে কেরাম নবীজী (সাঃ)র সে প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিকে জীবিত রেখেছেন। প্রতি যুগের ও প্রতিস্থানের মুসলমানদের উপর সেটি বাধ্যতামূলক। নইলে তার মুসলমান থাকাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।নেমে আসে আযাব। মহান আল্লাহ অনন্ত অসীম কালেও পুরোন বা সেকেলে হন না,তেমনি পুরনো বা সেকেলে হয় না তাঁর দেয়া পবিত্র আইন।। বহু লক্ষ বা বহু কোটি বছরও সেটি থাকবে শাশ্বত ও সতেজ। তাই মুসলমান হওয়ার অর্থ পবিত্র কোরআনে ঘোষিত সে আইনের নিছক তেলাওয়াত নয়,বরং সে আইনের পূর্ণপ্রয়োগ।সে আইনর অনুসরণ তাই পশ্চাদপদতা নয়।বরং সেটি হলো শ্বাশত আধুনিকতা। জান্নাতের পথে সেটিই হলো প্রকৃত পথপরিক্রমা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে “আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী যারা বিচার-আচার করে না তারা কাফের, …তারা জালেম, … তারা ফাসেক। -(সুরা মায়েদা আয়াত ৪৪-৪৭)। কিন্তু বাংলাদেশের যে আইন অনুসারে বিচার হয় সেটি আল্লাহর নাযিলকৃত শরিয়তী আইন নয়,বরং ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত কফুরি আইন।। এ আইনে জ্বিনাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। অপরাধ নয় মদ্যপান, সূদ খাওয়া বা মিথ্যা বলার ন্যায় বহু জঘন্য অপরাধ। বাংলাদেশের মুসলমানদের এখানেই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।খাদ্য,শিল্প বা বিজ্ঞানে ব্যর্থতা নিয়ে আল্লাহর দরবারে প্রশ্ন উঠবে না,কিন্তু প্রশ্ন হবে শরিয়তে প্রয়োগে এ ব্যর্থতা জন্য।
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর ঔপনিবেশিক ইংরেজদের হাতে শুধু বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার ন্যায় বিশাল মুসলিম শাসিত ভূমিই অধিকৃত হয়নি,বরং অধিকৃত হয়েছিল দেশের শরিয়তভিত্তিক আদালতও। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশের সে সামরিক অধিকৃতি থেকে রাষ্ট্র মূক্তি পেলেও মুক্তি পায়নি দেশের আদালত। দেশের আদালত এখনো পুরাপুরি অধিকৃত ব্রিটিশ বিচার ব্যবস্থা ও তাদের মানসিক গোলামদের হাতে।আদালতে বিচারও হয় ব্রিটিশের আইন অনুসারে।আল্লাহর আইন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশে আস্তাকুরে গিয়ে পড়েছে।আদালতের পাশাপাশি দেশের রাজনীতি,প্রশাসন,সামরিক ছাউনিগুলিও এখন অধিকৃত ইসলামের বিপক্ষ শক্তির হাতে।আ।ল্লাহর শরিয়তি আইনকে পরাজিত রাখার মধ্যেই তাদের আনন্দ।সেটিই তাদের রাজনীতি। বরং তাদের প্রচন্ড উৎসব ইসলামপন্থিদের ফাঁসি দেয়ার মধ্যে।
ইসলামের বিপক্ষ শক্তির শত্রুতাটি যে শুধু জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে –তা নয়। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে যে শত শত মানুষকে নিহত ও আহত করা হলো তার কি জামায়াত-শিবির কর্মী? ইসলামের বিপক্ষ শক্তির কাছে হত্যাযোগ্য হওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামের নেতা বা কর্মী হওয়াটি জরুরী নয়। গায়ে ইসলামি লেবাস এবং ইসলামের প্রতিষ্ঠায় অঙ্গিকার থাকাটিই তাদের কাছে হত্যাযোগ্য হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ।