যে বিপদ শত্রুশাসন ও ভ্রষ্ট ঈমানদারীর
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on April 2, 2020
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, মুসলিম জাহান
- No Comments.
ইতিহাস ভ্রষ্টতার
নবীজী (সাঃ)র যুগে প্রচন্ড অভাব ছিল মুসলিম জনশক্তির। বহু বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে মক্কার কাফেরদের মধ্য থেকে একজন একজন করে তাঁকে মুসলিম করতে হয়েছে। নবুয়তপ্রাপ্তির ১৫ বছর পর বদরের যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবী নিয়ে হাজির হতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশের একটি থানায় যত মুসলিমের বাস মহান নবীজী (সাঃ) ততজন মুসলিমও জীবনের শেষ দিনগুলিতেও দেখে যেতে পারেননি। অথচ আজ প্রায় ১৬০ কোটি মুসলিম তাঁর উম্মত রূপে সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কিন্তু এ বিপুল সংখ্যক মুসলিমের অর্জন কতটুকু? মূল সমস্যাটি হলো, মুসলিমদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়লেও অভাব বেড়ছে ঈমানদারীর। প্রাথমিক যুগের মুসলিমদের পথটি ছিল পবিত্র কোর’আনে বর্ণিত সিরাতুল মুস্তাকীম -যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়ত, হুদুদ, খেলাফত, একতা, শুরা ভিত্তিক শাসন ও জিহাদ। কিন্তু সে পথ থেকে তাদের ভ্রষ্টতাটি বিশাল। তাদের ইতিহাসটি ছিল সরর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি ও বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার। কিন্তু আজকের মুসলিমদের ইতিহাসটি বড়ই অগৌরবের। সেটি শুধু শত্রুর হাতে পরাজয়, অপমান, নিহত বা ধর্ষিতা হওয়ার নয়, বরং অশিক্ষিত, অসভ্য ও দুর্বৃত্ত রূপে বেড়ে উঠারও। এর চেয়ে বড় অপমানের আর কি হতে পারে যে, দুর্বৃত্তিতে বিশ্বের প্রথম দশটির দেশের বেশীর ভাগই হবে মুসলিম অধ্যুষিত। প্রায় শতকার ৯০ ভাগ মুসলিম নিয়ে বাংলাদেশ এ শতাব্দীর শুরুতে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে পর পর ৫ বার প্রথম হয়েছে।
এতবড় চারিত্রিক ও ঈমানী বিপর্যয়ের পরও এ নিয়ে ভাবনা ক’জনের? কী করে এ পতন থেকে মুক্তি -তা নিয়েই বা ক’জন ভাবে? নিজেদের মুসলিম রূপে দাবী করলেও তারা বাঁচে নবীজী (সাঃ)র আমলের ইসলাম ছাড়াই। অধিকাংশ মুসলিম দেশই অধিকৃত বর্বর স্বৈরাচারিদের হাতে অধিকৃত; গণতন্ত্র বলে কিছু নাই। বাংলাদেশের ন্যায় অধিকাংশ মুসলিম দেশেই জনগণকে বাঁচতে হয় ন্যূনতম মৌলিক মানবিক অধিকার ছাড়াই। ফলে অসম্ভব হয়েছে সভ্য ভাবে বাঁচা। রাষ্ট্র বা সমাজ কতটা সভ্য বা অসভ্য -সে বিষয়টি ধরা পড়ে সে দেশে আইনের মান, বিচারের মান এবং আইন প্রয়োগে সরকার ও দেশবাসীর আগ্রহ ও সামর্থ্য থেকে। জঙ্গলে সভ্য জীবন অসম্ভব, কারণ সেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কেউ থাকে না। খুন, ধর্ষণ বা ডাকাতি হলেও সেখানে পুলিশ যায় না, আদালতও বসে না। জঙ্গল তাই জঙ্গলই। সভ্যতর সমাজ নির্মাণে অতি গুরুত্বপূর্ণ হলো যেমন রাষ্ট্রের নির্মাণ, তেমনি সে রাষ্ট্রে আইনের শাসন। সভ্য দেশের আলামত তো এই, সেখানে কারো সম্পদ, ইজ্জত বা শরীরের উপর হামালা হলে বা কোন আইন অমান্য করলে জেল-জরিমানা হয়। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে ফাঁসি হয়। অথচ অসভ্য দেশে এসবের বালাই থাকে না, সেখানে আইন ও আদালত চলে অসভ্য স্বৈর-শাসকের খেয়াল খুশি অনুযায়ী। এমন রাষ্ট্রের কোষাগার, ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট থেকে কোটি কোটি টাকা চুরি হলে বা জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি হলেও কোন বিচার হয় না। তখন সমাজে নেমে আসে বন-জঙ্গলের অসভ্যতা। জোর যার রাজত্ব তার –এমন এক বন্য অসভ্যতাই তখন রীতি হয়ে দাঁড়ায়।
সভ্য ভাবে বাঁচার খরচটি তাই বিশাল। শুধু পুলিশ পাললে বা আদালতের প্রতিষ্ঠা দিলে চলে না, জনগণকেও তখন নিজ অধিকারের অতন্দ্র পাহারাদারে পরিণত হতে হয়। নইলে পুলিশ এবং আদালতের বিচারকগণও ডাকাতদের দলে শরীক হয়ে লুটেপুটে খায়। সে জন্যই ইসলামে জিহাদ প্রতিটি ঈমানদারের উপর নামায-রোযার ন্যায় ফরজ। জিহাদ হলো দুর্বৃত্তদের অসভ্যতা থেকে বাঁচার আমৃত্যু লড়া্ই। বনের হিংস্র পশু তাড়ানোর ন্যায় এটি হলো সমাজের পশু তাড়ানোর লড়াই। নামায-রোযায় ক্বাজা আছে, কিন্তু এ জিহাদে ক্বাজা নেই। তাই যে সমাজে জিহাদ নাই সে সমাজ মসজিদ-মাদ্রাসায় ভরে উঠলেও সভ্য সমাজ সেখানে নির্মিত হয় না। জঙ্গলে এক পশু আরেক পশুকে ভ্ক্ষণ করলেও যেমন বিচার বসে না, তেমনি অসভ্যতা নেমে আসে তখন রাষ্ট্রে। গুম, খুন, ফাঁসি, চুরি ডাকাতি, ভোট ডাকাতি তখন দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।
মহান আল্লাহতায়ালা এ বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা। তিনিই একমাত্র রাজা। সে সত্যটি পবিত্র কোর’আনে একবার নয়, বহুবার বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, “হুয়াল্লাযী খালাকাস সামাওয়াতি ওয়াল আল আরদ”। অর্থঃ তিনিই সেই মহান সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও জমিন। বলা হয়েছে, “লাহু মুলকুস সামাওয়াতে ওয়াল আরদ”। অর্থঃ “আসমান জমিনের রাজত্ব একমাত্র তাঁর অর্থাৎ আল্লাহর”। আল্লাহতায়ালার চান তাঁর নিজের এ রাজ্য পরিপূর্ণ শান্তি ও শৃঙ্খলা। সে শান্তি ও শৃঙ্খলাকে সুনিশ্চিত করতেই তিনি চান আইনের শাসন। এবং সে আইনী বিধানকেই বলা হয় শরিয়ত। বস্তুতঃ শরিয়ত হলো সমাজ থেকে সর্বপ্রকার দুর্বৃত্তির নির্মূলে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া মূল হাতিয়ার। দুর্বৃত্তির নির্মূলের সে কাজটি নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত করতে পারে না। তাই যে রাষ্ট্রে নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত আছে অথচ শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নাই –সে সমাজে দুর্বৃত্তি ও অসভ্যতা বাড়বে সেটিই স্বাভাবিক। কারণ শরিয়তের বিকল্প শরিয়তই। শরিয়তের আরেকটি অভিধানিক অর্থ হলো “পথ”। এ পথটি মূলতঃ মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের আনুগত্যের মধ্য দিয়ে জান্নাতে পৌঁছার। এবং এ পথটিই হলো পবিত্র কোর’আনের পরিভাষায় সিরাতুল মুস্তাকীম। শরিয়তের সে আইনগুলি অতি সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোর’আনে। মুসলিমদের কাজ শুধু সে আইনের পাঠ বা মুখস্থ্য করা নয়, বরং প্রতিষ্ঠা। তাই স্রেফ নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতে ঈমানদারের দায়ভারটি আদৌ শেষ হয় না। বরং মূল দায়িত্বটি হলো তাঁর দেয়া শরিয়তের পূর্ণ প্রয়োগ। এ কাজের জন্যই সে এ পৃথিবী পৃষ্ঠে মহান আল্লাহতায়ালার খলিফা তথা প্রতিনিধি। বস্তুতঃ শরিয়ত পালন ও প্রতিষ্ঠার সামর্থ্যের মধ্যেই প্রকাশ পায় ব্যক্তির ঈমানী সামর্থ্য। ঈমানদার ব্যক্তি তখন বেড়ে উঠে মহান আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি (আশরাফুল মখলুকাত) রূপে। মুসলিমদের আজকের ব্যর্থতার কারণ, তাদের মাঝে নামাযী, রোযাদার ও হাজীদের সংখ্যাটি বিশাল। কিন্তু কোথাও নাই শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। এ বিশাল ব্যর্থতা কি নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত দিয়ে দূর করা যায়?
অপরিহার্য কেন ইসলামী রাষ্ট্র?
কোন মতাদর্শই হাওয়ায় প্রতিষ্ঠা পায় না। চায় রাষ্ট্র। সেক্যুলারিস্টগণ তাই চায় সেক্যুলার রাষ্ট্র। কম্যুনিস্টগণ চায় কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। তেমনি শরিয়ত পালনের জন্য অপরিহার্য হলো ইসলামী রাষ্ট্র। চাই, সে রাষ্ট্র জুড়ে পর্যাপ্ত প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় অবকাঠামো। তাই নবীজী (সাঃ)র জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাতের প্রতিষ্ঠা নয়, সেটি ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। তেমন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না পেলে ইসলামের প্রসার যেমন অসম্ভব হতো, তেমনি অসম্ভব হতো মুসলিমদের পক্ষে বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠা। সাহাবায়ে কেরামদের জান ও মালের সবচেয়ে বড় খরচটি হয়েছে এ খাতে। বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে মদিনায় হিজরতের প্রথম দিনেই নবীজী (সাঃ)কে তাই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা দিতে হয়েছে এবং নিজেকে রাষ্ট্রনায়কের আসনে বসতে হয়েছে। নবীজী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবা কেরাম যে সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা সৃষ্টি করেছিলেন তার মূল ভিত্তিটি ছিল শরিয়তী আইনের পূর্ণ প্রয়োগ। সে আইনের বলেই সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল সকল প্রকার দুর্বৃত্তি। এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল হক ও ইনসাফ। বস্তুতঃ এ পৃথিবী পৃষ্টে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ দ্বিতীয়টি নাই্। দেশ স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসায় ভরে ফেললেও এরূপ সমাজ বিপ্লবের কাজটি হয় না। লক্ষ লক্ষ মোহাদ্দেস বা হাফিজ বানিয়েও হয় না। হয় না ঘরে ঘরে নামাযী-রোযাদের সংখ্যা বাড়িয়েও। এবং সেটি সম্ভব হলে মহাজ্ঞানী মহান রাব্বুল আলামীন শরিয়তের বিধান না দিয়ে স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, তাসবিহ-তাহলিলের বিধান দিতেন এবং নবীজীও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জিহাদে নামতেন না।