বাংলাদেশের ইসলামের বিপক্ষ শক্তির কাছে এটি অজানা নয় যে,একাত্তরে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টি ছিল একমাত্র সেক্যুলারিস্ট, সোসালিস্ট ও ন্যাশনালিস্টদের প্রকল্প। তার সাথে দেশের ইসলামপন্থি কোন দল সংশ্লিষ্ট ছিল না। সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বহু ইসলামি দল ছিল,বহুহাজার আলেমও ছিল। কিন্তু চোখে পড়ার মত বিষয়টি হলো,কোন ইসলামি দল ও কোন আলেমই পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টিকে সমর্থন করেনি। কোন মুসলিম দেশও তাদের সেক্যুলারিস্টদের সে দেশভাঙ্গার কাঝে সমর্থন করেনি।আরো লক্ষণীয় হলো,স্বাধীন দেশ রূপে সে সময় কোন মুসলিম দেশই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি।স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত,রাশিয়া ও ভূটানের ন্যায় কিছু অমুসলিম দেশ। আলেমগণ তখন দলমত নির্বিশেষে ফতোয়া দিয়েছেন,মুসলিম দেশ ভাঙ্গা কবিরা গুনাহ। ফলে সে কবিরা গুনাহর ন্যায় হারাম কাজে অংশ নেয়া তাদের কাছে অচিন্তনীয় হয়ে পড়ে।তাদের কেউ তাই একাত্তরে ভারতে যাই নাই,ভারতের অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও নামেনি। এসবই একাত্তরে ইতিহাস।
বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্ট, সোসালিস্ট ও ন্যাশনালিস্টদের স্মৃতিতে ইসলামপন্থিদের সে ভূমিকার কথাটি এখনো বেঁচে আছে। ফলে তাদের দৃষ্টিতে ইসলামপন্থি হওয়ার অর্থই হলো পাকিস্তানপন্থি রাজাকার হওয়া। সে ধারণা নিয়েই জামায়াতের ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এরূপ বহু হাজার আলেমকে একাত্তরে দেশের ভারতপন্থি সেক্যুলারিস্ট,সোসালিস্ট ও ন্যাশনালিস্টগণ হত্যা করে। এবং সেরূপ হত্যাকান্ড আজও যেরূপ ঘটাতে চায়, তেমনি ভবিষ্যতেও ঘটাতে চায়।ইসলামের বিরুদ্ধে এমন একটি লাগাতর যুদ্ধাবস্থাকে তারা বলে একাত্তরের চেতনা।তেমন একটি চেতনা বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের মাঝে বেঁচে থাকার কারণে ইসলামপন্থিদের নির্মূলে কে জামায়াত বা শিবির কর্মী,আর কে হেফাজতে ইসলামের কর্মী -তা নিয়ে তারা কোনরূপ বাছবিচার করে না।
খেলোয়াড় সবাই অভিন্ন টিমের
আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসীর রায় ঘোষনা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মুজাম্মিল হোসেন। সাথে আরো যে চারজন বিচারপতি ছিলেন তারা হলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা,এমএ ওহাব মিয়া,সাইয়েদ মাহমুদ হোসেন এবং সামসুদ্দিন চৌধুরি মানিক। এদের মধ্যে একজন বিচারক ফাঁসির রায়ের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন হলো, যারা ফাঁসির রায় দিল তাদের পরিচয়টি বিচারক রূপে হলেও ইসলামপন্থিদের যারা রাজপথে পিটিয়ে বা গুলি করে হত্যা করে তাদের বিচারবোধ থেকে কি আদৌ ভিন্নতর? এটি আর কোন গোপন বিষয় নয় যে, আওয়ামী লীগ প্রশাসন,বিচার বিভাগ,সেনাবাহিনী,পুলিশ বাহিনী ও র্যাবসহ সরকারের প্রতিটি বিভাগই নিজেদের দলীয় লোক দ্বারা ঢেলে সাজিয়েছে।ফলে যে যেখানে আছে সবাই আওয়ামী লীগের পক্ষে খেলছে। প্রতিটি স্বৈরাচারি সরকারের এটিই রীতি। তাই সেটি যেমন হিটলার করেছিল,তেমনি নমরুদ ফিরাউন,হালাকু-চেঙ্গিজও করেছিল।ফলে তাদের হাতে সে সময় যে লক্ষ লক্ষ মানুষ খুন হতো তার একজনকেও বর্বর শাসকদের নিজ হাতে খুন করতে হয়নি। তাদের অনুগত পুলিশ বাহিনী,সেনাবাহিনী ও আদালতের বিচারকগণই সে কাজটি অতি সুচারু ভাবে সমাধা করতো। বাংলাদেশেও তো সেটিই হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে ইসলামপন্থিগণ খুন হচ্ছে শুধু আওয়ামী লীগ,ছাত্র লীগ ও যুবলীগের গুন্ডাদের হাতে নয়,খুন হচ্ছে সেনাবাহিনী,বিজিবী,র্যাব ও পুলিশের হাতেও। এমন এক পরিস্থিতে ইসলামপন্থিগণ খুন হবে বিচারপতিদের রায়ে -তাতেই বা বিস্ময়ের কি আছে? শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার কর্মীকে হতাহত করার কাজে তাই আওয়ামী লীগ,ছাত্র লীগ ও যুবলীগের গুন্ডাদের বন্দুক হাতে মাঠে নামতে হয়নি। সেখানে কোন বন্যপশুর হামলাও হয়নি। বরং গণহত্যার সে কাজটি অতি দক্ষতার সাথে সুচারু ভাবে সম্পাদন করেছে সেনাবাহিনী,বিজিবী,র্যাব ও পুলিশের লোকেরা।এখন এটি প্রমাণিত যে,পুলিশ,র্যাব ও বিজিবীর ন্যায় আদালতের বিচারকগণও সে অভিন্ন টিমেরই খেলোয়াড়। এবং সে টিমটি খোদ আওয়ামী লীগের। ছাত্রলীগের ক্যাডারগণ বিশ্বজিতের খুনে যেরূপ নৃশংস ছিল,পুলিশ,র্যাব ও বিজিবী সদস্যগণ কি শাপলা চত্বরের গণহত্যায় কম নৃশংস ছিল?
ফিরাউনের দরবারে তিনজন যাদুকর এসেছিল হযরত মুসা (সাঃ)র সাথে প্রতিযোগিতা দিতে। কিন্তু তারা প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে বুঝতে পারে হযরত মুসা (সাঃ) আল্লাহর সত্যিকার নবী। তারা তিনজনই সাথে সাথে ঈমান আনে ও মুসলমান হয়ে যায়। আর সেটিই ছিল ফিরাউনের কাছে মৃত্যুদন্ড পাওয়ার মত অপরাধ। সে অপরাধে তিন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ফিরাউন নৃশংস ভাবে হত্যা করে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্যাস চেম্বারে ডুকিয়ে হত্যা করে হিটলার। তাদেরও কোন অপরাধ করার প্রয়োজন পরেনি। তাদের গ্যাসচেম্বারে পাঠানোর জন্য তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতীক বিশ্বাসই হিটলারের কাছে যথেষ্ট ছিল। হিটলারকে তাদের কাউকে নিজ হাতে খুন করতে হয়নি।বরং সে কাজের জন্য হাজার হাজার খুনি তার সেনাবাহিনী,পুলিশ বাহিনী,বিচারকবাহিনী,দলীয় কর্মীবাহিনীতে সবসময় প্রস্তুত ছিল। ফুটবলের টিমের সব খেলোয়াড়ই একই লক্ষে খেলে। সেটিকে বলা হয় টিমস্পিরিট। সেরূপ টিমস্পিরিট নিয়ে কাজ করে স্বৈরাচারি শাসকদলের কর্মীরা। তেমনি শেখ হাসিনাও তার দলের কর্মীদের শুধু রাজপথে লগি বৈঠা ও অস্ত্র হাতে মোতায়েন করেনি।প্রশাসন,বিচারব্যবস্থা,পুলিশ,সেনাবাহিনীসহ সরকারের নানা স্তরে ও নানা বিভাগে বসিয়েছে।তারা একই লক্ষ নিয়ে কাজও করছে।তাই যারা হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের রক্তে শাপলা চত্বরকে লালে লাল করলো তাদের একজনকে আওয়ামী লীগ,ছাত্রলীগ বা যুব লীগ থেকে আসতে হয়নি।এসেছিল আর্মি, পুলিশ,র্যাব ও বিজিবী থেকে। সে রিপোর্ট এসেছে দৈনিক যুগান্তরে। ১২ই মে তারিখে দৈনিক যুগান্তর রিপোর্ট করে,পুলিশ, র্যাব ও বিজিবীর ৭ হাজার ৫ শত ৮৮ জন এ হামলায় অংশ নিয়েছিল। হামলাকারিদের মধ্যে ১৩০০ জন এসেছিল র্যাব থেকে। ৫,৭১২ জন এসেছিল পুলিশ বাহিনী থেকে এবং ৫৭৬ জন এসেছিল বিজিবী থেকে।
ন্যায় বিচারে সামর্থ্য কতটুকু?