শরিয়তের বিধানই নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার যে দ্বীন তারই নাম ইসলাম। সুরা ইউসুফের ৭৬ নম্বর আয়াতে রাব্বুল আলামীন দ্বীন বলতে আইনকে বুঝিয়েছেন। তাই শরিয়তকে বাদ দিয়ে ইসলাম হয় না। এবং শরিয়ত পালন ছাড়া ইসলাম পালন হয় না। অথচ সে শরিয়ত পালিত হচ্ছে না কোন মুসলিম দেশেই। কারণ, মুসলিম বিশ্বে কোন ইসলামী রাষ্ট্র নাই। নামায ঘরে বা মসজিদে পড়া যায়, কিন্তু শরিয়ত পালন করতে হলে চাই রাষ্ট্র। সে ফরজ পালনের লক্ষ্যেই নবীজী (সাঃ)কে ইসলামী রাষ্ট্র গড়তে হয়েছে। অথচ আজকের মুসলিমগণ ইসলামী রাষ্ট্র গড়া বাদ দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ায় মনযোগ দিয়েছে। ফলে নামাযী, হাফিজ, ক্বারী, মৌলভী, মোহাদ্দেসের সংখ্যা বাড়লেও কোন দেশেই শরিয়ত পালন হচ্ছে না। এটি মূলতঃ বিপদগামী ও অভিশপ্ত ইহুদী ও খৃষ্টানদের পথ। এটি আযাবের পথ। মসজিদ-মাদ্রাসা গড়তে যুদ্ধ লাগে না, কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সে রাষ্ট্রে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ লাগে। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর মহান সাহাবাগণ সে জিহাদের পথ বেছে নিয়েছিলেন বলেই তারা খেলাফায়ে রাশেদা ও বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার নিয়ামত পেয়েছিলেন। অথচ সে জিহাদের সে পথে বনি ইসরাইল নেয়নি। হে ভীরু কাপুরুষরা হযরত মূসা (আঃ)কে বলেছিল, “হে মূসা (আঃ) তুমি এবং তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো, আমরা অপেক্ষায় রইলো। ফলে তারা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, খোলাফায়ে রাশেদা ও বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। ইসলামী রাষ্ট্র ও শরিয়ত পালনের জিহাদ থেকে পিছু হটার জন্য তাদের উপর এসেছিল শাস্তি; ৪০ বছর যাবত তাদেরকে ঘুরতে হয়েছে সিনা উপত্যাকার মরুভূমিতে। আজকের মুসলিমগণ বেছে নিয়েছে বনি ইসরাইলের পথ। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও শরিয়ত পালন ছাড়াই তারা ইসলাম পালনের বাহানা ধরেছে। ফলে শাস্তি আসছে তাদের ঘাড়েও। কোন মেশিন তখনই সুষ্ঠ ভাবে কাজ করে যখন সেটি চালানো হয় যিনি তৈরী করেছেন তার দেয়া নির্দেশাবলী মেনে। নইলে সে মেশিন বিকল হতে বাধ্য। শরিয়ত হলো ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে আল্লাহর দেয়া বিধান। সে বিধান না মানায় আযাব ঘিরো ধরেছে সমগ্র মানব জাতিকে। ফলে পৃথিবী পূর্ণ হচ্ছে মহামারী, যুদ্ধ, হত্যা, ধর্ষণ, গুম ও সন্ত্রাসে ।
ভ্রষ্টতা ঈমানদারীতে
মানব জাতির পাপের তালিকাটি বিশাল। তবে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহটি হচ্ছে শরিয়ত অমান্য’র মধ্য দিয়ে। বিদ্রোহীদের পুরস্কৃত করা কখনোই মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত নয়। বরং দেন ভয়াবহ আযাব। সে আযাব আসে মহামারী, ভূমিকম্প, ঘুর্ণিঝড় ও সুনামীর বেশে। এবং পরকালে শাস্তি দেন জাহান্নামে নিয়ে। কিন্তু সে হুঁশ ক’জনের? অথচ সে আযাব ও শাস্তির হুশিয়ারিটি পবিত্র কোর’আনে একবার নয় বহুবার শোনানো হয়েছে। কিন্তু সে আয়াতগুলি নিয়েই বা ভাবনা ক’জনের? যারা নিজেদের আলেম, পীর, মোহাদ্দেস ও মুসলিম রূপে পরিচয় দিয়ে থাকেন তাদের মাঝে সে ভাবনাটি থাকলে তো