আওয়ামী টিমের সদস্যদের মুখের ভাষা ও সুর সর্বত্র একই। তাই যে মিথ্যাচারটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ দলীয় অফিসে বসে বা জনসভায় উচ্চারন করে, সেটি তাদের দলীয় ক্যাডারগণ আদালতের বিচারক রূপেও করে। যেমন মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে রায়ে বিচারকগণ তাদের ১১২ পৃষ্ঠার রায়ের তৃতীয় পৃষ্ঠায় লিখেছেন একাত্তরে তিরিশ লাখ মানুষ হত্যা ও চার লাখ নারী ধর্ষিতা হওয়ার কথা। তাদের বিচারবোধ ও মিথ্যাচার যে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের বস্তির গুন্ডা বা খুনিদের থেকে আদৌও ভিন্নতর নয় -এ হলো তার নমুনা। অথচ তিরিশ লাখ নিহত ও ৪ লাখ নারীর ধর্ষণের মিথ্যাটি যে ভয়ানক মিথ্যা সেটি বুঝে উঠা কি এতই কঠিন? তিরিশ লাখের অর্থ তিন মিলিয়ন। একাত্তরে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি অর্থাৎ ৭৫ মিলিয়ন। যে কোন স্কুল ছাত্রও হিসাব করে বের করতে পারে,সাড়ে ৭ কোটির (৭৫ মিলিয়ন)মাঝে তিরিশ লাখ (তিন মিলিয়ন) মানুষের মৃত্যু হলে প্রতি ২৫ জনের মাঝে একজনকে মারা যেতে হয়। যে গ্রামে ১ হাজার মানুষের বাস সে গ্রামে মারা যেতে হয় ৪০ জনকে। ঘটনাক্রমে সে গ্রামে সেনাবাহিনীর প্রবেশ না ঘটলে এবং তাদের হাতে কেউ মারা না গেলে পরবর্তী গ্রামটি যদি হয় ১ হাজার মানুষের তবে সেখান থেকে মারা যেতে হবে কমপক্ষে ৮০ জনকে। যে থানায় ১ লাখ মানুষের বাস সেখানে মারা যেতে হবে ৪ হাজার মানুষকে। প্রতি থানায় ও প্রতি গ্রামে মৃত্যুর সংখ্যা এ হারে না হলে ৩০ লাখের সংখ্যা পূরণ হবে না। তাছাড়া ৯ মাসে তিরিশ লাখ মানুষকে হত্যা করতে হলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিদিন গড়ে ১১,১১১ জনকে হত্যা করতে হয়। সে সংখ্যাটি কোন একটি দিন পূরণ করতে ব্যর্থ হলে পরের দিন বেশী করে হত্যা করে তা পূরণ করতে হতো। সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাক-বাহিনীর প্রকৃত সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫ হাজার। -(সূত্রঃ জেনারেল নিয়াজী রচিত বিট্রায়াল অব ইস্ট পাকিস্তান নামক বই,২০০১)।যুদ্ধবন্ধী রূপে যেসব পাকিস্তানীদের ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের মধ্যে অনেকে ছিল বেসামরিক অবাঙালী ও তাদের পরিবারের সদস্য। প্রশ্ন হলো,৪৫ হাজার পাকিস্তানী সৈন্যের পক্ষে কি সম্ভব ছিল বিল-হাওর,নদী-নালা,দ্বীপ ও চরাভূমিতে পরিপূর্ণ একটি দেশের প্রায় ৭০ হাজার গ্রামে পৌছানো? প্রায় ৭০ হাজার গ্রামের মাঝে ১০ হাজার গ্রামেও কি সেনা বাহিনী পৌঁছতে পেরেছে? প্রতিটি গ্রাম দূরে থাক প্রতিটি ইউনিয়নেও কি তারা যেতে পেরেছিল? অধিকাংশ গ্রামে তখন গাড়ী চলার মত রাস্তা ছিল না।অধিকাংশ গ্রামের অবস্থান নদীর পাড়েও নয় যে তারা লঞ্চ বা নৌকা যোগে সেখানে পৌঁছতে পারতো। ফলে তিরিশ লাখ নিহতের হিসাব মিটাতে হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা পড়তে হয় জেলা ও উপজেলা শহরে। কিন্তু কোন জেলা বা উপজেলা শহরে ১০ হাজার বাঙালী কি মারা গেছে? তাই মুজিবের তিরিশ লাখ যে গাঁজাখোরী মিথ্যা সেটি প্রমান করা কি এতই কঠিন?
প্রশ্ন বিচারকদের রায়ে ৪ লাখ ধর্ষণের সংখ্যা নিয়েও। তাদের দেয়া এ তথ্যটিও যে কতটা মিথ্যাপূর্ণ সেটি কি প্রমাণ করা এতই কঠিন? একাত্তরে বাংলাদেশের পরিবারগুলোতে গড় সদ্স্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৪জন। ফলে সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশে প্রায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার পরিবার ছিল।এদের মাঝে ৪ লাখ ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে গড়ে প্রতি ৪৭টি পরিবারের মাঝে অন্তত একটি পরিবারে ধর্ষিতা মহিলা থাকার কথা।যে গ্রামে ২০০টি পরিবারে বাস সে গ্রামে কমপক্ষে ৪টি পরিবারে ধর্ষিতা নারী থাকতে হবে। সে গ্রামে আর্মির প্রবেশ না ঘটলে পাশের গ্রাম থেকে কমপক্ষে ৮ টি পরিবারে ধর্ষিতা নারী থাকতে হবে, নইলে ৪ লাখ ধর্ষিতার সংখ্যা পুরণ হবে না। একাত্তরে বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই গ্রামে বাস করতো। আর সেনা বাহিনীর পক্ষে প্রায় ৭০ হাজার গ্রামের মাঝে ১০ হাজার গ্রামেও কি পৌছা সম্ভব হয়েছে? ফলে সহজেই ধারণা করা যায়, দেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ পরিবারের জীবনের পাক বাহিনীর সাক্ষাৎ মেলেনি। তাই ৪ লাখ ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে হলে সেগুলো বেশী বেশী হতে হবে জেলা ও উপজেলা শহরে বা সীমান্তবর্তি গ্রামগুলোতে –যেখানে সেনাবাহিনীর লোকদের অবস্থান ছিল বেশী।ফলে ধর্ষিতা পরিবারের সংখ্যা সেখানে প্রতি ৪৭য়ে একজন নয়, বরং অনেক বেশী হারে হওয়ার কথা। প্রতি ১০ বা ২০টি পরিবারে কমপক্ষে একজন ধর্ষিতা নারী থাকার কথা। কিন্তু সেটি কি বিশ্বাসযোগ্য?
সুবিচার না করাই যাদের নীতি
ডাকাতপাড়ায় কোন ডাকাতের খুন বা ধর্ষণ নিয়ে বিচার হয় না। তাদের কাজ তো নিরপরাধ মানুষ হত্যা,তাদের সর্বস্ব লুট করা, বিচার করা নয়। ন্যায় বিচার তাদের দর্শনে নাই। তাই শাপলা চত্বরে যে এত নিরীহ মানুষ খুন হলো সে খুনের অপরাধে কি একজনকেও হাসিনার পুলিশ বাহিনী গ্রেফতার করেছে? কোনদিনও কি আদালতে এ গণহত্যার বিচার বসবে? মুজিব আমলে ৩০-৪০ হাজার মানুষ খুন হয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিব কি সে খুনের অপরাধিদের কাউকে কি আদালতে খাড়া করেছে? করিনি। নিজে বরং সিরাজ শিকদারের খুন নিয়ে পার্লামেন্টে “কোথায় আজ সিরাজ শিকদার” বলে উল্লাস করেছে। হাসিনার সরকারেরও মূল কাজ হয়েছে তার দলের খুনিদের পরিচর্যা ও প্রতিরক্ষা দেয়া। তাই আওয়ামী লীগ,ছাত্রলীগ ও যুব লীগের কেউ খুন করলে বা ডাকাতি করলে তার বিচার হয় না। বিচারে যদি কারো শাস্তি হয়ে যায় তবে সরকারর মূল কাজ হয় তাদের মাফ করে দেয়া।এরূপ বহু খুনিকে দেশের আওয়ামী প্রেসিডেন্ট মাফ করে দিয়েছেন। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মাঝে বন্দুক যুদ্ধ হয় ও ২ জন খুনও হয়।খুনে আসামী ছিল সাইফুল আলম ওরফে মিলন নামের ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা। সরকারে তাকে জামিনে খালাস দিয়েছে। ক’দিন আগে যাত্রাবাড়িতে ৭-৮ জন খুনি এক গৃহে ঢুকে পিতামাতার সামনে তাদের একমাত্র পুত্রকে হত্যা করে। কিন্তু সে খুনের আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের কোন তৎপরতা নাই,কোন সফলতাও নাই। অথচ রাজপথে পুলিশের বিশাল ঢল নামে জামায়াত-শিবির বা বিএনপির মিছিল বের হলে। তাই পুলিশের কাজ হয়েছে স্রেফ হাসিনার সরকারকে প্রটেকশন দেয়া। খুনিদের ধরা নয়।
মুজিবের প্রধান অপরাধ
মানব চরিত্রের সবচেয়ে বড় বদগুণটি হলো তার মিথ্যাচারিতা।মিথ্যাচারিতা থেকেই জন্ম নেয় সকল প্রকার পাপ। নবীজী (সাঃ) তাই মিথাচারিতাকে সকল পাপের মা বলেছেন। মিথ্যাচারি মানুষকে মহান আল্লাহতায়ালা কখনো হেদায়েত দেননা। মহান আল্লাহর সে সর্বশ্রেষ্ঠ রহমতটুকু পেতে হলে মানুষকে তাই মিথ্যাবাদিতা ছাড়তে হয়। অপর দিকে সত্যবাদীতা থেকেই জন্ম নেয় সকল নেক কর্ম। মুসলমান হওয়ার জন্য তাই প্রাথমিক শর্তটি হলো সত্যবাদী হওয়া। শরিয়তের বিধান হলো কোন মিথ্যাবাদীকে আদালতের বিচারক দূরে থাক সাক্ষিও করা যাবে না। কারণ তাতে অসম্ভব হয় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। অপরদিকে শয়তান বেছে বেছে সমাজের মিথ্যাবাদীদের ঘাড়ে সওয়ার হয়। মিথ্যাচারিদেরকেই সে নিজের সৈনিক রূপে গড়ে তোলে। মানুষ জাতির সমগ্র ইতিহাসটি মূলত সত্য ও মিথ্যার লাগাতর দ্বন্দ। তাই কোন দেশে শয়তানের পক্ষের শক্তি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায় তখন তারা দেশবাসীকে মিথ্যাচারি করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। কারণ তাতে বিপন্ন হয় তাদের ঈমান রূপে বেড়ে উঠার সামর্থ।মিথ্যাচারি বৃদ্ধির সাথে বাড়ে শয়তানী শক্তির লোকবল।