মুসলিম দেশগুলিতে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরামহীন জিহাদ শুরু হয়ে যেতো। নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালন ছাড়া মুসলিম থাকা যায় না –এ কথা সবারই জানা। কিন্তু শরিয়তি পালন ছাড়া যে মুসলিম থাকা যায় না –সে হুশ ক’জনের? অথচ এ নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হুশিয়ারি এসেছে সুরা মায়েদার তিনটি আয়াতে। সুরাটির ৪৪, ৪৫ এবং ৪৭ নম্বর আয়াত বলা হয়েছে, “যারাই আমার নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করেনা তারাই কাফের। —তারাই জালেম। —তারাই ফাসিক।
অতীতের মুসলিমগণ বেঁচেছে সুরা মায়েদার উপরুক্ত আয়াতগুলি হৃদয়ে ধারণ করে। তারা শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত নিয়ে বাঁচেননি। শরিয়ত পালন ছাড়া নবীজী (সাঃ) ও সাহাবাদের জীবনের একটি দিনও অতিবাহিত হয়নি। অতিবাহিত হয়নি পরবর্তী কালের মুসলিমদের জীবনও। তাই ইউরোপীয় কাফেরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার পূর্ব-পর্যন্ত প্রতিটি মুসলিম দেশের আদালতে তারা প্রতিষ্ঠা রেখেছে শরিয়তী আইনকে। মুসলিম ভূমির কোথাও কাফেরদের আইন অনুযায়ীই বিচার-আচারে এক দিনের জন্য হয়নি। সেটি যেমন সিরাজদ্দৌলার বাংলাতে হয়নি, তেমন হয়নি মোগলদের শাসনাধীন ভারতেও। কিন্তু ইউরোপীয় কাফেরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার পর বিলুপ্ত হয় শরিয়ত পালনের স্বাধীনতা। কাফেরদের হাতে অধিকৃত হওয়ার এটিই হলো সবচেয়ে বড় বিপদ। তখন অসম্ভব হয় ইসলাম পালন। তাই সবচেয়ে সেরা সওয়াবের কাজটি হলো কাফেরদের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জিহাদ। এ জিহাদে নিহত হলে পুরস্কার মেল সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার।
বিদেশী কাফেরদের শাসন বহু আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু শরিয়তী আইনের শাসন এখনো শুরু হয়নি। মুসলিম দেশগুলি অধিকৃত হয়ে আছে ইসলামের দেশী শত্রুদের হাতে। এরা ঔপনিবেশিক কাফেরদের শিক্ষায় বেড়ে উঠা তাদেরই অনুগত খলিফা। ফলে আদলতে এখনো চালু রয়েছে কাফেরদের প্রবর্তিত আইন। প্রশ্ন হলে মসজিদে মুর্তি বসানো হলে কি সে মজসিদে নামায হয়? তেমনি রাষ্ট্রের আদালতে শরিয়তের বদলে কাফেরদের আইন চালু থাকলে কি সে আদালতে কি কোন মুসলিম বিচার চাইতে যেতে পারে? তাতে কি ঈমান থাকে? মহান আল্লাহতায়ালার ইচ্ছা ও তাঁর বিধানকে হৃদয়ে নিয়ে বাঁচা এবং সে গুলির বাস্তবায়নে জিহাদে নামার মধ্যেই তো ঈমানদারী। কিন্তু মুসলিম মাঝে সে ঈমানদারী কই? ঈমানের প্রকাশ তো আমলে। প্রশ্ন হলো, কুফরি আইনের কাছে যেরূপ আত্মসমর্পণ -তাতে কি ঈমানের সে ভ্রষ্টতা কখনো গোপন থাকে? ২/৪/২০২০
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বাঙালি মুসলিমের সংকটের শুরু কিরূপে?
- রাজনীতিতে কবিরা গুনাহ ও দুর্বৃত্তকে নেতৃত্বের আসনে বসানোর আযাব
- আল্লাহর আনসার এবং শয়তানের আনসার
- নবীজী (সা:)’র সফল রাজনীতি এবং আজকের মুসলিমদের ব্যর্থ রাজনীতি
- মুসলিম দেশে বিজয় শয়তানের এবং পরাজয় নবীজী (সা:)’র ইসলামের
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018