মুজিবের বড় অপরাধ তাই এ নয় যে,সে ৩০-৪০ হাজার মানুষ খুন করেছিল বা দেশে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিল বা ভারতের গোলামী বা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ উপহার দিয়েছিল। বরং তার সবচেয়ে বড় অপরাধ সে দেশের মানুষকে মিথ্যাচারি বানানোর সর্বাত্মক ব্যবস্থা করেছিল। কারণ সে নিজে ছিল বাঙালীর সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মিথ্যাচারি। একাত্তরের তিরিশ লাখ নিহত এবং তিন লাখ বা চার লাখ নারী ধর্ষিতার মিথ্যাচারটি তারই রটানো। আর তার অনুসারীদের কাজ হয়েছে সে মিথ্যাচারকে সমগ্র দেশবাসীর মাঝে প্রতিষ্ঠা দেয়া। মুজিব আমল থেকেই দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সকল সরকারি মিডিয়া পরিণত হয়েছে মিথ্যুক তৈরী ও মিথ্যাছড়ানোর ইন্ডাস্ট্রিতে। মুজিব যে তিরিশ লাখের মিথ্যা উচ্চারন করেছিল এগুলির কাজ হয়েছে সে মিথ্যাকে বলবান করা। দেশ আজ এমন বিবেকহীন মিথ্যুকদের হাতেই অধিকৃত। শুধু সাক্ষি রূপে নয়,বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক পদেও তারা আজ অধিষ্ঠিত।
মুজিব মিথ্যা বলাকে অপরাধ বা দোষের ভাবতো না।বরং সেটি ছিল তার রাজনীতির শিল্পকলা। মিথ্যাকে দোষের ভাবে না তার অনুসারিগণও। তাই আদালতে দাঁড়িয়ে তার অনুসারিরা মিথ্যা সাক্ষি দিতে দুপায়ে খাড়া। যে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ বা যুবলীগ কর্মীরা রাজপথে চাপাতি বা লগিবৈঠা নিয়ে নিরপরাধ মানুষ খুন করতে পারে এবং খুনের পর উৎসব করতে পারে তারা আদালতে দাঁড়িয়ে রাজনৈতীক বিরোধীদের বিরুদ্ধে স্বচোখে খুন করতে দেখেছি বা ধর্ষণ করতে দেখেছি -এরূপ মিথ্যা শিক্ষা দিবে তাতে কি আশ্চার্যের কিছু আছে? বিচারকদেরও কি সে সামর্থটুকু আছে যে তারা সে মিথ্যাসাক্ষিকে মিথ্যুক বলে সনাক্ত করবে এবং বিচারের নথি থেকে বিদায় দিবে? বরং তারা নিজেরাও তো সাক্ষিদের চেয়েও বহুগুণ বেশী মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছে তাদের রায়ে। নইলে একাত্তরে তিরিশ লাখ খুন ও চার লাখ ধর্ষণের এত বড় বিশাল মিথ্যাটি বিচারের রায়ে লেখেন কি করে?
আদালতের নাম নিয়েও কি কম মিথ্যাচার? এটি কোন বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল? আর্ন্তজাতিক হতে হলে তাতে অন্য জাতির লোকদের উপস্থিতি থাকাটি জরুরী। তার একটি আন্তর্জাতিক মানও লাগে। বিচারক ও আইনজীবীদের কেউ কি বিদেশী। আইনও কি আন্তর্জাতিক? ধোকাবাজি আর কাকে বলে? বিদেশী ব্যারিস্টারগণ এ আদালতে আইনজীবী রূপে যোগ দিতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের আসতে দেয়া হয়নি। আদালতের বিচারকগণদের উপর অর্পিত মূল দায়িত্বটি ছিল জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় শোনানো যা জনৈক বিচারক স্কাইপী সংলাপে তার বন্ধুর কাছে উল্লেখও করেছেন। এখন তো সে রায়ই শোনানো হচ্ছে। তাই বিচার যে নিরেট প্রহসন মুলক তা নিয়ে কি আদৌ কোন সন্দেহ আছে?
মেঠো আদালত বসছে কোর্ট ভবনে
আদালতের বিচারকগণ কোন অপরাধই নিজ চোখে দেখে না। বিচারে রায় প্রদানে সেটি শর্তও নয়। সাক্ষীর প্রদত্ত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তারা যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধেই রায় দিতে পারে।তাই কোন আসামীকে ফাঁসীতে ঝুলানোর জন্য খুনের ঘটনা না ঘটলেও চলে। বরং সে জন্য যা জরুরী তা হলো,এমন কয়েকজন মিথ্যুক সাক্ষী যারা আদালতে বলবে যে আমরা আসামীকে খুন করতে দেখেছি। বিচারের নামে ভয়ানক অবিচার তো এভাবেই হয়। বিচারে তো বেশী কিছু লাগে না।লাগে,অপরাধ কর্মটি যে আসামীর হাতে ঘটেছে তা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। সাক্ষী পেলে আসামীকে সহজেই ফাঁসিতে লটকানো যায়। বাংলাদেশে তো বহু মিথ্যা সাক্ষী ভাড়াতে পাওয়া যায়। অর্থ দিলে তারা আদালতে দাঁড়িযে শেখানো মিথ্যা বুলি তোতা পাখির ন্যায় অনর্গল বলবে দেশে কি তেমন মানুষ কম? অপর দিকে সরকার তো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে সাক্ষীদের মিথ্যা সাক্ষদানের সামর্থ বাড়ানোর কাজে।এক্ষেত্রে বিচারকদের জন্য যে যোগ্যতাটি অতি অপরিহার্য তা হলো প্রদত্ত মিথ্যা সাক্ষ্য থেকে সত্যকে সনাক্ত করার সামর্থ। কিন্তু সে যোগ্যতা কি বাংলাদেশের আদালতের বিচারকদের আছে? তারা তো তিরিশ লাখ নিহত আর চার লাখ ধর্ষনের ন্যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিথ্যাকেও মিথ্যা রূপে সনাক্ত করতে ব্যর্থ। ফলে আদালতে প্রদত্ত সুক্ষ মিথ্যাকে তারা সনাক্ত করবে কীরূপে? সে সামর্থ থাকলে কি তারা একাত্তরে তিরিশ লাখ নিহত ৪ লাখ ধর্ষিতার মিথ্যাটি তারা বিচারের রায়ে লিখতে পারতেন? আওয়ামী লীগের পক্ষে লাঠি ধরার সামর্থ তাদের যে বিস্তর সেটি তারা দেখিয়ে দিয়েছে।
জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে রায় তো দেয়া হচ্ছে রাজপথ থেকে। জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যাবতজীবন কারাদন্ডের রায় শুনিয়েছিল। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ,ছাত্রলীগ ও তাদের মিত্রদের সে রায় পছন্দ হয়নি। তাই শাহবাগে লাগাতর মিটিং শুরু হলো এ দাবী নিয়ে যে তাকে অবশ্যই ফাঁসি দিতে হবে।সংসদ তো শাহবাগীদের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে আইন পাল্টালো। মামলাকে সরকার সুপ্রিম কোর্টে নিল। সুপ্রিম কোর্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারকদের রায়কে ভূল সাব্যস্ত করে সে রায়টিই দিল যে রায়ের দাবিটি শাহবাগের মঞ্চ থেকে তোলা হয়েছিল এবং ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে একই রূপ রায় ঘোষিত হয়েছিল সহরোয়ার্দি উদ্যানের মেঠো আদালত থেকে। দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ মেটো আদালতের কাছে যে কতটা আত্মসমর্পিত এ হলো তার নজির।
আজ যারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সাথে জড়িত তারাই নব্বইয়ের দশকে সহরোয়ার্দি উদ্দানে গণ-আদালতের নামে মেঠো আদালত বসিয়েছিল। তাদের কারণেই সহরোয়ার্দি উদ্দানের সে মেঠো আদালতটি এখন আর মাঠে নাই,সেটি এখন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ভবনে এসে বসেছে। ফলে শুধু আব্দুল কাদের মোল্লাকে নয়,আরো বহু নিরপরাধ মানুষকেই যে ফাঁসিতে লটকানোর ব্যবস্থা করা হবে তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ আছে? তখন রাজপথে দলীয় গুন্ডাদের দ্বারা মানুষ হত্যার প্রয়োজনটি কমবে। সে কাজটি বিচারকগণই করেবে। আওয়ামী বাকশালীরা তো সেটিই চায়। প্রশ্ন হলো,দেশের প্রশাসন ও আদালত ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে অধিকৃত হলে কি সুবিচার আশা করা যায়? আশা করা যায় না বলেই তো মহান আল্লাহতায়ালা আদালতের অঙ্গনে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা ও ইসলামের বিপক্ষ শক্তির নির্মূলকে অপরিহার্য করেছেন।নইলে মুসলমানের রাষ্ট্র ইসলামি রাষ্ট্র হয় না। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম সেটি শুধু কিতাবেই থেকে যায়। দেশ তখন অবিচারপূর্ণ হয়ে উঠে। বাংলাদেশ তো তেমনই এক দেশ। ২০/০৯/২০১৩
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018